#এ-কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_২৫,২৬
#মাসুরা_খাতুন
২৫
নিস্তব্ধ রজনী,চারদিকের নিস্তব্ধতা জানান দিচ্ছে রাতের গভীরতা। বদ্ধ ঘরে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে দুটি প্রেমিকযুগল।দুজনের মনেই গভীর প্রেম বিরাজ করলেও নারী হৃদয় টি প্রেমিক পুরুষ টিকে জ্বা*লানোর এক দুষ্ট মিষ্টি খেলায় মেতেছে।সে কিছুতেই এই জেদি পুরুষটির কাছে ধরা দিতে রাজি নয়।তার যে অনেক হিসেব নিকেশ বাকী।
আচমকা টানে ছোঁয়া কে নিজের রুমে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় স্বাধীন। দেওয়ালের সাথে ছোঁয়া কে নিজের দু হাত দুদিকে দিকে দিয়ে আটকে রেখেছে।
“আমায় কেন আটকালে স্বাধীন ভাইয়া? আমি আমার রুমে যাবো।”
“রুমে যাবি না? এই মেয়ে তোকে শাড়ি পড়তে কে বলেছে বলতো? কেন পড়েছিস? আমাকে জ্বা*লানোর সবগুলো উপায় তোর জানা তাইনা?”
“আআমি কি করলাম স্বাধীন ভাইয়া? এমনি সখ হলো তাই পড়েছি। ”
“এমনি সখ হলো তাই পড়েছিস তাইনা? নাকি আমাকে আরো বেশি পো*ড়াতে এসব আয়োজন? কে দেয় বলতো তোকে এসব বুদ্ধি? ঐ বান্দর কেয়া,তাইনা? কাল ক্লাসে ওর হচ্ছে ”
“না না ভাইয়া,এসব কি বলছো? কেয়া কেন কিছু বলতে যাবে।সত্যিই আমার সখ হলো তাই পড়েছি। ”
“ওও আচ্ছা, তাই পড়েছি। কেন ভালো লাগছে না বুঝি?”
“শাড়ি পড়লে তোকে যদি ভালো না লাগে তবে শাড়ির সৌন্দর্যই মূল্যহীন।আচ্ছা সখে পড়েছিস তাইনা? তো সখে যখন পড়েছিস তো এর দাম তো দিতেই হবে। ”
বলই স্বাধীন মুখ নিয়ে যায় ছোঁয়ার উন্মুক্ত গলার দিকে। শুভ্র রঙা জুঁই ফুল যেখানে ঘাড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে ঠিক তার পাশেই মুখ ডুবিয়ে দেয় স্বাধীন। হটাৎ স্বাধীনের এহেন কান্ডে শিহরিত হয় ছোঁয়া। তৎক্ষনাৎ মনে পড়ে কেয়ার দেওয়া বুদ্ধি।
“ও মাগো মরে গেলাম গো,কি ব্যথা। আমার এমন হচ্ছে কেন”
বলেই ছোঁয়া পেট চেপে ধরে বসে পড়ার মতো করে,
হটাৎ ছোঁয়ার এমন আ*র্তনাদে ভিষণ রকম চমকে ওঠে স্বাধীন।
“এই,এই ছোঁয়া কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন? বল আমায়,কি হলো?”
