#এমেলিয়া,১১,১২
১১
অদ্রি কি করবে বুঝতে পারছেনা।আপাতত চুপ চাপ রয়েছে।এমেলিয়ার মুখ থেকে শুনতে হবে।যদি সে দোষী হয় তা তাহলে,কেন?কিভাবে এই জগতে এসেছে এসব কিছু জানতে হবে।
এমেলিয়া,সেদিন তুমি আমায় কিছু বলতে চেয়েছিলে।মনে আছে??
মৌনতা ভেঙ্গে এমেলিয়া জানায়,
কবে?কি বলতে চেয়েছিলাম?আমার কিছু মনে পড়ছে না।
ভ্রু কুচকে আড়চোখে তাকায় অদ্রি।
তোমার হয়েছে কি বলো তো?আজকাল সবকিছু ভুলে যাচ্ছ…চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব তোমায়।
এমেলিয়া মনে মনে ভাবছে গতকাল সে কি কাউকে খুন করেছে? মনে করতে পারছেনা।কেন পারছেনা? বার বার মনে হচ্ছে সে অদ্রিকে কিছু বলতে চায়।কিন্তু কি বলতে চায় সে?উফ মাথার যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাচ্ছি..
দুজনে রিক্সা করে যাচ্ছে।অদ্রির কাধে এমেলিয়ার মাথা।হাতের মধ্যে হাত।অদ্রি স্মৃতি রোমন্থন করছে।এমেলিয়া, তোমার মনে আছে?এই রাস্তায় আমরা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম।তুমি সেদিন প্রথম আমায় আলিঙ্গন করেছিলে।
এবারও অদ্ভুদভাবে এমেলিয়া মাথা নাড়ায়।
কোথায়?আমার তো এই রাস্তায় আগে এসেছি বলে মনে পড়ছে না।
অদ্রি অবাক হয়ে যায় কিন্তু কিছু বলেনা।হয়ত বেচারির মনে নেই।তাতে কি… ব্যাক্তি এমেলিয়া তো আমার সাথেই আছে, সামনেই আছে।তাকে ছুঁতে পারছি,দেখতে পারছি ভালোবাসতে পারছি।অদ্রি আর তেমন একটা পাত্তা দেয়না ব্যাপারটাকে।
সব রিপোর্ট দেখে ডাক্তার ভদ্রলোক অদ্রিকে জিগ্যেস করেন,রোগী আপনার কি হয়?
অদ্রির ভেতরটা কেমন করছে।অবণী এতদিন হলো তাকে ছেড়ে গিয়েছে।তাহলে কি হিস্ট্রি রিপিট হবে?এমেলিয়ার ভালোবাসাও হারাতে হবে??অজানা সংশয়ে চুপসে আছে সে।আনমনে বিড়বিড় করছে..
–এই যে মি.অদ্রি।
ধাতস্থ হয়ে অদ্রি জবাব দেয়,
ইয়ে মানে আমার ফিওন্সি।
ডাক্তার ইশারা করে এমেলিয়াকে বাইরে যাওয়ার।
জি আচ্ছা, বলে এমেলিয়া ডাক্তারের রুম থেকে বাইরে চলে আসে।যাওয়ার পাণে অদ্রি তাকিয়ে থাকে।
এমেলিয়া করিডোরে হাটছে আর ভাবছে কি এমন হয়েছে যে আমার সামনে বলা যাবে না?
অদ্রি সাহেব,আপনি ঠিক আছেন?
ডাক্তারের কথায় অদ্রি হুশে ফেরে।
জ্বি আমি ঠিক আছি।এমেলিয়ার কি হয়েছে আমাকে বলুন, সিরিয়াস কিছু?আপনি আমার এমেলিয়াকে সুস্থ করে দিন প্লিজ প্লিজ..আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। আপনি দেখুন প্লিজ..
ডাক্তার ধীর গলায় বলেন,আসলে…
— আসলে কি ডাক্তার??
— আসলে রিপোর্টে যা দেখলাম তাতে রোগী আলঝেইমার্স ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত।
— ডিমেনশিয়া?সেটা আবার কি??
ডাক্তার অদ্রিকে বুঝিয়ে বলা শুরু করে,
মস্তিষ্কের অনেক অসুখের একটি উপসর্গ এই ডিমেনশিয়া।এর স্বাভাবিক ও সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া।মস্তিষ্কে স্মৃতির প্রবেশপথ হিপ্পোক্যাম্পাস এই রোগটি আক্রমণ করে ফলে হিপ্পোক্যাম্পাস শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়।যার দরুন স্মৃতি গুছিয়ে রাখতে পারেনা।২০ বছর আগের জিনিস ঠিকই মনে থাকে তবে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো মনে রাখা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পরে।এটা আসলে বয়স্ক মানুষের অসুখ।তবে অসুখের কি আর বয়স আছে?মানুষ বয়স বোঝে, অসুখ তো বোঝে না।তবে এই রোগটি ধনী দেশগুলোতে হয়। আলঝেইমার্স ডিমেনশিয়া বংশজনিত রোগ।আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন রোগীর বাবা বা মার কিংবা বংশের কারো এই রোগ আছে কিনা?
