এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_১৭,১৮

0
1360

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_১৭,১৮
#মাসুরা_খাতুন
১৭

শুনশান নিরব রাত।চারদিকে মানুষ গুলো হয়তো ঘুমে মগ্ন, ঘুম নেয় শুধু স্বাধীনের চোখে। ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে রাতের কালো আকাশ দেখছে স্বাধীন, দু আঙ্গুলের ফাঁকে অবস্থান করছে আধা খাওয়া ধোঁয়া উড়া সিগারেট। একটু পর পর লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়ার সাথে সাথে নিজের ব্যর্থতা ও উড়িয়ে দিচ্ছে। না,আজ সিগারেটেও অস্থিরতা কাটছে না।কিছুতেই নিজের অশান্ত মন কে শান্ত করতে পারছেনা।বুকের ভেতর যেন বড় একটা পাথর চাপা পড়ে আছে।খুব শুন্য শুন্য লাগছে নিজেকে। ইতোমধ্যে দু বার গিয়ে দেখে এসেছে ছোঁয়ার খালি ঘরটা।বালিশটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঝরঝর করে কেঁদেছে,তারপর ও শান্ত হচ্ছে না মন।ওর প্রিয় ছোঁয়া টা কোথায় কি অবস্থায় আছে আল্লাহই ভালো জানে।মেয়েটা যে কতো ভীতু আর সহজসরল তা স্বাধীন ভালো করেই জানে। না জানি কতোটা ভয় পেয়ে আছে ছোঁয়া টা।প্রতিদিন এই ঘরেই বসে যে মেয়ে টা স্বাধীনের ভালোবাসা কামনা করতো সে এখন কোথায়?
শেষ টান টা দিয়ে ফেলে দিলো সিগারেট টি।পুরো প্যাকেট টায় শেষ, এবার ও কি করবে? বাকি রাত টুকু সিগারেট ছাড়া থাকবে কি করে ও? তাড়াতাড়ি করে রুমে গেলো সিগারেটের প্যাকেট খুঁজতে।বই খাতা, টেবিল ড্রয়ার সব কিছু খুঁজতে লাগলো একটা সিগারেট। এমন সময় হাতের সাথে লেগে একটা বই পড়ে গেলো টেবিল থেকে।স্বাধীন বইটার দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো বইয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে পড় আছে একটি চিঠি।এই সেই চিঠি যেটা ছোঁয়া লিখে রেখেছিল। চিঠিটা পড়ে স্বাধীন বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।
“তুই বিশ্বাস কর ছোঁয়া, আর কখনো কষ্ট দেবোনা তোকে।আর কোন দিন অভিযোগ করার সুযোগ পাবি না তুই।কোন কষ্ট পেতে হবেনা তোকে।তাও তুই ফিরে আয় ছোঁয়া। ফিরে আয়।”

এদিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসা মানুষ টি ধিরে ধিরে স্পষ্ট হতে থাকে ছোঁয়ার কাছে। সেই অল্প বয়সী ছেলেটা যে একটু একটু করে এগিয়ে আসে একদম ছোঁয়ার কাছে।

“খবরদার আমার গায়ে হাত দেবেনা।কেন এসেছো তুমি? তুলে এনেছো,বেঁধে রেখেছো,মেরেছো তাও তোমাদের চাহিদা মেটেনি? এখন আসছো নিজেদের আরো একটি নিকৃ*ষ্ট রূপ দেখাতে? একদম ছোঁবে না আমায়। ”

“আরে চুপ!একটা কথা ও না।”
বলেই ছেলেটি ছোঁয়ার মুখটা চেপে ধরে। একদম কাছে গিয়ে ফিসফিস করে ছেলেটি বলে,

“আমি যা যা বলছি চুপ করে শোন,একটা কথাও বলো না।ওরা জেনে গেলে বিপদ আছে।আমি আসলে ওদের মতো নই।”

ফিসফিস করে ছেলেটি বলতেই কিছুটা গর্জে ওঠে ছোঁয়া।

“না তুমি ওদের মতো নও,ওদের থেকেও জঘন্য। কি করেছো আমার কেয়ার সাথে তুমি? আমার সামনে তুমি কেয়া কে চড় মেরেছো,আরো কি কি করেছো আল্লাহই জানে । আর এখন বলতে আসছো তুমি সাধু পুরুষ! যাতে আমার সামনেও নিজের ভয়ং*কর রূপটা ভালো ভাবে দেখাতে পারো?”

