#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_১০,বোনাস_পার্ট
#মাসুরা_খাতুন
১০
প্রেম মানুষকে সুখি করে।প্রেমে পড়লে মানুষ নিজেকে সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করে। প্রিয় মানুষটির চোখে নিজেকে সবথেকে বেশী সুন্দর করে উপস্থাপন করার চেষ্টায় মনে হয় প্রেমে পড়া।ছোঁয়া তো সেই ছোটকাল থেকেই প্রেমে পড়ে আসছে,সেই সুন্দর যুবকটার।যার হাসি ছোঁয়ার মনে আলাদা অনূভুতির ঝড় তোলে,উথাল-পাতাল করে দেয় সবকিছু। সেই মানুষটার আজোড়ে-পাজোড়ে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা হয় সব সময়।
দুপুরের জন্য রান্না করছিল ছোঁয়া। মাছ, মাংস, ভাজি, ডাল মিলে কয়েক পদের রান্না করে ফেলেছে।এখন স্বাধীনের জন্য ওর প্রিয় পায়েস টা রান্না করছে।আর বাকি আছে একটু সবজি রান্না করা।কে জানে এতো এতো খাবারের মধ্যে নিহা আবার বলে ওঠবেনা , আমি এসব তেল মসলার রান্না খাবোনা,আমায় আধা সেদ্ধ সবজি রান্না করে দাও?তায়তো আগে থেকেই রান্না করে রাখবে ছোঁয়া।
পায়েসে কিছু কিসমিস আর কাজু ছেড়ে দিয়ে সকালের কথা মনে করে ফিক করে হেসে ওঠলো ছোঁয়া। “হানিমুন! হানিমুন খাবো আমি।”খুব হাসি পায় ছোঁয়ার।কেমন অজান্তেই বোকার মতো কথা বলে ফেললো স্বাধীন! মাঝে মাঝে ছোঁয়ার মনে হয় ওপরে ওপরে স্বাধীন যতোটা কঠোরতা দেখায় ও আসলে ততোটা কঠোর নয়।এই রাতেই যখন ওভাবে ছোঁয়াকে ছুয়ে দিলো তখন তো পৃথিবীর সবথেকে নরম,তরল পুরুষ মনে হয়েছিল ওকে।সে এক অন্যরকম অনূভুতি। এমন অনূভুতির সাথে ছোঁয়ার পরিচয় নতুন।স্বাধীনে প্রতিটি ছোঁয়া, প্রতিটি নিশ্বাসের শব্দ পাগল করে দিচ্ছিল ওকে।স্বাধীনের মতো এতো রাগী বদমেজাজি মানুষ কি এমন তরল হতে পারে? যার চোখ দুটো তে শুধু তীক্ষ্ণতা, যার কপালে বেশির ভাগ সময় ভাজ পড়েই থাকে সেই মানুষটা গভীর রাতে একটা মেয়ের কাছে এতোটা নরম হতে পারে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে ছোঁয়ার।
এক ফোটা দুধ ফুটে হাতের চামড়ায় পড়ে ছোঁয়ার।সাথে সাথেই চমকে ওঠে। ওর সুন্দর সময়গুলো যেন কারোই সহ্য হয়না,তায় তো ওর মনে মনে সুন্দর কল্পনার রাজ্য থেকেও ফিরে আসতে হয়।দুধের ফোটা পড়া জায়গাটা লাল হয়ে যায় সাথে সাথেই। গ্যাস টা কমিয়ে লাল হওয়া জায়গায় একটু পানি দিয়ে আসে ছোঁয়া। দেওয়ালে থাকা বিলাসী দেওয়াল ঘড়িটায় বারোটার ঘন্টা বেজে ওঠে।
পায়েস হয়ে আসলে তা নামিয়ে রেখে কাটা সবজি গুলো রান্নার জন্য সেদ্ধ করতে তুলে দেয় ছোঁয়া। এরই মাঝে বাইরে কলিং বেলের শব্দ হয়।দৌড়ে যায় দরজা খুলে দিতে।ভেতর থেকেই জিজ্ঞেস করে নেয় কে এসেছে। বড়মার কড়া নির্দেশ কে এসেছে তা জিজ্ঞেস করে উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত দরজা না খুলতে।
বাইরে থেকে সাড়া দেয় নিহা।নিহার গলা পেয়ে দরজা খুলে দেয় ছোঁয়া। ঘরে ঢুকেই নিহা বলে ওকে ঠান্ডা পানি দিতে।ছোঁয়া সাথে সাথেই নিহার জন্য পানি এগিয়ে দেয়।
“এই ছোঁয়া, ঢাকা শহরে কি ময়লা! ধুলোবালি! শোননা,আজকেও জুতোটা মনে হয় শেষ। বাইরে খুলে রেখে এসেছি,যা তো এনে একটু ভালো করে পরিষ্কার করে রাখ।”
নিহার কথায় পাত্তা না দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছোঁয়া।
“কিরে কি হলো? কথা কানে যায় না? তোকে বললাম না জুতোটা এনে পরিষ্কার করে রাখতে? “খেঁকিয়ে ওঠে নিহা।
“সরি আপু।আমি আপনার জুতো পরিষ্কার করতে পারবো না।পারলে নিজের জুতো নিজেই পরিষ্কার করে নিন।”
“কিহ? যতোবড় মুখ নয় ততোবড় কথা! আমাকে বলছিস জুতো পরিষ্কার করতে? তোর সাহস কি করে হয়?”
