এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_৩৩,৩৪

0
1089

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৩,৩৪
#মাসুরা_খাতুন
৩৩

রাগে অনেকক্ষণ ধরে ফুঁসছে কেয়া।স্বাধীনের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে যখন রুমে আসলো তখন রাত প্রায় দুটো বিশ পঁচিশ। ছোঁয়া কেয়ার রাগ কে পাত্তা না দিয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হলো।স্বাধীনের রাগ,শাস্তি এগুলো সবই ওর গা সওয়া,তায়তো ঘুমাতে গেলো।কিন্তু কেয়া কে দেখে খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না রাগ টা ঠিক কার ওপর? যে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলো তার ওপর? নাকি ওর এমন নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে যে চোখ টিপে হাসলো তার ওপর? ছোঁয়া কিছুটা আন্দাজ করলো,রাগ মনে হয় যে হাসছে তার ওপরই। শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ রেখেই ছোঁয়া প্রশ্ন করলো,

“হ্যাঁ রে কেয়া,তুই ঠিক রাগছিস টা কার ওপর? স্বাধীন ভাইয়ার ওপর? নাকি?”

“দেখ,এমনেই আমি রেগে আছি,তাতে ফালতু কথা বলবি না।স্বাধীন ভাইয়ার ওপর রাগ হবে কেন? উনার কোন দোষ নেই। উনার যুক্তি ঠিক ছিলো,আমি বুঝতে পারছি উনি কেন মাঝে মাঝে তোকে শাস্তি দিতেন,কারণ উনি চাইতেন যেন তুই নিজের ওপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ নিজেই করতে পারিস,আর যখন বোকার মতো সব অন্যায় মেনে নিস,তখন উনি তোকে রাগ করে শাস্তি দেন।আসলে উনার কোন দোষ নেই। কাল বোকার মতো আমরাই তো ঐ মেয়ে গুলোর চালে ধরা পড়ে গেলাম,আমাদের উচিত ছিলো ওদের সামনে বোকার মতো না নেচে যোগ্য জবাব দিয়ে চলে আসা।”

“তাহলে তোর এতো রাগ টা কার ওপর বনু??”
চোখ খুলে তাকিয়ে বলল ছোঁয়া।

“দেখলি না ঐ বাঁদর টাকে,কেমন তিরস্কার করে হাসছিল।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।শালা শয়তান, খচ্চর ছেলে। আফ্রিকার বান্দর। আমাকে দেখে হাসে?”

কেয়ার রেগে যাওয়া দেখে উঠে বসে ছোঁয়া,
“কই ভাইয়া আবার কখন হাসলো,আমি তো দেখলাম না।তুই খালি এগুলো দেখিস? ”

ছোঁয়ার গায়ে একটা বালিশ দিয়ে মে*রে কেয়া বলল,

“একদম সাফাই গায়বি না।তুই তাকাস নি তায়, ও হেসেছে। তাও খুব মজা নিয়ে হেসেছে।আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হেসেছে। ”

“আহ্ উচ! এই মেয়ে, ভাইয়া যে হেসেছে তা তুই দেখলি কেমনে? কই আমি দেখলাম না।তার মানে তুই তাকিয়েছিস।তুই তাকিয়েছিস কেন উনার দিকে? ”

“সেসেটা তো এমনিই।ঐ একবার চোচোখ পড়ে গেছিল আর কি।আর তখনই তো,,”তোতলাতে তোতলাতে বলল কেয়া।

“থাক,আর বলতে হবেনা।আমি বুঝে গেছি।এবার ঘুমা।কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে। ”
বলে ছোঁয়া মুচকি হেসে আবার ও ঘুমাতে লাগলো।

“তুই দেখে নিস ছোঁয়া, কাল ঐ বাঁদরের বাচ্চা বাঁদর কে যদি আমি শিক্ষা না দিই,তবে আমার নাম কেয়াই না।আর সাথে ঐ মেয়ে গুলোর ও।”
বলে কেয়া ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

