কাঞ্চাসোনা #১১,১২

0
2240

#কাঞ্চাসোনা
#১১,১২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
১১

মনোয়ারা চোখে লাগে ব্যাপারটা।ধ্রুব আর সকাল কথা বললেও দুজনকে কাছাকাছি তিনি খুব কমই দেখেন।তাহলে কি ধ্রুব এখনো সকালকে মেনে নিতে পারেনি?এই চিন্তা মাথায় রেখেই এক কাজ করেন তারেক মির্জাকে সাথে নিয়ে এক ভোরে সিলেট বোনের বাসায় চলে যান।বাসায় বলেছেন মানতের জন্য সিলেট যচ্ছেন।যদিও সকাল সারাদিন বাসায় একা থাকে তারপরেও দুজনের জন্য এইটুকু কষ্ট তো করতেই পারে।খালি বাসায় দুজনের বোঝাপড়া যদি ভালো হয়!দুজনের প্রাইভেসির কথা ভেবেই বেড়াতে যায়।মনোয়ারা চলে যাবার সময় সকাল কেঁদে দেয়,মনোয়ারার’ও খারাপ লাগে মেয়েটার মধ্যে মায়ার একটা টান আছে।তিনি ধ্রুবকে শাসনের সুরে বলেন,
“আমরা এক সাপ্তাহ থাকবো।তুই আজকেই অফিসে বলবি বিয়ে করেছিস ছুটি লাগবে।সকাল একা বাসায় থাকতে পারবে না।মনে থাকবে?”

ধ্রুব লক্ষী ছেলের মতো মাথা নাড়ে।উনারা চলে গেলে ধ্রুব সকালের দিকে তাকিয়ে চোখ নাচিয়ে বলে,
“তুমি কি সাংঘাতিক মেয়ে!”

ধ্রুব এমন কথায় সকাল অবাক হয়ে তাকালে ধ্রুব বললো,
“আম্মাকে এভাবে কেঁদে দেখালে যেন আমি তোমাকে মারিটারি।”

সকাল বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
“মারবেন কেন?মা এক সাপ্তাহের জন্য চলে যাচ্ছে।মন কেমন করছিলো তাই কেঁদেছি।”

ধ্রুব মাথা চুলকে বললো,
“নাকি আমার ভয়ে কাঁদছো?”

সকাল সাহসিকতার সাথে বললো, “আপনাকে ভয় পাই না।”

“হ্যাঁ তা তো দেখলামই,একলা বাসায় আমি কি করে ফেলি সেই ভয়েই কেঁদেছো।”

সকাল চোখ নামিয়ে বললো,
“আপনি খুব জ্বালান তো আমাকে।”
এটা বলেই বিছানা গোছানো শুরু করে।

ধ্রুব মুচকি হাসে।হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙ্গে বললো,
“জ্বালানোর সুযোগ পেলাম কই?বাচ্চা বউ বলেই তো লেখাপড়া শিখাতে হবে।”

ধ্রুবর কথার ধরনে সকাল মুচকি হাসে তা দেখে ধ্রুবই আবার বললো,
“আল্লাহ আমার কষ্টটা যদি কেউ বুঝতো!”

সকাল বললো,
“আপনার অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

ধ্রুব অফিসে যাওয়ার জন্য রেডী হলেই সকালের চোখ ভিজে যায়।গ্রামের মেয়ে খোলা পরিবেশ খোলা হাওয়ায় বসবাস করে অভ্যাস এতোদিন মনোয়ারা থাকাতে খালি খালি লাগেনি।এখন মা ও নেই ধ্রুবও চলে যাচ্ছে। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে।
ধ্রুব সকালের হাত নিজের হাতে নিয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে দু’হাতে গাল ধরে বললো,
“মন খারাপ লাগছে?”

সকাল মাথা নাড়ে।

“আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”

“আচ্ছা।”

“আমি আসার আগে যেই দরজা কলিং দিক তুমি দরজা খুলবেনা।কেমন?”

“আচ্ছা।”

“ফোন দেব একটু পর পর।”

সকাল ধ্রুব চোখের দিকে তাকালে ধ্রুব মাথাটা নিচু করে সকালের টসটসে গালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে,কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“লাভ ইউ।”

সকাল নিচু স্বরে বললো,”হুম।”

ধ্রুব মাথা সোজা করে বললো,
“হুম কি?”

