কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥ পার্ট: ১৮ শেষ পর্ব

1
3134

কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট: ১৮ শেষ পর্ব
লেখক :নাদিম আহাম্মেদ

চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু ঘড়িয়ে পরলো । চিরকুটটি হাতে নিয়ে এক ভাবে বসে আছে নাদিম ।
একভাবে তাকিয়ে আছে চিরকুটের দিকে । কি লিখা আছে চিরকুটের ভেতর ।
চিরকুটের এক এক কথা শেষ করে দিচ্ছে বুকের ভেতর । মনে হচ্ছে ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে । আমিও তো ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারি নি । তোমাকে আমার প্রতি সেই ঘৃণাটা ভুল প্রমাণিত করার জন্য এইগুলি করেছি কিন্তু তুমি আজ আমাকে ছেড়ে চলে গেলে । আমি কি সত্যি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি ।
চিরকুটের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে আর চোখের অশ্রু বেয়ে বেয়ে পড়ছে চিরকুটের উপর ।
.
চিরকুটের লেখা :-
আচ্ছালামু আলাইকুম !
প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
জানি না এই চিরকুটটি পাওয়ার পর কি হবে । কিন্তু আমি মনে করি খুশি হবেন ।
আমি চলে যাচ্ছি বাসা থেকে । আমি ডাক্তার হবোনা । হয়তো সবাই ডাক্তার হতে পারেনা সেরকম আল্লাহ তা’আলা আমাকে ডাক্তার বানাবেন না ।
কিন্তু আল্লাহ তা’আলা একটা জিনিস দিয়েছে আমাকে যেটা চেয়েছিলাম ।
আপনাকে হেদায়েত দান করুক ।
জানি দান করেছে কিনা কিন্তু কাল যখন বলে ছিলেন আমি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েছি তখন আমি এতটা খুশি হয়েছি যা বলে বোঝাতে পারবোনা । আমি আল্লাহুর কাছে শুকুরিয়া আদায় করেছি । কারণ আল্লাহুর কাছে প্রতেকদিন নামাজ পড়ে আপনার কথা বলতাম মোনাজাত করে । আল্লাহ জেনো আপনাকে হেদায়েত দেয় । তাই গভীর রাতে উঠে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে দোয়া করলাম ।
আমি জানি এখন আপনি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিবেন কিন্তু আপনি তো আমাকে চান না তাই আমি চলে যাচ্ছি । এতে আপনি ভালো থাকবেন ।
আমি তো আপনাদের [[কাজের_মেয়ে_ঘরের_বউ]] হয়েছি সেদিন বলেছিলেন ।
বেশি কিছু লিখতে চাই না শুধু একটা কথা রাখবেন নিজের খেয়াল আর যত্ন নিয়েন । ৫ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক সময় মতো আদায় করবেন ।
ওহ্ হ্যা আপনি বলেছিলেন না ডিভোর্স দিবেন । সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিলো কথাটা শোনার পর । কেনো আমি কি কোনো ক্ষতি করেছিলাম । না , করি নি । সেদিন সেই কথার জন্য আমার এরকম একটা জীবন শেষ করে দিলেন । সেটা কোনো বড় বেপার না । আমি খুশি হয়েছি আপনি আপনার প্রতিশোধ নিতে পেরেছেন । এতে আমি বেশি আনন্দ হয়েছি । আপনাকে খুশি করেছি এইটা আমার কাছে অনেক কিছু ।
ও আর হ্যা আমি আপনার কাজটা করেছি ডিভোর্স পেপার বালিশের নিচে রাখা আছে । আমি সাক্ষর দিয়েছি শুধু আপনি দিলে হবে ।
ভালো থাকবেন আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।
—-আল্লাহ হাফেজ—–
.
চিরকুটটি পড়ে অঝর ঝরে কাঁদতে লাগলাম ।
.
