“কাজের বেটি রহিমা” পর্ব-২০

0
3691

“কাজের বেটি রহিমা”
পর্ব-২০
(নূর নাফিসা)
.
.
একই দিনে হয়ে গেলো দুইটা বিয়ে। অনুষ্ঠান আয়োজন সব ছিলো আয়ান ও সায়মার বিয়ে উপলক্ষে, শুধু কাজী বিয়ে পড়ালো দুইটা। লাল মিয়া বিয়ের প্রথম তিনদিন শ্বশুর বাড়িতে থাকলো। আজ চতুর্থদিন রহিমা এসেছে মারিয়া কাইয়ুমের সাথে কথা পাকা করতে। গত মাসে পাঁচ তলার একটা ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া চলে যাওয়ায় বাড়ির গেইটে “To Let” সাইনবোর্ডটি ঝুলছে। এতোদিন ধরে লোকজন এলেও ফ্ল্যাট বুকিং বলে লাল মিয়া তাড়িয়ে দিতো গেইট থেকেই। কেননা তার ইচ্ছে এবাড়িতেই একটা ফ্ল্যাট নিবে বউ নিয়ে থাকার জন্য। ভাড়া কিছুটা কমানোর জন্য সে বিয়ের পূর্বে কথাবার্তা বলেনি। বিয়ের কার্যাদি সম্পাদন হলে ঠান্ডা মাথায় কথাবার্তা বলে মাসিক ভাড়া কিছুটা কমিয়ে নিবে।
সাইনবোর্ড ঝুলানোর পর থেকে রহিমা প্রতিদিন এসেই সাইনবোর্ড উল্টে দিতো। লাল মিয়া আবার ঠিক করে রাখতো। নতুবা বাড়ির মালিকেরা দেখলে সমস্যা হতে পারে।
আজ তাদের মজলিস বসলো। মিস্টার ও মিসেস কাইয়ুম এবং রহিমা ও লাল মিয়া উপস্থিত। লাল মিয়া কথা তুললে কাইয়ুম সাহেব বললেন,
“ফ্ল্যাট খালি আছে যখন নিয়ে নে তোরাই। সমস্যা কি!”
লাল মিয়া বললো,
“খালু, আমার আয়ের ব্যাপারে আপনারা তো জানেনই। ভাড়া একটু কমাইয়া রাইখেন।”
“আচ্ছা, সেটা সমস্যা নেই। তুই কিছু কমই দিস।”
রহিমা বলে উঠলো,
“খালু, কিছু কম না। আমরা দুইজনেই তো আপনাদের বাড়িতে কাম করি। আমি এইখানে থাকলে যখনতখন ডাকলেই আপনাগো কাজ কইরা দিতে পারমু। সেই সুবাদে আমার জন্য কিছু ছাড় দেন আর উনার জন্য কিছু ছাড় দেন।”
“বললামই তো, কিছু কম দিস তোরা।”
“কিছু-মিছু না। আমি অর্ধেক কম দিমু। চার হাজারের এক টাকাও বেশি দিতে পারতাম না। এহন আপনেরা রাজি থাকলে বলেন, না হইলে আর কি করার!”
“আচ্ছা, যা৷ চার হাজারই দিস। খুশিতো এইবার?”
“হু, গ্যাস পানি আবার কম কম সাপ্লাই দিয়েন না। বাকিদের মতো পুরা সুযোগ সুবিধাই কিন্তু দিবেন।”
রহিমার কথাবার্তায় মারিয়া ক্ষেপে গিয়ে বললো,
“এই, যা এখান থেকে। আমি ফ্ল্যাটই ভাড়া দিবো না তোর কাছে। অন্য কোথাও গিয়ে খোঁজ। যা।”
“উহ! আম্মায় যে করে! থাক! আর কথা কইতাম না। চাবি দিয়া দেন। বিসমিল্লাহ বইলা ফ্ল্যাটে পা রাখি।”
রহিমা কাজে লেগে গেলো। সায়মা এখন এবাড়িতেই আছে। সায়মার মা সেদিন আজেবাজে বলায় মারিয়া কাইয়ুম তার সাথে কথা বলে না। অনুষ্ঠান শেষ হলো অথচ এ পর্যন্ত একবারও সায়মার বাড়িতে যায়নি। এবাড়িতেও সায়মাকে কোনো কাজে হাত লাগাতে দেয় না। ইগনোর করেই চলে। সেই সুযোগে পিংকি আলাদা ভাব নিয়ে চলছে। কিন্তু বাকিরা যথেষ্ট সুসম্পর্ক বজায় রাখছে৷ তবে সায়মা থেমে নেই। শ্বাশুড়ির মন জয় করবেই সে।
কাজকর্ম শেষ করে দুপুরে রহিমা বেরিয়ে এলো কাইয়ুম ভিলা থেকে। লাল মিয়া গেইটের পাশেই ছিলো। সে বিরক্তির সাথে বসার টুল নিয়ে যাচ্ছে। লাল মিয়া বললো,
“আরে! এইটা নিয়া কই যাও!”