সকাল চোখের পলক ফেলে বললো,
“আমিও।”

ধ্রুব ত্যাড়া গলায় বললো,
“আমিও কি?”

ভালোবাসি বলতে সকালের খুব লজ্জা লাগছে আর এই দুষ্টু ধ্রুবও নাছোড়বান্দা।লাজুক হেসে বললো,
“ভালোবাসি।”

ধ্রুবর মন প্রাপ্তির পূর্নতায় ভরে উঠে।সকালের কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বললো,
“ফোন দেব।আল্লাহ হাফেজ।”

ধ্রুব চলে গেলে সকাল রান্না করে,মন খারাপ না হওয়ার জন্য এটা সেটা করে দেখে দুইটা বেজে গেছে।এরমাঝে ধ্রুব অনেকবার ফোন দিয়েছে।একবার ফোন দিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,”বউ ছুটি তো দিচ্ছে না।”

সকাল ধ্রুব কথার ধরনে হেসে বললো,
“থাক লাগবে না।”

“আমার বউ বাসায় একা আমি এখানে!এটা কি হয়?ছুটি না দিলে চাকরি ছেড়ে দিবো।”

এটা সেটা বলে ফোন রাখার পর।সকালের খুব একা একা লাগলো,বিছানায় শুয়ে ধ্রুব যে পারফিউম ব্যবহার করে সেটা কাছে এনে বাতাসে ছাড়লো নিশ্বাস নিলে যেন মনে হয় ধ্রুব কাছেই আছে ।সকাল বালিশে হেলান দিয়ে ভাবে আচ্ছা ধ্রুবটাকে কি একটু কাছে টানা উচিত না?অন্য হাজবেন্ড হলে তো প্রথমেই অধিকার আদায়ের জন্য জোড় করতো।আর উনি সময় দিয়েছে,আর সকালও কেমন সময়টা ব্যবহার করছে,উনার এই সময় দেয়াটা সম্মান করে হলেও সকালের উচিত ধ্রুবকে কাছে টানা।ধ্রুবকে যে সকাল ভিষন ভালোবেসে ফেলেছে সে খবর কি ধ্রুব রাখে?এখন কাছে থাকলে,দুষ্টু দুষ্টু কথা বললেই সকালের শান্তি লাগে।এই যে হুটহাট আলতো করে ছুঁয়ে দেয়,সকালের সেকি ভালো লাগে।সেও সমানতালে ছুঁয়ে দিতে চায়,কিন্তু লজ্জাটাই তো তার পিছু ছাড়ে না।এসব ভেবে নিজেই অকারনে লজ্জা পেয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে হাসে।

সন্ধ্যায় ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি নামে ধ্রুব ফোন দিয়ে যানায় ছুটি পেয়েছে।হাতের কাজ করে বাসায় আসতে আসতে রাত আটটা বাজবে।সকাল ভেবে পেলো না এই বৃষ্টির রাতে সে কি করবে,গা ছমছমে পরিবেশ যেন সকালের দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হাসে।একা বাসায় মেঘের গর্জন শুনে সকালের বুক কেঁপে উঠে।চারদিকে তাকিয়ে মনে হয় দেয়াল তাকে ভয় দেখাচ্ছে ।হুট করেই মনে হলো বউ সেজে ধ্রুবকে চমকে দেয়া যায়।বেচারার বউ সাজ দেখার খুব শখ।যেমন কথা তেমন কাজ।মনের মাধুরী মিশিয়ে লজ্জায় মেখে সকাল বউ সেজে নিলো।আয়নায় নিজেকে দেখে অজানা ভয়ে বুক টিপ টিপ করে।মোবাইলে টাইম দেখে দশটা বেজে গেছে।ধ্রুব এখনো এলো না এটা ভাবতে ভাবতে ধ্রুবকে ফোন দিলে জানায় বাসার নিচে আছে।
সকাল দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে রুমে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।মিনিট কয়েক পরেই দরজা খুলার শব্দ হলে সকালের ঠোঁট শুকিয়ে আসে।শাড়ীর আঁচল খামচে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।ধ্রুব যখন গম্ভীর গলায় ডাকছে তখন সকালের হৃদস্পন্দন আরো তাড়াতাড়ি ছুটে চলে।