পুরুষের অল্প আঘাতে বা অল্প কষ্টেতে চোখ দিয়ে পানি ঝরে না । পুরুষের বুকের ভেতর কষ্টগুলি সহ্য করতে পারে বলে সহযে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে না ।
নারীদের চোখের অশ্রুর থেকে পুরুষের অশ্রু অনেক পার্থক্য আছে । নারীর হঠাৎ করে চোখের পানি বের হয় কিন্তু পুরুষের তা হয় না । অনেক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কয়েক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পরে ।
পুরুষের এতটা আঘাতের পর চোখের পানি বের হয় ।
আপনি কি দেখেছেন আপনার পরিবারে পুরুষের/ছেলেদের চোখের পানি । হয়তো সব সময় দেখা যায় না । হ্যা আমি দেখেছি একটা পুরুষের চোখের পানি । পচন্ড কষ্ট সহ্য করতে না পেরে চোখের পানি বের হয় । তাও আবার আরালে । জেনো কেউ দেখতে না পারে কেউ না । এক আল্লাহ ছাড়া।
আমি এটা বলছিনা যে নারী/মেয়েদের চোখের পানি এমনিতে বের হয়না বরং কষ্টের কারণে বের হয় । কিন্তু পুরুষের চেয়ে ভিন্ন । নারীরা অল্প আঘাতে চোখের অশ্রু ঝরিয়ে নিজের কষ্টগুলি হালকা করে । কিন্তু পুরুষের সেরকম হয় না কষ্টগুলি বুকের ভেতর চাঁপা দিয়ে রেখে দেয় । জেনো কেউ বুঝতে না পারে ।
.
চিরকুট বিছানায় রেখে ঘড়ির দিকে তাকালাম । দেখি ৪ টা বাজে ইস্ সিট আর মাত্র ১ ঘন্টা বাদে সিরাজগঞ্জের ট্রেন যাবে ।
ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে তাকালাম দেখি ছোটমা আর মামনি ও খুশি দাড়িয়ে আছে ।
আমার কাঁন্না দেখে এগিয়ে এলো ।
ছোটমা জিজ্ঞেস করলো ,
—কি হয়েছে ।
—কিছুনা । ( মন খারাপ করে কাঁন্না কন্ঠে )
.
ছোটমা চিরকুটটি হাতে নিলো ।
আমি ছোটমার দিকে তাকিয়ে আছি কি রিয়েক্ট হবে ।
চিরকুটটি পড়ে ছোটমার চোখটা কেমন মলিন ময় হয়ে গেলো ।
.
মামনি ছোটমাকে জিজ্ঞেস করলো ,
—কি রে কি হয়ছে ।
.
ছোটমা মামনিকে চিরকুটটি দিলো হাতে দিলো ।
মামনি চিরকুটটি পড়ে আমার দিকে তাকালো ।
ছোটমা বলে উঠলো ,
—নাদিম ।
—জ্বী ছোটমা ।
—কেনো এমন করলি আমাদের সাথে ।
—মানে কি করেছি ।
—তোর যদি তারিনকে না পছন্দ হয় তাহলে আমাদের বলতে পারতি । আমি কি সেটা মেনে নিতে পারতাম না । আমাকে দেখে এতো ভয় পাস নাকি সম্মান করিস । যদি এইগুলি ভেবে রাজি হয়েছিলি সেটা ভুল করছিস । জানিস তুই একটা মেয়ের তার অনেক স্বপ্ন থাকে । কিন্তু তুই তো সেটা করতে দিলি না । আমাদের বলতে পারতি যে আমি তারিনকে বিয়ে করতে পারবোনা । কেনো বলিস নি বল । ( রেগে )
—নিশ্চুপ ।
.
মাথা নিচু করে বসে আছি । কি বলবো আজ তো আমার কোনো উত্তর নেই মুখে ।
ছোটমা আবার বলতে শুরু করলো ,
—কাজের মেয়েকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবোনা । কাজের মেয়ে মানুষ না । তাদের কি কোনো মন মানসিকতা নেই । তারা কি ভালোবাসতে পারেনা । নিজেকে কি ভাবিস খুব বড়লোক । আজ যদি তুই মরিস তাহলে তোর এই ধনসম্পদ দিয়ে কি হবে । শোন নিজেকে একটু সাধারণ হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর তাহলে কিছু শিখতে পারবি । একটা কথা মনে রাখ যে ভুল করেছিস তা কখন ক্ষমা পাবিনা । ( রেগে)
.
ছোটমা কথাটা বলে রুমের দিকে চলে গেলো ।
মামনি ডাক দিলো কয়েকবার কিন্তু কিছুতে কাজ হলো না ।
—তুই এত নিচ আমি জানতাম না । তোকে খুব বিশ্বাস করতাম ও ভাবতাম তুই খুব ভালো কিন্তু আজ তার প্রমাণ পেলাম । আমার ঘৃণা হচ্ছে তোর প্রতি । যে তোকে আমরা এই শিক্ষা দিয়েছি । ছিঁ ছিঁ ।
.
