এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_২৩,২৪

0
1192

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_২৩,২৪
#মাসুরা_খাতুন
২৩

চারদিকে সূর্যের রক্তিম আভা জানান দিচ্ছে ঘনায়মান বিকেলের। পরিবেশ টা একদম শান্ত। থেকে থেকে দূর কোথাও থেকে একটা পাখি ডেকে উঠছে। ব্যালকোনিতে একা একা দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া। স্বাধীন গেছে ওর আর কেয়ার জন্য কিছু চকলেট আর আইসক্রিম আনতে । সেদিনের আইসক্রিমের ঘটনা মনে পড়লে ছোঁয়ার আজও ভয়ে মুখ র *ক্তশূন্য হয়ে আসে।আজও যখন স্বাধীন বলল ছোঁয়া আইসক্রিম খাবি? ভয়ে চমকে গেলো ছোঁয়া। সেদিনের সেই দৃশ্য মনে হা*না দিলো।হটাৎ করেই বিকেলে স্বাধীন বলল,

“এই ছোঁয়া আইসক্রিম খাবি? ”

চমকে উঠলো ছোঁয়া,
“আআইসক্রিম? না না ভাইয়া,আমি খাবো না।”

ছোঁয়ার বলা দেখেই হো হো করে একগাল হেসে নিলো স্বাধীন।

“কিরে,কি ভেবেছিস? আজও সেদিনের মতো আইসক্রিম খাওয়াবো? ধুর বোকা। আজ সত্যিই বলছি।বল খাবি?”

“না না ভাইয়া। আমার আইসক্রিম খাওয়ার সখ মিটে গেছে। কিচ্ছু খাবো না।”
দু হাত দিয়ে মাছি তাড়াবার ভঙ্গিতে বলে ছোঁয়া।

“মাইর দেবো কিন্তু। অনেক দিন আমার হাতের মাইর খাসনি তাইনা? এমনিই কিন্তু হাতটা নিশপিশ করছে।”
হাত চুলকোতে চুলকোতে বলল স্বাধীন।

“কেন নিশপিশ করছে, মার*তে?”

“না মেরি জান।আজ মারতে নয়,আদর করতে নিশপিশ করছে।”

“হুহ্! ওসব হবে না।যাও আইসক্রিম আনো।কেয়ার সাথে কথা হলো।ও এক্ষুনি চলে আসবে।বাসার নাম্বার বলে দিয়েছি।”

“আর বাঁধন কখন আসবে বলল?”

“উনিও সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় চলে আসবেন।কথা হয়েছে আমার।”

আচ্ছা বলে চলে গেলো স্বাধীন।
ছোঁয়ার সবকিছু কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ওর জীবনে যে স্বাধীনের ভালোবাসা জুটবে তা সত্যিই কল্পনা করতে পারেনি ও।রাগী স্বাধীন, যে চিরকাল ওকে ঘৃণা করে,ঘৃণা করে বলে আসছে,সেই স্বাধীন যে ওকে মেনে নেবে তা ভাবতেই ছোঁয়ার অবিশ্বাস লাগছে।কখনো মনে হচ্ছে এটা বুঝি ওর স্বপ্ন, খুব প্রিয় কাঙ্খিত একটা স্বপ্ন। এই বুঝি হটাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে সব কিছু মিথ্যে হয়ে যাবে।ছোঁয়ার ভাবনার ছেদ ঘটালো কলিং বেলের ঝাঁঝালো শব্দে। নিশ্চয়ই কেয়া এসেছে, খুশিতে দৌড়ে গেলো ছোঁয়া।

দরজা খুলেই কেয়া কে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো ছোঁয়া। দু বান্ধবী আলিঙ্গন শেষে ভেতরে আসলো।কেয়া আজ আকাশী কালারের একটা জামা পড়েছে, সাথে সাদা সালোয়ার, ওড়না।কোঁকড়ানো চুলের মেয়ে টি চুল গুলো খোলা রেখে ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক পড়েছে। সাথে ওর সব সময়ের কালো ফ্রেমের চশমা। এতেই অনেক মায়াবী লাগছিল মেয়ে টাকে।উজ্জ্বল ফর্সা রঙের কেয়ার নাক টা সামান্য ডাবা।কিন্তু এতেও যেন ওর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। ওকে দেখে বোঝাই যায় না মেয়ে টি এতোটা চঞ্চল।

“কি ব্যাপার ছোঁয়া রানী,একটু ও সাজগোজ কিচ্ছু করিস নি? স্যার কোথাই?”