রেগে ওঠে নিহা।ওর কান যেন গরম হয়ে গেছে ছোঁয়ার কথা শুনে।
“আমি ঠিকই বলেছি আপু, আমি আপনার জুতো পরিষ্কার করতে পারবো না। পারলে নিজের জুতো নিজেই পরিষ্কার করুন।”
“হাউ ডেয়ার ইউ? তোর এতো সাহস? আমার মুখের ওপর কথা বলিস?”
বলেই উঠে দাঁড়ায় নিহা।এমন সময় ঘরে ঢোকে স্বাধীন। একসাথে এসেই স্বাধীন গিয়েছিল গাড়ি পার্ক করতে।ভেতরে ঢুকেই নিহার কড়া গলা শুনতে পায়।স্বাধীন কে দেখে ভয়ে মুখ শুকিয়ে যায় ছোঁয়ার। ওর বন্ধুর সাথে কথায় উত্তর দেওয়ায় যদি রেগে যায় স্বাধীন?
“কি ব্যাপার নিহা? কি হয়েছে?”
ছোঁয়া এক কোনায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে।
নিহা স্বাধীনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
“দেখোনা বেইবি,এই মেয়েটার কতটা সাহস আমার মুখের ওপর কথা বলে? আমাকে ও অপমান করেছে। ”
ন্যাকা সুরে বলে নিহা।
“আরে বাবা,হয়েছে টা কি সেটা তো বলবে? কিরে ছোঁয়া কি করেছিস তুই? ”
ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে তাকায় স্বাধীনের দিকে।
“আমি বলছি বেইবি।আমি বাইরে থেকে এসে ওকে বলেছিলাম আমার জুতোটা পরিষ্কার করে ভেতরে আনতে।আর ও কি বলল জানো? ও বললো আমার জুতো আমাকেই পরিষ্কার করে আনতে।”
“তো ঠিকই তো বলেছে নিহা।তুমি তোমার নিজের জুতো নিজে পরিষ্কার না করে ওকো বলেছো কেন? ”
“এটা তুমি কি বলছো স্বাধীন? ও আর আমি এক হলাম? আমি জুতো পরিষ্কার করবো? আর ইউ ম্যাড? এটা কাজের লোকেদের কাজ,ওরায় করবে।”
শেষের কথা টা শুনে কান গরম হয়ে গেলো স্বাধীনের।এটা কি বলল নিহা?
“স্টপ ইট নিহা! কাকে তুমি কাজের লোক বলছো?”
“কেন ওকে।কাজের লোক কে কাজের লোক বলছি এতে সমস্যা কোথায়? বাবা মা না থাকা একটি যুবতি মেয়ে চাচা চাচির বাসায় কাজ করছে,একে কাজের লোক বলা যায় না তো কি?”
