এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_১২

0
1283

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_১২
#মাসুরা_খাতুন

“তাহলে কেন ওকে এতো দূরে রেখেছো স্বাধীন? কেন কেন স্বামী স্ত্রী হয়েও এমন আচরণ করো ছোঁয়ার সাথে? ”
অধির আগ্রহে জানতে চায় নিহা।

“কারণ আমি এখনো পুরোপুরি মন থেকে মানতে পারিনি নিহা,যে ছোঁয়া আমার স্ত্রী। সেই ছোট বেলায় আমার না বুঝার সুযোগ নিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের। যা আমায় ছোঁয়ার ওপর হিং স্র হতে বাধ্য করে। এমন নয় যে আমি ছোঁয়া কে পছন্দ করিনা
কিন্তু যখনই ছোঁয়ার কাছাকাছি যেতে চেয়েছি ততোবারই মনে পড়ে আমার ওপর হওয়া অন্যায়ের কথা।অন্যায় ছোঁয়ার ওপর ও হয়েছে, কিন্তু সবকিছুর মূলে তো ছোঁয়াই ছিলো? ওর অসহায়ত্বের মূল্য আমায় দিতে হবে কেন বলতো? আচ্ছা ছোট বেলায় যে দাদিমা, মা নিজেরা নিজেদের চাওয়াটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, কি হতো যদি বড় হয়ে ছোঁয়ার জীবনে অন্য কেউ,অথবা আমার জীবনে অন্য কেউ আসতো? বড় হয়ে ও যে আমরা দু জন দুজনকে পছন্দ করবো তার কোন কথা নেই? কেন ভাবেনি এই কথা গুলো?
নিজের আফসোসের কথা বলে স্বাধীন।

“তারমানে তোমার রাগটা ঠিক কার ওপর স্বাধীন? ছোঁয়ার ওপর? নাকি তোমার পরিবারের ওপর?”

“আমি জানিনা নিহা,আমি কিচ্ছু জানিনা।শুধু জানি সবাই মিলে অন্যায় করেছিল আমার সাথে, ব্যাস।আমি তায়তো হুটহাটই রেগে যায় ছোঁয়ার ওপর।আমি জানি এ অন্যায়,কিন্তু যখনই আমি ছোঁয়া কে মেনে নিতে চায়, তখনই আমার মনের ভেতর কে যেন এসব মনে করিয়ে দেয়।আর আমিও অত্যাচার করি ছোঁয়া কে,পরে নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করে আসি গভীর রাতে। নিজে ব্যথা দেওয়া জায়গা গুলোতে পরম যত্নে ভালোবেসে আসি,পাগলি হয়তো তখন ঘুমায়।”

“কিন্তু এভাবে আর কতোদিন স্বাধীন? কবে শেষ হবে এ লুকোচুরি ভালোবাসা?কবে স্বীকৃতি দেবে ওকে”

“আরে চলতে থাকুক তো।যতদিন আমার রাগের পর্দা না সরে।ওই মেয়েটাকে আরো কষ্ট দেওয়ার আছে আমার।ও আমাকে অনেক জ্বা লায়।খুব কষ্ট দেয় প্রতিটি মুহূর্তে। তায় আমিও ওকে অনেক অনেক কষ্ট দেবো।একেবারে অতিষ্ঠ করে ছেড়ে দেবো।”
তির্যক হেসে বলে স্বাধীন।

“ছোঁয়া তোমায় কষ্ট দেয়! কি বলছো তুমি? ও আবার কখন তোমায় কষ্ট দিলো?”
অবাক হয়ে বলে নিহা।

“ও তুমি বুঝবে না ম্যাডাম।বুঝতে হলে আগে আমার মতো পুরুষ হতে হবে।তবেই বুঝবে পাশের রুমে বউ রেখে একা ঘুমাতে কতো কষ্ট। ”
বাঁকা হেসে বলল স্বাধীন।

“যাহ্ শয়তান! আমি একদম অবাক! তুমি ও এমন?তোমার মতো গম্ভীর, রাগী, বদমেজাজি মানুষ টাও ভেতরে ভেতরে এমন লুচু মার্কা? ”
হেসে বলল নিহা।

“কেন আমাকে কি পুরুষ মানুষ মনে হয় না? বউ ছাড়া একা ঘরে ঘুমাতে আমার কষ্ট হবেনা কেন? আমি কি এলিয়েন? আর এই কি সব ভাষা শিখেছো? লু চু, ছিহ্। ভাষার কি অবস্থা হচ্ছে তোমার? ”
রাগী লুকে বলল স্বাধীন।

“আরে এটাতো সেদিন তোমার কলেজ থেকে আসার সময় একটা ছেলে বলছিল, ওখান থেকে শিখে নিয়েছি।”

