কাঠগোলাপ_এবং_তুমি পর্ব – ২

0
5320

কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ২
~ জান্নাত মাহজাবীন

কেউ যে হবু বউয়ের সাথে তার বয়ফ্রেন্ডকে দেখে তার প্রশংসা করতে পারে তা রাজ্যকে না দেখলে জানতেই পারত না নীশু। শেষমেষ রাজ্যের সাথেই নীশুর পরিণয় ঠিক হলো। সেদিন নীশু তাদের বাড়ি থেকে এক প্রকার পালিয়ে চলে আসে। তারপর থেকে রাজ্যের বাড়ির কারোর সাথে কোনো রকম সম্পর্ক রাখে নি সে। কয়েকদিন বেশ ভালো ভাবেই কেটে গেল। কিছু দিন পরই হটাৎ রাজ্যদের বাড়ি থেকে নীশুর বাড়িতে প্রস্তাব আসে। নীশুর বাবা-মা হাসি মুখে সব মেনে নেন। তারা যেন এর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তাছাড়া রাজ্যকে প্রত্যাখ্যান করার কোনো কারণও নেই। বিদেশ থেকে পড়াশুনা শেষ করে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করছে। তার বাবার বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় নিজস্ব বাড়ি গাড়ি সবই আছে। বলতে গেলে জমিদারের ছেলে। আর চেহারা?? সেটা তো তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট দেখলেই বুঝা যায়। কত মেয়ের প্রেমাবেদন! যে কেউ দেখলেই ধপাস করে তার প্রেমে পড়ে যায়। যদি তার আচরণ না জানে। নীশু আচরণটা জানে বলেই হয়তো এখনো প্রেমে পড়ে নি। তাছাড়া বাবার মুখের উপর কথা বলার মতো দুঃসাহস নীশুর নেই। কিন্তু রাজ্যকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার ক্ষমতাও তার নেই। তাই রাজ্যকে জরুরি কথা বলার নাম করে একটা রেস্টুরেন্টে ডাকে। আধঘন্টা অপেক্ষা করার পর রাজ্য আসে। চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,

“তোমার কাছে দশ মিনিট সময় আছে। যা কথা বলার এর মধ্যেই বলতে হবে।”

রাজ্য হাতের কালো ঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে আবার বললো,

“তোমার সময় শুরু হচ্ছে। নাও স্টার্ট করো।”

নীশু হতভম্ব হয়ে রাজ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার এতটা পরিবর্তন হলো কি করে?? যে ছেলে কথা বলার জন্য বা শুধু দেখার জন্য মাঝরাতে বাড়িতে চোরের মতো ডুকে পড়ে সে আজ বলছে দশ মিনিট সময় কথা বলার জন্য!
নীশুকে চুপ থাকতে দেখে রাজ্য কপাল কুঁচকে বললো,

“তোমার সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে। পরে আফসোস করবে না যেন। আর তোমার মুখের হা বন্ধ করো। মনে হচ্ছে আমাকে গিলে ফেলবে এক্ষুণি।”

নীশু দ্রুত মুখ বন্ধ করে। সে আজ শুধু অবাকই হচ্ছে। ছেলেটা কি আজ তাকে অবাক করার জন্যই এসেছে!? নীশু টেবিলে থাকা কফি মগের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আসলে, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

রাজ্য খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,

“কেনো, কারণটা জানতে পারি??”

“আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।”

রাজ্য নীশুর পাশে বসে থাকা ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটা মুখ কাঁচুমাচু করে বসে আছে। তারপর মুখ কুঁচকে বলে,

“ও নাকি??“

“হুম!”

“কি নাম??”

“আবির!”

“বাহ্! সুন্দর নাম।”

নীশু কথাগুলো বলার সময় মনে মনে ভয় পাচ্ছিল। না জানি রাজ্য কি তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলে! কিন্তু তার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। বরং সে ছেলেটির নামের প্রশংসা করল।
তাকে আরও অবাক করে দিয়ে রাজ্য বললো,

“তোমার কি কথা বলা শেষ??”

নীশু মাথা নাড়ায়। যার অর্থ শেষ। তখন রাজ্য তার পকেট থেকে পার্স বের করে। সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে নীশুর হাতে গুঁজে দিয়ে বলে,

“সম্বন্ধের পর প্রথম দেখা। আর প্রথম দেখায় নাকি কনেকে টাকা দিতে হয়। বিয়ে হোক বা না হোক টাকা দিতে হবে না?? নাও তোমার টাকা।”

কথাটা বলে রাজ্য টেবিল থেকে তার ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,

“যাওয়ার সময় বিলটা দিয়ে যেও। আমি পরে শোধ করে দেবো। আবার এখান থেকে দিতে যেও না যেন। কেমন??”

রাজ্য আর এক মিনিটও দেরি না করে বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। নীশু রাগী দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়া দেখে। সে বুঝতে পারল না রাজ্য তাকে অপমান করল কি না। সেও তার হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালে আবির বলে উঠে,

“বিলটা দিয়ে যাও নীশু। রাজ্য কিন্তু তোমাকে বলেছিল দিয়ে যাওয়ার জন্য। আর আমি..”

আবির কথাটা শেষ করতে পারেনি। তার আগেই নীশু তার ব্যাগটা টেবিলে ছুড়ে ফেলে হনহন করে চলে যায়।

.
.
.

(চলবে)

~ জান্নাত মাহ্জাবীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here