#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_১৩
#মাসুরা_খাতুন
ছোঁয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো স্বাধীনের দিকে,সাইড টেবিলটা থেকে পেইন কিলারের কৌটাটা নিয়ে হাতে হালকা মলম লাগিয়ে হাত ছোঁয়ায় স্বাধীনের কপালে। প্রচন্ড জড়তা জাপটে ধরে ছোঁয়া কে। এর আগে কখনো নিজে থেকে স্পর্শ করে নি স্বাধীন কে।তায় সজ্ঞানে স্বাধীন কে স্পর্শ করতে কেমন অচেনা লাগছে ছোঁয়ার। মনে হচ্ছে লজ্জায় হারিয়ে যাবে ও।কিছুটা দূর থেকেই আলতো করে হাত বুলাতে লাগল স্বাধীনের কপালে।
ধূর্ত স্বাধীন চোখ টিপে একবার দেখে নিলো ছোঁয়ার নাজেহাল মুখ,ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছিল ওর।মাঝে মাঝে ছোঁয়া কে জ্বা লানোটা যেন ওর আরেক তৃপ্তির কারণ
”কি রে ছোঁয়া, সত্যিই কি ম্যাসাজ করছিস? নাকি দায় এড়াচ্ছিস? অতোদূর থেকে ম্যাসাজ করলে কি ভালো লাগে? না হয় তুই যা, তোর কষ্ট করতে হবেনা,এমনিই সেড়ে যাবে।”
চোখ মুখ কুঁচকে বলল স্বাধীন।
“না না ভাইয়া,আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না।এইতো ভালো করেই তো ম্যাসাজ করছি।তুমি একটু চোখ বন্ধ করে রাখো,ঠিক সেড়ে যাবে। ”
বলে ছোঁয়া আরো একটু এগিয়ে গেলো স্বাধীনের দিকে। স্বাধীনের বালিশের পাশে বসে পড়ল ছোঁয়া।
“ছোঁয়া রে,একটু চোখের দিকে ও আননা হাতটা।ভালো লাগছে খুব।মনে হচ্ছে চোখ মুখে ও ব্যথা করছে। ”
ছোঁয়ার হাতটা নিজেই মুখের কাছে এনে বলল স্বাধীন।
“কি বলছো ভাইয়া? চোখ মুখেও ব্যথা হয় নাকি! এটা কেমন ব্যথা? ভাইয়া আমার ভয় করছে,নিহা আপুকে ডাক দিই?”
শঙ্কিত হয়ে বলল ছোঁয়া।
“চুপ কর! কে তোকে বলেছে নিহাকে ডাকতে? তুই একাই মালিশ কর।বেয়াদব মেয়ে। একটু ঘাড়ের দিকেও মালিশ কর।”
ধমক দিয়ে ওঠে স্বাধীন।
শয়তান মেয়ে! নিজের স্বামীর সেবায় অন্য মেয়ে কে নিয়োজিত করতে চায়।খালি দুই তিনটা থাপ্পড় পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে।রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দিল। মনে মনেই বিরবির করে স্বাধীন।
“আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া। তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো।আমি ম্যাসাজ করে দিচ্ছি। ”
প্রচন্ড জড়তা থাকা সত্বেও স্বাধীনের ঘাড়ের দিকে পেইন কিলার লাগিয়ে দেয় ছোঁয়া।
“জানিস ছোঁয়া, একটা জরীপে কি বলছে,পঁচাত্তর শতাংশ মাথা ব্যথা দূর হয়ে যায় একটা কাজ করলে।সাইকোলজিক্যাল জরীপ। ”
“কি কাজ করলে ভাইয়া? বলো আমায়,আমি করে দিচ্ছি। “উদগ্রীব হয়ে জানতে চায় ছোঁয়া।
“না থাক,তুই করবি না আমি জানি। অযথা আমায় খারাপ ভাববি।তারচেয়ে মাথা ব্যথার কষ্ট সহ্য করায় ভালো।আমার তো তেমন কেউ নেই,যে আমার জন্য এতোটা করবে।”
শুকনো মুখে মন খারাপের ভান করে বলল স্বাধীন।
“এসব তুমি কি বলছো ভাইয়া. তুমি শুধু একবার বলো ভাইয়া,যতো কঠিন কাজই হোক আমি করে দিচ্ছি।তাও তুমি সুস্থ হও।”
“করবি তো? পরে আমাকে খারাপ ভাববি না তো আবার?”