“বাহ্ খুব ভালো জিনিসই শিখেছো।তবে থ্যাংক ইউ নিহা।এভাবে বিষয়টাকে তুমি মেনে নেওয়ায়। আমি প্রথমে ভয়ই পেয়েছিলাম।তুমি হয়তো ভুল বুঝবে।কিন্তু না, তুমি বিষয় টাকে খুব সুন্দর ভাবে মেনে নেওয়ায় আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ তোমার প্রতি।”

“তো! তো এখন কি করবা? কৃতজ্ঞতা থেকে কি আমায় এক প্লেট ফুসকা খাওয়াবা? খুব খেতে ইচ্ছা করছে।
আর হ্যাঁ,প্রথমে একটু রাগ লাগছিলো ঠিকই কিন্তু যখন বুঝলাম তুমি বা ছোঁয়া তোমাদের কারোই হাত ছিলোনা বিষয়টাতে,তখন সবটা মেনে নিয়েছি।এখন বাদ দাও এসব,বলো ফুসকা খাওয়াবে কি না?

“হ্যাঁ অবশ্যই ম্যাম।চলুন,তবে হ্যাঁ আমি এসব খাবোনা।তুমি খাও।”

“কিই স্বাধীন? একা একা ফুসকা খেতে ভালো লাগে বলতো? কি হয় একটু খেলে?”

“আমি এসব খাইনা,তাতো জানোই।তবে খাওয়ার জন্য তোমায় একজন সঙ্গী জোগাড় করে দিতে পারি,তাও মেয়ে। ”

“কই কই বলো? একসাথে খাবো।”

“বলছি যে ফুসকা প্যাক করে নিয়ে বাসায় গেলেই কিন্তু একজন সঙ্গী পেয়ে যাবে খাওয়ার জন্য, সে মহারানির ও আবার খুউব পছন্দ। ”
অন্য দিকে তাকিয়ে বলল স্বাধীন।

“ওও বললেই পারো,মনে প্রেম জেগেছে, বউয়ের জন্য ও নিয়ে যাবে। এতে আবার অজুহাত দেখাতে হবে কেন?”

“আরে আমি সে কথা কখন বললাম। আর বাসায় ও যেতে হবে তাড়াতাড়ি, ছোঁয়া আবার একা কখনো থাকেনি।রাত করে ফিরলে ও ভয় পাবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ফুসকা নিয়ে এসো আমি একটা ফোন করে আসছি।”
বলে নিহা একটু সাইডে নিরিবিলি জায়গায় সরে গেল ফোনে কথা বলার জন্য।
আর স্বাধীন গেলো ওদের জন্য ফুসকা নিতে।

“হ্যাঁ ম্যডাম বলুন,কি করতে হবে আমাদের তায় বলুন শুধু। ”

“এতো বেশি বুঝতে হবে না তোমাদের, আমি সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত কিচ্ছু করবেনা,এমনকি সামনেও আসবেনা।ঠিক আছে? ”

“আচ্ছা ম্যাডাম।তবে এখন কি করবো?”

“এখন আপাতত কাল থেকে নজর রাখো,কার কার সাথে মেশে, কোথায় যাচ্ছে সবকিছু। তারপর সময় হলেই আমি সব বুঝিয়ে বলবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাডাম।কাজ হয়ে যাবে।”

“ওকে,আর শোন, আমি ফোন না দিলে তোমরা ফোন ও দেবেনা। যখন তখন ফোন দিয়ে বিরক্ত করতে হবেনা।খবর নেওয়ার জন্য আমিই সময় করে ফোন দেবো।আচ্ছা রাখো এখন।”

“আচ্ছা ম্যাডাম।”

হাতে করে ফুসকার প্যাকেট নিয়ে ফিরে আসলো স্বাধীন। গাড়ির কাছেই নিহা কে দাঁড়ানো দেখে প্রশ্ন করলো,

“ফোন করা হয়ে গেছে তোমার?”

“হ্যাঁ,,আরে ঐ কাজিনরা সব ফোন করছে,কবে যাব তায়।ওদের কে একটু বোঝালাম যে আমি কয়দিন পরেই আসছি।”

দুজনেই গাড়িতে গিয়ে বসলো।প্যাকেট গুলো নিহার হাতে দিয়ে স্বাধীন ড্রাইভ করছিল।সেই সাথে দু জনার টুকটাক কথাও হচ্ছিল।

“এই ছোঁয়া, তোমার জন্য কি এনেছি দেখো,যদিও আমি নই,স্বাধীনই কিনে দিয়েছে, তো একা একা খেতে ভালো লাগছিলোনা।তায় বাসায় আনলাম।”

দরজা খুলতেই ভেতরে আসতে আসতে কথা গুলো বলল নিহা।

“এই দেখো ফুসকা এনেছি, তুমি পছন্দ করতো ফুসকা? এসো দুজনে একসাথে খাই।”
বলেই ফুসকার প্যাকেটটা খুলে নিজের মুখে একটা ফুসকা চালান করে দিলো নিহা।
স্বাধীন গাড়ি পার্ক করে এসে সবে বসেছে ওদের বিপরীত দিকের সোফায়।

