এমেলিয়া,১৩,১৪

0
325

#এমেলিয়া,১৩,১৪

১৩

চৈতন্য ফিরলে আবারো কাজে লেগে পরে অদ্রি।তল্লাশি করতে করতে বিছানার বালিশের একপাশে কভারের মাঝে একটি ডায়েরি দেখতে পায়।এটাও তুলে নেয় ব্যাগে।সংগোপনে চলে আসে এমেলিয়ার ঝুপড়ি থেকে।

আমার একটু জরুরি কাজে বান্দরবান যেতে হবে।তোমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।
কথাটা শুনে এমেলিয়ার সবুজাভ চোখ দুটো কেমন যেন চঞ্চল হয়ে যায়।
তোমার কি কিছু মনে পড়ছে,এমেলিয়া??
এমেলিয়া কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছেনা।অকপটে বলে ওঠে,তুমি থাকলে আমি উত্তাল সমুদ্রের যেতেও রাজি আছি।
অদ্রি হেসে ফেলে,আপাতত পাহাড়ে গেলেই চলবে।চলো প্রস্তুতি নেও।আগামীকালেই বের হবো আমরা।
ঠিক আছে।

সেদিন যখন গভীর রাতে অদ্রি হতাশায় নিমজ্জিত ছিল কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না ঠিক তখনই মনে পরে এমেলিয়ার ঘর থেকে আনা বই আর ডায়েরির কথা।বই এর কভার পেজ উল্টাতেই দেখতে পায় গোটা গোটা সুন্দর বাংলা অক্ষরে লেখা- ‘প্রিয়তমা
অলিভিয়া সিলভা…
আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ
ওগো বিদেশিনী।।

অন্তিম পেইজে লেখা-
মাদাম..
লোয়ার নদীর তীরে হাতে হাত রেখে হাটার নিমন্ত্রণ –
গ্রাহ্য করবে কি?

ডায়েরিটা পড়ে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।মূলত এমেলিয়ার বাবা ছিলেন বাংলাদেশি আর মা ফ্রান্সের অধিবাসিনী। হায়ার এডুকেশনের জন্য এমেলিয়ার বাবা যখন পাড়ি জমান সুদূর ফ্রান্সে, তখন দেখা পান মাদাম সিলভার।অলিভিয়া সিলভা তখন তারুণ্যের মায়া কাটিয়ে সবে চব্বিশে পা দেওয়া সুন্দরী রমণী।অন্যদিকে এহতেশামুল হুসাইবাহ মহাশয় অলিভিয়া সিলভাকে দেখেই মুগ্ধ। সিলভার মুখরতায় তার পড়াশোনা লাটে উঠার অবস্থা।কিভাবে ভালোবাসার কথাটা প্রকাশ করবেন তিনি?

স্বাভাবিকভাবেই হাই- হ্যালো দিয়েই কথা শুরু করেন।যেহেতু দুজনেই একই বিষয়ে পড়াশোনা করেন সেহেতু ব্যাপারটা সিলভা সহজভাবেই নেন।তাছাড়া ফিলোসোফির ছাত্রী হওয়ার সুবাদে নতুন নতুন মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে ভালোই লাগে।এর ওপর ভদ্র মহিলা রবীন্দ্রনাথের ভক্ত।একটু আধটু বাংলা ভাষাও জানতেন।তবে সেটা বোধ করি এহতেশামুল সাহেব জানতেন না।

চলবে….

লেখনীতে -Shahana urmi

#এমেলিয়া

সিলভা…
–ইয়াহ।
— আই ওয়ানা টেল ইউ সামথিং স্পেশাল।
–হোয়াট?
–ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।
–হোয়াট ইউ সেইড?
— নো, নাথিং স্পেশাল,জাস্ট জোকিং।
–ওহ ওকেই।
এহতেশামুল সাহেবের গলা, বুক ধরফর করছে।তাও ভালো সিলভা বাংলা ভাষা জানেনা।জানলে নিশ্চয় এতক্ষণে ২/৪ টা চড় বসিয়ে দিত…
ভেবে মনে মনে খানিকটা লজ্জিত বোধ করেন তিনি।বেচারা মসিঁয়ে তো জানেনা,সিলভা তার মনের ভাষা,চোখের ভাষা দু’টোই বুঝে ফেলেছে এ কয়টা দিনে।এহতেশামুল সাহেবের ব্যক্তিত্ব আর বাচনভঙ্গি তে সিলভা প্রথম থেকেই বিমোহিত ছিল।