মামনি বলে বের হয়েগেলো রুম থেকে সাথে খুশিও ।
.
আমি কি করবো এখন নিজেকে শেষ করে দিবো । না এটা করা যাবেনা তাহলে আমি জান্নাতে যাবো কেমনে তারিনের সাথে ।
চোখের পানি মুছে ঘড়ির দিকে তাকালাম । ৪:২৫ বাজে । ও মাই গড । আর মাত্র ৩৫ মিনিট পর সিরাজগঞ্জের ট্রেন যাবে ।
তাড়াতাড়ি করে বের হয়েগেলাম রুম থেকে ।
.
গাড়ি নিয়ে ইস্টিশনের দিকে রওনা দিলাম ।
মাথার ভেতর একটা শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে । তারিন কি সত্যি চলে গেছে ।
গাড়িটি ব্রেক করলাম । ওহ্ সিট ।
বাহিরে থেকে শব্দ এলো । চোখে দেখেন না এভাবে কেউ গাড়ি চালায় ।
কি আর করা শুধু বকা শোনা ছাড়া কিছু নেই ।
এমনি তে মাথায় কাজ করছেনা । এমন কেনো করলো আমার সাথে তারিন ।
প্রায় ৩৫ মিনিট পর পৌঁছেগেলাম ইস্টিশনে ।
ট্রেন এখনো যায়নি তার মানে এখনো তারিন যায় নি ।
আমি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে পরলাম । ট্রেন হর্ণ দিচ্ছে । এর মানে ট্রেন এখন ছেড়ে যাবে ।
আমি ট্রেনের ডাব্বায় চেক করতে লাগলাম ।
একটা করেছি কিন্তু ওটাতে নেই ।
সেখান থেকে নেমে আবার অন্যটা খুঁজতে লাগলাম । কিন্তু সেখানে নেই ।
এর মধ্যে ট্রেন হর্ণ দিচ্ছে । এর মানে ট্রেন ছেড়ে দিবে ।
কিছু মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ভাবছে আমি কেনো এরকম করছি ।
আবার অন্যটা দেখলাম কিন্তু সেখানে নেই ।
এভাবে আরও ৪ টা দেখলাম কিন্তু নেই ।
.
এর মধ্যে আস্তে আস্তে ট্রেনটা চলতে শুরু করছে । আর মাত্র একটি ১ টা বাকী আছে খোঁজার কিন্তু ট্রেন তো চলতে শুরু করেছে ।
মাথাটা কেমন জানি করে উঠলো । চোখটা আন্ধার হয়ে আসছে ।
তাড়াতাড়ি করে শেষ ডাব্বায় উঠে পরলাম ।
ট্রেনটি আস্তে আস্তে স্পিড বাড়ছে ।
মনের ভেতর ভয় করছে যদি এই টাতে না থাকে তাহলে চলে গেছে তারিন ।
ভাবতে একটা ঝাঁকুনি খেলাম । তখন একটু ঘোর কাটলো ।
আমি খুঁজতে লাগলাম ।
কিন্তু এখানে নেই । এদিকে ট্রেন আস্তে আস্তে স্পিড বেরে যাচ্ছে । আমাকে নামতে হবে না হলে কোথায় যাবো এর কোনো ঠিক নেই ।
কিছু মানুষ এমন ভাবে তাকিয়ে আছে । মনে হচ্ছে আমি কোনো কিছু খেলা দেখাচ্ছি ।
আমি লাফ দিয়ে নেমে পরলাম ।
ট্রেন ইস্টিশন থেকে চলে গেলো । আমি থ হয়ে আটু গেড়ে পরে গেলাম । চোখের অশ্রু ঝরে পরছে ইচ্ছে মতো ।
আমি একবার চতুর্দিকে তাকালাম । সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমাকে দেখছে আর মনে করছে আমি পাগল ।
আমি উঠে দাড়ালাম । চোখটা মুঁছে যাত্রী সিটে গিয়ে বসে পরলাম ।
মাথার ভেতর শুধু তারিনের কথা ভাবছি । কিছুখন কাঁদলাম বসে থেকে ।
তারিন এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা । আমি তো তারিনকে মনে ভালোবাসি । তাই বলে কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে । না এটা হতে পারেনা । তারিন আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা ।