“ব্যথা,খুব ব্যথা ভাইয়া।আমি রুমে যাবো।দাঁড়াতে পারছি না। ও বাবা গো,”
“ব্যথা? কোথায় ব্যথা? কিসের ব্যথা? বলবি তো আমায়।ডক্টর কে ফোন করবো? প্লিজ বল লক্ষীটি। ”
ছোঁয়া আবার ও আগের মতো চিল্লানোর মতো করে বলল,
“পেটে ভাইয়া,পেটে ব্যথা।বাইরের খাবার খেয়াছি তো,তাই মনে হয় এমন হচ্ছে। আমি আমার রুমে যাবো। ”
“কোথায় দেখি, আমি ম্যসাজ করে দিই,আর চল কিছু মেডিসিন দিচ্ছি খেয়ে নে। ”
“এই এই করছোকি? আমার কোন ম্যাসাজের দরকার নেই।আর মেডিসিন ও নিতে হবে না।একটু খানি আমার বিছানায় গড়াগড়ি করলেই ঠিক হয়ে যাবে। ”
“এ্যা? ব্যথা বিছানায় গড়াগড়ি করলেই ঠিক হবে? তো আমার বেডেই কর।চল তোকে আমি বেডে নিয়ে যাচ্ছি।”
“না,না ভাইয়া,তোমার বেডে হবে না।আমাকে আমার বেডেই যেতে হবে। আর আমি একাই যেতে পারবো।”
“এই না।তোকে মেডিসিন ও নিতে হবে। চল আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি। ”
বলেই স্বাধীন কোলে তুলে নিলো ছোঁয়া কে।হটাৎ কোলে নেওয়ায় ছোঁয়া ও ঝোঁক টা সামলাতে না পেরে স্বাধীনের গলা দু’হাতে জড়িয়ে নিলো।তারপর স্বাধীন ছোঁয়া কে নিয়ে ওর রুমের দিকে নিয়ে গেলো।
“তুই একটু সহ্য কর ছোঁয়া। আমার কাছে মেডিসিন আছে, আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুই খুব তাড়াতাড়ি ভালো হবি।একটু কষ্ট কর প্লিজ। ”
উদ্বিগ্ন হয়ে স্বাধীন ছোঁয়া কে রুমের দিকে নিয়ে গেলো।
“তুমি ফেঁ*সে গেছো সাইকোলজির মাষ্টার! কোন টা আসল ব্যথা,আর কোন টা নকল ধরতে পারলে না?কেন,আমায় কষ্ট দিতে? এখন আমার সময়! হাহাহা”
মনে মনেই এসব বলে হাসে ছোঁয়া। আর মুখে আবারও চিল্লিয়ে ওঠে,
“ওমা গো,ও বাবা গো।খুব ব্যথা।”
“একটু একটু কষ্ট কর ছোঁয়া। এইতো সেরে যাবে। ”
বলে ছোঁয়ার বিছানায় আস্তে করে শুইয়ে দিলো স্বাধীন। এবার গেলো নিজের রুমে মেডিসিন আনতে।
স্বাধীন বাইরে যেতেই এতোক্ষণের চেপে রাখা হাসি টা ফিক করে হাসলো ছোঁয়া।
“এই নে,এই মেডিসিন টা খেয়ে নে, তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। ”
বলে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো স্বাধীন।
“আমি খাচ্ছি ভাইয়া,তুৃমি জানালা টা লাগিয়ে দাওনা প্লিজ।খুব হাওয়া আসছে।। ”
স্বাধীন গেলো জানালা লাগাতে, সেই ফাঁকে ছোঁয়া ঔষুধ টা খাটের পাশে ফেলে দিয়ে ঢগঢগ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।
“এবার চোখ বন্ধ কর ছোঁয়া, একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।আমি আছি। ”
চোখ দুটো বন্ধ করে ছোঁয়া। পাশে স্বাধীন বসে ওর চুলে বিলি কাটতে থাকে।একসময় চোখ দুটো সত্যিই লেগে আসে ছোঁয়ার।কোনরকমে চোখ খুলে স্বাধীন কে বলে,