“উনি একটু বাজারে গেছেন,আর তুই তো জানিসই আমি সাজগোজ করতে পারিনা।আমি এতেই ঠিক আছি।”

”বললেই হলো,আজ তোর বাসায় আমাদের দাওয়াত, আর তুই কাজের বেডি হয়ে থাকবি? চল আমি তোকে সাজাবো।আর এমনিতেও তোর সাথে তো আমার কথা বলাই উচিত না।প্রতিদিন সাহারিয়ার স্যারের এতো ট*র্চার সহ্য করেছিস নাটক করে।অথচ আমাকেও একটি বার বলিস নি?

“দেখ কেয়া আমি মানছি,তুই রাগ করাটা স্বাভাবিক, কিন্তু আমার ও কিছুর করার ছিলো না রে।আসলে অনেক ব্যাপার আছে এর মধ্যে। ”

“ভাই আমি তো শ*কড! যেই সাহারিয়ার স্যার তোকে একদম দেখতে পারে না,কথায় কথায় রেগে যায়, আর হটাৎ করেই শুনছি,উনি তোর প্রেমিক টেমিক ও নয়,এক্কেবারে স্বামী।! এতো বড় সারপ্রাইজ আমি জীবনে ও পাইনি।বিশ্বাস কর বোন।”

“কেয়া, আগে আমার কথাটা তো শোন,আসলে উনি আমায় স্ত্রী বলে মানতেন না।আমার ওপর উনার রাগ ছোটবেলা থেকেই। তাইতো উনি ক্লাসে আমার সাথে ওমন আচরণ করতেন।”

“উরিব্বাস! বিয়ে করা স্ত্রী কে নাকি মানে না? এই কে* স টা কি বলতো? সব খুলে বল।”
বিজ্ঞের মতো করে বলে কেয়া।

কেয়াকে পুরো ঘটনা খুলে বলে ছোঁয়া । কেন ও এতোদিন কেয়া কে কিছু জানায়নি তাও বলে।
সবশুনে কেয়া একেবারে অবাক হয়ে বলে,

“এতো ছোটবেলায় তোদের বিয়ে হয়? এতোদিন থেকে তোরা স্বামী স্ত্রী, অথচ এই তোদের সম্পর্ক? আর এখন এসে খচ্চর ছেলে এমন করছে? তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না।সব আমার ওপর ছেড়ে দে,কেমন টাইট দিতে হয় আমি দেখছি।তুই শুধু আমি যা বলবো তাই করবি।একদম ধরা দিবি না।আগে মশাইকে শায়ে*স্তা করতে হবে।”

“ঠিক বলেছিস রে।আমিও তাই ভাবি,কিন্তু সাহস হয় না।যদি উনি রেগে যান।”

“আরে বোকা,তুই এতোদিন আমায় বলিস নি কেন? আমি এতোদিনে সব ঠিক করে দিতাম।এসব ছেলেদের কি করে টাইট দিতে হয় আমার জানা আছে।”

ফ্যালফ্যাল করে ছোঁয়া তাকিয়ে আছে কেয়ার মুখের দিকে,
“তুই এতোকিছু কেমনে জানিস বোন?”

“আগের পক্ষের একটা বর আছে আমার, তাই জানি।এখন চল তোকে শাড়ি পড়াবো।”

“শাড়ি? কিন্তু কেন? আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না।”

“এটাও আমাদের প্ল্যানের একটা অংশ। তুই বুঝবি না, আর আমি আছি কি করতে? চল আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। ”

“বলছি,শাড়ি কি পরতেই হবে? ”
অসহায়ের মতো মুখ করে বলল ছোঁয়া।

“হ্যাঁ।জানিস না,শাড়ি পড়লে মেয়েদের বেশি সুন্দর লাগে?”

“কিন্তু, আমার তো শাড়ি নাই।বড়মার আছে,ওখান থেকে একটা নিবি?”

