#এমন_কেনো_তুমি,part_7,8
[ সত্য ঘটনার অবলম্বনে। ]
#ফাতেমা_তুজ
#part_7
ইন্টার প্রথম বর্ষে থাকা কালীন আরহান সিয়ার রিলেশন সম্পর্কে জেনে যায় ওর পরিবার। আরহানের সাথে সিয়ার সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ তাঁরা। আরহান তখন প্রচন্ড পাগলামি শুরু করে। সিয়া কে ভীষণ ভালোবাসে ছেলেটা। আর সেই সিয়া কে মেনে নিতেই সমস্যা ওনাদের। যাঁর ফলে নানান কটূক্তি করা ও শুরু করে। ফারেগ আর সাজিদার প্রেমের বিয়ে ছিলো। এই সুযোগ টাই কাজে লাগায় আরহান। তবে ওর বাবা মা একটি বিষয় নিয়েই দ্বিমত করেন। কিছু দিন পূর্বে সিয়ার বড় বোন সুমা খুব বাজে ভাবে পরিচিত হয় এই সমাজে। বাজে ছেলে দের সাথে মেলামেলা ছিলো তাঁর। নানান ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পরে।যাঁর ফলে বদনাম হয় সিয়ার পরিবার। তবু ও আরহান নাছোড়বান্দা। এখানে সিয়ার কি দোষ?
বেশ কিছু দিন পর যখন সকলে বুঝতে পারে সিয়া কে ছাড়া আরহান চলতে পারবে না তখন মেনে নেন এই সম্পর্ক। তবে কিছু শর্ত ছিলো। শর্ত গুলো এমন যে কোনো ধরণের বাজে কাজ করা যাবে না। বন্ধুত্ব যেমন হয় তেমন ভাবেই চলতে হবে। আর পড়াশোনা শেষ করে তারপর বিয়ে। চাকরির জন্য চিন্তা করতে হবে না। শুধু মাত্র পড়াশোনা শেষ করতে হবে। আরহান কিংবা সিয়া দুজনের এমন শর্তে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ ওরা ভালোবাসার মানুষ কে সম্মান করতে জানে। অবশেষে দুটি প্রাণ একে অপরের জন্য স্থায়িত্ব পায়। আরহান আর সিয়ার দিন চলতে থাকে নানান ধরনের হাসি ঠাট্টা তে।
———–
বাসার ভেতরে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আরহান। বাসা টা এভাবে চেঞ্জ হয়ে গেল কি করে? কোনো কিছুই আগের মতো নেই। সমস্ত ফার্নিচার সহ জামা কাপড় আসবাবপত্র সব নতুন। এগুলো আগে কখনো ছিলো না। আরহান অনেক টাই বুঝতে পারে। ভেতর টা জ্বলে পুরে যাচ্ছিলো। তবে নিজের মস্তিষ্ক বলছিলো স্থির থাকতে। সাজিদা রান্না করে নিয়ে আসেন। ছেলে কে নিজ হাতে খাইয়ে দেন। আরহান হাসে, তবে হাসি টি কৃত্রিম। যা বাহিরে সুন্দর দেখালে ও ভেতরে খুব ই ভয়ঙ্কর।
