কলঙ্কিনী
২য় পর্ব
লেখনীতেঃ রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সারা তাড়াতাড়ি করে নাসরিন বেগমের কাছে গিয়ে মাথাটা কোলে তুলে নেয় আর বলে,
,
-মা কি হয়েছে তোমার? মা তুমি আমাকে কলঙ্কিনী বল, অন্য কিছু থাকলে সেটাও বলো, আমার মুখে লাথি মারো। কিন্তু আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না। কথা বলো মা!
,
নেহা সারা কে ধাক্কা মেরে দিয়ে মায়ের মাথাটা নিজের কোলের উপরে নিয়ে বলল,
,
-ভাবি তোমাকে তো বোনের আসনে বসিয়েছিলাম।
কিন্তু তুমি এটা কি করলে? ভাইয়ার ভালোবাসা, আমাদের বিশ্বাস সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ কিভাবে করে দিতে পারলে?
তোমার ঐ মুখ দেখলেও আমার ঘৃণা হচ্ছে, জাস্ট ঘৃণা হচ্ছে।
,
সারা কাদতে কাদতে বলল,
,
-নেহা এমন বলো না। আমার শুরুও তোমরা আর শেষও তোমরা।
,
-ও শুরু আমরা আর শেষটাও আমরা মাঝখান দিয়ে তুমি অন্যকারো। তার শয্যসাথী। আমার কি ইচ্ছা করছে জানো তো! তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুর কে খাইয়ে দিতে ইচ্ছা করছে।
,
-নেহা!!!
,
-তোমার ঐ পাপি মুখে আমার নামটা নিওনা দয়া করে। তোমার মুখে নিজের নামটা শুনলে আমার সারাদেহ গুলিয়ে উঠছে।
,
-আমি কি এতোটাই পাপিষ্ঠা?
,
-তুমি কতটা পাপিষ্ঠা সেটা জানো না? তুমি কি বুঝতে পারছো কতটা পাপিষ্ঠা তুমি?
,
-নেহা বোন আমার, আমার কথাটা একটু শোনো। মাকে একটু ধরতে দাও।
,
সারা হাওমাও করে কাদতে লাগলো। এমন ভুল ও কিভাবে করে ফেললো নিজেই বুঝতে পারছেনা। এই সমাজে সে এখন স্বীকৃতি প্রাপ্ত কলঙ্কিনী।
,
– না না তোমার কোন কথাই শোনা হবে না।
আমার মা যদি মরেও যায় তবে তোমার হাতের স্পর্শ আমার মাকে পেতে দেবো না।
তোমাকে হাতজোড় করে বলছি তোমার ওই পাপীষ্ঠ মন পাপীষ্ঠ দেহ নিয়ে এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।
আজ মাকে তুমি নাহয় অজ্ঞান দেখছো কালকে আমাকে তুমি গলায় দড়ি দিতে দেখতেও পারো।
তোমার মত কলঙ্কিনী মেয়ের সাথে একই ছাদের নিচে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।
,
সারা কাদতে কাদতে কথা বলার অবস্থাতে নেয়। তবুও কষ্ট করে বলল,
,
-না না আমার মত পাপিষ্ঠা কলঙ্কিনীর কারনে তুমি কেন আত্মহত্যা করবে। তার চেয়ে আমি বরং এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
তুমি ঠিকই তো বলেছো নষ্টা একটা মেয়েকে নিয়ে এক বাড়ি এক ছাদের নিচে আসলেই থাকা যায়না। আমি বাড়ি থেকেই চলে যাচ্ছি আর কখনো আসবো না।
আমার মত কলঙ্কিনী কে নিয়ে আর কোন কথা শোনা লাগবে না তোমাদের।
,
নাসরিন বেগম এর মাথা নেহার কোলে আর সারা ঠিক তারই পাশে বসে আছে সারার শেষ কয়েকটা কথা নেহার একেবারেই সহ্য হয়না। ওর যেন মনে হয় সারা ওকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে।
,
তাই রাগে রাগে সারা গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে দেয়
বয়সে ছোট একটা মেয়ের হাতে সারা চড় খেয়ে একটুও অবাক হল না সারা, কারণ এটাই যে ওর প্রাপ্য ছিল। পাপের ফল ভোগ করাই লাগবে।
,
নেহা প্রতিবেশি দুইএক জনের সাহায্য নিয়ে নাসরিন বেগম কে।
খাটের উপর শুইয়ে দেয়।
,
সারা এখনো চুপ করে বসেই আছে একই জায়গাতে। শূন্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। চোখদুটো যেন কোনো ঝরনা ধারা হয়ে গেছে থামার নামই নেই।
