কাননে ফুটিল ফুল — ১১

0
10

কাননে ফুটিল ফুল — ১১ (১৮৭০+ শব্দ)

বাসায় ফিরে কতক্ষন ঝিম মেরে বিছানায় বসে থাকল নৈশী। আন্দালিবের সাথে দেখা করতে যাওয়াটা ভুলই হয়ে গেল বোধহয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল ও, যত দ্রুত সম্ভব আন্দালিবের চ্যাপ্টারটা ক্লোজ করতে হবে।

১৩.
“শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন

শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
অহংকারের মুছে যাবে সকল দীনতা।

শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
স্পর্শ সুখে লেখা হবে অজস্র কবিতা।

শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ।

শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়।

শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
তারপর হবো ইতিহাস।”

সারজিম পিছনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো নৈশীর আবৃত্তি শুনছিল।

“কী চমৎকার! যতবার তোমার আবৃত্তি শুনি ততবার তৃষ্ণা আরও বেড়ে যায়।”

হঠাৎ আন্দালিবের কন্ঠস্বর শুনে নৈশী কিছুটা চমকে উঠলেও আরও বড় চমকটা পেল ও পেছনে ফিরে, আন্দালিব আর ওর মাঝামাঝি স্থানে সারজিমকে দেখে। সারজিম নৈশীকে ছাদে একা একা আবৃত্তি করতে দেখে পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ওর পিছনে ঠিক কখন যে আন্দালিব এসে দাঁড়িয়েছে সেটা ও দেখেনি।

আন্দালিবকে দেখে ছাদের দরজা থেকেই আবার নিচের দিকে রওয়ানা হলো সারজিম। আন্দালিব বলল, “সেকী! চলে যাচ্ছিস কেন?”

“কাজ আছে। তোরা কথা বল। আমি আসছি।”

আন্দালিবও মনে মনে এটাই চাইছিল। নৈশীর সাথে একা কিছুক্ষন সময় কাটাতে। নৈশী ওর সেই আশার গুড়ে বালি ঢালল। নিজেও সিঁড়ির দিকে এগুতে এগুতে বলল,
“আমিও এখন বাসায় যাব। আন্দালিব ভাই, আপনিও চাইলে বাসায় আসতে পারেন।” অগত্যা আন্দালিবকেও ওর সাথেই যেতে হলো।

যেতে যেতে প্রশ্ন করল নৈশী,
“গতকাল তো ফোনে বলেছিলেন এক সপ্তাহের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। আজ হঠাৎ এখানে?”

“সারজিম কল করে দাওয়াত করল কাল। ওর প্রোমোশন উপলক্ষ্যে আজ নাকি আয়োজন হচ্ছে রাতে। তাই দেশের বাইরে যাওয়াটা দুদিন পিছিয়ে দিলাম।”

সত্যিই রাতে ছোট্ট একটা ঘরোয়া আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসার লোক আর বাইরের বলতে, জ্যোতি, ওর মা-বাবা আর রায়হান, রুবিনাকে ইনভাইট করা হয়েছে। কিন্তু আন্দালিবকেও যে আসতে বলা হয়েছে সেটা নৈশী জানত না।

রায়হান আর রুবিনা এসে হাজির হলো সন্ধ্যার পরপরই। সেদিন রাতের পর আজ আবার রুবিনাকে দেখল নৈশী। রুবিনা হাসছে কথায় কথায়। আন্দালিবের সাথেও টুকটাক কথা বলছে যার বেশিরভাগ কথাই ঈঙ্গিতপূর্ণ। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এদের দুজনের মধ্যের গোপন সম্পর্কটার কথা না জানলে সবারই এই কথাগুলো স্বাভাবিক বলে মনে হবে অন্য আর পাঁচ দশটা ঠাট্টার মতো। রুবিনার কী একটা কথায় আন্দালিব বলে উঠল, “এসব ব্যাপার না, আমি তো আপনার ছোট ভাইয়ের মতোই, তাই না ভাবি?”