অভিব্যক্তি ব্যক্ত করার উপায় না পেয়ে বইয়ের সাহায্য নেন তিনি।সুযোগ বুঝে সিলভার জন্মদিনে সেই বই উপহার হিসেবে প্রদান করেন, যাতে লেখা ছিল তার মনের কথা।ব্যাস এভাবেই শুরু হয় তাদের কাছে আসার গল্প।
একপর্যায়ে জেনে যায় সিলভার বাবা।সম্ভ্রান্ত খ্রিষ্টান পরিবারের ভদ্রলোক মেনে নিতে পারেন নি মেয়ের ভালোবাসা।তার কাছে দুনিয়ার সবথেকে জঘন্যতম কাজ হচ্ছে অন্য ধর্মের কাউকে ভালোবাসা।বেড়িয়ে পড়ে সিলভা।ভালোবাসার জন্য নিজের দেশ, ধর্ম সব ছেড়ে চলে আসেন বাংলাদেশ।ভালোই চলে তাদের সংসার।কিন্তু সু-উচ্চ অট্টালিকার রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রাজকন্যার এ বনবাস মধ্যবয়সী বাবার সহ্যশক্তি কমিয়ে বয়সটা যেন আরো প্রৌঢ়াতে নিয়ে ঠেকায়।একমাত্র মেয়ের শোকে অপগমন করেন তিনি।খবরটা যখন আসে তখন আর সিলভার কিছু করার থাকে না।ঠিক তারপর থেকেই সিলভার মেজাজে পরিবর্তন আসে,আবল তাবল বকতে থাকে, স্মৃতিশক্তিও কমে যায়।ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে সেদিন একই সাথে সিলভার প্রেগনেন্সি এবং ডিমেনশিয়ার কথা জানা যায়।রোগের ব্যাপারে বললে সিলভা জানায় তার দাদামশাইয়ের ও এই রোগ ছিল।

এতক্ষণে অদ্রি বুঝতে পারে এমেলিয়ার অসুখের কারণ। সেই সাথে তার স্পষ্ট বাংলা ভাষার শব্দচয়নও। যেন প্রত্যেকটা জটলার সমাধান পাচ্ছে সে।উত্তেজনায় ঘুম উড়ে যায়।উঠে এক কাপ কফি বানায়। বাইরে তখন নির্জনতা ভর করছে,দুএকটা গাড়ির হর্ণ ছাড়া কোনো শব্দই শোনা যাচ্ছে না।ঢাকা শহরে যেন নেমে এসেছে অন্ধকার অমানিশা।আবারও ডায়েরিটায় মুখ গুঁজে অদ্রি..

হাসি কান্না মান অভিমান সব মিলিয়ে কেটে গিয়েছে ৫টা বছর।সিলভার অসুখটা ভীষণ রকমের সমীহ জাগাচ্ছে আজকাল।ডাক্তারের কথায় এহতেশামুল সাহেব স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে হাওয়া বদল করতে বের হন।

ফ্রান্সে থাকাকালীন প্রেমিক এহতেশামুল হুসাইবাহর কাছে থেকে অনেকবার বান্দরবানের সৌন্দর্যের কথা শুনেছিলেন সিলভা।যার দরুন অষ্টাদশী বালিকার মত বায়না ধরেন বান্দরবান যাওয়ার।

বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি হলো বান্দরবান। বান্দরবানের দক্ষিণ-পশ্চিমে কক্সবাজার, উত্তর-পশ্চিমে চট্রগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙামাটি ও পুর্বে মায়ানমার। ভৌগলিক কারণেই বান্দরবানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। পাহাড়, নদী ও ঝর্ণার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান জেলা।অগত্যা ঠিক হয় এখানকার থানচি উপজেলায় অবস্থিত তিন্দুতে তারা যাবে।
তিন্দুকে বলা হয় বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ।পাহাড়ি সাঙ্গু নদী বয়ে গিয়েছে পাশ দিয়ে।এখানে পাহাড়,মেঘ,নদী,ঝর্ণা,রহস্য ও রোমাঞ্চ সবকিছু একসাথে পাওয়া যায়।শক্ত কঠিন পাথর বুকে নিয়ে বয়ে চলে সঙ্খ নদীর স্বচ্ছ পানির ঢল।পাহাড়গলা নদীতে গা ডুবিয়ে সময়ে মাছেদের সাথে আড্ডা দেওয়া যায়।সবকিছু মিলিয়ে জায়গাটা এডভেঞ্চারাস।চলে যায় তারা তিন্দুতে।
তখনও ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেনি কি হতে যাচ্ছে তাদের জীবনে..

১৪
চলবে….

লেখনীতে-Shahana urmi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here