কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥ পার্ট :০১

0
5877

কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট :০১
লেখক:নাদিম আহাম্মেদ

সকালের খাবার সবাই একসাথে টেবিলে বসে খাচ্ছে । এ না যে সবাই একসাথে খাই না ।
অনেক হ্যাপি ফ্যামেলি নাদিমদের ।
খাবার খেতে খেতে ছোট মা নাদিমকে বলে উঠলো ,
—নাদিম ।
—জ্বী ছোট মা ।
—আজ তো অফিস ছুটি তাই না ।
—হ্যা আজ অফিস ছুটি ।
—একটা কথা বলতে চাইছিলাম তোমাকে ।
—হ্যা ছোট মা বলেন ।
—তোমাকে একজনকে ড্রপ করে আনতে হবে ।
—ওকে ছোট মা । বুঝি আপনার বান্ধুবীকে নাকি ।
—না তাকে না ।
—তাহলে কাকে ড্রপ আনতে হবে ছোট মা ।
—তোমার রহিম চাচার ভাতিজিকে ।
.
কথাটা শুনে রহিম চাচার দিকে তাকালো নাদিম ।
—কেনো ছোট মা কাজের লোক দরকার নাকি ।
.
নাদিমের কথাটা শুনে সবাই নাদিমের দিকে তাকালো ।
—না ।
—তাহলে ।
—এস,এস,এসসি তে গোল্ডেন A+ পেয়েছে এতে কয়েক যায়গায় চয়েস এসেছে ঢাকাতে চান্স পেয়েছে ।
—চান্স পেয়েছে তাই কি হয়েছে ছোট মা ।
—ওর নাকি মেডিকেলে পড়ার খুব শখ আর ও ভালো ছাত্রী তাই যদি এখানে পড়াশোনা করে তাহলে ভালো রেজাল্ট হবে । এ কলেজে তো দূর্বল ছাত্র-ছাত্রী এলাও না । তাই ভালো কলেজে পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট তৈরি করে মেডিকেলে পড়তে চায় ।
—তা পড়ুক সমস্যা কি ।
—এখানে তো ওর কোনো আত্নীয় সজন নাই তাই রহিম বলেছে এখানে নিয়ে আসলে কেমন হয় । আর মেয়েটা নাকি বলে লক্ষী সব কাজ করতে পারে । আর আমাদের তো একটা কাজের মেয়ে লাগবে এতে সেই কাজও হয়ে যাবে ।
—আমি ওই কাজের মেয়েকে ড্রপ করে নিয়ে আসতে পারবোনা । ছোটলোকের সাথে এক গাড়িতে ছোট মা ইম্পসিবল ।
.
কথাটা শুনে সবাই নাদিমের দিকে তাকালো । অবশ্য এরকম কথা নাদিম প্রায় শোনায় ।
তখন রহিম চাচা বলে উঠলো ,
—থাক ও গ্রামে পড়াশোনা করবে এখানে পড়তে হবেনা আমি ফোন করে বলো দিবো ।
.
কথাটা বলে রহিম চাচা চোখের পানি মুঁছতে মুঁছতে চলে গেলো ।
—তুই এটা কি বললি বাবা ।
—মামনি কি বলছি সেটা তুমি নিশ্চয় বুুঝতে পেরেছো ।
—এভাবে বলতে হয় না তারা মনে কষ্ট পায় ।
—পেলে পাক আমি তাকে আনতে পারবোনা বলে দিলাম ।
—দিদিভাই তুই নাদিমকে বলেদে মেয়েটাকে নিয়ে আসে । আমি এর চাই তে কোনো কিছু শুনতে চায় না ।
.
বলে খাবার না খেয়ে উঠে গেলো ছোট মা ।
—আমি যেতে পারবোনা ….
.
সিঁড়ি দিয়ে যাবার সময় কথাটা শুনে বললো ,
—আজ যেনো বিকালের মধ্যে এই বাড়িতে ওই মেয়ে দেখতে পায় ।
.
