#ওহে_প্রেয়সী_ভালোবাসি,১৫,১৬ শেষ
মারিয়া মীম (ছদ্মনাম)
পর্ব ১৫
দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর। প্রকৃতি পাল্টায় তার রুপ। আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিতে ছয়টি ঋতুর আবর্তন ঘটলেও প্রভাব দেখা দেয় তিনটির। গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত। এখন প্রকৃতি পুরো দুস্তর শীতের চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছে। কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আশে চারপাশ। দৃষ্টির নিকটে থাকা বস্তুও অদৃশ্যমান। এরই মাঝে কম্বল মুড়ি দিয়ে প্রশান্তির ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে প্রিয়ক। তাকে দেখে একটা দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপল। সেটা পূরন করতেই সব জানালার পর্দা সরিয়ে দিই। তারপর খুব সাবধানে একটা রুমাল ভিজিয়ে এনে কম্বল উঠিয়ে প্রিয়কের মুখের উপর বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা ফেলি। দুয়েক ফোঁটা পড়তেই লাফিয়ে ওঠে প্রিয়ক। আর আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠি। প্রিয়ক রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এসব কি ছেলেমানুষী, প্রিয়তা। পাগল হয়ে গেলি নাকি?”
তারপর মুখের উপর পড়া পানির বিন্দুগুলো মুছে নেয়। আর আমি তখনও হেঁসে চলেছি। এরপর হুট করেই প্রিয়ক আমাকে বেডে ফেলে দিয়ে সেই ভেজা রুমাল আমার সারামুখ গলায় লাগিয়ে দেয়। হঠাৎ এমন হওয়ায় আমি ঘাবড়ে যায়। শীত শীত অনুভূতি হতেই প্রিয়ককে ধাক্কা মে’রে সরিয়ে দিতে চাইলে আমার দুহাত নিজের হাত দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে। আর বলল,
“দেখ এবার কেমন লাগে? ”
কেমন লাগছিল তো তা বুঝতে পারছিলাম না। অদ্ভুত এক অনুভূতি। অস্থির লাগছিল। তার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছিল না। দৃষ্টি নামিয়ে নিই৷ ঠান্ডা অনুভুতি ততক্ষণে কেটে গিয়েছে। আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেই তাকিয়ে আছে। প্রিয়ক মৃদু স্বরে বলল,
“প্রিয়তা৷ ”
প্রিয়কের ডাকে তার দিকে ফিরতেই সে নেশালো কণ্ঠে বলল,
“এমন পাগলামি আর করিস না। এই পাগল একবার পাগলামি শুরু করলে তখন কিন্তু খুব করে পস্তাতে হবে। যা সহ্য করতে পারবি তো?”
প্রিয়কের কথার অর্থ খুব ভালো করেই অনুভর করতে পারছি আমি। হালকা লজ্জাভাব এসে ভর করে। নিজেকে কম্বলের মাঝে লুকিয়ে নিই৷ প্রিয়ক আর কিছু না বলে উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়। প্রিয়ক যেতেই আমি নিচে চলে আসি।
শীত মানেই এক অন্য রকম আনন্দ। চারদিকে নানা রকম পিঠা বানানোর ধুম পড়ে। হরেক রকমের মজার মজার পিঠা। সেই সাথে আছে বাহারি সব খাবার। যা দেখেই মনটা নেচে ওঠে। শুধুমাত্র এই একটি কারনে শীত আমার পছন্দের একটি ঋতু। তবে এসময় কষ্ট লাগে সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জন্য। যা এই শীতের তীব্রতা সহ্য করেও পড়ে থাকে রাস্তার অলিতে-গলিতে। একটা পাতলা কাপড় পর্যন্ত থাকে না অনেকের কাছে। তাদের জন্য শীতটা বড্ড কষ্টের। গরমে তাও সহ্য করতে পারলেও শীতের তীব্রতা যত বাড়ে মানুষের কষ্টের পরিমান ততবাড়ে। এত কষ্ট সহ্য করেও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্ঠা চালায়। তাইতো নিজের অবস্থানের কথা মনে করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে বারবার শুকরিয়া আদায় করি। আর প্রার্থনা ওই সব মানুষগুলোর জন্য।
“আপি আপি! কি ভাবছো তুমি?”