“হুম চল,আগে দেখি কোনটা পছন্দ হয়।”

বলেই দুজন গেলো সাহানা বেগমের ঘরে।সাহানা বেগমের আলমিরা খুলে শাড়ি বাছতে লাগলো দুজন।একটা সাদা রঙের শাড়ি পছন্দ হয়ে গেলো ওদের। শাড়িটা মনে হয় সাহানা বেগম নতুন বউ থাকতে কার।কিন্তু খুব কমই পড়া হয়েছে মনে হয়। একদম নতুনের মতোই আছে। সাদা কাতান শাড়িটার পাড় কিছু টা হালকা সোনালী রঙের। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা সাদা নাকি সোনালী। কিন্তু সুন্দর বুননের আধুনিক শাড়িটি দুজনেরই খুব পছন্দ হয়ে যায়।

“এটায় তোকে অনেক মানাবে রে।দারুণ লাগবে চল।”

বলে শাড়িটি নিয়ে নিজের ঘরে আসে ওরা।ম্যাচিং ব্লাউজ না পেয়ে একটা লাল ব্লাউজ পড়ে নেয়।শাড়িটা গায়ে চড়াতেই অপ্সরির মতো লাগে ছোঁয়া কে।লাল ব্লাউজ ও একদম ফুটিয়ে তুলেছে সৌন্দর্য। চুল গুলো খোঁপা বেঁধে দেয় কেয়া।চোখে গাঢ় কাজল টেনে দেয়, আর হালকা মেকআপ। গাঢ় লাল লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট টা রাঙিয়ে দেয় ছোঁয়ার।কেয়া নিজেই অবাক হয়ে যায়, এই হালকা সাজেই কত্তো সুন্দর লাগছে ছোঁয়া কে।ধবধবে ফর্সা না হলেও উজ্জ্বল শ্যামা রঙের মেয়েটির গায়ের রং কিছুটা সোনালী রঙের। আর তাতে সাদা শাড়ি যেন কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে সৌন্দর্য।

“এই ছোঁয়া, কিছু একটা কম মনে হচ্ছে,কি কম হয়েছে বলতো?”

“আরো কি করতে চাস? এমনিই অনেক সাজিয়েছিস।”

“দাঁড়া ”
বলে চোখ বুলিয়ে নিয়ে কেয়া বলে,

“মনে পড়েছে, তোর এই সাজের সাথে খোপায় একটু ফুল কম মনে হচ্ছে। কি করা যায় বলতো? এখন তাজা ফুল কোথায় পাবো?এই ছাদে ফুল গাছ আছে?”

“হ্যাঁ,আছে তো।”

“তাহলে থাক।”
বলেই দৌড় দেয় কেয়া।ছাদে গিয়ে দেখে নানা রকম ফুল গাছ দিয়ে ভরানো।এগুলো যে ছোঁয়ার কাজ,তা জানে কেয়া।সেখানে খুঁজে খুজে থোকা থোকা ধরে থাকা সাদা রঙের জুঁই ফুল পছন্দ হয় কেয়ার।যেমন সুন্দর দেখতে, তেমন তার সুঘ্রাণ। কিছু ফুল ওড়নায় ঝরিয়ে নিয়ে নীচে আসে।

“সুই সুতো দে।”

“এই কি করছিস কি তুই? এইসময় আবার মালা গাথবি নাকি? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এতো কষ্ট করতে হবে না তোর।এমনেই ঠিক আছে। ”

“তুই চুপ করবি? দে বলছি”

সুই সুতো এগিয়ে দিলো ছোঁয়া। কেয়া বসে একটা একটা করে ফুল সুতোয় তুলল, কিছুক্ষণেই একটা মালা গেঁথে জড়িয়ে দিলো ছোঁয়ার খোঁপায়। ষোলকলা পূর্ণ হলো এবার।অসাধারণ সুন্দর দেখালো ছোঁয়া কে।সেই সাথে জুৃঁই ফুলের মিষ্টি গন্ধ ভুরভুর করে বেরোচ্ছে ছোঁয়ার খোঁপা থেকে।

“বাহ্ ছোঁয়া, তোকে না সেই লাগছে।মন চাচ্ছে চুম্মা দিই।”

“ছ্যাচড়া মেয়ে, গে এর মতো করিস না।তাহলে আবার একজন ফিট হয়ে যাবে।”

“হুম,তোর স্বাধীন ভাই আজ এমনিই সে*ন্টি খাবে।”
মুখ ভাজ করে বলল কেয়া।

উহু্,শুধু আমার স্বাধীন ভাই নই,আরো একজন আছে,যে সে*ন্টি খাবে।

“কে রে? তোর আারো কোন আশিক আছে নাকি? যে দিওয়ানা হয়ে আছে। ”

“আমার নই বেইবি, সে কে সময়ই বলে দেবে।”