“এবার তুৃমি যাও ভাইয়া,আমার ঘুম পাচ্ছে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে “বলে স্বাধীন ছোট্ট একটা চুমু খায় ছোঁয়ার কপালের মাঝখানে। আর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“যতোদিন না তোকে আমি আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রহণ করছি,ততোদিন তুই আর এমন করে শাড়ি পরে সাজিস না ছোঁয়া। আমার কষ্ট হয় রে,খুব কষ্ট। নিজেকে সামলাতে পারিনা।তোর প্রেমে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে।কেন ইচ্ছে করে ছোট বেলা থেকেই আমায় পো*ড়াস তুই? তুই আমার সবথেকে বড় নে*শা,তা কেন বুঝিস না।ঘুমা আমার পরী।”
বলে দরজা লাগিয়ে চলে যায় স্বাধীন। ও এখন নিকোটিনে পুড়*বে। প্রেয়সীর এই মাদ*কময় নেশা কাটাতে সত্যি কারের আরো একটা নেশা যে ওর প্রয়োজন। তাইতো সিগারেট টা ধরিয়ে ব্যালকেনিতে গিয়ে বসে স্বাধীন।
ছোঁয়া ও স্বাধীনের কথা গুলো শুনতে পেয়ে শুধু বাঁকা একটা হাসি দিয়ে আবার ও ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রায় রাত বারোটা।শাড়ি পরে থাকায় খুব অস্বস্তি লাগে ছোঁয়ার। সাথে খুব তেষ্টা ও পায়।তখন ওভাবে ঘুমিয়ে পড়ায় রুমে পানি এনে রাখা হয়নি,সেই সাথে শাড়িও চেইঞ্জ করা হয় নি।তাইতো উঠে সোজা ওয়াশরুমে যায়।শাড়িটা পাল্টে পছন্দ মতো একটা সুতি জামা পড়ে নেয়।এবার পানি খেতে নিচে যাওয়ার জন্য বের হয়।
দরজা খুলতেই দেখতে পায় স্বাধীন বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্য দিক হয়ে সিগারেট ফুঁকছে। এতোরাত হয়ে গেছে তবুও ঘুমায়নি ছেলেটা।গভীর আকাশে ওঠা অর্ধচন্দ্র টা একায় অবলোকন করছে।নিজে নিজেই কিছু টা অনুতপ্ত হয় ছোঁয়া। পেটে ব্যথার বাহানা টা দেওয়া একদম ঠিক হয় নি।কিভাবে এতো রাতেও ছেলেটা না ঘুমিও দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড ভালোবাসায় সিক্ত হয় ছোঁয়ার মন।ওর স্বাধীন ওর জন্য আজ কতোটা ব্যস্ত! এতো ভালোবাসা ওর জন্য জমা ছিলো? এতোটা সার্থক কপাল ওর! ছোঁয়া ও এবার আর নিজেকে আটকায় না।আস্তে আস্তে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে স্বাধীন কে।স্বাধীন ও সামনে থেকে ছোঁয়ার হাতদুটো আঁকড়ে ধরে।
“উঠলি কেন? একটু আগেই তো দেখলাম ঘুমিয়ে আছিস।ব্যথা কমেছে?”
“তুমি কি করে বুঝলে স্বাধীন ভাইয়া, এটা আমি? রাতে কোন শাঁকচুন্নি ও তো হতে পারে,”
“তোকে একদিন বলি নি,তোকে চিনতে তোর গায়ের গন্ধই আমার যথেষ্ট। তুই কখন কি পারফিউম ইউস করিস,তা আমার মুখস্থ। তোর প্রত্যেকটা ছোঁয়া আমার চেনা।তোর পায়ের ধাপ আমার মাপা।আর শাঁকচুন্নির কথা বলছিস? এক শাকচুন্নির যন্ত্র*ণায়ই বেহাল দশা,আবার আরেকটা কই থেকে আসবে? আর আসলেও এই শাঁকচুন্নি কি আস্ত রাখবে তাকে?”
“একদম নয়। এক্কেবারে গলা টি*পে দেবো।তুমি ঘুমাও নি ভাইয়া?”