হঠাৎ ডাকে হুস ফেরে আমার। পুনম আমার গায়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাটু ভেঙে ওর সামনে বসে বললাম,
“কই কিছুনাতো। বাট আমার বার্ডটা আজ এত তাড়াতাড়ি উঠেছে কেন? ”
মুখটা ছোট করে পুনম বলল,
“আব্বু উঠিয়ে দিয়েছে।”
বুঝতে পারলাম জোর করে উঠানো হয়েছে ওকে। ওর মন খারাপ দুর করতে বললাম,
“চলো আমরা ছাদে যায়। দোল খাবো।”
“ইয়েয়েয়ে…।”
বলেই লাফিয়ে উঠল। পুনম কে নিয়ে ছাদে চলে এলাম। আসার আগে রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়েছিলাম প্রিয়ক বেড়িয়েছে কিনা। না বের হয়নি। আর মামনি তখন বিভিন্ন রকম পিঠা বানানোয় ব্যস্ত। ছাদে এসে পুনমকে দোলনায় বসিয়ে দোল দিতে থাকি। প্রতি দোলে একটা ঠান্ডা হাওয়া ছুঁইয়ে যাচ্ছে আমাদের। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর এক শীতল স্রোত বয়ে যায় কানের নিচ থেকে ঘাড়ে। থমকে যায় আমি। না এটা প্রকৃতির শীতলতা নয়, অন্য শীতলতা৷ পিছনে ফিরতে গেলেই মৃদু কণ্ঠে শুনতে পাই,
“তোকে ছোয়ার অধিকার শুধু আমার। এই বাতাস কেন, কাউকে সেই অধিকার দেই নি আমি। ”
থমকে যায় আমি। থেমে যায় আমার হাত। অন্য কিছু ফিল করতে পারছিলাম না। মানুষটা দিনদিন কেমন যেন হয়ে উঠেছে। তার পাগলামি বেড়েছে। বেড়েছে আমাকে নিয়ে তার অনুভূতিগুলো। এরই মাঝে পিছন থেকে আমার দুহাতের উপর নিজের দুহাত রেখে হালকা ভাবে দোলনায় দোল দেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
“আই লাভ ইউ, প্রিয়তা।”
বলেই কানের লতিতে হালকা বাইট দিয়ে মৃদু হেসে নিচে চলে যায়। আর আমি! সেখানেই থমকে থাকি। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে চলেছে এক অন্যরকম শিহরণ।
ফাইনাল পরীক্ষার শেষদিন আজ। সব পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছে। হল থেকে বের হতেই দেখলাম প্রিয়ক দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজ গাড়ি নিয়ে আসিনি। আমি প্রিয়কের কাছে যেতেই ও একটা রিকশা ডেকে তাতে আমাকে উঠতে বলে নিজেও উঠে পড়ে। আমি উঠে বসে তাকে বলি,
“আজ গাড়ি আনোনি কেন?”
“রিকসায় ঘুরবো তাই। অনেকদিন হলো রিক্সায় যাওয়া হয়না। ”
আসলেই তাই। লাস্ট কবে গেছি জানা নেই। তাই আর কথা বাড়ালাম না। প্রিয়ক আমাকে নিয়ে একটা পার্কে আসে। চারপাশটা খুব সুন্দর করে সাজানো। বিভিন্ন রঙ বেরঙের দেশি বিদেশি প্রজাতির ফুলে ছেয়ে আছে চারপাশ। এর মাঝে কেউ হাঁটছে তো কেউ পার্কে থাকা বেঞ্চে বসে গল্প করছে। কিছু বাচ্চারা দৌড়াতে ব্যস্ত। তাদের সাথে ছুটছে তাদের মা। প্রিয়ক আমাকে নিয়ে হেঁটে চলেছে চারপাশে। তবে বাচ্চাদের সাথে তাদের মাকে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আম্মিকে এই মুহূর্তে খুব মনে পড়ছে। মাঝে মাঝে কথা হলেও দেখি না অনেক দিন হলো। ওই ঘটনার পর আর মাকে দেখার সুযোগ হয়নি। হুট করেই কান্না পাচ্ছিল আমার।
“এই প্রিয়তা, কি ভাবছিস বলতো?”
