এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_২৭,২৮

0
1032

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_২৭,২৮
#মাসুরা_খাতুন
২৭

একঘন্টা ধরে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া। দুহাত দিয়ে কান ধরে রাখায় হাত এবং কান দুটোই প্রায় অবশ্য হয়ে গেছে। কিন্তু সামনে বসে থাকা মানুষ টির কোন ভাবান্তরই নেই। সে নিজের মতো বইয়ে মুখ গুঁজে রেখেছে। এতোক্ষণ হয়ে যাচ্ছে তবুও তার তাকানোর নাম নেই। ছোঁয়া শুধু একবার করে টেবিলে ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখছে।দশট দশ মিনিটে কান ধরিয়ে দিয়েছে এখন প্রায় এগারোটা বিশ বাজতে চলল তবুও তার কোন শাস্তি মওকুফের কথা নেই। ছোঁয়ার অপরাধ,হুট করে সাইকোলজির একটা প্রশ্ন ধরে আর ছোঁয়া তা পারে না। অথচ স্বাধীন যেই চ্যাপ্টার থেকে প্রশ্ন করেছে এখনো ক্লাসে অতোদূর পড়া শুরুই করেনি।ছোঁয়া যেমনই বলেছে,

“ভাইয়া এই অধ্যায় তো এখনও পড়াও নি?আমি কি করে পারবো?”

“চুপ কর বেয়াদব! ক্লাসে পড়াইনি বলে কি তুই ও আর বই খুলে দেখনি না? কি করিস সারাদিন? সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিস না,আর মুখে মুখে কথা! ধর কান ধর! ধরে দাঁড়িয়ে থাক,যতোক্ষণ না আমি বলছি।”

“বলছি যে আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি আমার রুমে যাবো। ”

“আমার মুখে কথা? বেশি বাড় বেড়েছে না? এখন ঘুম পাচ্ছে কেন? সারাদিন তো খুব লাফালাফি করলি,এক্কেবারে ধরাই যায় না তোকে, এবার আর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিস না কেন? কপালে খুব দুঃখ আছে,কান ধর।”
আগেকার মতো ধমক দিয়ে বলল স্বাধীন। ছোঁয়া যেন অবাক হয়ে দেখলো স্বাধীন কে,”কি ছেলেরে বাবা? এখনি আসে আদর করতে,আর এখনি এতো বকা?”

ছোঁয়া বুঝতে পারলো এটা তার প্রশ্ন না পারার শাস্তি না,বরং সকালে ওর কথায় ধরা না দেওয়ার মাসুল,
“শয়তান, খবিশ ব্যাটা!ঠিকই করেছি সেদিন শাড়ি পরে জ্বা*লিয়ে,আজ আবার আমায় কষ্ট দেওয়া হচ্ছে? এসেই দেখিস আমার কাছে, তখন বুঝাবো।”
মনে মনেই বিড়বিড় করে ছোঁয়া।

বইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই স্বাধীন বলে,
“আমাকে গালি দেওয়া শেষ হলে এবার কান ছাড়, আর আমার মাথাটা একটু মালিস করে দে।”

“কি করে বুঝলো, আমি উনাকে গালি দিচ্ছি? হায় আল্লাহ, নিজের মনের মধ্যে ও কি একটু স্বাধীন ভাবে চিন্তা করতে পারবো না? এখানে ও উনার ধরে ফেলতে হবে? ছ্যাহহ! নাউজুবিল্লাহ, এখানে ও উনার নাম বলে ফেলছি।”
কান ছেড়ে দিয়ে মনে মনে ভাবে ছোঁয়া। তারপর একায় মাথায় চাটি মেরে হাসে।

“এই মেয়ে, পাগল হয়ে গেলি নাকি? যা আগে আমার জন্য কফি করে নিয়ে আয়,সুগার একদম হালকা দিবি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া”
বলেই ছোঁয়া গেলো কিচেনে। ঝটপট এক মগ কফি বানিয়ে ফেললো,এবার ওর মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো,কফিতে চিনির বদলে চার,চামচ লবন মিশিয়ে দিলো।এবার মনের আনন্দে স্বাধীনের কাছে নিয়ে গেলো।