“কিরে ছোঁয়া, খাওয়া বাদ দিয়ে বসে আছিস কেন? তোকে কি মুখে তুলে খাইয়ে দেবো? নরম হয়ে যাবে, খেয়ে নে।”
হালকা করে ধমক দেয় স্বাধীন।

এই ছেলেটার মতিগতি ও বোঝেনা ছোঁয়া, আরে বাবা খাওয়ার কথাটাও কি ধমক দিয়ে বলতে হবে?নিশ্চিত উনার জন্মের সময় বড়মা একফোঁটা ও মধু দেয়নি এই বিরস লোকটার মুখে। তায়তো কোন মিষ্টি কথা নেই উনার মুখে।আর যত মধু সব জড় করে রেখে বড়মা,যখন ওর মায়ের পেট থেকে ও হলো তখন সব ঢেলে দিয়েছিল ওর মুখে।তায়তো সারাদিন কতো মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হয় ওর মুখটা থেকে,মনে মনে একা একায় এসব ভাবে ছোঁয়া।
তারপর নিজেও শুরু করে খাওয়া।দুজনে মিলে অতোগুলো ফুসকা নিমিষেই সাবাড় করে দেয়।ফোন ঘাটতে ঘাটতে বাঁকা চোখে ওদের কান্ড দেখে স্বাধীন,আর মুচকি মুচকি হাসে।

রাত প্রায় এগারোটা, সবাই খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার রুমে গেছে। স্বাধীন বসে বসে ফোনে চোখ বোলাচ্ছিল, এমন সময় দরজায় নক করে ছোঁয়া।

“ভাইয়া,তুমি কি ঘুমিয়েছো? আমার একটা ভিষণ প্রয়োজন ছিলো ভাইয়া।”

ছোঁয়ার গলা পেতেই একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো স্বাধীনের মনে।আজকাল ওর কি হয়েছে তা ও নিজেই জানেনা।হুটহাট বাচ্চাদের মতো আচরণ করতে ইচ্ছে হয়,ছোঁয়া কে কাছে পেতে মন চায়,কোন মেয়ের দিকে ভালোকরে তাকাতে ইচ্ছে হয়না।সে একটা পাগলামো করে বসে,ফোন রেখেই শুয়ে পড়ে বিছানায়, তারপর অসুস্থ মানুষের মতো গলা করে বলে,

“হ্যাঁ ছোঁয়া এসেছিস? আয়।দরজা খোলাই আছে।”

দরজা ঠেলে ভেতরে আসে ছোঁয়া,

“আসলে ভাইয়া,বিরক্ত করেছি বলে প্লিজ রাগ করো না।আজ আমি কলেজে যায়নি তো,তায় আজ তুমি কোন বিষয়ে পড়িয়েছ যদি একটু বলতে,তাহলে আমি বই দেখে দেখে বিষয় গুলো নিজে নিজেই বুঝতে চেষ্টা করতাম।নাহলে আবার আগামীকাল ক্লাসে গিয়ে তুমি কোন প্রশ্ন করলে উত্তর দিতো পারবোনা।”

“এখন আর পড়ার কথা বলিসনারে।মাথাটা বড্ড ধরেছে।এখন এইসব পড়াশোনা নিয়ে বসলে কিছুতেই মাথা ছাড়বেনা।”

“ওমা ভাইয়া,তোমার মাথা ধরেছে? আর তুমি আমায় এতোক্ষণে বলছো? মেডিসিন নিয়েছো ভাইয়া? ”
ব্যস্ত হয়ে বলে ছোঁয়া।

“হ্যাঁ রে, মেডিসিন নিয়েছি, কিন্তু তবুও কিছুতেই ছাড়ছেনা।খুব ব্যথা করছে মাথায়।”
শুয়ে থেকে মাথাটা একায় হাত দিয়ে ধরে বলল স্বাধীন।

“ভাইয়া,আমি একটা কড়া লিকারের চা করে এনে দিই? তুমি খেয়ে দেখো ভালো লাগবে। ”
চিন্তিত হয়ে বলল ছোঁয়া।

“ঐ তোকে চা করতে কে বলেছে? “হালকা করে ধমক দিয়ে বলে স্বাধীন।

“বলছিলাম যে একটু পেইন কিলার দিয়ে ম্যাসাজ করে দিতে পারলে কেউ হয়তো ভালো লাগবে,কিন্তু দেবে কে? মা ও তো নেই? “পূর্বের ন্যায় বলল স্বাধীন।

“ভাইয়া তু তুমি যদি বলো তো আমি ম্যাসাজ করে দিতে পারি? ”
ভয়ে ভয়ে বলল ছোঁয়া।

এতোক্ষণে লাইনে এসেছো বাছা,উহ্ আবার ন্যাকামো করা হচ্ছে, আরে বোন এসে দেনা মাথাটা ম্যাসাজ করে।মনে মনে বলে স্বাধীন।

“তুই দিতে পারবি? পারলে একটু দে,,,,”

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here