প্রিয়কের ডাকে তার দিকে ফিরে তাকাই। আমার মলিন মুখ দেখে তার চোখ ছোট হয়ে এলো। আমার গালে হাত রেখে অস্থির হয়ে বলল,
“খারাপ লাগছে? কি হয়েছে বল? খারাপ লাগলে চল বাসায় চলে যাবো।”
“আম্মিকে খুব মনে পড়ছে। দেখতে ইচ্ছা করছে আম্মিকে।”
আমি আস্তে করে বললাম। প্রিয়ক আমার কথায় মৃদু হেঁসে বলল,
“তাহলে সামনে তাকা “।
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালাম। আমাদের থেকে দু তিনহাত দূরেই আম্মি দাঁড়িয়ে আছে। আম্মিকে দেখে যেয়ে জরিয়ে ধরি। আম্মি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
সারাটা বিকাল আম্মির সাথেই ছিলাম আমরা। সন্ধ্যা নামার পূর্বেই আম্মিকে পৌছে দিয়ে আসি। তবে সে বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আম্মিকে পৌঁছে দিয়ে প্রিয়ক আমাকে সেই সমুদ্রের পাড়ে নিয়ে আসে। এখান থেকে সুর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য যেন চোখ জুরিয়ে যায়। সূর্যের লাল কমলা মিশ্রিত রুপ এক অন্যরকম রুপ সৃষ্টি করে। যা এই মুহুর্তে প্রিয়কের বুকের সাথে মিশে অনুভব করছি। প্রিয়ক পেছন থেকে দুহাতে জরিয়ে রেখেছে। তার হাতদুটি আবদ্ধ হয়ে আছে আমার নিতম্বে। আমার কাঁধে মুখ রেখে সূর্যাস্ত দেখতে ব্যস্ত মানুষটা। হয়তো বা আমাকে দেখতে।
সময়! যাকে চাইলেও নিজের ৃতো করে রাখা যায় না। সে তার মত বয়ে চলে অভিরাম ধারায়। ঠিক তেমনি শীত কেটে গিয়ে প্রকৃতিতে নেমে এলো বসন্তের ছোয়া। নতুন সাজে মুখরিত হয়ে উঠল ধরনী। নানান সাজে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে ব্যস্ত প্রকৃতি প্রেমীরা। প্রেমিক যুগল ব্যস্ত তার মনের মানুষটির মন রাঙাতে। কেউ বা ব্যস্ত তার অভিমানী প্রেয়সীর মান ভাঙাতে। একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে আর হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। সেদিকেই অপরুপ দৃষ্টিতে চেয়ে তাকে প্রেমিক পুরুষটি। বাসন্তি রঙে সবাই নিজেকে সাজালেও প্রেমিক পুরুষটির কাছে তার প্রেয়সীই যেন সবচেয়ে মোহময়ী। প্রিয়কের ফ্লাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পিচঢালা পথে প্রেমিক যুগলের হাতে হাত রেখে চলার দৃশ্য দেখে চলেছি আমি। এমন সময় পিছন থেকে প্রিয় মানুষের ছোয়া নিজের দুগালে পেতেই আপনা আপনি আমার হাত সেখানে চলে গেল। প্রিয়ক দুহাতে রঙ নিয়ে তা আমার গালে লাগিয়ে দিয়েছে। তারপর নিজের আমার গালের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিজেকেও রাঙিয়ে নিয়েছে। তাতে লজ্জা পেলাম আমি। প্রিয়ক ওর বাহু বন্ধনে আমাকে আবদ্ধ করে নেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“এখন নিজেকে এই রঙেই রাঙিয়ে নে। আর তো ৫দিন। তারপর আমার রঙে রাঙাবো। ”
লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিই আমি। প্রিয়ক আমার চিবুক ধরে উঠিয়ে তার ওষ্ঠ ছোয়ায় আমার ওষ্ঠে। চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরি নিজের শাড়ির আঁচল। আর পাঁচদিন পর আমাদের বিয়ে। এবার আর কোনো জোর করে নয়, বরং সেচ্ছায়। দুজনের সম্মতিতে বিয়ে। থাকবে না নিজেদের মধ্যে আর কোন সংকোচ। ভাবতেই অদ্ভুত অনুভূতি ভিতরটা দখল করে নেয়। এর মাঝে প্রিয়ক আমাকে ছেড়ে ভিতরে চলে যায়। একটু পর ফিরে আসে একটি ফুলের গাজরা নিয়ে। তা খুব যত্ন করে পরিয়ে দেয় আমার খোঁপায়। পরানো শেষ হতেই আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে প্রিয়ক বলল,
“এবার ঠিক আছে। একদম পারফেক্ট। আমার বসন্তকন্যা।”
চলবে..??