“বাহ্,খুব তাড়াতাড়ি বানিয়ে আনলি তো।কান ধরে থেকে হাতে জোর এসেছে দেখছি।আচ্ছা তাহলে রোজ তোকে এক ঘন্টা করে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো।”

“তা তুমি রেখো ভাইয়া এবার আমি যাই,”
বলেই ট্রে টা নিয়ে ছোঁয়া দরজার দিকে হাঁটা ধরলো।

“এই এই দাঁড়া, আমি তোকে যেতে বলেছি,আয় এখানে বস।কফি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার মাথা মালিশ করে দিবি।
বলেই স্বাধীন কফিতে কেবল মুখ দিয়েছে, ওমনি কড়া লবনে তিতা হয়ে যাওয়া স্বাধে চোখ মুখ কুঁচকে নেয়।তারপরই বুঝতে পারে এটা তার ছোঁয়া রানির কাজ।তাইতো সুন্দর করে মুখে একটা হাসি দিয়ে বলে,

“ছোঁয়া, এখানে আয়,শোন।”

“না না ভাইয়া,আমি যাযাবো না।আমি রুমে গেলাম। ”

“এই তোকে আমি ডেকেছি,আয় বলছি,এখানে আয় বোস।”ধমক দিয়ে বলে স্বাধীন।

আগের মতো আবারও ধমক দেওয়ায় ভয়ে চুপসে যায় ছোঁয়া। একটু বেশিই বেয়াদবি বলে ফেলেছে বলে মনে হয়।

ভয়ে ভয়ে স্বাধীনের পাশে গিয়ে বসে ছোঁয়া।

“নে,কফি টা খা।এটা তোর।”

“আআমি কফি খাই না ভাইয়া।এটা তোমার।”

“কেন? আজ খাবি।আর হ্যাঁ,পুরোটায়।”

“আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া,আর এমন হবে না।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। দুটো অপশন আছে তোর কাছে,হয় এই সব গুলো তুই খাবি,নয়তো গুনে গুনে দশটা চুমু দিবি আমায়।এখন বাকী টা তোর ইচ্ছা।”

“কি বলছো তুমি,ঠিক আছে, আমি কফিই খাচ্ছি।”
বলেই মগে মুখ লাগায় ছোঁয়া, কিন্তু এক বার নিয়েই বুঝতে পারে এটা খাওয়ার কতোটা অযোগ্য। এতো বিস্বাদ জিনিস পৃথিবীতে হতে পারে না।অসহায় মুখে স্বাধীনের দিকে তাকায় ও।

“এই বার কি করবি ছোঁয়া? সারাদিন আমায় অনেক জ্বা*লিয়েছিস।একটু কাছে যেতেই শার্ট নোংরা করার ভয় দেখিয়েছিস।এখন পালাবি কি করে?”
মনে মনেই হাসে স্বাধীন। কিন্তু মুখে গম্ভীর ভাবটা স্পষ্ট ফুটিয়ে রাখে।

“বলছি,ভাইয়া দিতেই হবে? না দিলে হয়না? ”

“অপশন দুটো,এবার তোর চয়েজ।”

“এটা তো খাওয়া যাবে না।আমি কি করবো বলতো?”

“তাহলে ভালো কিছু খা,কিস কিন্তু অত্যান্ত সুস্বাদু, স্বাস্থকর হৃদয়ের খাবার।ইহা হার্ট কে ভালো রাখে।”

“এটাও কি সাইকোলজির বিষয় ভাইয়া?”

“হুম,এবার তাড়াতাড়ি। ”

বলছি ভাইয়া,আমার একটা উইশ ছিলো,আমি আমার প্রথম চুমু বাসর ঘরে আমার স্বামী কেই খাবো।সেদিন একবার মাথা ব্যথার জন্য তোমায় দিয়েছি,আজ আবার চেয়ো না প্লিজ।
অসহায় ভাবে বলে ছোঁয়া।

ছোঁয়ার কথা শুনে স্বাধীন হেসে শেষ। পেট ফাটিয়ে হাসি আসছে ওর।কিন্তু সামনে থাকা বোকা মেয়ে টার জন্য তাও পারছে না।

“একটা বুদ্ধি দিতে পারি তোকে,”

