#এমেলিয়া,০৭,০৮
০৭
মনু…..
দূর থেকে হাক ছারে কবির।
আরে কবির যে…কেমন আছিস দোস্ত?
–আর কইও না।কামে আয়ছেলাম।তুমি এহেনে কি হরো?মাইডা কেডা? ও মোর আল্লাহ গেদু কি করছ তুই মাশাআল্লাহ মাইয়া তো না একছের আসমানী পরি।
অদ্রি অপরাধীর মত তাকিয়ে থাকে,কবিরের প্রশ্নের কি জবাব দেবে?আরে ভাই যা ভাবছিস তা নয়।ওর নাম এমেলিয়া।এখানেই থাকে।
–ও তা আগে কইতা।দোস্ত…দোস্ত দে না মোর লগে সেটিং করাইয়া।
শোনা মাত্র অদ্রির মাথা অসাড় হতে লাগলো।কিঞ্চিৎ রাগ ও বোধ হয় হলো।বলে কি বেকুবটা।মনে মনে যে অদ্রিও প্রচন্ড ভালো বেসে ফেলেছে এমেলিয়াকে তা টের পেলো অদ্রি।কোনো মতে সেদিনের মতো কবিরকে ভাগিয়ে নিয়ে যায় অদ্রি।নাহ এবার মনের কথাটা এমেলিয়াকে বলতে হবে।
এর পর থেকে কবির মাঝে মাঝেই অদ্রিকে ফোন দিয়ে এমেলিয়ার ব্যাপারে জানতে চায়।অদ্রি ভাবনায় পড়ে যায় এই কবির তো এমেলিয়ার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।কে বলেছিল মেয়েটাকে এত সুন্দর হতে?আমিই কি করব??কবির… কবিরতো আমার সেই বন্ধু যে আমার সকল বিপদে আমার পাশে থেকেছে।নিজের জীবনের পরোয়া না করে আমার জীবন বাচিঁয়েছে। ওর জন্য নিজের ভালোবাসা স্যাকরিফাইজ করব?নাকি স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবব?কেন আমার সাথেই এরকম হয়?ভাবতেই দোটানায় পড়ে যায় অদ্রি।
স্যার স্যার….
আকষ্মিক ডাকে ইসতিয়াক আহমেদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।টিমের সবাই ও অবাক হয়ে যায়।এত কাছে থেকে কেউ এভাবে ডাকে?
অদ্রি প্রফুল্য চিত্তে বলে ওঠে, স্যার মনে হয় একটা ক্লু পেয়েছি।
— কি পেলে অদ্রি?
–স্যার একটু খেয়াল করে দেখুন, যে কয়টা খুন হয়েছে লাস্ট কয়েকটা মাসে তার সবগুলো একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে হয়েছে।সবার মাঝে টান টান উত্তেজনা।
আগেরগুলো এলোমেলো তারিখে হলেও বিগত কয়েকটা একটা টাইম মেইনটেইন করেছে।টিম মেম্বার জিমসাম বলে ওঠে, বাংলা মাসের ১১তারিখ। তাইনা স্যার?
ভেরি গুড,ব্রাভো,ওয়েল ডান। ইউ আর রিয়ালি জিনিয়াস।ইসতিয়াক আহমেদ বলতে থাকেন।
–এরপর আমাদের কাজ কি হবে স্যার?
শোনো এরপর আমরা……
এমেলিয়া বসে আছে, ঠিক দুই ইঞ্চি পাশে অদ্রি।ওদের মধ্যে একটা গভীর প্রণয় বয়ে চলছে।অথচ মুখে কেউ কাউকে ভালোবাসি বলেনি আজ পর্যন্ত।
এমেলিয়া প্রথম অদ্রির কাছে আবদার করে বসে।ভাইয়া আমায় একদিন বুড়িগঙ্গা ঘুরিয়ে দেখাবেন নৌকা দিয়ে??
–সাতাঁর জানিস?