“না ভাইয়া,তোমাকে আমি চিনি,তুমি খারাপ হতেই পারোনা।”
“তাহলে শোন,সাইকোলজির একটি জরীপে বলছে,যেকোন ধরনের মাথা ব্যথায় মেয়েদের একটা চুমুই যথেষ্ট। একটা চুমু হাজার পাওয়ারের ব্যথার ঔষধের কাজ করে।ব্যথার জায়গায় যদি কোন মেয়ে একটা আলতো চুমু দিয়ে দেয় তাহলে ব্যথা পঁচাত্তর শতাংশ কমে যায়। ”
ক্লাসে লেকচার দেওয়ার মতো করে বলল স্বাধীন।
“এ্যাঁ,,,কি বলছো ভাইয়া? ছিহ্! এটা আবার হয় নাকি?”
অবাক হয়ে বলল ছোঁয়া।
“এজন্যই তো তোকে বলতে চাচ্ছিলাম না।থাক তুই যা, আমি ব্যথা নিয়েই শুয়ে থাকবো।সারলে সারবে,নয়তো সকালে গিয়ে ডক্টর দেখাবো।এদিকে সারারাত যা হয় হবে।”
মন খারাপ করার ভান করে বলল স্বাধীন।
“কিন্তু ভাইয়া আমি তো জীবনে ও শুনিনি এই কথা।”
“এই মেয়ে,তোর কি আমায় মিথ্যাবাদি মনে হয়? বললামই তো এটা সাইকোলজিক্যাল জরীপ।তুই কতোটুকু পড়েছিস সাইকোলজি সম্পর্কে? ”
ধমক দিয়ে ওঠে স্বাধীন।
“আসলে সরি ভাইয়া।হতে পারে। আমি তো অতো জানিনা।তুমি কিছু মনে করোনা।”
থতমত খেয়ে বলল ছোঁয়া।
“হ্যাঁ আমি জানি,আমার ব্যথা সারানোর কেউ নেই, তুই তো আর দিবিনা চুমু? আমি ব্যথা নিয়েই থাকবো।”
“ভা ভাইয়া,আ আমি চুৃুমু দেবো? কিন্তু? আমি এসব পারিনা ভাইয়া।কখনো ট্রাই করিনি।”
তোতলাতে তোতলাতে বলল ছোঁয়া।
“ট্রাই করিস নি তো কি হয়েছে? এখন ট্রাই করবি,আর তাছাড়া ও তোর প্রথম চুমু তো আমাকেই,,,আর এই মেয়ে,চুমু কি ট্রাই করার বিষয়? বোকার মতো কথা বলিসনা তো,চুমু এমনিই হয়ে যায় এতে ট্রাই করতে হয়না। আরে বাবা, একজন অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো তো তোর দায়িত্ব নাকি? এখন কি এতো দেখার সময় আছে কোনটা পারিস আর কোনটা পারিস না?”
“তা অবশ্য ঠিক,কিন্তু ভাইয়া?”