“কি বলো?”
উৎসাহিত হয়ে বলে ছোঁয়া।

“তোর স্বামী, তোর সামনে। তো তোর যখন ইচ্ছা বাসর ঘরে চুমু দেওয়ার,সেহেতু তুই চায়লে,তোর স্বামী আজই বাসর করে ফেলতে পারে।তাহলে তোর উইশ টাও পূরণ হবে,আবার আমার শর্ত ও।”
ওকে আর একটু লজ্জা দেওয়ার জন্য বলে স্বাধীন।

লজ্জায় একেবারে রাঙা হয়ে গেলো ছোঁয়ার মুখ।চোখ দুটো একেবারে নামিয়ে নিলো।

“কি রে অনুমতি দিচ্ছিস?”
আবারও বলে স্বাধীন।

“ছিহ্ স্বাধীন ভাইয়া, তুমি বড়ই ঠোঁটকা*টা। ”
লজ্জা পেয়ে বলল ছোঁয়া।

“জানিসই তো,আমি এমন।তায় বেশি দেরি না করে তাড়াতাড়ি দিয়ে দে,আর বেশি দেরি করলে কিন্তু সংখ্যা আরো বাড়বে।”

“না না,আমি দিচ্ছি, তুমি প্লিজ চোখটা বন্ধ করো। ”

চোখ বন্ধ করে স্বাধীন। ছোঁয়া উঠে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওর চোখে মুখে কয়েকটা ঝটপট দিয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ওর কান্ড দেখে এতোক্ষণে চাপিয়ে রাখা হাসি ছড়িয়ে দিলো ঠোঁটের আশেপাশে স্বাধীন। মাঝে মাঝে ছোঁয়া কে এমন লজ্জা মাখা মুখে দেখতে ভিষণ ভালো লাগে ওর। এবার খুব তাড়াতাড়ি বাবা মাকে বলে ওকে একেবারে নিজের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ফাঁকা রাস্তায় অত্যন্ত রাগের বশে জোরে জোরে হাটছিলো কেয়া।বাইরে এসেছিল হালকা কেনাকাটা করতে।ফিরতে ফিরতে একটু সন্ধ্যা হয়ে যায়, আর দেখা হয়ে যায় বাঁধনের সাথে। ছেলেটাও কেবল বাইক নিয়ে এদিকেই আসছিলো।এই সময় কেয়া কে বাইরে দেখে পিছু নেয় কেয়ার।একদম কাছাকাছি গিয়ে দূর থেকে ডাক দেয়,

“এই যে মিস উগান্ডার পাবলিক, দাঁড়ান প্লিজ। খুব দরকারি কথা ছিলো আপনার সাথে, থামুন না!”

পেছনে বাঁধন কে দেখে, তার ওপর উগান্ডা বলে ডাকায় প্রচন্ড রাগে জোরে জোরে হাঁটতে থাকে কেয়া,,,,,

চলবে,,,,,,

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_২৮
#মাসুরা_খতুন

কিছুক্ষণ পরেই স্বাধীনের ক্লাস শুরু হবে।একসাথে ক্লাস রুমেই বসে আছে ছোঁয়া আর কেয়া।কেয়ার মাঝে আমূল পরিবর্তন! ছটফটে মেয়ে টা শান্ত ভাবে রাগ করে বসে আছে। ছোঁয়া অনেকক্ষণ ধরে ওর রাগ ভাঙাতে এটা সেটা করছে।কিন্তু আজ যেন কোন ভাবান্তরই নেই কেয়ার মাঝে। আপন মনে খাতায় আঁকিবুঁকি করছে।

“কি হয়েছে দোস্ত? তুই বলবি তো?না বললে আমি কি করে বুঝবো বল?”

“আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি তো নিজেই জানি না,আমার কি হয়েছে, তোকে কি বলবো?”

”কিন্তু এতো রাগের কারণ কি? আর কি হচ্ছে টা কি তোর? তুই তো ছোট না,নিজের মনের অবস্থা ধরতে পারার মতো ক্ষমতা অবশ্যই তোর আছে। ”

“বিশ্বাস কর ছোঁয়া, আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা আমার কি হয়েছে, এর আগে কখনো এমন অস্বস্তি আমার হয়নি।কখন কি মনে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।কখনো কাউকে হুট করে মনে হচ্ছে তখন নিজের কাজকর্ম নিজেরই বিরক্ত লাহছে।আবার কখনো রুমে থাকতেই ভালো লাগছে না,মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে বাইরে কোথাও ছুটে চলে যাই।কি হয়েছে আমার বলবি?”