****
আরহানের মুখে জানটুসপাখি নামক বানী সিয়া কে ভেঙে চুরে দেয়। তবে সেটা প্রকাশ করে না সিয়া। আরহানের প্রতি সূক্ষ্ম এক জেলাসি ভাব রয়েছে তাঁর। এই যে আরহান ফর্সা আর সিয়া শ্যাম বর্ণ। ছেলেটার কন্ঠ খুব ই সুন্দর আর ওর মতে ওর কন্ঠ পুরোই বাঁশ গলা। বিষয় টা আরহান জানে তাই ওকে রাগানোর চেষ্টা ও করে। সিয়া ও কম কিসের? তাই তো আরহানের সুন্দর কন্ঠ কে বলে সুরেলা বাঁশ। বিষয় টা উপভোগ করে আরহান। বৃষ্টি তে ভেজা ওদের নিয়মিত অভ্যাস। ভালোবাসার বেশ কিছু স্মৃতি বৃষ্টি মুখর দিনেই তৈরি হয়েছে।
সিয়া ক্লাস নাইনে পড়ে তখন। ওর প্রাইভেট টিচার ওকে প্রপোজ করে দেয়। বিষয় টা আরহান কে জানাতেই আরহান রেগে যায়। ওর কলিজার দিকে তাকানো টা ও ওর সহ্য হয় না। সেখানে ভালোবাসা নিবেদন কিছু তেই মেনে নিবে না ও। তাছাড়া সিয়ার প্রতি বাজে নজর ও ছিলো লোক টার। বিষয় গুলো আরহানের ভেতরে ক্ষোভ জাগিয়ে তুলে। আরহান বলে
” আজকে প্রাইভেটে কল অন রাখবে। কি বলে আমি শুনবো। ”
” আচ্ছা। ”
মনে মনে নিজের পরিকল্পনা সাজায় আরহান। সিয়ার সাথে বেফাঁস কিছু বললেই ঐ হা’রামির খবর আছে। কথা মতো সিয়া কল চালু রাখে। তখনি শুরু হয় লোক টার বিশ্রী কথোপকথন। আরহানের শরীর রাগে গজগজ করতে থাকে। রোজ কার থেকে সেদিন একটু বেশি কিছুই বলে ফেলেছিলো। আরহান চরম রেগে যায়। তৎক্ষনাৎ চলে যায় সেখানে। সিয়ার চোখ দুটো ঝলমল করে উঠে। প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে আর কি লাগে?
আরহানের রাগ সম্পর্কে লোক টা অবগত হয় তখন যখন প্রচুর মা’র খায়। আরহান চিৎকার করে বলে
” শার্ট খোল। ”
ভয় পেয়ে শার্ট খুলে ফেলে লোক টা। আরহান এবার বলল
” প্যান্ট খোল এবার। ”
প্যান্ট খুলতে নারাজ লোক টা। তবে আরহান তো আরহান ই। যখন গাঁয়ে দুটো পরে তখনি প্যান্ট খুলে ফেলে লোকটা। প্যান্ট কাঁধে ঝুলাতে বলে আরহান। উপায় না পেয়ে সেটাই করে সে। শর্টস পরে পুরো মহল্লায় ঘুরায় ওকে। মানুষ জন হাসাহাসি করে খুব।
লোক টার মান ইজ্জত এর ফালুদা করে দেয় আরহান। সবে মাস্টার্স পড়ছেন তিনি। কে জানতো একটা অনৈতিক কাজে মান সম্মান এভাবে মাটির সাথে মিশে যাবে।
——–
পুরো ঘরে তল্লাসি চালিয়ে পাগল হয়ে যায় আরহান। কোথাও নেই সিয়ার চিহ্ন। একটা ছবি ও নেই, না আছে উপহার সামগ্রী। উন্মাদের মতো আচারণ করতে থাকে ছেলেটা। দরজায় নক পরতেই শান্ত হয়ে যায়।দাঁত কামড়ে নিজেকে স্থির করে। আরমান এসে বলল
” ভাইয়া চলো খাবার খাবে। ”
” হুম যা আসছি। ”
আরমান চলে যায়। তবে আরহানের ভেতরে ঝড় উঠে যায়।চোখ থেকে বিরতহীন পানি ঝরতে থাকে। এতো এতো কষ্ট নিয়ে কি করে বাঁচবে ওহ?