“এই মেয়ে দিলে দে,নয়তো আমি নিহাকে ডাকবো।ও এসে পটাপট কয়টা চুমু দিলেই সব ব্যথা সেরে যাবে।কি ডাকবো? এই নি,,”
বাকিটা বলার আগেই স্বাধীনের মুখে হাত দিয়ে ঢেকে দিলো ছোঁয়া।
“না না ভাইয়া, আমিই দিচ্ছি। তুমি শুধু চোখটা বন্ধ করো।”
এইবার লাইনে আসছো মহারানী,আমাকে জ্বা লানো হয় প্রতিদিন? আজ কি করবা?মনে মনেই হাসে স্বাধীন।
স্বাধীনের দিকে মাথা এগিয়ে নিয়ে যায় ছোঁয়া, চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে।লজ্জায়,উত্তেজনায় ওর শরীর কাঁপছে। জীবনে প্রথম চুমু দিতে যাচ্ছে নিজের প্রিয় মানুষটিকে।স্বাধীন ভাইয়ের মতো রাগী, বদমেজাজি মানুষটাকো ও চুমু দিতে যাচ্ছে মনে হতেই কিছুটা ভয় হয় ছোঁয়ার।কি জানি,হয়তো চুমুতেও দোষ ধরবে লোকটা।বলবে এমন ভাবে দিয়েছিস কেন? তোর কোন সেন্স নাই,এভাবে মানুষ চুমু খায়? ধীরে ধীরে ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে যেতেই আবারও থেমে যায় ছোঁয়া।
“ভাইয়া,আমার খুব লজ্জা লাগছে,বলছিলাম যে চুমু না দিলে কি ব্যথাটা ভালোই হবেনা?”
এমন সময় থেমে যাওয়ায় খানিকটা বিরক্ত হয় স্বাধীন। তারপর ও বলে,
“ঔষুধ খেলাম,পেইন কিলার দিয়ে ম্যাসাজ করে দিলি,তাও ছাড়ছেনা।তাহলে কি করা যায় বলতো? ঐ একটা উপায়ই আছে ট্রাই করে দেখার।”
“আচ্ছা, তুমি চোখ টা আবার বন্ধ করো।”
বলেই টুক করে স্বাধীনের কপালে একটা চুমু খায় ছোঁয়া। প্রিয়তমার প্রথম চুমু পেয়ে কেঁপে ওঠে স্বাধীনের পৌরুষ মন।এ আবেদন উপেক্ষা করা সত্যিই অনেক কষ্টের।তারপর ও নিজেকে ধাতস্থ করে কপালের আরেক দিকে হাত দিয়ে বলে,
“এখানে গেলো ব্যথা ছোঁয়া, এখানে একটা দেতো।”
ছোট্ট করে আলতো পরশ ছুঁইয়ে দেয় ছোঁয়া।
এবার স্বাধীন একটু বেশিই দুষ্টুমি করে বসে,ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে,
“ছোঁয়া রে ব্যথা গুলো মনে হয় সব এখানেই গেছে রে,কি ব্যথা,আর যন্ত্রণা তোকে কি করে বোঝাবো? এখানে একটা দিলে মনে হয় সব ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।”
ছোঁয়ার কিছুতেই সাহস হয়না স্বাধীনের ঠোঁটে উষ্ণ পরশ আঁকতে।
“এ এখানে আআমি পারবো ভাইয়া।”
বলেই ছোঁয়া কোনরকমে দৌড়ে চলে আসে স্বাধীনের ঘর থেকে। সমস্ত লজ্জা এসে জেঁকে বসেছে ওর পুরো শরীরে। জীবনে প্রথম চুমু কতোটা আকর্ষিত তা শুধু সদ্য কিশোর, কিশোরীরায় অনুভব করে।আর সেখানে স্বাধীন তো এক পরিনত যুবক,তার জন্য সবচেয়ে আকাঙ্খিত প্রিয় নারীটির প্রথম স্পর্শ, প্রথম চুমু ওর জন্য যে কতোটা অনূভুতিপূর্ন তা শুধু সেই টের পেয়েছে। শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরা জানান দিচ্ছিল যে এই নারীটিকে ওর চায়,ভিষণ রকম করে কাছে চায়।এতো টা কাছে চায় যখন দুজন মিলে একজন হওয়া যায়।ছোঁয়া ভালোই করেছে পালিয়ে গেছে, নয়তো আজ অনেক বড় পাগলামিতে পেয়েছিল স্বাধীন কে।ও হয়তো কিছুতেই আজ ছোঁয়ার প্রতি অনূভুতি গুলোকে উপেক্ষা করতে পারতো না।না কক্ষনোই পারতোনা,এ অসম্ভব। সে তো মানুষ! কোন
ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা অনূভুতি শুন্য প্রাণী নয়।
সকাল বেলায় ছোঁয়া আগে ঘুম থেকে উঠে সব হাতের কাজ গুলো সেড়ে নেয়।স্বাধীনের মাথা ব্যথার কি অবস্থা সেটাও জানার জন্য মনটা কেমন করছে,কিন্তু গতরাতে যা হলো তাতে স্বাধীনের সামনে যাওয়ার মতো দুঃসাহস ওর নেই। প্রচন্ড লজ্জা আর জড়তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে দিচ্ছে না ওকে।
ব্রেকফাস্ট রেডি করে ছোঁয়া যায় নিহাকে ডাকতে।তারপর দুজনে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে।
“কি ব্যাপার ছোঁয়া, স্বাধীন কে দেখছিনা? ও কি ওঠেনি এখনো?”