অসহায় হয়ে তাকায় ছোঁয়া নিহার কথা টা শুনে স্বাধীনের দিকে। ওর চোখে টলটল করছে এক সাগর পানি।
“চুপ! একদম চুপ।ছোঁয়া মোটেই কাজের লোক নয়।ওর অধিকার আছে এবাড়িতে,তায় ও থাকে।আর কাজ করার কথা বলছো? আমাদের বাসায় মা আর ছোঁয়া মিলেই সবটা করে, তার মানে কি মা ও কাজের লোক হয়ে গেলো? ভালো করে একটা কথা শুনে রাখো,ছোঁয়া কোন ফেলনা নয়,এ বাড়িতে আমার যতোটুকু অধিকার আছে ছোঁয়ার ও ঠিক ততোটুকুই অধিকার। আর ও ওর অধিকারে এখানে থাকে।বুঝতে পেরেছো।”চোখ রাঙিয়ে বলে স্বাধীন।
“অধিকার? কোন অধিকারের কথা বলছো স্বাধীন? আর ওকে কাজের লোক বলায় তোমার গায়ে এতো লাগছে কেন?”
রেগে বলে নিহা।
“অধিকার, হ্যাঁ হ্যাঁ অধিকার। আছে ওর অধিকার। বিকজ? শি ইজ মাই ওয়াইফ।বিয়ে করা বউ ও আমার।তুমি শুনতে পেয়েছো? ছোঁয়া বউ হয় আমার।”
একসাথে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো বাড়ি।স্তব্ধ হয় ছোঁয়া, স্তব্ধ হয় নিহা নিজেও।অশ্রু মাখা চোখ নিয়ে ছোঁয়া তাকায় স্বাধীনের দিকে। কিন্তু একি রাগের মাথায় কথাটা বলে ফেলায় কোনরকম অনুশোচনা দেখেনা স্বাধীনের চোখে।
“কি? কি বলছো তুমি স্বাধীন। এটা সত্যি হতে পারে না।তুমি মিথ্যে কেন বলছো? এই মেয়েটার জন্য? তুমি বলো যা বলেছো সব ভুল। বলো স্বাধীন। ”
হতভম্ব হয়ে বলে নিহা।
“না,কোনটায় মিথ্যে নয় নিহা।যা শুনেছো সব সত্যি। ছোঁয়া আমার বিয়ে করা স্ত্রী। অনেক বছর আগেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। ”
“বিয়ে হয়ে গেছে? তাহলে এই চাচাতো বোন বলা,দুজন দু রুমে থাকা, কথায় কথা ছোঁয়া কে ধমকানো, এসব কি স্বাধীন? ”
চাচাতো বোন বলা, দুজন দু রুমে থাকা, ধমকানো কারণ আমি এখনো মেনে নিতে পারিনি ছোঁয়া কে তায়।তায় বলে অন্য কেউ ছোঁয়া কে অপমান করবে আর তা আমি মেনে নিতে পারবো না নিহা।এরপর থেকে ছোঁয়ার সাথে কথা বলার সময় মনে রাখবে ও কে? ও সাহারিয়ার আলম স্বাধীনের স্ত্রী। সো এমন কোন কথা বলবে না যে আমাকে,ছোঁয়া কে অপমান করা হয়।আর না হলে আমি ভুলে যাবো তুমি আমার বন্ধু।
“বাহ্ স্বাধীন বাহ্! চমৎকার! তাহলে আমি কে স্বাধীন? শুধুই বন্ধু? এতোদিন শুধু বন্ধুই ভেবে এসেছো আমায়?”
“হ্যাঁ অবশ্যই।এর বেশি আমি কোনদিন ও তোমাকে ভাবি নি নিহা।তুমি আমার শুধুই বন্ধু। আর কিছু নও।আমি কোন দিন বলেছি তোমায়? তুমি আমার বন্ধু ছাড়াও কিছু? কিংবা কোনদিন সীমা অতিক্রম করতে দেখেছো আমায়? না দেখোনি,কারণ বন্ধু হিসেবে আমার সীমা কতোটুকু তা আমি জানি।বরং তুমিই বারবার বেশি বেশি পাওয়ার চেষ্টা করেছো যা আমি বারবার এড়িয়ে গেছি।”
“স্বাধীন? তুমি এভাবে বলতে পারো না স্বাধীন। আমি তোমায় সেই কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসি স্বাধীন। আমি বারবার বাংলাদেশে ছুটে আসি শুধু তোমার জন্য। তুমি এমন বলতে পারো না?”