“তুই কি কোন ভাবে বাঁধন ভাইকে নিয়ে আপসেট? সত্যিই কি তোর উনাকে বিরক্ত লাগে? যদি তায় হয়,তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, বাঁধন ভাইকে আমি বোঝাবো।তোর থেকে দূরে থাকতে বলবো।উনি যথেষ্ট ভালো ছেলে, আমি বোঝালে নিশ্চয়ই বোঝবেন।”

“না না তা নয়,উনাকে আমার খারাপ লাগে না।আর উনি যে কতোটা ভালো মানুষ তা আমি জানি। কারণ,একটা মানুষের ভেতর কতোটা আদর্শ, সততা দেশপ্রেম থাকলে এভাবে নিজের জীবন ঝুঁ*কিতে ফেলে কাজ করে যেতে পারেন।কিন্তু উনাকে দেখলে কেন জানি আমার অস্বস্তি হয়,ছটফট করে মন।তখন খুব খুব অস্থির অস্থির লাগে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে ফেলি।গতকাল ও দেখা হয়েছিল উনার সাথে, আমি বাজে ব্যবহার করে চলে যায়।এসব কেন হচ্ছে বলনা? ”

“তুই শান্ত হ কেয়া।প্লিজ, এভাবে ভেঙে পড়িস না।আচ্ছা আমায় একটা কথা বল,তুই কি পছন্দ করিস বাঁধন ভাইয়া কে?”

“বললামই তো,আমি জানিনা।আমায় আর একটু সময় দে।”

”হুম।তুই সময় নে।নিজের সাথে বোঝা পড়া কর।দেখ,বাঁধন ভাই কিন্তু তোকে ভালোবাসে,এখন তুই কি চাস এটায়”

“চুপ করবি তুই।বাঁদর ভাইয়ের জন্য আর সাফাই গায়তে হবে না।শালা খচ্চর, বাঁদর।আমাকে বলে কিনা ও আর এখানে বেশিদিন থাকবে না।উনার নাকি ট্রান্সফার হবে,অন্য জায়গায় চলে যাবেন।আমার কি সিদ্ধান্ত, তাড়াতাড়ি যেন বলি।”
মুখ বেঁকিয়ে বলে কেয়া।

কেয়ার কথা শুনে হেসে দেয় ছোঁয়া, বাঁধন কে বাঁদর বলায় কিছু টা জোরে হেসে ফেলে ছোঁয়া। কিন্তু ওর হাসিটায় যে অজান্তেই কারো বুকে তুফান তুলে দিচ্ছে, তা কি ও জানে?
ক্লাসের সময় হওয়ায় চলে এসেছিলো স্বাধীন, রুমের দরজায় দাঁড়াতেই সবচেয়ে প্রিয় নারী কণ্ঠটির এমন হাসির ঝংকার ওর মনে আলাদা শিহরণ জাগায়। উক্ত হাসির মালকিন নারীটি যে একমাত্র তার,শুধু তারই ব্যক্তিগত,তা ভাবতেই বুকের মাঝে একদফা টর্নেডো বয়ে যায়।

মানব দেহের সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে লেকচার দিচ্ছে স্বাধীন। কিভাবে নারী জননকোষে জাইগোট গঠন হয় সে সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করছে স্বাধীন। সামনে সকল ছাত্রছাত্রীরা আগ্রহের সাথে আলোচনা শুনছে।মুখে যে যতোই বলুক,আসলে আমরা মানুষেরা একটু গোপন, নিষিদ্ধ বিষয় গুলো জানতেই বেশি আগ্রহী। আর বিষয়টা যদি হয় মানব সৃষ্টির মূল রহস্য সম্পর্কে, এই বিষয়ে আগ্রহ না থাকা মানুষের সংখ্যা একদমই কম,বলতে গেলে নাই।আর স্বাধীন মনোবিজ্ঞানের এই পর্যায়ে খুব যত্ন সহকারে এবং সতর্ক সহিত আলোচনা করছে, কারণ ওর ক্লাসে বসা বেশির ভাগই ছেলে মেয়ে টিন এজার,আবার কেউ কেউ হয়তো সবে সবে টিন এজ পার করেছে।তায়তো এই বয়সী ছেলে মেয়েদের মাঝে এই বিষয়ে আগ্রহ টা একটু বেশিই থাকে,তায়তো প্রতিটা শিক্ষক বা পরিবারের সদস্যদের উচিত এই বিষয় টা খুব যত্ন সহকারে এদের বোঝানো,মনোবিজ্ঞানেও খুব সুন্দর ভাবে এটা উপস্থাপন করা হয়, যাতে কেউ ভুল সিদ্ধান্ত নিতে না পারে। আর স্বাধীন এই বিষয়ে অত্যন্ত যত্নশীল।

