এমন_কেনো_তুমি,part_9,10

0
751

#এমন_কেনো_তুমি,part_9,10
[ সত্য ঘটনার অবলম্বনে। ]
#ফাতেমা_তুজ
#part_9

দুটো স্লিপিং পিল খেয়ে ও চোখে ঘুম নিয়ে আরহানের। শরীর ব্যথায় লাল হয়ে আছে। যেন টোকা দিলেই র’ক্ত বের হবে। মাথার চুল গুলো খামচে ধরলো সে। হালকা হালকা আর্তনাদ আসছে বুক চিরে। শরীরের তাপ মাত্রা তির তির করে বাড়ছে। বোঝা যাচ্ছে খুব দ্রুতই জ্বর আসতে চলেছে। আরহান স্থির না থাকতে পেরে জোরে চিৎকার করে উঠলো এবার। ওর বিকট আওয়াজে ছুটে এলো মা ও ভাইয়ে রা। এসে দেখলো কেমন অদ্ভুত আচারন করে চলেছে আরহান। আরহান মানসিক ভাবে অসুস্থ হওয়ার পর সাজিদা বেশ ইমোশনাল হয়ে গেছেন। অল্প তেই কেঁদে বুক ভাসান। অবশ্য মায়ের মন তো সন্তান এর জন্য কাঁদবেই। ইমরান ফারেগ কে কল করে, তিনি বলেন ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসতে। ইমরান চলে যায় মহল্লার পাশের মোড়ে। আরহানের চোখ অদ্ভুত ভাবে লাল হয়ে গেছে। সাজিদা জড়িয়ে ধরেন ছেলে কে। বলেন
” বাবা কি হয়েছে তোর। এমন করছিস কেন? কষ্ট হচ্ছে খুব? বাবা তাকা আমার দিকে। ”

আরহান কথা বলার মতো পরিস্থিতি তে নেই। মুখ দিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারণ করতে পারলো না সে।তাঁর পূর্বেই চার পাশের সব ঝাপসা হতে লাগলো।

****

সিয়া তখন নবম শ্রেনির ছাত্রী। রায়গঞ্জ থেকে ঢাকা তে চলে গেছে আরহান রা। তবে রায়গঞ্জে যাওয়া আসা ছিলো খুব। এর মূল কারণ অবশ্য সিয়া। তবে দুদিন আগে সিয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে ওর। খুব ই সাধারণ কারনে হয়েছে এই ঝগড়া। কথায় আছে খুব কঠিন বিষয়ে ঝগড়া লাগে না আবার খুব সহজ ভিত্তিহীন বিষয়ে ঝগড়া লেগে যায়। তদ্রূপ ওদের জীবন টা। ওর নানুর বাসাও রায়গঞ্জ। ঢাকা থেকে রায়গঞ্জ আসলে সেখানেই থাকে ওহ।
ত্রিশ রোজার শেহরি রাত আজ। রাত বারো টা কিংবা তাঁর কাছাকাছি সময়। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে ওর কাছে। মেয়েলি কন্ঠ
” কেমন আছেন? ”

” জী ভালো আছি। আপনি কে এতো রাতে কল করেছেন? ”

” চিনতে পারছেন না? ”

” না। ”

” আমি আপনার এক্স। ”

কথা শুনে ভিম্রি খায় আরহান। বলে কি এই মেয়ে। আরহান গম্ভীর কন্ঠে বলল
” আমার এক্স আসলো কোথায় থেকে? আমি তো জীবনে প্রেম ই করলাম একটা।”

” আপনি ভালো করে মনে করে দেখেন। আমাকে কতো ঠকালেন আপনি। ”

কথা টা শোনা মাত্র রাগ হয় আরহানের। মাঝ রাতে ফাজলামি শুরু করেছে। আরহান রাগি কন্ঠে বলল
” মজা পাইছেন? আজব মাঝ রাতে এক টা ছেলে কে ফোন দিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলা শুরু করছেন। মাথা নষ্ট হয়েছে নাকি? যত্তসব আলতু ফালতু পাবলিক। ”

বকা শেষ করে যেই না কল কাঁটবে ওপাশ থেকে মেয়েটি অনড়গল বলতে লাগলো
” স্যরি স্যরি স্যরি ভাইয়া। আমি আসলে একটু মজা করছিলাম। আমি মাহি। ”

