#কনফিউশন
#পর্ব ১৫,১৬
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
,১৫
বাসায় ফিরেও আরশি মন খারাপ করে বসে রইলো। আজ পর্যন্ত
কেউ কখনো ওর না হাসার কারণ জানতে চায়নি। শেষে গিয়ে
এমন একজন জানতে চাইলো যাকে ভেবে সে দিনরাত পার করে
দেয়! কীভাবে টের পেলো মানুষটা যে তার হাসি পায় না এজন্য
কোনো কারণ থাকতে পারে? কই তার ভাই ভাবী ছাড়া এমন
করে তো কেউ ভাবেনি এর আগে তার জন্য?
কিছুক্ষণ পর কাব্য মেসেজ পাঠালো,
“ট্রেনের ডিটেইলস তো দিলে না।”
আরশি টিকিট দেখে রিপ্লাই দিলো,
“সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ভোর ৬ টা ২০ মিনিটে ছাড়বে। ঘ বগি, সিট
নং ১৬-১৯।”
কাব্য রিপ্লাই দিলো,
“কাব্য পৌঁছে যাবে।”
আরশি এবার লিখলো,
“আপনি বোর হবেন আমার সাথে যেতে।”
“কেন?”
“আমি বোরিং মানুষ। অত কথা বলতে পারিনা।”
“কথা শুনতে তো পারো?”
“হুম।”
“আমার কথা শুনতে আপত্তি নেই তো?”
“না।”
“তাতেই হবে।”
“আচ্ছা।”
আরশির ইচ্ছে করছিলো আরো কিছুক্ষণ মেসেজিং চলতে
থাকুক কিন্তু কাব্য আর কোনো মেসেজ দিলো না। আরশি এই
প্রথম একটা অদ্ভুত কাজ করলো৷ সে কাব্যর ফেসবুক একাউন্টে
ঢুকলো। কাব্যর ছবিগুলো জুম করে করে দেখতে লাগলো। আজ
পর্যন্ত সে কখনো কাব্যর চোখের দিকে তাকায়নি। এই প্রথম
তাকালো তাও ছবিতে। সাথে সাথেই লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে
গেলো। তিরা ঠিক বলেছিলো কাব্যর চোখে অদ্ভুত একটা মায়া
আছে। কিন্তু চাহনিটা এতো অসভ্য টাইপের যে সে বেশিক্ষণ
তাকিয়ে থাকতে পারলো না। আরশি বাস্তবে সম্ভাবত কখনোই
এই মানুষটার চোখের দিকে তাকাতে পারবে না!
আজ আর সময় কাটছে না। আরশি টের পেয়েছে সে উপরে আসার
পরপরই কাব্য বেরিয়ে গেছে। সারাদিন অপেক্ষা করতে
লাগলো। কান সজাগ রাখলো কখন গেট খোলার শব্দ হবে, কখন
কাব্য আসবে আর সে দোতলার জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে
দেখবে। কিন্তু রাত হয়ে গেছে এখনো কাব্য এলো না। সাহিল
বাড়ি ফিরলে অবশ্য আরশি ব্যস্ত হয়ে পড়লো অতটা আর নজর
রাখতে পারলো না। রাতে শুয়ে পড়ার পর হঠাৎ গেট খোলার শব্দ
শুনতে পেলো আরশি। দৌড়ে জানালার কাছে গেলো। কাব্য
এসেছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার কথা আর মনে
রইলো না আরশি। সে খোলা জানালা দিয়েই দেখতে লাগলো।
কাব্য ভেতরে ঢুকতেই উপরে চোখ পড়লো, অমনি আরশিকে
দেখতে পেলো। দেখেই যখন ফেলেছে আরশি আর লুকালো না।
তবে অস্বস্তি লাগছিলো। কাব্য আরশিকে দেখে হাসলো কিন্তু
এই হাসির বিনিময়ে যে হাসি দিতে হয় তার অভ্যাস আরশির
নেই। সে যেমন গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে ছিলো সেভাবেই দাঁড়িয়ে
রইলো। কাব্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরশি জানালার কাছ
থেকে সরে গিয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে কাব্যকে
মেসেজ দিলো,
“দাঁড়িয়ে আছেন যে? ভেতরে যান। রাত অনেক হয়েছে।”
কাব্য ভেতরে গিয়ে ফোন করলো আরশিকে। কাব্যর ফোন কল
দেখে আরশির হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। গলা শুকিয়ে গেলো। হাত
পা কাঁপতে লাগলো। অবশেষে যখন ফোনটা ধরলো কাব্য বললো,
“তুমি ঘুমোওনি যে? ভোরে উঠতে হবে না?”