সকাল থেকেই মহা সমারোহে চলছে বিয়ের আয়োজন। বাড়ি ভর্তি মেহমান। সাহানা বেগম প্রচুর ব্যস্ত অথিতিদের আপ্যায়নে।পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে রংবেরঙের ফুলে।বাগানে রান্নার আয়োজন করা হয়েছে,সেখানে বাবুর্চিরা ব্যস্ত নানান রকম খাবার রান্না করায়।এতো ঝামেলার মাঝে ও সাহানা বেগম কড়া ভাবে হুকুম করেছেন যেন ছোঁয়া কে কেউ না ডাকে।মেয়ে টা যতক্ষণ পারে ঘুমাক,গতকাল থেকে কম ধকল যাচ্ছে না ওর ওপর দিয়ে। আরো তিন চারদিন এমনই যাবে।তায় ওর বিশ্রাম প্রয়োজন। কেয়া ঘুম থেকে উঠেছে ছয়টা বাজতে বাজতেই। উঠে ফ্রেশ হয়েই বসে গেছে চিরকুট লেখতে,অনেক ভেবে ভেবে একটা মনমতো চিঠি লিখে ফেলল।যতোসব আজগুবি কথাতে ভর্তি চিরকুট টা ছিলো এমন,

প্রিয় প্রাণেশ্বর,

আপনাকে দেখিয়া আমার হাজার বছরের রজনীর নিদ্রা আমায় বিসর্জন দিয়ে চলিয়া গেছে বহুদূর। আপনার সান্নিধ্য পাইতে আমি সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হইতে পারিব।গতকাল আপনাকে প্রথম দেখিলাম আমি,আপনি বিশ্বাস করিবেন না,দেখার পর হইতে আমার বুকের ভেতর কেমন ধুকপুক ধুকপুক করিতেছে।মনে হইতেছে,এখনই ছুটিয়া চলিয়া যায় আপনার কাছে। আপনার ঐ বিড়ালের মতো চোখ, কুকুরের মতো নাক,আর ঐ হাতির দাঁতের মতো দাঁত গুলো বারবার পাগল করে আমায়, কেমন করে যে আপনার কাছে আমায় টানিতেছে তা আমি বলিয়া বোঝাইতে পারিব না।
আমায় খুঁজিবেন না,আমি যথাসময়ে আপনার সামনে হাজির হইব।
ইতি,
আপনার জন্য অপেক্ষায় বসিয়া থাকা
“র”ক্রান্ত নামের মেয়ে টি

চিঠি টা লিখে কেয়া সোজা চলে গেলো স্বাধীনের রুমের দরজায়। রুমের সামনে খুলে রাখা বাঁধনের জুতাটি চিনতে ওর সময় লাগলো না।জুতার মধ্যে ভরে দিলো কাগজটি।তাড়াতাড়ি যেন বুঝতে পারে তায় আরো কিছু কাগজ ঢুকিয়ে দিলো জুতার মধ্যে। দিয়েই একছুটে চলে গেলো নিজের রুমে, তারপর আবারও ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়লো।

বাঁধন এখনো ঘুমে,তায়তো ওকে না জাগিয়ে স্বাধীন উঠে গেলো।কাল রাতে কান ধরিয়ে রাখার পর আর ছোঁয়ার সাথে কথা বলা হয়নি।ওর ছোঁয়া যে বড়ই অবুঝ, অন্তত আজকের দিনে মেয়ে টার মন খারাপ হয়ে থাকুক তা কিছুতেই চায় না স্বাধীন। আস্তে আস্তে ছোঁয়ার রুমে ঢুকলো,ওর শান্ত ছোঁয়া টা এখনো বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে, একেবারে গুটিসুটি মেরে। আস্তে আস্তে ছোঁয়ার কাছে গেলো স্বাধীন।প্রিয়তমার ঘুম যেন ভেঙে না যায় তায়তো নিশব্দে গিয়ে বসলো ছোঁয়ার পাশে।কেয়া ও রুমে আছে বলে একটু ইতস্তত হলেও রুমে গিয়ে দেখলো কেয়া নেই, তায়তো মনের সংকোচ টা কাটিয়ে আলতো পরশে ছুঁইয়ে দিলো ছোঁয়ার গালে আদুরে হাত।অগোছালো চুলগুলো আস্তে আস্তে গুছিয়ে এনে কানের পাশে রেখে দিলো।পরম যত্নে টুপ করে একটি ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো ছোঁয়ার গালে।
ঘুমের মাঝেই কারো স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো ছোঁয়া।এমনিতেই সকাল বেলা চারদিকে হইচইয়ে খুব একটা ঘুম ছিলো না তাতে আবার কারো এমন গভীর স্পর্শে কিছু টা কেঁপে উঠল ও।এমন স্পর্শ ঘুমের মাঝে ও বহুবার পেয়েছে ও।ও জানে এটা কার ছোঁয়া। কিন্তু আজকের দিনে এতো শোরগোলের মাঝে অন্য কেউ ও তো এভাবে ছুঁতে পারে,তায় অকস্মাৎ ভয়ে জেগে উঠলো ছোঁয়া।কিন্তু চমকে গিয়ে চোখ খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো সবচেয়ে আকাংকিত, সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির মুখ।পরম আবেশের ঘোরে ভালোবাসা একে দিচ্ছে ওর ঠোঁটে, গালে কপালে। এমন গভীর স্পর্শ উপেক্ষা করা দুঃসাধ্য! চোখ খুলে প্রিয় মানুষ টিকে দেখে আবারও চোখ বন্ধ করলো ছোঁয়া। চোখ বন্ধ রেখেই নিতে লাগলো প্রিয় মানুষটির বহুমূল্যবান আদর।আস্তে আস্তে স্বাধীনের নিশ্বাস ছোঁয়ার কানের কাছে পড়লো।ফিসফিস করে বলতে লাগলো,