ছোঁয়া কথা বলতেই ছেলেটি ছোঁয়ার মুখ চেপে ধরে। তারপর ফিসফিস করে বলে,

“এই মেয়ে শোন,কিচ্ছু খারাপ হয়নি তোমার কেয়ার সাথে। আর আমি গু*ন্ডা ও নই।আমি একজন সিআইডি পুলিশ। এদের কে হাতেনাতে ধরতেই অনেক দিন থেকে আমি এদের সাথে ছদ্দ*বেশে আছি।এটা আমাদের একটা মিশন।আর তা সাকসেস করতে তোমার ও সহোযোগিতা প্রয়োজন । ”

এতোক্ষণে ছোঁয়া ছেলেটার মুখের দিকে তাকায়,সত্যিই গু*ন্ডা মনে হচ্ছে না ওকে দেখে।এর ভাষা ও ওদের মতো বিশ্রী নই,মার্জিত।

“কি কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? আর আমি কিভাবে সাহায্য করবো আপনাকে?”

ছোঁয়ার মুখের কাছ থেকে এতোক্ষণে হাতটা সরায় ছেলেটা
“আসলে আমার কাছে ইনফরমেশন ছিলো এরা শহরের না না জায়গা থেকে মেয়েদের ধরে কিড*ন্যাপ করে বাইরের দেশে বিক্রি করে দেয়।অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেও কোন উপযুক্ত প্রমাণ আমরা পাচ্ছিলাম না।তাইতো আমাকে কিছুদিনের জন্য আ*ন্ডার*গ্রা*উন্ড হয়ে যেতে হয়।এবং সুযোগ পেয়েই মিশে যায় এদের সাথে। এবার একটা বড় টার্গেটে আছি। খবর পেয়েছি আগামি দশ তারিখ ওরা একটা মেয়েদের দল পাঠাবে বাইরে। তার মধ্যে তুমি ও থাকবে।তাইতো আমি আমার টিম কেও ইনফর্ম করে দিয়েছি।সেই সাথে আমাদের লোকেশন জানার জন্য তোমার বান্ধবীর সামনে এখানের একটা হোটেলের বিলের কাগজ ও ফেলেছি,ঐ মূহুর্তে ওটা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা আমার।আই হোপ তোমার বান্ধবী খুবই বুদ্ধিমতি মেয়ে। ও ঠিক আমার ইশারা বুঝেছে,আর ওরা পুলিশের কাছে ও চলে গেছে। ”

“তাহলে এখন আমরা কি করতে পারি? আর আপনি ও ওদের ধরিয়ে দিচ্ছেন না কেন? ”

“সেই সময় এখনো আসেনি আমাদের। তুমি শুধু ধৈর্য ধরো।আর আমি আছি।আমি থাকতে কোন ক্ষতি তোমার করতে পারবেনা।তুমি শুধু চুপ থাকবে,আর আমাদের সহ সেই মেয়ে গুলোকেও বাঁচা*তে সাহায্য করবে।”

“কিন্তু ওরা বলল আমাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে, তো আমাকে ধরানোর জন্য টাকা কে দিলো? আমি তো কারো ক্ষতি করিনি। ”

“আমরা আসলে অনেক সময় বুঝতেও পারিনা,নিজেদের অজান্তেই অনেক সময় কারো খুব বড় শত্রু হয়ে যায়। এসব শত্রু গুলো খুবই বি*পদ জনক।এরা সব সময় পেছন থেকেই ছু*রি মারে।কে টাকা দিয়েছে তা পুরোপুরি না জানলেও এটুকু বুঝতে পেরেছি সে একটা মেয়ে । কালা বাবলা যখন ফোনে কথা বলছিলো তখন একটা মেয়ের কথায় বলল।”

“একটা মেয়ে? কোন মেয়ে কেন আমার এমন ক্ষতি করবে? সেটা আবার নিহা আপু নয়তো?”

