কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥ পার্ট:০৯

0
2097

কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট:০৯
লেখক : নাদিম আহাম্মেদ

আমি ছাঁদে গিয়ে অবাক হলাম । কি দেখছি আমি সত্যি কি আমি তারিনকে দেখছি ।
বাহ্ শ্যামলা কালো মেয়েটিকে বেশ ধারুন লাগছে । অনেক সুন্দর লাগছে তারিনকে । মাঝে মাঝে অসম্ভ সুন্দর লাগে তারিনকে ।
নীল শাড়ী পড়েছে সাথে ম্যাসিং করা কানের দুল । কি আর বলবো মেয়েদের সাঁজগোজ করে কারও সামনে চলে এলে যে কারও ভালো লাগা কাজ করবে । সেরকম আমারও কাজ করছে বুঝতে বাকি রইলো না ।

জানি না এই ভালো লাগা কি ভালোবাসা নাকি আবেগ । সেই ইস্টিশন থেকে বোঝার চেষ্টা করে আসছি বুঝতে কিন্তু না কিছু বুঝতে পারি নি ।
মেয়েটি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । হয়তো মেয়েটার স্বামী কে হবে জানি না । কিন্তু যেই হোক না কেনো সে অনেক ভালো একটা বউ পাবে । যাকগে সে কথা । সে বিষয়ে কথা না বলা ভালো ।
আমি তারিনের কাছে গিয়ে দাড়ালাম ।
কিছু সেকেন্ড পার হয়ে গেলো দাড়িয়ে আছি কিছু বলছেনা । তার মানে আমি যে ছাঁদে এসেছি সেটা খেয়াল নেই । আমি তখন তারিনকে বললাম ,
—কি দেখছেন ওমন করে তাকিয়ে ।
—নিশ্চুপ ।
.
কথা বলছেনা তার মানে সে কোনো কিছু গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে বোঝা যাচ্ছে ।
—কি হলো কি ভাবছেন ।
.
আমার কথাটা শুনে একটু চুমকে উঠলো ।
আর কোনো কিছু চিন্তা করলে তখন যদি কেউ কিছু বললে যে কেউ চুমকে উঠবে সেরকম তারিনও চুমকে উঠে ।
—আরে কথা বলছেন না কেনো ম্যাডাম ।
—কি বলবো আমি ।
—কি বলবো আমি মানে আপনি তো ম্যাসেজ দিলেন যে আমি ছাঁদে চলে এসেছি ।
—আরে সকালে কে বলেছিলো ছাঁদে আসতে ।
—ও সিট্ আমার তো মনে ছিলো না ।
—জ্বী এখন মনে আছে সো এখন বলেন ।
—কেনো বাসায় যেতে চেয়ে ছিলেন ?
—এমনি যেতে চাইছিলাম ।
—এমনি নাকি আমার জন্য ।
.
কথাটা শুনে আমার চোখের দিকে তাকালো ।
—আমার জন্য আপনার জন্য না ।
—তাহলে মামনিকে বলেছেন কেনো । যে আপনাকে নাকি খারাপ ধরনের ব্যবহার করেছে সেজন্য আর থাকতে চান না ।
—এমনি বলেছি ।
—এমনি বলেছেন তাই না । তাহলে বলে দিয়েন যে আপনার বড় ছেলে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে ।
—সেটা বলার প্রয়োজন মনে করি না ।
—না কি অন্য কিছু ।
—আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য ডেকেছেন ।
—আরে রেগে যাচ্ছেন কেনো আমি তো আপনাকে ভালো কথা বলছি ।
—আর কিছু বলবেন ।
—কেনো চলে যাবেন নাকি ।
—হুমম ।
—তাহলে যান ।
—যদি আর কিছু বলতে চান তাহলে বলতে পারেন ।
—কিছুনা ।
.
তারিন চলে যেতে লাগলো তখন ডাক দিয়ে বললাম ।
—এই যে দাড়ান ।
.