মাহি নাম টা তৎক্ষনাৎ চিনতে পারলো না সে। একটু ভাবতেই মনে পরলো ওর। স্কুল লাইফে জুনিয়র একটা মেয়ে ছিলো এই নামে। আরহান কে বেশ সমীহ করতো। বড় ভাইয়ের মতো দেখতো, আর আরহান ও ছোট বোনের মতো ট্রিট করতো ওকে। মাহি সহ ওর কিছু বন্ধু দের বেশ ভাব ছিলো। জুনিয়র হলে ও এক সঙ্গে চলাফেরা করতো সবাই। যেন সমবয়সী ফ্রেন্ড সার্কেল। আরহানের বাসায় আসা যাওয়া ও ছিলো মাহির। ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে। তবে মাঝে বেশ কিছু বছর ধরে যোগাযোগ ই ছিলো না।
তাই ঠিক সেভাবে মনে পরছিলো না। আরহান অবাক কন্ঠে বলল
” কি রে তুই। কি অবস্থা তোর? ”

” এই তো ভালোই। ”

” তো এতোদিন পর কোথায় থেকে এলি? আমার নাম্বার ই বা পেলি কোথায়? ”

” তোমার এক বন্ধুর থেকে নিয়েছি। তোমাকে তো পাওয়াই যায় না। ”

” হুম আব্বুর বিজনেস এর জন্য ঢাকায় থাকি তো। ”

” হুম শুনলাম। ”

বেশ কিছু কথা হলো দুজনের। আরহান বলল
” তো কেমন যাচ্ছো সময়? ”

” যাচ্ছে ভালোই। আচ্ছা শোনো ভাইয়া তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আমার। ”

” আমি তো বোন আজ ই চলে যাবো সেহরি শেষ করেই। অন্য একদিন দেখা করি? ”

” সেহরি খেয়েই চলে যাবে? ”

” হ্যাঁ এই তো ভোর হলেই চলে যাবো। ”

” আচ্ছা সমস্যা নেই। তাহলে তুমি বরং এক টা কাজ করো। সেহরি খাওয়ার পর তো হাঁটতে বের হই আমি। তো তুমি ও আসো। রাস্তা তে দেখা করবো নে। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। তো দেখা হচ্ছে। ”

” হুম। ”

কল কেঁটে শ্বাস ফেললো আরহান। কতো দিন পর স্কুল লাইফ এর এক প্রিয় সদস্যের সাথে কথা হলো। যদি ও সিয়ার সাথে ঝগড়া হওয়ার কারনে মন খারাপ ছিলো তবে এখন বেশ অনেক টাই ফুরফুরে লাগছে।

রায়গঞ্জের প্রায় সবাই ই সেহরি শেষ করে হাঁটতে বের হয়। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের ই দেখা পাওয়া যায়। আরহান ও সেহরি শেষ করে বের হলো। রাস্তা তে এসে মাহির সাথে দেখা হলো। মাহির আচারণ বাচ্চা দের মতো হয়ে গেল মুহুর্তেই। আবেগে আপ্লুত সে। উৎকন্ঠিত স্বরে বলল
” আরে ভাইয়া। কতো দিন পর দেখলাম তোমাকে।আমার যে কি ভালো লাগছে। স্কুল থেকে যাওয়ার পর আর দেখাই হলো না। ”

” হুম রে। স্কুল লাইফ টা বেশ মজার ছিলো। ”

” তুমি তো অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো। ”

” আরে না চেঞ্জ হবো কেন। ”

” এই তোমার মনে আছে স্কুল পালিয়ে আমরা যে ঘুরতে যেতাম? ”

” মনে থাকবে না আবার। তোরা কজন পিচ্ছি বাচ্চা কাচ্চা গুলো কম তো জ্বালাস নি। ”

আরহানের কথায় হো হো করে হাসতে লাগলো মাহি। স্কুল লাইফে সিনিয়র দের সাথে এতো ভালো সম্পর্ক হতে পারে তা কখনোই কল্পনায় আসে নি ওর। একটা আলাদা মায়া লেগে ছিলো। তাই তো বলে স্কুল জীবনের থেকে সেরা সময় আর কিছু নেই। কথার এক পর্যায়ে স্কুলের কথা মনে পরে যায় খুব।এই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যেতো ওরা। হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের দিকেই যায় দুজনে। পুরনো সব স্মৃতি যেন চোখে এসে লাগছে। ওদের মস্তিষ্ক এখন সেই ছোট বেলা তে ফিরে গেছে।