“নিহা?”বলতেই বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো ওরা, তড়িঘড়ি ছেলেটা লুকিয়ে পড়লো,এবং পায়ের আওয়াজ থেমে গেলে শেষ বার বলে গেলো,

“শোন আমি বাঁধন, আর বেশিক্ষণ আমি এখানে থাকতে পারবো না।ওরা আমায় বাইরে না দেখলে সন্দেহ করবে।তুমি কোন চিন্তা করো না।একদম এদের ঝামেলা করো না।আর আমি খাবার আনতেও যেতে পারিনি তোমার জন্য। রাতে তো খেলে না।সকালে এরা যা খাবার দেবে ঠিকঠাক মতো খেয়ে নেবে।যেকোনো লড়া*ইয়ের জন্য শক্তি প্রয়োজন। আর তায় খেয়ে নেবে।আমি আসছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে, আপনিও সাবধানে থাকবেন।”

বাঁধন যেভাবে এসেছিল ঠিক তেমন ভাবেই চুপিচুপি চলে গেলো। এবার ছোঁয়ার কিছু টা ভয় কেটেছে। বাঁধন কে ওর সত্যিই বিশ্বাস হয়েছে। কিন্তু মনের মধ্যে প্রশ্নরা সব ডানা বাঁধতে থাকলো।কে হতে পারে যে ওকে কিড*ন্যাপ করাবে? নিহা ছাড়া কারো ওপরই সন্দেহ হচ্ছে না ওর।কারণ ওর সাথে তেমন কারো বন্ধুত্ব ও নেই, আবার শত্রতা ও নেই। সামান্য একটা ব্যাপারে নিহা এতো জঘ*ন্য একটা কাজ করালো? কিছুই ভাবতে পারেনা ছোঁয়া। সকালে একটু খানি খেয়ে বেরিয়েছিল,তারপর থেকে কেয়ার দেওয়া চকলেট গুলো ছাড়া আর কিছুই পেটে পড়েনি ওর।ক্ষুধায় পেট চো চো করছে।প্রচন্ড বিপদে ও নিজেকে শক্ত রাখতে হলেও খাবার যে খেতেই হবে তা বুঝতে পারে ছোঁয়া। প্রচন্ড ক্ষুধা তৃষ্ণার মাঝে ও চোখ দুটো বন্ধ করলেই স্বাধীনের মুখটি বারবার ভেসে আসছে।স্বাধীন ভাই কি ভাবছে ওর কথা? আজ কি একটু ও কষ্ট পাচ্ছে স্বাধীন ভাই? নাকি ছোটবেলা থেকেই বিরক্ত করে আসা পথের কা*টা আজ দূর হয়েছে বলে মনে মনে হালকা হয়েছে। দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে ছোঁয়ার চোখের কোণ বেয়ে,হাতদুটো বাঁধা থাকায় মুছতে পারেনা ছোঁয়া, ওভাবেই শুকিয়ে যায় নোনা জলরাশি।

সকাল হতেই স্বাধীন ছুটে পুলিশ স্টেশনে।ছোঁয়ার কোন খবর পাওয়া গিয়েছে নাকি জানতে।অফিসার সিরাজউদ্দীন জানান,

“দেখুন মিস্টার সাহারিয়ার, আমরা ঐ হোটেলের খোঁজ করছি, বেশ কয়েকটা হোটেল এই নামে পেয়েছি। তো এর মধ্যে দুটো হটেল নির্জন এলাকায়। আমরা ধারণা করছি ঐ নির্জন এলাকারই হোটেলের কোন একটার আশেপাশে ওরা আছে। আমাদের একটা টিম সাদা পোশাকে ঘুরছে ওখানে।কোন রকম তথ্য পেলেই আমাদের জানাবে আমরা সাথে সাথেই এ্যাক*শন নেবো।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আশা করছি আমরা খুব তাড়াতাড়িই সফল হবো।”

“যতো তাড়াতাড়ি পারেন ওকে উদ্ধার করুন অফিসার। ও খুব ভীতু মেয়ে।না জানি কেমন করে, কোথায় আছে আমার ছোঁয়া। ওর কোন ক্ষতি হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না অফিসার। প্লিজ কিছু করুন।”

“ক্ষমা করতে পারবেন না মানে? আর আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন? দেখুন মিস্টার সাহারিয়ার, যদি এতোটুকু পরিমান সন্দেহ কারো প্রতি হয়ে থাকে,তো প্লিজ লুকাবেন না।সেটা সঠিক হোক বা না হোক,আমরা খোঁজার চেষ্টা করবো, এবং আপনি বলবেন।”

“আসলে, ছোঁয়া খুব সাদাসিধে মেয়ে। বাড়ির বাইরে ওর যাতায়াত খুবই কম।কলেজে ওর বন্ধু বলতে শুধু কেয়া।আর কলেজে তো আমিও থাকি,ওখানে কারো সাথে কিছু হলে আমিও জানতে পারতাম।তবে,,”