কলিং বেল বেজে উঠলে দুজনেই নীচে নেমে আসলো।দরজা খুলতে গেলো কেয়া নিজেই,কিন্তু দরজা খুলেই যাকে দেখলো,কেয়া মুখ কুঁচকে নিয়ে সরে আসলো তাড়াতাড়ি। কিছুটা এগিয়ে এসে বিড়বিড় করে বলল,
“এসেছেন, আফ্রিকার বান্দর। ”

“আপনি কি আমায় কিছু বললেন? মানে কি যেন শুনতে পেলাম। ”

“নাহ্! কিচ্ছু বলিনাই।বলিলাম,আপনার দর্শন পেয়ে আমি ধন্য।”
হাত ভাজ করে বলল কেয়া।

“ওহ্! তাই বলুন।আসলে অনেকেই তাই বলে।আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে নাকি ক্রাশ খায়।”

“হ ভাই হ,আমি ও ক্যারাশ খাইছি আপনেরে দেখে।”

ওদের ঝগড়া দেখে শেষ ছোঁয়াই চলে এলো ওদের কাছে।

“এই তোরা কি শুরু করলি? আর ভাইয়া আপনিও? আসুন তো আগে ভেতরে আসুন। ”

“মাশাআল্লাহ! এ আমি কাকে দেখছি।কোন পরি পরি নয়তো? খুব খুব কিউট লাগছে ছোঁয়া। ”

“ধন্যবাদ ভাইয়া।তবে আপনি যতোটা বলছেন ততোটা ও না।আসুন তো আগে।বসুন।”

ভেতরে এসে বসতে বসতে বাঁধন বলল,

“সত্যিই সুন্দর লাগছে ছোঁয়া। বলছি যে,খালি একাই শাড়ি পড়লে হবে? আশেপাশে যেই কাজের বেডি গুলা আছে তাদের ও পরাও।”
আড়চোখে কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল বাঁধন।

“এই যে মিস্টার, আপনি কাকে কাজের বেডি বলছেন হ্যাঁ? আপনার সাহস তো কম নয়? আমাকে কি কাজের মেয়ের মতো মনে হয়? ”

“এট্টু এট্টু আরকি।মুখ বাঁকা করে বলল বাঁধন। ”

”কিইইই?”
করে তেড়ে উঠতেই বাঁধন কথা ঘোরালো,

“বলছি ছোঁয়া, স্বাধীন ভাই কে দেখছিনা যে? উনি কোথায়?”

“উনি একটু বাজারে গেছেন ভাইয়া।এইতো চলে আসবেন।”
বলতেই বেলের শব্দ। ছোঁয়া বলল,

“কেয়া,আমি দরজা খুলতে পারবো না,তুই যা।”

“কেন? তোর বর আসছে তুই দরজা খুলবি।আমি কেন খুলবো? আমার বর হলে আমি খুলতাম।”

“যা না তুই।আমি পারবো না।খোল না দোস্ত, ”

“পারবনা।”

শেষমেশ ছোঁয়া যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই স্বাধীন সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় ছোঁয়া কে দেখে।চোখ ধাঁধিয়ে যায় ওর।কোন আসমানের সাদা পরি এসে ওর সামনে দাঁড়িয়েছে যেন।স্বাধীন অজানা ঘোরের মধ্যে চলে যায়। এতোকাছে থেকেও এতোদিন এ সৌন্দর্য ও দেখতে পায়নি? এমন সৌন্দর্য উপেক্ষা করা যে অন্যায় মহা অন্যায়,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_২৪
#মাসুরা_খাতুন

মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে স্বাধীন ছোঁয়ার সৌন্দর্য গিলছিল।এতোদিন চোখের ওপর যে জিদের পর্দা পড়ে ছিলো,তাইতো এমন মায়াবী মেয়েটিকে দেখতেই পায় নি।কত্তো সুন্দর লাগছে ওর ছোঁয়া টাকে।হুট করেই যেন সেদিনের ছোঁয়া বড় হয়ে গেলো।ভালো করে খেয়ালই করে নি স্বাধীন, কবে ছোঁয়া এতোবড় হলো।পুরো শরীরে নব যৌবনের জৌলুশ বয়ে বেড়াচ্ছে।কোথায়ও সেই আগের অবুঝ ছোট্ট ছোঁয়া নেই।এই মূহুর্তে ওর পৃথিবীর সবথেকে লাস্যময়ী নারী মনে হচ্ছে,যাকে উপেক্ষা করা কঠিন।বিমোহিত হয়ে স্বাধীন তাকাতেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় ছোঁয়া। এতোদিন ভয় করে দূরে দূরে থাকা মানুষ টি ওর দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকায় ছোঁয়া লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।
ওদের এমন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুভ দৃষ্টি করার দৃশ্য দেখে কেয়া বিরক্ত করতে উঠে আসে।ছোঁয়ার একদম কাছে দাঁড়িয়ে লম্বা করে স্বাধীন কে সালাম দেয়।