রহিমা গেইটের পাশে টুল রেখে গেইটে ঝুলানো সাইনবোর্ড টেনে নামিয়ে হাতে নিয়ে বললো,
“এইটা এখনো ঝুলতাছে ক্যা? ফ্ল্যাট বুকিং কইরা নিছি না! দূরে রাখেন!”
লাল মিয়া হেসে সাইনবোর্ড একপাশে রেখে টুলটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলো৷ অত:পর রহিমার সাথে বেরিয়ে এলো গেইটের বাইরে। লাঞ্চ করে আবার আসবে সে। কথা বলতে বলতে হাটছে দুজন। লাল মিয়া জিজ্ঞেস করলো,
“রহিমা, ছোট ভাইজান তো তোমারে পছন্দ করতো তাইলে বিয়া করলো না ক্যা?”
“কেডা কইছে এত্তো বেশি কথা! ছোট ভাইজান আমারে পছন্দ করতো না। ছোটভাইজান তো আমারে ফ্রেন্ড মনে কইরা দুষ্টামি করে।”
“তুমি কি এই দুষ্টামির প্রেমেই পড়ছো?”
“ক্যা? আপনে বুঝি আমার দুষ্টামির প্রেমে পড়ছেন?”
“না। আমি তো একটা বাচালের প্রেমে পড়ছি।”
“আমি বাচাল!”
“না, কইতরি।”
রহিমা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো এবং বললো,
“তাইলে আপনে কইতর।”
লাল মিয়া হেসে বললো,
“রোদের পাওয়ার অনেক। বউটা কালি হইয়া যাইতাছে। চলো রিকশায় যাই।”
রহিমা তার হাত ধরে বললো,
“এইটুকু যাইতে রিকশা লাগে! পাইছে এক রিকশা! ঘর থেকে বাইর হইলেই রিকশা নেই, রিকশা নেই। এইটা রিকশা না ছাই! আমার কাছে তো হুইলচেয়ার মনে হয়। পঙ্গুরা চলাচল করবো রিকশা দিয়া। পায়ে আল্লাহ জোর দিছে, অযথা টাকা খরচ করমু ক্যা! হাত ধইরা এইভাবে পাশাপাশি হাটতে যে কি মজা, তা বুঝেন আপনে!”
“না তো! তুমি বুঝো ক্যামনে?”
“এই যে, যেমনে হাটতাছি এমনে এমনেই।”
“পাগলনী একটা!”