“ঘুম আসছিলো না তাই জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আপনি এত রাত পর্যন্ত বাইরে ছিলেন যে?”
“অফিসে আজ আমার ইভনিং শিফট ছিলো। তার উপর ছুটি
ম্যানেজ করতে গিয়ে আরো দেরি হয়ে গেলো।”
“ওহ।”
“ব্যাগ গোছানো শেষ?”
“হ্যাঁ আপনার?”
“এখন গোছাবো।”
“আচ্ছা।”
এরপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ। দুজনেই যেন কথা খুঁজে চলেছে।
একসময় কাব্যই বললো,
“কাল অত ভোরে উঠবে কী করে?
“আমি ভোরে উঠতে পারি। আজান দেয়ার আগে আগে আমার ঘুম
ভেঙে যায়।”
“গ্রেট, তুমি তাহলে ফোন করে আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিও।”
“আচ্ছা।”
“কখন বের হবে তোমরা?”
“পৌনে ছয়টায় স্টেশনের জন্য রওনা হবো।”
“তাহলে আমাকে সোয়া পাঁচটায় উঠিয়ে দিও।”
“ঠিকাছে।”
“রাখি তাহলে।”
“আচ্ছা।”
আরশির মন ভরছিলো না। ফোন রেখে দিলো কেন কাব্য?
রাতে খাওয়াদাওয়া করার পর কাব্য সিগারেটের প্যাকেটটা
খুলে গন্ধ শুঁকে রেখে দিলো। ইদানীং সে একটু পর পর এই কাজ
করে। আগে তার প্রতিদিন দুই প্যাকেট সিগারেট লাগতো।
যেদিন আরশিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় এলো সেদিন
রাতে জেদ করে পুরো প্যাকেট সিগারেট এক রাতেই শেষ
করেছিলো। কিন্তু পরদিন সকালে তার মনে হলো এই জেদ
মূল্যহীন জেদ। এমন করে সিগারেট খেলে সে কখনোই আরশির
কাছে যেতে পারবে না। কিন্তু সিগারেট একদম ছেড়ে দেয়া
তার পক্ষে সম্ভব না। তাই কমিয়ে দিয়েছে। সেই ঘটনার পরদিন
সকালে কাব্য যে প্যাকেট টা কিনেছিলো সেটা এখনো শেষ
হয়নি। এখন শুধু ঘুম থেকে উঠে একটা খায়, দুপুরে খাওয়ার পর
একটা খায় আর রাতে ঘুমানোর আগে একটা খায়। কাব্য যে
টাকা আয় করে তা তার ৭৫% টাকা তার সিগারেটের পেছনেই
চলে যেতো। বাসা ভাড়া সেমিস্টার ফি সব বাড়ি থেকে
আসতো। সেদিন সে তার মাকে ফোন করে বললো,
“মা আমাকে সামনের মাস থেকে আর বাসাভাড়ার টাকা টা
পাঠিও না। সেমিস্টারের শুরুতে শুধু সেমিস্টার ফি দিলেই
হবে।”
মা অবাক হয়ে বললেন,
“সেকী বাবু বাসাভাড়া না পাঠালে ভাড়া দিবি কোত্থেকে
খাবি কী?”