,
আজকে এই বাড়িতেই শেষ দিন সারার ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় মেরে ওঠছে। যে মানুষটা সারাকে সম্মানের সাথে ঘরে তুলেছিলো তিনিই আজকে ছি ছি করে বিদায় করে দিচ্ছেন।
,
নিয়তি বড়ই অদ্ভুত কখন কার সাথ দেয় কার সাথে বেইমানি করে কেও জানেনা। আজকে নিয়তির কাছে পরাজিত হয়েগেছে সারা। পাপের ফল ভোগ করতেই হবে।
,
,
নিজের সমস্ত কাপড়চোপড় গোছগাছ করে অন্তিম বিদায়ের জিন্য নাসরিন বেগম আরা নেহার কাছে গেল।
,
-নেহা আমি চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো। মাকে ভালো করে দেখে রেখো। মা যেন কোনো চিন্তা না করে।
যেন ভাবে আমি একটা বাষ্পীয় পদার্থ সময়ের সাথে সাথে আকাশে মিলিয়ে গেছি।
,
নেহার খুব ইচ্ছা করছে প্রিয় ভাবিকে বুকে জড়িয়ে নিতে, কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কাছে সে আজকে বাধা পড়ে গেছে। সারার দিকে ভালো দৃষ্টিতে তাকানোর ইচ্ছা হলেও মস্তিষ্ক বলে দিচ্ছে৷ ও নষ্টা মেয়ে।
,
নেহাকে চুপচাপ থাকতে দেখে সারা বলল,
,
-আমাকে একটা বার মাকে ছুয়ে দেখতে দিবে না নেহা?
,
নেহা সহজ গলায় বলল,
,
-না।
,
,
সারা শেষ বারের মত নিজের সংসার, নিজের স্বর্গ দেখে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। হাতে একটা ব্যাগ আছে। তাতে হয়তো কয়েকটা পোশাক।
,
,
গন্তব্যহীন ভাবে হেটে চলেছে সারা কোথায় যাবে, কার কাছে সাহায্য চাইবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আজকে সারার হাটার কোনো শেষ হবেনা। শুধু আজকে কেন হয়তো সারাজীবন এমন ছন্নছাড়া হয়েই কাটিয়ে দিবে।
,
,
সন্ধ্যার দিকে, সারা মেইন রোডের ধার দিয়ে হেটে চলেছে। খুব কষ্ট করে হাটছে কিন্তু দেহ দুর্বল হওয়ার কারণে যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে।
পাশ কাটিয়ে একটা গাড়ি যাওয়ার সময় দাড়ালো।
,
-আপু আপনার কি কোনো হেল্প লাগবে?
,
-না আমি ঠিক আছি।
,
,
,
আমানের বাড়িতে, রাত ৮ টার দিকে নাসরিন বেগম কিছুটা সুস্থতা অনুভব করছে। নেহা থালা থেকে ভাত আর ডাল দিয়ে মাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে।
নাসরিন বেগম খাবার মুখে নিতে গিয়েও নিতে পারলো না। আবার সেই কান্না শুরু করে দিলো।
,
-নেহা মা, বলতো ওকে কিসের অভাবে রেখেছিলাম। ও এটা কি করলো। আমাদের বিশ্বাসকে নিয়ে এভাবে খেলা করতে পারলো কিভাবে?
,
-মা যে গেছে তার চিন্তা বাদ দাও। তুমি খেয়েনাও তো।
,
-নেহা।সারা এখন কোথায় আছে? ওর কোনো খোজ পেয়েছিস?
,
-মা, ঐ কালনাগিনী বিদায় হয়েছে ভালোই হয়েছে। ও জাহান্নামে যাক তুমি ওর জন্য চিন্তা কেন করবো।
,
,
নেহা আর নাসরিন বেগম কথা বলছিলো এমন সময় পাশের বাড়ির কনিকা নেহাদের বাড়িতে এসে বলল,
,
-নেহাপু টিভিতে দেখো কি খবর হচ্ছে? চমকে যাবে তুমি।
,
নেহা টিভি অন করার সাথে সাথেই সত্যি চমকে উঠলো কারণ, খবরে বলছে, ‘সারা নামের একজন মেয়ে আর তিন পুরুষকে অনৈতিক কাজের জন্য গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ’। নেহা খপ করে টিভিটা বন্ধ করে দেই।
,
-ছিহ, শেষমেশ ঐ পাপিষ্ঠার খারাপ কাজের জন্য পুলিশ ধরলো? ছিহ।
,
রাগের পিছনে সারার জন্য নেহার মনে যেই ভালোবাসাটা ছিলো সেটা একনিমিষে শেষ হয়ে গেল। হ্যা সত্যি, খবরে দেখানো মেয়েটা নেহার ভাবি সারা ই ছিলো।
,
,
,
চলবে।।।।।