#কাঁচের_গায়ে_বৃষ্টি_ফোঁটা?(দ্বিতীয় পরিচ্ছদ),(পর্ব – ১০)
—————-
মায়ান বেশ বিরক্ত। সেই সন্ধ্যা থেকে বাচ্চা মেয়েটার প্যানপ্যান শুনতে শুনতে তার কান ঝালাপালা। সে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল,
“মারিয়া এটাকে এখান থেকে সরা। আমার চোখের সামনে যেন আর না পড়ে।মাথা খারাপ করে দিল।”
“চিন্তা করো না ভাইয়া ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আর কিছুক্ষণ মাত্র। আর তারপর দেখবো ওই অফিসার আর নিঝুম কী করে একে উদ্ধার করে। তিলে তিলে শেষ করবো সবাইকে যেমন টা আমি হচ্ছি তেমনই।
——————
সমর্পণ স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে। সোনালী সমানে কেঁদে চলেছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে মেয়েটার। আর নিঝুম সে তো নেই। সে ছুটেছে তার মেয়েকে রক্ষা করতে। নিঝুমের কাছে ফোন এসেছিল তুশীকে মুক্ত করতে হলে তাকে একান্তে এক জায়গায় যেতে হবে এবং সেই সঙ্গে মারিয়াদের বিরুদ্ধে তৈরীকৃত পেন ড্রাইভ টি ওদের হাতে তুলে দিতে হবে। নিঝুম বিনাবাক্যে রাজি হয়ে যায় ওদের শর্তে। সমর্পণ নিঝুমের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল কিন্তু তাতে সমস্যা আরও বাড়বে কারণ নিঝুমের ওপর নজরদারি চলছে। বাধ্য হয়ে নিঝুমকে একা ছাড়তে হয় সমর্পণের। এখন শুধু অপেক্ষা আর হতাশা ছাড়া তাদের হাতে আর কিছুই করার নেই। এদিকে মারিয়া ইহানকে ফোন করে বলে দিয়েছে তাদের কীর্তি কলাপের কথা। সব শুনে প্রচন্ড রেগে গেছে সে। মারিয়াকে ফোনের মধ্যে ভয়ংকর কিছু গালি দিলে দেখা যায় ওপাশ থেকে শুধু অট্টাহাসির আওয়াজ শোনা যায়। পুরো খান বাড়ি চিন্তিত।
——————-
এই সেই আস্তানা যেখানে চার বছর আগে নিঝুমকে আনা হয়েছিল। সেদিন কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে ফিরেছিল নিঝুম এখান থেকে কিন্তু আজ? আজ কী সে পারবে তুশীকে সুস্থ সবল ভাবে সমর্পণের হাতে তুলে দিতে? নিজেকে নিয়ে বিন্দু মাত্র চিন্তা তার নেই শুধু তুশীকে ঘিরে যত টেনশন।
আস্তানার সম্মুখে পৌছতেই সদর দ্বার আপনাআপনি খুলে গেল। নিঝুম ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করল। কিছুদূর যেতেই ধপ করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুমটি আলোকিত হয়ে উঠল। নিঝুম আশেপাশে চোখ বুলালো। তাকে ধীরে চারিদিকে অনেক সেনা-সামন্ত। এরা সবাই মারিয়ার লোক। সেখান থেকে দু’জন এসে নিঝুমের পুরো বডি সার্চ করে গেল। যাতে গোপনীয় কোনো অ’স্ত্র না থাকে এজন্য। অতঃপর নিঝুমকে তারা দুজন ধরে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে ঢুকলো। সেখানে যেতেই মারিয়া, মায়ানের সম্মুখে পড়ল সে। নিঝুম শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,” আমার মেয়ে কোথায়?”
মারিয়া বাঁকা হেসে নিচে নেমে এলো। একদম নিঝুমের কাছে এসে দাড়াল। অতঃপর অট্টহাসিতে মেতে উঠল। নিঝুমের রাগ হলো ভীষণ। তবুও নিজেকে দমিয়ে রেখে শান্ত কন্ঠে বলল, “এমন অসভ্যের মতো না হেসে আমার মেয়েকে এনে দাও।”
মারিয়া যেন মজা পেল নিঝুমের কথায়। সে আরও দ্বিগুণ শব্দে হাসতে লাগল। অবশেষে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল, “আগে আমার পেন ড্রাইভ।”
নিঝুম পেন ড্রাইভ টি পকেট থেকে বের করে মারিয়ার হাতে তুলে দিল। মারিয়া সেটাকে মায়ানের হাতে দিল। মায়ান পেন ড্রাইভ টি ওপেন করে দেখে নিল সবটা ঠিকঠাক আছে কী না। সবকিছু ঠিকঠাক আছে দেখে মায়ান মারিয়াকে ইশারা দেয় তুশীকে দিয়ে দিতে। এই পুচকির ঘ্যান ঘ্যানে সে চরম বিরক্ত। কিন্তু মারিয়ার মনে অন্য সাধ জাগল। সে তুশীকে ছেড়ে দিল কিন্তু নিঝুমকে আটকে রেখে। নিঝুমকে একটি চেয়ারে শক্ত করে বেঁধে দিল মোটা রশি দিয়ে। তুশীকে ড্রাইভারের সাহায্যে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। তুশী নিঝুমকে এমন অবস্থায় দেখে ভীষণ কেঁদেছে। নিঝুমও চেয়েছে ভয়ে একটুখানি হয়ে যাওয়া মেয়ের মুখে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু তা সম্ভব হতে দেয়নি মারিয়া।