মনে হচ্ছে পিঁছনে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে । তারিন আমাকে তো দেখছে না । চোঁখটা মুছে পিঁছন ফিরে তাকালাম । কই কেউ নাই তো । তাহলে আমার এটা ভুল ধারণা ।
আবার চোঁখ দিয়ে অঝরে বৃষ্টির মতো অশ্রু ঝরে পরছে । কিছুতে মনকে শান্তনা দিতে পারছিনা ।
কাজটা আমার ঠিক হয় নি । কেনো এরকম করলাম আমি ।
আচ্ছা তারিন কি আর কখন আসবেনা আমার কাছে । নাকি একবারে চলেগেছে আর কখন আমার সাথে দেখা হবেনা ।
শুধু একবার আমার কাছে এসো তারিন । শুধু একবার ফিরে এসো দেখবে আর কখনো তোমাকে হারাতে দিবোনা ।
চোখের সামনে কে জেনো ডায়রি ধরলো ।
আমি একটু অবাক হলাম । এটা তো আমার ডায়রি ।
আমি তার দিকে তাকাতে অবাক হলাম ।
আমার হার্ট বিট বেরে যাচ্ছে । কেমন করে হতে পারে নাকি স্বপ্ন দেখছি আমি ।
আমি উঠে ধারালাম ।
তারিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে । শুধু চোখ দেখতে পাচ্ছি । বুঝতে পারছি তারিনও কাঁদছে ।
তারিন আমার দিকে ডায়রিটা ধরে আছে ।
আমি বুঝতে পারছিনা ডায়রি ধরবো নাকি তারিনকে জরিয়ে ধরবো । কিছু বুঝতে পারছিনা ।
আমি তারিনের কাছাকাছি এলাম । তারিন সেই একি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা ।
আমি তারিনের হাত ধরলাম ।
তারপর গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলাম । সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এখন সবাই বুঝতে পেরেছে কেনো আমি এরকম করছি ।
গাড়িতে উঠে বসে রইলাম দুজন । কেউ কিছু বলছিনা । আমি তারিনের দিকে একবার তাকালাম । আমার দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে ।
আমি গাড়ি চালাচ্ছি আর তারিনের দিকে তাকাচ্ছি ।
.
বাসায় চলে এলাম ।
অতঃপর
খাবার খেয়ে রুমে চলে এলাম ।
কিছুখন পর তারিন চলে এলো রুমে ।
আমি শুয়ে পরলাম ।
আমার শুয়ে থাকা দেখে ভ্রুঁ কুচকে কিছুখন তাকিয়ে কি জেনো ভাবলো ।
আমি শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি । কিন্তু আজ ঘুম মামা যে চোখে আসছে না ।
তারিন ঘরের কাজ করছে ।
কিছুখন পর ঘড়ির দিকে তাকালাম ।
দেখি রাত ১১:৫৫ বাজে ।
আজ অনেক রাত হয়েগেছে তারিনকে ফিরে পেয়ে । তাই আজ ধেরিতে খাবার খাওয়া হলো । আর তাই ঘুমাতে ধেরি হচ্ছে ।
একটু পর বুঝতে পারলাম । তারিন রুমে নেই । আমি ওপাশ ঘুরে দেখি তারিন নেই ।
আমি উঠে বেলকুনিতে চলে গেলাম । দেখি দাড়িয়ে কাঁদছে ।
হঠাৎ কাঁন্নার কারণ কি ।
আমি তারিনের কাছে চলে গেলাম ।
কাছে যাওয়াতে তারিন চোখ দুটি মুঁছে ফেললো ।
আমি তারিনের হাত দুটি ধরলাম ।
তারিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
—কাঁদছো কেনো ।
—তোমার জন্য ।
.
আমি অবাক হলাম ।
—আমার জন্য মানে বুঝলাম না ।
—তোমার বোঝা লাগবেনা ।
—অভিমান করেছে কেনো ।
—সেটা বুঝবেনা ।
—আচ্ছা চলো এখন ঘুমাবে ।
—চলো ।
—এভাবে যে তে পারবোনা ।
—তাহলে ।
—এটা কি শিখিয়ে দিতে হবে ।
.