#ওহে_প্রেয়সী_ভালোবাসি
মারিয়া মীম (ছদ্মনাম)
পর্ব ১৬ শেষ
বিভিন্ন রকম রঙ বেরঙের আলোক রশ্মিতে আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। ব্যস্ততায় দম ফেলানোর উপায় নেই কারো কারো। মামনি আজ সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। যদিও এখানে অনেকেই আছে। সেই সাথে আছে রিক্তা আপু ও। হয়তো প্রিয়কই এনেছে তাদের। আম্মিও এসেছে। তবে বাবা আসেনি। হয়তো আসবেও না। একটা সুক্ষ্ম ব্যাথাা অনুভব হয়৷ বাবার যতই অপছন্দের হই না কেন আমি, বাবাতো আমার কাছে প্রিয় ছিল। দিনশেষে একপলক তাকে দেখলেও তো শান্তি লাগতো। অথচ কত মাস হয়ে গেল বাবাকে দেখিনি আমি। দেখিনি বললে ভুল হবে। দেখেছি তবে তা আড়ালে থেকে। আজ আমার এতবড় দিনে বাবা এখানে নেই। ভাবতেই একটা চাঁপা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো ভিতর থেকে।
আজ আমার গায়ে হলুদ। নতুন করে সবটা করা হয়েছে। আগের বার কোনো মতে শুধু বিয়েটাই সম্পূর্ণ হয়েছিল। তাতে ছিল না কোন জাঁকজমক। আর না ছিল কোনো উৎসব মুখর পরিবেশ। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে উপস্থিত প্রতিটা ব্যক্তি বিভিন্ন ভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করছে। কেউ গান গেয়ে, তো কেউ নাচের মাধ্যমে মাতিয়ে রাখছে এই হলুদ সন্ধ্যাকে। মুনি, হাসি, তন্নি, রিয়ন আর সাথে নয়নাও এসেছে। হলুদের সাজে পিচ্চি নয়নাকে দারুন লাগছে আমার কাছে। গোলগাল মুখশ্রীতে অদ্ভুত এক মায়া আছে। যে মায়ায় সহজেই যে কাউকে বেঁধে ফেলতে পারবে। এর আগে দুতিনবার কথা হলেও আজ মেয়েটাকে অন্যরুপে আবিষ্কার করলাম। না খুব বেশি চঞ্চল আর না গম্ভীর। দুইটা মিলিয়ে একদম পার্ফেক্ট। নয়না বেশ কয়েকবার আমার আশেপাশে এসে ঘুরঘুর করে গেছে। একবার ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি হয়েছে? কিছু বলবে?”
নয়না আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমার বিয়ের সময় ও কি আমাকে এমন সুন্দর লাগবে?”
বলেই প্রশ্নমাখা চোখে তাকিয়ে থাকল। আশেপাশে রিয়নকে খুজলাম। একটু দূরেই এখানে আসা মেহমানদের সাথে কথা বলছে ও। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মৃদু হেঁসে নয়নাকে বললাম,
“হুম লাগবে তো। বাট কতটা সুন্দর লাগবে সেটা তোমাকে রিয়ন ভালো বলতে পারবে। ওকে যেয়ে জিজ্ঞাসা করো।”
নয়না একবার রিয়নের দিকে তাকিয়ে আচ্ছা বলে চলে গেল। তবে রিয়নের দিকে নয়, উল্টো দিকে। মনে হলো লজ্জা পেয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে হেঁসে দিলাম আমি। ঠিক তখনি হুড়মুড় করে হাসি আর তন্নি এসে আমায় জরিয়ে ধরল। হাসি বলল,
“কিরে এত হাসছিস যে। জিজুর কথা মনে পড়ল। ”
“ধ্যাত, কি সব বলিস না। আমি কি এমনিতে হাসতে পারি না। ”
হাসি বলল,
“তা পারিস। কিন্তু এখন সন্দেহ হচ্ছে। ”
“থামবি তোরা। নয়তো মাইর খাবি এখন। ”
“দেখ দোস্ত, তোর হলুদে আইছি। মাইর খাইতে না। তয় ভাবছিলাম কিছু ক্রাস খামু। বাট তোর তো কোন দেবর ও নাই। আচ্ছা প্রিয়ক জিজুর কোনো বন্ধু ও কি নাই। এত নিরামিষ কেন সব?”
