কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥ পার্ট: ১০,১১

0
2004

কাজের মেয়ে যখন ঘরের বউ♥
পার্ট: ১০,১১
লেখক : নাদিম আহাম্মেদ

—ঠাসসসসসসস ।
তারিন ঠাস করে আমার গালে লাগিয়ে দিলো । আমি গালে হাত দিয়ে তারিনের দিকে তাকিয়ে আছি ।
খুশি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । ড্রাইবার আঙ্কেল গাড়িটা স্টপ করে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে ।
সবাই বোঝার চেষ্টা করছে । আমাকে কেনো থাপ্পড় মারলো হঠাৎ করে ।
তারিনের চোখে পানি দেখতে পেলাম আর আমার তো থাপ্পড় খাওয়ার পর চলে এসেছে । খুশি কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো ।
আমি তো ইচ্ছে করে কিছু করি নাই । ব্রেক করাতে হাতের স্পর্শ হয়েছে তার শরীরের ।
আমি আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইবারের পাশে বসে পরলাম ।
সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছি । তখন ড্রাইবার আঙ্কেলকে বললাম ,
—আঙ্কেল চলেন । ( মনটা খারাপ করে কাঁন্না ভরা চোখ নিয়ে )
—চাচ্চু তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে ।
.
মাথাটা দিয়ে না বোধক করলাম । তখন হাতটা দিয়ে ইশারা করে বললাম চলেন ।
তখন বাসার দিকে রওনা দিলাম ।
আমি কথা বলতে পারছিনা ।
আমি গ্লাসের দিকে একবার তাকালাম দেখি খুশিকে ধরে কেঁদে যাচ্ছে । আমার জানি কেমন লাগছে । কেনো মাঝে মাঝে এরকম হয় কেনো বুঝতে পারছি না ।
অতঃপর
বাসায় এসে কেউ কারও সাথে কথা না বলে যার যার রুমে চলে গেলাম । ভাগ্য ভালো আজ মামনি আর ছোটমা যার যার রুমে আছে না হলে কি হতো বলতে পারছি না ।
আমি রুমে এসে দরজা লক করে এসি টা ফুল স্পিডে ছেরে দিলাম । এতো গরম লাগছে যে মনে হচ্ছে তাপমাত্রা ৪৫+ ডিগ্রী ।
তবুও শরীরের গরম কোম মনে হচ্ছে না ।
শুয়ে গেলাম বিছানায় । চোখ দিয়ে পানি অবিরাম ঝড়ে যাচ্ছে । আমি চোখের পানি মুঁছতে ছিনা । তার ইচ্ছা মতো গড়ে পড়ুক । আমি কেনো যে তার পাশের সিটে বসে গেলাম । কপালের লিখন সেটা উল্টাতে যাবে না । যা হবার হয়েছে এটা তো কপালে ছিলো ।
কিছুখন পর শরীরটা ঠান্ডা অনুভব করতে লাগলাম । এর মানে শরীরের রাগি ভাবটা কোমে গেছে । এসির পাওয়ার সাভাবিক করে দিলাম ।
আমি ভাবতে লাগলাম কি করা যায় । যেটা ঘটে গেছে সেটা ক্ষমা চাওয়ার যাবেনা । কারণ কি বলবো তারিনকে আমি ইচ্ছে করে স্পর্শ করি নি । তাও আবার শরীরের অস্পর্শ যায়গায় ।
কি বলবো তাকে আমি ইচ্ছে করে স্পর্শ করি নি । এটা ভুল বলে তারিয়ে দিবে কিন্তু আল্লাহ তো জানে আমি ইচ্ছে করে স্পর্শ করেছি বা করি নি । কিন্তু যদি এমন কাজটা ঘটে যাবে জানলে সামনে বসতাম । আর কেউ কি জানে যে কি ঘটবে । তাহলে তো সেরকম কাজ করতো না যদি আগে জানতো ।
শুয়ে কেঁদে যাচ্ছি অবিরাম । কিন্তু কষ্ট গুলি রয়ে গেছে বুকের ভেতর । একবার সেই যে অপরাধ করেছিলাম কতো কথা বলেছিলো আর আজ ।
কিছুখন কেটে গেলো কাঁদতে কাঁদতে ।
একটা ডাইরি বের করে নিয়ে লিখতে লাগলাম কিছু চাপা কষ্ট গুলি ।
লিখে ড্রয়ারের ভেতর রেখে দিলাম ।
কেমন জানি মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেই । কিন্তু তবুও পারছিনা নিজেকে শেষ করে দিতে ।
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না ।
ফোনের শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো ।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ছোটমা কল করেছে ।
ধরবো কি ধরবোনা ভাবতে ভাবতে ফোন বেজে কেটে গেলো । অবাক হলাম কারণ ৯ বার কল করেছে ।
ফোনটা হাতে নিয়ে কল ব্যাক করবো কি সেটা ভাবছি । ছোটমা ফোন দিলে কথা বলবো ।
কিছুখন কেটে গেলো কিন্তু কল দিচ্ছে না আর । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১২ঃ৫১ বাজে ।
এতো রাতে ফোন করেছে কিছু হয়েছে নাকি আমার জন্য ।
ম্যাসেজ দিলাম ছোটমাকে ।
আম্মু ফোন করছেন কেনো ?