“কি হলো,চোখ খুলবিনা? নাকি ঘুমানোর ভান করে শুধু নিজের আদর টুকু নিংড়ে নিবি,আর আমার ভাগের টা ঘুমের বাহানা দিয়ে বাকীই রাখবি।”

“তোমার এমন মধুর অত্যা*চারের মাঝে চোখ খুলে দেখার সাধ্য যে আমার নেই স্বাধীন ভাই।আমি পারবো না চোখে চোখ রেখে তোমার আদর নিতে। এ দুঃসাধ্য ব্যাপার আমার জন্য। “চোখ বন্ধ রেখেই ফিসফিস করে বলল ছোঁয়া।

“উহু্ তা বললে তো হবে না।আমি খালি একায় আদর করবো,আমায় আদর কে করবে শুনি?”

“ছিহ্ স্বাধীন ভাই,তুমি বড়ই ঠোঁটকাটা পুরুষ। এখন যাও বলছি,আমার খুব লজ্জা লাগছে। তুমি না গেলে আমি তাকাবো না।চোখ তুলে চাইতে পারবোনা তোমার চোখে। ”

“এটুকুতেই এতো লজ্জা জান,এখনো কতোকিছু বাকী,তুই আমার হাজার অপেক্ষার রাতের একমাত্র সমাধান। তুই আমার প্রতিটা সঙ্গীহীন দিনের একমাত্র সহচরী। হাজারটা নিকোটিনে নিজেকে পো*ড়ানোর কারণ তুই।এতো কাছে থেকেও অনেক পু*ড়িয়েছিস আমায়।তোকে তো আমি এমনি ছাড়বো না।অনেক অনেক পো*ড়াবো তোকে।আমার প্রেমে পু*ড়িয়ে ভস্ম করবো তোকে আমি।আমার প্রতিটি বিনিদ্রার রাতের কারণ হবার জন্য পো*ড়াবো,প্রকাশ্যে এড়িয়ে চলা,আর গোপনে আমার টিশার্ট থেকে গন্ধ নেওয়ার দায়ে তোকে আমি পো* ড়াবো। ”
বলে স্বাধীন আবারও ছোঁয়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
প্রিয় পুরুষ টির এমন মোহময় কণ্ঠে বলা প্রতিটি কথায় ছোয়াকে কাঁপিয়ে তোলে।

কেয়া এতোক্ষণ ওয়াশরুমে ছিলো।একটু বের হতেই এদের এমন ঘনিষ্ঠ দেখে আবারও ভেতরে যায়।কিন্তু অনেক ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও যখন এদের কথা শেষ হচ্ছে না তখন ভেতর থেকেই বলে,

“বলছি,এতো ইমোশনের মাঝে আমি ওয়াশরুমেই থেকে যাবো? নাকি একটু বের হওয়ার সুযোগ পাবো।আর কতোক্ষণ?”

কেয়ার কথা শুনতেই দুজনেই অপ্রস্তুত হয়।স্বাধীন ও ছোঁয়া কে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, আর ছোঁয়া ও লজ্জায় আরো রাঙা হয়ে যায়। রুম থেকে বের হয়ে যায় স্বাধীন সকাল সকাল এই বাঁদর মেয়ের ফিলিংসের বারোটা বাজানোই সোজা চলে যায় বাঁধনের কাছে। জোরে জোরে ঝাকিয়ে ঘুম থেকে তোলে বাঁধন কে,

“ভাই বাধন,কতোটুকু পটাতে পেরোছো এই মেয়েটাকে? তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেল তো।এযে সত্যিই উগান্ডার বাসিন্দা। আমার জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে ছাড়লো।”

“কি হয়েছে স্বাধীন ভাই,আমার বাঘীনি আবার কি করলো?এই সকাল সকাল তোমার মুখ এতো ভার?”