“তবে কি? মিস্টার সাহারিয়ার? বলুন আমাদের। ”

“আসলে ছোঁয়া শুধু আমার চাচাতো বোন না,ও আমার স্ত্রী ও।ছোট বেলায়ই আমাদের বিয়ে দেওয়া হয়। ওর বাবা মা মারা যাওয়ায় ও আমাদের সাথেই থাকতো।আমার মা ওকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন।কিন্তু ছোটবেলায় বিয়ে দেওয়ায় আমার কিছু টা রাগ ছিলো ছোঁয়া সহো আমাদের পরিবারের সবার ওপর।তাইতে আমি ওকে খুব একটা সহ্য করতে পারতাম না,তবে সেটা বাইরে বাইরে। মনে মনে নয়।তো কিছু দিন আগে আমার এক কলেজের বান্ধবী আমার আাসায় আসে,বাবা মা হাওয়া বদল করতে সিলেট গেছেন উনারা এখনো জানেন না। তো নিহা জেদ ধরে আমার বাসায় থাকবে।অনেক না না করেও শেষমেষ নিয়ে যেতেই ওকে।”

এভাবেই নিহার সাথেকার সমস্ত ঘটনা খুলে বলে স্বাধীন।

“আমি সিউর নয় অফিসার, তবে যেহেতু আপনি বললেন হালকা সন্দেহ হলেই বলতে তাই আমি বলে রাখলাম,কারণ যেকোন মূল্যেই আমি আমার ছোঁয়া কে ফেরত চাই।ও আমার কাছে সবথেকে বেশী ইমপ্রোটেন্ট। ”

“ধন্যবাদ মিস্টার সাহারিয়ার। আপনি নিহার ফোন নাম্বার টা আমাদের দিয়ে যান,আর আমরা দেখছি কি করা যায়।”

নিহার নাম্বার টা কনস্টেবলের কাছে দিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় স্বাধীন।,,,,,,,

চলবে,,,,৷

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_১৮
#মাসুরা_খাতুন

চারদিকে সুনসান নীরবতা। সকালের আলো ফুটেছে অনেক আগেই,ছোঁয়া ক্ষুধায় সারারাত ঘুমাতে পারেনি।শেষ রাতে একটু খানি ঘুমিয়েছিল,দরজায় খটখট আওয়াজ হতেই হকচকিয়ে ওঠে ছোঁয়া। চিন্টু আর ঝাঁকড়া চুলের লোকটি এসেছে খাবার নিয়ে। ঘরে ঢুকেই লোকটি বিশ্রী একটা গালি দেয়,

“খান*কির জাত,জানালা গুলা খোলা রাখছোস ক্যান? ঐগুলা কি তগো বাবায় দিবো? যদি বাইরে থেকে কেউ দেখতো।”

“আসলে বস সন্ধায় যখন দরজা আটকিয়ে যায়,তখন মেয়ে টি বলল জানালা খুলে দিতে,ওর নাকি গরম লাগছে,তায় আর কি,,,”

“হ,ও তো তোর মায়ের পেটের বোন লাগে, চায়লে এসি ও চালু করে দে।আর এই মেয়ে, খেয়ে নে তাড়াতাড়ি কোন নাটক করবিনা।”