.
একটু পর ম্যাসেজ আসলো ।
কি হয়েছে তোর । ফোন ধরছিস না কেনো । তুই ঠিক আছিস তো ।
.
আমি উত্তর দিলাম ।
ঠিক আছি আম্মু ।
.
তারপর ছোটমা ম্যাসেজ দিলো ।
খেয়েছিস কি বাহিরে ।
.
আমি মিথ্যে উত্তর দিলাম ।
জ্বী আম্মু খেয়েছি ।
.
তারপর ছোটমা ম্যাসেজ দিলো ।
এখন ঘুমিয়ে পর ।
.
আমি ম্যাসেজ দিলাম ।
আল্লাহ হাফেজ ।
.
আর কোনো ম্যাসেজ আসলো না ।
আমি অবাক হলাম প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমিয়ে ছিলাম ।
কিছু না বলে ঘুমিয়ে পরলাম ।
সাথে একটা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে নিলাম ।
তারপরে মামনির ফোনে ম্যাসেজ দিলাম ।
মামনি কাল অফিসে যাবোনা আব্বুকে যেতে বলবে । আর কাল আমি অনেক ঘুম পারবো তাই ডাকতে এসো না ।
আল্লাহ হাফেজ ।
.
ম্যাসেজটা দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি । ঔষুধ খেয়েছি সেটা কাজ করছে ।
চোখের পাতা লেপ্টে আসছে । চোখ খুলতে পারছিনা । তার মানে ঘুম মামা এসেগেছে ।
.
সকাল সকাল তারিন ছোটমার রুমে এসে গেছে ।
ছোটমা তারিনকে দেখে বললো ,
—ওখানে দাড়িয়ে কেনো এখানে এসে বস ।
.
তারিন ছোটমার কাছে গিয়ে বসলো । তখন ছোটমা বললো ,
—কিছু বলবি তারিন ।
—না মানে আন্টি আজ আম্মুর কথা মনে পরছে তাই বাসায় যেতে চাইছিলাম । ( মাথাটা নিচু করে )
—ঠিক আছে যা তাই মাথা নিচু করে বলতে হবে নাকি ।
—ভালো লাগছেনা শুধু আম্মুকে মনে পরছে ।
—ঠিক আছে আজ চলে যা । তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনি তোর আঙ্কেল তোর সাথে যাবে ।
—সত্যি বলছেন আন্টি ।
—তোর আঙ্কেলের সাথে কথা হয়েছে যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নি ।
—ওকে তাহলে যাই আন্টি ।
—যা ।
.
তারিন চলে যেতে লাগলো তখন ছোটমা ডাক দিলো ,
—তারিন ।
.
তারিন দাড়িয়ে বললো ,
—জ্বী আন্টি ।
—একটু আমার কাছে আসবি ।
.
তারিন ছোটমার কাছে চলে গেলো ।
—আমার কাছে আয় তো মা ।
.