“আর বলো না,একটু আরে একটু গেছিলাম ছোঁয়ার কাছে, শয়তান মেয়ে তো আমায় ভালো করে ঘেঁষতেই দিলো না কাছে।মানে ঐ ইয়ে, মানে ভালো করে চুচুমু টুমু দেওয়ার আগেই ভাই ও এন্ট্রি নিলো,আর কি লজ্জাটায় না দিলো আমায়।”

সকাল সকাল স্বাধীনের এমন চুরি করে ছোঁয়ার কাছে গিয়ে ধরা পড়ে মুখ ভার করে এসে বলা কথা গুলোয় প্রচন্ড পরিমান হাসি পেলো বাঁধনের।ভালোবাসা গুলো সত্যি অদ্ভুত! ভালোবাসার জন্য কতো কতো কঠোর পুরুষ ও নিজেদের কঠোরতার খোলস ছেড়ে শীতল বরফ হয়ে যায় প্রিয়তমার কাছে।
নারী সৌন্দর্য সত্যিই বড়ই অদ্ভুত! কি এক আলাদা শক্তি, আলাদা মোহতে মাখা নারী সৌন্দর্য, যা হাজার হাজার বছরের তপস্যারত পুরুষ কেও নিজের কাছে টেনে আনার সাধ্য রাখে।
তায়তো কতো কবি লিখে গেছেন কতো কবিতা এ নারী মোহের ওপর।

“দিনেতে দিয়াছে শক্তি সাহস
রাতেতে হয়েছে বধু,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষ্ণা লয়ে,
নারী জোগায়েছে মধু।”

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৪
#মাসুরা_খাতুন

সকালের শুরুতেই কেয়ার কাছে এমন ভাবে লজ্জিত হয়ে কিছু টা আড়ষ্ট হয়ে যায় ছোঁয়া। মনে মনেই হাজার টা গালি দেয় নিজের বোকামি গুলোকে।ওর পাশেই যে আজ কেয়া ছিলো এই কথা ও ভুলে গেলো কি করে? দুহাত দিয়ে চোখ মুখ টা ঢেকে আবারও ঘুমের মতো পড়ে থাকে ও।এখন কথা বাড়িয়ে শুধু শুধু কেয়ার কাছে আরও লজ্জা পাওয়ার থেকে চুপ করাই ভালো।কিন্তু শয়তান কেয়া তা হতে দিলে তো! ছোঁয়ার মুখ থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে। এমন সময় ঘরে আসেন সাহানা বেগম।

“কিরে মা,রাতে ঘুম হয়েছিল ভালো?কোন অসুবিধা হয়নি তো তোমার? ”

“না বড়মা,আমার কোনো সমস্যা হয়নি।”
ভদ্র মেয়ের মতো উত্তর দিলো কেয়া।

“কই আমার ছোঁয়া উঠেছে? এই ছোঁয়া, এখন উঠ মা,কিছুক্ষণ পর থেকেই লোকজন চলে আসতে শুরু করবে,তোর বড় আব্বুর বন্ধু, তাদের ফ্যামেলি সবাই শুধু তোদের দুজন কে দেখতে চাইবে।এখন ওঠ মা,ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে একটু সাজুগুজু কর।পার্লারের মেয়ে গুলোও চলে আসবে।”
ছোঁয়ার চুলে বিলি কা-টতে কা*টতে বললেন সাহানা বেগম।

“হুম,উঠছি বড়মা।তুমি শুধু এই শাঁকচুন্নি কেয়া কে মুখ টা বন্ধ রাখতে বলো।কিসব বলছে সকাল থেকে। ”
বালিশ থেকে মাথা সরিয়ে সাহানা বেগমের কোলে রেখে বলল ছোঁয়া।

“এই আমি আবার কি বললাম? শোন বড়মা,আমি যা দেখেছি তায় বলেছি।সক্কাল সক্কাল এমন রোমান্টিক সিন দেখতে কার না ভালো লাগে বলো?”