কথাটা বলে সোঁ সোঁ করে তার রুমে চলে গেলো ।
—মামনি ছোট মাকে বলো আমি যেতে পারবোনা ।
—আমি কিছু বলতে পারবোনা । একবার যেনো এ কথা বলেছে সো তাই করকে হবে আমি ওর উপর দিয়ে কোনো কিছু করতে পারবোনা ।
—আমি ওই ছোট লোককে ড্রপ করতে যাবো কখনো না ।
.
নাদিমও না খেয়ে অর্ধেক খাবার রেখে চলে গেলো রুমের দিকে ।
.
খাবার টেবিলে নাদিমের আম্মু-আব্বু – আঙ্কেল আর ছোট বোন বসে খাবার খেতে লাগলো ।
কেউ কাকে ঠেকাতে গেলো না । কারণ বলে কোনো লাভ নেই । একবার যা বলে তাই করে সো সেটা বলে কিছু করতে পারবেনা ।
নাদিমের মা বলে উঠলো কাজের মেয়েকে ,
—সুমি ।
—জ্বী বড় মা ।
—তুমি রহিম কাকে ছোট মার রুমে পাঠিয়ে দিয়ো ।
—ঠিক আছে বড় মা ।
.
তখন নাদিম ছোট বোন বলে উঠলো ,
—আম্মু ভাইয়া একবার না করেছে তখন আর ভাইয়া যাবেনা মনে হয় ।
—তোর ছোট মা একবার যেটা বলেছে সেটা তোর ভাইয়ার থেকে বেশি কঠিন না ।
—হ্যা কিন্তু ছোট মা ভাইয়াকে এতো ভালোবাসে তাই ভাইয়াকে যেতে বলবে না ।
—সেটা আর হবে না ।
—কেনো আম্মু ।
—সেটা তোর ছোট মা ভালো জানে । বললো এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নি ঘুরতে যাবে সবাই শুধু ছোট মা বাদে ।
—ও তাই ।
—হুমমম ।
.
নাদিমের আব্বু বলে উঠলো ,
—রেখা যাবে না কেনো ।
—সেটা রেখা ভালো জানে ।
.
তখন নাদিমের আঙ্কেল বলে উঠলো ,
—ওর নাকি আজ ভালো লাগছেনা ।
—কেনো কি হয়েছে রেখার ।
—কিছুনা ভাবি শুধু বললো মাথা ব্যথা করছে ।
—মেডিসিন লাগাতে বলো ।
—ঠিক আছে ভাবি ।
.
সবাই খেয়ে রুমের দিকে গেলো ।
.
এখন আপনাদেরকে পরিচয় দেই ।
বড় মা হচ্ছে নাদিমের আম্মু ।
বড় মার ২ টি সন্তান এক নাসির আর ছোট বোন খুশি ।
আর ছোট মা যিনি তিনি হলেন নাদিমের খালা মানে নাদিমের আম্মুর ছোট বোন । নাদিমের আম্মু ও খালা দুজন জমজ বোন ছিলো ।
আর আব্বু-আঙ্কেল মানে নাদিমের আব্বু আর
নাদিমের আব্বুর ছোট ভাই ।
নাদিমের আম্মুকে দেখতে এসে নাদিমের খালাকে পছন্দ হয়ে যায় তার দাদির । তখন নাদিমের দাদি বলে যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে তাহলে আমার ছোট ছেলের সাথে আপনার ওই ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে পারি । তখন ছেলেকে পছন্দ করে সবাই কারণ নাদিমের আব্বুর চেয়ে নাদিমের আঙ্কেল দেখতে আরও সুন্দর । তাই জমজ বোনের এক সাথে বিয়ে হয় ।
.