***
বাবার ব্যবসায়িক কাজে রায়গঞ্জ [ বিশেষ কারনে বাস্তব স্থান দেওয়া হলো না। ] থেকে ঢাকা তে আসে আরহান ও তাঁর পরিবার। ঢাকার একটা এপার্টমেন্ট এ থাকে এখন। তখন সিয়ার নবম শ্রেনির শেষের দিকে। দুজন এর ঝগড়া হয় খুব। সেই কারনে মনোমালিন্য চলছিলো। সিয়াই ফোন করে রাগ ভাঙায়। দুজনেই আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্না করে দেয়।
সিয়ার কি হলো কে জানে। ফোনেই আরো বেশি ঝমঝমিয়ে কাঁদতে লাগলো আর বলল
” এই মুহুর্তে তুমি আসবা আমার কাছে। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।”
” কি হয়েছে জানটুসপাখি? ”
” জানি না আমি। তুমি এখনি আসবা আমার কাছে। আমার ভালো লাগছে না কিছু। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।”
সিয়ার কন্ঠে বেশ ভাবান্তর হলো আরহান। রাত বারো টা তথা এখন মাঝরাত। সপ্তাহে দু বার এমনি তেই যায় সেখানে। তাছাড়া ঢাকা থেকে রায়গঞ্জ বেশ অনেক টা পথ। কি করবে বুঝতে পারে না। তবে ঐ যে মন সিয়ার ডাকে সাড়া না দিয়ে ও পারে না। সিয়ার একটি আবদার ফেলতে পারে ওহ? তাছাড়া সব প্রেমিক ই পারে দিনের বেলা দেখা করতে। কিন্তু কজন প্রেমিক পারে এই মাঝ রাতে লুকিয়ে এতো দূর থেকে দেখা করতে যেতে?
তাই মনে মনে স্থির করে নেয় যাবে সে।
তবে সমস্যা হচ্ছে রাত বারো টার পর গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। চাবি তো নেই। কি করবে মাথায় আসছিলো না। তবে বার বার সিয়ার মুখ চোখে ভাসতে লাগলো। মন কে আকুল না হতে দিয়ে যায় ছাঁদে। এপার্টমেন্ট এর পাঁচ তলা অব্দি কমপ্লিট হলে ও বাকি ফ্লোর গুলো কমপ্লিট হয় নি। তাই গেট ব্যতীত এক মাত্র যাওয়ার রাস্তা বিল্ডিং বেয়ে নামা। উপর থেকে নিচের দিকে তাকায় এক পলক। এখান থেকে পরে গেলে নিশ্চিত মৃ’ত্যু। তবু ও রিক্স টা নেয় সে। কখনো বিল্ডিং বেয়ে নামা হয় নি। নামার সময় বার বার সৃষ্টিকর্তা কে স্মরন করে। অবশেষে বেশ অনেক টা সময় পর নামতে সক্ষম হয়। নিচে নেমে যেন ধরে প্রাণ ফিরে। ভেতর টা স্বস্তি লাগছিলো খুব। প্রিয় মানুষের জন্য রিক্স নিতে ও বুঝি মজা অনুভব হয়।
আরহান মুখ দিয়ে একটা অদ্ভত ধরনের আওয়াজ করলেই সিয়া বুঝে যায় সেটা আরহান। আজ ও তেমনি হলো। সিয়ার সাথে দেখা হতেই দুজনের চোখে পানি এসে গেল। সিয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এমন টা কল্পনা ও করে নি ওহ। তখন তো কেবলি আবেগের বশে বলেছিলো আসতে। তবে কে জানতে এই পাগল প্রেমিক সত্যিই চলে আসবে?
———
সিয়ার স্মৃতি সব হারিয়ে গেছে তা বুঝতে পারলো আরহান। বুক টা ধক ধক করছে কেমন। সিয়ার মুখ টা কেমন আবছা আবছা লাগে। ঔষুধ এর প্রভাবে সব তো ভুলেই গিয়েছিলো। শুধু বেঁচে ছিলো সিয়া। ভালোবাসার জোড় এতো তা সত্যিই অবাক করে। আরহান নেশাক্ত ব্যক্তির মতো হয়ে যায়। সব কিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হয়। সিয়ার মুখ টা মনে না হলে ম’রেই যাবে ওহ।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে
#এমন_কেনো_তুমি [ সত্য ঘটনার অবলম্বনে। ]
#ফাতেমা_তুজ
#part_8
পৃথিবীর সব থেকে নিষ্ঠুর বোধহয় হয় বন্ধুরাই। আরহান এতো করে বলার পর ও কেউ সিয়ার একটা ছবি দিতে পারলো না। সবাই বলে নেই ছবি। হতাশা ভরা নয়নে এসে পরলো আরহান। দেহ থেকে র’ক্ত ক্ষরণ হয়ে চলেছে তবে সেটা কারোই চোখে পরে না। খাবারের টেবিলে বসে খাবার সম্পূর্ন করতে পারলো না ছেলেটা। সাজিদা আর ফারেগ একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আনমনেই চলে গেল আরহান। ফারেগ সাহেব ব্যথিত কন্ঠে বললেন
” বন্ধুদের কাছে গিয়েছিলো সিয়ার কোনো স্মৃতি নিয়ে আসার জন্য। ”
” কি বলেছে ওরা? ”
” যেমন টা বলার কথা ছিলো। ”
বুকে হাত চেপে শান্ত হলেন সাজিদা। চোখ দুটো ভিজে গেল। ফারেগ সাহেব এর খাওয়া হলো না আর। সবাই খাবার ছেড়ে উঠে গেল। সকলের চাওয়া এমন বাজে পরিস্থিতি যেন কারো জীবনে না আসে।
****
আরহানের বান্ধবী পছন্দ করতো ওকে। কথায় কথায় সিয়া কে সেটা বলে ফেলে ওহ। সিয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো। আরহান কোনো মতে ধামা চাঁপা দিতে বলল
” তাঁতে কি আমি তো ওকে পছন্দ করি না। তাই না? ”
” তো কি হয়েছে। শোনো ঐ মেয়ের থেকে দূরে দূরে থাকবা। ”
” দূরেই তো থাকি। ”
” না আরো দূরে থাকবা। ”
” আচ্ছা থাকবো। ”
” হুম মনে যেন থাকে। ”
” মনে থাকবে জানটুসপাখি। ”
খলবিলিয়ে হাসে সিয়া। আরহানের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে
” চলুন যাওয়া যাক সুরেলা বাঁশ। ”
ভুলক্রমে বলা কথা টার জন্য। এতো বড় খেসারত দিতে হবে তা জানা ছিলো না আরহানের। ঈদের দ্বিতীয় দিন ছিলো সেটা। কোনো এক কাজে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো সে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন আরোহী চলে আসে। হাত নাড়িয়ে বলে
” হায় আরহান। ”
” হেইই কোথায় যাওয়া হচ্ছে? ”
” এই তো এখানেই। ”
আরহান জানতো না ঝড়ের গতিতে কেউ একজন এসে পরবে। রিক্সা দিয়ে যাওয়ার সময় ই আরোহী কে দেখে ফেলে সিয়া। প্রচন্ড রেগে যায় সে। একে তো মেয়ে মানুষ দ্বিতীয় আরহান কে পছন্দ করে। রাগে রি রি করে উঠে সিয়া। ইচ্ছে করছে আরোহী কে মাটি তে পি’ষে ফেলতে। রিক্সা থেকে নামার ইচ্ছে নেই ওর। তাই বলে
” মামা রিক্সা থামান। ”
রিক্সা থামাতেই সিয়া কে দেখতে পায় আরোহী। রাগে আক্রোশে ফেঁটে পরছে মেয়েটি। যত্ন সহকারে জুতো টা খুলে হালকা উঁচিয়ে আরোহী কে দেখায়। তারপর ই রিক্সা নিয়ে চলে যায়। বিষয় টা এতো দ্রুত ঘটে যে আরহান নিজে ও থমকে যায়। অপমানে লজ্জায় কান্না করে দেয় আরোহী। মেয়েটার মুখের পানে তাকাতেই বেশ মায়া হয় আরহানের। বেশ লজ্জা ও পায়। সাথে প্রচন্ড রাগ হয় সিয়ার প্রতি। কোনো মতে আরোহী কে বুঝ দেয় যে সিয়া কে বকে দিবে। তবে আরোহীর কান্না থামছেই না। সত্যিই তো রাস্তায় এভাবে অপমান করলে কত টা ব্যথিত হবে একজন?