“আমি তো একটা চাকরি করি তাইনা? ছোটো হলেও করি তো।
সেই টাকায় বাসাভাড়া আর খাওয়া হয়ে যাবে।”
“সত্যি বলছিস?”
“হ্যাঁ যদি আবার লাগে, যদি চাই একদম দেবে না।”
“এসব কী বলছিস তুই?”
“মা তুমি কি চাও আমি সিগারেট ছেড়ে দেই?”
“সেতো ছোটোবেলা থেকেই চেয়ে আসছি।”
“তাহলে টাকাপয়সা এতো দিওনা।”
“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার! ঠিকাছে দেবো না। চাইলেও দেবো না।”
সিগারেট না খেয়ে থাকতে যদিও খুব কষ্ট হয় কাব্যর তবুও
মূল্যবান কিছু পাওয়ার জন্য কিছু ত্যাগ তো করাই যায়।
আরশিকে ট্রেনে তুলে দিয়ে সাহিল চলে গেলো। সাহিল চলে
যাওয়ার পর কাব্যকে ফোন করার কথা আরশির। কিন্তু আরশি
ফোন করলো না। ওর কেমন যেন ভয় করছিলো। তাই ট্রেন ছাড়ার
পরেই ফোন করলো কাব্যকে। কাব্য ফোন ধরেই বললো,
“ভাইয়া চলে গেছে?”
“হ্যাঁ।”
“আমি কি তাহলে আসবো?”
“না করলে ফিরে যাবেন?”
কাব্য হেসে বললো,
“হুম তাই বলে তিরার বিয়ে মিস করবো না। বৃহস্পতিবার রাতের
ট্রেনে চলে যাবো।”
“থাক আসুন।”
কাব্য আবারো হেসে ফোন রেখে দিলো। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই
সে চলে এলো। আরশি বসে ছিলো নীচের বার্থের জানালার
পাশে। কাব্য আরশির উল্টোপাশে মুখোমুখি বসলো। তাকে
দেখে সবসময়ের মতোই আরশির হাত পা কাঁপতে লাগলো।
অকারণেই হাত ঘামতে থাকলো। কাব্য ব্যাগ খুলে পাশে
রাখলো। তারপর হেসে বললো,
“সাহিল ভাইয়া যদি জানতে পারে তাকে ফাঁকি দিয়ে তুমি
একটা অপরিচিত ছেলের সাথে ৪৪৯ কিলোমিটার রেলপথ
অতিক্রম করতে যাচ্ছো তাহলে কী হবে?”
আরশি হেসে বললো,
“নো আইডিয়া।”
কাব্য মুগ্ধ চোখে আরশির হাসি দেখলো। তার ইচ্ছে করছিলো
এই হাসি নিয়ে কিছু বলতে কিন্তু পাছে গতকালের মতো
হাসিটা মিলিয়ে যায় তাই আর বললো না কিছু। এতো তাড়া
কীসের?
আরশি জানালার কাঁচের ভেতর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো।
ট্রেন চলছে তার নিজস্ব গতিতে। পেছনে ফেলে যাচ্ছে ইঠ
কাঠের বড় বড় দালান, ফ্লাইওভার। কেবলমাত্র এইসব কিছু
সাক্ষী রয়ে গেলো আরশির আজব কিছু অনুভূতির। একদিকে তার
প্রচন্ড ভালো লাগছিল আগামী ৯/১০ ঘন্টা কাব্যর সাথে
থাকতে পারবে বলে, আরেকদিকে প্রচন্ড নার্ভাস লাগছিলো
এটা ভেবে যে কীভাবে এতোটা সময় সে কাব্যর সাথে থাকবে?
এই অনুভূতি অসহনীয়! কী অদ্ভুত! একই মনে একই মানুষের জন্য
বিপরীত দুইরকম অনুভূতি কী করে হয়?
চলবে…
#কনফিউশন
পর্ব ১৬
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
.
.
