ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে,পর্বঃ১৭
অরিত্রিকা আহানা
ভ্রমর সকালে ঘুম থেকে উঠতেই খরব পেলো তাদের প্রফের তারিখ দুমাসের মত পিছিয়েছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে। যাক, এবার অন্তত প্রিপারেশনটা ভালো মত নেওয়া যাবে। কিন্তু পড়তে বসেও পড়ায় ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারলো না সে। ঘুরেফিরে কালরাতে নির্ঝরের বলা কথাগুলোই মাথায় আসছে। বই সামনে রেখে চিন্তিতমুখে পড়ার টেবিলে বসে ছিলো সে, নাফিসা রহমান ঘরের পর্দা সরিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,’আসবো?’
আচমকা কারো গলার আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে ঘুরলো ভ্রমর। নাফিসা রহমানকে দেখে রীতিমত অবাক হলো। তাঁর পাশে রেহানাও হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। বিস্ময়ভাব কাটিয়ে সসম্মানে উঠে দাঁড়ালো ভ্রমর। সালাম দিয়ে বিনীত গলায় বললো ,’আসুন।’ তারপর খুলে রাখা বইটা বন্ধ করে দিলো সে। নাফিসা রহমান সালামের জবাব নিয়ে হাসিমুখে ভেতরে ঢুকলেন। রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে খাটের ওপর বসলেন। ভ্রমর অবাক, হতভম্ভ মুখে রেহানার দিকে চাইলো। এইমুহূর্তে নাফিসা রহমানের এখানে আসার কারণ কিছুই বুঝতে পারছে না সে। রেহানা মুখটিপে হেসে ফিসফিস করে বললো,’নির্ঝরের বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছে তোকে।’
নিমিষেই মুখ কালো হয়ে গেলো ভ্রমরের। ঠিকই তো! এই কথাটা তো একবারের জন্যেও মাথায় আসে নি ভ্রমরের? নাফিসা রহমান বারান্দায় থেকে চোখ সরিয়ে পুনরায় মিষ্টি হেসে বললেন,’পড়াশোনা কেমন চলছে?’
-‘ভালো।’, মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো ভ্রমর। যদিও মিথ্যে বলেছে সে। কাল বিকেল থেকেই শত চেষ্টা করেও পড়ায় একফোঁটা
মনোযোগ বসাতে পারে নি। বিকেল বেলা রেহানার মুখ থেকে নির্ঝরের বিয়ের কথা শুনেই বুকের ভেতর জমাট বাধা একটা কষ্ট যে থম মেরে আছে তারপর থেকে আর শান্তি নেই। সেটা আদৌ সারবে কি না ভ্রমর নিজেও জানে না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’আপনার শরীর কেমন?’
-‘ভালো আছি।’
এরপর আর কোন কথা খুঁজে পেলো না ভ্রমর। হঠাৎ করে আজকে নাফিসা রহমানকে বেশ অচেনা মনে হচ্ছে তাঁর! অথচ এইমহিলার সাথে একসময় বারান্দায় বসে কত গল্প করেছে ভ্রমর। আজ সব কিছু ঝাপ্সা, খাপছাড়া। আড়ষ্ট হয়ে রেহানার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো সে। নাফিসা রহমান ভ্রমরের বিব্রত মুখের দিকে চেয়ে বললেন,’আমি তোর পড়ায় ডিস্টার্ব করলাম না তো?’ তারপর ভ্রমরের জবাবের অপেক্ষা না করেই পুনরায় প্রশ্ন করলেন,’পরীক্ষা কবে?’