সব অদ্রির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।’ল’ এর প্যাঁচ ও এর থেকে ঢের সহজ।
অদ্রি মানতে পারছে না।ডাক্তারকে সে আত্নবিশ্বাসের সাথে বলে,
–আপনার কোথাও ভুুল হচ্ছে ডাঃসাহেব।আমিতো কোনো লক্ষণ দেখিনি কখনো।ও তো দিব্যি সুস্থ।
–আপনি দেখেছেন, হয়ত খেয়াল করেন নি।এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরিচিত জায়গাও ভুলে যায়।কথা গুছিয়ে বলতে পারেনা।আচরণে,মেজাজে,ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসে।বেশি হয়ে গেলে সকালে কি খেয়েছে,চেকবইয়ে সই করেছে কিনা কোথায় ঘুমায়,সব ভুলে যায় সব।আপনি কি কোনো লক্ষণ ই খেয়াল করেন নি??
অদ্রির হাত পা অসার হতে থাকে।এসি রুমে বসেও তরতর করে গা ঘামতে থাকে।এসব লক্ষণ তো সে এমেলিয়ার মধ্যে দেখেছে।বুকের ডান সাইটে হৃদপিন্ডে মোচড় দিয়ে ওঠে।
চলবে…..
লেখনীতে-Shahana urmi
#এমেলিয়া
আসলে অদ্রি সিটার্স ইনভার্সাস।অর্থাৎ যেসকল মানুঢের হার্ট শরীরের ডানদিকে থাকে তাদের বলে সিটার্স ইনভার্সাস।
কেমন একটা ভয় ঢুকে গিয়েছে অদ্রির মনে।তার মানে এমেলিয়া কি একটা সময় গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে??কাঁদতে থাকে অসহায়ের মত।ডাক্তার কি করবে বুঝতেছেন না।এত বড় মানুষের কান্না দেখে তিনি নিজেও কিছুটা ইতস্তত বোধ করছেন।নাহ,এই ছেলেকে শান্ত করা আমার কাজ না।উপায় না পেয়ে তিনি এমেলিয়াকে ডেকে পাঠান।
এদিকে ইসতিয়াক আহমেদের খুনের রহস্য উদঘাটনের সিংহভাগ দায়িত্ব এসে পড়েছে অদ্রির উপর।অদ্রি যেন অথৈই সাগরে পড়ে গিয়েছে।চারদিকে অকূলপাথার। ভালোবাসা বাঁচাবে নাকি দায়িত্ব?কোন দিকে যাওয়া উচিত তার।আচমকা খেয়াল করে আজ ৫/৬ বছর ধরে এমেলিয়াকে চেনে সে, অথচ রুম্মার ঘর পর্যন্তই তার দৌড়। এমেলিয়ার ঘর টা পায়ে মাড়িয়েছে কিনা সন্দেহ।বার বার ডাক্তারের কথা মনে পড়ছে,এমেলিয়ার রোগটা বংশগত,এ রোগ ধনীর দেশে হয়।এমেলিয়ার বাবা মা কে?অরিজিন ই বা কি আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।
যত দিন জিগ্যেস করেছে প্রতিবারই এমেলিয়া বলেছে সে নিজেও জানেনা তার পরিচয়।ও কি সত্যি জানেনা?নাকি ভুলে গিয়েছে।এটা ভুলে যাওয়া তো সম্ভব নয়।
এই সুযোগ, এই সময়টায় এমেলিয়া ফুল বিক্রির জন্য বের হয়।আমাকে এখনি যেতে হবে। কিছুতো পাওয়া যাবে ওর ঘর থেকে আমার বিশ্বাস।যদিও ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করা বা তার অনুপস্থিতিতে তার ঘরে প্রবেশ করে তার জিনিসপত্রে হাত দেওয়া আমার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না।তারপর ও এমেলিয়ার জন্যই আমাকে এগুলো করতে হচ্ছে।আমাকে মাফ করে দিও প্রিয়তমা…
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এমেলিয়ার জড়াজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে এসে পরে অদ্রি।ঘরের এক পাশে একটা বেড,তার পাশেই আলনা আর ছড়ানো ছিটানো কিছু আজেবাজে জিনিস।তারপরও কি সুন্দর গুছানো লাগছে।এদিকটায় টেবিলের উপরে কিছু পুরোনো ইংরেজি নভেল বই।অদ্রির চোখ ছানাবড়া অবস্থা।এ কি করে সম্ভব।যেই মেয়েটা রাস্তায় ফুল বিক্রি করে তার ঘরে ইংরেজী বই??সাত পাচঁ না ভেবে একটা বই তুলে নেয়। এমেলিয়া পড়াশোনা জানে?আর কি কি জানিনা আমি এমেলিয়ার ব্যাপারে?এখন তো মনে হচ্ছে কিছুই জানিনা।
ঠিক পাশেই ছোটমত ঘুনে ধরা আধভাঙ্গা কাঠের আলমারির দিকে চোখ যায় অদ্রির। কয়েক ডজন চুড়ি দেখতে পায় যেগুলো অতি যত্নে একটা রুমাল পেচিয়ে রাখা। চুড়িগুলো অদ্রিই কিনে দিয়েছিলো।আর রুমালটা??গোলাপের কাটায় লেগে সেদিন যখন এমেলিয়ার তুষারাবৃত হাত থেকে ছিটকে পড়ে কয়েক ফোটা শোণিত বিন্দু, উপায়ান্তর না পেয়ে পকেটে থাকা রুমালটা অতি যত্নে পেঁচিয়ে দিয়েছিল অদ্রি।
এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসার চিহ্নগুলো কত যত্নে রেখে দিয়েছে মেয়েটা। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে অদ্রি।কিছুক্ষণ বসে থাকে সে ভালোবাসাময় চিহ্নগুলো হাতে নিয়ে।কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তার জীবন??
পর্ব ১২।
চলবে…..
লেখনীতে-Shahana urmi