“আমি মোটেও কোনো অপরিচিত ছেলের সাথে যাচ্ছিনা।”
কথাটা আরশি সেই জানালায় তাকিয়েই বললো। কাব্য একটু
অবাক হলো। বেশ কিছুক্ষণ পর আরশি আবার একই টপিকে কথা
বললো তাই। সে বললো,
“তাই? কাব্য ছেলেটা তোমার পরিচিত?”
“হুম।”
“কীভাবে?”
“সে অনেকভাবে আমার পরিচিত। প্রথমত, সে আমার ভাইয়ের
বন্ধুর ভাই। দ্বিতীয়ত, সে আমার প্রতিবেশী, আমার ঘরের ঠিক
নিচের ঘরটাতেই সে থাকে। আবার আমাদের গ্রামের বাড়ি
একই জেলায়। এবং সে আর আমি একই রাজ্যের বাসিন্দা, সেই
রাজ্য বইয়ের রাজ্য। তার উপর আর সে আমার ছোটোবোনের এক্স
ক্রাশ!”
শেষ কথাটা শুনে কাব্য হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লো। আরশির
ঠোঁটে মুচকি হাসি, বাঁকা চোখে দেখছে কাব্যকে।
তিরার ফোন এলো আরশির মোবাইলে। কাব্য কিছুতেই হাসি
থামাতে পারছিলো না তাই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
আরশি ফোন ধরলো,
“হ্যালো।”
“জানেমান কতদূর?”
“বলতে পারছিনা। ঢাকা ছাড়িয়েছি কিছুক্ষণ হলো।”
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়। আমার যে কী অবস্থা জানিস তো না।
কত কথা তোকে বলতে না পেরে পেট ফেটে মারা যাচ্ছি।
মালটা আমাকে পাগল করে ফেলেছে, কি ভাব জানিস না!
সবসময় ছেলেদের ভাব দেখে মেজাজ খারাপ করিনা আমি? আর
ওর ভাব দেখলে বারবার ক্রাশ খাই।”
“মাল? মাল কাকে বলছিস তুই?”
“মানে যাদিদ।”
“তিরা হি ইজ ইওর উডবি হাজবেন্ড!”
“উফ তো কি হয়েছে? তোর এই শাশুড়ি গিরি বন্ধ কর তো। শোন
কাব্য আসছে তোর সাথে?”
“তুই ওনাকে আমার সাথে আসতে বলেছিস কেন?”
“আরে বাবা ছেলেটা এতোদূর থেকে একা আসবে নাকি? তুই তো
একাই আসছিস তোর সাথে আসলে ক্ষতি কী?”
“কোনো ক্ষতি নেই।”
“কোথায় সে আসছে নাকি?”
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা সাবধানে আয় তোরা। আমি রাখছি।”
“আচ্ছা।”
কাব্য কেবিনের বাইরে গিয়ে জানালার ধারে দাঁড়ালো।
সিগারেটের প্যাকেট টা খুলে গন্ধ শুঁকে রেখে দিচ্ছিলো ঠিক
সেই সময়ে কাব্যর মনে হলো সিগারেটের পাকেট টা কথা বলে
উঠলো,
“বেঈমান, প্রতারক, মীরজাফর। গতকাল রাতেও খাসনি। আজ
সকালেও খাসনি। শেষ পর্যন্ত তুই আমাকে ছেড়েই দিচ্ছিস
সামান্য একটা…”
কাব্য বিড়বিড় করে বললো,
“চুপ একদম চুপ। সামান্য একটা কী? তুই সামান্য, তোর বাপ
সামান্য! আরেকবার গলাবাজি করলে একদম গলা টিপে মেরবো
ফেলবো। শালা এতদিন আমার কতো টাকা খসিয়েছিস হিসাব
দে আগে।”
পাশেই একটা মেয়ে তাকিয়ে ছিলো কাব্যর দিকে। এভাবে
সিগারেটের প্যাকেটের সাথে কথা বলতে দেখে মেয়েটা ফিক
করে হেসে ফেললো। পাগল ভাবলো না তো ওকে আবার! কাব্য
দ্রুত কেবিনের দিকে গেলো। নক করতেই আরশি বললো,
“আসুন।”
কাব্য ভেতরে ঢুকে আবার আগের জায়গায় বসলো। আরশি
ভেবেছিলো এই ফাঁকে কাব্য একটা সিগারট খেয়ে আসবে।
কিন্তু একদমই সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছেনা আরশি। সকালেও
পায়নি। তাই জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন?”