জাইগোট গঠন সম্পর্কে আলোচনার সময় স্বাধীন আড়চোখে একবার ছোঁয়ার দিকে তাকায়, তার প্রেয়সী যে ওর বলা কথাগুলো শুনে লজ্জায় একাকার, তা দেখতে পায়।ছোঁয়ার লজ্জা মাখা মুখ দেখে হালকা মুচকি হাসে স্বাধীন। যেখানে সব ছেলে মেয়েরা উৎসুক হয়ে শুনছিলো,সেখানে ওর লজ্জাবতী লজ্জায় মাথা নিচু করে মরমে ম রে যাচ্ছে। কোনরকমে এমন জান্নাতি দৃশ্য থেকে চোখ ফেরায় স্বাধীন, তারপর নিজের আলোচনায় মনোযোগ দেয়।

স্বাধীনের মুখ থেকে এসব কথা কখনো শুনবে ভাবতেও পারে নি ছোঁয়া । স্বাধীনের গাম্ভীর্য দেখে ও এতোদিন ভাবতো এসব বিষয়ে ও কিছুই জানে না,মেয়েদের সম্পর্কে যেন একদম আনাড়ি ও,কিছুই জানে না,অথচ এসব বিষয়ে যে সে স্পেশালিষ্ট, তা ছোঁয়ার অজানা ছিলো।আর এসব আলোচনা ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোনো যাকে বলে।বাসায় গিয়ে স্বাধীনের সামনে ও দাঁড়াবে কি করে ও? মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের প্রতিটি পরিবর্তন, বৈশিষ্ট্য এই ছেলে যেমন ঝরঝর করে বলছে,যা অনেক মেয়েরাই জানেনা।কি লজ্জার বিষয় সাইকোলজি। ছোঁয়া ঘাড় নাড়াতে পারছে না।কোনরকমে চুপ করে ক্লাসে বসে থাকলো। স্বাধীনের ক্লাস হয়ে যেতেই স্বাধীন বেরিয়ে যায় রুম থেকে। সাথে সাথেই ছোঁয়ার পিঠে পড়ে ধপাস করে একটা মাইর।উফ বলে ছোঁয়া তাকাতেই কেয়া বলে ওঠে,

“হা**মি,তোর বর ক্লাসে কত্তো মজার বিষয় বোঝাচ্ছে, কোথায় বরের কাছ থেকে ভালো করে সবকিছু শিখবি,তা নয় উনি লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে যাচ্ছেন, উনার লজ্জা পাওয়া দেখে মনে হচ্ছে বর টা ওর নয়, আমাদের। আর ওর ভাসুর।”

“ছিহ্! কি সব বিষয় এগুলো! স্বাধীন ভাইয়া এগুলো সব জানে?”

“নাহ্,জানে না।তোর স্বাধীন ভাইয়া একেবারে অবুঝ শিশু। কচি খোকা! দেখলাম তো সেদিন কিচেনে।খোকাটা কেমন কোমড় জরিয়ে ধরে কাজে ডিস্টার্ব করছিলো।”

“প্লিজ বনু,এইবার থাম।এসব বলে কি এখন আরো লজ্জা দিবি তুই আমায়? আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হই? ”
লজ্জায় মুখটা ছোট্ট করে বলে ছোঁয়া।

“হয়েছে হয়েছে, আর ঢব মা*রতে হবে না।আর কিছু বলবো না।এবার তো অন্তত লজ্জা পাওয়া বন্ধ কর। ”

