এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_১৯,২০

0
1175

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_১৯,২০
#মাসুরা_খাতুন
১৯

সারাটা দিন ছোঁয়ার রশিতে বাঁধা অবস্থায়ই গেলো।কব্জির কাছে বেঁধে রাখা জায়গাটায় খুব ব্যথা হচ্ছে। এতো শক্ত করে বাধা যে লাল হয়ে ফুলে ওঠেছে চারপাশ। এরমাঝে দুই খোলা পেয়েছিলো বাথরুমে যাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রচন্ড ব্যথায় হাতের নাজেহাল অবস্থা। যতোই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে,ছোঁয়ার মনে ভয় ও বেড়ে যাচ্ছে। কি হবে কে জানে? আদৌও কি বাঁধন ওকে মুক্ত করতে পারবে? বর যদি না পারে,তবে ছোঁয়ার সাথে কি হতে যাচ্ছে। টেনশনে মাথা ফে*টে যাওয়ার জোগাড়। কি হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।এদিকে দুপুরের দিকে একবার বাঁধনের দেখা পেয়েছিল,এখন আর তারও দেখা নেই।

ছোঁয়ার জন্য রাতের খাবার নিয়ে এসেছে ঝাকড়া চুলের লোকটা আর বাঁধন। আজ যে খাবার ভালো আসবে তা ছোঁয়া আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলো।কারণ খাবারে যে মেশানো থাকবে ঘুমের ঔষধ,তাইতো এতো যত্ন করে খাবার আনা।
বাঁধনের নাম মনে হয় এই দলে রনি।লোকটা বাঁধন কে বলল,

“এই রনি,ওর হাতটা খুলে দে।”

সাথে সাথেই বাঁধন ছোঁয়ার হাত খুলে দিতে গেলো।হাত খুলতে গিয়ে ছোঁয়ার হাতের অবস্থা দেখে আঁত*কে ওঠে বাঁধন। ওরই বোকামির জন্য মেয়েটার এই অবস্থা! ইস,ওর আরো একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিলো।লালচে হয়ে ফুলে ওঠা হাতটা আস্তে আস্তে খুলে দিলো বাঁধন। খোলা পেয়েই যেন ছোঁয়া হাতটার প্রাণ ফিরে পেলো। শেষ বার ওর হাত বেঁধেছিল চিন্টু।হাত টা খুলে দিয়ে খাবারের থালা এগিয়ে দেয় ছোঁয়ার দিকে। সামনেই লোকটাও দাঁড়ানো।ভুনা খিচুড়ি সাথে চিকেন আনা হয়েছে। বাঁধন খাবার গুলো সামনে এগিয়ে দিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।বাঁধন পড়েছে মহা বিপত্তিতে,সকালে ছোঁয়া কে বলা কথাগুলো ওর মনে আছে কি না আল্লাহই জানে।এই খাবার গুলোতে কড়া ঘুমের ঔষধ সে নিজে হাতেই মাখিয়ে এনেছে। এতোটুকু সুযোগ পায়নি ঔষধ ফেলে দেওয়ার।সব কাজ গুলো সামনে দাঁড়িয়ে পরখ করেছে বস কালা বাবলা। আর নিজে হাতেই ঘুমের ঔষধ মেশানো খাবার ছোঁয়া কে দিতে হাত কিছুটা কাঁপছে বাঁধনের।ছোঁয়া বাঁধনের দিকে তাকাতেই বাঁধন মাথা নাড়িয়ে সাবধান করে, এ খাবার খেও না ছোঁয়া।

“এই মেয়ে,তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। বেশি নাটক করিস না।”
পান চিবোতে চিবোতে বলল কালা বাবলা।
ছোঁয়া হাত দিয়ে খাবার গুলো আস্তে আস্তে মাখিয়ে নেয়।খুব ধীরে ধীরে করার চেষ্টা করছে,তাও কেন জানি জোরে হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বাবলা সম্মুখে দাঁড়িয়ে ও না আছে, কোন রকম কিছু করার ও সুযোগ নেই।শেষমেশ বাঁধন বলে ওঠে,