“তুমি ভুল ছিলে নিহা।আমি বারবার তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি,আমি আগ্রহী নই তোমার প্রতি।আমি চাইনা তোমায়।তুমি হয়তো বুঝেছো,কিন্তু বুঝেও সবসময় না বোঝার ভান করেছো।আমার আর কিছু বলার নেই নিহা।”
“স্বাধীন, স্বাধীন এমন বলোনা প্লিজ।এই মেয়েটার জন্য বলছো তো? আরে অনেক বছর আগে বিয়ে হয়েছে বলছো,তার মানে রেজিস্ট্রি হয় নি।তুমি তালাক দাও মেয়েটা কে স্বাধীন। ”
কথাটা বলার সাথে সাথেই এতোক্ষণ চুপ থাকা ছোঁয়া চেঁচিয়ে ওঠে
“চুপ করুন আপু! একদম চুপ।খবরদার! ঐ শব্দ টা মুখে ও আনবেন না।আর একবার বলেছেন তো? আমি ভুলে যাবো আপনি স্বাধীন ভাইয়ার বন্ধু। ”
“তুমি চুপ করো! আমি স্বাধীনের সাথে কথা বলছি, তোমার সাথে নয়।আমাদের মাঝে তুমি কথা বলার কে? ”
“ও কে তা তোমাকে আগেই বলে দিয়েছি নিহা।আর আমার জীবনের ব্যাপার।কি করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার।তুমি বলে না দিলেও চলবে। ”
“তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছে স্বাধীন! আমি আমি তোমাকে ভালোবাসি স্বাধীন। অনেক ভালোবাসি তোমায়।”
”বাট আমি তোমায় ভালোবাসি না নিহা।বন্ধু ছাড়া কোন ফিলিংসই নেই তোমার প্রতি। কোনদিন এতো এতোটুকু অসম্মান করিও নি তোমায়,তায় তোমার প্রতি কোন দায় বদ্ধতা নেই আমার।”
কাঁদতে নিজের ঘরে গেলো নিহা। স্বাধীন ও চলে গেলো ওপরে। আর শুধু হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো ছোঁয়া। স্বাধীন ভাই ওকে বউ বলে স্বীকার করলো? এতোদিনে কি আল্লাহ মুখ তুলে তাকালো ছোঁয়ার দিকে। দু চোখ অশ্রুতে ভরে আসে ছোঁয়ার।এটা কিসের অশ্রু বোঝে না ছোঁয়া। মন থেকে জবাব আসে এটা পাওয়া,পরম পাওয়া,,,,,,
চলবে,,,,,
#এ_কেমন_ভালোবাসা
#বোনাস_পার্ট
#মাসুরা_খাতুন
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, প্রায় দুইটা আড়াইটা।ছোঁয়া অনেক রকম রান্না করেছে অথচ খাবার টেবিলে এখনো কেউ আসে নি।স্বাধীন, নিহা যে যার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বিপাকে পড়েছে শুধু ছোঁয়া। হাজার হোক নিহা এ বাড়ির মেহমান।আর মেহমান রাগ করে না খেয়ে থাকবে এ খুব খারাপ দেখায়।ছোঁয়া এদিকে একবার গিয়ে ডেকে এসেছে কিন্তু নিহা ভেতর থেকে কোন সাড়াই দেয়নি।এবার ছোঁয়া স্বাধীনের দরজায় যায়।
সবে গোসল করেছে ছোঁয়া। গা থেকে এখনো শ্যাম্পুর স্মেল বের হচ্ছে। চুল গুলো ভালো ভাবে শুকানোই হয়নি,এলোমেলো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবাধ্য চুলগুলো।
“ভাইয়া,ভাইয়া দরজা খোলো, ,প্লিজ দরজাটা খোলো। ”
ভেতরে থেকে স্বাধীনের আড়মোড়া ভাঙার শব্দ পাওয়া যায়।
“কি হয়েছে রে ছোঁয়া? কেন বিরক্ত করছিস শুধু শুধু? খুব ঘুম পাচ্ছে, একটু ঘুমাতে দে।”
“তোমায় ঘুমাতে হবেনা ভাইয়া, আগে প্লিজ দরজাটা খোলো।কথা আছে তোমার সাথে। খোলো ভাইয়া।”
“আচ্ছা ভেতরে আয় ”বলেই দরজা টা খোলে স্বাধীন। পরনে একটা থ্রি কোয়ার্টার ছাড়া আর কিছুই নেয়।
“কি হয়েছে বল? কেন শুধু শুধু ডাকছিস?”