তারিন দাড়িয়ে গেলো ।
আমি কাছে চলে গেলাম ।
—আমি বলাতে থেকে গেলেন ।
—মানে ।
—মানে হলো আমি বলেছি জাবেন না আর আপনি যান নি তাই বলছি ।
—আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে চান ।
—আসলে না মানে ।
—কি ।
—টেষ্ট পরীক্ষা কবে ।
.
আমার দিকে ভালো করে তাকালো । বাহ্ কি দেখছে আমার ভেতর ।
—৭ তারিখে ।
—ও ।
—শুধু এই প্রশ্নের জন্য ডেকে ছিলেন ।
—না মানে হ্যা ।
—আমার পড়তে হবে আমি গেলাম ।
.
বারে কি ভাব রে বাবা । আমাকে পড়তে হবে আমি গেলাম । আচ্ছা এই মেয়েরা এতো পড়াশোনা করে কেনো । সারাদিন শুধু বই নিয়ে পড়াশোনা । পাগল হয়ে যাবে কয় দিন পর
—এই যে মিঃ কি ভাবছেন ।
—পাগল হবেন কয়দিন পর তাই ভাবতেছি ।
—কিহ্ বললেন পাগল হবো কয়দিন পর । কে বলছে আপনাকে ।
—কিছু না আর কেউ বলে নি । যান পড়া অভিশাপ দিবে না পড়লে ।
—যত্তসব ফালতু মার্কা কথাবার্তা ।
—হিহিহিহি ।
—দাঁত বের করে হাসে আবার যত্তসব গাধা মার্কা পোলাপান ।
.
কথা বলে রেগে ৪০০০+ বোল্ট হয়ে চলে গেলো ।
জানি হঠাৎ করে তারিনকে ইচ্ছা না থাকা সত্যে রাগিয়ে ফেলি ।
আমি পিছন ফিরে ইট পাথরের ঘর গুলি দেখতে লাগলাম ।
হাসি দিলাম কিছু কথা মনে করে । তখন আবার চিৎকার শুনতে পেলাম । আরে কিছু হয় নি এ চিৎকার হলো । আমি হাসি সেজন্য চিৎকার দিয়ে বলে গেলো ।
—আবার ফাজিলের মতো দাঁত বের করে হাসে ।
.
আমি তারিনের দিকে তাকিয়ে ৩২ পাটি দাঁত বের করে দিলাম আর একবার হাসি । আরও রেগে চলে গেলো ।
বাহ্ ধারুন কাজ করলাম । কি বলতে এসেছিলাম আর কি বলে ফেললাম ।
আমি সন্ধ্যার সময় রুমে চলে এলাম ।
রুমে এসে শুয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম সেই চিরচেনা আমার বেষ্ট গেম ভাইসিটি গেম ।
ল্যাপটপ অন করে একটু শুয়ে পরতে টেবিলের উপর একটা কাগজ দেখতে পেলাম । তাও আবার কাগজের উপর কলম দিয়ে রেখেছে । মনে হচ্ছে একটু আগে লিখেছে । কারণ টেবিলে কোনো কিছু ছিলোনা তখন ছাঁদে যাবার সময় লক্ষ করেছি ।
আমি টেবিলের কাছে চলে এলাম ।
কাগজের লেখাটা দেখে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আবার হাসি পাচ্ছে ।
কাগজে লেখা আছে বড় বড় করে লেখা ।
.
ফাজিল মার্কা পোলাপান । দাঁত গুলি ভালো করে ব্রাশ করবেন । যাতে হাসি দিলে গন্ধ না বের হয় ।
ফাজিল ছেলে ।
.