খাবারের থালাটা ছোঁয়ার সামনে দিয়ে একহাত খুলে দেয় চিন্টু। খাবার সামনে পেতেই হামলে পড়ে ছোঁয়া, একদিন একরাত থেকে না খাওয়া।কোন কমদামি হোটেল থেকে পাতলা খিচুড়ি আনা হয়েছে, তায় যেন আজ অমৃতর মতো মনে হচ্ছে। গপাগপ কয়েক লোকমা খাবার মুখে পুরেই ছোঁয়া থামে।বাঁধন ছেলেটিকেও সকাল থেকে দেখেনি ও।সে বলল শুক্রবারে ওকে চা*লান করা হবে, তাহলে আজ বৃহস্পতিবার। হটাৎ চিন্তায় ছোঁয়ার মাথা ঘুরে উঠলো।কি হতে যাচ্ছে ওর সাথে? বাঁধন কি সত্যিই সিআইডি পুলিশ? নাকি সেও তাকে ধোঁকা দিচ্ছে কি করে বুঝবে ছোঁয়া। কারো সাথে কোন শত্রুতা না থাকা সত্বেও ও আজ এ জায়গায়, সেখানে অপরিচিত একটা ছেলেকে কি করে বিশ্বাস করবে ও? ক্ষুধার কারণে কয়েক লোকমা খেলেও এখন এক অরুচিতে ভরে উঠলো ছোঁয়ার মন। আর খাবেনা বলে পানি খেয়ে নিলো।ওর বাঁধন নামের ছেলেটির সাথে আরো একবার কথা বলতেই হবে, বুঝতে চেষ্টা করতে হবে ছেলেটা কি সত্যিই ভালো? নাকি এদেরই কোন ফাঁ*দ।ছোঁয়া কে আবারও পুনরায় বেঁধে রেখে চলে গেলো ওরা।ছোঁয়ার খুব কান্না পাচ্ছে, ওর মনে হচ্ছে এ জীবনে কি আর ও স্বাধীন কে দেখতে পাবে? ওর চিঠিটা কি স্বাধীন পেয়েছিলো? খুলে পড়ে নিশ্চয়ই হেসেছে খুব।আর কেয়া? ও তো স্বাধীন ভাইয়া কে চেনেনা,কি করে আমার খবরটা ও সবাই কে দেবে? আচ্ছা , আমি যে কাল থেকে বাড়ি ফিরিনি,স্বাধীন ভাইয়ের কি একটু ও চিন্তা হচ্ছে না? খুঁজছেন উনি, আমায়? এসব ভাবতে ভাবতে ছোঁয়ার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু ফোঁটা অশ্রু বিন্দু। আবারও দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে সামনে তাকায় ছোঁয়া, বাঁধন এসেছে দেখে মনে মনে একটু খুশিই হয়।

“কি খবর কি অবস্থা আপনার? খেয়েছেন?”

“হ্যাঁ।আপনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন? আর ওরা কোথায়?”

“ওরা এখন নেই, আর আমি বাইরে গিয়েছিলাম।কিছু লাগলে সেটা কিনে আনার দায়িত্ব টা আমার ওপরই থাকে।ওরা সবাই চিহ্নিত আসা*মী,আর যেহেতু আমি নতুন, তাই বাজারে গিয়ে কেনাকাটা টা আমার দায়িত্বে।”

“ওরা সবাই গেছে কোথায়? ”

“ওরা সবাই গেছে আরেকটা গুদামে,ওখানে আরো পাঁচ টা মেয়ে আছে, ওদের কে দেখে আসতে।এখন বাইরে একজন পাহারাদার আছে,আর আমি। ”

“তাহলে আপনি আমায় বের করে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন? দেখুন প্লিজ, আমার বড় আব্বু বড়মা বয়স্ক মানুষ। উনারা যদি শোনেন তো সহ্য করতে পারবেন না।প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন।”

“দেখুন মিস ছোঁয়া, আমি চাইলেই এখনি আপনাকে এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যেতে পারি।কিন্তু আমি তা করবো না।”

“করবেন না মানে? আপনি যে বললেন আপনি পুলিশের লোক? তাহলে কেন আমায় সাহায্য করবেন না?”

“ছোঁয়া, আপনি শান্ত হোন।দেখুন আমি যদি শুধু আপনাকে এখন থেকে নিয়ে পালাই,তো আরো পাঁচ টা মেয়ের কি হবে ভেবে দেখেছেন? আপনি প্লিজ একটু হেল্প করুন আমায়।আপনি সাহায্য করলে আমরা ঐ মেয়ে গুলো সহ আপনাকে উদ্ধা*র করতে পারবো।তায় আমি এখন শুধু আপনাকে নিয়ে পালাবো না,বরং আমরা সবাই মিলে ওদের আট*ক করবো।”

“আপনি ঠিকই বলেছেন,তো বলুন কি কি করতে হবে আমায়। আমি একদম প্রস্তুত আপনাকে সাহায্য করার জন্য। ”
আগ্রহী হয়ে বলল ছোঁয়া।