সারাদিন ধ্রুবর মন আনচান করেছে সকালের জন্য।অনেক কষ্টে ছুটি নিয়েছে।পাখিটা সারাদিন বাসায় একা এটা ভেবেই খারাপ লেগেছে।অবশেষে বৃষ্টিতে ভিজেই চলে এসেছে।দরজা খুলা দেখে ভ্রু কুচকে উঠে।সকালকে ডেকেও কোন সারা না পেয়ে দ্রুত পায়ে রুমে আসে।ভিজা শরীর থেকে পানি টপটপ করে পরে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।রুমে এসে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।সকাল খয়েরী শাড়ি গায়ে জড়িয়ে দোপাট্টা মাথায় দিয়ে একদম নতুন বউয়ের মতো সেজে গুজে দাঁড়িয়ে।ধ্রুবর মনে হলো এটা বুঝি পুতুল।বৃষ্টির শব্দ,আকাশে মেঘের গুরুমগুরম গর্জনে,এক মাতাল ভিজা সোদা গন্ধে চারিপাশ ছেয়ে আছে,এই মাতাল করা গন্ধে ধ্রুব নিজেও নেশাগ্রস্ত হয়ে গেলো।বুকটা কি বেশিই লাফাচ্ছে না?এমন করে আবেদনময়ী হয়ে কাছে ডাকলে কাছে না গিয়ে থাকা যায়?এই মেয়ে তাকে পাগল বানিয়ে ফেলবে।ব্যাগটা আলগোছে রেখে ছোট ছোট পা ফেলে প্রেয়সীর দিকে এগিয়ে গেলো।খুব কাছে দাঁড়িয়ে ঠোঁট নেড়ে বললো,
“সুন্দর লাগছে।”

বৃষ্টিতে ভিজে আসা ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে সকালের মনে হলো,ধ্রুবর চোখগুলো আজ নেশা করেছে। মাথাটা নিচু করে বললো,
“আপনি কাপড় পালটে আসুন।ঠান্ডা লাগবে।”

ধ্রুবর কানে বুঝি সকালের কথা গেলো না।নেশার মতো সকালের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজকে নিজেকে আটকানোর কোন রাস্তা ধ্রুব দেখছেনা।হাত পা উত্তেজনায় অবশ হয়ে আসছে।দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মাথা এদিক ওদিক করেও কোন লাভ হয় না।
সকালের নাকের চারপাশে লজ্জায় সুরসুরি দিচ্ছে।এভাবে তাকায় কেউ?সে ধ্রুবর দিকে না তাকিয়ে বললো, “আসুন কাপড় দিচ্ছি।”

এটা বলে সরে যেতে নিলেই ধ্রুব হাত টেনে সকালকে তার ভিজা শরীরের সাথে চেপে ধরে।ছোটখাটো সকালের মাথা ধ্রুবর গলার কাছে গিয়ে মাথা ঠেকেছে,হাত রেখেছে ধ্রুবর বুকে।সকালের হাতে স্পষ্ট ধ্রুবর বুকের উত্তেজনা স্পর্শ করে যাচ্ছে।সকালের কচি মন থরথর করে কেঁপে উঠে,নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ধ্রুব কোমড়ে হাত রেখে খুব মোলায়েম করে জড়িয়ে ধরে।এন্ডোনালির শিরিশিরানি, আর বিষাক্ত ইচ্ছেরা এলোমেলো ছুটে ধ্রুবকে অস্থির করে দিচ্ছে। প্রিয়তমার এই মনকাড়া রুপে ধ্রুব নিজেকে খুব পাগল পাগল রুপে আবিষ্কার করলো।মাথাটা নিচু করে ধরা গলায় সকালের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“এতো সেজেছো কেন?”

ধ্রুবর এমন পাগল করা কন্ঠকে সকাল ভয় পায়।মাথাটা নামিয়ে,ধ্রুবর মতোই ফিসফিস করে বললো,
“আপনি বউ সাজ দেখতে চেয়েছিলেন।তাই।”

ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,
“আমার ইচ্ছে পুরন করছো।”

সকাল মাথা নেড়ে বললো
“হ্যাঁ ”

ধ্রুব সকালের কাধে চুমু খেয়ে বলে,
“আমার তো আরো অনেক কিছুই ইচ্ছা করে।সব পুরুন করবে?”