লেখাটা পড়ে আমি হাতটা মুখের সামনে এনে হা করলাম । কই নাতো গন্ধ বের হচ্ছে না । দেখি আয়নার কাছে গিয়ে দেখি দাঁতের কি অবস্থা ।
আমি ডেসিং টেবিলের কাছে এসে । আয়নার সামনে আগে ৩২ পাটি দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম । না গন্ধ তো বের হয় নাই । দাঁত গুলি বিচ্কি দিয়ে দেখছি দাঁত ব্রাশ করতে হবে নাকি । না করতে হবেনা দাঁত তো স্বর্ণের মতো ঝমকালো দিচ্ছে । আবার দাঁত বের করে দেখছি ভালো করে তখন হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।
আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি তারিন হাসি দিয়ে তারিনের রুমে চলে গেলো । আমি একটু লজ্জা পেলাম নিজে নিজে আবার কি জেনো বেবে হেসে উঠলাম ।
তারপর আর গেম খেললাম না । ল্যাপটপ অফ করে শুয়ে পরলাম ।
.
সকালে খাবার খেয়ে অফিসে চলে গেলাম ।
আবার আগের মতো হয়ে গেলো হাসিখুশি ।
ছোটমা জিজ্ঞেস করেছিলো তারিনের সাথে কিছু হয়েছিলো নাকি । পরে আমি বলাতে থেকে গেলো ।
আমি ছোটমাকে মিথ্যে বলে এড়িয়ে গেলাম ।
এভাবে চলতে থাকে দিন ।
দিরে দিরে চলতে চলতে থাকলো সময় ।
আর তারিনের আর খুশির পরীক্ষা এসে গেলো ।
সময়টা কেমন জানি চোখের পলকে কেটে গেলো ।
প্রতিদিন সকালে খাবার খেয়ে অফিসে যাওয়া আর সন্ধ্যায় বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস নিয়ে ।
রাতে ছাঁদে গিয়ে জ্যোস্ন্যা দেখা মাঝে মাঝে । খুশির আর তারিনের সাথে দুষ্টুমি করা আর ঝগড়া করা । অনেক ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছি । ক্লোজ হয়েগেছি এখন । এটাই হচ্ছে প্রত্যহ রুটিন ।
এভাবে দিন কাটতে থাকে ।
এদিকে খুশির আর তারিনের পরীক্ষা এসে গেলো ।
এদিকে ছোটমা আর মামনি আমার বিয়ে নিয়ে নিয়ে কান জ্বালাপেলা করে দিচ্ছে । আমার কোনো পছন্দের কোনো মেয়ে আছে কিনা । আমি কিছু না বলে চলে আসি তাদের সামনে থেকে । কারণ বলবো তাদের কিছু বলার মতো নাই ।
কলেজে থাকতে একজনকে পছন্দ হয়েছিলো পরে প্রপোজ করার আগে জানতে পারলাম সে নাকি অন্য কাউকে পছন্দ করে । তাই আর কাউকে পছন্দ করলে সেটা ভালো লাগা বলে কাটিয়ে দিতাম ।
এভাবে চলতে থাকে দিন । কিন্তু মামনি আর ছোটমা উঠে পরে লেগেছে আমার পিছনে ।
রাতে শুয়ে আছি তখন মামনি আর ছোটমা আমার রুমে চলে এলো । আমি একবার তাদের দিকে তাকিয়ে আবার ল্যাপটপে গেম খেলতে লাগলাম । জানি কি বলতে আসছে ।
ছোটমা আর মামনি দুজনি আমার পাশে বসে গেলো ।
—এতো বড় হয়েছিস তাও বাঁচ্চাদের মতো গেম খেলিস ।
.
আমি ছোটমার কথা শুনে তাকালাম মুখের দিকে । কিছু বললাম না । আর কি বলবো কিছু বলার মতো নাই । গেম খেলা আমার অভ্যাস তার উপর ভাইসিটি বেষ্ট । আর ফোনে তো ক্ল্যাস অফ ক্লান গেম আর সি ও সি গেম খুব ভালো লাগে ।
—কি রে গেম খেলা অফ রাখ এখন ।
.