“আসসালামু আলাইকুম স্যার,”

স্বাধীন কিছু টা হকচকিয়ে ওঠে,
“ওওয়ালাইকুম সালাম। ”

“বলছি যে এমন দুয়ারে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে তাকিয়ে থাকবেন? নাকি ভেতরে ও আসবেন।”

“ওহ্ হ্যাঁ।অবশ্যই।তা কখন এলে কেয়া? ”

“আমি তো অনেক ক্ষণ এসেছি স্যার।এসেই তো ছোঁয়া কে এমন সাজালাম।তো কেমন লাগছে ওকে?”

কেয়ার প্রশ্নে আবার ও তাকায় স্বাধীন ছোঁয়ার দিকে, তাকিয়ে থেকেই উত্তর দেয়,

“অসাধারণ! ”

ছোঁয়া তাড়াতাড়ি চলে আসে ওখান থেকে। দুটো পাগলের পাল্লায় পড়ে শুধু শুধু লজ্জা পাওয়ার চেয়ে সরে আসায় ভালো।স্বাধীন ও কেয়ার হাতে চকলেট আইসক্রিম গুলো দিয়ে বলে,

“এই নাও কেয়া। এগুলো তুৃমি আর ছোঁয়া মিলে খাও।আর বাঁধন কোথায়? ও কি এসেছে? ”

“সে কোথায় সেটা আমাকে বলছেন কেন? আমি কি তার ঘরের বউ লাগি? আপনিই দেখে নিন না,”

বাঁধন কথাটা শুনতে পেয়ে সাথে সাথেই জবাব দেয়,

“কেন আজ বউ না হলেও কাল তো হওয়ায় যায়।চাইলে আজই করে ফেলতে পারি।”

“এ্যাহ্! আমার বয়েই গেছে ওমন উগান্ডার ছ্যাড়ার বউ হওয়ার?”

ওদের থামাতে ছোঁয়া বলে ওঠে,

“ছিহ্ কেয়া! কি ভাষা এগুলো? আয় তো এদিকে। ”

সবাই এসে বসে সোফায়।স্বাধীন ও হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে বাঁধনের সাথে। আবার ধন্যবাদ জানাই এভাবে ছোঁয়া কে হেল্প করার জন্য।

এরই মাঝে খাবার এসে যায়।স্বাধীন বাইরে গিয়ে রিসিভ করে নেয় ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে। ছোঁয়া ও উঠে যায় খাবার সার্ভ করার জন্য। এখন ড্রয়িংরুমে শুধু কেয়া আর বাঁধন। বাঁধন চট করে উঠে নিজের সোফা টা ছেড়ে কেয়ার টাতে বসে,

“কি ব্যাপার? বড্ড গায়ে পড়া ছেলে তো আপনি! এখানে এসে বসলেন কেন?”
তেড়ে উঠে বলল কেয়া।

বাঁধন ও কম যায় না,মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“কি সব ভাষা আপনার? স্বাধে কি আর আপনাকে উগান্ডা বলি? আমার ইচ্ছে করছে আমি এখানে বসেছি,আপনার ইচ্ছে করলে আমার কোলেও বসতে পারেন।”

“ছিহ্! আমি আপনার কোলে বসতে যাবো কেন? মুখে কি কিচ্ছুই আটকায় না? বেয়াদব ছেলে।”

“আমি বেয়াদব? ঠিক আছে তাহলে একটু বেয়াদবি করেই দেখাই।”
বলেই বাঁধন আগতে লাগলো কেয়ার দিকে। কেয়া ও সরে যেতে লাগলো।কেয়া যতো সরে যায়,বাঁধন ততোই এগিয়ে যায়। এমন করে কেয়া একেবারে ধারে চলে এলো।বাঁধন তখন আস্তে আস্তে মুখ টা এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো কেয়ার দিকে,

“কিকি করছেন টা কি? এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। সরুন,সরুন বলছি,”