কাব্য অবাক হয়ে বললো,
“কই না তো।”
“সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছিনা।”
“কমিয়ে দিয়েছি।”
অবাক হলো আরশি,
“হঠাৎ?”
“না মানে আমার মা সিগারেট খাওয়া একদম পছন্দ করেনা।
আসলে দোষ তো আমার না। দোষ হচ্ছে বড় ভাইয়ের। ক্লাস
সিক্সে পড়ি তখন সেই আমাকে সিগারেট খাওয়া শিখিয়েছে।
তাকে দেখতাম অনেক স্টাইল করে সিগারেট খায়, একদম
হিরোদের মতো লাগে। এটা দেখেই ইন্সপায়ার হই। এরপর আস্তে
আস্তে নেশা হয়ে যায়। মা আমাদের দুজনকে এতো মারতো তাও
আমরা ছাড়তে পারতাম না। শুধু মা কেন দাদা, দাদী, বাবা সবাই
মারতো। একসময় থেকে ভাইকে আর কেউ মারে না, কিন্তু মা
আমাকে এখনো মারে! সবসময় এই নিয়ে মা আর আমার
রাগারাগি চলে। মাঝেমাঝে মায়ের জন্য মায়া হয়। অনেকবারই
ছাড়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু একেবারে ছাড়তে পারিনা তাই
কমিয়ে দিয়েছি। কমাতে কমাতে কখনো যদি ছাড়তে পারি!”
“ওহ আচ্ছা।”
“যাই হোক ফোনে কথা বলার সময় তোমার বোন কাকে মাল
বলছিলো?”
একথায় কী যে হলো আরশি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। কাব্য
খেয়াল করলো ব্যাপারটা কিন্তু বলে যখন ফেলেছে ফিরিয়ে
তো নিতে পারবে না তাই বললো,
“সরি আমি তোমাদের কথা শুনতে চাইনি। আমি কেবিনে
ফিরছিলাম ঠিক তখনই শুনলাম তুমি ওকে জিজ্ঞেস করছো
কাকে মাল বলছিস? পরে এটা শুনে আমি আবার ফেরত চলে
গেছি।”
আরশি চুপ। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য বললো,
“কাকে বলছিলো?”
“ওর হবু বরকে বলছিলো।”
কাব্য হেসে দিলো। বললো,
“জব্বর বৌ পাচ্ছে কিন্তু ছেলেটা! আচ্ছা তিরা যার যার উপর
ক্রাশ খায় সবাইকেই এরকম কিছুনা কিছু উপমা দেয় তাইনা?”
আরশি মুচকি হেসে বললো,
“হুম।”
“সেদিন আমাকে বলছিলো সে নাকি একবার এক হসপিটালে
ভর্তি হয়েছিলো তখন এক ইন্টার্নি ডাক্তারের উপর ক্রাশ
খেয়েছিলো। তাকে নাকি টসটসে বলতো।”
আরশি এবার হেসে ফেললো। কাব্যর দিকে তাকানোর সাহস
নেই৷ একভাবে এতোক্ষণ নিচেও তাকিয়ে থাকা যাচ্ছেনা তাই
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। কাব্য মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো
আরশির সে হাসি। এই হাসি দেখলে বুকের ভেতরটা এমন অস্থির
হয়ে যায় কেন বোঝেনা সে৷ কাব্য হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার বোন আমাকে কী বলতো? যখন আমার উপর ক্রাশ
খেয়েছিলো?”