”বস,বলছিলাম কি,রাত হয়ে গেছে। একটু পর আবার উঠতে হবে,তারচেয়ে বরং আপনি ঘুমিয়ে নিন।আমি এই মেয়ে কে খাওয়াচ্ছি। আপনি কোন ও চিন্তা করবেন না। ”

“আরে না! আজ মামুনিকে আমি দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়াবো।প্রয়োজনে তুলে খাওয়াবো।তবু ওকে খেতেই হবে।এই তাড়াতাড়ি খা,”

এবার বাঁধন ও পড়লো উভয় সংকটে।না পারছে আটকাতে, আর না পারছে ছোঁয়া কে খেতে দিতে।কারণ এই খাবারে যতোটা পরিমান ঔষধ মেশানো আছে, এটা খেলে ছোঁয়া চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে উঠতে পারবে না।আর ছোঁয়া যদি সাহায্য না করে তবে বাঁধনের পক্ষে একাএকা এদের সাথে লড়া কঠিন হয়ে যাবে। ছোঁয়া বুঝতে পারে বাঁধনের আর কিছু করার নেই।তায়তো একটু একটু করে খেতে শুরু করে।ছোঁয়া ধীরে ধীরে খাচ্ছিল এমন সময় কালা বাবলা একটা ধমক দিয়ে ওঠে,

“এই ছেমড়ি,তাড়াতাড়ি খা।এতো সময় লাগে এইটুকু খেতে? খেতে খেতেই কি সারা রাত পার করে দিবি?”

ধমক পেয়ে ছোঁয়া তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করে।পাশে দাঁড়িয়ে বাঁধন শুধু হতাশ হয়ে দেখছিলো।খাবার পুরোটাই শেষ হলে কালা বাবলা নিজে বাঁধন কে নিয়ে বেরিয়ে যায়, দরজায় তালা লাগিয়ে।

রাগ প্রায় বারোটা।কালা বাবলা দলের সকল সদস্য রা সজাগ।প্রত্যেকেই বুঝে গেছে ওদের এখন কি করতে হবে।বাঁধন নিজ পরিকল্পনা মতাবেক যেই গাড়িটা ব্যবহার করা হবে তার চাকায় একটি ছোট্ট লোহা হালকা ফুটিয়ে রেখেছে। যাতে কিছুদূর যাওয়ার পরই লোহাটা পুরোপুরি ঢুকে যায়,আর গাড়ি থেমে যায়। আর ওরা গাড়ি সারানোর জন্য নেমে পড়লেই বাঁধন মেয়ে গুলোকে নিয়ে সরে পড়তে পারে।কিন্তু সমস্যা হলো পাঁচ টা ঘুমন্ত মেয়ে, সাথে ছোঁয়া ও ঔষধ খেয়ে নিলো,ছয়টা ঘুমন্ত মেয়ে কে নিয়ে ও একা পালাবে কি করে।আজ বিকেলে ও বাজারে গিয়েছিলো।যেই ঘুমের ঔষধ টা ওদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে তা বাঁধন কে দিয়েই আনানো।বাঁধন তখনই ফার্মেসি থেকে ঐ ঔষধের কার্যকারিতা কমানোর আরো একটি ঔষধ কিনে নিয়েছিলো। যাতে ওদের যখন গাড়ির পেছনে তুলে ঢেকে রাখা হবে,তখন ছোঁয়া যেন যে করেই হোক, কিছুক্ষণের জন্য ওদের একটু সময়ের জন্য তুলে ঔষধ টা মুখে পুরে দিতে পারে।তাহলেই কাজ হবে,ঐ ঔষধ টা কোন প্রভাব ফেলতে পারবেনা কারো ওপর।কিন্তু যাকে সাথে নিয়ে কাজ গুলো ও করবে সেই ছোঁয়া কেই তো কালা বাবলা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ালো।এবার সত্যিই একটু ভয় হচ্ছে বাঁধনের। যদিও আজ বাজারে গিয়ে কোনরকমে ওর ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করেছে।পুলিশ রাও হয়তো খুব তাড়াতাড়ি আটকাবে ওদের। কিন্তু পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত এদের যে করেই হোক থামিয়ে রাখতেই হবে। আর যখন ঐ পাঁচটা মেয়ে কেও একজায়গায় আনা হবে তখনই ওদের বিরুদ্ধে অ্যাক*শন নিতে হবে, এর আগে নয়।কারণ বাঁধন নিজেও জানেনা ঐ মেয়েগুলো কোথায়,আর এরা যেই মাপের স*ন্ত্রা*সী কে*টে টুকরো টুকরো করলেও মুখ খুলবেনা,অন্য দিকে ঐ মেয়ে গুলো বিপদে পরবে।