রহিমা তার হাত ঝাড়ি মেরে ছেড়ে দিয়ে বললো,
“কি! আমি পাগলনী! যান! আপনার হাত ধইরা আর জীবনেও হাটতাম না। একদম আমার পাশাপাশিও হাটবেন না। পিছে থাকেন নয়তো আগে যান।”
ক্ষেপে গিয়ে রহিমাই হনহনিয়ে তার আগে পা চালালো। লাল মিয়া হেসে দ্রুত পায়ে এসে রহিমার হাত ধরে হাটতে লাগলো। রহিমা ছাড়ানোর চেষ্টা করলে লাল মিয়া আরও চেপে ধরে হাটতে লাগলো। সারা রাস্তা লাল মিয়ার কাছ থেকে হাত ছুটানোর চেষ্টা করতে করতেই বাড়ি ফিরলো রহিমা।
পরদিনই ঘরের ছোটখাটো আসবাবপত্র ভ্যানে করে তারা হাজির হলো কাইয়ুম ভিলায়। লাল মিয়া নতুন খাট ও ছোট সুকেচ সহ সাংসারিক কিছু আসবাব কিনে আনলো। প্রায় তিনদিন লেগেছে তাদের ঘর গোছাতে ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নতুন সংসার সাজাতে।
এরপর সূচনা সংসারের। রহিমার সেই বাড়িটা আপাতত এমনি থাকবে। রহিমার মা তাদের সেই ছোট বাড়িটা রাহিমার নামে করে দিবে। তাই আরও কিছু টাকা জমলে লাল মিয়া জমিজমা না কিনে সেখানেই ঘর তুলবে। তখন ভাড়াটে বাড়ি ছেড়ে তারা নিজেদের বাড়িতে থাকবে।
সায়মা শ্বশুর বাড়িতে পা রাখার পর থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে শ্বাশুড়ির মন জয় করতে। তবে বেশিদিন কষ্ট করতে হয়নি তাকে। আয়ানের সাহায্যে সে খুব দ্রুতই মারিয়ার মনে জায়গা করে নিয়েছে। ঘরের কাজকর্ম থেকে তো তাকে দূরেই রাখা হয়েছে তাই সে উপায় খুঁজে পাচ্ছিলো না কিভাবে মারিয়ার মনে জায়গা করে নিবে! কিন্তু আল্লাহর রহমতে উপায় হয়ে গেছে! বিয়ের পর আয়ানের স্বভাব অনেকটা পাল্টে গেছে। আগে ঠিকমতো নামাজ পড়তো না, এখন নিয়মিত পড়ে। আয়ান ঠিকমতো ক্লাস করতো না পড়াশোনায় অমনযোগী ছিলো। কিন্তু এখন সে মনযোগী হয়েছে। মায়ের ছেলে মায়ের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়েছে। হ্যাঁ, সে স্ত্রীর মর্যাদা বাড়িয়ে তুলতে, বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে, সর্বোপরি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে সে এখন নিজের মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছে। যার ফলে তার মা সন্তুষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি ছেলের বউয়ের আচার-ব্যবহারেও মুগ্ধ হয়েছে। মারিয়া তাকে ইগনোর করেছে কিন্তু সায়মা এ নিয়ে কখনো কোনো কটু কথা না বলে নিজের আচরণ মার্জিত রেখেছে। তিনি কথা না বললেও সায়মা তাকে মা বলে ঠিকই ডাকতো, যেকোনো কাজে অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করতো। তার মাঝে একজন আদর্শ বউ হওয়ার চেষ্টা মারিয়ার নজরে পড়েছে বিধায় এখন তিনি সায়মার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছেন। সায়মার আচার-আচরণ ও আদর্শের কারণে পিংকির সাথেও সায়মার ভাব মোটামুটি ভালোই চলছে। যদিও পিংকি একটু হিংসা করে সায়মার সাথে। তবে ঝগড়াঝাটি থেকে দূরে। ওদিকে সায়মার ভাই আমেরিকা গেলেও এলেন যায়নি। ইশতিয়াক নিজেই তার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কেননা সায়মা না থাকায় বাড়িতে মা একা। সন্তান লালন পালন করে বড় করেছে এখন সন্তান যদি নিজের ভালোর জন্য বাবা-মাকে রেখে দূরে চলে যায়, বাবামা কে সঙ্গ দেওয়ার সময় খুঁজে না পায় তাহলে কিসের সন্তান হলো সে! ছোট থেকে বৃহৎ সকল ধরনের ভুল করেও বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা পেয়েছে সর্বদা৷ না জানিয়ে বিয়ে করেছে তবুও সন্তান দূরে ঠেলে না দিয়ে বউ বাচ্চা সহ মেনে নিয়েছে, সেই বাবা মাকে একা রেখে যেতে নিজের বিবেকে বাধা পেয়েছে ইশতিয়াকের। তাই সে বউ বাচ্চাদের এখানে রেখে গেছে। এমনকি আমেরিকা সকল কিছু বন্দোবস্তো করে নিজেও দেশে এসে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে। আর দূরে দূরে নয়, পরিবারের সাথে জীবন কাটাবে।
আয়ান ও সায়মার চুপিচুপি বিয়ের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে লাল মিয়া ও রহিমাকে নিয়ে তারা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে আয়ান নিজে ট্রিট দিবে বলে। মাঝপথে রহিমা বললো,
“আপা, ভাইজানের পকেট চেক করছেন তো? প্রতিবার তো ভাইজান গাপুসগুপুস খাইয়া আপনারে ফাসায় দেয়!”
