এমেলিয়া,১৭,১৮

0
450

#এমেলিয়া,১৭,১৮

১৭

সুবল চাচার কথায় নিশ্চুপ হয়ে যায় এমেলিয়া।কেমন যেন হিসেব মিলছে না।সাত পাচ কি যেন ভাবে সে।

সুবলের ধুরন্ধর বুদ্ধি,এমেলিয়ার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেনা। অসঙ্গতির দেখা পেলে আবারো ধামকি ধুমকি দেয় এমেলিয়া।এক পর্যায়ে প্রাণ ভয়ে বাকি সত্যটা বলে দেয় চাচা।
সেদিন যখন নিজের সম্ভ্রম আর স্বামী সন্তানকে বাঁচাতে সিলভা মানুষরূপী জানোয়ারটার পা জড়িয়ে কাকুতিমিনতি করে,গগনবিদারী আর্তনাদেও একফোটা বুক কাপেনি তার।পশুত্ব যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল।সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে বরং ওদের সাথে মিলে সুযোগের সৎ ব্যবহার করে এই নরপিশাচ।

হায় নিষ্ঠুর সত্য…সারাজীবন শুনে এসেছে সত্য সুন্দর।তবে এই সত্যিটা যেন জাহান্নামের আগুনের থেকেও ভয়ংকর।এমেলিয়া স্তব্ধ হয়ে মাটিছে আছড়ে পড়ে।কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছে কেন বেঁচে আছি আমি?পৃথিবীর থেকে তো আমার আর কিচ্ছু পাওয়ার নেই।তবে পৃথিবীতে আমার কি প্রয়োজন?
পরক্ষণেই নিজের মন কে শক্ত করে নেয় এমেলিয়া।সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক কে কোনো না কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে দুনিয়াতে পাঠান।তবে কি পৃথিবী থেকে এই সব জঞ্জাল দূর করার জন্যই আমার জন্ম??
রাম দা টা শক্ত করে ধরে উঠে পড়ে এমেলিয়া।
এক কোপে মানুষরূপী পশুটার ধর থেকে মাথাটা আলাদা করে ফেলে।

সবুজাভ চোখজোড়াতে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,আমি পেরেছি পাপা মাম্মা,আমি পেরেছি।শান্তি লাগছে তার।কনীনিকাদ্বয় বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নেয় সে।

অদ্রি এতক্ষণ সবকিছু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো।বাকরূদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে এমলিয়ার দিকে।নিজের ভালোবাসার মানুষটার এই ভয়ংকর রূপ যেন তাকে পাথড়ের ভাস্কর্য বানিয়ে দিয়েছে।অদ্রি ভেবেছে এমেলিয়া হয়তো জানেনা তার উপস্থিতি।অদ্ভুত ভাবে তাকে অবাক করে দিয়ে এমেলিয়া নিজে থেকে অদ্রির কাছে যায়।
সেদিন যখন বাসায় ফিরে আমার টেবিলে থাকা একটা বই আর ডায়েরি টা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তখনই সন্দেহ হয়েছিলো। পরে যখন বান্দরবান আসার কথা বললে,আমার সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত হলো।ভাবলাম সুযোগটা আর হাত ছাড়া না করি।তুমি আমার সত্যটা জানলে আমায় ঘৃণা করবে ভেবে অনেকবার বলতে গিয়েও সাহস পাইনি।তুমি চাইলে আমায় রাষ্ট্রীয় আইনে,অথবা তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে পারো।আজ আমার আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই।কিচ্ছুনা।

অদ্রি অপলক তাকিয়ে আছে প্রাণপ্রিয় প্রেয়সীর দিকে।আজও এক নিঃশ্বাসে সবগুলো কথা বললো মেয়েটা।সেদিনও বলেছিলো।অথচ সেদিন আর আজকের মধ্যে আকাশ সমান ফারাক।কি করবে,কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা অদ্রি।

অদ্রি,শোনো..
শুধু একটা হিসেব আমি মেলাতে পারছিনা।শেষবারের মত আমায় একটু সাহায্য করবে??

চলবে……

লেখনীতে-Shahana urmi

#এমেলিয়া

এমেলিয়া ঘুমিয়ে আছে।পাশেই অদ্রি।অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।কত্ত নিষ্পাপ একটা মুখ,ঠিক যেন স্লিপিং বিউটি।অদ্রি ভালোবেসে একটু ছুয়ে দিলে নিষ্প্রাণ দেহ যেন প্রাণ ফিরে পাবে।চঞ্চলতা উপচে পড়বে।
বেশ কিছুক্ষণ পর অদ্রি উঠে চলে যায়।

এদিকে উপর মহল থেকে বার বার চাপ দিচ্ছে অদ্রিকে।কেইস ট্রান্সফার করে সিআইডিকে দিতে চাচ্ছে।তবে অদ্রি তা চাচ্ছে না।