তুশীকে পাঠিয়ে দেওয়ার পরপরই উদয় হয় সেখানে আরও
দুটি মুখ। তারা আর কেউ নয় নিঝুমের বাবা আর ভাই। তাদের এখানে দেখে নিঝুম ভেতর থেকে আরও বেশি আহত হয়। তাদের এখানে দেখবে আশা করে নি। কারণ গত দুদিন আগে সে খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে পেন ড্রাইভ টি ওনাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে এনেছে। এর পুরোটা ক্রেডিট অবশ্য সমর্পণকে দিতে হয়। কারণ বুদ্ধিটা সমর্পণেরই ছিল। দারোয়ানকে ঘুষ খায়িয়ে রাতের আধারে নিজের বাড়ি থেকেই পেন ড্রাইভ টি চুরি করে আনে নিঝুম।এই একটা চুরি অনেক দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হতো যদি না ব্যাপারটা অন্য রকম হতো। নিঝুম ভেবেছিল পেন ড্রাইভ হারানোর পর আহসান সাহেবের সঙ্গে মায়ান, মারিয়ার দুরত্ব বাড়বে কিন্তু না সে ভুল ছিল। তারপর তারা একত্রে চক্রান্ত করে তুশীকে আটক করে তারপর নিঝুমের থেকে পেন ড্রাইভ নিয়ে এখন নিঝুমকেও আটক করে। নিঝুম এবার ধরেই নিয়েছে এই পৃথিবীতে তার যাত্রা মাত্র খনেকের।
—————–
তুশীকে ফিরে পেয়ে যতটা না আনন্দিত হয়েছিল চৌধুরী আর খান পরিবার নিঝুমের আটকের খবর শুনে তারচেয়ে চরম মাত্রায় দুঃখিত হয় তারা। ইহান,সমর্পণ এবারে আর চুপ থাকতে পারল না। দু’জনে একত্রে রওনা হলো নিঝুমকে খোঁজার উদ্দেশ্যে। এই পুরোনো আস্তানা সম্পর্কে সমর্পণ আগে থেকেই অবগত ছিল। কারণ চার বছর আগে নিঝুমের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার শুরু তো এখান থেকেই হয়েছিল। নিঝুমের আটকের খবর জানতে পারে তারা তুশীর কাছ থেকে। বাচ্চা মেয়েটা মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সোনালী, ইরা ওকে সামলাতে ব্যস্ত। ইশান হন্তদন্ত হয়ে পায়চারি করছে। অনিলা খান মোনাজাতে কান্না করছে নিঝুমের সুস্থতা কামনায়।
——————
যতই শক্তিশালী হোক না কেন একা একটা মেয়ের পক্ষে কখনোই শতাধিক লোকের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। আর যদি থাকে সেটা পূর্ব পরিকল্পিত। নিঝুম একদম স্ট্রিক হয়ে বসে আছে। মনোবল একটুও টলে নি কিন্তু গায়ের জোর কতক্ষণই বা থাকে। ইলেক্ট্রনিক শক খেয়ে প্রায় অবস্থা নাজেহাল তার তবুও বাহির থেকে শক্ত থাকার প্রবল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আহসান সাহেব এবং নুহাশ নিঝুমের এমন পরিস্থিতি দেখে কষ্ট পেলেও তাদের হাতে কিচ্ছু নেই। তারা এখন কেবলই মারিয়ার হাতের পুতুল। এতদিন ওরা মারিয়া,মায়ানকে যেভাবে নাচিয়েছে ঠিক সেভাবেই আরেকটা পেন ড্রাইভ দ্বারা এবার ওরা এদের নাচাচ্ছে। যেই পেন ড্রাইভে আছে আহসান সাহেবের মারিয়াদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নেওয়ার রেকর্ড। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা বাধ্য হয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছে। আর মারিয়া ইচ্ছে করে নিঝুমকে কষ্ট দিতেই এদেরকে এখানে এনেছে।
নিঝুম তখন প্রায় অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। ততক্ষণাত ভেতরে প্রবেশ করে ইহান আর সমর্পণ। তাদের হাতে রি’ভ’ল’বা’র। বাহিরে পুলিশী ফোর্স সাথে আর্মি ফোর্স। সবরকম প্রটেক্ট নিয়েই তারা এসেছে। ওদের দেখে মায়ান কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তবুও নিজেকে বাহিরে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়। মারিয়া ওদের সেনা সৈন্যদের ইশারা করে ইহান,সমর্পণের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে। কিন্তু দেখা যায় ওরা আসার আগেই বাহিরে থাকা ফোর্সদের সমর্পণ ডেকে নেয় ভেতরে। শুরু হয়ে যায় তুমুল সংঘর্ষ। এক পর্যায়ে মারিয়া, মায়ানকে আটক করতে সক্ষম হয় তারা। মি.আহসান এবং নুহাশকেও আটক করে তারা। কিন্তু বিপত্তি বাজে যখন ইহান,সমর্পণ অন্য মনষ্ক হয়ে নিঝুমকে খুলতে যায় তখন। অকস্মাৎ একটি ছু’রি এসে লাগে…………।
——————–
চলবে,
সাদিয়া আফরিন নিশি