“শয়তান মেয়ে তুই চুপ করবি।একদম বড়মার সামনে এসব বলবি না।বড়মা তুমি ঐ বেদ্দপ মেয়ে টার একটা কথা ও বিশ্বাস করো না।”

“আহারে আমার লজ্জাবতী লতা! তোমরা যা করেছো আমি তায় বলেছি।ফের এসব দেখলে আবার বড়মাকে বলে দেবো।”

সাহানা বেগম হেসে ফেললেন দুজনের ঝগড়া দেখে।দুহাত দিয়ে দুজনেরই কান ধরে বললেন,

“দুই টা একই হয়েছিস! কেউ কারো থেকে কম না।ঝগড়া বাদ দিয়ে দুজনেই নাস্তা খেতে আায়,আর সুন্দর করে সাজুগুজু কর।আর ছোঁয়া, কেয়ার জন্য ও যেসব শপিং করেছিস,সেগুলো ওকে দে।”

“আমার জন্য শপিং? কিন্তু কেন বড়মা? আমার কিচ্ছু লাগবে না। ”

“লাগবেনা বললেই হলো? এক মেয়ের বিয়েতে আরেক মেয়ে কে কেনাকাটা করে দেবো না,তায় কি হয়? কোন কথা বলবে না।যা যা কেনা হয়েছে সব পড়বে।”

কেয়া এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সাহানা বেগম কে।

“তুমি এতো ভালো কেন বড়মা? সত্যিই তুমি অসাধারণ! তোমার গায়ে একটা মা মা গন্ধ পাওয়া যায়। আমি যদি তোমার মেয়ে হতে পারতাম!”

“কে বলেছে তুই আমার মেয়ে নস? তুই ও আমার মেয়ে। আমার ছোয়ার মতো।”

ছোঁয়া ও জড়িয়ে ধরলো সাহানা বেগমকে।পরম যত্নে দু এতিম মেয়ে কে নিজের বুকে আগলে নেন সাহানা বেগম।মাতৃত্বের সকল স্নেহ ঢেলে দেন পরম মমতায়।
সুন্দর একটি মূহুর্ত কাটানোর পরে সাহানা বেগম চলে যান স্বাধীন কে তৈরী হওয়ার জন্য বলতে।

বউয়ের সাজে সাজানো হয়েছে ছোঁয়া কে।খুব ভারী ব্রাইডাল লুক না হলেও সুন্দর পরিপাটি ভাবে সাজানো হয়েছে। এতো লোকজন, এত ঝামেলার মধ্যে ও পার্লারের মেয়ে দুটোর দিকে স্বাধীনের কড়া আদেশ। কোন প্রকার কৃত্রিম পাউডারের নীচে যেন ছোঁয়া কে ডোবানো নাহয়,যাস্ট ছোঁয়ার যেটা গায়ের রং সেটায় যেন বজায় থাকে। মেয়ে গুলোও মনে হয় নিজেদের মতো করে সাজাতে না পেরে বিরক্ত। কিন্তু চাহিদার থেকে বেশি টাকা দেওয়ায় একদম কথামতোই কাজ করছে ওরা।ছোঁয়ার জন্য স্বাধীন নিজে পছন্দ করে লেহেঙ্গা কিনেছে। ধবধবে সাদা রঙের লেহেঙ্গা।।সাথে লাল টকটকে জরির ওড়না। এমন সাধারণ রঙের লেহেঙ্গায় যেন ছোঁয়ার সৌন্দর্য ঈর্ষনীয় ভাবে বাড়িয়ে দিলো।স্বাধীন যে চোখ দিয়ে কতোটা মেপে এমন পোশাক নির্ধারণ করেছে তা ছোঁয়ার গায়ে পড়েই বোঝা যাচ্ছে। সাহানা বেগমের প্রথমে একটু অমত ছিলো বিয়ের পোশাক সাদা হওয়ায়,কিন্তু লাল ওড়না থাকায় আর কিছু বলেন নি।ছোঁয়ার ঘন চুলগুলো খোঁপা করে দেওয়া হলো।খোঁপায় একে একে গেঁথে দেওয়া হলো টকটকে লাল গোলাপ। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। সাহানা বেগমের বানিয়ে রাখা সোনার গহনা গুলো খুব একটা কাজে লাগলো না।হাতে কিছু চুড়ি আর গলায় দেওয়া হলো স্বাধীনের তরফ থেকে দেওয়া ধবধবে সাদা ডায়মন্ডের নেকলেস। কানে সাহানা বেগমের দেওয়া বড় একটা ঝুমকো দেওয়া হয়েছে। এতোটুকু সাজেই ছোঁয়া কে দেখে যেন চোখ ঝল*সানো ব্যাপার।অসম্ভব সুন্দরী লাগছিলো ছোঁয়া কে।সকলেই তাক লেগে দেখছিল মেয়ে টাকে।বরাবরের মতো চুপচাপ মেয়ে টিকে দেখতে যেন আজ সম্পর্ন অন্য রকম লাগছিলো।