ঐ রাস্তাতেই একটা বিশাল পরিত্যক্ত জুট মিল রয়েছে। একদম ই ভূতুড়ে পরিবেশে পরিনত হয়েছে সেটা। মিল এর ভেতরের অংশে জঙ্গল হয়ে গেছে। সহসা কেউ সেখানে যায় না বা যাওয়ার সাহস করে উঠে না। শুধু ভূতুড়ে পরিবেশ সেই কারনে নয়। কারণ সেখানে মা’র্ডার ও হয়। জানের ভয় সবার ই আছে। তাঁর আগেই রয়েছে এক মন্দির। খুব ছোট যখন ছিলো তখন এই মন্দিরের কাছে আসতো ওরা। মস্তিষ্ক তখন এতো সব বুঝতো না। মন্দিরে প্রসাদ দেওয়া হতো সেই কারনেই আসা হতো মূলত। সেসব কথা মনে হতেই দুজনে হাসাহাসি শুরু করলো। কোনো খেয়াল ই নেই যেন। সেই সময়ে মাহি কে নানা কথা বলে ভয় দেখাতো আরহান। সেগুলো আজ ও বলা শুরু করেছে।
” হুম মিথ্যে বলো শুধু। ”

” আরে মিথ্যে না সত্যিই মাথার খু’লি পাওয়া যায়। ”

” হুম বলছে। ”

” আচ্ছা যাহ মিথ্যেই বলেছি। ”

দুজনে আবার হাঁটা শুরু করলো। মাহি হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বলল
” ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্য টা দেখো পুরাই খারাপ। ”

” মন খারাপ করিস না বোন। ”

” হুম কি করার আর। নেশা করে জানলে জীবনে ও যেতাম না ওর সাথে। এমন বাজে লোকের সাথে বনিবনা কারোই হবে না। ”

” থাক আর মন খারাপ করিস না। ”

” হুম। ”

কথা বলতে বলতে জুট মিল এর কাছাকাছি এসে পরেছে তো এতোক্ষণ পর সেটা খেয়াল হলো ওদের। মাহি আরহান কে বলল
” তো চলো আমরা ব্যাক করি। ”

” হুম অনেক টা দূর এসে পরেছি। ”

ফিরতি পথে হাঁটা লাগালো। জুট মিলের কাছাকাছি থেকে দুজনে মন্দিরের কাছাকাছি এসেছে মাত্র। ঠিক তখনি ওদের পাশ দিয়ে তুমুল গতিতে একটা গাড়ি চলে যেতে লাগলো। ওদের থেকে দুই তিন হাত দূরে এসে গাড়ি টা থামালো। আরহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে।

——

জ্ঞান ফিরেছে আরহানের। চোখ পিট পিট করে তাকালো সে। চোখ খুলেই সাজিদার মুখ টা দেখতে পেলো। হালকা শরীরে উঠে বসলো। মহল্লার ডাক্তার এসে দেখে গেছেন ওকে। জ্বরের ঔষধ দিয়ে গেছেন। সাজিদার মুখ টা শুকনো। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
” তুই রেস্ট নে আমি খাবার নিয়ে আসি। ”

আরহান মাথা ঝাঁকালো কেবল। চোখ মুখ এখনো লাল হয়ে আছে। আরমান পাশে বসে আছে। বোঝা যাচ্ছে সে ও কেঁদেছে। হতাশার এক টা নিশ্বাস ফেললো আরহান। জীবন এতো কঠিন হয় কেন?

চলবে

#এমন_কেনো_তুমি
#ফাতেমা_তুজ
#part_10

গাড়ি থেকে বেশ উঁচা লম্বা একজন বেরিয়ে আসলেন। বয়স পঁয়ত্রিশ বা তাঁর একটু বেশি হবে। চেহারায় কেমন একটা বিদঘুটে ছাপ। মাহি বলল
” আসসালামু আলাইকুম। মামা কেমন আছেন? ”

মাহির মুখে মামা ডাক শুনে ভরকে গেল আরহান। কিছু টা আড়ষ্ঠতা কাজ করছে। লোক টা বললেন
” এই তো ভালো। তো মামুনি কি করছো এখানে? ”