সকাল ধ্রুবর চোখে চোখ রাখে।ধ্রুবর চোখে নিষিদ্ধ ইচ্ছের আনাগোনা।সকাল বুঝে যায় ধ্রুবর ইচ্ছার কথা।মাথা আরো নিচু করে নিতেই ধ্রুব বাধা দেয়।এই মেয়ে এমন কেন?কেন বুঝেনা ধ্রুবর যন্ত্রনা?সকালের লজ্জামাখা মুখ ধ্রুব টেনে কাছে নেয়।নেশার মতো ধ্রুব সকালের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ঘষে,সকাল আবেশে ঘুঙ্গিয়ে উঠে।প্রেমে উত্বপ্ত ঠোঁট মিশিয়ে ধ্রুব সকালেকে উপরে তুলে নেয়।ধ্রুব আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করে তার আদরে তার পাখিটাও সামিল হচ্ছে সাড়া দিয়ে জানান দিচ্ছে ভালোবাসার যন্ত্রনা।ধ্রুবর এতোদিনের ধৈর্য,সংযম নিমিষেই সব ভেঙ্গে চুড়মাড় হয়ে গেলো।সকালের মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে বললো,
“কেন পাগল করে দিচ্ছো।”

সকাল ঘোর লাগা চোখে ধ্রুবকে দেখে।তার মনটা বলছে আজকের রাতটা অন্যরাতের মতো না,আজকে ভিন্ন কিছু হবে।শরীরের কাঁপনে হাত দিয়ে শক্ত করে খাঁমচে ধরে ধ্রুবর ভেজা শার্ট।
ধ্রুবর নিঃশ্বাস তখন বেশামাল। ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাকা করে ঝড়ের বেগে শ্বাস টেনে নেয়।সকাল সম্মোহনী চোখে ধ্রুবর চোখে তাকায়।অনেক ইচ্ছের কাজটা করে বসে,হাত বাড়িয়ে ধ্রুবর ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।নরম হাতের ছোঁয়ায় ধ্রুবর পুরুষালী পুরু ঠোঁট তিরতির করে কাঁপে।
সকালের গালে নিজের গাল লাগিয়ে বললো,
“জান সামলাতে পারবা তো?”

চলবে..

#কাঞ্চাসোনা
#১২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

“জান সামলাতে পারবা তো?”

সকাল চোখ তুলে ধ্রুবকে দেখে।ধ্রুব কেমন নেশা জড়ানো চোখে তাকিয়ে আছে।সকাল কিছু না বলে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে।যেন চুপ থেকেই সম্মতি দিলো।ধ্রুবর মন ঠান্ডা বাতাসে তোলপাড় খায়,এটাইতো চেয়েছে সইচ্ছায় সকাল কাছে আসুক,হাতে হাত রেখে কানেকানে গোপন ইচ্ছা ব্যক্ত করুক।দুজনে দুজনের চোখে তাকিয়ে কিছুক্ষণ অনুভূতির প্রখরতা বুঝে নিলো।বুঝে নিলো অসহনীয় যন্ত্রনায় দুজনের প্রান ডানা ঝাপটাচ্ছে।
বাহিরে ঝড়ের তান্ডবে জানালার পর্দা শো শো করে উড়ে।বদ্ধ ঘরে ভালোবাসার উন্মাদনার তান্ডবে দুজনের নিঃশ্বাস এর থেকেও বেশি উড়ছে।থরথর করে দুজনের শরীর সমানতালে কাঁপে।ভালোবাসায় বলা কিছু শব্দ চাপা পড়ুক আলিঙ্গনে।অতল সাগরে ডুবে-ভেসে দুজনে স্বর্গসুখের সিড়ির দেখা পেলো।ধ্রুব নিজেকে সামলালো না,এতোদিনের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে চুরমার,ছোট্টখাটো পাখিকে সুখের সাগরে চুবিয়েই উঠালো।সকালের নরম দেহের উষ্ণতায় মিশিয়ে দিলো নিজের সর্বস্ব।সুখে সুখে পাগল করেই ছাড়লো নরম দেহের পাখিকে।ধ্রুব ঘন হওয়া গলায় বললো,
“জান,তোমায় এতো আদর আদর লাগে কেন?”