একা একা রুমে বসে আছে ছোঁয়া। সাজগোজ শেষে মেয়ে গুলো চলে গেছে, কেয়াটার ও দেখা নেই। মনে হয় কাল রাতের প্রতিশোধ নিতে মেয়েটি উঠে পড়ে লেগেছে। ছোঁয়ার খুব অস্বস্তি হচ্ছে, ব্লাউজের হুকে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। এরমধ্যে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ছোঁয়া পেছনে না দেখেই বলল,

“কেয়া জান,ব্লাউজের হুকে কিছু একটা হয়েছে রে,একটু ঠিক করে দে না।”

বলতেই কেউ যেন পরম যত্নে ওড়না টা সরিয়ে ব্লাউজের হুক টা খুলে।কিন্তু এমন উষ্ণ স্পর্শ পেতেই ছোঁয়া শিহরিত হয়। এক লহমায় বুঝে যায় এটা কেয়ার স্পর্শ নয়।ঝটকা মেরে পেছনে থেকে ফিরতে ফিরতে ছোঁয়া বলে ওঠে
,
“এই কেরে? সাহস কি করে হয় আমাকে এভাবে ছোঁয়ার? ”

কিন্তু সামনে তাকিয়েই দেখে সে আর কেউ নয় স্বাধীন নিজে।লজ্জায় ছোঁয়া আড়ষ্ট হয়ে যায়, স্বাধীন ওকে এতো কাছে থেকে দেখেছে বলে চোখ তুলে তাকাতে পারে না,

“সা স্বাধীন ভাই,তুমি?”

“কেন,অন্য কাউকে আশা করেছিলি?”

“আআমি কেয়া কে ভেবেছিলাম। ”

আস্তে আস্তে স্বাধীন আগাতে থাকে ছোয়ার দিকে।একেবারে ওয়ারড্রবের সাথে লেগে যায় ছোঁয়া।
“কিকি করছো স্বাধীন ভাইয়া, তুমি এখন যাও।”

“আমি কি করবো,না করবো এসব ভেবে তোর ছোট্ট মাথাতে বেশি চাপ নিতে হবে না।”
বলে পেছনে ঘুরিয়ে দেয় ছোঁয়া কে।আস্তে আস্তে ব্লাউজের হুক গুলো খুলতে থাকে,ছোঁয়ার ধবধবে ফর্সা পিঠ উন্মুক্ত হতে থাকে স্বাধীনের সামনে।

ছোঁয়া বুঝতে পারে পিঠে ঠোঁটের উষ্ণ পরশ।কেঁপে ওঠে ছোঁয়া।

“তুতুমি চলে যাও স্বাধীন ভাই।এসব কি করছো?”

“তুই খুব সুন্দর ছোঁয়া। আজ তোকে সত্যিই খুব হট লাগছে।এতোদিন তুই সুন্দরী ছিলি,কিন্তু এতোটা যে হট তা কখনো খেয়াল করি নি।আজ তোকে নোরা ফতেহীর থেকেও হট লাগছে।”

“ছিহ্ কিসব বলছো স্বাধীন ভাইয়া। তুমি যাও বলছি।”

এবার ছোঁয়া কে নিজের বাহুদ্বরে আবদ্ধ করে নেয় স্বাধীন। এখান থেকে বের হওয়ার মতো সুযোগ ও ছোঁয়ার নেই।

“তুই যদি চাস তো বাসর টাও এখনই সেরে ফেলতে পারি।কি বলিস।”

আজ স্বাধীনের চোখে অন্য রকম নেশা।পুরো কামুকতায় ভরা স্বাধীনের চাহনি। ছোঁয়া এমন ভাবে কখনো স্বাধীন কে দেখে নি।লজ্জায় স্বাধীনের চোখে তাকাতে পারে না ছোঁয়া।

“এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন? খালি আমি কাছে আসলেই তুই লজ্জা পাস? এমন বড় গলার ব্লাউজ পড়েছিস তার বেলায় লজ্জা লাগে না? স্টেজে লোক গুলো যখন চোখ দিয়ে গিলছিল তখন লজ্জা লাগলো না।এখন আমি যখন এমন ব্লাউজ দেখে কাছে এলাম আর ওমনি তোর লজ্জা লাগলো?”

