কলঙ্কিনী,৩য় পর্ব

0
805

কলঙ্কিনী,৩য় পর্ব
লেখনীতেঃ রাফিজা আখতার সাথী
,
সন্ধ্যার দিকে, সারা মেইন রোডের ধার দিয়ে হেটে চলেছে। খুব কষ্ট করে হাটছে কিন্তু দেহ দুর্বল হওয়ার কারণে যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে।
পাশ কাটিয়ে একটা গাড়ি যাওয়ার সময় দাড়ালো।
,
-আপু আপনার কি কোনো হেল্প লাগবে?
,
-না আমি ঠিক আছি।
,
কথাটা বলার সাথে সাথে সারা তার আশে-পাশে আরো দুইজন মানুষের উপস্থিতি টের পেলো। এই লোকগুলো ঐ গাড়ির ভিতরেই ছিলো।
রাতে এমন একটা সুন্দর মেয়েকে দেখে তাদের মনের ভিতর অন্য কিছু কাজ করছে।
,
সারা লোকগুলোর কাছ থেকে একটু দুরে গিয়ে দাড়ালো। মানুষ গুলোকে কেন জানি ওর একটুও ভালো লাগছেনা। কথার ভিতর একটা অন্য ভাব আছে যেগুলা প্রকাশ করা যায়।
,
গাড়ির চালক লোকটা সারাকে চুপ থাকতে দেখে আবার বলল,
,
-কি ব্যাপার সোনামণি, কথা বলছোনা কেন? আবার আমাদের থেকে দুরেও সরে যাচ্ছো।
,
সারা লোকগুলোর মতলব ভালো ভাবেই বুঝে গেছে। কিছু না ভেবেই পালাতে গেলো। কিন্তু পুরুষ মানুষের সাথে দৌড়িয়ে পেরে ওঠে না সারা। তাদের হাতে ধরা পড়ে যায়। চিল্লাচিল্লি করতে থাকে কিন্তু আশেপাশে সাহায্য করার মত কেও ছিলো না। লোকগুলো সারাকে জোর করে গাড়িতে তুলে ফেলে।
,
কাপড় দিয়ে চোখ আর মুখ বেধে ফেলে।
,
,
সারাকে বিছানায় ফেলে একে একে নিজেরদের শার্টের বোতাম খুলতে থাকে লোকগুলো।
,
-আপনাদের দোহায় লাগে আমাকে ছেড়ে দিন।
,
এক খ্যাকখ্যাক করে হেসে বলে,
,
-ছেড়ে তো দেবোই সুন্দরী। তার আগে….. হাহহা।
,
সারার বুক কেপে ওঠে। এই জানোয়ার গুলো থেকে নিজেকে বাচাবে কিভাবে। কলঙ্কিনীর গায়ে আর কত কলঙ্ক লাগবে। সারা শেষ বারের মত অনুনয় করতে থাকে।
,
-আপনাদের পায়ে পড়ি, আমাকে ছেড়ে দিন। আমার গর্ভে সন্তান আছে। আপনারা এতো বড় পাপ করবেন না।
,
-সুন্দরী, তোমাকে দেখে তো ক্লাস নাইনের মেয়ে মনে হচ্ছে। তা পেটের বাবুটার বাবা ঠিকঠাক আছে নাকি আমরা স্বীকৃতি দেব।
,
লোকগুলোর হাসি সারার দেহে ঘিন ঘিন লাগিয়ে দিচ্ছে। খারাপ মানুষের ভাষা কোনোদিন ভালো হতেই পারে না। এদের থেকে বাচার কোনো উপায় নেয় সারার।
সারার উপর যেই না ঝাপিয়ে পড়বে অমনি সেই সময় দরজা ভেঙে পুলিশ প্রবেশ করে।
,
-আজকে তোরা আমাদের হাত থেকে বাচতে পারবিনা। ইয়াবা বিক্রি করে অনেক টাকা কামিয়েছিস। আর এখন মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছিস!
বাইরের আলো আর কোনোদিন দেখতে পারবি না।
,
সারা পুলিশকে দেখে দেহে যেন প্রাণ ফিরে পায়। তাড়াতাড়ি লোকগুলোর পাশে কাটিয়ে দৌড়ে পুলিশের কাছে চলে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে হাওমাও করে কাদতে লাগে আর বলে,
,
-আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে যদি আপনারা না আসতেন তাহলে হয়তো…….
