কনফিউশন,৪৬,৪৭

0
919

#কনফিউশন,৪৬,৪৭
লেখকঃ #মৌরি_মরিয়ম
পর্ব ৪৬

পাঁচ বছর পর
সারারাত হাসপাতালে নাইট ডিউটির পর সকালবেলা যখন আরশি বাসায় ফিরল, আমরিন দৌড়ে এলো। আরশি বসে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। আমরিন বলল,
“ফুপ্পি, চলো আমরা একসাথে খেলি।”
“স্কুলে যাওনি কেন?”
“আমার স্কুল তো আজ বন্ধ।”
“তাই! আচ্ছা মা আমরা বিকেলে খেলব। সারারাত কাজ করেছি যে, ফুপ্পির এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।”
আমরিন হেসে বলল,
“ঠিকাছে তুমি আগে ঘুমিয়ে নাও।”
আরশি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলে রশ্নি মুখোমুখি এসে বসলো। কিছুক্ষণ এই কথা সেই কথা বলতে বলতে একসময় বলল,
“আরশি সাহিলকে আর বোঝাতে পারছি না।”
“কী বিষয়ে ভাবি?”
“তোর বিয়ের বিষয়ে। দুদিন পরপর একেকটা সম্মন্ধ আসে, অমনি সাহিল তোর বিয়ের ব্যাপারে পাগল হয়ে যায়। এতদিন পড়াশোনার কথা বলে আটকিয়েছি। এখন তো ইন্টার্নশিপ করছিস এখন কী বোঝাব? তার উপর রিসেন্টলি নাকি মনের মত এক ছেলে পেয়েছে।”
আরশিকে চিন্তিত দেখাল। সে বলল,
“বলো যে আমার আরেকটু সময় লাগবে।”
“সেটা তো আমি নিজ থেকেই বলেছি। সাহিল কারণ জানতে চাইছে। যদি তোর পছন্দের কেউ থাকে তার সাথে কথা বলতে চায় নাহলে এই ছেলের সাথে কথা আগাবে।”
“ভাবি তুমি তো জানো সব। আমাকে বাঁচাও।”
“আমি জানি কিন্তু আমি বুঝিনা এটা কেমন সম্পর্ক যেখানে কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলবে না? এভাবে ঝুলে আছিস কোন সাহসে বোন? পরে দেখা যাবে ছেলেটা তোকে ভালোই বাসেনা। তখন কত কষ্ট পাবি বুঝতে পারছিস?”
আরশি হেসে বলল,
“ভাবি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি কোনো চিন্তা করোনা। শুধু আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। আমার ধারণা ও একেবারে বিয়ের কথা বলতে চায়। তাই ভালোবাসার কথা বলছে না। আর না বললেও সব ভাবেই বুঝিয়েছে সে আমাকে।”
“আর যদি তোর বোঝায় কোনো ভুল থাকে?”
“কোনো ভুল নেই বিশ্বাস করো।”
“আরশি আমার কথা শোন তুই নিজেই ভালোবাসার কথা বল। তখন তো একটা এন্সার পাবি তাইনা?”
“আমি বলতে পারব না ভাবি। পারলে এই ৬ বছরে অবশ্যই বলে দিতাম।”
“তাহলে তোর ভাইয়াকে বোঝা। আমার পক্ষে ওকে এখন আর বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল রাতে যখন বিয়ের প্রস্তাবের কথা বলল আমি বোঝাতে গেলাম আর ও রীতিমতো রেগে গেল।”
“আচ্ছা ভাবি তুমি এত প্রেশার নিও না। আমি আজ ভাইয়ার সাথে কথা বলব।”
সন্ধ্যাবেলা আরশি সাহিলের সাথে কথা বলতে বসলো। সাহিল বলল,
“বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ কী?”