ছোঁয়াকে যেখানে আট*কে রাখা হয়েছে সেখানে চিন্টু আর বাঁধন মিলে গেলো ওকে গাড়িতে তুলতে।আর গিয়ে দেখে ছোঁয়া একেবারে ঘুমে কাঁদা। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছোঁয়া কে নিয়ে গাড়ির পেছনে তুলল ওরা দু’জন। আরো পাঁচ মেয়েকে কালা বাবলা আর একটি গাড়ি করে নিয়ে আসলো।তারপর ওদের ও ছোঁয়ার সাথে একই গাড়িতে রাখা হলো।প্রত্যকেই গভীর ঘুমে মগ্ন,এদের ও যে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে তা এদের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সব মেয়েদের গাড়িতে রেখে বড় পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো। ট্রাক গাড়ির সামনে বসবে কালা বাবলা আর বাঁধন। আর ড্রাইভ করার জন্য চিন্টু আছে।পেছনে থাকবে আরো একটি লোক।সবাই গাড়িতে উঠছিলো,এমন সময় বাঁধন বলল,

“বস,ছোঁয়া মেয়ে টার তো মুখ বন্ধ করা হয়নি।যদি কোন কারনে ঘুম ভেঙে যায়, আর চিল্লা পাল্লা করে?আমি বরং মুখ টা বেঁধে দিয়ে আসি।”

“শালা, শুয়ো***জাতেরা! কি করিস তোরা? এই সময় এসে কস মুখ বাধা হয়নায়,কে বাঁধবে তায়লে? যা বেঁধে দিয়ে আয়”
ধমক দিয়ে বলে কালা বাবলা।

অনুমতি পেতেই বাঁধন এক দৌড়ে গাড়ির পেছনে যায়।একটা পান দেয় পেছনে থাকা লোকটার হাতে। যার মধ্যে আছে থে*তিয়ে দেওয়া ঘুমের ঔষধ।
পানখে*কো লোকটি লুফে নেয় বাঁধনের দেওয়া পান।গোগ্রাসে মুখে পুরে দেয়,কৃতজ্ঞতায় চকচক করে ওঠে ওর চোখ।
ভেতরে গিয়ে সোজা ছোঁয়া কে জাগানোর চেষ্টা করে।ছোঁয়ার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিতেই চোখ মেলে তাকায় ছোঁয়া। বাঁধন অবাক হয়ে যায়, সামান্য একটু ঝাকিতে এই মেয়ে উঠলো কি করে?যে চোখের সামনে কড়া ঘুমের ঔষধ খেয়েছে।
ফিসফিস করে প্রশ্ন করে বাঁধন,

“কি ব্যাপার, তুমি এতো তাড়াতাড়ি উঠলে কি করে? তুমি না খাবার গুলো খেলে?”

ছোঁয়া মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,

“আপনাকে কে বলল আমি ওই খাবার গুলো খেয়েছি? ”

“আরে আমার সামনেই তো খেয়েছো।”

“খেয়েছি আপনার সামনে, কিন্তু বের করেছি আপনার অগোচরে। ”

“মানে?”

“মানে হলো,আপনারা আমাকে খাইয়ে বের হয়ে আসার সাথে সাথে আমি গলায় আঙুল ঢুকিয়ে সব খাবার বমি করে ফেলে দিয়েছি।আর যেহেতু,খাবারের মধ্যে ঔষধ ছিলো,আর আমি খাবার গুলোই ফেলে দিয়েছি, তায় ঘুমের ঔষধ গুলো আমার ওপর কোন প্রভাব ফেলেনি।”

“তুমি সত্যিই খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। এখন শোন,এই ঔষধ রাখো।এই মেয়ে গুলোকেও ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে, তায় তোমাকে যে করেই হোক ওদের মুখের ভেতর পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। জানি ব্যাপারটা কঠিন কিন্তু তোমাকে করতেই হবে। আর শোন, কিছু দূর গিয়ে গাড়িটা নষ্ট হয়ে যাবে, আর ঐ সময়টাকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।তুমি তৈরি থেকো।আশা করি ভালো কিছুই হবে।”