“মিস ছোঁয়া, আপনি সত্যিই সাহসী মেয়ে।আপাতত এখন আপনাকে কিছুই করতে হবে না। তবে রাতে যখন খাবার দেবে তখন আপনি যে করেই হোক খাবারটা খাবেন না।কিন্তু এমন ভাবে কাজটা করবেন,যাতে ওরা মনে করে আপনি পুরোটা খেয়েছেন।রাতে আপনার খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশানো থাকবে।আর তাইতো আপনি রাতে প্রচন্ড ঘুমিয়ে থাকার নাটক করবেন।এর মধ্যে হয়তো ওরা আপনাকে গাড়িতে তুলবে তবে যায় করুক আপনি চুপ থাকবেন।পুলিশ রা সম্ভবত আমাদের খবর পেয়েছে।আমি যখন সকালের নাস্তা নিতে যাই,তখন সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশ কে ঘুরতে দেখেছি।ওরা আমাকে না চিনলেও আমি ঠিক চিনেছি।আমি কিছু বলতে পারিনি ওদের কে,কারণ এদের কিছু খোচর ও ঘুরাফেরা করছিলো ওখানে। তবে আমার বিশ্বাস খুব তাড়াতাড়িই আমাদের সন্ধান পাবে।আর এদিকে এদের আটকাতে যা যা করতে হয় আমি করবো। আপনি কোন চিন্তা করবেন না।নিজের খেয়াল রাখবেন।”

“আপনি চায়লে এখন তো পুলিশের লোকেদের সাথে কথা বলতে পারেন। ”

“ধুর বোকা।পাঁচ মাস থেকে আছি এদের সাথে। আমার কাছে কোন ফোন নেই। মাঝে মাঝে আমাদের সাদা পোশাক ধারি সিআইডিদের সাথে দেখা হলে খবরাখবর নেই।কখনোবা বাজারে সুযোগ পেলে টেলিফোনে নিজেদের প্ল্যান জানাই।আমাদের কাজই এমন।এই গ্রুপ টাকে ধরতে পারলে এখানে আমার কাজ শেষ। তখন হয়তো অন্য কোন শহরে,অন্য কোন ক্রাই*মবাজ দের সাথে জড়িয়ে পড়ার হুকুম হবে।তখন আবার এভাবে অভিযানে নামতে হবে।জানেন,এমন গু*ন্ডাদের সাথে কাজ করে করে নিজেকেও আজকাল গু*ন্ডাই মনে হয়।”

লোকটার শেষের কথা গুলো শুনে ফিক করে এসে ওঠে ছোঁয়া। অনেক টা সাহস এসেছে ওর মনে ও।

“আচ্ছা, একটা কথা বলবো? আপনার ঐ গু*ন্ডি বান্ধবী টার নাম যেন কি? ”

“এই একদম ওকে গু*ন্ডি বলবেন না।ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ”
মুখ উঁচিয়ে বলে ছোঁয়া।

“গু*ন্ডিকে গু*ন্ডি বলবো না তো কি বলবো? এমন মেয়েরে বাবা।কি তেজ! এতো কিছুর মাঝে ও কেমন লড়াই করে গেলো! পুরাই গু*ন্ডি।”

“এই যে,আপনি এতো সাধু হওয়ার চেষ্টা একদম করবেন না।আমি দেখেছি,আপনি ওকে কতোজোড়ে চড় মে*রেছেন।আপনি না পুলিশের লোক! মেয়েদের মা*রার বেলা আপনাদের হাত খুব চলে।কেন অতোজোড়ে মা*রলেন ওকে?”
তেড়ে ওঠে বলে ছোঁয়া।

“ইস! শুধু ওকে মা*রাটাই দেখছেন? আমার টাতো দেখলেন না? জীবনেও এতো ভয়া*নক মেয়ে দেখিনি।”

“কি? কি করেছে ও আপনাকে? ”

“এই দেখুন।”বলেই বাঁধন শার্টের উপরের বোতাম গুলো খুলে ফেললো।সাথে সাথে বেরিয়ে এলো শ্যামা লোমশ বুকে অসংখ্য আঁচড়ের দাগ।কোথায়ও কোথায় নখ বেশি বসে গিয়ে র*ক্ত বেরিয়ে জমে গিয়ে আছে।লাল হয়ে গেছে কিছু কিছু আঁচড়।

“আরে এগুলো কি? আপনার বুকে এতো কিসের আঁচড়? মনে হচ্ছে কোন জন্তু জানো*য়ারে আঁচড়েছে আপনাকে। ”