“ঘুমাতে দিয়েছিস তুই? কতোটা য*ন্ত্রণা পাচ্ছিলি তখন! ওভাবে রেখে আমি ঘুমাবো কি করে? একটু পর পর গিয়ে দেখে আসছি।”
“তুমি চলো ভাইয়া,ঘুমাবে।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। আর একটা কথা,আর কক্ষনো তোমাকে কষ্ট দেবো না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। বাই দ্যা ওয়ে,এভাবেই কি জড়িয়ে ধরে থাকবি আমাকে? তাহলে তো সারারাত না ঘুমিয়ে ও কাটিয়ে দিতে পারবো আমি।”
লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো ছোঁয়া। তাড়াতাড়ি করে ছেড়ে দিলো স্বাধীন কে।যথাযথ দূরত্বে গিয়ে দাঁড়ালো ।
“হয়েছে, এতো লজ্জা পেতে হবে না।আমি কিন্তু বড়ই বেলাজ।সাইকোলজির টিচার তো? এসব লজ্জা শরম অনেক আগেই চলে গেছে। আর আপনিও আমার সাথে থাকতে গেলে এতো লজ্জা পেলে চলবে না ম্যাম।”
“ছিহ্,কি অসভ্য! ”
বলেই ছোঁয়া স্বাধীনের রুমে আসে।সাথে স্বাধীন ও।
“এবার শুয়ে পড়তো তুমি।আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ”
“তোকে কিচ্ছু করতে হবেনা।তুই এখানে থাকলে আমার ঘুম আসবে না।অনেক দুষ্টমি বুদ্ধি মাথায় আসবে।আবার ও বেসামাল হয়ে যেতে পারি।তারচেয়ে বরং,যা রুমে গিয়ে ঘুমা।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ও ঘুমিয়ে পড়।ঠোঁট*কা*টা পুরুষ। ”
বলে ছোঁয়া ও পানি খেয়ে এসে নিজের রুমে চলে গেলো।একটি উজ্জ্বল দিনের সমাপ্তি হলো দুটো নর নারীর রঙিন ভালোবাসার মধ্য দিয়ে।,,,,,,,
চলবে,,,,,,,
#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_২৬
#মাসুরা_খাতুন
ফুরফুরে সুন্দর সকাল,প্রকৃতিতে প্রথম কার্তিকের ছোঁয়া। প্রচন্ড প্যাচপ্যাচে গরম ছেড়ে হালকা শীতের আমেজ।সকাল বেলা বিন্দু বিন্দু শিশিরের ও দেখা মিলছে আজকাল।সকাল সকাল একটু একটু শীত ও লাগছে।ছোঁয়া ছাদে গাছ গুলোতে পানি দিয়ে এলো।আজ আলম চৌধুরী আর সাহানা বেগমের আসার কথা। তাইতো ছোঁয়া আজ কলেজে যাবে না।এতোদিন পর উনারা আসছেন বলে ছোঁয়া সকাল থেকে স্বাধীনের সাথে লেগেছে বাজারে যাওয়ার জন্য। বড় আব্বু বড়মার পছন্দের খাবার গুলো ও আজ রান্না করে রাখবে।এই ক দিন ওখানে কি খেয়েছে না খেয়েছে তার ঠিক নেই । বড় দেখে একটা ইলিশ মাছ আনার কথা ও বলেছে ছোঁয়া, আলম চৌধুরী ইলিশ মাছের পাতুড়ি খেতে খুব পছন্দ করেন।কিছু কুমড়ো পাতাও আনা দরকার। ছাদে সব গুলো শুধু ফুল গাছ, একটু সবজি গাছ ও যে লাগানো দরকার, তা এবার বুঝলো ছোঁয়া। স্বাধীন কে সেই সকালে ঘুম থেকে তুলেছে ছোঁয়া, ওর আবার ক্লাস আছে,তাইতো বাজার গুলো করে দিয়ে কলেজে যাবে।ওখানে ক্লাস টা কমপ্লিট করে এয়ারপোর্টে যেতে হবে উনাদের আনতে।বারোটা বাজতে বাজতেই পৌঁছে যাবেন উনারা।
স্বাধীন বিরক্ত মুখে বাজারের দিকে যাচ্ছে, সকাল বেলাই মেজাজ টা খারাপ করে দিয়েছে পাঁজি মেয়ে টা।আজ যেন পাওয়ার বেড়ে গিয়েছে ওর।একটু কাছে ঘেঁষাই যাচ্ছে না।পাক্কা গৃহিণীর মতো ঠেলে ঠুলে বাজারে পাঠালো!একটু কাছে গিয়ে ও লাভ হয়নি।ঘরদোর পরিষ্কার করতে ব্যস্ত।স্বাধীন একটু হাত ধরে টেনে নেওয়ায় ময়লা হাত স্বাধীনের সাদা শার্টে লাগাতে চাচ্ছিল? কি সাহস ভাবা যায়? এতোটুকু পাত্তা ও দিলো না? সময় আমারও আসবে,তখন দেখাবো মজা।মনে মনেই শাসিয়ে নেয় স্বাধীন। তারপর গোমড়া মুখেই লিস্ট দেখে দেখে বাজার গুলো নিতে থাকে।
“আজব এই মেয়ে টা লিখেছে কতো বাজার! মনে হচ্ছে পুরো দোকান গুলোকে তুলে নিয়ে গিয়ে দিতে হবে!বদমায়েশ মেয়ে। আমার সাথে লাগছিস? অনেক দিন উত্তম মধ্যম পড়ে নি তায়? ”
মনে মনেই বিরবির করে স্বাধীন। মুখে একরাশ রাগ,আর বিরক্তি ঝুলিয়ে রেখেই ঝটপট বাজার গুলো করে নিলো ও।বাসায় গিয়ে আবার নাস্তা করে কলেজ যেতে হবে।উনি আবার কড়া করে বলে দিয়েছেন, নাস্তা বাসায় করতে।ভাবা যায়, এই দুদিনেই কেমন ছড়ি ঘোরানো শুরু করেছে!
