কলঙ্কিনী,৫ম পর্ব
লেখনীতেঃ রাফিজা আখতার সাথী
-তবুও তোমাকে সত্যিটা তোমার শাশুড়িকে জানানো উচিত ছিল। বিনা অপরাধে নিজের নামে কলঙ্কিনীর টাইটেল লাগিয়ে কি লাভ?
,
-আমি পারিনি! আমি পারিনি! একজন মাকে তার সন্তানের মৃত্যুর খবর দিতে পারিনি। কিভাবে বলি তোমার বুকের মানিক এই দুনিয়ায় নেই। জানেন পৃথিবীতে সব থেকে বড় বোঝা কি? বাবামায়ের কাছে তার সন্তানের বোঝা।
কোনদিন বলতেই পারবো না যে আমান এই পৃথিবীতে নেই।
সারাজীবন কলঙ্কিনীর তকমা নিয়েই থাকবো।
,
রেহেনা বেগম চুপ করে সারার কথা শুনছে, মেয়েটা কথা স্বার্থপর আসলেই স্বার্থ পর, নাহলে পরের জন্য কেও নিজেকে খারাপ বানিয়েও বেচে থাকতে পারে?
,
সারা একটু চুপ করে আবার বলতে লাগলো,
,
-একবার তো আমার নামের পাশে কলঙ্কিনীর তকমা লেগে গিয়েছে। এটা মুছে ফেলা যাবে না।
মানুষ হাজারটা ভালো কাজ করলে লোকজন তাকে মনে রাখে না।
কিন্তু তার নামে একটা খারাপ কথা শুনলে সবাই তার চেহারা মুখস্ত করে রাখে।
আমারটা ঠিক তেমনি হবে।
,
-আচ্ছা সারা, আমার কিন্তু একটা জিনিস এখনো পরিস্কার না সেটা হল, যেদিন তোমার শাশুড়ি জানতে পারল তুমি প্রেগন্যান্ট সেই দিন সে ফোনে কার সাথে কথা বলছিল।
সেটা যদি তোমার স্বামী না হয়ে থাকে তাহলে কে ছিল। সে তোমার কি কোনো বন্ধু?
,
সারা বিশেষ রেহেনার কথাটা শুনে সেটা ভাবুক হয়ে গেল,’ উনি তো ঠিক কথাই বললেন। তাহলে সেদিনের লোকটা কে ছিল? আমিতো এতো পরিমাণ শকে ছিলাম যে এই কথাটা আমার মাথায়ই আসেনি। কে ছিল সে?’
তারপর সারা কিছুটা ভেবে নিজেই বলল,
,
-এমনও তো হতে পারে যে। আমান যে পুলিশের ফোন ব্যবহার করত সেই পুলিশ টাই কন্ঠ বদলিয়ে মায়ের সাথে কথা বলেছিল। কারন আমি তো আগেই অনুরোধ করেছিলাম আমানের লাশটা যেন বাড়িতে না দেওয়া হয়, তাই হয়তো একটা মায়ের বুকে সন্তানের লাশ দেওয়ার থেকে সবার অজান্তেই সে সন্তানের জায়গাটা পূরণ করে দিতে চাচ্ছে।
,
,
মিসেস রেহেনা নিজের চেয়ার থেকে উঠে সারার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
– কিছু মনে করো না সারা। আমি একটা কথা বলি আমি তো পুলিশ তাই সবকিছু সন্দেহের চোখে দেখি।
বিষয়টা তো এমনও হতে পারে যে তোমার স্বামী মানে আমান, সে কোনদিনই জেলে যায়নি, কোন শর্ট সার্কিটের আগুনে মারা যায়নি।
সবকিছুই তো তার প্লানও হতে পারে।
,
,
মিসেস সাবিনার কথা শুনে সারা কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে গেলো তারপর হতাশ কণ্ঠে বলল,
,
– দেখুন ম্যাম একটা মানুষের নিজের মৃত্যু নিয়ে নাটক করার তো কোনো মানে থাকতে পারে না।
সে কেন নিজেকে আড়াল করে রাখবে। যদি বেঁচে থাকে এতে তার লাভটা কি?
,
মিসেস রেহেনা একটা লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
,
– আমরা চোখের সামনে যা দেখি তার অনেক কিছুই সত্য নয় আর যেটা তোমার দৃষ্টির বাইরে ঘটেছে সেই জিনিস কিভাবে সত্য বলে মেনে নেওয়া যায় বলোতো? আমি তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কথাগুলো বলছি না সারা। জাস্ট সন্দেহ হল তাই বললাম।
যাক ওসব কথা এখন আমার সাথে চলো।
,
,
সারা মুখের দিকে তাকিয়ে রইল,’ সাথে যাবে মানে কোথায় যাবে?’