আমি ভাবলাম কিভাবে নিতে হয় । ওহ্ হ্যা দূর মশাই কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিন । হ্যা তাই তো তাই দিতে হবে ।
আমি তারিনকে কোলে তুলে নিলাম । তারিন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি তারিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ।
রুমে নিয়ে এলাম । বিছানায় শুয়ে দিলাম তারিনকে ।
তারপর আমি শুয়ে পরলাম ।
আমার শুয়ে থাকা দেখে বললো ,
—এই তুই আজ ফ্লোরে শুয়ে থাকবি ।
.
তারিনের কথাটা শুনে কেমন জানি ভয় খেলাম । হঠাৎ তুই করে কথা বলছে ।
—আমি কেনো ফ্লোরে শুয়ে থাকবো ।
—আমি দুজন এক বিছানায় শুয়ে থাকতে পারিনা ।
.
কথাটা শুনে আমি কেমন জানি হয়ে গেলাম । বিয়ের দিন থেকে আমার সাথে শুয়ে আসছে আর আজ বলে কি । এক বিছানায় দুজন শুয়ে থাকতে পারিনা ।
—কি হলো কি ভাবছিস তাড়াতাড়ি কর আমার ঘুম আসছে ।
.
কি আর করা আমি উঠে পরলাম ।
ফ্লোরে গিয়ে শুতে যাবো তখন পিছন থেকে তারিন আমার হাতটি ধরে ফেলে ।
আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি রাগি চোখে তাকিয়ে আছে । আমি কি কিছু ভুল করেছি নাকি । নাহ্ কই কিছু ভুল হয় নাই তো ।
—আমি আবার কি করেছি…
.
আমার ঠোঁটের উপর তারিন হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করলো ।
তারিন আমার শার্টের কলার চেপে ধরে তারিনের কাছে নেয় ।
আমি ভয় খেয়ে গেলাম । আমি তো এমন কিছু করি নি যে কোথাও ভুল হয়েছে ।
তারপর তারিন বলতে থাকে ,
—কি রে তুই ফ্লোরে কেনো শুতে যাস ।
—তুমি তো বল….
.
আমাকে কথা বলতে না দিয়ে তারিন বললো ,
—আমি বললে যাবি তুই ।
—না মানে ।
—আমাকে ভালোবাসিস তো বলতিস না কেনো ।
—কে বলেছে ।
—তোর ডায়রি আমি সব পেজের লেখা দেখেছি । প্রায় ২ ঘন্টা লেগেছে পড়তে । জানিস কতো কেঁদেছি ডায়রিটা পড়ে । কেনো করলি আমার সাথে এরকম ।
যখন আন্টির কাছে চলে গেলাম সব শুনতে । তখন আমি মিষ্টির কথা শুনে আমি চলে যেতে চেয়েছিলাম । তুই আমাকে মেনে নিতে পারিস নি তাই আমি চলেগেলে তুই ভালো থাকবি । কিন্তু যখন ব্যাগের ভেতর সেই ডায়রিটা চলে যায় । আমি টিকিট কাউন্টারে এসে টিকিট কেটে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম তখন মনে হলো একটু বই পড়ি । যখন বই বের করতে তোর ডায়রিটা পেলাম তখন মনে পরে গেলো বাসর রাতের কথা । তুই কি জেনো লিখছিলি । পরে আমি অনেক খুঁজেছিলাম কিন্তু কোথাও পাই নি । আজ যখন পেয়েছি তখন ডায়রিটা খুঁলে পড়তে থাকি । প্রতিটা পাতা পরে আমি কেঁদেছি । এতটা ভালোবাসতি মিষ্টিকে । তারপর যখন তোদের ব্রেকআপের পাতা পরলাম তখন একটু জোরে কেঁদে দিয়েছিলাম তোর কথাগুলি পড়ে । তারপর প্রতিটিদিন খুব কষ্টে পার করেছিস ।