বাজারের ব্যাগ গুলো এনে জোরে করে রাখল স্বাধীন ছোঁয়ার সামনে,মুখে এখনো সেই বিরক্তি।
“ইস! নাকের ডগায় যেন রাগ লেগেই থাকে! হুহ্!”
মনে মনেই বলে ছোঁয়া। কাছে এসে বাজার গুলো নিতে নিতে বলে,
“কি ব্যাপার স্বাধীন ভাইয়া, এমন করে কেউ বাজারের ব্যাগ রাখে? সবজি নষ্ট হয়ে যাবে তো? আর তখন কিন্তু আবার বাজারে পাঠাবো।”
কথা গুলো বলতেই হাতদুটো ঝট করে ধরে ফেলে স্বাধীন।ওর অভ্যাস মতো বেকিয়ে ধরতেই তেলেবেগুনে জ্ব*লে ওঠে ছোঁয়া,
“দেখো,আজ আমায় অনেক রান্না করতে হবে? হাতে আবার ব্যথা দিয়ো না,তাহলে কিন্তু রান্না করতে পারবো না,আর এই বাজার গুলো এখানেই পচবে।”
দাঁত কিড়মিড় করে হাত ছেড়ে দেয় স্বাধীন। সাথে সাথেই কোলে তুলে নেয় ছোঁয়া কে,
“কি করছো স্বাধীন ভাইয়া, আমায় ছাড়ো,আমায় অনেক রান্না করতে হবে, এখন এসব লুচুগিরি করতে এসো না,নামাও আমায়,নামাও বলছি”
স্বাধীন কোন কথা না বলে সোজা সোফায় এনে দাঁড়িয়ে থেকেই জোরে ছেড়ে দিলো ছোঁয়া কে।অনেক টা ওপর থেকে পড়ে ছোঁয়া কিছু টা ব্যথা পেল।
“এই তো নামিয়ে দিলাম,থাক এখানে। সকাল থেকে অনেক জ্বা*লিয়েছিস।এবার থাক পড়ে।বেশি বাড় বেড়েছে না?”
