#এমেলিয়া
#পর্ব-০১,০২
#লেখনীতে- Shahana urmi
০১
কি ভাইয়া আজও বসে আছেন?
প্রফুল্ল কণ্ঠটা যেন মাথা ভেদ করে এফোড় ওফোড় হয়ে সোজা বুকে গিয়ে ঠেকলো অদ্রির।পরক্ষণেই পিছন ফিরে তাকালো সে।সেই সবুজ ১ জোড়া চোখ,সেই ভুবনমোহিনী রূপ,কি স্নিগ্ধ, কি শুভ্র, ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি অথচ তা দেখতে রহস্যময়ী লাগছে।
আচ্ছা তুই বুঝতে পারিস কিভাবে??
আবারো সেই হাসি।মেয়েটার মধ্যে কি এমন আছে?হাসলে একটা মেয়েকে কিভাবে এত সুন্দর লাগে??উত্তরটা খুব সম্ভবত ওর চোখ। সবুজ এক জোড়া চোখ।চাহনিতে যেন আস্ত একটা উপন্যাস ভেসে বেড়ায়।
ভাইয়া আপনি প্রত্যেক বুধবার এই সময়টায় এখানে আসেন,চুপ করে বসে থাকেন,কি এমন ভাবেন বলেন তো,একা একা মানুষ থাকে নাকি?আমারতো একা থাকতেই ইচ্ছে করেনা।এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে আবারও মুচকি হাসি দিলো মেয়েটা।
আচ্ছা এমেলিয়া তার আগে তুই বল,রাস্তায় থেকেও তুই এতো সুন্দর স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পারিস কিভাবে?
এমেলিয়া জবাব দেয়,জানিনা ভাইয়া।শুধু জানি আঞ্চলিকতা আমার আসেনা।
এমেলিয়া দেখতে বাঙালি। তবে নামটা কেমন যেন, শুনেই মনে হয় ফরেনার।পথশিশু বললে খানিকটা ভুল হবে।সদ্য ১৭ তে পা দেওয়া অপরূপা নিশ্চয় শিশু নয়।তাইনা?তবে প্রথম দেখায় এমেলিয়াকে যে কেউ সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত ঘরের মেয়ে বলেই ধরে নেবে।চাল চলনও মানানসই।পথবাসী হলেও বেশ পরিপাটি মেয়েটা।
–ভাইয়া……।
এমেলিয়ার ডাকে সারা দেয় অদ্রি।
— হুম বল।
হাতে এগারো টা লাল গোলাপ এগিয়ে দেয় এমেলিয়া।
–এই নেন আপনার গোলাপ।আজকে আর টাকা দেওয়া লাগবেনা।
–কেন??
সুমিষ্ট হাসি দেয় মেয়েটা।আজকে অনেক কেনা বেঁচা হয়েছে।
–তুই তো কখনই আমার থেকে টাকা নিতে চাস না।শোন,গত শুক্রবার শহীদ মিনারের পাশে একটা লোকের লাশ পাওয়া গিয়েছে।
লাশের কথা শুনে এমেলিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
পুলিশের ধারণা প্রতিশোধ নিতে কেউ খুন করেছে।অবশ্য আমারও সেটাই মনে হয়।তা না হলেওইভাবে হাত,চোখ আর অন্ডকোষ…. এটুকু বলতেই মেয়েটা বোধ হয় একটু লজ্জা পেল।তাই আর কথা বাড়ালাম না।শোন,আমার পুরাণ ঢাকায় ফিরতে অনেক সময় লেগে যাবে।আজকে উঠি।তুই কিন্তু সাবধানে থাকবি। মাথা নাড়াল মেয়েটা।
ও আর আজকে বের হবেনা।আজব মেয়ে। থাকে রাস্তায় তবে বিড়াল কুকুর দেখলেই ভয় পায়।লাশের কথা শুনে কেমন হয়ে গিয়েছিলো।
প্রায় ৩ বছর হলো মেয়েটাকে দেখছে অদ্রি।কেমন যেন মায়ায় পড়ে গিয়েছে।হয়ত ওর সেই সবুজ চোখজোড়াই কারণ।এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে শাহবাগ মোড়ে এসে দাড়িয়েছে টের ই পায়নি অদ্রি।আজব!সে কেন এই মেয়েকে নিয়ে এত ভাবছে?হঠাৎ বাস এসে দাড়াঁলে তাতে উঠে পরে।
অই আমলিয়া কত আনছোস আইজক্যা??কর্কশ গলায় হাক ছাড়ে রুম্মা।ছি কি বিশ্রী,এরকমও কারো কণ্ঠ হয় নাকি?মিনমিনিয়ে বলে ওঠে এমেলিয়া।
হাতে থাকা ৩৭৫ টাকা রুম্মাকে ধরিয়ে দেয়।
ওই দাড়া…টেরে গুইজ্জা রাহা বাকি ট্যাহাগুলান দিবিনা?
উফ রুম্মা.. তুমি বুঝে যাও কিভাবে?
রুম্মা হাসে।এমেলিয়া কিছু বলেনা।রুম্মাও আর কিছু বলেনা।
এই রুম্মা সবার উপরে গরম মেজাজ দেখালেও এমেলিয়াকে স্নেহ করে।সেই যে রাস্তা থেকে তুলে এনে জায়গা দিয়েছে। এটাই বা কম কিসে। এমেলিয়াও মায়ের মতই সন্মান করে।যত আবদার তার কাছেই করে।এ নিয়ে অবশ্য বাকি ছেলেমেয়েগুলা একটু আকটু এমেলিয়াকে হিংসা করে।তবে রুম্মার জন্য কিছু বলতে পারেনা।মাঝে মাঝে এমেলিয়া ভাবে এই রুম্মা এত ডেঞ্জারাস।রাস্তার সবাই তাকে ভয় পায়।চেহারাটা এত বিকট বিস্রী দেখেই মনে হয় টপাটপ মানুষ খুন করতে পারবে।পান খেয়ে দাঁতগুলো গেরুয়া করে রাখে,এর ওর থেকে বিনে পয়সায় খায়,টুকটাক ছিনতাই ও করে বটে। তারপরও এই মানুষটাকে এমেলিয়ার এতো ভালো লাগে কেন?কেন মনে হয় এই মানুষটা পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর আর ভালো মানুষ?তবে কি তার সাথে রক্তের কোনো সম্পর্ক আছে?