নাদিমের আম্মুর দুইটি সন্তান নাদিম আর খুশি ।
আর নাদিমের খালা মানে ছোট মার কোনো সন্তান নেই তাই নাদিমকে বেশি ভালোবাসে । কেউ নাদিমকে কিছু বলতে পারেনা ছোট মার কারণে যা কিছু ছোট মা করেন সব । ছোটমা অনেক রাগি আর জেদি । যা বলে তাই করে । এতে ছোট বলে তাকে সম্মান করে । আর বিশেষ করে ছোট মা যা বলে তাই করতে হয় সবার ।
থাক এসব কথা পড়ে এক সময় বলবো ।
.
রহিম চাচা ছোট মার ঘরে চলে যায় । ছোট মার ঘরে নক করে ।
তখন ছোট মা বলে উঠলো ,
—ভেতরে আসো ।
—আমাকে কেনো ডাকছেন ছোট ম্যাডাম ।
—তুমি কি মন খারাপ করেছো নাদিমের কথায় ।
—আরে না ম্যাডাম গরীব মানুষের আবার মন খারাপ হবে কেনো । যা সত্যি তাই বলেছে ছোট সাহেব ।
—আরে তুমি এমন করে কথা বলছো কেনো । প্লিজ কিছু মনে করো না রহিম । আমি ওর হয়ে ক্ষমা চাচ্ছি ।
—আরে ম্যাডাম কি বলছেন আপনি । ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত ।
—ঠিক আছে সে কথা বাদ দাও । তুমি কি ফোন করে না করে দিয়েছো ।
—হ্যা না করেছি । বাপ মা মরা মেয়েতো তাই বুঝে বলে না করে দিয়েছি ।
—তুমি এখন ফোন করে বলে দিবে বিকালের টেনে চলে আসতে ।
—ছোট ম্যাডাম থাক গ্রামের কলেজে পড়ুক । যদি ভালো রেজাল্ট হয় তাহলে পড়ে মেডিকেলে ভর্তি করে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবে ।
—আরে যেটা বলছি সেটা করো ।
—ঠিক আছে ।
—তাহলে এখন রুমে গিয়ে ফোন করে ২ টার ট্রেনে ঢাকায় আসতে পারবে । আর আসতে আসতে ৪ টা বেজে যাবে ।
—ঠিক আছে ।
—এখন তাহলে রুমে যাও ।
.
রহিম চাচা চলে গেলো ।
আর ছোট মা রেকিং চেয়ারে বসে রইলো ।
একটু পর রহিজ চলে এলো রুমে ।
এরকম চেয়ারে বসে চিন্তা করছে দেখে বললো ,
—নাদিমের আম্মু বলতে চাইছিলাম কি ।
.
কথাটা শুনে তার দিকে তাকালো ।
—কি বলবে বলো ।
—নাদিম থাক আমি ড্রপ করে নিয়ে আসি ।
.
রেখা কথাটা শুনে চোখ দুটি বড় বড় করে তাকালো ।
—নাদিম তো যেতে ইচ্ছে করছেনা তাই আমি গিয়ে ড্রপ করে নিয়ে আসি আর নাদিম খুশিদের সাথে ঘুরতে যাক ।
—আমি যেটা বলেছি সেটা হবে । নাদিমকে আনতে হবে ।
—তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটা করো ।
—হুমমম ।
—আমি একটু বাহিরে যাবো আধ ঘন্টা পর চলে আসবো ।
.
চলে গেলো রহিজ ।
এদিকে রেখা শুধু চিন্তা করছে । আজ নাদিম খাবার খায় নাই । চেয়ার থেকে উঠে নাদিমের দিকে গেলো ।
.
খাবার নিয়ে চলে গেলো নাদিমে রুমে ।
নক করে রুমে ডুকে গেলো । নাদিম রাগ করে শুয়ে অাছে ।
তখন কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,
—রাগ করেছিস তাই না আব্বু ।
—নিশ্চুপ ।
.