তারিন ছোটমার কাছে গিয়ে বসলো ।
ছোটমা তারিনের কপালে চুমু দিলো ।
তারিন তখন কেঁদে দিলো ।
—আরে কাঁদিস কেনো মা ।
—জানেন আন্টি আমার মা ঠিক এরকম ভাবে চুমু দিতো । কিন্তু আজ সে আকাশের তারা হয়ে গেছে ।
.
ছোটমাকে জরিয়ে কেঁদে দিলো ।
ছোটমা তারিনকে বুকে জরিয়ে ধরলো ।
ছোটমা তারিনের চোখের পানি মুঁছে দিলেন আর বললেন ।
—কে বলেছে তোর আম্মু আকাশের তারা হয়ে গেছে । আমি তোর আম্মু আজ থেকে ।
—আম্মু ।
—হ্যা রে ।
—হুমম ।
—যা এখন রেডি হয়ে নি আবার দেরি হয়ে যাবে ।
—ঠিক আছে আন্টি ।
—আবার ।
—স্যরি আম্মু ।
—হাহাহাহাহা যা এখন ।
.
তারিন তার রুমে চলে গেলো ।
আরে দেখছেন ছোটমা কতো ভালো মানুষ । এতো এতো ভালোবাসা তার মাঝে । কিন্তু একটা দুঃখ তার কোনো সন্তান হবেনা ডাক্তার বলে দিয়েছে ।
তার জন্য খুব কষ্ট হয় কোনো সন্তান না হওয়াতে । কিন্তু ছোটমা বলে আমার ২ টা সন্তান একটা হলো নাদিম আর একটা হলো খুশি ।
দেখছেন কতো ভালোবাসতে পারে মানুষকে ।
ঠিক তেমনি ভাবে রাগ আছে প্রচুর । যা বলবে সেটাই করতে হবে ।
আর একটা বিষয় হলো তারিনের আম্মুর কথা । তারিন বলে ছিলো তার আম্মু আছে তাইনা । কিন্তু আবার বললো আম্মু মারা গেছে । তারিনের চাচিকে আম্মু বলে কারণ ছোট থেকে মেয়ের মতো মানুষ করেছেন । তারিনের জন্য কোনো সন্তান নেননি । যদি তারিনের আব্বুর কথা না রাখতে পারে সেজন্য । সে অনেক কথা এখন বলে শেষ করা যাবেনা ।
.
তারিন রেডি হয়ে ছোটমার রুমে চলে আসে । ছোটমার কাছে চলে যায় । এদিকে ছোটমা বিছানা ঠিক করছে ।
—কি রে তুই রেডি হয়েছিস ।
—হ্যা আন্টি ।
—আবার আন্টি ।
—স্যরি আর ভুল হবে না ।
.
তারিনের দিকে তাকাতে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে । কারণ তারিন যে শাড়ী পড়েছে তা ধারুন লাগছে । ছোটমার এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে বললো ।
—আম্মু কি দেখছো ।
—আমার পরীকে দেখছি ।
—তুমি না ।
—ঠিক বলছি । শোন তোর জন্য একটা রাজপুত্র দেখেছি । তোর চাচ্চু আর আম্মুরর সাথে কথা হয়েছে ।
—বললে হলো আমি বিয়ে করবোনা কোনো দিন না ।
—পাগলী বলে কি বিয়ে করবেনা ।
—ঠিক বলেছি । আমি ডাক্তার হবো তার পর বিয়ে ।
—সমস্যা নেই ডাক্তার হবি কিন্তু বিয়ের পর ।
—আগে আম্মুর কাছে গিয়ে বলবো আমি বিয়ে করবোনা সো করবোনা । আগে আমার লাইফ তারপর বিয়ে ।
—হুমমম এখন চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি ।
—ঠিক আছে চলেন ।
.
তারিন আর ছোটমা রুম থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে চলে যেতে লাগলো ।
সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বললো ছোটমা বললো ,
—ইস্ ফোনটা রেখে এসেছি টেবিলে । মা তুই যা আমি ফোনটা নিয়ে আসি ।
—ঠিক আছে ।
.