আমি গেমের স্কিনের উপর দিকে তাকিয়ে বললাম ।
—ছোটমা এক কথা কতো বার জিজ্ঞেস করছেন বলেন তো ।
—সেটা বলে দিলে তো আমি আর তোর ছোটমা বারে বিরুক্তি করতাম না ।
—আব্ব্বু বলে দাও তো কোনো পছন্দ মেয়ে আছে নাকি ।
—বলে দে বাজান ।
—মামনি কতোবার বার বলবো আমি এখন বিয়ে করবো না । আর বিয়ে মানে স্বাধীনতাহীন জীবনযাপন করা । আর বিয়ে করে কোনো পেরাতে পরতে চাই না ।
—হাহাহাহাহা দেখছি আপু কি বলে তোর ছেলে ।.
.
ছোটমার হাসা দেখে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ।
—হুমমম পাগলের মতো কথাবার্তা ।
—মামনি আমি সুস্থ মস্তিষ্ক মানুষ সো নো ম্যাড ।
—হাহাহাহাহা ।
—ছোটমা রাগ উঠছে কিন্তু হাসবেন না ।
—ওকে এখন বল ।
—নাই নাই নাই । ( জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম )
—বাজান আসতে বল ।
—না আমি দিরে কথা বলতে পারি না ।
—ঠিক আছে ।
—আমি জানি তোর কোনো পছন্দের মানুষ নাই । কারণ যদি থাকতো তাহলে আমাদের বলতি বা একদিন নিয়ে আসতি ।
—তাহলে এতো জিজ্ঞেস করছেন কেনো ।
—ওকে গেম খেল মাথা ঠান্ডা হবে ।
.
বলে দুজন চলে গেলো । সারাখন শুধু বিয়ে বিয়ে করে জ্বালাচ্ছে ।
যাক বাবা বাঁচা গেলো ।
আমি আর গেম খেললাম না । ল্যাপটপ অফ করে শুয়ে পরলাম।।
সকালে অফিসে চলে গেলাম ।
সন্ধ্যায় বাসায় এসে শুয়ে পরি রেস নেওয়ার জন্য ।
এভাবে কাটতে থাকে দিন ।.

এদিকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ।
এখন অফিসে যেতে দেয় না । মানে পরীক্ষা দিচ্ছে দুজন আর আমি নিয়ে যাওয়া আর নিয়ে আসা আমার দায়িত্ব দিয়েছে । আমি এখন ড্রাইবিং করি না । হাতেম আঙ্কেলকে প্রতিদিন নিয়ে আসে আর নিয়ে যায় ।
পরীক্ষা এক এক করে শেষ হতে লাগলো ।
.
প্রায় ১ মাস হয়ে গেলো পরীক্ষা শুরু হয়েছে ।
আর পরীক্ষা শেষ হবে কাল ।
যাক বাবা বাঁচা গেলো । এতো কষ্ট হচ্ছে যে প্রতিদিন ৩ ঘন্টা করে অপেক্ষা করি । সেটা আর অপেক্ষা করতে হবে না ।
যাক খুশির আর তারিনের কথাটা শুনে খুব ভালো লাগে যখন বলে পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে । তখন সব কিছু কষ্ট ভুলে যায় ।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ৮ বেজে গেছে ।
লাফ দিয়ে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হতে লাগলাম ।
প্রায় আধঘন্টা লেগে গেলো ফ্রেশ আর রেডি হতে ।
অতঃপর
তাড়াতাড়ি করে খেয়ে বের হলাম ।
নিচে এসে দেখি বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
—হুমম হুমম চলো চলো ।
—গাধা শার্টের কলার ঠিক মতো সই করতে পারে না ।
.
হাত দিয়ে কলারটা সই করে নিলাম ।
—চলো এখন ।
.
চলে এলাম কলেজে পরীক্ষার ক্যান্টিনে ।
অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন পরীক্ষা শেষ হবে ।
অতঃপর
পরীক্ষা শেষ হয়েছে ।
আমি গাড়িতে বসে আছি ।
কিছুখন যাওয়ার পর গাড়িটা ব্রেক করাতে আমার হাতটি তারিনের কোন এক যায়গায় লেগে যায় ।
তখন তারিন চোখটা বড় বড় করে ঠাসসসস করে গালে লাগিয়ে দিলো ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here