সকাল কথা বলেনা।সে তার সুখের রাজ্যে বিচরণে বেড়িয়েছে,যে রাজ্যের রাজা স্বয়ং ধ্রুব।আর ধ্রুবও কিনা হাত ধরে সারা রাজ্য ঘুরিয়ে আনার চেষ্টায় মুখিয়ে আছে।

রাত চারটা ধ্রুব চুলায় গরম পানি বসায়,বাথরুমের হিটার নষ্ট শীতের রাত তাই বউয়ের জন্য এই কষ্টটা করাই যায়।তার মনে পড়ে সকালকে বিয়ে করবেনা বলেই বাথরুমে গিয়ে কান্না করেছিল আর এখন মনে হচ্ছে সবথেকে বড়ো পাওয়া হচ্ছে সকাল।সবথেকে শান্তি পাওয়া যায় এই তিরতির করে কাঁপা পাখির কাছেই।

সকাল একটু পরপর অস্পষ্ট স্বরে কেঁদে উঠে।সারা শরীরে ব্যাথা চিরবিরিয়ে ওঠে।চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি ঝড়ছে।তার মনে হচ্ছে সে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে।তখনি ধ্রুব নরম গলায় ডাকে।
“সকাল একটু উঠে আসো।”

সকাল উঠে না।ব্যাথায় চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।ফর্সা মুখ ব্যথায় রক্তিম দেখাচ্ছে।স্থির হয়েই শুয়ে থাকে।যেন নড়াচড়া করলেই মরণ।ধ্রুব আবার ডাকে।কোন হেলদোল নেই।ধ্রুব এবার কম্বল সরিয়ে কোলে করেই বাথরুমে নিয়ে যায়।ধ্রুবের বুকে সাথে দাঁড় করিয়েই শরীরে পানি ঢালে।নরম দেহে জ্বলন সর্বত্র।পানি লাগলেই জ্বলন বাড়ে সকাল তার স্বরে চেচিয়ে উঠে,খামচে ধরে ধ্রুবর হাত।ধ্রুব আস্তে করে বলে,”আর একটু জান।”

সকাল বেহুশের মতো বিছানায় পড়ে আছে।ধ্রুব নিজেও ঝটপট গোসল সেড়ে সকালের কাছে আসে।বউয়ের অবস্থা দেখে অসস্থিতে সারা শরীর কাটাকাটা।
কেমন কুঁকড়ে পড়ে আছে।
একহাতে খুব নরমভাবে সকালকে জড়িয়ে বললো,
“আমি খুব সরি জান।”

সকাল ধ্রুবর দিকে তাকালে ধ্রুব অপরাধী গলায় বললো,
“খুব ব্যাথা লাগছে?কোথায় জ্বলছে?”

ধ্রুবর আদর আদর কথায় সকাল ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিল।ধ্রুবর ভেতরে অপরাধে বিদ্ধ হয়ে গলা রোধ হয়ে গেলো।কাচুমাচু করে বললো,
“সরি তো।”

সকাল কথাই বলেনা তার চোখ বুজে আসে।খানিক পর পর ব্যথারা যে চিরিক দিয়ে উঠে!
ধ্রুব আরেকটু কাছে এসে বললো,
“খুব বেশি খারাপ লাগছে?”

সকাল মাথাটা টেনে ধ্রুব কাছে আনে,প্রশস্ত মানুষটার বুকে বিড়ালছানার মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে বললো,
“না।একটু ব্যাথা।”
ধ্রুব বুঝতে পারে সকালের খারাপ লাগাটা।নিজের উপর নিজেই বিরক্ত।নেতিয়ে যাওয়া সকালকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে কপালে অজস্র চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়ে।সকালের বন্ধ করা চোখের পাতায় ঠোঁট ঠেসে চুমু খায়।সে রাতে আর কারোরই ভাত খাওয়া হলো না,সকালের ধ্রুবর জন্য বানানো স্পেশাল খাবারের বদলে নিজেই স্পেশাল হয়ে গেলো।একটু বেশিই স্পেশাল!