ছোটমা চলে গেলেন ছোটমার রুমে । আর তারিন নাদিমের রুমের দিকে চলে গেলেন ।
তারিন নাদিমের রুমে কাছে এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবে । কিন্তু দরজা ভেতর থেকে লক করা আছে । তাই খুলতে পারলোনা তারিন ।
কি জেনো ভেবে মনে মনে বললো ।
তারপর গাড়ির দিকে চলে গেলেন ।
.
তারিন আর তারিনের চাচ্চু দাড়িয়ে আছে নাদিমের ও ছোটমার সামনে ।
আঃ রহিম চাচ্চুকে একটু দূরে নিয়ে কি জেনো বললো ।
তারিন শুধু উপরের দিকে তাকাচ্ছে । নাদিম এখনো বের হচ্ছে না কেনো । সে তো কিছু করে ফেলেনি । খুব ভয় করছে নাদিমকে নিয়ে ।
খুশির কথায় চমকে উঠে ।
—তারিন কি ভাবছো চাচ্চু তো ডাকে ।
—ও হ্যা ।
—যাও ।
.
আঃ রহিম চাচ্চুর কাছে চলে গেলেন ।
—কি হলো চল অনেক ধেরি হয়ে যাচ্ছে ।
—জ্বী চাচ্চু ।
.
সবাইকে বলে বিদায় নিলো তারিন ।
ছোটমা ড্রাইবারকে বলে দিলো । মালপত্র ভালো করে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ো ।
তারপর তারিন আর তারিনের চাচ্চু গ্রামের বাড়ির দিকে চলে যায় ।
.
তারিন চলে যাওয়ার সময় নাদিমকে ম্যাসেজ দিয়ে গেলো ।
আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন ।
আর আমার রুমে টেবিলে একটা কাগজ রেখে দিছি পড়ে নিবেন ।
.
নাদিমের ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।
তখন ফোনের ঘড়ির টাইম দেখতে গিয়ে দেখে তারিনের একটা ম্যাসেজ আর মামনির কয়েকটা কল । ঘড়ির টাইম দেখে অবাক হলো । কারণ বিকাল ৪ টা বাজে । এর মানে অনেক ঘুম হয়েছে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা ঘুমিয়ে ছিলাম ।
উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো ।
ওয়াশ রুম থেকে গোসল করে বের হয়ে আসে । আয়নার কাছে এসে চুল আচ্ড়াতে গিয়ে মুখ ও চোখের দিকে খেয়াল করে । চোখ আর মুখ ফুলে গেছে অতিরিক্ত ঘুম পারার জন্য ।
তারপর সাঁজগোজ করে ছাঁদের দিকে চলে গেলাম ।
.
আরে ভাবছেন যে সারারাত খাবার খায় নি । আবার সকালের খাবার খায় নি । আবার দুপুরের খাবার খায় নি । কিন্তু মামনি আর ছোটমা কিছু বলে নি । আরে নিষেধ আছে নাদিমের । দরজা লক করে ঘুমিয়ে গেলে ডাকা যাবেনা । যদি না খেয়ে ঘুমিয়ে যায় তবুও ডাকা যাবেনা ।
নাহলে একটা চাবি তো সামনির কাছে আছে । সো সে চাবি দিয়ে খোলা যেতে পারতো । কিন্তু তা করে নি । নাদিমের খুব রাগি তাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে না ।
সেজন্য মনে হয় কল করে ছিলো মামনি । কিন্তু ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে রিসিভ করতে পারে নি । কয়েক বার কল দেওয়ার পর না ধরাতে আর দেয়নি ।
.
ছাঁদে চলে এলাম । আজ খুব খারাপ লাগছে । এক বেশি ঘুম পারার কারণে আর একটি ছাঁদে আজ একা তারিন নাই ।
তারিনের কথা মনে পরায় ম্যাসেজের কথা মনে পরে গেলো । তখন ফোনটা বের করে ম্যাসেজ দেখে অবাক হয়ে যায় ।
.
আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন ।
আর আমার রুমে টেবিলে একটা কাগজ রেখে দিছি পড়ে নিবেন ।
.
