কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ৪
~ জান্নাত মাহজাবীন
নীশুর ঘুম ভেঙ্গে গেছে সেই কখন। কিন্তু কিছুতেই চোখ খুলতে পারছে না। মাথা টা ভীষণ ভারী লাগছে। দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে উঠে বসে বিছানায়। মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছে তার সাথে। রাজ্য তাকে নিয়ে যেতে এলে সে গাড়িতে রাজ্যের পাশে বসে। রাজ্যকে অনেক জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাচ্ছে তারা। কিন্তু রাজ্য মুখ খুলেনি। শেষ পর্যন্ত নীশু বলে,
“আপনি বলবেন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?? নাকি আমি গাড়ি থেকে লাফ দেবো??”
“গাড়ি লক করা। আর যাচ্ছি জাহান্নামে।”
এতক্ষণ রাগ হলেও জাহান্নামের কথা শুনে নীশুর মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। কারণ সে অসাধারন একটা প্ল্যান করে ফেলেছে। নিয়ে যাক জাহান্নামে। সে যাবে। নিশ্চয়ই যাবে। আর গিয়ে রাজ্যকে ঠুস করে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দিয়ে ভোঁ করে দৌড় দেবে। ভাবতে ভাবতে নীশু গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ে। যখন চোখ মেলে তখন দেখে রাজ্য তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তাকে চোখ খুলতে দেখে মুচকি হাসে। তারপর নীশুকে নিয়ে যায় তাদের পার্টির জায়গায়। পার্টিতে রাজ্যের অনেক বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তাকে। বেশ কিছু মেয়ে বন্ধুও ছিল। দেখতে স্মার্ট আর সুন্দর হলেও তার কাছে মনে হয়েছে বেহায়া। তা না হলে হবু বউয়ের সামনে কি করে তার বর কে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরতে পারে! কি বেহায়া মেয়েগুলো! তখন নীশুর ইচ্ছে করছিল কষে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে আসতে। কিন্তু দিতে পারেনি বলে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। পার্টির এক পর্যায়ে নাচ-গানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্য নীশুর হাত ধরে বলে,
“গাড়িতে তো বলেছিল লাফ দেওয়ার কথা। এখন দেখি কেমন লাফালাফি করতে পারো??”
নীশু রাজ্যের হাত হেঁচকা টানে সরিয়ে নেয়। রাজ্য পড়তে পড়তে উঠে দাঁড়ায়। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায় নীশুর দিকে। নীশু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“আপনার সাথে নাচবো এটা ভাবলেন কি করে?? যান গিয়ে তাদের সাথে নাচেন যারা আপনাকে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরেছিল।”
রাজ্য ভ্রু কুঁচকে তাকায় নীশুর দিকে। তারপর মুচকি হেসে চলে যায়। অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে নাচতে শুরু করে দেয়। নীশুর তখন ইচ্ছে করছিল দুজনকে গরম তেলে ভাজা করে মসলা দিয়ে খেয়ে ফেলতে। মেয়েটা কে খাওয়া যেতে পারলেও রাজ্যকে সে খেতে পারবে না। ছেলেটা যা ভয়ংকর দেখা যাবে পেটের ভেতর গিয়ে নীশুর কিডনি খেতে শুরু করলো! অনেক ক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর নীশু ছাদে চলে যায়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। ছেলেটা যখন তার খেয়াল রাখতে পারবে না তখন নিয়ে আসলো কেনো?? আনমনে এসব ভাবার সময় হটাৎ কারো ডাকে চমকে উঠে নীশু। পেছনে তাকিয়ে দেখে রাজ্যের একটা বন্ধু। ছেলেটা কাছে এসে বললো,
“আমার নামটা কি মনে আছে ভাবী??”
নীশু মুখ টা ছোট করে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ নেই। ছেলেটা মুখে বিশাল বড় হাসি টেনে বললো,
“আমি নীরব। আর আপনি নীশু। দেখেছেন কী মিল!?”
নীরবের কথা শুনে নীশু না হেসে পারলো না। নীশুর হাসির শব্দের পাশাপাশি নীরব একটা থাপ্পড়ের শব্দ ও শুনে। তাকিয়ে দেখে নীশু গালে হাত দিয়ে রাজ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। রাজ্যও নীশুর দিকে অগ্নি মূর্তির মতো তাকায়। তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় এখান থেকে। নীরব হতবাক হয়ে শুধু তাদের চলে যাওয়া দেখে। রাজ্য নীশুকে টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে যায়। দরজা লাগিয়ে নীশুর এক হাত পিঠের সাথে পেঁচিয়ে ধরে। নীশুর গাল চেপে ধরে দাঁত চেপে বলে,
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
“কই, কখনো তো দেখি নি আমার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে?? অন্যদের সাথে পেট ফেটে হাসি আসে। আমার বেলায় লব ডংকা!”
নীশু রাজ্যকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“আপনি একটা বাজে বাজে বাজে লোক। বাজে লোকের সাথে আমি হেসে কথা বলতে পারিনা।”
রাজ্যকে নীশুকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে হনহন করে চলে যায়। নীশুর কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এত জোরে কেউ মারে! নিশ্চয়ই আজ জ্বর চলে আসবে নীশুর। ছোট বেলায় যাদের থু দিয়ে দৌড় দিত তারাও কখনো এত জোরে মারত না তাকে। নীশু কাঁদকাঁদ চেহারা বানিয়ে বাইরে গিয়ে দেখে রাজ্য ফের মেয়েগুলোর সাথে নাচছে। শুধু একটা মেয়ে না। মেয়েদের একটা গ্রুপের সাথে। নীশু দাঁত কটমট করে তাকায় তাদের দিকে। এতক্ষণ নীশুর সাথে কি বাজে ব্যবহার করে এখন তাদিন তাদিন করে নাচছে। নীশু রাগে ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসটা খালি করে দেয়। তার আশেপাশের লোকজন সহ সব কিছু ঘুরলেও সে আরো কয়েক গ্লাস ওয়াইন শেষ করে দেয়। চোখ খুলে তাকাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার। তাকাতেই পারছে না। অসাড় হয়ে আসছে শরীর। দাঁড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। পা দুটো ভেঙে পড়ছে। তখনই ধপাস করে কানে একটা শব্দ যায়। ব্যস! আর কিছুই মনে নেই তার। এখন চোখ মেলে দেখে সে তার নিজের বিছানার মতো একটা বিছানায়। ভালো করে তাকিয়ে দেখে রুমটাও নিজের রুমের মতো। মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে আশপাশটা।
.
.
.
(চলবে)
~ জান্নাত মাহ্জাবীন