একবার ছোটমার দিকে তাকালো ।
—আরে কথা বল ।
—নিশ্চুপ ।
—তুমি তো জানো এরকম কথা আমার একদম পছন্দ না । ওরা গরীব আর আমরা ধনী এতে কি তারা ছোটলোক । না তারাও মানুষ আমরাও মানুষ এতে ধনী গরীব বোঝায় না । আমরাও তো গরীব ছিলাম এখন বিয়ে হয়ে সেই জন্য ধনী । আর তাদের সামনে এসব কথা বলতে হয় না এতে তারা অনেক কষ্ট পায় । এসব আর কখন বলবেনা বলো ।
—নিশ্চুপ ।
—আচ্ছা কথা না বললি আমি চলে গেলাম আর কখন আসবো না তোর কাছে ।
.
উঠে চলে যেতে লাগলো তখন হাতটা ধর । তখন ছোটমা থেমে গেলো ।
—অাম্মু আমাকে না খায়ে চলে যাবে ।
.
আর কি বলবে ছোটমা । এমন একটা কথা শুনতে পেয়েছে যা হাজার রাগ করে থেকে কথা না বলে পারবেনা ছোটমা ।
ছল ছল চোখ নিয়ে বসে পরে খাটের উপর । কিছু বলতে পারছেনা । কি বলবে আম্মু ডাক শুনে যে মনটা শান্ত হয়ে গেছে । যত রাগ করুক না কেনো নাদিম যদি আম্মু বলে ডাক দেয় তখন সব কিছু ভুলে গিয়ে নাদিমের সাথে কথা বলে । আর তাই সেই দূর্বল কথাটা মাঝে মাঝে সময় মতো বলে ফেলে ।
নাদিম ছোটমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় । ছোটমা কেঁদে দেয় ।
নাদিমের চোখের পানি মুঁছে দিয়ে বলে ,
—আরে কাঁদতে নেই এখন খা ।
—আপনি কেনো কাঁদতেছেন ।
—একটা দুষ্ট ছেলের কথা শুনে বুকের ভেতর কেমন করে দিয়ে যায় আর তখন চোখ দিয়ে পানি ভের হয় ।
—কথা নাই আমি দুষ্ট তাই না ।
—আরে দুষ্ট না আমার লক্ষী আব্বু । ( কপালে চুমু দিয়ে )
—এখন খায়ে দাও খুব ক্ষুধা লেগেছে ।
—এই নি হা কর ।
—হাআআআ । এখন আপনি খান ।
—পরে খাবো ।
—আচ্ছা তাহলে আমিও খাবোনা ।
.
অভিমানি করে একটু অন্য দিকে ঘুরে বসে গেলাম ।
—এদিকে ঘুরে বস ।
—খাবও না বসবোও না ।
—আরে রাগ করিস কেনো ।
—আপনি না খেলে আমিও খাবোনা ।
—আচ্ছা আয় দুজনে খাবো ।
—আই লাভ ইউ আম্মু । ( চুমু দিয়ে )
—আই লাভ ইউ টু আব্বু । ( কপালে চুমু দিয়ে চুলগুলি এলো মেলো করে দিয়ে )
—আপনি আগে খান তারপর ।
—তুমি আগে ।
—না তাহলে কিন্তু…
—এই নি হয়েছে ।
—উম্মামামামামা ।
—হা কর ।
—হাআআআা ।
.
ছোটমা নাদিমকে খায়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে ।
খাওয়া শেষ করে ছোটমা বললো ,
—বিকালে ৩ঃ৩০ ভের হয়ে ড্রপ করে আনো কিন্তু ।
—আম্মু ।
—আব্বু আর কিছু শুনতে চায় না ।
—ঠিক আছে ।
—লক্ষী আব্বু আমার উম্মা । ( কপালে চুমু দিয়ে )
.
চলে গেলো রুম থেকে ।
রাগেতে ভালো হয়েছে ৩ টা চুমু ফ্রিতে আর আম্মুর ভালোবাসা । আহ্ কতো ভালো লাগছে ।
.
কিছুখন রেস নেওয়ার জন্য শুয়ে পরলাম ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here