— নাহ।
— আচ্ছা চল।
এখন?অবাক হয়ে যায় এমেলিয়া।
–হ্যাঁ এখনই।
আদতেই দু’জনে বৃহস্পতিবারের জ্যাম ঠেলে চলে যায় সদরঘাট।এই প্রেম যে কি আজব এক মায়া।দুনিয়ার সবথেকে বিচক্ষণ মানুষকেও এক নিমিষে বাচ্চামিতে ভরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।এমেলিয়া অদ্রির পাগলামিতে হারিয়ে যায়।কখনও ভাবে নি তার অবাস্তব চিন্তা সত্যি হয়ে ধরা দিতে পারে।এই ধূসর জীবনেও যে বসন্তের কৃষ্ণচূড়া হয়ে ঝরে পড়তে পারে কে জানত সে কথা?কে জানতো অদ্রির মনেও অবণী ব্যতিত অন্য কোনো মেয়ে স্থান পাবে?
সেদিন চাতক পাখির মতো দুজনে উড়ে বেড়ায় সারা শহর।ঘুরতে ঘুরতে দুজনে চলে যায় কেরানীগঞ্জ। রাত যে কখন গভীরতা ধারণ করে চারিদিকে নিকষ কালো আধার নামিয়ে দিয়েছে সে খেয়াল তাদের নেই।দুজনে আপন মনে হাটছে।মাঝে মাঝে এমেলিয়ার হাতের সাথে ছোয়া অনুভব করছে অদ্রি।সারা শরীরে উষ্ণতা ভর করছে। আকাশের চাঁদ ও যেন তাদের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দেওয়ার জন্য আজ আলো ছড়ায়নি।ওদের দেখে মনে হচ্ছে,আজ কোথাও কোনো বাধা নেই, সমাজ নেই, সংস্কৃতি নেই,কলঙ্ক নেই,আজ কোনো ভাষা নেই,পুরো পৃথিবীটা শুধু তাদের।
চলবে……
লেখনীতে-Shahana urmi
#এমেলিয়া
নীরবতা ভেঙ্গে এমেলিয়া বলে,ভাইয়া?এখন কি করবো?আমার খুব ভয় করছে।তুমি আমার পাশে পাশে থাকো।
ধুর পাগলি, কিচ্ছু হবেনা বলে অভয় দেয় অদ্রি।তবে.. এত রাতে কোনো গাড়িও পাবোনা মনে হচ্ছে।চল সামনে হাঁটতে থাকি একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিকই হবে।
কিছুদূর হাঁটার পর এমেলিয়ার আকষ্মিক চিৎকার করে ওঠে। অদ্রি ভাইয়া……
অদ্রি আৎকে উঠে, স্বভাবতই বুকে থুথু মাখে।এই মেয়েটা এত চিৎকার করতে পারে..!
–কি ভুত দেখেছিস,গাধা কোথাকার??
–না না সামনে তাকাও দেখ কি ওটা..
অদ্রি তাকাতেই দেখতে পায় বিশাল ভাঙা বাড়ি।মনে হয় যুগান্তর ধরে কেউ এ দিক টা পায়েও মাড়ায় না। কি আর করার!আজ রাতটা এখানেই থাকতে হবে।দুজনেই ভয়ে ভয়ে বাড়ির ভেতরটায় ঢুকে পরে।আশে পাশে সুনশান,দূর দূরান্তে কোনো মানুষের আনাগোনা নেই,মাঝে মাঝে শেয়ালের হাঁক শোনা যাচ্ছে। ঝি ঝি পোকারা যেন প্রতিযোগীতায় নেমেছে কে কত জোরে ডাকতে পারে।কিন্তু দুজন মানুষের মাঝে বয়ে চলছে পিনপতন নিরবতা যেন আজ চোখ কথা বলবে।শুধুই চোখের ভাষা বুঝে নেওয়ার পালা।অদ্রি ধীরপায়ে এমেলিয়ার দিকে এগিয়ে যায়।এমেলিয়া দুপা পিছিয়ে যায়।এমেলিয়ার বুকের প্রশান্ত ঢেউগুলো যেন অশান্ত হয়ে আছড়ে পড়ছে কূলে।আজ অজানায় হারিয়ে যাবে দুজনে।আচমকা আবারো চিৎকার, ভাইয়া….