বলেই ছোঁয়ার গলায় মুখ ডুবায় স্বাধীন।

“তুমি কিসব বলছো? ব্লাুউজ টা তো তুমিই এনে দিয়েছো।আমি কি করবো?”

গলা থেকে মুখ সরিয়ে এক ঝটকায় ব্লাউজের পেছনের দিকটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললো স্বাধীন।

“আমি সেইসব প্রেমিক পুরুষদের মতো না যারা সাজিয়ে গুজিয়ে নিজের সুন্দরী প্রেমিকাকে অন্য কে দেখাতে মজা পায়,বোরকা ছাড়া স্লিভলেস ব্লাউজ শাড়ী পরিয়ে বাইকের পেছনে নিয়ে কখনো ঘুরিয়ে আনন্দ দিতে পারবো না তোকে।আমার আদর ঠিক তেমনই যেমন ভয়া*বহ হবে অন্যায় করলে আমার শাসন।”

“কিকিন্তু পোশাক টা তো তুমিই এনে দিয়েছিলে ভাইয়া? আমার কি দোষ? ”

“আমি চোখের সৌন্দর্যে এনেছি, কিন্তু তোর শরীরের মাপ টাতো পুরোটায় জানিনা।গলা টা যে এতো বড় হবে তা তো বুঝতে পারিনি।তুই পড়ার পর যখন বুঝলি এটার গলা এতোটা বড় আর হাইড এতো খাটো,আমায় ডাকিস নি কেন? তুই জানিস,সাজগোজের পুরো টা সময় আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম,কোন প্রবলেম হলো কি না জানতে।”

“কিন্তু এখন আমি কি পড়বো ভাইয়া? আর ব্লাউজ তো নেই। ”

স্বাধীন পাশে থাকা একটা ব্যাগ থেকে আরো একটি গোল্ডেন কালারের ব্লাউজ বের করে ছোঁয়া কে দিলো।

“যখন প্রথম সাজগোজ শেষে দেখলাম তোকে,তখনই খেয়াল করি,আর বের হয়ে যায় আর একটি ব্লাউজ আনতে,কিন্তু এর মধ্যেই তো তুই স্টেজে চলে গেছিস।নেক্সট টাইম যেন এমন ভুল আর না হয়।এমন অবস্থা করবো,করো সামনে মুখ দেখাতে ও লজ্জা পাবি।”

বলে ছোঁয়া কে রেখে চলে গেলো স্বাধীন। ছোঁয়ার দুচোখ ভরে জল টলমল করছে।

____________-

কেয়া অনেকক্ষণ ধরে ফলো করছে বাঁধন কে।কখন বাঁধন জুতার ভেতর অন্য কাগজের উপস্থিতি টের পাবে,আর তা বের করে দেখবে এই অপেক্ষায়। কেয়া ও একটা আকাশী কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে।সাথে হালকা মেকআপ। ছোঁয়া পছন্দ করে কিনে আনা সোনার চিকন একটা হার ও সোভা পাচ্ছে গলায়।কিন্তু লেহেঙ্গার সাথে চশমা মনে হয় আজব প্রাণী গুলোই পড়ে,কেয়াও সেই দলের।মেয়ে টাকে দেখতে ঠিক যতোটা শান্ত লক্ষী মনে হয়, এ ঠিক ততোটায় বিচ্ছু।কে এখন ওকে দেখে বলবে যে ও এতোটা চটপটে! খুব সুন্দর লেহেঙ্গার সাথে এমন হালকা সাজ একেবারে যথাযথ মনে হচ্ছে। ঠোঁটে লিপস্টিক ও খুব হালকা দিয়েছে। বাঁধন অনেক ক্ষণ ধরে খেয়াল করছে মেয়ে টাকে।কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে ও কিছু একটা নিয়ে বাঁধনকেই ফলো করছে,তার মানে যে কিছু একটা গন্ডগোল আছে তা বাঁধন বুঝতেই পারছে।

কেয়া যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠিক আগেই বসে আছে জেমি আর ওর বোন রিমি।দুবোনের মধ্যে কথোপকথন ও হালকা শোনা যাচ্ছে।

“এই আপু শোন,এ যে স্বাধীন ভাইয়ার বন্ধু যে ছেলেটা,অনেক ক্ষণ ধরে মনে হয় আমার দিকে তাকাচ্ছে,আহা কি হ্যান্ডসাম লুক! আমার ও উনাকে খুব ভালো লেগেছে। ”
রিমি জেমিকে বলল।