বলেই মুখ বানালো। আমি আর তন্নি তা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। তন্নি হাসতে হাসতেই বলল,
“আহারে, বেচারী। ”
তন্নির কথা শেষ হতেই হাসি তন্নির পিঠে কিল বসিয়ে দিল। তন্নি ওকে মারতে নিলেই হাসি দৌড় দেয়। তা দেখে হাসি বাড়ে আমার।
“এভাবে হেঁসো নাগো প্রিয়, বুকে লাগে যে আমার।”
হঠাৎ এমন কথায় স্তব্ধ হয়ে যায়। এই কণ্ঠের মানুষটা যে প্রিয়ক নয় তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম। হালকা ভাবে পিছনে তাকাতেই যা দেখলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। হ্যাঁ এটা আবির।
মনের মাঝে এলোমেলো ভাবনা আসছিল বারবার। আবির এখানে কেন আসবে? কে ডেকেছে ওকে? আমি যখন এসব ভাবনায় ব্যস্ত তখন আবির কিছু একটা আমার মুখের উপর স্প্রে করে দেয়। আর আমি চোখে ঝাপসা দেখতে দেখতে ঢুলে পড়ি সেথায়। ঝাপসা চোখে মানুষটাকে এদিকেই আসতে দেখেছিলাম।
তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা অনুভব হতেই নড়ে চড়ে উঠি আমি। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে যখন জ্ঞান হারানোর পূর্বের কথা স্মরণে আসে তখন জাগ্রত হই। তাড়াতাড়ি উঠে বসতে নিলেই হাতে টান পড়ে। মৃদু আর্তনাদ করে আবারও শুয়ে পড়ি। ভালো করে চোখ মেলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করি। হাতে লাগানো ক্যানেলায় টান পড়েছিল একটু আগে। আশেপাশে চোখ পড়তেই সবার প্রথমে নজরে এলো প্রিয়কের মুখখানি। চোখেমুখে কেমন বিষন্নতার ছাপ পড়েছে। অথচ কিছু সময় পূর্বেও কতটা প্রানবন্ত ছিল মানুষটা। আচ্ছা কত সময় পার হয়েছে? আবির কোথায়? আর আমিই বা এখানে এলাম কখন? আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে প্রিয়ক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“বেশি চিন্তা করিস না। সব ঠিক আছে। ঘাবড়ানোর কিছু হয় নি। আর কিছু হতেও দিবো না। ”
তখনও সবটা আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। তবুও তার দেওয়া আশ্বাস যেন মন বুঝে গেল। নিরবে সম্মতি দিয়ে ওভাবেই শুয়ে থাকি। তবে ভাবনারা থেমে নেই। তারা তাদের মত ছুটে চলেছে। খুব বেশি মানুষ না হওয়ায় মোটামুটি ফাঁকা পরিবেশই ছিল। আম্মি আর মামনি যে সব মহিলারা এসেছিলেন তাদের খাবারের ব্যবস্থা করছিলেন। মুনি, হাসি ওরাও নিজেদের মতো ব্যস্ত ছিল। তা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। এতটুকু সময়ের মাঝে আবির কি করে আসল? আর কি ছিল সেই স্প্রেতে? কি উদ্দেশ্য ছিল ওর? এসব ভাবনার মাঝে দুচোখে নেমে এলো ঘুম। গভীর ঘুম!
একটা অদ্ভুত আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আমার। চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে কারো বাহুবন্ধনীতে আবদ্ধ পেলাম। তারই হার্টবিটের মৃদু আওয়াজে ঘুম ভেঙেছে আমার। তবে তাকিয়ে অবাক হলাম। বাইরে হয়তো এখন গভীর রাত। রাতজাগা নিশাচর পাখি ছাড়া আর কেউ জেগে আছে বলে সন্দেহ। এর মাঝে প্রিয়ক চেয়ে আছে আমার পানে। ঘুমাইনি কেন মানুষটা? এত কিসের চিন্তা তার?