বলেই স্বাধীন সোজা টেবিলে গিয়ে বসলো।
“ও মাগো, ও বাবাগো,আমার কোমড় ভেঙে গেলো গো,আমার স্বামীর সংসার আমি কেমনে করবো গো? কোথায় আমার স্বামী, এসে আমায় বাঁচা ও গো,,তোমার বউ আজ ইন্তেকাল করবে গো,,,”
স্বাধীন আবার উঠে যায়,স্বাধীনের ওঠা দেখে ছোঁয়া একবারে থেমে যায়,
“না না,আমি আর চিল্লাবো না,আমার স্বামী,তোমার বউ একদম ঠিক আছে,তোমার আসতে হবে না।স্বামী তুমি দূরেই থাকো।”
চেয়ারে বসে ছোঁয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বাঁকা হাসে স্বাধীন। ছোঁয়া ততোক্ষণ ওখানেই পড়ে থেকে ওর প্রানপুরুষ টার খাওয়া দেখে।কত্ত সুন্দর মানুষ টা! কতো মেয়ে এমন হ্যাডসাম ছেলের জন্য পাগল।ধবধবে ফর্সা ছেলেটির চেহারায় যেন অন্যকিছু আছে।একদম আলাদা সবার থেকে।বারবার ছোঁয়া সেই আলাদা কিছুটাকে খোঁজার চেষ্টা করে, কিন্তু প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হয়।কখনো ওর চোখ দুটো কে আলাদা মনে হয়, তো কখনও ভ্রু দুটি।আবার কখনো ঠোঁট গুলো,তো আবার কখনো সুন্দর সাদা ঝকঝকে দাঁত গুলো।সবকিছুই সুন্দর যেন আল্লাহ স্বাধীন কেই দিয়েছে, এমন মনে করে ছোঁয়া।স্বাধীনের ডান সাইডের হালকা গেজ দাঁতের প্রেমে যে ও কতোবার পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর যেন ওর স্বাধীন ভাই
“ওমন চুরি করে করে দেখতে হবে না আমায়।এমনেই সকাল থেকে জ্বা*লাচ্ছিস,আবার ওভাবে দেখলে বিষম খাবো।চাইলে সামনে এসে বসে দেখতে পারিস,একেবারে যতো ইচ্ছা। ”
রুটি ছিঁ*ড়ে নিতে নিতেই বলে স্বাধীন।
লজ্জায় ছোঁয়া একাকার হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি উঠে বাজারের ব্যাগ নিয়ে কিচেনে যাওয়ার সময় স্বাধীনের কানের কাছে মুখ এনে বলে গেল,
“পৃথিবীর সবচাইতে ঠোঁট কা*টা পুরুষ তুমি স্বাধীন ভাই।”
বলেই ছোঁয়া দৌড়ে চলে গেলো।
রুটি মুখে দেওয়ার আগেই প্রেয়সীর এক টুকরো কথায় এতোক্ষণের সব রাগ গলে জল হয়ে গেলো স্বাধীনের।সুন্দর মুখের একফালি হাসি দিয়ে খাবার টুকু খেতে লাগলো স্বাধীন।
দুপুরে স্বাধীন একেবারে আলম চৌধুরী, সাহানা বেগম নিয়ে বাসায় ফিরলো।দরজায় কলিং বেল বাজাতেই দৌড়ে এসে ছোঁয়া খুলে দিলো।দরজা খুলেই সাহানা বেগমকে দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়লো ছোঁয়া। মা মেয়ে দুজনেই গভীর মমতায় একে অপরকে জড়িয়ে নিলো।পাশে আলম চৌধুরী আর স্বাধীন দাঁড়িয়ে এমন সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করলো।স্বাধীন খুব ভালো করেই জানে অন্য কোন মেয়ে হলেই হয়তো ওর বাবা মাকে এমন করে ভালোবাসতো না।যেখানে ছোঁয়া প্রায় নিজের থেকেও ভালোবাসে ওর বাবা মাকে।পাশে দাঁড়িয়ে একটু কপট রাগ হয় স্বাধীনের।
“ইস! শ্বশুর শাশুড়ির প্রতি কি যত্ন! হুহ্,খালি বরের দিকেই কোন নজর নেই। সেই সকাল বেলা একটু কাছে যাওয়ার কতো চেষ্টা করলাম,কিছুতেই এলো না? উল্টো আমার শার্টে ময়লা দেওয়ার ভয় দেখালো! আর এখন শাশুড়ী কে পেয়ে একেবারে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে,শুধু শাশুড়ীর ছেলের দিকেই নজর নেই? বজ্জাত মেয়ে।”
মনের রাগ গুলো বিড়বিড় করে সামনে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ নেই। ওরা সবাই অলরেডি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসেছে।আর ও মহারানী তো পারলে ওর বড়মার কোলে বসবে।আর এখানে একা মস্ত বড় লাগেজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীন একা।আজিব! একটু তো ডাকতেও তো পারে!