“বিয়ে করতে চাইনা ব্যাপারটা এমন না ভাইয়া। তবে এখন চাচ্ছিনা ভাইয়া।”
“আরশি, সব কিছুর একটা পারফেক্ট সময় থাকে। তোর বয়স এখন ২৪/২৫, ইন্টার্নশিপ করছিস। বিয়ের জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময়। বাবা মা থাকলে আমি হয়তো এত চিন্তা করতাম না। অবশ্য বাবা মা থাকলে এতদিনে তোর বিয়ে হয়ে যেত। তারা যেহেতু নেই সব দায়িত্ব কিন্তু আমার।”
আরশি চুপ। সাহিল আবার বলল,
“যদি পছন্দের কেউ থাকে তাহলে আমাকে বল। ছেলে যেমনই হোক তুই যদি মনে করিস ভাল থাকবি আমাদের আপত্তি থাকবে না।”
“কেউ নেই ভাইয়া।”
“তাহলে বিয়ের জন্য আপত্তি কেন? আমার খুব পছন্দের একটা ছেলের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। তোর পছন্দের কেউ না থাকলে আমি চাই ওর সাথেই তোর বিয়ে হোক। ছেলে তোর মত কোয়ালিফায়েড না। এমবিএ করেছে এখন ব্যবসা করছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে সে সেরা।”
“ভাইয়া জোর করোনা। আমাকে একটু সময় দাও। আমি বিয়ের জন্য প্রিপেয়ার না।”
“জোরের তো প্রশ্নই ওঠেনা। তুই আমার একমাত্র বোন। আজীবন সুখে থাকবি এছাড়া কিছু চাইনা। আগে যত প্রপোজাল এসেছে তুই মানা করে দিয়েছিস সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই ছেলেটা আমার খুব পছন্দের। তোকে ওর সাথে বিয়ে দিতে পারলে আমি নিশ্চিতে থাকতে পারব।”
আরশি এখন আর কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। অযৌক্তিক কথা বলে লাভ নেই তাই বলল,
“আমাকে ভাবতে দাও।”
“ঠিকাছে ভেবে আমাকে জানা। ছেলের ছবি আর বায়োডাটা নিয়ে যা।”
সাহিল ব্যাগ খুলে খাম বের করতেই আরশি বলল,
“লাগবে না। আমাকে একটু নিজেকে নিয়ে ভাবতে দাও ভাইয়া।”
আরশি চলে যেতেই রশ্নি এসে ঘরে ঢুকলো। সাহিল প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আছে। আরশি এত সেনসিটিভ যে ওকে কোনো বিষয়ে চাপাচাপি করা যায় না। রাগারাগি করা যায় না। অথচ দিনকাল যা খারাপ পড়েছে এ বয়সী মেয়েকে বিয়ে না দিতে পারলেও শান্তি নেই। সাহিল হঠাৎ রশ্নিকে ধমকে বলল,
“কেমন ভাবি হয়েছো যে ননদের মনের কথা বের করতে পারো না?”
রশ্নি এবার রেগে গেল,
“সাহিল কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ। আরশি কেমন তুমি তা জানো। ও কাউকে কিছু বলেনা।”
“তোমাকে তো সব বলে বলেই জানতাম।”
“হ্যাঁ বলে। তবে আমার জানামতে ওর পছন্দের কেউ নেই। আর থাকলে হয়তো সময় হলে নিজেই বলবে। সময় দাও।”
“সময় দিতে দিতে সব ভালো প্রস্তাবগুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে। এবার আনন্দরও যদি বিয়ে হয়ে যায়?”
রশ্নি চমকে তাকালো সাহিলের দিকে। হেসে বলল,
“আনন্দ! তুমি কি গতকাল থেকে আনন্দর কথা বলছো?”
“হ্যাঁ। কোনোকিছু তো শুনতে চাও না। আরশির বিয়ের কথা বললেই নাখোশ হও।”
“আরশিকে বিয়ের কথা বললে সে নাখোশ হয়। তাই আমিও হই। আমি আরশির মনের বিরুদ্ধে কিছু চাইনা।”
“তা আমিও চাইনা। কিন্তু একবার ভেবে দেখো আনন্দের আরশির বিয়ে হলে কেমন হবে।”
রশ্নি হেসে বলল,
“খুব সুখী হবে আরশি।”
অনেকক্ষণ পর্যন্ত বারান্দায় পায়চারি করতে লাগলো আরশি। সাথে আবোলতাবোল ভাবনাতো ছিলই। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল আজ কাব্যর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতেই হবে। আর কোনো উপায় নেই। রাতে কাব্য ফোন করল। আরশির কন্ঠ শুনেই বুঝে গেল কিছু একটা গোলমাল আছে। বলল,
“কী হয়েছে আরশি? এনি প্রব্লেম?”
“হ্যাঁ অনেক বড় প্রব্লেম।”
“কী?”
