কাননে ফুটিল ফুল — ১ (১৭০০+ শব্দ)
১.
“হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেড়া পালে
ডিঙা বায়; -রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভীরে।”
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তরুনী। কিছুক্ষন আগেই সুদূর ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে সে। কত বয়স হতে পারে মেয়েটির? বড়জোর ছাব্বিশ কিংবা সাতাশ। মাথায় সোনালি রঙের চুল, অতিরিক্ত সাদা গায়ের রঙ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে যে তরুনী একজন বিদেশী। অনেকক্ষন ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলে কিছুটা বাঙালি ছাপও কি পাওয়া যাবে? কে জানে।
একসময় শ্বেতাঙ্গ কাউকে দেখলে বাঙালিরা হুমড়ি খেয়ে পড়ত দেখার জন্য। এখন এয়ারপোর্টে এবং ঢাকার রাস্তায় বিদেশী লোকজন মাঝেমধ্যেই দেখা যায় বলে বেশিরভাগ মানুষেরই আগ্রহ কিছুটা কম থাকে। কিন্ত ঠিক এই মুহুর্তে শ্বেতাঙ্গ রমণীটির দিকে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার কারণ একজন বিদেশিনীর কন্ঠে বিশুদ্ধ বাংলায়, স্পষ্ট উচ্চারণে জীবনানন্দের কবিতা বোধহয় কস্মিনকালেও শোনেনি কেউ।
নৈশীর কাছে বাংলাদেশ ছিল রূপকথার গল্পের মতো। নিজের এই সাতাশ বছর বয়স অব্দি শুধু বাংলাদেশের গল্পই শুনে এসেছে সে। নৈশীর জীবনের সাথে তিনটা দেশের নাম জড়িয়ে আছে আদ্যোপান্ত। ইতালি, আমেরিকা এবং বাংলাদেশ। তার জন্ম, শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে বড় হয়ে ওঠা সব ইতালিতে৷ আমেরিকা পিতৃভূমি, সেখানেও যাওয়া হয়েছে বহুবার। কিন্তু মাতৃভূমি বাংলাদেশ ওর কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে শুধু গল্পই শোনা হয়েছে এই দেশের।
পরিচিত মুখের আশায় চারপাশে তাকিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছিল নৈশী। নারীকন্ঠে নিজের নাম শুনে পাশে ফিরে তাকাল ও। এক মুহূর্তের জন্য বিভ্রান্তিতে পড়ল নৈশী। ওর মনে হলো, মা দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। এর আগেও ভিডিওকলে এই মুখটা বহুবার দেখেছে নৈশী। কিন্তু সামনাসামনি হওয়া এই প্রথম। আফরোজা বেগম হাসিমুখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল ওকে। নৈশীও আগলে নিল তাকে।
আফরোজা বললেন, “পাগল মেয়ে, এবার ছাড় আমাকে। বাসায় গিয়ে যতক্ষন খুশি ধরে রাখিস।”
নৈশী ছাড়ল না আফরোজা বেগমকে। জড়িয়ে ধরে রেখেই বলল,
“মা বলত, খালারাও নাকি ঠিক মায়ের মতোই হয়। আজ মনে হচ্ছে, মা ভুল কিছু বলেনি। তোমার শরীর থেকে খুব সুন্দর একটা স্মেল পাচ্ছি ঠিক যেমনটা পেতাম মায়ের থেকে। আরেকটু ধরে রাখি প্লিজ, খালামনি।”
আফরোজা বেগম শব্দ করে হাসলেন।
“এই মেয়ে তো দেখি সত্যিই পাগল। আচ্ছা, বাসায় যাই আগে, তারপর সারাদিন ধরে বসে থাকিস। এখনও অনেকটা পথ জার্নি করে যেতে হবে কিন্তু।”
নৈশী ছেড়ে দিল খালাকে। আশেপাশে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“তুমি একা যে এখানে? সাথে কেউ আসেনি?”
“এসেছে তো৷ সাব্বির এসেছে আমার সাথে। আন্দালিবও আছে।”
আফরোজা বেগমের দুই ছেলে। বড়ছেলে সারজিম আর ছোট ছেলে সাব্বির। এদের দুজনকেই নৈশী চেনে। তাই স্বভাবত যে প্রশ্নটা আসার কথা সেটাই করল ও
“আন্দালিব কে?”
“তোর সারজিম ভাইয়ের ফ্রেন্ড। তোকে নিতে আসার জন্য সারজিমের সাথেই আসার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অফিসিয়াল কাজে ওকে থাইল্যান্ড যেতে হলো। তাই আন্দালিবকে সাথে নিয়ে এসেছি৷ তোর দেরি হচ্ছিল দেখে ওরা কী একটু কাজ আছে বলে চলে গেল। আরে, ওইতো চলে এসেছে ওরা।”
কিছুটা দূর থেকে হেঁটে আসা সাব্বিরের সাথে হাসি বিনিময় করে তার পাশে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে ভালো করে খেয়াল করল নৈশী। ফার্স্ট ইম্প্রেশনে নৈশীর মনে আন্দালিব সম্পর্কে যে বদ্ধমূল ধারনাটা গেঁথে গেল সেটা হলো, লোকটা প্রচন্ড সুন্দর এবং ফ্যাশন সচেতন। কালো পান্টের সাথে ব্লাক অ্যান্ড হোয়াইটের কম্বিনেশনে শার্ট, ব্যাকব্রাশ করে রাখা চুল, পায়ে কালো জুতা।
নৈশীর এই কয়েক সেকেন্ডের পর্যবেক্ষনের মধ্যেই ওরা দুজন এসে দাঁড়াল আফরোজার পাশে। নৈশী হেসে সাব্বিরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
“হেই ব্রো, হোয়াটস আপ?”
“ফাইন। সো, হাউ ওয়াজ দ্যা জার্নি?”
“অ্যামেজিং।”
সাব্বিরের মুখে তখনও হাসি লেগে আছে। এবার আন্দালিবের দিকে তাকিয়ে বলল ও, “আন্দালিব ভাই, মিট মাই কাজিন অলিভিয়া নৈশী। যাকে রিসিভ করার জন্য আমরা সুদূর বরিশাল থেকে ছুটে এসেছি।”
আন্দালিব নৈশীর দিকে তাকিয়ে প্রথমে বিড়বিড় করল, “কাজ ফেলে এতদূর ছুটে আসাটা সার্থক আমার।” তারপর ফর্মাল হাসি দিয়ে নৈশীর সাথে পরিচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“হ্যালো, নৈশী। নাইস ট্যু মিট ইউ। সো, হাউ আর ইউ?”
আশেপাশের মানুষকে হুটহাট ভড়কে দিতে ভালোই লাগে নৈশীর৷ আন্দালিবকে কিছুটা চমকে দিতেই ও বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় বলল, “আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।”
আন্দালিব ভালোই চমকাল।
“ও মাই গড! কোনো ফরেনারের মুখে এত ভালো বাংলা উচ্চারণ আমি প্রথমবার শুনলাম।”
আন্দালিবের কথার প্রত্যুত্তরে নৈশী শুধুই হাসল। ওর হয়ে উত্তরটা দিল সাব্বির,
“আন্দালিব ভাই, তুমিও চমকেছ? নৈশী আপু একেবারে বাংলাদেশীদের মতো করেই বাংলা বলতে পারে। তা ছাড়া এমন এমন বাংলা শব্দও নৈশী আপু জানে, যেগুলো সম্ভবত তুমিও জানো না।”
আন্দালিব প্রশংসার স্বরে বলল, “বিউটি উইদ ব্রেইন।”
মোবাইলের লকস্ক্রিনের দিকে একপলক তাকিয়ে সাব্বির বলল,
“দুপুর তো অলমোস্ট হয়ে এলো। এখন আবার পাঁচ ছয় ঘন্টার জার্নি৷ দুপুরের খাবারটা বরং খেয়েই রওয়ানা হই, কী বলো আম্মু?”
আফরোজা বেগম সহমত হলেন ছেলের কথায়। ধারেকাছের একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে ঢুকল ওরা। নিরিবিলি কর্নারের দিকে একটা টেবিল দখল করল ওরা।
ওদের দেখে ওয়েটার এগিয়ে এলো। আন্দালিব মেন্যু কার্ড নৈশীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“নৈশী, আজ যেহেতু বাংলাদেশে আপনার প্রথম দিন তাই অর্ডারটা আপনার পছন্দমতোই হোক। আপনার কিছু খেতে ইচ্ছের করলে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।”
নৈশী মেন্যু কার্ডের দিকে না তাকিয়েই বলল, “ব্রুশেটা।”
“ও মাই গড। কী বললেন এইমাত্র?” আন্দালিব প্রশ্ন করল।
নৈশীর স্বাভাবিক উত্তর, “ব্রুশেটা একটা ইতালিয়ান খাবার। ওটাই খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বোধহয় ওটা এখানে পাওয়া যাবে না।”
“থ্যাংকস গড। ওটা খাবারের নাম! আমি তো ভেবেছিলাম আপনি বোধহয় ইতালিয়ান ভাষায় গালি দিচ্ছেন।”
নৈশী হেসে ফেলল।
আফরোজা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে আন্দালিবকে বললেন, “এই ছেলের সবখানে শুধু ফাজলামি। জলদি খাবারের অর্ডার দে। খাওয়া শেষ করে আবার রওয়ানা দিতে হবে।”
আন্দালিব আর আর সাব্বিরের পছন্দে অর্ডার করা হলো শেষপর্যন্ত। খেতে খেতে কোনো এক অজানা অমোঘ আকর্ষণে নৈশীর উপর থেকে নজর সরাতে পারছিল না আন্দালিব। আলাপ জমানোর উদ্দেশ্যে আবার কথা বলে উঠল ও,
“স্যরি নৈশী। আপনাকে আজ ব্রুশেটা খাওয়াতে পারলাম না। তবে একদিন না একদিন আমি আপনার ইচ্ছেটা অবশ্যই পূরণ করব।”
“এতটা কনফার্ম হয়ে বলাটা বোধহয় ঠিক হলো না। কাল কী হবে কে জানে! আপনি বরং ইনশাআল্লাহ বলে শুরু করুন।”
আন্দালিব দমে গেল না। সুচতুর হেসে বলল, “ইনশাআল্লাহ, একদিন খাওয়াবো।”
খাওয়া শেষ করে ওরা যখন রওয়ানা হলো তখন দুপুরের আলো ঢলতে শুরু করেছে মাত্র। আন্দালিব নিজেই ড্রাইভ করছে। নৈশী আফরোজার সাথে পিছনে বসেছে বলে সরাসরি তাকানোর সুযোগ নেই এখন। আন্দালিব তাই রিয়ার ভিউ মিররের মধ্যেই নৈশীর প্রতিবিম্ব যতটুকু সম্ভব দেখতে থাকল।
চোখাচোখি হলো না একবারও। তবুও নৈশী বুঝে গেল একজোড়া চোখ তাকে দেখে যাচ্ছে কিছুক্ষন পরপর। বেশিরভাগ মেয়েদের এই বোঝার ক্ষমতাটা বোধহয় সৃষ্টিকর্তাই দিয়ে দেন৷ কেউ আড়াল থেকে দেখলেও সেটা তারা খুব সহজেই বুঝে ফেলে। নৈশী পাশে তাকাল। আফরোজা বেগম ইতোমধ্যে ঘুমিয়েও পড়েছেন। সাব্বির বলল,
“মায়ের শরীরটা ইদানিং বেশি ভালো যাচ্ছে না, বুঝলে নৈশী আপু। দেখো, কেমন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।”
নৈশী খালাকে শুইয়ে দিয়ে মাথাটা নিজের কোলের উপর টেনে নিয়ে বলল, “অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছে। এখন আবার কতটা পথ যেতে হবে। একটু বরং ঘুমিয়েই নিক।”
আন্দালিব অনেকটা প্রাণোচ্ছল স্বাভাবের। পরিচিত হোক বা অপরিচিত, যেকোনো মানুষের সাথে খুব অল্প সময়ে আলাপ জমিয়ে ফেলতে জুড়ি নেই ওর। কিন্তু আজ এই বিদেশিনীর সাথে সাথে আলাপটা ঠিক এগুচ্ছে না, বারবার তাল কেটে যাচ্ছে। আরেকবার তাই নৈশীর মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করল ও,
“বোর লাগছে, নৈশী? মিউজিক প্লে করি? আপনার পছন্দের কোনো প্লে-লিস্ট থাকলে দিতে পারেন।”
“আসলে জার্নিতে গান শোনা হয় না আমার।”
“কেন? গান শুনতে ভালো লাগে না?”
“অ্যাকচুয়ালি মা জার্নিতে গান শোনা একদম লাইক করতেন না। বলতেন মানুষের রাস্তায় কতো বিপদাপদ হতে পারে। এই সময় হারামে মগ্ন না থেকে আল্লাহ কে মনে করা উচিৎ।” আবারও নৈশীর কাছে ক্লিন বোল্ড হতে হতে নিজেকে সামলে নিল আন্দালিব।
“মায়ের কথা খুব মেনে চলতেন নিশ্চই।”
“সব মেনে চলেছি বলব না। তবে মায়ের আদর্শ যতটা সম্ভব মনেপ্রানে ধারণ করার চেষ্টা করেছি সবসময়। সেজন্যই বোধহয় ছোটবেলা থেকে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠলেও আমার মানসিকতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর পাঁচ দশটা বাঙালি মেয়ের সাথে মিলে যায়।”
ওদের আলাপ চলতে থাকল। সাব্বির স্মার্টফোনে ডুবে থাকলেও মাঝেমাঝে ওদের সাথে আলাপে যোগ দিল। কথা বলতে বলতে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আন্দালিব অনুধাবন করল, নৈশী আসলে আপাদমস্তক প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতোই একটা মেয়ে।
২.
সাব্বিরের সকাল শুরু হয় দুপুর সাড়ে বারোটায় ব্রেকফাস্ট করার মাধ্যমে। মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর গত চারমাস ধরে বেশিরভাগ দিন ওর রুটিন এভাবেই চলছে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসল ও। ওখানে বসেই চেঁচিয়ে ডাকল আফরোজাকে,
“আম্মু, নাস্তা দাও।”
সাব্বিরের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ওর মাথায় চাটি মারল আন্দালিব।
“একটা বাজতে চলল, আর কিছুক্ষন পরে সবাই দুপুরের খাবার খাবে। আর তুই এখন চাইছিস ব্রেকফাস্ট?”
আন্দালিবের কথার উত্তরে কী একটা বলতে যাচ্ছিল সাব্বির। তার আগেই শব্দ করে নাস্তার প্লেট এনে সামনে রাখলেন আফরোজা বেগম।
“নে নাস্তা খা, খেয়ে উদ্ধার কর আমাকে। এক ভাই দিনরাত খেটে মরছে সংসারের জন্য, আরেকজন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবার ফিরুক সারজিম। এর একটা হেস্তনেস্ত ওকে করতেই হবে।”
“মা জননী, এসব কী? আজকাল কথায় কথায় বড় ছেলের ভয় দেখাও কেন? তোমাকে তো আগেই বলেছি আমাকে দিয়ে এসব চাকরি-বাকরি হবে না। আমি হবো বিজনেসম্যান।”
“তুই ব্যবসা শুরু করলে একমাসের মধ্যে সেই ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে।”
“আবারও ইনসাল্ট! আম্মু, শোনো প্রথমেই এরকম নেগেটিভ কথা বলতে নেই। তোমার তো উচিৎ আমাকে আরও উৎসাহ দেওয়া। এক কাজ করো না আম্মু, নানা তো তোমার নামে অনেক সম্পত্তি দিয়েছেন। ওখান থেকেই কিছু বিক্রি করে দাও না আমাকে…।”
কথা শেষ করার আগেই প্রচন্ড শব্দে কয়েকটা বেলনের বাড়ি পড়ল সাব্বিরের পিঠে।
“বদমাইশ, তোর সাহস তো কম না, শেষপর্যন্ত কিনা আমার বাপের বাড়ির সম্পত্তির দিকে নজর দিচ্ছিস। আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।”
ডায়নিং রুমের এই দৃশ্য দেখে দুজন অষ্টাদশী তরুনী খিলখিল শব্দে হেসে উঠল। নারীজাতির নিষ্ঠুরতার পরিচয় যুগে যুগে বহুবার পেয়েছে মানুষ। আজ নিজের এই অপমানে লাস্যময়ী দুই তরুনীকে হাসতে দেখে সাব্বির আরেকবার মানতে বাধ্য হলো, নারীজাতি পাষাণ।
আফরোজা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলেন জ্যোতি আর ফাহিমা দাড়িয়ে আছে। জ্যোতির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন তিনি,
“তুই হঠাৎ এই অসময়ে?
” নৈশী আপুর সাথে গল্প করতে এলাম চাচি।”
“আচ্ছা, সকালে খেয়েছিস নাকি তোদেরও দেব নাস্তা?”
“কী বলো! এই দুপুর বেলা অব্দি কেউ না খেয়ে থাকে? আমরা তো আর অলস অকর্মণ্য নই যে দুপুর অব্দি মরার মতো ঘুমাবো। সকালেই খেয়ে নিয়েছি আমরা।” জ্যোতি শেষের কথাটুকু যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একজনকে ইঙ্গিত করে বলেছে সেটা বুঝল সবাই।
আন্দালিব সাব্বিরের কাছে গিয়ে বলল, “আমার মনেহয় তোর সময়টা সত্যিই খারাপ যাচ্ছে রে। হাঁটুর বয়সী মেয়েরাও আজকাল তোকে অপমান করছে।”
সাব্বির অগ্নিদৃষ্টি হেনে তাকাল জ্যোতির দিকে। জ্যোতি সাব্বিরের চাচাতো বোন অর্থাৎ ছোট চাচার একমাত্র মেয়ে। এবার ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। যেদিন এই মেয়ে পয়দা হয়েছে সেদিন থেকেই জ্বালানো শুরু করেছে সাব্বিরকে। সাব্বিরের এখনও সেই দিনের কথা মনে আছে। হাসপাতালে জ্যোতিকে দেখতে গিয়ে আবদার করল, ওকে কোলে নেবে। অতি সন্তপর্ণে মা ওর কোলে দিলেন জ্যোতিকে। তার ঠিক মিনিটখানেক পরই নিজের পেটের দিকে গরম একটা তরল পদার্থের উপস্থিতি টের পেল সাব্বির। জ্যোতি ওর কোলে মুত্র বিসর্জন দিয়েছিল সেদিন। ব্যাস, সেদিন থেকেই শুরু। তারপর থেকে কারণে অকারণে জেনেবুঝে বহুবার জ্যোতি ওকে জ্বালিয়ে মেরেছে। কাছাকাছি বাসা হওয়াতে জ্যোতির জন্য সুবিধাই হয়েছে সাব্বিরকে নাকানিচুবানি খাওয়াতে।
একা বিরক্ত করে জ্যোতির পোষাচ্ছিল না বোধহয়৷ সেজন্য ফাহিমা নামের এই হেল্পারটিকে জুটিয়ে নিয়েছে বছর দুয়েক আগে।
ফাহিমা জ্যোতিদের ভাড়াটিয়া। আগে প্রতিবেশি হিসেবে সখ্যতা থাকলেও একই কলেজে অ্যাডমিশন নেওয়ার পর থেকে দুজনের বন্ধুত্বটা গভীর হয়েছে অনেকটাই।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
🔴[নোট ১- এই পর্বে ব্যবহৃত কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার অংশবিশেষ।]
🔴[নোট ২- অনেকদিন গল্প দেইনি। রিচ যতটুকু ছিল, তাও বোধহয় নেই এখন। পাঠকবৃন্দের কাছে অনুরোধ, এই পর্বটি পড়লে একটা কমেন্ট করে যাবেন। যদি কিছু লেখার ভাষা খুঁজে না পান, তাহলে নিদেনপক্ষে একটা স্টিকার কমেন্ট করবেন অনুগ্রহ করে।]
🔴[নোট ৩- বইটই অ্যাপে আসছে আমার প্রথম ই-বুক “বিষাদবেলা ফুরায়ে যায়৷ বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল সবাইকে।]