গাড়ি নিয়ে বসে আছে স্বাধীন। সাথে কেয়াও আছে।মেয়ে টার খুব জেদ, সেও যাবে।পুলিশের গাড়ির পেছন পেছন যাবে ওরা।যদিও কিছু টা দূরত্ব থাকবে ওদের। নিহার নাম্বার টা পুলিশ কে দিয়েছিলো,ওরা জানিয়েছে নিহাও এই কাজে জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা আশি পার্সেন্ট। কারণ নিহা কল লিস্টের বেশ কয়েকটা নাম্বারের লোকেশন এই এলাকায় বলছে,যেখানে সবজি হোটেল টা রয়েছে। তায়তো আজ এখানে আসার বিষয়ে কিচ্ছু বলেনি নিহা কে,,,,,

চলবে,,,,,,,

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_২০
#মাসুরা_খাতুন

গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে।রাতের নির্জন প্রহরে অজানা এক গন্তব্যে এগিয়ে যেতে কিছু টা ভয় ও হচ্ছে কেয়ার।সাথে যদিও স্বাধীন আছে, তারপর ও কলেজের সব থেকে রাগী বদমেজাজি স্যারটা যার মুখ থেকে কথা কিনে নিতে হয়,এমন রসকষহীন কাঠখোট্টা মানুষের সাথে এতোটা পথ আসা, একটা বচনপটু মেয়ের জন্য দম বন্ধকর ব্যাপার।কেয়া,যে মেয়ে টা মিনিটে একশোটা কথা বলে সে প্রায় এক ঘন্টা যাবত চুপ হয়ে বসে আছে। কেয়া হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। যেই সাহারিয়ার স্যার ছোঁয়া কে একদম সহ্য করতে পারেন না,বিনা দোষে ছোঁয়া কে যিনি কতো প্যানিশমেন্ট দিয়েছেন, সেই সাহারিয়ার স্যার ছোঁয়ার জন্য এতোটা উদ্বিগ্ন! এটা কেমন অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এতোটাই উদ্বিগ্ন যে এই এতো রাতে ছোঁয়ার জন্য নিজের এতোটা রি*স্ক নিয়ে এতোদূর যাচ্ছেন। অথচ যেই স্বাধীন ভাই কে ছোঁয়া এতো ভালোবাসে,সে স্বাধীন ভাই ছোঁয়া দুইদিন থেকে মি*সিং তাও কই কোন তো খোঁজই নিচ্ছেন না? এবার ফিরুক ছোঁয়া, ওকে স্বাধীন ভাই, স্বাধীন ভাই করে অজ্ঞান হওয়া শিখিয়ে দিবো।মনে মনে এক প্রকার শাসিয়ে নেয় ছোঁয়া কে কেয়া।কেয়া একবার স্বাধীনের মুখের দিকে তাকায়, কি আশ্চর্য! মানুষ টা কি খাওয়া দাওয়া ও ছেড়ে দিয়েছে? ফর্সা সুন্দর মানুষ টা কেমন কালো হয়ে গেছে, চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে। এটা কেন তা কেয়া বুঝতে পারে না। সাধারণ একটা ছাত্রী মি*সিং হওয়ায় কোন টিচারের এই অবস্থা হতে পারে? নাকি অন্য কিছু?নিরবতা ভেঙে কেয়া প্রশ্ন করে,

“স্যার,আপনার কি মনে হচ্ছে, আমরা সত্যিই ছোঁয়া কে পাবো তো?”