আমাকে চোখ মেলতে দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“কি হয়েছে প্রিয়তা। কষ্ট হচ্ছে? পানি খাবি? ”
বলেই উঠে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে পানি নিতে যায়। আমি তার হাত ধরে বাঁধা দিলে সে আমার দিকে প্রশ্ন চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি মৃদু স্বরে বললাম,
“তোমার কি হয়েছে? ঘুমাই নি কেন? এতো অস্থির হচ্ছো কেন?”
মুহুর্তেই মানুষটা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,
“কই কিছু হয়নি তো। তোর শরীর ভালোনা। তাই চিন্তিত ছিলাম। আর কিছু না। ”
আমি শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। একজন মানুষ ঠিক কতটা ভালোবাসলে তার প্রেয়সীর জন্য এতটা ব্যাকুল হয়? প্রিয়ক আমাকে বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে রাখে। তার হৃৎস্পন্দন তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। প্রিয়ক আমার মাথায় এক হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“কাল বিয়েটা ক্যান্সেল করি?”
আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম। যে মানুষটা সবচেয়ে বেশি আনন্দিত, এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে এসেছে সে আজ এমন কথা বলছে। আস্তে করে শুধু কারন জানতে চাইলাম তার কাছে। প্রিয়ক বলল,
“তোর শরীর ভালোনা। এ অবস্থায় এতটা ধকল নেওয়া ঠিক হবে না। তাই।”
“তার দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।”
“কতটা ঠিক আছিস তা ভালো করেই জানি। একটুর জন্য হারাতে বসেছিলাম তোকে।”
“মানে!”
আমার প্রশ্নের আর কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে ঘুমিয়ে যেতে বলে। মনের মাঝে প্রশ্নরা উঁকি মারলেও আর কিছু বললাম না। চুপ করে প্রিয়কের বুকের মাঝে মিশে রইলাম। তবে বেশিক্ষণ জেগে থাকার শক্তি ছিল না। ঘুমিয়ে পড়ি।
সূর্যের তীক্ষ্ণ আলোক রশ্মি ঘরে প্রবেশ করতেই ঘুম ভেঙে যায় আমার। উঠে বসতে নিলে হাতে টান খাই। মৃদু আর্তনাদ বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। টানের উৎস খুজতেই দেখলাম হাতে স্যালাইন লাগানো।
“আস্তে উঠ। নয়তো ব্যাথা পাবি।”
রিক্তা আপু বলল। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“তুমি এখানে? আর স্যালাইন.. ”
“প্রিয়ক ভাইয়া থাকতে বলেছে আমাকে। ভাইয়া একটু কাজে গেছে তাই। আর তোর শরীর খুব দূর্বল। এজন্য ডক্টর স্যালাইন দিয়ে গেছে। আপাতত কয়েক ঘন্টা এভাবেই থাকতে হবে।”
আপুর কথা শুনে অবাক হই। তারমানে কি প্রিয়ক বিয়ের ডেট পিছিয়ে দিয়েছে?
আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আপু বিয়ের কি হবে তাহলে?”
“তুই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই হবে না। ভাইয়া সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। ভাগ্যিস বেশি কাউকে জানানো হয়নি। নয়তো সম্মানের প্রশ্ন উঠত। ”
আপু মৃদু হেসে জবাব দিল। আমি কিছু বলতে নিবো তার আগে আপু আবর বলল,
“হয়ছে তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। যা করার ভাইয়া করবে। তুই চুপচাপ শুয়ে থাক। নয়তো আমি বকা খাবো ভাইয়ার কাছে।”
সূর্যের তেজ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বেড়ে চলেছে আমার মাঝের অস্থিরতা। সকাল থেকে মানুষটাকে দেখা হয়নি। কোথায় আছে কি করছে কিছুই জানি না। ঘুমটা বড্ড বেশি হয়েছে আমার। সারাটা সময় প্রায় ঘুমেই কাটছে। হাতের স্যালাইন এখনও চলছে। রিক্তা আপু এখন পাশে নেই। ছোট পিচ্ছিটাকে খাওয়াতে গিয়েছে। বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে ডায়ালপ্যাডে গিয়ে খুব পরিচিত নাম্বারে কল দেই। প্রথম রিং হতেই রিসিভ করে মানুষটা। ভেসে আসে তার উত্তেজিত কণ্ঠস্বর।
“তুই ঠিক আছিস? কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো। দেখ একদম উঠার চেষ্টা করবি না। চুপচাপ শুয়ে থাক। নয়তো হাতে ব্যাথা পাবি..।
” আমি ঠিক আছি।”
আমার কথায় মানুষটার কথা আটকে যায়। তারপর বললাম,
” তুমি কোথায়? ”
“একটু কাজে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো। চিন্তা করিস না।”
“খেয়েছো কিছু? নাকি না খেয়েই আছো?”