ম্যাসেজ দেখে তো অবাক হলাম । তাই তো আজ ছাঁদে তারিন নেই ।
তারিনের রুমেরের দিকে চলে গেলাম ।
তারিনের রুমে গিয়ে দেখি টেবিলে একটা কাগজ রাখা ।
কাগজটা দেখে মনের ভেতর কেমন জানি করছে । লাভ লেটার নাকি । মনের ভেতর ধুক ধুক করছে ।
কাগজটা হাতে নিয়ে অবাক হলাম ।
.
প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
জানি না কি আপনার অভিনয় । নিজেকে ভালো পরিচয় দিতে গিয়ে আমার কাছে ধরা খেয়েগেছেন ।
সেদিন রাতের ঘটনা কিছু মনে করিনি ।
কিন্তু কাল কি করেছেন । একটু ভেবে দেখেছেন কি । একটা স্পর্শে মেয়েদেরকে সতিনারী থেকে বিরত রাখে । বাসর রাতে স্বামীর কাছে কখন গর্ব করে বলতে পারবেনা । আমি একজন সতিনারী । আপনি ছাড়া কেউ আমাকে টাচ্ করতে পারে নি ।
কখন গর্ব করে বলতে পারবে না । আমি সেই নারী যে স্বামী ব্যাতিত অন্য কোনো পুরুষের হাত পরেনি শরীরে ।
ইত্যাদি , ইত্যাদি করে গর্ব করে বলতে পারবেনা স্বামী বা অন্য কাউকে ।
কিন্তু আপনি আমার সরলতা সুজুক নিয়ে কি করছেন সেটা একটু ভাবেন ।
আর কিছু বলবোনা । কাল থাপ্পড় মারতে চাই নি । কিন্তু মস্তিষ্কো এমন হয়ে গেছিলো সেটা ছাড়া কিছু করতে পারছিলাম না ।
যদি পারেন ক্ষমা করে দিয়েন ।
আর কোনদিন অন্য মেয়েকে এরকম কিছু করবেন না ।
আমি চলে যাচ্ছি আপনাদের বাসা থেকে ।
.
লেখাটা পড়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে গেলাম । কি শুনতে পেলাম আমি । আমি নাকি সরলতা সুজুক নিয়ে এগুলি করেছি ।
আল্লাহ আপনি তো আমার মনের খবর জানেন । আমি সরলতার সুজিক নিয়েছি কি , নাকি ইচ্ছে করে করেছি, নাকি কোনো দুর্ঘটনায় এইগুলি হয়েছে ।
চোখের পানি অবিরাম ঝরে পরছে । মিথ্যে কিছু কথায় মানুষকে শেষ করে দেয় ।
তারা একটু ভেবে দেখে না । ঘটনা গুলি যে ঘটে যাচ্ছে সেগুলি কি ইচ্ছে করে করছে । নাকি কোনো খারাপ ধরনের মতলব আছে । নাকি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কোনো কিছু ছাড়া । সেটা কোনো খবর না নিয়ে এই কাজগুলি করা ঠিক না ।
কিছুখন পর উঠে দাড়ালাম ।
চোখটা মুঁছে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম ।
রুম থেকে বের হওয়ার পর রুমের দরজার কাছে লক্ষ করলাম ছোটমা দাড়িয়ে আছে ।
আমি সোজা রুমে চলে এলাম ।
ভাবতে লাগলাম ছোটমা সব দেখে ফেলেছে নাকি । আর যদি দেখে ফেলে তাহলে তো কি মনে করবে আল্লাহ ভালো জানে ।
দরজা লাগিয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম ।
আমি নাকি সরলতার সুজুক নিয়ে এই কাজগুলি করছি ব্লা ব্লা ।
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই ।
মামনির ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম ।
—নাদিম… নাদিম… নাদিম ।
.
ঘুম চোখে বললাম ।
—জ্বী মামনি ।
—কি হয়েছে তোর ।
—কিছুনা ।
—তাহলে এই সন্ধ্যা রাতে ঘুমিয়ে গেছিস কেনো ।
—এমনি মামনি ।
—শরীর খারাপ নাকি । ( কপালে হাত দিয়ে )
—না মামনি এমনি ।
—ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার খাবি ।
—না মামনি খাবার খাবোনা ।
—কেনো ।
—খেতে ইচ্ছে করছেনা ।
—দূর পাগলের মতো কথাবার্তা । তাড়াতাড়ি খেতে আয় ।
—না মামনি খেতে মন চাচ্ছে না ।
—ঠিক আছে আমি খাবার নিয়ে আসছি খায়ে দিবো ।
.