অন্য মনস্ক স্বাধীন একটু সময় নেই কেয়ার কথা বুঝতে,

“হুম,কেন পাবো না। অবশ্যই পাবো।”

“জানেন স্যার,ছোঁয়ার যদি কিছু হয়ে যায় তো আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। ও খুব সহজসরল। আমি যদি আর একটু লড়তে পারতাম ওদের সাথে, তাহলে আজ ছোঁয়ার এমন হতো না।কেননা ওরা চলে যাওয়ার একটু পরেই তো আপনার গাড়িটা এলো স্যার।আমার আর একটু সময় ওদের আটকাতে হতো।”

“এসব কেন বলছো? তুমি একটা মেয়ে হয়ে যেভাবে প্রতিরোধ করেছো,অনেক ছেলে রাও এমন পরিস্থিতিতে এভাবে রুখে দাঁড়াতে পারে না”

“আমি অনেক চেষ্টা করেছি স্যার।ওই ছেলেটা আমায় থাপ্পড় মারলে,তার ওপর আবার ঐ লোকটা।অতো শক্ত হাতের দুটো থাপ্পড় খেয়েই তো আমার মাথা ঘুরে যায়।আর আটকাতে পারি নি।”

“আমি বুঝতে পেরেছি কেয়া।এতে তোমার কোন দোষ নেই। আর এখন এসব বলে নিজেকে দোষি করোনা,তারচেয়ে দোয়া করো যেন আজ আমরা ছোঁয়া কে উদ্ধার করতে পারি।”

“ঠিক আছে স্যার।”

মেয়ে গুলো কে ঢেকে রেখে আসার পর ছোঁয়া ঐ মেয়ে গুলোকে জাগানোর চেষ্টা করে, কিন্তু কোন ভাবেই এক জনের ও ঘুম ভাঙাতে পারছে না।শেষমেশ ছোঁয়া কোন রকমে ওদের মুখ ফাঁক করে ঔষুধ গুলো ঢুকিয়ে দেয়।ওদের ট্রাক চলছে জঙ্গলের কোন এক রাস্তা দিয়ে। কিছু দূর যাওয়ার পরই হটাৎ গাড়ি টা থেমে যায় । কি হয়েছে প্রশ্ন করলে ড্রাইভার চিন্টু মিয়া বলে চাকায় মনে হয় কিছু একটা হয়েছে। গাড়ি থেমে যাওয়ায় বস কালা বাবল ‘চ’ ক্রান্ত কোন বিশ্রী শব্দ উচ্চারণ করলো।তাড়াতাড়ি কি হয়েছে দেখার জন্য চিন্টুকে বললে চিন্টু দেখে এসে বলে,খুব খারাপ ভাবে একটা লোহা চাকায় ঢুকে গেছে। চাকা পাল্টাতে হবে।রাগে লাল হয়ে যায় বাবলা।

“ধুর শালা,এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময়ই এসব হতে হলো।এই চিন্টু,কতোক্ষণ লাগবে রে?”

“বস কম করে হলেও তো আধাঘন্টা লাগবেই। এক্সট্রা চাকা আছে,শুধু এইটা খুলে লাগাতে হবে। আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না,আমি এক্ষুনি ঠিক করছি।”

কালা বাবলা গাড়ি থেকে নেমে পেছনে যায়,যেখানে মেয়ে গুলো সহো পাহারাদার লোকটি থাকার কথা। কিন্তু ঘুমের ঔষধ মেশানো পান খেয়ে সে তো এখন ঘুমে কপোকাত। ওকে ঘুমোতে দেখে কালা বাবলার মেজাজ আরো গরম হয়ে গেলো।

“সব গুলো শালা হারা*মীর জাত।এই একজন দেখো,এই সময় ঘুমিয়ে পড়ে আছে। কোন কান্ড জ্ঞান নেই।এই শালা ওঠ,ওঠ,”

পা দিয়ে লাথি দিয়ে বলল বাবলা।কিন্তু তার জাগার কোন খবর নেই।শেষে বাঁধন কে ডেকে বলল,

“এই রনি,রনি শোন এখানে, ”

“জ্বি বস,বলুন।”

পা দিয়ে লাথি দিয়ে ঘুমানো লোকটাকে দেখিয়ে বললো,

“এই শালা তো বাপের জন্মের সব ঘুম এখানে ঘুমাচ্ছে, তুই এখানে পাহারা দে।আর হ্যাঁ এই নে মা*ল,একেবারে দানা সহো।যেমন তেমন কিছু দেখলে মে*রে দিস।”

বলে বাঁধনের হাতে একটা রিভ*ল*বার তুলে দেয় কালা বাবলা।

“এই চিন্টু,তুই তাড়াতাড়ি ঠিক কর,আর আমি এখানেই আছি,একটু এক নাম্বার টা সেরে আসি।”

বলে কালা বাবলা প্রাকৃতিক কাজ সারতে একটু ঝোপের দিকে গেলো।বাঁধন লেগে পড়লো তার কাজে। ছোঁয়া দের ঢেকে রাখা কাগজের নীচে সেও টুপ করে ঢুকে গেলো।

“ছোঁয়া, মেয়ে গুলোর কি অবস্থা? উঠাতে পেরেছেন কি ওদের?”