“তুমি আসছো কবে?”
“এইতো আর ৪/৫ মাস।”
“কিন্তু তোমার তো পড়াশোনা শেষ। এখনই চলে আসছো না কেন?”
“কিছু ঝামেলা আছে আরশি। মিটিয়েই চলে আসব। তোমার সমস্যার কথা বলো। কী হয়েছে?”
“ভাইয়া আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে।”
“স্বাভাবিক। বোন বড় হল সব ভাইয়েরই দায়িত্ব এটা।”
“অনেকদিন থেকেই ভাইয়া বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। একেকটা প্রোপোজাল আসে আর আমি সময় চাই ভাইয়াও সময় দেয়। কিন্তু এবার মানছে না।”
কাব্য চুপ। আরশি ইতস্তত করতে করতে বলেই ফেলল,
“আমি বরং ভাইয়াকে বলি তোমার সাথে কথা বলতে?”
“আমার সাথে কেন?”
এবার আরশির রাগ হচ্ছে। কাব্য কেন সব জেনেশুনেও ওকে দিয়ে এসব বলাতে চাচ্ছে? ঠিকাছে এখন সময় খারাপ নাহয় সে বলুক। বিয়ের পর এসবের মজা বোঝাবে কাব্যকে। আরশি চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বলল,
“আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।”
কাব্য চুপ। আরশি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল,
“হ্যালো কাব্য?”
“শুনছি।”
“কী করব?”
“আরশি আমি আসলে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কখনো কিছু ভাবিনি।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“মানে বললামই তো।”
“তাহলে এতদিন? এটা কী ছিল কাব্য? পরিনতিহীন একটা সম্পর্ক?”
“আরশি সম্ভাবত তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমরা কি বিয়ে করার মতো কোনো সম্পর্কে আছি?”
এ কথা শুনে আরশির চোখে জল এসে গেল। সে নিজেকে সামলে বলল,
“আমাদের মধ্যে তাহলে কী সম্পর্ক?”
“সব সম্পর্কের নাম হয়না।”
“বি সিরিয়াস কাব্য। তুমি আমাকে ভালোবাসো না?”
“আমি তোমাকে পছন্দ করি।”
“তারমানে ভালোবাসোনা। কাব্য আমাকে শাড়ি পরা দেখে, লিপস্টিক পরা দেখে যেসব বলেছিলে সেসব কী ছিল তাহলে?”
“তোমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রসংশা করেছি। করতে পারি না?”
“চলে যাওয়ার দিন অত রিস্ক নিয়ে কেন এসেছিলে আমার সাথে দেখা করতে?”
“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”
“কেন আমার কপালে চুমু দিয়েছিলে?”
“কপালে দিয়েছি। এটা তো যে কেউ যে কাউকে দিতে পারে।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“সত্যি?”
“আরশি আমি তো অনেক সুযোগ পেয়েছি কখনো কি তোমার সাথে অসভ্যতা করেছি? ”
“উঁহু।”
“আরশি আর ইউ ক্রাইং?”
“নাহ। এত তুচ্ছ কারণে আরশি কাঁদে না।”

চলবে..

#কনফিউশন
লেখকঃ #মৌরি_মরিয়ম
পর্ব ৪৭
আরশি ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দাঁড়ালো। সাহিল এতক্ষণ টিভি দেখছিল। বন্ধ করে ঘরে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় আরশিকে দেখতে পেল। সাহিল বলল,
“কীরে এত রাত হয়ে গেছে এখনো ঘুমাসনি যে?”
“ভাইয়া বিয়ের জন্য আমি রাজি। তুমি ওদের সাথে কথা বলো।”
“এত তাড়াতাড়ি ভাবা হয়ে গেল?”
“হ্যাঁ। তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো।”
“আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি আনন্দের বায়োডাটা আর ছবিটা নিয়ে আসি।”
“লাগবে না। তোমার পছন্দের উপর ভরসা আছে।”
আরশি এ কথা বলে ঘরে চলে গেল। সাহিল ঘরে গিয়ে দেখে রশ্নি ঘুমিয়ে পড়েছে। ডেকে ওঠাতেই বলল,
“সাহিল এতরাতে আবার ডাকছো কেন?”
“আরশি বিয়েতে রাজী হয়েছে।”
রশ্নি চমকে বলল,
“কীভাবে?”
