কাঠগোলাপ_এবং_তুমি পর্ব – ১৩

0
4870

কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ১৩

নীশু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রাজ্যের খাওয়া দেখছে। আর মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে খাবার ছিনিয়ে আনার। কি ভয়ংকর বাজে ঘটনা সে ঘটাতে যাচ্ছে। ভাবলেই তার মাথা ঘুরিয়ে উঠছে। কিন্ত কিছুই করার নেই। সারারাত সে না খেয়ে কিছুতেই কাটাতে পারবে না। নীশু রাজ্যের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্লান করছিল কিভাবে কেড়ে আনবে। সবে মাত্র সে হাত বাড়াবে তখনই
রাজ্য তার দিকে তাকায়। সে মুখ বটে জিজ্ঞেস করে,

“কি ব্যাপার নীশু?? তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?? আমার পেট খারাপ হবে তো।”

নীশু রাজ্যের দিকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকায়।
তার কান্না পাচ্ছে। কি অবস্থা হলো তার! আজ তাকে খাবার ছিনতাই করে খেতে হয়। নীশুর কাঁদকাঁদ চেহারা দেখে রাজ্য বললো,

“নীশু! তুমি কি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করে দিবে নাকি?? আমি তো জাস্ট মজা করলাম। আচ্ছা! ঠিক আছে! তুমি তাকিয়ে থাকো আমি কিচ্ছু বলবো না।”

রাজ্যের কথা শুনে নীশুর আরও বেশি কান্না পাচ্ছে। ছেলেটা কি পরিমান বাজে! এত কথা না বলে একবার বললেই তো পারে “চলো নীশু, আমরা একসাথে খাই।”

লাজ লজ্জা ভুলে নীশুই শেষ পর্যন্ত বললো,

“আমিও খাবো।”

রাজ্য মুখ কুঁচকে ফেলে। নীশুর দিকে বিরক্তি ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল,

“আগে বলতে পারলে না! এখন আমি খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। আচ্ছা! নাও হা করো।”

রাজ্য নীশুর দিকে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দেয়। নীশুর বড্ড অভিমান হলো। এভাবে বলতে পারল রাজ্য?? সে তো খাবারই চেয়েছে। পানিতে ঝাঁপ দিতে তো বলেনি। সেও খানিকটা ভাব নিয়ে বললো,

“আমার হাত আছে। আমি নিজেই নিজের খাবার খেতে পারি।”

রাজ্য দ্রুত তার হাত গুটিয়ে নিয়ে বলল,

“তাহলে দিতে পারবো না। আমি আমার খাবারে কাউকে ভাগ দিই না। তোমাকে দিতে চাইলাম। কিন্তু তুমি নিতে চাইছো না। ওকে! নো প্রবলেম!”

কথাটা বলে রাজ্য সত্যি সত্যি খেতে শুরু করে দেয়। নীশু মিনমিন করে রাজ্যকে বকতে লাগল। রাজ্য শব্দ পেয়ে তাকালে নীশু হা করে। রাজ্য ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

“খাবে??”

নীশু দ্রুত মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। রাজ্য বসতে ইশারা দিয়ে নীশুর দিকে খাবার বাড়িয়ে দেয়। নীশু এবার বাধ্য মেয়ের মত চুপচাপ খেতে শুরু করে। রাজ্য খাওয়ার মাঝখানে বলল,

“স্যরি নীশু!”

“এতক্ষণ খাবার না দেওয়ার জন্য?? ঠিক আছে ঠিক আছে! আমি কিছু মনে করিনি।”

“না! এর জন্য নয়। তোমাকে আমি তোমার মতের ঊর্ধ্বে বিয়ে করলাম। আমার সাথে সংসার করাতে বাধ্য করছি। এর জন্য।”

নীশু খাওয়া বন্ধ করে ঢ্যাবঢ্যাবিয়ে তাকায় রাজ্যের দিকে। ছেলে টাকে সে বুঝতে পারে না। কখনো বুঝতে পারে না। রাজ্য নীশুর দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে আবার বলে উঠে,

“কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি। জোর করে কখনো ভালোবাসা সংসার করা যায় না। এখন হয়তো তোমাকে আমি আটকে রাখলাম। কিন্তু সারাজীবন তো নাও রাখতে পারি। তোমার বাবা আজ রাত বাড়িতে থাকবেন। সম্ভবত কাল সকালে যাবেন। তুমি চাইলে কাল তোমার বাবার সাথে চলে যেতে পারো।”

নীশুর চোখ দুটো ভিজে আসছে। তার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু সে কিছুতেই খুশি হতে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ভাঙা গলায় বললো,

“আমি চলে গেলে আপনি হীর আপুকে বিয়ে করবেন। তাই না??”

রাজ্য নীশুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। নীশুর কাছে হাসিটা বিষের মত মনে হলো। এর উত্তর হ্যাঁ কি না সে বুঝতে না পারলেও এটা বুঝতে পেরেছে দেরি হলেও শেষ পর্যন্ত রাজ্য তাকেই বিয়ে করবে। রাজ্য হেসে বলল,

“তুমি জানলে কি করে??”

“হীর আপু আমাকে বলেছে সব কথা। তাকে ফিরিয়ে দেবার কথা। কিন্তু আমি জানি আপনি এখন তাকে ঠিক মেনে নিবেন।”

বলেই নীশু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রাজ্যের হাত থেকে ঠাস করে ভাতের লোকমা পড়ে যায় প্লেটে। অন্য সময় নীশুকে কাঁদতে দেখলে তার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় কেউ বুঝি কলিজাটা ছিড়ে নিচ্ছে। কিন্তু আজ তার খুব আনন্দ হচ্ছে। খুব আনন্দ। নীশুর চোখের দু ফোটা পানি তার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার মনে হচ্ছে। সে এত ভালো উপহার আগে পায়নি। কেউ দিতে পারেনি এমন উপহার।

নীশু দ্রুত চোখের পানি মুছে নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। নাক টেনে বলল,

“আপনি ভাববেন না আপনাকে ছেড়ে যেতে হবে কাঁদছি। এ হলো সুখের কান্না। বুঝলেন??”

কথাটা শোনার সাথে সাথে রাজ্যের মুখে শ্রাবণের মেঘ নেমে আসে। ঘোর অন্ধকারে তার মনটা আবার ঢেকে যায়। সে দ্রুত খাওয়া নীশুকে খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। নীশু বিছানা গুছিয়ে রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছে। রাজ্য প্রায় আধ ঘন্টা পর রুমে এসে। একটা বালিশ নিয়ে পা বাড়ায় দরজার দিকে। নীশু রাজ্যের দিকে তাকিয়ে বলল,

“কোথায় যাচ্ছেন??”

“তুমি তো আমার সাথে থাকবে না। তাই অন্য রুমে যাচ্ছি। অনেক দিন পর হীরের সাথে দেখা হলো। ভাবছি আজ রাত গল্প করেই কাটিয়ে দেবো।”

“যাবেন না প্লিজ!”

“কেনো??“

নীশু কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

“আসলে আমি একা থাকতে পারি না। ভয় করে। মনে হয় কে যেন আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

রাজ্য ভ্রু কুঁচকে নীশুর দিকে তাকালে নীশু বলে উঠে,

“আপনার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি?? তাহলে আপনি বাবার কাছে জিজ্ঞেস করেন গিয়ে। একিদন তো আমাকে উড়িয়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। যদি বাবা না দেখত তাহলে কি যে হত!”

রাজ্য বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,

“ওমা! তাই??”

“হুম তো!”

“আচ্ছা! আমি আঙ্কেলের থেকে একটু শুনে আসি ঘটনাটা।”

নীশু দ্রুত রাজ্যের পথ আটকে বলল,

“না না! এখন যেতে পারবেন না।”

“কেনো??”

নীশু মিনমিন করে বলল,

“বাবা এখন ঘুমোবেন। তাই উনাকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। আপনি বরং শুয়ে পড়েন। কাল সকালে না হয় জানবেন।”

রাজ্য খানিকটা হেসে শুয়ে পড়ে বিছানায়। কিছু ক্ষণ পর নীশু রাজ্যের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন??”

“কেনো??”

“আমার মনে হচ্ছে আমাকে ভুতটা এসে উড়িয়ে
নিয়ে যাচ্ছে।”

রাজ্য নীশুকে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“এবার ঠিক আছে??”

নীশু আলতো করে মাথা দুলিয়ে বললো,

“হু!”

.
.
.

(চলবে)

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here