আবছা আবছা সূর্যের আলো সকালের মুখে এসে লাগে।আধো আধো চাহনিতে চোখ খুলে দেখে উজ্জ্বল আলো পর্দা ঠেলে রুমে আসছে।পাশে তাকিয়ে ধ্রুবকে পায় না,চোখে ভেসে উঠে রাতের চিত্র।সাথে সাথে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।ধ্রুবর বলা প্রতিটা আদুরে কথা কানে রিনিজিনি সুরে ধাক্কাচ্ছে।সুঠাম দেহের ধ্রুবর পাগলামি মনে হতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় তনু মন।নীল নীল মিষ্টি ব্যথায় ঝনঝন করে নাচিয়ে দিয়ে যায় সকালের কোমল দেহ।লজ্জায় কুকড়ে গিয়ে ছটফট করতে থাকে।ধ্রুব আসে খানিক পরে।মাত্রই রান্না শেষ করলো।ধ্রুব যেগুলো পারে সেগুলোই গরম ভাত,ডাল,ডিম ভাজি করেছে।ঘামে ভেজা গেঞ্জি খুলে রাখে।বিছানার কাছে এসে দেখে সকাল মুখের উপর কম্বল জড়িয়ে আছে।লজ্জা পাচ্ছে?ধ্রুব ঠোঁট টিপে মুচকি হাসে।তারপর স্বাভাবিক ভাবে ডাকে,
“সকাল উঠো।”

সকাল নিশ্বাস আটকে পড়ে থাকে।ধ্রুবকে মুখ দেখাবে কি করে?লজ্জা লাগছে তো।ধ্রুবর দেহের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে চোখের তারায়। এই ছেলের চোখে আর তাকানো যাবে না।কম্বলের নিচ থেকেই বললো,”পরে উঠবো।”

ধ্রুব একহাতে কম্বল টেনে ধরে বললো
“পরে কেন?এখনি উঠবে।”

সকাল না না করে।ধ্রুব বিছানার ওপাশে গিয়ে কম্বলে ঢুকে পড়ে।সকাল শক্ত হয়ে শুয়ে থাকে।ধ্রুব আদুরে আদুরে গলায় বলে,
“উঠে পড়ো না হলে আবার যখন তখন হামলা হতে পারে।”

সকাল ধ্রুবর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে হতভম্ব হয়ে চোখ গোল গোল করে ধ্রুবকে দেখে।ধ্রুব ঠোঁট প্রসারিত করে হাসছে।সকাল এদিকে ফিরে আসতে চাইলে ধ্রুব আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।পিছন থেকে গলায় কামড়ে দেয়,হঠাৎ এমন কাজে সকাল আশ্চর্য হয়ে চেচায়।ধ্রুব কামড়ের জায়গায় চুমু দিয়ে বলে,
“না উঠলে আরো দিবো।”

সকালের চোখে মুখে তখন লজ্জার ছড়াছড়ি।উঠে যাবার সময় ধ্রুব বললো,
“তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসো,ভাত খেয়ে ওষুধ খাবে।”

সকাল ভ্রু কুচকে বললো,
“কিসের ওষুধ?”

“ব্যথার।”

ব্যাথার কথা মনে হতেই শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল ধ্রুবর করা পাগামির শিহরণ।
খাবার খাওয়ার সময় দুজনের মুখেই মিটিমিটি হাসি।সারা মুখ জুড়ে খেলে যাচ্ছে প্রশান্তির রেশ।রাতের কথা মনে হতেই কিনা ধ্রুব এবার দাঁত বের করেই হেসে দিলো,সকালও মুখে হাত চেপে হাসে।ইশ এতো ভালোবাসে কেউ!এতো এতো সুখ যন্ত্রণা কেন ভালোবাসায়!