এতোক্ষণে স্বাধীনের ডাক এলো,সাহানা বেগম ডাক দেওয়ায় কিছু টা খুশি মনে স্বাধীন ভেতরে ঢুকছিলো,এমন সময় কানে এলো,
“এই স্বাধীন, লাগেজ টা খোলতো বাবা,ছোঁয়ার জন্য কিছু ড্রেস এনেছি,দেখুক মেয়ে টা, ওর পছন্দ হয় নাকি।”
রাগে আবারও গাল ফুলালো স্বাধীন। ধরাস করে লাগেজ টা রেখে বসে পড়লো সোফায়।
“দেখছো না,আমি কতো কষ্ট করে লাগেজটা সেই এয়ারপোর্ট থেকে আনছি।যার ড্রেস,তাকে নিজেই বের করে নিতে বলো।আমি কেন বের করবো?”
“কিরে স্বাধীন, এটা কেমন কথা বাবা।এখনো ভালো হবি না তোরা।”আলম চৌধুরী বলে উঠলেন।
স্বাধীনের ফোলানো মুখ দেখো চোখ টিপে হাসলো ছোঁয়া। স্বাধীন ও কম যায় না, সেও চোখ দিয়ে বুঝিয়ে দিলো ” তোর খবর আছে “।
দুপুরে ইলিসের পাতুড়ি পাতে পড়তেই খুশিতে গদগদ হয়ে উঠলেন আলম চৌধুরী।
একটু খানি মুখে দিয়েই শুরু করলেন প্রসংশা।
“আহা,একেবারে আমার মায়ের হাতের পাতুড়ীর মতো হয়েছে। বাবা বাজার থেকে মাছ এনে দিলে মাও আমাদের দু ভাইকে এমন পাতুড়ী রান্না করে দিতো।কতোদিন পরে মায়ের রান্নার সেই স্বাধ! ছোঁয়া মা আমার একেবারেই মায়ের হাত পেয়েছে। ”
বলেই ছোঁয়া কে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আলম চৌধুরী।
“ছোঁয়া, তুই একায় এতো রান্না কেন করতে গেছিস মা? এতো রান্না করতে তোর কম কষ্ট হয়েছে? আরে বাবা আমরা তো বাড়িতেই ফিরছি নাকি? আস্তে আস্তে রান্না করে খাওয়াতি।”
সাহানা বেগম বলে উঠলেন।
“আর বলো না মা,সকাল বেলায় উনার আবদার পুরো বাজারটায় উনার কাছে তুলে এনে দিতে।একেবারে ম্যানিব্যাগ ফাঁকা করে দিয়েছে। ”
স্বাধীনের বলা কথায় প্রত্যেকে হো হো করে হেসে উঠলো।
মহা আনন্দে কেটে গেলো চৌধুরী বাড়ির কিছু সুন্দর মূহুর্ত।
সারাদিন সাহানা বেগম ওখানে কতো কি দেখেছে,এইসব বলেই কাটিয়ে দিলো।ছোঁয়া ও মনোযোগ সহকারে সেইসব বিবরণ শুনে কখনো বিস্মিত, কখনো হতাশ আবার কখনো হো হো করে হেসে উঠলো।
সারাদিনের আনন্দ শেষে বিপত্তি বাঁধলো যখন স্বাধীন বলল,
“এই ছোঁয়া, আজ তো তুই কলেজে যাস নি,আজ যেই অধ্যায় টা ক্লাসে পড়িয়েছি সেটা আমার রুমে আয়, তোকে বলে দিচ্ছি। পাঁচ মিনিটে চলে আসবি।”
বলেই স্বাধীন উপরে চলে গেলো। আর এদিকে ছোঁয়া সকাল থেকে করা বদমায়েশির কথা মনে করে ভয় পেয়ে গেলো।এই লোকটাকে করে কোন বিশ্বাস নেই। যা খুশি করতে পারে।
আর এদিকে সাহানা বেগম ও কম অবাক হলেন না! যেই ছেলে সামান্য ওর বইয়ে হাত দেওয়ায় শাস্তি দেয়,সে কিনা পড়ানোর জন্য ডাকছে,,,,,,
চলবে,,,,,,,