বলে চলে গেলো ।
আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলাম ।
একটু পর মামনি চলে আসলো । সাথে খাবার নিয়ে আসলেন ।
খায়ে দিলো খাবার ।
অতঃপর
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে পরলাম সকাল সকাল ।
খেতে মন চায়ছেনা । শুধু একটা কথা মাথার ভেতর কেমন করছে ।
সারাদিন কেমন করে কেটে যাচ্ছে বুঝতে পারছিনা ।
সারাদিন ঘুম আর কাঁন্না করা ছাড়া কিছু করতে পারছি না ।
এভাবে কেটে গেলো দিন ।
পরের দিন বিকালে বের হয়েছি মনটা ফ্রেশ করার জন্য কিন্তু তবুও ভালো লাগছেনা তাই বাসায় এসে শুয়ে পরলাম ।
এভাবে কেটে যেতে লাগলো দিন ।
কিন্তু ছোটমা কিছু বলছেনা । বেপারটা কেমন জানি মনে হচ্ছে ।
কয়েকদিন এভাবে কেটে যেতে ভালো করে পরিবারের সবাই লক্ষ করতে লাগলো আমার ব্যবহারের কাজ কর্ম ।
বেশ কয়েক দিন কেটে গেলো ।
এখন আর আগের মতো লাগছেনা । কিছু পরিবর্তন এসে গেলো আমার মাঝে ।
একদিন রুমে বসে আছি তখন খুশি এসে বললো ,
—ছোটমা ডাকে ।
—আচ্ছা আমি আসছি যা ।
.
খুশি চলে গেলো ।
আমি উঠে চলে গেলাম ড্রয়িংরুমে ।
দেখি মামনি ও খুশি আর ছোটমা কথাবার্তা বলছে । আমি চলে গেলাম সেখানে ।
ছোটমা বললো ,
—এখানে ।
.
আমি বসে গেলাম ।
—একটা কথা বলতে চাই ।
.
আমি ছোটমার দিকে তাকালাম । কি কথা বলতে চায় হঠাৎ করে এভাবে ডেকে এনে ।
—কি হলো কি ভাবছিস ।
—কিছুনা ছোটমা ।
—বলবো কি ।
—জ্বী বলেন ।
—বলতে চাইছি যে তারিনের ।
.
অর্ধেক কথাটা বলে থেমে গেলো ।
কি বলতে চায় তারিনের কথা ।
আবার বলতে লাগলো ,
—তারিনের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি ।
.
কথাটা শুনে কেমন জানি হয়ে গেলাম । কি বলছে এসব ।
—কি রে চমকে গেলি যে । তোর কি কোনো পছন্দের মেয়ে আছে । যদি থাকে তাহলে বল সমস্যা নাই তাকে বউ করে আনবো ।
—নিশ্চুপ ।
—কি রে কথা বলছিস না কেনো ।
—কি হলো তোর ছোটমা কি বলছে সেটার উত্তর দে ।
—না নেই কোনো পছন্দের মানুষ ।
—আমি জানি তোর কোনো পছন্দের মেয়ে নেই । দেখছিস তোকে বলে ছিলাম না । নাদিমের কোনো পছন্দের কোনো মেয়ে নেই ।
—তাহলে কি করবি এখন রেখা ।
—নাদিমের কাছে জিজ্ঞেস করে নেই সে কি তারিনকে বিয়ে করবে নাকি করবেনা ।
—আচ্ছা তুই কি তারিনকে পছন্দ করিস মানে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি আছে তোর ।
.
কি বলবো এখন আমি । হ্যা বলে দিবো কি তাহলে প্রতিশোধ নিতে পারবো ।
—কি হলো কি ভাবছিস ।
—কিছুনা ।
—তাহলে বল ।
—আপনাদের ইচ্ছা আমার কোনো পছন্দের মেয়ে নেই তাই যাকে আপনারা পছন্দ করবেন তাকে বিয়ে করবো ।
.