আরশির মনে পড়তেই আবারো অজানা কারণে লজ্জা পেলো।
হাসিও বেড়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে সে ওড়নার আঁচল দিয়ে মুখ
চেপে ধরে বাইরে তাকিয়ে রইলো। কাব্যর ইচ্ছে করছে
আরশিকে আরো আরো লজ্জা দিক। কারো লজ্জামাখা মুখ
এতো সুন্দর হয়! কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা এক ধরনের মানসিক
অত্যাচার হয়ে যাবে যেহেতু আরশি তার কেউই না। শুধু বললো,
“বলো না।”
আরশি না তাকিয়েই বললো,
“আমি বলতে পারবোনা প্লিজ। আপনি তিরাকেই জিজ্ঞেস
করে নেবেন। ও বলে দেবে।”
“আচ্ছা ঠিকাছে।”
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। এরপর আরশি বললো,
“চা খাবেন?”
“হ্যাঁ চা তো একটু খেতেই হবে। একটু পরেই হয়তো চা ওয়ালা
আসবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো।”
আরশি ব্যাগ থেকে একটা ফ্লাস্ক বের করলো। কাব্য দেখে
বললো,
“বাপরে বাপ চা বানিয়ে এনেছো?”
“আপনার চাওয়ালার জন্য অপেক্ষা করা আমার কর্ম নয়।”
আরশি ফ্লাস্কের ঢাকনার কাপে চা ঢেলে কাব্যকে দিলো।
কাব্য বললো,
“তুমি আগে খাও।”
“আপনি আগে।”
“না তুমি।”
“আপনি আমার সাথে যাচ্ছেন সুতরাং আমি যা বলবো তাই
শুনতে হবে।”
আরশির শান্ত গলায় একটুখানি ঝাঁজ দারুন লাগলো কাব্যর। তাই
আরশির কথাই মেনে নিলো। চা খেয়ে কাপ ফেরত দিতেই
আরশি সেটাতে আবার চা ঢেলে নিজে খাওয়া শুরু করলো।
কাব্য অবাক হয়ে দেখলো আরশি কাপটা না ধুয়েই নিজের জন্য
চা ঢেলে নিলো। সে খুব ভালোভাবেই জানে মেয়েরা কখন এই
কাজ করে। তনিকাও তার খাওয়া কাপে চা খেতো, তার খাওয়া
গ্লাসে পানি খেতো। তার আধখাওয়া সব খাবারও খেতো।
এমনকি তার আধখাওয়া সিগারেটেও টান দিতো। এই
সবকিছুতেই তনিকা রোমান্টিসিজম খুঁজে পেতো। কাব্য বললো,
“আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি?”
আরশি মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই বেরিয়ে গেলো কাব্য।
ট্রেনের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। খোলা বাতাসে
ভালো লাগার কথা কিন্তু লাগছে না। অমনি একটা সিগারেট
ধরালো। সিগারেটে টান দিতে মাথাটা কিছুটা কাজ করতে
লাগলো। ভাবতে লাগলো সে কি এমন কিছু করেছে বা করে
যাতে আরশির মনে হয় যে কাব্য তার প্রতি দুর্বল? আরশিকে
বোঝা দায় তবুও আরশি তাকে চান্স দিচ্ছে এটা ঠিক। আরশি
কেন তাকে চান্স দিচ্ছে? আরশি কি দূর্বল হয়ে পড়েছে?
আরশির কি তার জন্য বিশেষ কোনো অনুভুতি আছে? নাকি
আসলে সবকিছুই স্বাভাবিক। সেই বেশি ভাবছে?
পরক্ষণেই আবার ভাবলো সে যা করে আরশির জন্য, আরশিকে
দেখার জন্য, আরশিকে জানার জন্য; এসব আসলে সে কেন করে?
আরশির প্রতি তার অনুভূতি টা ঠিক কী? এটা বুঝতে তার কতদিন
লাগবে? হাতের সিগারেট টা শেষ করে আরেকটা সিগারেট
ধরালো কাব্য!
চলবে…