“জানিনা। হুট করে এসে বলল বিয়ের ব্যবস্থা করতে। ওর তো মুখ দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই। কাল সকাল সকাল কথা বলোতো ওর সাথে। কোনো সমস্যা হলো কিনা। সন্ধ্যা পর্যন্ত তো রাজীই হচ্ছিল না৷ হঠাৎ কী হলো?”
“আচ্ছা কথা বলব। এখন তুমি ঘুমোও।”
কাব্য শুয়ে শুয়ে কথা বলছিল। আরশি ফোন রাখতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসে বলল,
“শিট!”
রাজীব ঠিক সেই সময়েই কাব্যকে ডিনারের জন্য ডাকতে ঘরে ঢুকছিল। ওকে এই অবস্থায় দেখে বলল,
“কী হয়েছে তোর?”
রাজীব কাব্যর পাশের ঘরে থাকে। কাব্য ওকে দেখে বলল,
“সর্বনাশ হতে হতে একটুর জন্য বেঁচে গেছি। এবার তুই আরেকটু বাঁচা। টিকিট ক্যান্সেল করতে হবে।”
“টিকিটের জন্য না পাগল হয়ে গেলি? দিন গুনছিলি কবে ঢাকা যাবি। এখন আবার ক্যান্সেল কেন?”
“১৫ দিন পরের টিকিট দিয়ে এখন আর আমার কাজ হবে না। এক্ষুণি ঢাকা যেতে হবে।”
“পাগল হয়েছিস! এক্ষুণি কিভাবে যাবি? এটা কি তোর ঢাকা টু কক্সবাজার যে বললাম আর গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম! কী হয়েছে সেটা বল।”
কাব্য আরশির সাথে হওয়া পুরো কনভার্সেশনের কথা রাজীবকে বলল। রাজীব অবাক হয়ে বলল,
“যাহ দিল তো তোর সারপ্রাইজের বারোটা বাজিয়ে!”
“সারপ্রাইজের বারোটা বাজেনি৷ এখন আমি টিকিট ক্যান্সেল করে এনিহাও কালকের ফ্লাইট ধরব।”
“কালকের ফ্লাইটে সিট কি তোর শ্বশুর বুক করে রেখেছে?”
“আরে তোদের এয়ারলাইন্সে দেখ না। কেউ না কেউ নিশ্চয়ই টিকিট ক্যান্সেল করবে!”
“আমি দেখছি। তবে না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
“আচ্ছা আগে তুই টিকিট ক্যান্সেলের ব্যবস্থা করে দে। আমি দেখি এর আগে কোন টিকিট পাই কিনা। কোনো না কোনো এয়ারলাইন্সে তো ডেফিনিটলি পাব।”
“আচ্ছা।”
রাজীব নিজের ঘরে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে এলো। কাব্যও তার ল্যাপটপ খুলে টিকিট খুঁজতে লাগলো। কাব্যর টিকিট ক্যান্সেল করে রাজীব বলল,
“হয়ে গেছে। তুই পেলি কিছু?”
“কাতার এয়ারলাইন্সে ১১ আর টার্কিশ এয়ারলাইন্সে ৯ দিন পর আছে। এর আগে কোথাও কিছু নেই।”
“কী করবি তাহলে?”