স্বাধীনের দিকে একবার তাকিয়েই দু হাত দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে ফেলে ছোঁয়া ।
“ছি ভাইয়া,তুমি এসব কি পড়ে আছো? খুব বিশ্রী লাগছে, আমি তাকাতে পারছি না।”
হতভম্ব স্বাধীন। এ কি মেয়েরে বাবা।থ্রি কোয়ার্টারই তো পড়ে আছে, এতে এতো লজ্জা কিসের? সেই সাথে একটা দুষ্ট বুদ্ধি ও খেলে ওর মাথায়।
ওভাবেই এগিয়ে গেলো ছোঁয়ার কাছে।একদম কাছাকাছি।
“এই মেয়ে চোখ খোল! কি হয়েছে, চোখ ধরে আছিস কেন? আমাকে কি তোর চিড়িয়াখানার বাঁদর মনে হয়? চোখ খোল,তাকা বলছি! নাহলে থাপ*ড়িয়ে তোর দাঁত গুলো সব ফেলে দেবো। ”
পিটপিট করে চোখ খোলে ছোঁয়া, হালকা তাকিয়েই স্বাধীনের লোমশ বুকটা নিজের এতো কাছাকাছি দেখে দুই ধাপ পিছিয়ে যায়, আবারও চোখ দুটো ধরে বলে,
“ছি ভাইয়া! আমি না তোমার অনেক ছোট,তার ওপরে তোমার ছাত্রী,আমার সামনে এসব নোংরা পোশাকে আসতে লজ্জা করছেনা তোমার? ”
কাতর হয়ে বলে ছোঁয়া।
স্বাধীন তো অবাক।
“তুই আমার ছোট! কিচ্ছু বুঝিস না তায়না? এই সাহারিয়ার স্বাধীনের নগ্ন বুক দেখেই এমন করছিস? আর স্বাধীনের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখিস?”তৃর্যক হেসে বলল স্বাধীন।
“না না ভাইয়া! আমি ওসব ভাবিই না।কি কি সব বলছো তুমি? ”
“ওসব কিচ্ছু ভাবিস না! তায়না? তাহলে আমার টি- শার্ট গুলো থেকে ফিমেল পারফিউমের স্মেল আসে কোথায় থেকে? আর এই যে এই শার্টটায় লিপস্টিকের দাগ টা এলো কোথা থেকে বল?”
ধরা পড়ে যায় ছোঁয়া, কিন্তু শেষ চেষ্টা করতে আরো একবার বলে,
“আ- আমি কি করে বলবো।ওগুলো হবে হয়তো নিহা আপুর।”
মুখটা নীচু করে বলে ছোঁয়া।
“এগুলো নিহার নয়।তোর গায়ের গন্ধ আমি চিনি।আর নিহাকে আমি এতোটাও সুযোগ দেইনা যে ওর লিপস্টিক আমার শার্টে লাগবে।”
“গায়ের গন্ধ “কথাটা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকায় ছোঁয়া। স্বাধীন ও বুঝতে পারে নিজের বোকামো টা।তায় ঢাকতে বলে,
“সরি পারফিউমের গন্ধ। ওই তো কি একটা ব্র্যান্ড?মাঝে মাঝে তোর ঘর থেকে আসে স্মেলটা”
দুটো মানুষই হয়তো ধরা পড়ে গেছে, কিন্তু কেউ স্বীকার করতে রাজি নয়। স্বাধীন নিজেও জানেনা, আজকাল কি হচ্ছে ওর? স্মার্ট সাইকোলজির টিচার সাহারিয়ার স্বাধীন এই একরত্তি মেয়ের কাছে বারবার অপ্রস্তুত হচ্ছে। সব কথা গুলিয়ে ফেলছে মেয়েটার সামনে।নিজের বোকামির জন্য নিজেই লজ্জিত স্বাধীন।
প্রসঙ্গ পাল্টায় ছোঁয়া নিজেই,
“না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছো কেন ভাইয়া? আমি আজ কতো রান্না করলাম।আর তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো?”