“আসলে আপু স্বাধীন ভাইয়ার রাতে খুব মাথা ব্যথা করছিল,তায়তো দেরিতে ঘুমিয়েছে।আপনি একটু গিয়ে দেখুন না,এখন মাথা ব্যথা সেরেছে কি না? ”
“ওহ্ তাই? তো তুমি সকালে ওকে ডাকতে যাওনি? কি অবস্থা ওর?”
“আমি যায়নি আপু।আপনি একটু যান না প্লিজ। ”
“আচ্ছা আমি দেখছি।”
বলে নিহা গেলো স্বাধীন কে ডাকতে।
স্বাধীনের দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখে স্বাধীন একেবারে রেডি হয়ে নিচে আসার জন্য বের হচ্ছিল
“কি ব্যাপার স্বাধীন, তোমার নাকি মাথা ব্যথা করছিল?”
” মাথা ব্যথা? “বলেই কপাল কুঁচকে তাকায় স্বাধীন। তারপরেই মনে পড়ে ছোঁয়ার কাছে করা মিথ্যে মাথা ব্যথার বাহানার কথা।তায়তো আবার বলে ওঠে,
“ওহ হ্যাঁ মাথা ব্যথা।হয়েছিল তো।”
বলেই স্বাধীন নিচে যেতে লাগলো।নিহা ও গেলো স্বাধীনের পিছু পিছু। ছোঁয়া টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল স্বাধীন কে আসতে দেখে লজ্জায় মাথা নীচ দিকে করে রাখলো।
“তো মাথা ব্যথা সেরেছে স্বাধীন? এখন কেমন ফিল করছো?”
“বেটার! একদম বেটার ফিল করছি নিহা।ছোঁয়া রাতে মেডিসিন দিলো,আর মাথা ব্যথা ও সেরে গেলো।”
বসতে বসতে বলল স্বাধীন।
“ছোঁয়া মেডিসিন দিলো? কেন তোমার কাছে মেডিসিন ছিলো না?”
“না ছিলোনা।ছোয়া আলাদা একটা মেডিসিন দিয়েছে যেটা আমার কাছে ছিলো না,আর মেডিসিন টার এমন পাওয়ার মাথা ব্যথা নিমিষেই সেরে গেছে।”
ছোঁয়ার দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল স্বাধীন। ঠোঁটে ছিলো বাকা হাসি।
এদিকে ছোঁয়া লজ্জায় একাকার। মনে মনে স্বাধীনের গোষ্ঠী উদ্ধার করে গালাগালি করছে।দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এখন সেটা নিয়ে মজা করা হচ্ছে? আজ ক্লাসেই প্রশ্ন করবে ছোঁয়া, সাইকোলজির কোন চ্যাপ্টারে ব্যাথা সারানোর ঔষধ হিসেবে চুমুর ব্যাখ্যা দেওয়া আছে,তখন দেখা যাবে কি উত্তর দেয় খচ্চরটা।
কোন মতে মাথা নিচু করে ছোঁয়া নাস্তা খেলো ওদের সাথে।খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার মতো বেরিয়ে গেলো নিজেদের গন্তব্যে,,,,,,
চলবে,,,,,,,