সায়মা হেসে বললো,
“এইবার চান্স নেই। তোর ভাইজানের পকেটই আমার কাছে।”
“কি! প্যান্টের পকেট ছিড়া ফালাইছেন!”
“চুপ! প্যান্টের পকেট ছিড়তে যাবো কেন! টাকা কি প্যান্টের পকেটে রাখে নাকি ওয়ালেটে রাখে! ওয়ালেট আমার কাছে।”
“ওহ্! আমি তো ভাবছি আপনে প্যান্টের পকেটই ছিড়া ফালাইছেন!”
সায়মা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই রহিমা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তবে হঠাৎ করেই হাসি থেমে গেলো রাস্তার ধারে ইট ভাঙার কাজে কারিমাকে দেখে! কারিমা এখন ইট ভাঙে তার শ্বাশুড়ির সাথে। তার এই দৃশ্য দেখে রহিমা খুব বড়সড় এক নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো,
“রাখছিলাম তো আরামের জীবনে। আরাম সয় না দেহে? আজ রূপচর্চা কই গেলো? রোদে পুইড়া তো পেতনী হইয়া গেছোস! আমি তো মা রে নিয়া খুব আরামের জায়গায় আছি। আমার স্বামী তো আমারে সাধ্যমতো রানী কইরা রাখার চেষ্টা করতাছে। মা বোনের দেওয়া সুখ সহ্য হয় না কপালে? এইবার অসুখে মর।”
বাকিটুকু পথ রহিমা চুপচাপই ছিলো। রেস্টুরেন্টে এসে তারা হঠাৎ দেখা পেল রুমেলের! তাকে দেখা মাত্র রহিমার মন ফুরফুরে হয়ে গেলো। রুমেল কেমন যেন জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকালো তাদের দিকে। আর সাথে সাথেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। আয়ান তাকে দেখে মুখ চেপে হেসেছে আর সায়মা দেখেও না দেখার ভান করে রইলো। কিন্তু রহিমা এবার চুপ করে নেই৷ সে রুমেলকে ডেকে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দিলো।
“কি ভাই? সংসার কেমন চলতাছে? বউ তো সুন্দরীই দেখলাম। আমাগো বিয়াতে আসছিলো। আপনে আসেন নাই ক্যা? এমন কইরা তাকাইয়া আছেন ক্যা? আমারে চিনেন নাই? আমি তো সেই কাজের বেটি রহিমা। ওইযে, ঝাড়ু আর ঝাড়ু!”
সায়মা দাঁতে দাঁত চেপে রহিমাকে ধমক দিলো আর রহিমা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। আয়ানও মিটিমিটি হাসছে। আর রুমেল হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো। তার বন্ধুবান্ধবও পিছু ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে গেলো। রহিমা হাসতে হাসতে বললো,
“আহারে! বেচারার কি কষ্ট! তার কষ্টে আমার মনডায় চায় মাটি থেকে ছাদে ঝাপ দেই।”
সায়মা বললো,
“মাটি থেকে ছাদে ঝাপ দিবি নাকি ছাদ থেকে মাটিতে!”
“ধুর আপা! ছাদ থেকে মাটিতে ঝাপ দিলে আমি বাচমু! দিলে মাটি থেকেই ছাদে ঝাপ দিমু!”
আয়ান হা হা করে হেসে উঠলো। আর লাল মিয়া তাদের কান্ডকারখানা কিছুই বুঝতে পারলো না। সে নিরব দর্শক ও শ্রোতা।
এরপর ঝগড়াঝাটি মান অভিমানে সংসার ভালোই চলছিলো। লাল মিয়া কোনো দোষ করলেই রহিমা কাইয়ুম সাহেবের কাছে দৌড়ে আসে বিচার দেওয়ার জন্য। তাদের বিচার করতে করতে কাইয়ুম সাহেব এখন পারিবারিক বিচারক হয়ে উঠেছেন। লাল মিয়ার পাশাপাশি এবাড়ির সদস্যদের নামেও বিচার দিতে ভুলে না রহিমা। তবে রহিমাকে কথায় কথায় রাগিয়ে দেওয়া যেমন আয়ানের স্বভাব ঠিক তেমনই পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করা লাল মিয়ার স্বভাব। রহিমা রাগ করে বসে থাকলে সে-ই আবার পিছু পিছু ঘুরঘুর করে রাগ ভাঙানোর জন্য।
বছর গড়িয়ে দুষ্টমিষ্টি সংসারে রহিমার কোলে এলো ছোট্ট রাজকন্যা। মেয়ের নামকরণের দিন যখন রহিমা সায়মার কাছে একটা ভালো নাম চাইলো তখন হুট করেই আয়ান বলে উঠলো,
“রহিমা! নতুন করে নাম নেওয়ার কি আছে! আমি তো অনেক আগেই তোর মেয়ের নাম রেখে দিয়েছি। তুই হচ্ছিস সকিনার মা রহিমা। অর্থাৎ তোর মেয়ের নাম হচ্ছে সকিনা।”
“আপা দেখেন, ভাইজান কি বলে!”