“কেন? রাগ তো সবসময়ই লাগে,তবে এখন রাগ লাগার কারণটা কি তুই নিজেই বলে দে? ”
গায়ে একটা টি- শার্ট চাপাতে চাপাতে বলে স্বাধীন।
“ঐ যে, আমার জন্য নিহা আপু সাথে তোমার ঝগড়া হলো? বিশ্বাস করো ভাইয়া,সেদিন তুমি রেগে গিয়েছিলে বলেই আমি আজ পরিষ্কার করে দেই নি।”
অপরাধীর মতো বলল ছোঁয়া।
“কেন? দিতিস।সেদিনের ব্যাথা টা কমে গিয়ে থাকলে আজ আবার দিতি।তোর তো আবার এইসব মাইর,আমার স্পর্শ পেতে ভালোই লাগে তায়না? আমার তির্যক দৃষ্টিতে খু* ন হতেও ইচ্ছে হয়।”
ডেভিল হাসি দিয়ে বলল স্বাধীন।
লজ্জায় ছোঁয়া একেবারে একাকার। তারমানে গতকাল রাতের কথা স্বাধীন ভাইয়ের মনে আছে? ছি ছি, কি লজ্জার কথা! এখন ও মাথা তুলে তাকাবে কি করে?ছোঁয়া যেন লজ্জায় একেবারে ম*রেই যাবে।কেন যে ডাকতে এসেছিল এই হিটলারকে।
“হয়েছে হয়েছে থাক,আর এতো লজ্জায় লাল হতে হবে না। ঐ যে আমি বাঁকা করে তাকায়, আর ওটা নাকি কলেজে অনেক মেয়েরই ভালো লাগে, সেদিন কলেজে গিয়ে গোপন সূত্রে শুনলাম। তায় আর কি বলছিলাম।আমার ছাত্রীদের মধ্যে তুই ও তো পড়িস।”
ওর লজ্জাবতীর লজ্জা কাটাতে বলে স্বাধীন।
“আসলে বলছিলাম যে ভাইয়া,দুপুরে খেয়ে ঘুমাও নি।আর বিকেল হয়ে যাচ্ছে, নিহা আপু ও দরজা খুলছেনা।অনেক বার ডাকলাম তাও। তুমি একটু ডেকে দেখো না,যদি ওঠে।”
প্রসঙ্গ পাল্টে বলে ছোঁয়া।
“হ্যাঁ,খুব ক্লান্ত ছিলাম। শাওয়ার নিয়েই শুয়ে পড়েছি।খুব ঘুম পাচ্ছিল,তবে ক্ষুধাও লেগেছে। আর নিহা কে তুই কেন ডাকতে গেছিস? ক্ষুধা লাগলে এমনিই উঠবে। ”
“যতোই হোক ভাইয়া, উনি আমাদের অতিথি। আর কয়দিনের জন্যই তো এসেছে। রাগ করে আছে তায় বলে না খাইয়ে রাখবো? এটা ভালো দেখায় না ভাইয়া।তুমি একবার ডেকে দেখোই না।প্লিজ। ”
“আচ্ছা চল,দেখছি।”
দুজনই বেরিয়ে এলো রুম থেকে। নীচ তলায় নিহার রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো স্বাধীন আর ছোঁয়া।
“নিহা, এই নিহা,দরজা বন্ধ করে আছো কেন? দরজা খোল।”
ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসেনা।
স্বাধীন আবার ও দরজায় ধাক্কা দেয়,
“কি হলো নিহা,ওঠো? নিহা নিহা।ওঠো ছোঁয়া খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে, এসো সবাই একসাথে খাবো।”
এবার ও কোন সাড়াশব্দ আসেনা।ছোঁয়ার খুব চিন্তা হয়।রাগের মাথায় আবার খারাপ কিছু করে বসেনি তো নিহা? একটু চিন্তা স্বাধীনের ও হচ্ছে। বড়লোকের অহংকারী মেয়ে,মতের অমিল হলেই রাগের মাথায় কিছু করে ফেলতেই পারে।
“নিহা দরকা খোলো,এই নিহা”,,,,,,
চলবে,,,,,,,