“কোন ছেলেটা? ঐ যে শ্যামলা করে দেখতে ঐটা? স্বাধীন ভাইয়ের কোন এক বন্ধু।”

“হ্যাঁ আপু।আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম, উনিও আমার দিকে একটু পর পর দেখছেন।আই থিংক, আই লাভ বাঁধন আপু।তুমি তো স্বাধীন ভাইয়া কে পাওনি,কিন্তু বাধন কে পেতে আমায় হেল্প করো প্লিজ। ”

কি বলছে এই মেয়েটু।ধূৎছাই! কেয়ার প্ল্যান আবার বিফলে গেলো।বাঁধনের জুতোর মধ্যে রেখে আসা ঐ চিঠি তো তো প্রেরকের জায়গায় “র”ক্রান্ত নামের কথায় লেখেছে।আর “র”ফর রিমি! এবার কি হবে? বাঁধন যদি সত্যিই মনে করে চিঠিটা রিমিই দিয়েছে, আর এদিকে তো এই রিমি টাও বাঁদর টার জন্য ফিদা! এবার কি হবে? নিজের পায়ে নিজেই কু*ড়োল মা*রার মতো ব্যাপার! যে কোরেই হোক বাঁধন যাতে চিঠিটা না দেখতে পায় সেই ব্যবস্থায় করতে হবে।

এদিকে বাঁধন ও উঠে চলে যাচ্ছিল,কেয়া ও পিছু নেয় ওর।

“এই যে মিস্টার বাঁধন।প্লিজ থামুন।আপনার সাথে আমার খুব দরকারী কথা আছে। “বাঁধন কে দাঁড় করাতে বলে কেয়া।

ব্যাপার কি? আজ কেয়া রানী নিজেই কথা বলতে আসছে আমার সাথে? মনে মনে কিছু টা অবাক হয় বাঁধন। নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে এটাও বুঝতে পারে।

“বলছি আজ সূর্যটা কোন দিকে উঠেছে বলুন তো? মিস কেয়া নিজে এসেছে আমার সাথে কথা বলতে!”

“ছিহ্,এসব বলছেন কেন? আমি বুঝি সব সময়ই ঝগড়া করি আপনার সাথে? এমনেই কথা বলতে এলাম আরকি।”

“ওও তাই? তো কথা হচ্ছে, খুব সুন্দর লাগছে আপনাকে।একদম পরীর মতো।”

হ ব্যাডা,আমি তো কথা বলতে চাইলেই তোর খালি এসব আজাইরা কথা শুরু হবে,শালা এনাকোন্ডা কোন হান কার।
মনে মনে বলে কেয়া।
কিন্তু মুখে চার ইঞ্চি হাসি ঝুলিয়ে বলে,

“আসলে বলছিলাম কি,জুতা খুলে ভেতরে চলুন না,বসি একটু দুজনে।গল্প করি আরকি।”

“হুম আমিও জুতা খোলার জন্যই এদিকে আসছি,আসলপ জুতার মধ্যে কিছু একটা ঢুকেছে মনে হচ্ছে। অনেক ক্ষণ ধরে খুসখুস করছে,এটায় দেখতে হবে। ”

“আরে না না,জুতার মধ্যে আবার কি ঢুকবে,এগুলো আপনার মনের ভুল।চলুন তো গল্প করবো। ”

“আমাকে নিয়ে এতো ভাবনা আপনার এলো কবে থেকে বলুন তো? আর কিছু তো একটা ঢুকেছেই।”

“ভাবনা? না না এমনি আরকি বলছিলাম। ”

বাঁধন জুতা খুলে কাগজ গুলো বের করতেই বেরিয়ে এলো কেয়ার লেখা সেই চিঠি টি।ভাজ খুলে হাতে নিয়ে পড়তেই চোখ মুখ অন্য রকম হয়ে গেলো। এ চিঠি কার লেখা বুঝতে এতোটুকুও বাকী নেই। চিঠি পড়া শেষ না হতেই সামনে থেকে কেয়া একছুটে দৌড়ে চলে গেলো ওখান থেকে।
মুখে এক তৃপ্তির হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো বাঁধন। কেয়া টাও যে ওর প্রেমে খুব পড়েছে তা বুঝতে পারে বাঁধন।এদিকে কেয়া ততোক্ষণে উধাও ওখান থেকে,,,,,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here