“কী করব আর? টার্কিশ এয়ারে ৯ দিন পরেই যাব। আর এখন আরশিকে ফোন করে প্রোপোজ করব তারপর সাহিল ভাইয়ার সাথে কথা বলব। মাকে তো আগেই বলেছি গিয়েই বিয়ে করব। প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে।”
“তাহলে সারপ্রাইজ দিবিনা? মাত্র ৯ দিনই তো। অপেক্ষা কর। দেখতে দেখতে কেটে যাবে।”
“মেয়েটা কোনোদিন কারো কাছে সারপ্রাইজ পায়নি৷ কিন্তু আমাকে অনেকবার সারপ্রাইজ দিয়েছে৷ তাই ভেবেছিলাম এবার আমি সারপ্রাইজ দিয়ে ওর হাসিটা দেখব। তুই চিন্তা কর ও জানে আমি ৪/৫ মাস পর যাব। অথচ ১৫ দিন পরেই ওর সামনে যেতাম। ৫ বছর পর আমাকে দেখে ও খুব নার্ভাস হয়ে যেত। আমি চুপ করে থাকতাম। ও হয়তো প্রথম কথাটা বলতো কাব্য কেমন আছো? আর আমি উত্তরে বলতাম, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ওর এক্সপ্রেশন টা কেমন হতো ভেবে দেখ।”
“দারুন হবে। তুই আর ৯ টা দিন অপেক্ষা কর ভাই।”
“ইম্পসিবল। আরশি অনেক কষ্ট পেয়েছে। কাল পরশুর মধ্যে কোনো না কোনো ফ্লাইট পেয়ে যাব ভেবেছিলাম। তাই একটু আগে ওসব বলেছি। যেহেতু ৯ দিন পর যাব, যেতে যেতে ১০ দিন পর হয়ে যাবে। সেহেতু এখনই সব বলে দেব। ১০ দিন ধরে ওকে কষ্ট দিতে পারব না।”
“আরে ব্যাটা এখন যে কষ্ট দিবি তা তো তোর সারপ্রাইজ পেয়ে এক নিমিষেই ভুলে যাবে।”
“আরশি কষ্টে কষ্টেই পুরোটা জীবন কাটিয়েছে।আমি এত কষ্ট দিতে পারব না ওকে। সারপ্রাইজের চেয়ে ওর সুখটা বেশি ইম্পরট্যান্ট।”
“কিন্তু এত কষ্ট পাওয়ার কী আছে? ভালোবাসিস না এমন কিছু তো বলিসনি।”
“ভালবাসি সেটাও স্বীকার করিনি। বিয়ের কথা ভাবিনি বলেছি।”
“শোন বুদ্ধি দেই। তুই ওকে ফোন করে বল ৭ দিন টাইম দিতে। ভেবে জানাবি।”
“অসম্ভব। আরশি আমাকে কনফিউজড ভাববে।”
“তাইলে সারপ্রাইজ প্ল্যান বাদ?”
“হ্যাঁ। ভবিষ্যতে বহুত সারপ্রাইজ দেয়া যাবে।”
“তাইলে আর কি! দে প্রোপোজ করে।”
কাব্য হেসে বলল,
“যা ব্যাটা নিজের ঘরে যা। তোর সামনে প্রপোজ করব নাকি?”
রাজীব হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে গেল। কাব্য আরশিকে ফোন করল। কিন্তু আরশির ফোন বন্ধ। একটু ভয় পেয়ে গেল কাব্য। অনলাইনে ঢুকলো মেসেজ দেয়ার জন্য। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আরশির ফেসবুক আইডি ডিএকটিভেট। হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার একাউন্টও পাচ্ছে না। মেইল করতে গিয়ে দেখে মেইল একাউন্টও আর এক্সিস্ট করছে না। এবার টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে গেল কাব্যর। রাজীবের ঘরে গিয়ে বলল,
“রাজীব শেষ আমি।”
“কেন?”
“আরশির ফোন অফ। সোস্যাল মিডিয়াতেও কোনো একাউন্ট খুঁজে পাচ্ছি না।”
“এইটুকু সময়ের মধ্যে এতকিছু?”
কাব্যর প্রেশার বেড়ে গেছে। ঘাড়ের রগ টানছে। ঘাড়ে হাত দিয়ে সারা ঘরময় পায়চারি করতে করতে ভাবছে কী করা যায়। রাজীব চুপচাপ দেখছে ওকে। কাব্য একসময় বলল,
“দোস্ত এখন তো বাংলাদেশ সময় রাত ১ টা। এটা কাউকে ফোন করার জন্য অনেক বেশি রাত?”
রাজীব জানতে চাইলো,
“কাকে ফোন করবি?”
“সাহিল ভাইয়াকে। ফোন করে আরশিকে চাইব। ওকে প্রোপোজ করে তারপর সাহিল ভাইয়ার সাথে বিয়ের কথা বলব।”
“হ্যাঁ এটা করতে পারিস।”
কাব্য সাহিলের নাম্বারে কল করল। কিন্তু তার নাম্বারও বন্ধ। কাব্য বলল,
“এটা কিভাবে সম্ভব? আরশি নিশ্চয়ই ওর ভাইয়াকেও ফোন অফ করতে বলেনি?”
“ভাইয়ার সাথে তোর লাস্ট ফোনে কথা হয়েছে কবে?”