কথাটা বলে রুমে চলে আসলাম সেখান থেকে ।
রুমে এসে ভাবতে লাগলাম যাক প্রতিশোধ নিতে পারবো তাহলে ।
.
বিয়ের আলোচনা চলতে শুরু হলো ।
হয়তো আগে থেকে সব ঠিক করে রেখেছিলো তারা ।
তাই বিয়ের দিন ঠিক করে ফেললো ।
আগামি শুক্রবারে বিয়ের দিন ঠিক করা হলো ।
.
বাড়ির বড় ছেলে বিয়ে তাই ধুমদাম করে বিয়ে হবে ।
বাসাটা সাজাতে লাগলো বিভিন্ন রকম জিনিস দিয়ে ।
২ দিনে বাসাটা সাজিয়ে কম্পিলিট করেছে ।
চলে এলো বিয়ের দিন ।
সবাই খুশি একমাত্র ছেলের বিয়ে ।
দুই মার এক ছেলে বলে কথা ।
সবাই যার যার মতো আনন্দ করছে ।
বিয়ে যাত্রী নিয়ে তারিনের বাসার দিকে রওনা হলাম ।
প্রায় কয়েক ঘন্টা পর তারিনের বসায় পৌঁছে গেলাম ।
বিয়ে বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো ।
অতঃপর
বিয়ে পরানো হলো ।
বউকে নিয়ে মানে তারিনকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে এলাম ।
অনেক কাঁন্নাকাটি করেছে তারিন ।
বাসর ঘরে বউকে আর আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো ।
সবাই বউ দেখতে লাগলো ।
আমি এর ফাঁকে ছাঁদে চলে গেলাম ।
.
আজ আকাশ খুব ভালো লাগছে । আকাশে অনেক তারার মেলা বসেছে । আর সবার মাঝে চাঁদটাকে অনেক বড় দেখাচ্ছে ।
ঝিরি ঝিরি বাতাস বয়ছে । হালকা শিত শিত করছে ।
কিছুখন আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
পিছনে থেকে খুশি আর সায়েমের কণ্ঠ শুনতে পেলাম ।
—দেখছো খুশি তোমার ভাইয়া এখানে ।
—ভাইয়া তুই এখানে ।
.
আমি পিছন ফিরে তাকালাম ।
—হাবলার মতো তাকিয়ে কি দেখছো ভাইয়া ।
—কিছুনা ।
.
তখন সায়েম বলে উঠলো ,
—এখানে কি করিস চল বাসর ঘরে ভাবি একা একা বসে আছে ।
—আমাকে আকাশ দেখতে দে । জানিস আজ আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে । সায়েম, খুশি তোরা দেখ মনটা ভালো হয়ে যাবে ।
—সায়েম ভাইয়া দেখেছো কি বলে ।
—খুশি তোমার ভাইয়াকে আসল চাঁদের কাছে নিয়ে চলো । সেখানে গেলে বুঝবে চাঁদের আলো কেমন ।
—আমি যাবোনা তোরা যা চাঁদ দেখতে । আমি এই আল্লাহুর বানানো চাঁদ দেখবো ।
—অস্তাগফিরুল্লাহ্ । তুই বলিস কি আমরা যাবো মানে । পাগল হয়েছিস নাকি তুই ।
—সায়েম ভাইয়া কথা না বলে ধরে নিয়ে চলো তো ।
—হুমম তাই করো ।
—এটা করিস না দোস্ত । আজকের রাতটা এখানে কাটাতে দে । কাল থেকে রুমে শুয়ে থাকবো ।
—অস্তাগফিরুল্লাহ্ । চল ।
.
খুশি আর সায়েম দুজনে ধরে নিয়ে গেলো বাসর ঘরের দিকে ।
বাসর ঘরে রেখে দুজনে বের হয়ে গেলো ।
যাবার সময় বলে গেলো ।
—বিড়াল কিন্তু সাবধানে মারবে ভাইয়া । আমি ভাবির কাছে শুনে নিবো পরে ।
.
বলে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here