“আসলে ওরা তো উঠছেই না।কোনভাবেই না পেরে শেষে ওদের মুখের ভেতর ঔষধ গুলো পুরে দিয়েছি।”
অসহায় মুখ করে বলল ছোঁয়া।

এতো টেনশনের মাঝেও ছোঁয়ার অসহায় মুখে বলা কথাটা শুনে হাসি পেল বাঁধনের।

”আপনার বান্ধবী হলে কি করতো জানেন? ওর ওই নখ গুলো দিয়ে আঁচড়ানো শুরু করতো মেয়ে গুলোকে।তখন ঠিক উঠে পড়তো”

“এখন আমরা কি করবো ভাইয়া? কোন রাস্তায় তো নেই। ”

“আচ্ছা দাঁড়ান, আপাতত শেষ চেষ্টা টা করি।এদের একজন একজন কে করে নামিয়ে ঐদিকের ঝোপের মধ্যে লতা পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে আসি,আপনাকে সহো সবাই কে আমি এখানে এভাবে বের করে খালি বস্তা গুলো ঢেকে রেখে দেবো।ওরা মনে হয় আবার ও আসবেনা আপনাদের দেখতে।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলে আমি ওদের সাথে কিছুদূর পর্যন্ত যাবো,যেহেতু আমি পেছনে আছি তায়,কিছু দূর গিয়ে ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে নেমে যাবো।আর আপনি এখানেই ওদের সাথে ওয়েট করবেন।আমি আসলেই আপনাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবো।”

“কিন্তু ভাইয়া,চলন্ত ট্রাক থেকে লাফ দিবেন,আপনার যদি কিছু হয়ে যায়? ”

“এতো ভাবলে কি করে আপনাদের বাঁচাবো?যা হবে তখন দেখা যাবে”এখন এদের যে করেই হোক সরাতে হবে।আর এর মধ্যেই পুলিশ চলে আসতে পারে, তাহলে তো আর রি*স্ক নিতে হচ্ছে না।”

বাঁধন নীচে নামে,আর ছোঁয়া একটা করে মেয়ে কে টেনে টেনে ধারে নিয়ে আসে।যেহেতু গাড়ির সামনের চাকায় সমস্যা তায় চিন্টু ও কিছু বুঝতে পারে না। বাঁধন এভাবেই তিনটা মেয়ে কে নামিয়ে কাছেই একটা গাছের আড়ালে রেখে দেয়।এমন সময় কালা বাবলা ফিরে আসে।

“কিরে চিন্টু,কাজ কতোদূর হলো? আর রনি,ভালো করে পাহারা দিস কিন্তু। ”

“বস এইতো হয়েই গেছে আর দশ মিনিট। ”
উত্তর দেয় চিন্টু।

আর পেছন থেকে বাঁধন বলে,

“ঠিক আছে বস,আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না। আমি ভালো করে দেখে রাখছি।”

এমন সময় চতুর্থ মেয়ে কে নামানোর সময় মেয়ে টির ওড়না বেধে যায় একটা বাঁকানো লোহার সাথে তাতে কিছু টা শব্দ হলে কালা বাবলা শুনতে পায়,

“এই রনি, কিসের শব্দ হয়রে?”