” সেহরি খেয়ে বের হয়েছিলাম। তো ভাইয়ার সাথে দেখা হলো তাই এমনি কথা বলছিলাম। ”

” ওহহ তো মামুনি চলো বাসায় দিয়ে আসি। আর তুমি ও চলো। ”

শেষ কথা টা আরহান কে বললেন জলিল। আরহান বলল
” না না আপনি যান। আমরা যেতো পারবো। ”

” আরে না না তোমরা ছোট মানুষ। এই শেষ রাতে একা একা না যাওয়াই ভালো।”

লোক টার আচারণ এতো সুন্দর আরহান নিজে ও একটু থেমে যায়। তবে মন টা টানছে না কেন যেন। আরহান আবার বলল
” না না যান আপনি। আমরা যেতো পারবো। কোনো সমস্যা হবে না। ”

” ভাইয়া চলোই না। সমস্যা নাই আমার মামা শশুর হয়, মামাই তো। ”

মাহি বলার পর আরহানের কেমন যেন লাগে। এখন ও না যেতে চাইলে বিষয় টা কেমন দেখায় তাই গাড়ি তে উঠে যায় আরহান।

জলিল নানা রকমের প্রশ্ন করে। টুকটাক কথা বলার মধ্যে আরহান অনুভব করে মদের গন্ধ। জলিল এর শরীর থেকেই ম’দের গন্ধ আসছে। ইতোমধ্যই ভোরের আযান শেষ হয়ে গেছে। কেমন যেন লাগলো ওর। জলিলের হাতে সেভেন আপ এর বোতল। মূলত সে ম’দ পান করে এসেছে। এখন ভাব করছে যেন সে সেভেন আপ ই পান করছে শুধু। তো জলিল সেভেন আপ এর বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল
” খাও তোমরা। ”

” না। আমরা তো রোজা রেখেছি। ”

” আরে খাও একটু সমস্যা নাই। ”

লোক টার কথা গুলো কেমন ভার ভার শোনাচ্ছে। ভালো লাগছে না আরহানের। লোক টা কে সুবিধার ও ঠেকছে না। স্কুলের কাছে এসে জলিল বললেন
” আরে আমি তো বিশ হাজার টাকা ফেলে আসছি। টাকা টা নিয়ে আসি। ”

” আচ্ছা আমাদের নামিয়ে দেন। তারপর আপনি টাকা টা নিয়ে আসেন। ”

” আরে না। তোমাদের দায়িত্ব নিয়ে এসেছি যখন, তো আমি তোমাদের পৌছে দিয়েই আসবো। ”

ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যায় সেই আগের জায়গাতে। জুট মিলের পাশে একটা ভাঙা পরিত্যক্ত রাস্তা রয়েছে। জলিল ড্রাইভার কে বলল
” এই রাস্তা তে যা। ”

ঐ রাস্তা তে যাওয়ার কথা বলাতে আরহানের মনে সন্দেহের বীজ বপন হয়। এই রাস্তা তে যেহেতু যেতে বলছে তো কোনো মতলব আছে। আরহান কিছু টা নিচু স্বরে মাহি কে ফিস ফিস করে বলল
” তুই পালা। যে করেই হোক তুই পালা। সমস্যা হতে পারে। ”

মাহি ও খুব ভয় পেয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
” আমি এখন কি করবো? ”

আরহানের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। মাহির হাতে ফোন ছিলো। সেটার দিকে নজর যেতেই ফোন নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেয় আরহান। মাহি চিৎকার করে বলতে লাগলো
” মোবাইল, মোবাইল, আমার মোবাইল পরে গেছে। ”

মাহির চিৎকারে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেয়। মাহি নেমে যায়। আরহান জলিল কে উদ্দেশ্যে করে বলল
” বাইরে আসেন আপনার সাথে কথা আছে। ”

জলিল এর উদ্দেশ্যে কিছু টা বুঝতে পেরেছে আরহান। বাইরে নেমে এসে আরহান কে একটু সাইট এ নিয়ে যায় জলিল। আরহান সোজা প্রশ্ন করলো
” কি সমস্যা আপনার? এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন আমাদের? ”

এতোক্ষণ এর ভালো ব্যবহার সব সাইটে ফেলে নিজ খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন জলিল। বলে
” কেন তুই বুঝিস না কেন নিয়ে আসছি? ”

” না বুঝি না। ”