সিয়ার কোনো হেল দোল নেই। যেন মহান কাজ করেছে সে। আরহান এবার খুব জোরেই বলে
” এসবের মানে কি সিয়া? বন্ধু হয় আমার। এভাবে অপমান করে কেউ? ”
” তো? ওহ কেন তোমাকে হায় দিবে। ”
” দিতেই পারে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। ”
” না পারে না। এটা স্বাভাবিক নয়। কারণ তোমাকে পছন্দ করে ঐ মেয়ে টা। ”
” একে তো অন্যায় করেছো এখন আবার তর্ক করছো। জানো তোমার জন্য কতো টা অসম্মান হলো আমার। লজ্জায় মাথা টা নিচু হয়ে গেছে আমার। ”
বেশ বকা দেয় আরহান। সিয়ার রাগ হয় এবার। হবেই না কেন? একটা মেয়ের জন্য ওকে এভাবে বকলো সে। অভিমানে ঠেলায় কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। আরহান ও অনুভব করে এতো টা বলা উচিত হয় নি। দ্রুত ছুটে যায় সে। সিয়া কে ঘুরিয়ে সন্তর্পণে চুমু এঁকে দেয়। কথায় আছে প্রেমিকের ঠোঁটে মা’দকতা থাকে। তাই তো সিয়ার সমস্ত রাগ অভিমান আইসক্রিম এর মতো গলে যায়।
——-
জ্বর এসে গেছে আরহানের। মাঝ রাত্রী তে হঠাৎ করেই শরীরে ব্যথা শুরু হয়। তীব্র জ্বালায় উঠে যায় ঘুম থেকে। ঠিক তখনি এক রাশ হা হা কার এসে জাপটে ধরে ওকে। সিয়ার স্মৃতি আর অসুস্থতা মিলিয়ে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলে। বেডে উঠে বসলে ও এক পা যাওয়ার শক্তি নেই। মৃদু গোঙানির আওয়াজ বের হলো শুধু। চোখ দুটো কেমন গরম হয়ে গেছে। বোধহয় কার্নিশে পানি জমেছে। নাক টা বেশ অনেক টা লাল। খুব জোরেই সিয়া বলে চিৎকার করে উঠে ছেলে টা। আর সহ্য হচ্ছে না এই পৃথিবীর মায়া। সব ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়। এক রাশ অভিযোগ জমায়েত হয়েছে বুকে। কেন সৃষ্টিকর্তা সমস্ত ব্যথা ওর নামেই দলিল করেছেন?
****
আজ কোরবানীর ঈদ। সিয়া রা বাসা চেঞ্জ করে আরহান দের বিল্ডিং এর ওপাশের বিল্ডিং এ চলে গেছে। ছাঁদে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো আরহান আর সিয়া। নানান রকমের অঙ্গভঙ্গি করছিলো আরহান। যাঁর কারনে খিল খিল করে হাসছিলো সিয়া। মেয়েটার হাসির শব্দ যন্ত্র টি ভেদ করে অদ্ভুত শোনাচ্ছিল। দূর থেকে ও সিয়ার চোখ গুলো দেখতে পারছিলো আরহান। বরাবর ই আরহান বলে
” সিয়া তোমার এই চোখ আমি কখনোই চিনতে ভুল করবো না।তোমার মতো গঠনের হাজার টা মেয়ে যদি বোরখা পরে এক সাথে আসে তবু ও আমি খুঁজে নিবো আমার সিয়া কে। ”
অবশ্য সিয়ার চোখ গুলো দেখে চিনতে পারবে সেই প্রমান দিয়েছে ও আরহান। কি সুন্দর ছিলো সেই মুহূর্ত। আসলে ভালোবাসার প্রতি টি মুহুর্ত ই সুন্দর হয়।
আরহানদের গুরু টা একটু বেশিই তেজী এবার। ওকে কেউ স্পর্শ করে ও নি অব্দি তবু ও মাথা নাড়াতে থাকে। যেন এখনি কারো পেট ফুটো করে দিবে। সিয়া হাসতে হাসতে বলে তোমাদের গরুর সামনে যাও।
আরহান ছোট থেকেই গরু কে বেশ ভয় পায়। আর ওর ছোট ভাই ইমরান গরু কে বশে নিতে বেশ এক্সপার্ট। তো সেই দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গ করে সিয়া। বলে
” এমনি তে তো বেশ সাহস দেখাও। এখন তো দেখছি গরুর সামনে ও যেতে পারো না। ”