-‘জুলাই তে।’
নাফিসা রহমান মনে মনে কি যেন হিসাব করে নিয়ে বললেন,’তাহলে তো দেরী আছে এখনো।’
-‘জি।’ আবারো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো ভ্রমর। নাফিসা রহমান হাত দিয়ে তাঁকে বিছানায় বসার ইঙ্গিত করে বললেন,’এদিকে আয়, আমার পাশে এসে বস। কথা আছে তোর সঙ্গে। অনেক জরুরী কথা।’
ভ্রমর অবাক হয়ে রেহানার মুখের দিকে চাইলো। রেহানা ‘কিচ্ছু জানিনা টাইপ’ একটা মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার কাছ থেকে কোন রকম ইশারা ইঙ্গিত না পেয়ে ধীরে ধীরে নাফিসা রহমানের পাশে গিয়ে বসলো ভ্রমর। নাফিসা রহমান তাঁর বাহুতে একটা হাত রেখে মোলায়েম কন্ঠে বললেন,’তুই আমার ওপর রাগ করে আছিস তাই না?’
ভ্রমর জবাব দিলো না। নাফিসা রহমান ছেলের বিয়েটিয়ে সব ঠিক করে এসে হঠাৎ করে তাঁকে এত দরদ দেখাচ্ছে কেন কিছুই বুঝতে পারলো না ভ্রমর। অতএব চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করলো। নাফিসা রহমান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,’আর রাগ করে থাকিস না মা। আগে যা হয়েছে সব ভুলে যা। এখন তোর মতামতের দিকে আমরা সবাই চেয়ে আছি। নির্ঝর একবার গেলে আবার কবে আসবে না আসবে তাঁর ঠিক নেই। তুই যদি এভাবে জেদ ধরে বসে থাকিস তাহলে বিয়েটা তিনচার বছরের জন্য পিছিয়ে যাবে। তাই আমি বলি, রাগ যা করার বিয়ের পরে করিস, আপাতত ছোট করে বিয়েটা হয়ে যাক। তারপর নাহয় তোর পড়াশুনা শেষ হোক, নির্ঝরও ফিরে আসুক তখন নাহয় আমরা বড় করে অনুষ্ঠান করবো।’
ভ্রমর হাঁ করে নাফিসা রহমানের মুখের দিকে চেয়ে রইলো। নাফিসা রহমান বলছেন কি? মিনিটখানেক চুপ করে তাঁর মুখের দিকে চেয়ে তাঁর বলা কথাগুলো মনে মনে আউড়ে নিলো সে। ভ্রমর যদি ভুল না হয় তবে নাফিসা রহমানের কথাগুলোর মানে হচ্ছে নির্ঝর এবং ভ্রমরের বিয়ে। হ্যাঁ! তাদের বিয়ের কথাই বলছেন নাফিসা রহমান। কিন্তু একটা ব্যপার বোধগম্য হলো না ভ্রমরের! রেহানা বলছে নির্ঝরের অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে? তাহলে নাফিসা রহমান কি বলছেন?
তবে কি রেহানা মিথ্যে বলেছে তাঁকে? কিন্তু রেহানা মিথ্যে বলতে যাবে কেন? মিথ্যে নির্ঝরই বলেছে! কোন বিয়েটিয়ে ঠিক হয় নি তাঁর! ইচ্ছে করে ভ্রমরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন করেছে সে। পাঁজি, অসভ্য, বদ লোক একটা!
নতুবা তাঁর যদি অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিকই হতো তবে নাফিসা রহমান এসব কেন বলবেন? তাঁর হতবিহ্বল মুখ দিকে চেয়ে নাফিসা রহমান ইতস্তত করলেন। তিনি ভাবছেন ভ্রমর বিয়ের বিষয়ে রাজী হবে কি না তা নিয়ে! সে যদি রাজি না হয় তবে বিয়েটা আবার পিছিয়ে যাবে! মৌন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেব,’কি হলো?’