বাঁধন তবুও এগোতেই থাকলো কেয়ার দিকে, একদম কেয়ার মুখের কাছাকাছি বাঁধনের অবস্থান হলে কেয়া দুহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলো,

”সসরুন,এসব কিকি?আমি কিন্তু চিল্লাবো”

বাঁধনের একহাত দিয়ে কেয়ার পাশের সোফাটাকে এমন ভাবে ধরে রাখা আছে যে কেয়া চাইলেও উঠে যেতে পারবে না। এমন সময় বাঁধন ওভাবেই এগিয়ে কেয়ার পাশের টেবিল টা থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।

কেয়া কিছু ক্ষন পর হাত দুটো মুখ থেকে সরিয়ে বাঁধনের দিকে বরবড় করে তাকায়,

বাঁধন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গ্লাস টা কেয়া কে দেখিয়ে বলে,

“কি দেখছেন? পানি।পানি খাচ্ছি আমি।”

“আআপনি পাপানি খাওয়ার জন্য ওভাবে এগিয়েছিলেন?”

“হ্যাঁএ,কেন? আপনি কি মনে করেছিলেন? কি খেতে আমি এগিয়েছিলাম?”

“না মানে থাক।এমনি।”

“কেন? আমাকে কি এতোটাই অসভ্য মনে হয় আপনার? দেখুন,আমি কিন্তু খুব ভদ্রছেলে।এতোদিন ধরে নিজেকে মেয়েদের কাছ থেকে সেভ রেখেছি।ওসব চুমু টুমু খেতে আমি মেয়েদের কাছে যাই না।”
গর্ব করার মতো অভিনয় করে বলল বাঁধন।

লাফ দিয়ে উঠে পড়লো কেয়া,
“এই যে মিস্টার, আপনি নাকি ভদ্র? আমি কখন বললাম আপনি চুমু খেতে এগিয়েছিলেন? আর আমি আপনার সাথে কথা বলছিই কেন? যত্তসব ফাউল ছেলে পেলে।”
বলেই দমদম করে কিচেনের দিকে চলে গেলো কেয়া।

প্যাকেট খুলে খুলে ছোঁয়া খাবার গুলো বাটিতে রাখছিলো।স্বাধীন পাশেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো ছোঁয়া কে।হটাৎ দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো ওর মাথায়,হুট করে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো ছোঁয়া কে।আচমকা এমন জড়িয়ে ধরায় ছোঁয়া কিছু টা চমকে উঠলো। তারপরই বুঝতে পেরে স্বাধীন কে ছাড়ানোর জন্য বলল,

“স্বাধীন ভাইয়া ছেড়ে দাও না প্লিজ? ওখানে ওরা আছে, কেউ দেখে ফেলবে।ছাড়ো না আমায়, ”

“দেখলো তো তাতে কি? আমি তো অন্য কাউকে আদর করছি না,আমি আমার বউকে আদর করছি।”

“তবুও ভাইয়া,ছাড়ো প্লিজ।কেয়া দেখলে আমার মান সম্মান সব শেষ করে দেবে বলে বলে।ছাড়ো ভাইয়া।”

“উঁহু, আমি ছাড়বো না।”

“ছাড়বে না? ”

“নাহ্”

“আচ্ছা দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

বলেই একটু খানি সস নিয়ে তা স্বাধীনের গালের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো,

“দাড়াও,এগুলো গালে লাগিয়ে দেবো।”
বলেই গালে লাগালোর মতো করলো,তবুও স্বাধীন না ছেড়ে বলল,

“দে দে লাগিয়ে, পরিষ্কার টাও তোরই করে দিতে হবে নি,তাও আবার স্পেশাল ভাবে।”

“ছিহ্ ভাইয়া! তুমি বড়ই ঠোঁটকা*টা। যাও বলছি। ”

বলে জোরে ছোঁয়া ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই বাইরে থেকে কেয়া গলা ঝাড়লো,

“হুহ্, কিচেনে এতো রোমান্স করতে হবে না ।এই বাচ্চা মেয়ে কেয়া টাকেও একটু দেখুন,এসব দেখলে তাড়াতাড়ি পাকনা হয়ে যাবো তো?”

স্বাধীন লজ্জায় সাথে সাথেই বেরিয়ে গেলো কিচেন থেকে, আর ছোঁয়া এসে সোজা কেয়ার কান টেনে ধরলো,

“তুই বাচ্চা? তাইনা? ”

“বাচ্চা নয়তো কি?একদম নাবালিকা।”

“নাবালিকা? তা বাবু, কয়টা দাঁত উঠেছে তোমার?”