কেয়ার কথায় হেসে ফেলে ছোঁয়া। তারপর দুজনে মিলে বাইরে যায়।এখন ক্লাস নেই। দুজনেই বাদাম কিনে আপন মনে চিবোচ্ছিলো গাছের নিচে বসে।কেয়া গুনগুন করে গান গায়ছিলো,আর ছোঁয়া জায়গায় জায়গায় সুর দিচ্ছিল ওর সাথে। এমন সময় একজন অফিস সহকারী ওদের কাছে আসলো। ছোঁয়া কে জানতে চায়লে ছোঁয়া বলে ও। উনি ছোঁয়া স্বাধীনের রুম দেখিয়ে বলেন সাহারিয়ার স্যার ওকে একা ডাকছে।জরুরি দরকার তায় তাড়াতাড়ি যেতে বলে চলে যান উনি।ছোঁয়া বুঝতে পারে না এই সময় স্বাধীনের কি দরকার হতে পারে।

“কি ব্যাপার বলতো? তোর জামাইয়ের আবার কলেজে এসেও কোন সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের দরকার হলো নাতো? যা গিয়ে দিয়ে আয়।”
বলে ছোঁয়া কে ধাক্কা দেয় কেয়া।

“শয়তান মেয়ে, একদম হেয়ালি করবি না।আমি আছি নিজের জ্বা*লায়,জানিনা কেন উনি এই সময় ডাকলেন? আজ আবার কোন দোষ পেলেন কিনা,আর ও আছে মজা নিয়ে ”

“ধুর কি যে এতো ভাবিস! আরে এখন আর আগের মতো শাস্তি দেবে না।যা একবার, গিয়েই দেখ।”

”নাআ,শাস্তি দেবে না,আজ রাতেই তো ঘন্টা ধরে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলো,বজ্জাত ছেলে কখনো ভালো হয়?”মনে মনেই বিড়বিড় করে বলে ছোঁয়া।

“এতো কি ভাবছিস? আরে বাবা যা না।গিয়েই দেখ।”

স্বাধীনের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া। অনুমতির অপেক্ষায় দাঁড়াতেই স্বাধীন নিজেই বাইরে আসে।কিছু ক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে প্রেয়সীর দিকে।তারপর নিজেই বলে,

“ভেতরে আসুন মিসেস সাহারিয়ার স্বাধীন। আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি।”

স্বাধীনের মুখে এমন সম্বোধন শুনে ছোঁয়া যেন আরেক পশলা লজ্জায় মাখামাখি হয়।মাথা টা নিচু করে ভেতরে যায়।গিয়ে দাঁড়াতেই স্বাধীন বসতে বলে।ছোয়া বসলে স্বাধীন বলে,

“আপনি কি ভুলে গেছেন,মিসেস সাহারিয়ার,আপনি একজন সাইকোলজির স্টুডেন্ট? আর আপনার হাজব্যান্ড,সেও একজন সাইকোলজির টিচার।সো আপনার এতো লজ্জা পেলেও হবেনা,আবার আপনার জামাই যে কিচ্ছু জানেনা এসব বিষয়ে এটা ভাবলেও চলবে না।মিসেস সাহারিয়ার স্বাধীন, আপনার হাজব্যান্ড সবই জানে।সো আপনার এতো অবাক হলে চলবে না।আর আপনার এতো লজ্জা হলে,সাইকোলজি পড়তে পারবেন না।তায় আপনার লজ্জা ভাঙানোর ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে। ”

ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা গুলো বলে স্বাধীন। আর ছোঁয়া স্বাধীনের মুখের প্রতিটা কথায় কেঁপে ওঠে। প্রচন্ড লজ্জায় আর জড়তায় আঁকড়ে ধরে ওকে।কোন রকমে রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসে ছোঁয়া। ভুলেও আর স্বাধীনের দিকে ফিরে তাকায় না।স্বাধীন ও বুঝতে পারে ওর প্রিয়তমার লজ্জা। সে যে স্বাধীনের চোখে চোখ রাখার ভয়েই পালিয়ে গেলো তা স্বাধীন জানে।ঠোঁটের কোণে সোভা পেলো ওর চিরায়িত সেই বাঁকা হাসি,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here