” বুঝছো গরু কে ভয় পাই না আমি। ”
” আচ্ছা? ”
” হুম দেখাচ্ছি। ”
সিয়া কে দেখাতে কিছু ঘাস নিয়ে গরুর কাছাকাছি যায় আরহান। বুকের ভেতর ধীম ধীম করছে। এই বুঝি গরু টা দিয়ে দিবে গুঁতো। আরেকটু কাছে যেতেই গরু টা মাথা ঘুরাতে থাকে। ভয় পেয়ে যায় আরহান। হাতের ফোন ফেলে দিয়েই ছুট লাগায় সে। এক ছুটে চলে আসে ছাঁদে। ওর কান্ড দেখে সিয়ার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরার মতো অবস্থা। তবু ও হাসি থামছে না মেয়েটার। আরহান ইমরান কে বলে ফোন টা দিয়ে যেতে। ইমরান ফোন নিয়ে আসে ছাঁদে। আরহানের অবস্থা দেখে ইমরান ও হাসতে থাকে খুব। দুজন মিলে যেন ওকে সার্কাস এর জন্তু পেয়ে বসেছে।
সিয়া ফোন দিয়ে বলে
” এক গরু আরেক গরু কে ভয় পায়। ”
ব্যাস হয়ে গেল। রাগ হয় আরহানের। মাথায় রাগ নিয়ে কল টা কেঁটে দেয়। ক্রোধ মানুষ কে কতো টা উন্মাদ করে দেয় তা আরহান কেই দেখে বোঝা যায়। নিজের সমস্ত ভয় কে পিছু ফেলে গরুর কাছে যায় সে। গরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সিয়া এখনো হাসছে। নামাজের প্রায় আঁধ ঘন্টা পার হয়ে গেছে। মহল্লায় সমস্ত গরু লম্বা লম্বি করে রাখা। এক টার পর এক টা জ’বাই করা হচ্ছে। তিন চার টে গরুর পর ই ওদের টা জ’বাই দেওয়া হবে। আরহানের রাগ বেড়ে যায় তির তির করে। গরুর বাম সিং আর ডান থুতনি ধরে সর্ব শক্তি দিয়ে মোচর দেয়। মাটি তে পরে যায় গরু। সবাই ছুটে এসে গরুর পা ধরে। যাঁর ফলে উঠে দাঁড়ায় আরহান। সিয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এক পলক উপরে তাকিয়ে বাঁকা হাসে আরহান। ইগো বড় মারাত্মক বিষয়। ছোট সময়ে মাদ্রাসায় পড়েছিলো আরহান। তাই গরু কোরবানির নিয়ম কানুন জানা ছিলো। বাসা থেকে নাইফ নিয়ে আসে। আরহানের এক মামা আছেন। ভদ্র লোক ই ছোট সময়ে ওকে মাদ্রাসায় পড়ানোর কথা বলেন। তিনি খুব খুশি হোন। তিনি ও ধরেন সকলের সাথে। দোয়া পড়ে গরু জ’বাই দেয় আরহান। সিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়। যেন নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে।
কাজের বাহনা দিয়ে সিয়া দের ছাঁদে যায় আরহান। সিয়া তখনো দাঁড়িয়ে ছিলো। যেন প্রাণ নেই ধরে। আরহান এক পা দু পা করে এগিয়ে যায়। ভাষা হীন সিয়ার একদম কাছে এসে ফিসফিস কন্ঠে বলে
” জানটুসপাখি। ”
ব্যাস সিয়া ঘুরতেই হাতে থাকা র’ক্ত মুখে মাখিয়ে দেয় সাথে কিছু টা ঠোঁটে ও লাগিয়ে দেয় আরহান। হাসতে হাসতে চলে আসে সে স্থান থেকে।
কাজের চাপে আর যাওয়া হয় নি সিয়ার কাছে। পরে অবশ্য শুনতে পেয়েছিলো সারা দিন নাকি বমি করেছে মেয়েটা। খারাপ লাগলে ও তেমন পাত্তা দেয় না। গরু বলা না একদম ঠিক হয়েছে এবার। হু
——–
সকালের দিকে জ্বর নামে শরীর থেকে। তবে সারা রাত বেশ অস্বস্তি তে কাঁটে আরহানের। খাবার মুখে দিলে ও রুচি পায় না। বমি আসে খুব। ভেতর থেকে যেন অরুচি এসে ধরেছে ওকে। কে জানে কি হলো।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে