কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ৮
বিছানায় ছোপছোপ রক্ত। তারই একপাশে রাজ্য ক্লান্ত শরীরে শুয়ে আছে। আর নীশু ফ্লোরে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে কান্না করছে। কত স্বপ্ন ছিল আজকের রাতটা নিয়ে। রাজ্য সব ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে।
একটু আগের কথা ভাবতেই তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সে কত আশা করে বসে ছিল। মনে কতশত স্বপ্ন বুনছে। ভাবছে এখানে রজনীগন্ধার পরিবর্তে এক গাদা কাঠগোলাপ থাকলে কেমন হত?? গোলাপের পাপড়ির বদলে কাঠগোলাপের গন্ধে ভরে যেত ঘরটা। সেখানে নীশু চুপটি করে ঘোমটা টেনে বসে অপেক্ষা করত প্রিয় মানুষটার জন্য। আর তাকে রাজ্যের মত বাজে একটা ছেলের সাথে। রাজ্য বাজেই তো। খুব খুব খুব বাজে! বাজে না হলে কখনো কেন বলে না “ভালোবাসি প্রেয়সী”। শুধু অধিকার খাটাতে আসা। সে অধিকার দেওয়ার সুযোগ দেয়নি তো। তাহলে কেন অধিকার পাবে। নীশুর আকাশ পাতাল ভাবনা বন্ধ হয় দরজার শব্দে। সে খুব ভালো করে জানে রাজ্য এসেছে। রাজ্য দরজা বেশ জোরে শব্দ করেই বন্ধ করে। নীশুর অন্তরাত্মা সহ কেঁপে উঠে। রাজ্য ওয়াশরুমে যায়। নীশু বিছানা ছেড়ে সবে উঠতে চায় তখনই রাজ্য চলে আসে। নীশু আজ রাজ্যের কাজকর্ম বুঝতে পারছে না। রাজ্য নীশুর সামনে গিয়ে হালকা সবুজ পাঞ্জাবির পকেট থেকে কিছু ছবি বের করে ছুড়ে মারে নীশুর মুখে। নীশু বেশ অবাক হয় রাজ্যের এ ধরনের আচরণে। সে একটা ছবি হাতে নিয়ে দেখে সাথে সাথে ফেলে দেয়। ফেলে দেয়নি ঠিক পড়ে যায়। ছবিতে নীড়ের সাথে তার জড়িয়ে ধরার ছবি। তার স্পষ্ট মনে আছে এইদিনের ঘটনা। রেগ ডে তে নীড় তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু সে জানত না এটা ফ্রেমে বন্দি আছে। নীশু কাঁপা হাতে আরও কিছু ছবি তুলে। প্রতেকটা ছবিতে নীশুর সাথে নীড়ের কিছু অন্যরকম ছবি। কোনোটাতে রিক্সায় বসে নীশু নীড়কে মারছে। আবার কোনোটাতে রেস্টুরেন্টে নীড় নীশুকে খাইয়ে দিচ্ছে। দুজনের দৃষ্টি বিনিময়ের কিছু ছবিও আছে। কিন্তু নীশু জানত না এই মুহূর্ত গুলো কখনো ফ্রেমে বন্দি হতে পারে। মুহূর্ত গুলো তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ছিল। কিন্তু সে তো জানত না সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত গুলোও ভয়ংকর হতে পারে। জানবে কি করে। সে তো একজন বন্ধুর মত মিশেছে নীড়ের সাথে।
একজন ভালো বন্ধু। যে সবসময় অপর বন্ধুর হাসির জন্য যা খুশি করতে পারে। জড়িয়ে ধরতে পারে। খাইয়ে দিতে পারে বা খেলার ছলে অন্য জনের চোখের ভাষা বুঝে নিতে পারে। তখন কেন নীশু নীড়ের চোখের ভাষা বুঝতে পারে নি?? তখন তো সে শুধু বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালোবাসা টা দেখে ছিল। নীশুর আগের কথা গুলো মনে পড়তে অজান্তেই তার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে পড়ল। পানিটা রাজ্যের বুকে কাটার মত আঘাত হানে। রাজ্য উদাস হয়ে জানতে চাইল,
“খুব ভালোবাসো নীড়কে?? না??”
নীশুর তার কথায় খুব রাগ হচ্ছে। ভালোবাসলে আজ কি সে তার সাথে থাকত?? যদি সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে মরে গেলেও তাকে বিয়ে করত না। তার ভালোবাসা এত ঠুনকো না। তাই রাগের মাথায় বলে ফেললো,
“হুম ভালোবাসি! তো এখন কি করবেন?? ছেড়ে দেবেন?? ডিভোর্স করবেন?? এতে আমার মুক্তি। রেহাই পাবো আপনার থেকে।”
নীশু কথাটা বলার সময় কখনোই ভাবেনি এর জন্য তাকে এভাবে ফেরত পেতে হবে। রাজ্য দাঁত চেপে বললো,
“রেহাই আমার থেকে তোমার এত সহজে মিলবে না! আর রেহাই না মিলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
ব্যস! শুরু হলো তার ভালোবাসার নিষ্ঠুর অত্যাচার। নীশুর স্বপ্নের কাঠগোলাপের বাসর আর হলো না। রাজ্যকে বলা হলো না তাকে এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ দিয়ে প্রেমাবেদন করার কথা।
ঘড়িতে তিনটা বেজে দশ মিনিট। নীশু উঠার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না। ছেলেটা তাকে ধুমড়ে মোচড়ে ফেলেছে। সেও মনে মনে খুব ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। রাজ্যকে সে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না। কাল থেকেই রাজ্যের জন্য সে ভয়ঙ্কর শাস্তি রেডি করবে। ভয়ঙ্কর! ভীষণ ভয়ংকর!
(চলবে)
~ জান্নাত মাহ্জাবীন
[ গল্প কেমন হয়েছে তার কমেন্ট না করে বলছেন বড় করে দেওয়ার জন্য। তা সম্ভব না। সম্ভব! যদি প্রতিদিন না দেই। বড় করে দিলে দেরি হবে পোস্ট করতে। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের। ধন্যবাদ! ]