অদ্রির দিকে এগিয়ে আশা ভয়ংকর প্রাণীটাকে ছোঁ মেরে ধরে নেয় এমেলিয়া। সবুজ চোখ জোড়া আগুনের ফুলকির মত জ্বলতে থাকে।
অদ্রি হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।যে মেয়েটা সামান্য কুকুর বিড়াল দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালায় সেই মেয়েটাই কি না এভাবে সাপ হাতে….?কেমন যেন সন্দেহের চোখে চেয়ে থাকে অদ্রি।এমেলিয়া বুঝতে পেরে এক ঝটকায় দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সাপটাকে।
আমি জানিনা এটা কিভাবে করলাম বিশ্বাস কর কৈফিয়তের সূরে বলে মেয়েটা।
রুম্মার শরীর ভীষণ খারাপ।দু দিনের জ্বরে এমন অবস্থা হয়েছে যা দেখার মত না।বার বার শুধু আমলিয়া আমলিয়া বলে ডাকছে।
রাফি সিতারাকে ধমকের সুরে বলে, একটু খুঁজে আয়না দেখনা এমেলিয়া দিদি কোথায়,রুম্মাকে তো আর রাখা যাচ্ছে না।
যাচ্ছি রাফি,এক্ষুনি যাচ্ছি বলে দৌড়ে বেরিয়ে পরে মেয়েটা।দলের বাকি ছেলেমেয়েরাও কান্না জুড়ে দিয়ে।
অদ্রি টিএসসির সামনে থেকে বেলোয়ারী কিনছে,এমেলিয়া পছন্দ করে দিচ্ছে। এমন সময় সিতারা দৌড়ে আসে,এমেলিয়া দিদি এমেলিয়া দিদি…
— কিরে হাপাচ্ছিস কেন কি হয়েছে?চুড়ি নিবি?
সিতারা অসহায়ের মত কাঁদতে থাকে,রুম্মার শরীর ভীষণ খারাপ।তোমাকে দেখতে চাচ্ছে।
এমেলিয়ার হাতথেকে চুড়িগুলো ছিটকে পড়ে যায়।মাথা ভৌ ভৌ করে ঘুরছে।রুম্মা ছাড়া যে ত্রিভূবনে আর কেউ নাই তার।হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। পাগলের মত দৌড়াতে থাকে।পিছন পিছন সিতারা আর অদ্রি ও দৌড়ায়।
গিয়ে দেখে রুম্মার অবস্থা আশঙ্কাজনক।জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে থাকে এমেলিয়া।
রুম্মা রুম্মা কিচ্ছু হবেনা তোমার।এখনি তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো আমি। আল্লাহ আমার থেকে আমার রুম্মাকে তুমি নিয়ে যেয়োনা।এতক্ষণে রুম্মা কথা বলার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে,অদ্রিকে ইশারায় ডাকে।এমেলিয়ার হাত টেনে অদ্রির হাতের উপর রাখে, দুচোখ ভরে দেখতে থাকে দুজনকে।চারপাশে কান্নার আওয়াজ যেন আরো অসহ্য পিড়া দিচ্ছে, তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুম্মার প্রাণ চলে যায়।হাত,পা এলিয়ে দেয় রুম্মা।এমেলিয়ার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়।চারদিকে থমথমে পরিবেশ।এক মূহুর্তে কি হয়ে গেল।
রুম্মার হাসিখুশি মুখ,এমেলিয়া নামের ভুল উচ্চারণ, শাসন বারণ কত্ত স্মৃতি চোখের উপর ভাসছে অথচ মাথার উপর রুম্মা নামের বটছায়া আর নেই।ভাবতেই ভিতরটা হু হু করে উঠছে।রহিমা বানু নামটা এমেলিয়ার উচ্চারণ করতে ভালো লাগতোনা বলে রুম্মা ডাকত।সেই রুম্মাই যে এতগুলো মানুষের অন্নদাতা হয়ে সবাইকে আগলে রাখবে,এত মায়া রেখে যাবে….
পর্ব ৮।
চলবে….
লেখনীতে-Shahana urmi