” আমারে চিনিস? ”

” না আমি আপনারে চিনি না। কে আপনি? আপনারে চিনার কি প্রয়োজন আমার। আপনাকে চিনবো ই বা কেন আমি? ”

” তুই কখনো আমার নাম শুনিস নাই? ”

” না শুনি নাই। ”

” আমি জলিল মৃধা। ”

আরহান বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো। লোকটার কথা ঠিক ঠাক বিশ্বাস হলো না।
পরে মনে পরলো রায়গঞ্জের মোস্ট পপুলার স’ন্ত্রাস এর নাম জলিল মৃধা। যাঁর নামে অহরহ মা’র্ডার কেইস রয়েছে। সে হয়তো নিজেও জানে না কতো গুলো মা’র্ডার করেছে। আরহান কিছু টা স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল
” সে যেই হোন আপনি স’ন্ত্রাস বা অন্য কিছু যাই হোক। আমার কাছে কি আপনার? ”

জলিল হাতের ইশারা করলো। ইশারা বরাবর তাকালো আরহান। নদীর পাড়ের দিকে রুম রয়েছে। সেখানেই জলিল এর আড্ডা খানা। সেই দিকেই ইশারা করে বলল
” ঐ দিকে মেয়ে টা কে নিয়ে দিয়ে আসবি। কিচ্ছু করবো না তরে। তুই শুধু দিয়ে আসবি ওরে। ”

” ও না আপনার আপন ভাগ্নের ওয়াইফ? ওরে দিয়ে আপনি কি করবেন? ও তো আপনার মেয়ের মতো। ”

” ও আমার মেয়ের মতো না কিসের মতো সেই হিসেব তো করতে বলি নি তোকে। তোরে যেটা করতে বলছি তুই সেটা কর। ”

” না বলেন আপনি কি দরকার। বললে তো সহজ হবে বুঝতে। ”

আরহান এক বার ভেবেছিলো হয়তো ওনার ভাগ্নের সাথে বনিবনা হয় না সেই জন্য শাসন করবে। দুই একটা ধমক দিবে। কিন্তু অতো গভীর চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে নি। জলিল তাঁর ম’দ্যপান করা মুখ দিয়ে আবার বলল
” তুই বুঝিস না আমি কি করবো? ”

” না আমি বুঝতেছি না কি করবেন আপনি। বলেন তাহলেই তো হয়। ”

এতোক্ষণ পর বিশ্রী কিছু ভাষা ব্যবহার করেন জলিল। যাঁর ভদ্র ভাষা মাহি কে রে’প করবে সে। আরহান অবাক কন্ঠে বলল
” কি বললেন এটা? আপনার বুক কাপলো না একবার? ও না আপনার মেয়ের মতো! ”

” আমার কি কাপলো না কাপলো সেটা তোর দেখার বিষয় না। তুই জানিস ও না আমি কি করতে পারি। ”

” আপনি কি করতে পারেন আর না পারেন।এটা আপনিই ভালো জানেন।”

” এখন বল করবি কি না। ”

” না করলে কি করবেন? ”

” তুই যদি না করিস তাহলে তোর চুল সব ফেলে ন্যাড়া করে কালি লাগিয়ে দিবো ঐ যে আলকাতরা আছে না আলকাতরা মেরে দিবো। তারপর পুরো এলাকায় ঘুরাবো আর বলবো এই মেয়ের সাথে ন’ষ্টামি করতে গিয়ে ধরা পরছিস তুই। আর তারপর তরে মা’ইরা ফেলুম। ”

” আমার ভরসাতে ওহ এই পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে আসছে। আমার দায়িত্ব ওরে পৌছায় দেওয়া ঠিক ভাবে। আপনি যা করার করেন। আমার শরীরে এক ফোঁটা র’ক্ত থাকতে ওর কিছু হতে দিবো না। প্রয়োজন হলে আপনার ভাগ্নে কে ডাকেন। শুনলাম সে ও তো নেশাখোর। ”

” বেশি কথা বলিস না। ”

কথার মাঝেই জলিল এর ড্রাইভার হুট করে এসে বলল
” ভাই, ভাই মেয়ে তো পালিয়ে গেছে। ”