“হুম খেয়েছি। ”
আরো কিছু কথা বলে ফোন রেখে দেয় মানুষটা। সবটা আমার ঠিক থাকা নিয়ে।
সন্ধ্যার আকাশে সূর্যাস্তের পর আজানের সুমধুর ধ্বনিতে আলোড়িত হয় প্রকৃতি। তার কিছু সময় পর দেখা পায় মানুষটার। ঠিক কী কাজে গিয়েছিল তা জানা নেই আমার। তবে বড্ড ক্লান্ত ছিল তার মুখখানি। একপলক আমার দিকে তাকিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। তখনও শুয়ে আছি আমি। স্যালাইন শেষ হলেও উঠতে মানা। কিছুসময় পর বের হয় প্রিয়ক। শাওয়ার নিয়েছে একবারে। এখন কিছুটা ফ্রেস লাগছে মানুষটাকে। আমার পাশে এসে আমাকে ধরে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসায়। তারপর আমার কপালে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বলল,
“এখন কেমন লাগছে?”
“ভালো।”
“খেয়েছিস কিছু?”
“না।”
“আচ্ছা বস। আমি খাবার আনছি। ”
” তার দরকার নেই। আমি এনেছি। তোমাদের দুজনের জন্যই এনেছি।”
দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম রিক্তা আপু খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে ঢুকছে। ভিতরে এসে টেবিলের উপর খাবার রেখে বলল,
“ফুফি পাঠিয়েছে। তাড়াতাড়ি দুজনে খেয়ে নাও। সারাদিন তো মনে হয় না কিছু খেয়েছো।”
তারপর আপি চলে যায়। প্রিয়ক নিজের হাতে খাবার মাখিয়ে আমাকে খাইয়ে দেয়। সেই সাথে নিজেও খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে প্রিয়ক বলল,
“ছাদে যাবি? ”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে উঠতে নিলে বাধা দেয়। তারপর নিজেই আমাকে কোলে তুলে নেয়। এরপর খুব সাবধানে আমাকে নিয়ে ছাদে আসে। তাকে মানা করলেও শুনে না। ছাদে আসার পর আমাকে দোলনায় বসে দিয়ে নিজে দোল দিতে থাকে। আকাশের চাঁদটা আজ পূর্ন গোলাকার রুপে আছে। হয়তো পূ্র্নিমা আজ। আমাদের মাঝে হয়না কোনো কথা। তবুও মুহুর্তটা অনেকটা রোমাঞ্চকর মনে হয়।
আবারও সেজে উঠেছে পুরো বাড়ি। সাজানো হয়েছে বাড়ির গেট থেকে ছাদ পর্যন্ত সবটাই। রঙ বেরঙের আলোয় আলোকিত চারপাশ। এরই মাঝে বধু বেশে বসে আছি আমি। বাইরে নয়, ছাদেই করা হয়েছে সব আয়োজন। স্টেজে বসে থাকা অবস্থায় তন্নি আসে আমার কাছে। এসেই বলল
“বলেছিলাম না প্রিয়ক ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে। এখন মিলল তো আমার কথা।”
“আসলেই। মানুষটা এতটা ভালো কবে বাসল? বুঝতেই পারলাম না।”
“আমরা তোর হলুদের দিন বুঝেছিলাম। পাগলের মতো করছিল মানুষটা। স্টেজে এসে যখন দেখল তুই শুয়ে আছিস। ভেবেছিল হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিস। কিন্তু কয়েকবার ডাকার পর ও যখন উঠলি না পাগলের মতো করছিল। তারপর হুট করেই নজর যায় গেইটের দিকে। আবিরকে বের হতে দেখে। যা বুঝার বুঝে গিয়েছিল। পাগলের মতো চিৎকার করছিল। তার ডাক শুনে আমরা সবাই ছুটে আসি। তোর চোখে মুখে পানির ছিটা দেওয়ার পর ও তোর জ্ঞান ফেরে না। তখন যদি তুই ভাইয়াকে দেখতিস। তাহলে বুঝতিস। এরপরেই তোকে কোলে করে গাড়িতে বসায়। আমি, তোর ফুফি, আর আন্টি গিয়েছিলাম সাথে। ভাইয়া সারারাস্তা অস্থিরতায় ছিল। হাসপাতালে পৌঁছেই তোকে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়। প্রায় কয়েক ঘন্টা পর তারা বের হয়। এর পুরো সময়টা পাগলের মতো করছিল প্রিয়ক ভাইয়া। ডক্তর যখন জানাই তোর জ্ঞান ফিরেছে এখন ঠিক আছিস তখন যেয়ে কিছুটা শান্ত হয়। তখন আমরা জানতে পারি তোকে এমন একটা কেমিক্যাল দেওয়া হয়েছিল যাতে প্রথম অবস্থায় অজ্ঞান হলেও ধীরে ধীরে মৃত্যু হয়। আর একটু দেরি হলে হয়তো তোকে..”