,
মনের ভাবটা মিসেস রেহেনা বুঝতে পারলো, তাই বলল,
,
– আমার বাড়িতে যাবে। বাড়িতে আমি একাই থাকি একটা মেয়ে আছে সে থাকে দেশের বাইরে আমার হাজব্যান্ড সেও দেশের বাইরে থাকে ৩মাস পর পর দেশে আসে। যায়হোক চলো এখন,
,
সারার একটা আশ্রয়ের খুবই দরকার ছিল। তাই সে না করতে পারলো না।
এমনিতেই প্রেগন্যান্সির 6 মাস চলছে এই সময় তার একটা নিরাপদ আশ্রয় চায় যেখানে সে ভালো থাকতে পারবে, তার সন্তান ভালো থাকতে পারবে।
কাছের মানুষ তো কেউ নেই।
সন্তান পৃথিবীতে আসলে তাকে নিয়ে তবু পৃথিবীর সমস্ত অশুভ শক্তির সাথে লড়তে পারবে।
,
মিসেস রেহেনা বাড়িতে সারা একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলে
,
– ‘দেখো এই রুমটা তোমার। কোন সমস্যা হলে আমার বাড়ির কাজের লোক আছে তাদেরকে বলবে। তোমার সমস্ত সাহায্যে তারা চলে আসবে।
আর কোন চিন্তা করবে না।
যে মানুষটা চলে গেছে তার জন্য কষ্ট পেয়ে
যে আসতে চলেছে তাকে কষ্ট দিওনা।
মনে রাখবা তুমি যদি কোনো নড়বড়ে ঘরের চালা হও তো তোমার গর্ভের সন্তানকে সেই ঘরের একটা মজবুত খুঁটি হবে একদিন। নিজের খেয়াল রেখো আমি সন্ধ্যায় ফিরবো। এখন আসি।
,
সারা গুটি গুটি পায়ে বেডের উপর বসে নিজের পেটে হাত দিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
-“কলঙ্কিনী নাম শুনেও কষ্ট লাগে না শুধু তোর জন্য।
শুধু তোর জন্য বেচে আছি। আমি চাই তুমি একদিন বড় হবি। মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবি।
,
,
,
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে সারা বিছানায় শুয়ে আছে।
,
আমানের সাথে কাটানো মুহুর্ত নিয়ে ভাবছে। মানুষটাকে বেশিদিন কাছে পায়নি সারা। মাত্র কয়েক মাস মন ভরে ভালোবাসতে পেরেছে আমানকে। বিধাতা হয়তো সারার কপালে সুখ জিনিসটা রাখেনি।
,
সময় মিসেস রেহেনার ঘর থেকে কিছু পড়ার শব্দে সারার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে। বাসার সব লাইট বন্ধ চাকর বাকর সব ঘুমিয়ে গেছে। সারা আসতে আসতে মিসেস রেহেনার রুমের দিকে গেলো। রুমের ভিতর থেকে কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনতে পায় সারা। প্রথমে ভাবলো তিনি নিজের স্বামী বা মেয়ের সাথে কথা বলছেন। তাই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে নিলো, হঠাৎ আমানের নামটা মিসেস রেহেনার ঘর থেকে শুনতে পেলো।
,
দরজাটা হালকা খোলা রয়েছে তাই কথা গুলো বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না সারার।
,
মিসেস রেহেনা আমানের সাথে কথা বলছে,
,
-আমান তুমি বোঝার চেষ্টা করো। সারাকে আমি কেন এতো বড় ঘটনায় কালার করতে যাবো? কেও একজন থানা থেকে মিডিয়ার লোকজনকে খবর দিয়েছিলো। আমার কিছুই করারা ছিলো না।
,
ওপাস থেকে-…………………………………………….।
,
মিসেস রেহেনা- আমি তো জানি সারা তোমার স্ত্রী। তাহলে কেন তাকে আমি বদনামেদ ভাগিদার হতে দেব? তুমি অযথা রাগ করছো আমান। সে আমার মেয়ের বয়সী।
,
ওপাস থেকে-……………………………………..।
,
মিসেস রেহেনা- তুমি চিন্তা করোনা আমান। ওকে আমি নিজের মেয়ের মতই দেখে শুনে রাখবো। তুমি আমাদের মিশনের কথা ভুলে যেওনা। এখন রাখছি। দেখি সারা কি করছে।
,
সারা দ্রুত পায়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।
,
,
,
আমান তাহলে বেচে আছে? তাহলে এই মানুষটার সাথে ওর কিসের সম্পর্ক?
,
,
চলবে…