চলবে…….
#এমেলিয়া
কিরে শালা প্রতি বুধবার কই যাস?’ল’এর চাপ নিতে পারিসনা,নাকি মেয়ে পটাইতে যাস?
পিছন থেকে মজার ছলে বলে ওঠে রাহি।
–বাজে বকিসনা তো।
— আরে আরে রাগ করছিস কেন?আচ্ছা বাদ দিলাম।শোন অদ্রি ফিল্ড ওয়ার্কে যাবি?নতুন একটা কেইস এসেছে।খুবই ইন্টারেস্টিং।স্যার বলছে যার ওয়ার্ক বেশি ভালো হবে তাকে স্পেশাল প্রাইজ দেবে।অনেকেই যাচ্ছে।
অদ্রি আগ্রহভরে জিগ্যেস করে,জায়গাটা কই?
–কই আবার আমার শ্বশুরবাড়ি হি হি!
— রাহি…..
–আচ্ছা আচ্ছা বলছি,সাভার বেতার কেন্দ্রের পাশে।কয়দিন পরপর নাকি ডাকাতি হয়,খুন হয় কিন্তু এর হদিস কেউ ই করতে পারছে না।ডিবি পুলিশের স্পেশাল টিম যাবে।মাজহারুল স্যার তার পুলিশ বন্ধুকে রিকোয়েস্ট করেছে আমাদের নিয়ে যেতে। চলনা যাই,চলনা প্লিজ।
অদ্রি রাজি হয়ে যায়।আচ্ছা আচ্ছা,তোরা সবাই গেলে আমার আর না গিয়ে উপায় আছে?কিন্তু যাবে কবে?
–এইতো আগামী বুধবার।
–বুধবার?????
–হ্যাঁ।কিরে যাবি না??
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অদ্রি বললো চল যাবো,কেন যাবনা….
বুধবার এসে গিয়েছে সারাদিন এমেলিয়া ফুল বিক্রি করে বিকেলে টিএসসির পাশের মুক্তমঞ্চে এসে দাঁড়াল।কপাল বেয়ে কানের গোড়া দিয়ে ঘাম চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।বাম হাতের তালু দিয়ে মুছে পড়নের জামার সাথে ঘষা দিলো।উহ্ বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে।চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল মেয়েটা। নাহ আজ কোথাও অদ্রি ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না।তবে কি আজ আসবেনা??এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা।৩ বছরে একটা বুধবার ও তো বাদ পড়েনি।তাহলে আজকে???না আসলেই বা কি?তবে আমার এমন লাগছে কেন?কেন সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে?এত লোকের ভিরে নিজেকে একা লাগছে কেন?কেন নিশ্বাস ভারি হয়ে উঠছে?অস্থির অস্থির লাগছে।তবে কি???…না না তা হবে কিভাবে?কোথায় অদ্রি ভাইয়া আর কোথায় আমি?ভাইয়া দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ ল’ ডিপার্টমেন্টের মেধাবী ছাত্র। আর আমি সামান্য পথবাসী। যার বাবা মার পরিচয় নাই, নিজের পরিচয় নাই।ছি ছি এসব ভাবাও অন্যায়।
আপু ফুল নিবেন???নেন না, ১০ টাকা দাম,আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে।বলতে বলতে হাটা ধরে এমেলিয়া।
বৃহস্পতি গড়িয়ে আজ শুক্রবার। রাস্তা একদম ফাঁকা ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বোধ হয় শুক্রবারের রাতেই দেখা যায়।বটতলায় আপন মনে বসে আছে এমেলিয়া।সোডিয়ামের লালচে আলোয় চারপাশটা অদ্ভুদ সুন্দর আর নিস্তব্ধ হয়ে আছে তবুও এতটুকুও ভয় লাগছে না।কেন লাগছেনা??এমেলিয়ার নিতম্বের উপর শুয়ে আছে ভুলু।যত্ন সহিত তার মাথায় আলতো হাত বোলাচ্ছে এমেলিয়া।কুকুরটার সাথে অদ্ভুত একটা মিল আছে আমার। ওর ও কেউ নাই আমার ও কেউ নাই। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অদ্রির কথা মনে পড়ে।অদ্রি ভাইয়ার সাথে যদি আমার বিয়ে হতো.. ইশ্!অনেক মজা হতো।প্রতি বুধবার মধ্যরাতে অদ্রি ভাইয়া আর আমি সারা শহর হাঁটতাম। আমাদের ছোট্ট একটা পুচকু হতো ভাবতে ভাবতে লজ্জায় সারা শরীরে বৈদ্যুতিক গতিতে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে।সাত পাঁচ কতকিছুই না মনে আসে,অদ্ভুত মন।অবশ্য মনের আর দোষ কি?মানুষ প্রথম প্রেমে পড়লে স্বর্গীয় সুখ ও ফিকে লাগে।পৃথিবীতে কত মিরাকেল তো হয়।আমার টাও না হয় হলো..
পর্ব ২।
চলবে…..
লেখনীতে-Shahana urmi