আর বলতে পারে না তন্নি। আমাকে জরিয়ে ধরে। বুঝতে বাকি নেই মানুষটার সেসময় কি অবস্থা হয়েছিল। অথচ আমার সামনে কতটা শান্ত ছিল। মানুষটার প্রতি নিজের অনুভূতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর আবির! নিজের কাজ হাসিল করতে না পারায় আমাকেই মেরে ফেলতে চেয়েছিল? ভাবতেই অবাক লাগে এক সময় এই মানুষটাকেই নিজের একজন ভালো বন্ধু ভেবেছিলাম। সেই সাথে মনে হয়েছিল তাকে..। আর ভাবতে পারি না। বর এসেছে বর এসেছে ধ্বনি কানে আসতেই এক অদ্ভুত ভালোলাগা ছড়িয়ে পড়ে সারা অঙ্গে।
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের লিংকে দেওয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথে থাকুন।?
https://www.facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa
মৃদু মোমের আলোয় আলোকিত আর বেলি ফুলের সুবাসে মুখরিত হয়ে আছে ঘরটি। খুব সুন্দর করে গোলাপ আর বেলি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। তারই মাঝে মোমবাতির আবছা আলোয় এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রিয়ক আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“পছন্দ হয়েছে? আমি সাজিয়েছি সবটা।”
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাই। প্রিয়ক আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে আমার কাঁধে থুতনি রাখে। মৃদুস্বরে বলল,
“বউয়ের সাজে আমার ছোট পুতুলটাকে এতটা সুন্দর লাগে তা জানা ছিল আমার। ”
বলেই আমার কাঁধে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয়। কেঁপে উঠি আমি। নিজের আঁচল শক্ত করে মুটোয় ধরে রাখি। মানুষটা মাথার উপরের ওরনাটা খুব সাবধানে খুলে পাশে রাখে। আমার ঘাড়ে তার ছোঁয়া পেতেই আবারও কেঁপে উঠি। চাইলেও একচুল ও সরতে পারি না আমি। এক অস্থিরতা বয়ে চলছিল সারা শরীরে। মানুষটার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ছে আমার সারা পিঠ জুরে। তার ছোয়া যত গাড়ো হচ্ছে আমি ততই বরফে পরিনত হচ্ছি।
কাঁপানো কন্ঠে প্রিয়কের ডাকে মৃদু কেঁপে উঠি। মানুষটা সেভাবেই বলল,
“নিজেকে হারাতে দিবি তোর মাঝে? বিলীন হতে চাই তোর ভালোবাসায়। রাঙাতে চাই তোকে নিজের ভালোবাসার রঙে। দিবি কি সেই অধিকার? ”
আমি মুখে কিছুই বলতে পারি না। শুধু তার দিকে ফিরে তাকে জরিয়ে নেই। মানুষটা বোধহয় তার উত্তর পেয়ে গিয়েছে। আমাকে কোলে তুলে নেয়। জানি কেউ দেখবে না আমাদের। তবুও মুখ লুকায় তার বুকের মাঝে। সে আমার কপালে উষ্ণ পরশে আরো আপন করে নেয়। মৃদু স্বরে বলল,
“ভালেবাসি আমার প্রেয়সী। খুব ভালোবাসি।”
সমাপ্ত