“কি বলি মানে! পছন্দ হয়নি আমার দেয়া নাম! আমি কিন্তু সকিনা বলেই ডাকবো।”
“আপনে যদি সকিনা ডাকেন, তাইলে এই কাজের বেটি রহিমা কিন্তু আপনার মাইয়ারে জিলাপি ডাকবো। আলাপির বোন জিলাপি! আর যদি দুইটা মাইয়া হয়, তাইলে আরেকজনরে ডাকমু আয়নার বেটি ময়না। আর যদি পোলা হয় তাইলে রাখমু ময়নার ভাই মনু মিয়া।”
আয়ান হা হা করে হেসে বললো,
“তোর মাথার ঝাকড়া চুল কিন্তু তখন একটাও থাকবে না। আমার দুই মেয়েকেই লাগিয়ে দিবো চুল ছিড়ে গুণতে। আর ছেলেকে লাগিয়ে দিবো তোর মেয়ের পিছু। লাল মিয়াও কিন্তু এই টেকো বউ নিয়ে থাকবে না তখন। সকিনার নতুন মা নিয়ে আসবে।”
সায়মা বিরক্ত হয়ে বললো,
“আহ! চুপ থাকো তো! রহিমা, তোর মেয়ের নাম আমি রাখলাম লামিয়া মুনতাহা রাইসা। আমি রাইসা বলেই ডাকবো।”
“আপা, ভাল্লাগছে নাম! থ্যাঙ্কিউ আপনারে।”
“ওয়েলকাম।”
আয়ান বললো,
” ইতু, এটা কি করলে তুমি! রহিমার এক মেয়ের জন্যই তিন নাম রেখে দিলে আমাদের মেয়েদের নাম শর্ট পড়বে না?”
সায়মা আয়ানের পেটে কনুই মেরে চোখ রাঙালে আয়ান হাসলো।
আয়ান সবে মাত্র ব্যাংকে ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করেছে। এবছর মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করায় আয়ানের রেজাল্ট ভালো হয়েছে। আর সায়মার রেজাল্ট বরাবরই ভালো কিন্তু মারিয়া তাকে চাকরি করতে দিবে না৷ যেহেতু তাদের পরিবারে অভাব নেই সেহেতু বউদের চাকরি করার প্রয়োজন নেই। কোনো অভাবির জন্য একটা পোস্টই বেঁচে যাবে। অযথা চাকরির পোস্ট পরিপূর্ণ না করে যাদের চাকরির প্রয়োজন আছে, তাদের সুযোগ দেওয়াটাই শ্রেয়। তাই অনার্স শেষ করে এখন সায়মা সংসারী। হয়তো কিছুদিন পর রহিমার মতো তার সংসারেও প্রদীপ জ্বলে উঠবে।
ঝগড়াঝাটি মান অভিমানে,
সেজেছে সংসার, জমেছে সব।
কাটছে সময়, যাচ্ছে দিন,
অবশেষে জীবন, হয়েছে রঙিন।
.
(সমাপ্ত)
.
.
[বরাবরের মতো গল্প সম্পর্কিত মন্তব্য আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম। তবে পূর্বেই বলেছিলাম, এই গল্প নিয়ে আমি আপনাদের প্রশ্ন করবো। তো এবার বলুন,

★ “কাজের বেটি রহিমা” গল্পের নায়ক নায়িকা কারা?
.
বি.দ্রঃ উত্তর সাপেক্ষে আমিও কিছু লিখবো পরবর্তী পোস্টে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here