দু বান্ধবী মিলেই হো হো করে হেসে উঠলো। বেচারা স্বাধীন গিয়ে বসল বাঁধনের কাছে।
বাঁধন মুখ দেখেই বুঝে গেলো কিছু একটা হয়েছে,

“এই শাঁকচুন্নিদের জ্বা*লায় ভালো করে রোমান্স ও করতে পারবেন না স্বাধীন ভাই।”

“ঠিকই বলেছো।তাড়াতাড়ি একে রশি পড়িয়ে নিয়ে চলে যাও তো।তুমি তো ভাই রশি পড়াতেই পারছো না।এমন করলে হবে না,ডিরেক্ট প্রপোজ করে দাও।তখন দেখবে কি করে।”

“এইটা তো ছোঁয়া না,এইটা গু*ন্ডি ভাই।এরে এতো সহজে পোষ মানানো যাবে না।আর তাছাড়া , ভয় ও করে।যেই ডেঞ্জা*রাস মেয়ে!”

“তোমরা পুলিশ রা বাইরে গু*ন্ডা মা*স্তান দের তাড়াও,অথচ বাড়িতেই গু*ন্ডি পুষতে ভালবাসো। ”

“কি করবো বলুন,এটায় অভ্যেস হয়ে যায় তাইতো ঠান্ডা ভদ্র মেয়ে দেখলে পানসে পানসে লাগে।”

দুজনেই হো হো করে হাসিতে মাতে।

“তবে কেয়া সত্যিই খুব ভালো মেয়ে বাঁধন। আমার কলেজেই পড়ে তো,অনেক কাছে থেকে দেখেছি,হলফ করে বলতে পারি,যথেষ্ট সুন্দর মনের মেয়ে টা।নাহলে কি বান্ধবীর বিপদে অমন ঝাপিয়ে পড়তে পারে? ”
হাসি থামিয়ে বলে স্বাধীন।

“হুম,আমিও জানি।তাইতো এক্কেবারে গেঁড়ে বসেছি।এবার ছোঁয়াই ভরসা,ও যদি একটা লাইন লাগিয়ে দেয়। ”

এমন সময় ওরাও চলে আসে।
তারপর চারজন মিলে একসাথে বসে ডিনার করে।

এভাবেই আড্ডা দিয়ে রাত প্রায় আটটা বেজে যায়। কেয়ার আবার মেসে আটটার পরে ঢুকতে দেয় না।তায়তো আর দেরি না করে ও উঠতে চায়,

“এই কেয়া,আজ আমাদের বাসায় থেকে যা না?আটটা বেজে গেছে এখন গেলে ঢুকতে দেবে তোকে?”

“নারে দোস্ত, এমনিতে ও এখান থেকে আমার মেস খুব দুরে নয়,আর আমি দারোয়ান মামা কে বলে আসছি,উনি খুলে দেবেন।”

”যাস না আজকে,থাকলেই তো পারিস।”

“নারে,সক্কাল সক্কাল ক্লাস আছে না কাল? এখান থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আবার মেসে গিয়ে সবকিছু নিয়ে বের হতে হতে দেরি হয়ে যাবে।আর তাছাড়াও মেসের নিয়ম তো জানিস,হুট করে এক রাত বাইরে থাকলে সবাই খারাপ ভাববে।তারচেয়ে বরং এখন যাই,আর কাল সকালেই তো দেখা হচ্ছে। ”

“কিন্তু, তুই একা যাবি কি করে?”

সাথে সাথেই বাঁধন বলে উঠলো,
“বলছি যে ছোঁয়া, এবার আমিও উঠি।আমার ও যেতে হবে। আর আমি কিন্তু কলেজের রাস্তার ওদিক দিয়েই যাবো।”
আড়চোখে কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।

“কেয়া,যাবি উনার সঙ্গে? দেখ দোস্ত, তুই হেঁটে গেলে তাও পনেরো বিশ মিনিট লাগবে,আর উনার সাথে গেলে পাঁচ মিনিটেরই তো ব্যাপার।”

“না না,আমি উনার সাথে যাবো না।আমি একাই যেতে পারি।”

“দেখুন মিস উগান্ডা, সব জায়গায় জিদ মানায় না।রাতে শহরের রাস্তায় একটা মেয়ে কিছু তেই নিরাপদ নয়।তর্ক না করে চলুন আমার সাথে, আমি নামিয়ে দিচ্ছি।”