“বাংলাদেশে থাকতে।”
“এতদিনে নাম্বার চেঞ্জ করতে পারে।”
“হায় খোদা মাফ করো!”
“ভাইয়ার ফেসবুকে মেসেজ দে।”
“আমি সাহিল ভাইয়ার সাথে এড নাই। আইডিও চিনি না। দাঁড়া অনন্ত ভাইয়ার কাছ থেকে নেই।”
কাব্য অনন্তকে ফোন করল। অনন্ত ঘুমিয়ে পড়েছিল। এত রাতে ফোন পেয়ে অবাক হলো,
“কী ব্যাপার? এত রাতে তুই ফোন করেছিস! কোনো সমস্যা?”
“না ভাইয়া। সাহিল ভাইয়ার ফোন নাম্বার টা দরকার ছিল।”
“আচ্ছা মেসেজ করে দিচ্ছি।”
“ওকে ভাইয়া। আর সরি তোকে এত রাতে জাগালাম। একটু আর্জেন্ট দরকার ছিল।”
“ঠিকাছে।”
সাথে সাথেই অনন্ত সাহিলের নাম্বার মেসেজ করে দিল কাব্যকে। কাব্য ডায়াল করে দেখে আগের নাম্বারটাই দিয়েছে যেটা ওর নিজের কাছেই আছ এবং এখন বন্ধ। কাব্য আবার ফোন করল অনন্তকে। অনন্ত বলল,
“তোর ভাবি এবার আমার ফোন ভেঙে ফেলবে। বারবার ফোন না করে একবারে সব বল।”
“সরি ভাইয়া। নাম্বারটা বন্ধ।”
“কী বলিস?”
“আর কোনো নাম্বার আছে?”
“না।”
“তোমার সাথে লাস্ট কথা হয়েছে কবে?”
“সেতো অনেকদিন।”
“নাম্বার চেঞ্জ করতে পারে। রশ্নি ভাবির নাম্বার আছে?”
“না ওর বউয়ের নাম্বার দিয়ে আমি কী করব?”
“সাহিল ভাইয়ার ফেসবুক আইডি?”
“সাহিল ফেসবুক চালায় না।”
“রশ্নি ভাবি চালায়?”
“কাব্য পরের বউয়ের খবর আমার কাছে নাই।”
“আচ্ছা তোমাকে বিরক্ত করার জন্য সরি।”
“ঠিকাছে রাখ এখন।”
কাব্য ছটফট করতে লাগলো। টেনশনে চুল টানছে সে। রাজীব বলল,
“এত টেনশন নিস না।”
“আরশির একটা কাজিন ছিল তিরা। আমার সাথে ভাল বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু বিয়েশাদি করে একদম শেষ হয়ে গিয়েছে। বিয়ের পরেও কিছুদিন যোগাযোগ ছিল এরপর কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ওর সাথে যোগাযোগ থাকলেই আরশিকে পাওয়া যেত।”
“এখন আর আফসোস করিস না। ৯ দিনে এমন কিছু পাল্টে যাবে না।”
“আরশি এতদিন ধরে কষ্ট পাবে এটা আমি সহ্য করব না। তুই দেখ কাল কোন ফ্লাইটের টিকিট ক্যান্সেল হয়েছে কিনা। প্লিজ ভাই প্লিজ।”
“একটু আগেই তো দেখলাম।”
“আবার দেখ।”
“আচ্ছা দেখতেছি তুই ঠান্ডা হয়ে বস।”
রাজীব খুঁজে দেখলো কোনো ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়নি। কাব্য এবার দুহাতে মাথা ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো। রাজীব বলল,
“তুই এত টেনশন নিচ্ছিস কেন? আরশি কি সুইসাইড টুইসাইড…”
পুরো কথা বলল না, থেমে গেল রাজীব। কাব্য আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
“আরে নাহ আরশি ওসব করবে না। অনেক শক্ত মেয়ে। ও কষ্ট পাচ্ছে তাই অস্থির লাগছে। আমি ভুল করেছি, তখনই ওকে সব বলে দেয়া উচিত ছিল।”
“নিজের উপর দোষ নিস না। তুই কি জানতি আরশি এইটুকু সময়ের মধ্যে এত কাহিনী করে ফেলবে?”
“লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ একটা অভিশাপ রাজীব। এই ৫ বছরে কত মিস আন্ডারস্ট্যান্ড
িং হয়েছে। আরশি রাগও করেছে কিন্তু এরকম কখনো করেনি। অবশ্য আমিও তো কখনো ভালোবাসা অস্বীকার করিনি।”
রাজীব কাব্যর কাধে হাত রেখে বলল,
“অনেক বেশি ভাবছিস। শান্ত হ। ৯ দিন চোখের পলকে কেটে যাবে।”
“চোখের পলকে কাটবে না। ৯ দিন কাটতে ৯ দিনই লাগবে। পিএইচডি করতে আসাই ভুল ছিল আমার।”
“তুই তো বলেছিলি আরশির যোগ্য হওয়ার জন্যই পিএইচডি করতে এসেছিস। ভুল কিভাবে হলো?”
“জানিনা মাথা কাজ করছে না এখন আমার।”
সকালবেলা রাজীব কাব্যর ঘরে গিয়ে দেখে কাব্য সিগারেট খাচ্ছে। রাজীব অবাক হয়ে বলল,
“কী করলি তুই এটা? ৩ তা বছর কাটিয়ে দিলি সিগারেট না ছুঁয়ে। আর এখন?”
কাব্য তাকাতেই রাজীব দেখল ও কিছুটা কাঁপছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চোখ লাল টকটকে। রাজীব বলল,
“সারারাত ঘুমাস নাই? পাগলের মত দেখাচ্ছে তোকে।”
“মরে যাচ্ছি। একটা রাত কাটাতে পারলাম না ৯ দিন কীভাবে যাবে আমার?”
“আমি আবার দেখছি কোনো ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়েছে কিনা।”
“প্লিজ দেখ।”
রাজীব তার ঘরে গেল। কাব্য গেল পিছুপিছু। রাজীব চেক করে বলল,
“দোস্ত একটা ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়েছে একটু আগে। একটুর জন্য তোর কাজে লাগলো না।”
“কেন?”
“ফ্লাইটটা স্টকহোম থেকে কলম্বো।”
“ফ্লাইট কবে?”
“পরশু রাতে।”
“পরশু রাতে রওনা দিলে পরদিন বিকেলে পৌঁছাব, পরশুর পরদিন বিকেলে কলম্বো টু ঢাকা কোনো ফ্লাইটের টিকিট পাস নাকি দেখ।”
“তুই শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবি?”
“সমস্যা কী? শ্রীলঙ্কায় তো অন এরাইভাল ভিসা।”
“এত ঘুরবি? গথেনবার্গ থেকে স্টোকহোম। স্টকহোম থেকে কলম্বো। আবার কলম্বো থেকে ঢাকা।”
“গথেনবার্গ থেকে ট্রেন ধরলে স্টকহোম ৩ ঘন্টার রাস্তা। আর কমম্বো থেকে ঢাকা ফ্লাইটে ৩ ঘন্টা। ঘোরা হলেও ৬/৭ দিন আগে যেতে পারব।”
রাজীব চেক করে বলল,
“কলম্বো টু ঢাকা বিকেলে নেই তবে রাতে আছে।”
“তাহলে কেটে ফেল।”
“যদি ফ্লাইট ডিলে করে?”
“ডিলে করলে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নিশ্চয়ই করবে না? দোয়া কর এমন কিছু যেন না হয়। আর তাড়াতাড়ি টিকিট টা কাট। নাহলে এটাও মিস করব।”
রাজীব টিকিট কাটতে গিয়ে বলল,
“শিট! স্টকহোম টু কলম্বো সিট টা তো বিজনেস ক্লাস!”
“কেটে ফেল।”
রাজীব অবাক হয়ে বলল,
“বিজনেস ক্লাসে যাবি? তিনগুণ খরচ।”
“তুই টাকার কথা ভাবছিস? এদিকে আমি মরে যাচ্ছি।”
কাব্যর স্টকহোম টু কলম্বো ফ্লাইট ডিলে করেনি। কিন্তু অঘটন ঘটলো কলম্বো টু ঢাকা ফ্লাইটটিতে। ফ্লাইটটি আবহাওয়া জনিত কারণে পিছিয়ে গিয়েছে। পরদিন সকালে যাবে। এবার কাব্য একেবারেই ধৈর্য্যহারা হয়ে গেল। অসহ্য লাগছে তার!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here