“এমনি কি আর স্বাধে আপনার বান্ধবী কো গু*ন্ডি বললাম। ওর কাজ এসব।গতকাল তো বান্ধবী কে বাঁচানোর জন্য উঠে পেরে লেগেছিল, তারই প্রতিফল এগুলো।”
মুখ বাকা করে বলল বাঁধন।

“হা হা,তারমানে কেয়া এভাবে আপনাকে এভাবে আঁচড়েছে? যাক,ওর নখ গুলো কাজে লাগলো তাহলে।”
একগাল হেসে বলল ছোঁয়া।

“মানে? ”
প্রশ্ন করে বাধন।

“মানে,কেয়া সবসময় নখ বড় করে রাখে।আমি নিষেধ করতাম খুব।কিন্তু ও বলতো এগুলো নাকি ওর অ* স্র।”

“আজিব মেয়ে রে বাবা। তবে এমন ঝাল মরিচ টাইপের মেয়ে আমার ভালোই লাগে। এমন ঝালমরিচই আমার পছন্দ । একদম অন্যরকম সবার থেকে। আই লাইক ইট!”
বিরবির করে বলল বাঁধন।

ছোঁয়া কথা গুলো বুঝতে পেরেই চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো বাঁধনের দিকে।

পুলিশ স্টেশনে বসে আছে কেয়া আর স্বাধীন। ফোন করে ওদের ডাকা হয়েছে। অফিসার সিরাজউদ্দিন সামনের চেয়ারে বসে কারো সাথে টেলিফোনে কথা বলছেন।
কথা তাড়াতাড়ি শেষ করে তিনি সামনে তাকালেন।

“সরি,খুব দরকারি ফোন ছিলো।”

“ইট’স ওকে অফিসার। এবার বলুন,কোন খোঁজ পেলেন?”

“হ্যাঁ মিস্টার সাহারিয়ার, আমরা ওদের লোকেশন ট্রে*স করতে পেরেছি।আমরা গোয়েন্দা বিভাগের সাথে ও আলোচনা করেছি।ঐ হোটেলের এলাকায় আমাদের লোক ছিলো,ওরা গোয়েন্দা বিভাগের সাদা পোশাকে থাকা কিছু অফিসারের ছবির মধ্যে একজনকে দেখেছে খাবার কিনতে।তো আমরা জেনে গেছি ওরা কোথায় আছে।বাট সিআইডিরা আমাদের জানায় আজ রাতে ছোঁয়া সহ আরো কয়েকজন মেয়ে কে দেশের বাইরে পা* চার করবে।আমরা তায় এখনি কিছু করবো না।যা করার আজ রাতে সব মেয়েদের এক জায়গায় করার পরই করতে হবে।”

“ধন্যবাদ অফিসার। তবে আমার খুব ভয় হচ্ছে, যদি আপনারা কোন ভাবে ব্যর্থ হোন তাহলে কি হবে?”

“হ্যাঁ অফিসার, তাহলে আমার ছোঁয়ার কি হবে? আপনারা তাড়াতাড়ি কিছু করুন প্লিজ। ”
কেয়া বলে ওঠে।

“দেখুন আমাদের ওপর ভরসা রাখুন।অবশ্যই আমরা সাকসেস হবো।আর তারপর ও কোন ভাবে মিস হয়ে গেলেও এয়ারপোর্টে আমাদের লোক আছে,ওদের কাছে ছোঁয়ার ছবি দেওয়া আছে,উনারা তখন হ্যান্ডেল করবেন বিষয় টা।”

“অফিসার, আজ রাতে আপনাদের অভিযানে প্লিজ আমিও যেতে চাই।ছোঁয়ার সাপোর্ট দরকার।প্লিজ। ”

“ইয়েস অফিসার, আমিও যাবো, আমার ছোঁয়ার কাছে।”

“দেখুন,আমাদের সাথে আপনাদের কিছু তেই নিয়ে যেতে পারি না, কারণ আমরা আপনাদের জীবন ও ঝু*কি তে ফেলতে পারিনা।তবে আমরা সাকসেস হওয়ার পর আপনাদের ফোন করবো,আপনারা যেতে পারেন স্পটে।”

“আচ্ছা অফিসার ঠিক আছে, তায় হবে।আমরা আপনাদের পেছনেই থাকবো।তবে কিছু টা দূরে ”

“ইয়েস মিস্টার সাহারিয়ার। আর হ্যাঁ,আপনি যেই নাম্বার টা দিয়েছেন তাতে আমরা কিছু পেয়েছি,,,,,

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here