স্বাধীন ও কেয়া কে বলল,
“একদম ঠিক কেয়া,বাঁধনের সাথেই যাও।একা যাওয়া ঠিক নয়।আমিই নিয়ে যেতাম তোমায়,কিন্তু ছোঁয়া ও তো বাসায় একা থাকতে পারবে না।বলছি যে যেতে হলে তুমি বাঁধনের সাথেই যাও,নয় তো না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে স্যার।”
বলে কেয়া মেনে নিল।তারপর সবাই সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেলো কেয়া আর বাঁধন।

বাঁধনের বাইকের পেছনে বসে আছে কেয়া,প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে।

“বলছি যে,আমি কি ভ্যানগাড়িতে চড়েছি? এরচেয়ে তো ভ্যান ও জোরে যায়।”

“দেখুন মিস,আমি একজন আইনের লোক, তাই আমি কিছুতেই জোরে গাড়ি চালাতে পারবো না।এটায় রুলস।”

“আমাকে রুলস শেখান? তা কোন রুলসে লেখা আছে গাড়ি বিশের ও নীচে রেখে ড্রাইভ করতে হবে? ”

“এটা স্পেশাল রুলস।আপনার থাকতে হলে থাকুন,নয়তো নেমে যান।”

“ঠিক আছে,আমি নেমেই যাবো।গাড়ি থামান।”

“উঁহু, সমস্যা তো আমার না,সমস্যা আপনার।আমার তো ভালই লাগছে।সুন্দরী মেয়ে গাড়ির পেছনে নিয়ে যেতে মজাই আলাদা। আপনার সমস্যা আপনি নেমে যান।গাড়ি থামবে না।”

“ভারি খাটাশ লোক তো আপনি? গাড়ি না থামালে নামবো কি করে।”

“এই যে একহাতে আমার কাঁধ ধরে আস্তে আস্তে চলন্ত লিফটে ওঠার মতো করে নেমে যান।কিন্তু গাড়ি থামবে ও না,স্পিড ও বাড়বে না। ”

“একটা মেয়ে কে একা পেয়ে এভাবে চলন্ত গাড়ি থেকে নামতে বলছেন,আপনি কি মানুষ? ”

“তাহলে চুপচাপ বসে থাকুন।খুব ভালো লাগছে আমার ড্রাইভ করতে।”

“এরচেয়ে তো আমার পায়ে হেটে যাওয়ায় ভালো ছিলো।তাও অন্তত আরে আগে পৌঁছাতাম।”
বিরক্তি নিয়ে বলে কেয়া।

“কিন্তু আমার খুব ভালো লাগছে, কিছু টা ঐ ছোটবেলার সিঁড়ির রেলিঙে বসে কল্পনার গাড়ি চালানোর মতো মনে হচ্ছে। আহা,সে কি ফিলিংস।”

“থাকুন,আপনি আপনার ফিলিংস নিয়ে। আমি চলে এসেছি, এখানেই নামবো।”

“কিহ্,এত্তো তাড়াতাড়ি চলে এলাম।”
“আর একটু কম স্পিড দিতে হতো”বিড়বিড় করে বলে বাঁধন।

গাড়ি থামিয়ে নামিয়ে দেয় কেয়া কে।অলরেডি পনেরো মিনিট লেগে গেছে, যেটা হেঁটেই বিশ মিনিটে আসা যায়।

“আবার কবে দেখা হবে আমাদের? ”
বাঁধন কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।

“জীবনে ও না।এবার যান,কল্পনার গাড়ি চালাতে চালাতে এগিয়ে যান।যত্তসব। ”

বাঁধন ও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফিরে তাকিয়ে কেয়া কে বলে,

“এমন করে বলো সুন্দরী, কলিজায় লাগে গো।”

বলেই ফুল স্পিডে গাড়ী ড্রাইভ করে চলে যায়।
থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কেয়া।কিছুক্ষণ হা করে থেকে বলে,
“কি খচ্চর ছেলে রে বাবা!”

সবকিছু গোছগাছ করে ছোঁয়া নিজের রুমে যাচ্ছিল। এমন সময় খপ করে ওর হাত ধরে নিজের ঘরে টেনে নেয় স্বাধীন। আচমকা টানে ছোঁয়া কিছু টা চমকে ওঠে,,,,,

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here