“এইতো বস,এই হারা*ম **রে জাগানোর চেষ্টা করছি।শালা কি আসার আগে খাইছিল নাকি? এতো ঘুমায় ক্যান ওঠে না।ওরেই ধাক্কা দিলাম।”

“ঐ শালার গন্ডারের চামড়া,তুই যতোই ধাক্কা দে,উঠবে না।তারচেয়ে বরং লাথি দিয়ে ফেলে দে।”

মেয়ে গুলোকে গাছের আড়ালে নিয়ে রেখে কিছু শুকনো পাতা ওদের গায়ের ওপর তুলে দিলো।যাতে খুব সহজে বোঝা না যায়।এদিকে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেছে। বাধন বুঝতে পারে ওদের বাহিনী ও চলে আসবে, খুব একটা দেরি নেয়।হাতে থাকা রিভ*ল*বার টা কোমড়ে গুজে নিয়েছিলে।ওটা এখন হাতে নেয়। এটা ছোঁয়ার হাতে দিয়ে যেতে হবে,যাতে যতোক্ষন ও থাকবেনা,এই জঙ্গলে যেন এই পাঁচটি মেয়েকে নিয়ে ছোঁয়া সুরক্ষিত থাকতে পারে।

এবার ছোঁয়া কে বের করতে পারলেই কিছু টা চিন্তা মুক্ত হতে পারবে বাঁধন। তায়তো ছোঁয়া কে নামাতে গেলো বাঁধন।

সবে মাত্র ছোঁয়া কে ট্রাক থেকে নামিয়েছে আর ওমনি সামনে এসে দাঁড়ায় কালা বাবলা।ভয়ে মুখটা শুকিয়ে ওঠে ছোঁয়ার।বাঁধন ও চিন্তায় পড়ে যায়। যদি সে একা থাকতো,ওর একার জীবনের ঝুঁ*কি হতো তবে এগুলো কে তোয়াক্কাই করতো না।কিন্তু সে তো একা নয়,বরং সাথে আরো ছয়টা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন জড়িয়ে আছে।

“কি রে,কি ভাবছিলি? আমার নাকের উপর দিয়া পাখি গুলারে নিয়া যাইবি আর আমি কিছুই জানতে পারমু না?এতো সাহস তোর?”

বাঁধন শক্ত করে ছোঁয়ার হাত চেপে ধরে।

“এই মেয়ে গুলোকে তো আমি এখান থেকে বের করে নিয়েই ছাড়বো।আর তুই ও কিচ্ছু করতে পারবি না।”

“হাহাহা,,,এতো টাই সোজা! কালা বাবলা! নামটা কি আর এমনি এমনি হয়ছে রে।তোদের মতো বহুত মা*লরে চেনা আছে।”

সাথে সাথেই বাঁধন হাতে থাকা রি*ভল*বার টা বাবলার মাথায় তাক করে,

“খবরদার,এদের আমি এখান থেকে বের করেই ছাড়বো। এক পাও নড়বি না।আমি কিন্তু গু*লি করে দেবো।”
সাহস নিয়ে বলে বাঁধন।

“হাহাহা,,গু*লি করবি? আমারে ভয় দেখাস? তো কর না গু*লি।কর কর।আমিও দেখি ফাঁকা রিভ*ল*বার দিয়ে কেমনে গু*লি বেরোয়।আরে দেরি করছিস কেন?”

“মানে? “প্রশ্ন করে বাঁধন।

“মানে হইলো ঐটা ফাঁকা। এক্কেবারে তোর মাথার মতো।যখন পেছনে পাহারা দেওয়া মানিক ঘুমায় গেলো,ওর ঘুম দেখে আমার স্বাভাবিক লাগলো না।আমি কোনটা ঔষধ খাওয়া ঘুম আর কোনটা স্বাভাবিক ঘুম তা বুঝি।তায়তো তোরে একটা ফাঁকা বন্দু*ক দিয়া পরীক্ষা করি।কারণ চিন্টু আমার অনেক পুরাতন লোক,সে আমার সাথে বেইমানি করবো না।আর এক নাম্বারের নাম বইলা সাইডে ঝোপের আড়ালে দাড়ায় থাকি।আর কিছু শুনবি?”
বলেই পান খওয়া কালচে খয়েরী দাঁতে হাহা করে হাসতে থাকে কালা বাবলা। হাতে একটা বন্দু*ক দিয়ে তাক করে আছে বাঁধনের কপাল বরাবর।

এবার বাঁধনের সত্যি সত্যিই ভয় করতে শুরু করে।তাহলে কি ও ব্যর্থ হবে? নিজেকে সত্যিই অসহায় মনে হতে শুরু করে,পাশে ছোঁয়া ভয়ে একেবারে জড়সড় হয়ে গেছে,,,,

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here