ড্রাইভার টা মাহি পালিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর ই বলেছে এই কথা। মূলত মাহি কে পালানোর সুযোগ দিয়েছে সে। এখন জান বাঁচানোর জন্য বলতে এসেছে। আরহান নিজে ও দেখে নি মাহি কে পালাতে। মনে মনে স্বস্তি ফেললো ছেলেটা। তবে আরহান ভেবেছিলো মাত্র ই মাহি পালানোর জন্য দৌড় দিয়েছে। জলিল চিৎকার করে উঠে। ওনার ছেলে দের উদ্দেশ্য করে বলে
” কি রে তোরা কোথায়? মেয়ে টা রে ধর। ”

বাতাসের গতিতে জঙ্গলের ভেতর থেকে আরহানের বয়সী পাঁচ ছয় জন ছেলে বের হয়ে আসলো। সবাই রাস্তা দিয়ে দৌড়ানো শুরু করেছে। ওদের দৌড়ানো দেখে আরহানের আত্মা থেকে পানি নেমে গেল। একবার ধরতে পারলেই তো সব শেষ। আরহান যেন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য। শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল ছেলেটার। সাত পাঁচ না ভেবেই জলিল এর নাক বরাবর ঘুষি দিলো সে। সামান্য আর্তনাদ করে জলিল বলল
” হারা’মির বাচ্চা। ”

আরহান আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ছুট লাগালো ঐ ছেলে গুলোর পেছনে। ওর উদ্দেশ্য একটাই আর সেটা হলো মাহি কে বাঁচানো যে কোনো মূল্যে। নিজের জানের কথা যেন ভুলেই গেছে। আরহান খুব ভালো দৌড়াতে পারতো। ওর গতি এতো টাই বেশি ছিলো যে এক টা সময় ঐ ছেলে গুলো কে ও পিছে ফেলে দিলো। দৌড়াচ্ছে ঠিক ই তবে কোথাও মাহি কে দেখতে পাচ্ছে না। তারপর বেশ অনেক টা দূরে চোখ যায় হালকা এক আলো। নিভু নিভু আলো টা মুহুর্তেই মিলিয়ে যায় আঁধারে। আরহান বুঝতে পারে ঐ টা অটো রিক্সা। এই রাস্তা তে অটো রিক্সা এতো দ্রুত চলে না। কিছু টা নিশ্চিত হয় যে মাহি চলে গেছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে। মাহি তো বেঁচে গেল তবে এখন তো নিজেকে বাঁচতে হবে। যদি সত্যিই বদনাম রটিয়ে দেয় তাহলে তো মান সম্মান যাবে। আরহান এই চিন্তা নিয়ে ছুটতে লাগলো। তবে আশ্চর্য জনক ভাবে সেই গতি টা পাচ্ছে না সে। যেন পায়ের নিচ থেকে শিখর গজিয়েছে। আরহান ঘামতে শুরু করেছে। তখন মনের ভেতর এমন জোড় ছিলো যে প্রয়োজনে সবাই কে মে’রে ফেলবে তবু ও মাহি কে বাঁচাবে। তবে এখন সেই জোড় টা নেই। ভয় কাজ করছে কেমন। দৌড়াতে দৌড়াতে মন্দিরের কাছে এসে পরেছে সে। মন্দিরে দুটো কুকুর ছিলো। খুব ই ডেঞ্জারাস তাঁরা। কুকুর গুলোর একটা ধারণা যে আগে ছুটে সে চোর। আর যে পেছনে থাকে সে ভালো। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই কুকুর গুলো আরহানের পেছনে ছুটতে থাকে। একটা কুকুর এসে তো আরহানের হাতের আঙুলে কামড় বসিয়ে দিলো। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো আরহান। কুকুরের মাথা তে ঘুষি মারতেই কুকুর টা পরে গিয়ে মাটি তে গড়াগড়ি খেতে থাকে। কিছু দূর আগাতেই হোঁচট খায় আরহান। ওর গতি এতোই বেশি ছিলো যে পিচ করা রাস্তা তে পরে গিয়ে দুই হাঁটু দুই কুনুই আর মাথার কিছু অংশ কেঁ’টে যায়। সেই কাঁ’টা ছেড়া নিয়েই আবার উঠে দাঁড়ায় আরহান। ব্যথা নিয়েই দৌড়াতে শুরু করে। চারপাশে কেমন নির্মমতা ছড়িয়ে। মনে হচ্ছে এই জীবন বড্ড ভয়ঙ্কর।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here