তাঁর কথার জবাবে আচমকাই হেসে ফেললো ভ্রমর। রেহানাও হাসছে কারণ ভ্রমরের এই হাসির কারণ তাঁর অজানা নয়। নাফিসা রহমান কিছুই বুঝলেন না। তিনি অবাক হয়ে একবার ভ্রমরের দিকে একবার রেহানার দিকে চাইলেন। তাঁর মুখ দেখেই ভ্রমরের বুঝতে বাকি রইলো না এসব একা নির্ঝরের কান্ড! নাফিসা রহমান এসব কিচ্ছু জানেন না। ধীরেসুস্থে নির্ঝরের কাহিনী সব খুলে বললো তাঁকে। সব শুনে নাফিসা রহমান মৃদু হাসলেন। ভ্রমরের চিবুকটা তুলে ধরে বললেন,’তো? কি ঠিক করলি তুই? পারবি আমার ছেলেকে ছাড়া থাকতে?’
ভ্রমর লজ্জায় লাল হয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। নাফিসা রহমান ব্যাগ থেকে ফোন করে হাসতে হাসতে বললেন,’দেখি জিজ্ঞেস করি আমার কোন ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করছে সে!’
★
নির্ঝর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়েছিলো। সেই ফাঁকেই তাঁকে লুকিয়ে ভ্রমরের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন নাফিসা রহমান। লুকিয়ে দেখা করতে আসার কারণ হচ্ছে ভ্রমর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর নির্ঝর তাঁকে বেশ কড়াভাবে নিষেধ করে দিয়েছে তিনি যিনি ভুলেও ভ্রমরকে রাজি করাতে ঐ বাড়িতে না যান। ভ্রমর যদি স্বেচ্ছায় বিয়েতে রাজি হয় তবে কথাবার্তা এগোবে। নতুবা নয়। কিন্তু ছেলের মনের দিক বিবেচনা করে নাফিসা রহমান হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারলেন না। ছেলেমেয়ে মুখে যতই না বলুক অভিমান করে দুটিতেই কষ্ট পাচ্ছেন তিনি বেশ বুঝতে পারেন। এবং তিনি এ-ও তাদের এই অভিমানের কারণ কোথাও না কোথাও তিনি নিজে। তাই ঠান্ডা মাথায় ভ্রমরকে আরেকবার বোঝাতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এসে রীতিমত অবাক হলেন। তাঁর ছেলে কি সুন্দর করে সব সমাধান করে দিয়েছে! সাপও মরেছে লাঠিও ভাঙ্গে নি। ভ্রমরও রাজি হয়েছে নাফিসা রহমানকেও কিছু করতে হয় নি।
★
দুবার রিং হতেই নির্ঝর বন্ধুদের কাছ থেকে সরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। সালাম দিয়ে বললো,’হ্যাঁ মা বলো।’
নাফিসা রহমান সালামের জবাব দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন করলেন,’কোথায় তুই?’
-‘এইতো একটু ক্যাম্পাসে এসেছি। কেন? কিছু লাগবে তোমার?’
-‘না।’
সংক্ষিপ্ত জবাব নাফিসা রহমানের। তাঁর মুখ থেকে আরো কিছু শোনার অপেক্ষায় চুপ করে রইলো নির্ঝর। নাফিসা রহমান সেটা বুঝতে পেরে গলাটা পরিষ্কার করে কিঞ্চিৎ ঠাট্টার সুরে বললেন,’শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করছিস?’
প্রশ্ন ঠিক মত শুনতে পেলো না নির্ঝর। ওপাশ থেকে সামান্য চেঁচিয়ে উঠে প্রশ্ন করলো সে,’হ্যাঁ?. .কি করছি আমি?’
নাফিসা রহমান হেসে উঠে বললেন,’বিয়ে করছিস!’
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে এসে ভ্রমরকে বলা তাঁর কথাগুলো একদম মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো নির্ঝরের। তাই নাফিসা রহমানের ঠাট্টার আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না সে। বিরক্ত হয়ে বললো,’ উফ, মা! কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো?’