,
অতিরিক্ত কান্না করার ফলে সারা ঠিক মত কথা বলতে পারছেনা।
,
পিছন থেকে লোকগুলোর ভিতর থেকে একজন বলে উঠলো,
,
-তোমাকে যে ৫০০০ টাকার চুক্তি করে একরাতের জন্য নিয়ে আসলাম। আর এখন পুলিশকে পেয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করছো।
,
সারা যেন আকাশ থেকে পড়লো। ওদের এহেন কথাই সারা নিজের কথাই হারিয়ে ফেলেছে।
মানুষ নিচে নামতে নামতে কোথায় চলে গেছে? একটা নিরীহ মেয়েকে তুলে এনে তার নামে এমন কলঙ্ক লাগিয়ে দেবে?
নিরীহই বা কোথায় সারা তো কলঙ্কিত আরেকটু বেশি কলঙ্ক লাগলো।
কিন্তু এই কলঙ্ক কি এখানেই থেমে থাকবে নাকি আরো বাড়তে থাকবে?
,
একজন মেয়ে পুলিশ সারার চুলের মুঠি ধরে,
,
-এই পতিতার বাচ্চা। এতো ভালো সাজার নাটক কিভাবে করিস?
,
-বিশ্বাস করুন। এই লোক গুলো আমাকে তুলে এনেছে। এখন নিজেরা ধরা পড়ে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
,
,
পুলিশ আর কোনো কথায় শোনেনা। সারা আর বাকি আসামিদের থানায় নিয়ে চলে যায়।
,
এদিকে এলাকার বড় ইয়াবা ব্যাবসায়ীরা পাকড়াও হয়েছে সেটা মিডিয়ার কানে পৌছে যায়। তারা সাথে সাথেই থানায় চলে আসে।
পুলিশের কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে তারা সারাকে বাজারে মেয়ে বলে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরে।
,
অনেক মিডিয়ার কাজ শুরু থেকে কিছু না জেনেই মুখের কথা প্রচার করা। যার জন্য সারার গায়ে নতুন কলঙ্কের কালী লেগে গেলো।
,
নেহা আর নাসরিন বেগম টিভিতে শুধু বানোয়াট একটা প্রচারণা দেখে। যেখানে না দোষ আছে, সাংবাদিকদের, না সারার আর নাই বা পুলিশদের।
,
ঐ মানুষ রুপি জানোয়ার গুলোর জন্য সব আজ অপবাদের উপর অপবাদ সারার ঘাড়ে এসে পড়লো
,
,
সবাইকে জেলের ভিতর ঢুকাতে গেলে সারা বারবার আকুতিমিনুতি করতে থাকে আর কথা একবার শোনার জন্য।
,
ওসি মিসেস রেহেনার সামনে বসে আছে সারা, (পুলিশের পদ সম্পর্কে আমার কোনো আইডিয়া নেই ভুল হলে মাফ করবেন)
,
-হ্যা বলো তুমি কি বলতে চাও।
,
সারার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।
,
-তুমি ইচ্ছা মত বানিয়ে বানিয়ে সব কিছু বলবা আর আমি বোকার মত মেনে নেবো?
,
-আমার পেটের সন্তানের কসম খেয়ে বলছি। আমার কোনো অপরাধ নেই। আপনি যাচাই করতে পারেন।
,
মিসেস রেহেনা লকাপের ভিতর গিয়ে ঐ তিন জনকে ভয় দেখায় যে সত্য কথা না বলে ক্রসফাইয়ারে দেবে।
মৃত্যু ভয় সবাই পায় তারাও পেয়ে স্বীকার করে যে তারা মেয়েটাকে জোর করে তুলে এনেছে।
,
মিসেস রেহেনা , যে মানুষটা পুলিশের চাকরি জীবনে কোনোদিন মাথা নিচু করেনি সে আজকে সারার হাত ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে।
,
-আমাকে তুমি মাফ করে দাও মা। আমার আগেই তোমার কথা শোনা উচিৎ ছিলো। আমার এই অপরাধের যে কোনো ক্ষমা নেই!
,
-আপনি এমন বলবেন না। আপনি যেটা ভালো মনে করেছে সেটাই হয়েছে। তাছাড়া লোকগুলো সেই সময় যে ভাবে কথাগুলো বলছিলো সেটা বোঝার ক্ষমতায় ছিলো না যে সেগুলো মিথ্যা, বানোয়াট কথা। কলঙ্ক তো আমার গায়ে লেগেই আছে আরো একটু লাগলো এই আরকি।
,
-তুমি তোমার শ্বাশুড়ি কে কেন বলোনি আসল সত্যটা?
,
-তার যে সত্যটা হজম করার মত দেহের অবস্থা নেই। যদি বলি তাহলে তিনি মারা যাবে। আমি কি করে তাকে মেরে ফেলি। যেই বুকে আমাই আশ্রয় দিয়েছে আমি কিভাবে সেই বুকটাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিই।
,
,
,
চলবে
,
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here