তারপর আবার আমাকে যখন দেখলি তখন খুব ভালো লাগে । কিন্তু ডায়রিতে লিখেছিলি । যখন আমি তোকে ড্রাইবার বলে গালি দিলি তখন তুই মনে মনে রাগ করতি । তারপরে যখন আমার কাছে আসলি তখন আবার আমাকে ভালো লাগা শুরু করে । কিন্তু মিষ্টির কথা মনে পরে যাওয়াতে তুই আমাকে দূরে সরিয়ে দিতি । কিন্তু ভাগ্যে আবার বউ করে আমাকে আনলি । একটা কারণে বাসর রাত তোর স্বপ্নের রাত শেষ করে দিয়ে বুকের ভেতর কষ্টগুলি রেখে দিতি । এভাবে প্রতিটি পাতা আমি পড়েছি আর কেঁদেছিস । আমাকে ভালোবাসতি কিন্তু বলতে পারিস নাই কেনো । প্রতিশোধ নিয়েছিস ঠিক কিন্তু যে কষ্ট আমি পাবো তার চেয়ে বেশি কষ্ট তুই পেয়েছিস কষ্ট দিয়ে ।
এরকম করছিস কেনো হুম । তুই কেনো আমাকে দুরে ঠেলে দিলি । আমাকে এতো ভালোবাসার পরে কেনো আমাকে এরকম করে কষ্ট দিতি ।
যদি এই ডায়রিটা না পেতাম তখন তো আমি চলে যেতাম । তখন কি করতি আরও বেশি কষ্ট হতো । কিন্তু আল্লাহ তা’আলা আমাকে সেটা করতে দেয় নি । আমি তখন ট্রেনের টিকিট ছিড়ে ফেলি । তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম আমি গেলে তুই তো শেষ হয়ে যাবি । তাই যখন বাসার দিকে রওনা দিলাম তখন দেখি তুই গাড়ি নিয়ে এসেছিস । পড়ে তোকে দেখা না দিয়ে আড়ালে থেকে দেখলাম কি করিস তুই ।
.
তারিন কথাটা বলে দিলো এক এক করে ।
আমি তখন বলতে থাকলাম ।
—কি করবো বলো তুমিতো সেদিন বলেছিলে আমি নাকি তোমার শরীরের দিকে লোভ করেছিলাম কিন্তু আমি সত্যি শরীরের দিকে লোভ করি নি । আর সেটা বোঝানোর জন্য তোমার সাথে এইগুলি করছি । কিন্তু তুমি এইটুকু বুঝতে পারলেনা তোমার কোনো কিছু খারাপ দেখতে পারতাম না । তোমার ভালো লাগা থেকে সব কিছু আমি শায় দিয়েছি । তোমার প্রতি অনেক যত্ন নিয়েছি । তোমার কোনো কিছুতে খারাপ লাগলে সেটা আমি করি নি । শুধু তোমার অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছি । কিন্তু আমারও তো ইচ্ছে করে অন্য পুরুষের মতো তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে কিন্তু একটা জায়গায় শুধু থেমে যায় । শুধু তোমাকে বোঝানোর জন্য এইগুলি করেছি । কেউ কি স্ত্রীকে মেনে নিতে না পারলে স্ত্রীর সব দিক খেয়াল রাখে বলো । কিন্তু তুমি বুঝতে পারনি আমার ভালোবাসা ।
—এখন বুঝেছি ।
.
বলে তারিন আমাকে ডাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় । তারিনকে আমি টান দিয়ে আমার উপর ফেলে দিলাম ।
—কি হলো তোর সাহস তো কোম না আমাকে তোর উপর ফেলে দিলি ।
—আমার বউকে আমি দিবো তাতে তোমার কি ।
—এই কি করছো ।
—কি করছি হুমম শুধু দেখ ।
—না না এটা করোনা ।
—চুপ…
.
তারপর তারিনের আমার ঠোঁটে তারিনের ঠোঁট এক হয়ে যায় ।
তারপর তারিন আর আমি সুখের সাগরে ভেসে যায় ।
অতঃপর
গভীর রাতে । তাহাজ্জতের সময় ।
—এই ।
—কি ।
—জান্নাতে যাবে না ।
—হ্যা যাবো সাথে তোমাকে ।
—তাহলে চলো তাহাজ্জতের নামাজ পড় আল্লাহুর কাছে চেয়ে নেই ।
—হুমমম চলো ।
—এই কি করছ…..
—চুপ ।
—এটা ঠিক হলোনা ।
—চলো ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে জান্নাত চেয়ে নেই ।
—চলো ।
.
তারিন আর নাদিম ফ্রেশ হয়ে এসে ।
দুজন তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে । আল্লাহুর কাছে দোয়া করে দুজন জেনো জান্নাত চেয় নেয় ।

সমাপ্ত

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here