দুদিন পরে সকালের গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে।চোখ মুখ লাল হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।ধ্রুব ছুটে গিয়ে ওষুধ আনে।বিকালের দিকে জ্বর ছাড়লেও রাতে আবার আসে।ওষুধ খাইয়ে ধ্রুব মাথায় পানি দেয়।জ্বর নামার কোন লক্ষন নেই।ধ্রুব থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপে,একশো চার।গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে না মনে হচ্ছে পুড়ে যাবে।সকাল বিছনায় বসে আছে,বাচ্চাদের মতো ঠোঁট গোল করে অভিমানী চোখে ধ্রুবকে দেখছে।ধ্রুব বিছানায় বসার সাথে সাথে বললো,
“কোলে যাব ধ্রুব।”

এই প্রথমবারের মতো সকালের মুখে নিজের নাম শুনে আর তুমি সম্মোধন শুনে ধ্রুব অবাক হয়ে তাকায়।বলে,
“কি? ”

সকাল মাথা দুলিয়ে বললো,
“তোমার কোলে যাব।”

এটা বলেছে ঠিকি কিন্তু ধ্রুবকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরেছে।ধ্রুব সকালের কান্ডকারখানা দেখে বুঝে জ্বরে এসব করছে না হলে কাছে আসলেই তো মোচড়ামুচড়ি শুরু করে।ধ্রুব কোমড়ে হাত রেখে বললো,
“শুয়ে পড়ো জলপট্টি দিয়ে দেই।”

সকাল মাথা নেড়ে বললো,
“আমি শুবো না।”

“কি করবে?”

সকালের চোখ লাল হয়ে আছে,ঠোঁট দেখাচ্ছে শুষ্ক।ধ্রুবর চোখে চেয়ে বললো,
“তোমাকে দেখবো।কত্ত আদর লাগে জানো মনে হয় কাঁমড়ে খেয়ে ফেলি।”

ধ্রুব হাসে।আচ্ছা মনের কথা বেরোচ্ছে!ধ্রুবও সুযোগে বললো,
“আর কি ইচ্ছে করে?”

সকাল ফিকফিক করে হেসে ফেলে,
“তোমার আদর খেতে ইচ্ছে করে।”

সকাল ধ্রুবর গলায় কামড়ে দেয়,ধ্রুব ছটফটিয়ে উঠলে সকাল মাথা দুলিয়ে বলে,
“মনে আছে সেদিন দিয়েছিলে?সুদবোধ করলাম।”

ধ্রুব হেসে বললো,
“আচ্ছা!আমিতো আরো অনেক কিছুই দিয়েছি সব সুদবোধ করে দাও।”

সকাল চুপ হয়ে গলায় মুখ গুজে পড়ে থাকে।
ধ্রুব কোমড়ে চিমটি দিয়ে বললো,
“পাগলের বুঝ ষোলআনা।”

সকাল এভাবেই ঘুমিয়ে যায়।ধ্রুব সকালের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় এই মেয়েটাই তার কলিজা।এটা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব।এই যে কাছে আছে মনে হচ্ছে সারা ঘরে শান্তি বিরাজ করছে।বিয়ের আগেও যাকে চিনতো না এখন সেই মেয়েটাকেই সবচেয়ে প্রিয় লাগছে।স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বুঝি আল্লাহ এভাবেই মধুর করে দেয়!একে অপরের আনন্দের,সুখের খোরাক বানিয়ে দেয়!

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুইটা ছুঁইছুঁই।সকাল ধ্রুবর উদোম গায়ে লেপ্টে আছে।গোচা দাড়িতে নিজের তুলতুলে গাল ঘসে।ধ্রুবর ঘুম ছুটে যায়,জড়ানো কন্ঠে বলে,
“কি হয়েছে সোনা?খারাপ লাগছে?”

সকাল ঠোঁট উল্টে বললো,
“উহু,আদর খেতে মন চাচ্ছে।আদর খাবো।”

ধ্রুব সকালের কথা শুনে স্থির চোখে সকালকে পরখ করে।শরীর এখনো আগুন গরম।সে সকালের কপালে হাত দিয়ে বললো,
“আচ্ছা শরীর ভালো হোক।বেশি করে আদর দিবো।”

সকাল ত্যাড়া গলায় বললো,
“আমি এখনি বলছি মানে এখনি।”

ধ্রুব হাল ছাড়ে না বুঝানোর ভঙ্গিতে বলে,
“তুমি অসুস্থ!”

সকাল মিনমিন করে বলে,
“কিছু হবে না।”

ধ্রুব মাথা চুল টেনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে বললো,
“আল্লাহ!কোন দুঃখে পিচ্ছি বিয়ে করছিলাম?”
সকাল কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,
❝জান,আদর দাও না❞.

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here