আসতে পারি??
তাকাতেই হকচকিয়ে ওঠে অদ্রি।একি,ম্যাম আপনি এই সময় আমার কাছে?
চেয়ারম্যান ম্যাম হুট করে অদ্রির হাত ধরে কান্না করে ফেলে।অনুনয়ের সহিত বলে,
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম আমরা।অনেক চড়াই উৎরাই পাড় করে তিনি আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন।এই পজিশনে নিয়ে এসেছেন।তুমি তো ওনার সাথে সাথে থাকতে।তাকে তো তুমি চেনো বলো।উনার সাথে কার শত্রুতা থাকতে পারে?বাবা তুমি পারবেনা উনার খুনিকে খুঁজে বের করতে??এতগুলো দিন হলো আমি ঘুমাই না,ঠিক মত খেতে পারিনা,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিও না বাবা।আমাকে কথা দাও তুমি উনার খুনিকে কঠিন শাস্তি দিবে,কথা দাও…

অদ্রি কিভাবে বলবে,পিতৃ সমতুল্য ইসতিয়াক আহমেদ মোটেও ভালো মানুষিকতার ছিলেন না।উনার কাছে নারী মানেই ছিল ভোগ্যপণ্য।আবার যে ম্যাম বটছায়ার মত তাকে আগলে রেখেছে।অর্থের অভাবে পড়াশোনা নষ্ট হওয়ার উপক্রমায়,অসুখের দিনে,এই মহিয়সীই যে মায়ের মত তার সকল বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাকেই বা ফিরিয়ে দিবে কিভাবে?তাকে ফেরানোর সাধ্য যে আমার নেই।

এমেলিয়ার রোগটা ইদানিং জেঁকে বসেছে। অদ্রিও ঠিকঠাক সময় দিতে পারছেনা।
–এমেলিয়া,,সেদিন তুমি বলছিলে তোমার কোনো হেল্প লাগবে।কি সাহায্য লাগবে বলো?
এমেলিয়া এ কটা দিনে ভুলে গিয়েছে কি বলতে চেয়েছিলো।দীর্ঘক্ষণ স্মৃতি আওড়ানোর পর মনে পড়ে যায় তার।
–পাপা ডায়েরির কয়েকটা পেইজ ফাঁকা রেখে দিয়েছেন।আমি মেলাতে পারছিনা কি হয়েছিল।এ ব্যাপারে তুমি আমায় সাহায্য করতে পারবে?

সেদিন ডায়েরি পড়ে ঘটনা কি হতে পারে আন্দাজ করে অদ্রি সোজা চলে যায় পুরোনো খবরের কাগজ ছাপানোর প্রেসগুলোতে।কয়েকজনের সহযোগীতায় ঐ সময়কার সকল খবরের কাগজ যোগার করে।এক্ষেত্রে ডায়েরিতে লিখে রাখা তারিখগুলো ভীষণ রকম সাহায্য করে অদ্রিকে।ভাগ্য যেন সেদিন নিজে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো অদ্রিকে।অনেক খোঁজাখুঁজির পর বড় বড় মোটা কালির একটি হেডলাইনে তার চোখ আটকে যায়।”রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন,স্বামীর আত্মহত্যা। “ডিটেইলসে গেলে বুঝতে পারে এটিই এমেলিয়ার বাবা মা।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর কোনো রকমে স্ত্রী কন্যা সহ এহতেশামুল সাহেব ফিরে আসেন ঢাকায়।পশুর দল এমনভাবে জখম করেছিলো যে এহতেশামুল সাহেবের দুটো পা ই অকেজো হয়ে পড়ে।এক পর্যায়ে প্যারালাইজড হয়ে যায়।ডাক্তার জানিয়ে দেয়,রিকোভারি করা সম্ভব নয়।অন্যদিকে সিলভার রোগ, সেই সাথে মানসিক ট্রমা নিতে না পেরে বিছানাগত হয়।ছোট্ট এমেলিয়া প্রচন্ড ব্লেডিং হওয়ার ফলে অর্ধমৃত হয়ে পড়ে।ঘনিষ্ঠ ডাক্তার বন্ধুকে দিয়ে এহতেশামুল সাহেব কন্যার চিকিৎসা করান।অবশ্য আশে পাশের কানাঘুঁষার দরুন পুলিশও এসেছিলো কিন্তু আত্নসন্মানের ভয়ে এহতেশামুল সাহেব তাদের থেকে সত্যাটা চেপে যান।কোনো রকম কেইস করতে নারাজ।পুলিশকে রিকোয়েস্ট করেন ঘটনা যাতে পাঁচকান না হয়।

সিলভা প্রতিদিন চিৎকার করতো।আতঙ্কে থেকে থেকে শিউরে উঠতো।বার বার স্বামীর কাছে মুক্তি কামনা করেন।
এক পর্যায়ে প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর অবস্থা দেখে নিজেও মানুষিক সমস্যায় পতিত হন।

শেষের দিনগুলোতে সমস্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছিলো যে মুক্তি পেতে স্ত্রীকে নিজ হাতে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেন।পিতামাতাহীন থেকে যায় অসহায় এমেলিয়া।

পর্ব ১৮।
চলবে….

লেখনীতে-Shahana urmi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here