-‘আমি ভ্রমদের বাসায়। সেখানেই তোর বিয়ের খবর শুনলাম।’
এতক্ষনে নাফিসা রহমানের ঠাট্টার কারণ বোধগম্য হলো নির্ঝরের। ফোন কানে নিয়ে লজ্জায় জিভ কাটলো সে। মিস টাইমিং হয়ে গেছে। মা এইসময়ে ভ্রমরদের বাসায় কেন গিয়েছে? ভ্রমর নিশ্চয়ই তাঁকে সব বলে দিয়েছে। উফ! এখন কি বলবে নির্ঝর? এতসহজে মা ছাড়বে না। গলাটা স্বাভাবিক রেখে খুব সাবধানে বিয়ের প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গিয়ে কিঞ্চিৎ শাসনের সুরে বললো,’তোমাকে না বারণ করেছিলাম ঐ বাড়িতে যেতে? কেন গিয়েছো তুমি?’
জবাবটা রেডিই ছিলো নাফিসা রহমানের। একসেকেন্ডও দেরী না করে পাল্টা ধমকের সুরে বললেন,’না এলে তো জানতেই পারতাম না তোর বিয়ে।’
নির্ঝর চুপ করে রইলো। মনে মনে হতাশ হলো সে! কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই। মা ঘুরে ফিরে এই প্রসঙ্গেই আসবেন। অতএব চুপ করে শুনে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই! নাফিসা রহমান মুচকি হেসে বললো,’কি কপাল আমার! এতদিন ছেলে মানুষ করে এখন ছেলের বিয়ের খবর অন্য লোকের কাছে শুনতে হয়। হ্যাঁ রে, এইজন্য তোকে মানুষ করেছিলাম আমি?’
ভ্রমর মুখ টিপে হাসছে। মায়ের বলার ধরণ দেখে নির্ঝরও হেসে ফেললো। নাফিসা রহমান সদা গম্ভীর হলেও ছেলের কাছে কিন্তু তিনি বরাবরই হাসিখুশি, প্রফুল্লময়ী, কোমলহৃদয়া কৌতুকপ্রিয় একজন মা। মায়ের কথার জবাবে নির্ঝর হাসিমুখে বললো,’কি আর করবে বলো? তোমার পছন্দ করা মেয়ে তো আমার পছন্দ হলো না। আচ্ছা! তুমিই বলো, তোমার ছেলে হয়ে একটা বোকা, মাথামোটা মেয়েকে আমি কি করে বিয়ে করি? তাই বাধ্য হয়ে…’
কথাটা সে ভ্রমরকে ইঙ্গিত করেই বলেছে সেই কথা বুঝতে কারো অসুবিধে হলো না। কারণ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ফোনের ওপাশ থেকে কথাগুলো সব শুনছে ভ্রমর। নাফিসা রহমান তাঁকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে হেসে কৃত্রিম শাসনের সুরে বললেন,’চুপ। ফাজিল! তুই বিয়ে করবি না তোর ঘাড় করবে। তোর সাতজন্মের ভাগ্য এমন মেয়ে পেয়েছিস!’
-‘হ্যাঁ। তা না হলে তোমাকে আবার ঐ বাড়িতে যেতে হয়?’
কথাবার্তা অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছে ভেবে নাফিসা রহমান নির্ঝরকে দ্রুত সাবধান করে দিয়ে বললেন,’নির্ঝর!.মার খাবি কিন্তু তুই আমার হাতে!’
নির্ঝর দমলো না। হো হো করে হেসে উঠে বললো,’যার জন্য ছেলেকে মারবে বলছো সে যে তোমাকে সহ্য করতে পারে না সেটা জানো?’
মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ভ্রমরের মুখ। এইমুহূর্তে এই কথাগুলো বলার কি খুব দরকার ছিলো নির্ঝরের? রাগে, দুঃখে চোখে পানি চলে এলো তাঁর। তার ছলছল চোখের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন নাফিসা রহমান। তবে বিন্দুমাত্রও ক্ষোভ কিংবা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন না। বারবারের মতই শান্তভাবে ব্যপারটাকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। কারণ তিনি ভালো করেই জানেন ভ্রমরের ওপর রাগ থেকেই তাঁকে বিব্রত করার জন্য ইচ্ছেকরে এইমুহূর্তে কথাগুলো বলেছে নির্ঝর।
মনে মনে ছেলের ওপর কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেন তিনি। নির্ঝরের এইসব ছেলেমানুষি রাগ তাঁকে আরো বেশি করে ছোট করে দিচ্ছে ভ্রমরের কাছে। এভাবেই আস্তে আস্তে ভ্রমরের সব রাগ নাফিসা রহমানের ওপর জমা হবে। কারণ নির্ঝরকে ভালোবাসে সে তাই নাফিসা রহমানের প্রতি নির্ঝরের অতিরিক্ত ভালোবাসায় কোন দোষ খুঁজে না পেলেও ধীরে ধীরে স্বয়ং নাফিসা রহমানই একটা দোষে পরিনত হবেন ভ্রমরের কাছে। হয়ত একসময় নাফিসা রহমানের অস্তিত্বটাই তাঁর কাছে বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়াবে! হওয়াটাই স্বাভাবিক! নাফিসা রহমান না থাকলে তো নির্ঝর এই কথাগুলোই বলার সুযোগই পেতো না।
কিন্তু, আর যাই হোক, নাফিসা রহমানের মত আত্মমর্যাদা সচেতন মানুষের পক্ষে ছেলের বউয়ের কাছে এমন অযাচিত হতে বেঁচে থাকার মত দুঃখের, লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। তাই নির্ঝরের বোঝা উচিৎ ছিলো সংসারে একসঙ্গে চলতে হলে কিছু ভারসাম্য, কৌশল অবলম্বন করে চলতে হয়। ভ্রমর যদি নাফিসা রহমানের সম্পর্কে কিছু বলেও থাকে নির্ঝরের উচিৎ ছিলো সেই কথাটা চেপে যাওয়া। এভাবে বোকার মত কাজ। করা মোটেই উচিৎ হয় নি তাঁর। এতে করে বিয়ের আগেই সংসারে অশান্তির লক্ষণ দেখতে পেলেন তিনি। অসন্তুষ্ট মনে গম্ভীর গলায় বললেন,’তোর কাছ থেকে এমন ছেলেমানুষি আমি মোটেই আশা করি নি নির্ঝর!’
নির্ঝরের প্রত্যাশিত, আকাঙ্ক্ষিত উত্তরই দিয়েছেন নাফিসা রহমান! জবাব না দিয়ে মুচকি হাসলো সে। হ্যাঁ! ইনিই, এই অসাধারণ মহিলাই তাঁর মা! যিনি আপন মহিমায় সগৌরবে জ্বলজ্বল করছেন পুত্র হৃদয়ে! তাঁর ছেলে হয়ে নির্ঝরের পক্ষে কি আদৌ কোনরকম ছেলেমানুষি করা সম্ভব? আলবত না! কিন্তু ভ্রমরকে বোঝাতে করতে হয়েছে তাঁকে। ইচ্ছে করেই মায়ের কাছে ভ্রমরের কথাটা বলেছে সে। কিন্তু এই শেষ! নির্ঝর শুধু চেয়েছিলো ভ্রমর দেখুক সবার সামনে নিজের নিন্দে শুনেও কতখানি ধৈর্যশীল, কতখানি সংযমী হতে পারে তাঁর মা! কতটা নিখুঁত, যুক্তিনির্ভর হতে পারে তাঁর দূরদর্শীতা! ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদাবোধের দিক থেকে ভ্রমরের সংকীর্ণ চিন্তাচেতনার কতখানি বাইরে নাফিসা রহমান! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’সরি মা।’ নাফিসা রহমান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রেখে দিলেন। ভ্রমর দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো।
.
.
.
চলবে