নৈশীর গা ঘিনঘিন করে উঠল এদের নোংরা কার্যকলাপ দেখে। গোপনে অবৈধ সম্পর্ক রেখে উপরে ভাই বলে দাবি করছে আন্দালিব! এতটা কুৎসিত কোনো মানুষ হতে পারে?

নৈশী আর ওখানে বসতে পারল না। উঠে নিজের রুমে চলে গেল। এবার একটা হেস্তনেস্ত না করলেই নয়। নিজেকে একটু ধাতস্থ করে নৈশী আবার গিয়ে বসল। রায়হান ওকে দেখে বলল,
“কী ব্যাপার নৈশী? তোমার মুখটা এত শুকনো লাগছে কেন? কিছু নিয়ে চিন্তিত?”

রায়হানের মুখটা হাসিহাসি। সেই মুখের দিকে তাকিয়ে নৈশীর মায়া হলো খুব। সবটা জানার পর এই মুখে কি হাসি থাকবে? নৈশী মাথা নেড়ে বলল,
“না তো। আসলে কাজ করেছি তাই কিছুটা ক্লান্ত।”

“তাই বলো। শুনেছি তুমি খুব ভালো আবৃত্তি করো। আমাদের একটা কবিতা শোনাবে?”

নৈশী স্মিত হেসে বলল, “অবশ্যই, কেন নয়?”

সবই মনযোগী শ্রোতা হয়ে বসল। নৈশী শুরু করল বলা,
“অতোটুকু চায় নি বালিকা!
অতো শোভা, অতো স্বাধীনতা!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!

অতোটুকু চায় নি বালিকা!
অতো হৈ রৈ লোক, অতো ভিড়, অতো সমাগম!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!”

সবাই একত্রে হাততালি দিয়ে উঠল। রায়হান বলল,
“আমার জীবনে শোনা বেস্ট আবৃত্তি ছিল এটা।”

নৈশী সলজ্জিত হেসে বলল, “এটা একটু বেশি হয়ে গেল না?”

“একদমই না। এই সারজিম শোন, এরপর থেকে প্রত্যেক সপ্তাহে তোদের বাসায় দাওয়াত করবি আমাকে। আমি নৈশীর আবৃত্তি শুনতে আসব।”

সারজিম শব্দহীন হাসল, কিন্তু ওর তীক্ষ্ণ, অনুসন্ধানী দৃষ্টি বারবার নৈশীর দিকে চলে যাচ্ছিল। কয়েকদিনে কিছু একটা চেঞ্জ এসেছে নৈশীর মধ্যে, কিন্তু সেটা কী!

আড্ডার আসর ভাঙল একসময়। যে যার গন্তব্যে রওয়ানা হলো। সবাইকে বিদায় দিয়ে সাব্বির দরজা লক করে শুতে চলে গেল। নৈশীও উঠতে যাচ্ছিল কেবল। সারা আড্ডায় চুপ করে থাকা সারজিম কথা বলে উঠল এবার,
“নৈশী, তুমি কি খুব বেশি ক্লান্ত? নইলে কিছুক্ষন কথা বলতাম তোমার সাথে।”
“এখন একদমই ক্লান্ত লাগছে না। আপনি বলুন।”

“তুমি কি কোনো বিষয় নিয়ে আপসেট। কেমন যেন অন্যরকম মনে হচ্ছে তোমাকে। কিছু মনে কোরো না। ছোটখালাম্মা আর খালুর অবর্তমানে আপাতত মা এবং আমরাই তোমার অভিভাবক এবং আপনজন। সেই অধিকার থেকেই জিজ্ঞাসা করছি।”

সারজিমের জিজ্ঞাসা শুনে অপলক ওর দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থাকল নৈশী। সারজিম কিছুটা অপ্রস্তুত স্বরে বলল, “এনি প্রব্লেম?”

“আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?” নৈশীর অকপট আবদার। ছোটখাটো একটা বজ্রপাত হলো বোধহয়। সারজিম বলল,
“আমি তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না।”

নৈশীর সহজ স্বাভাবিক উত্তর, “যেই কথাটা সবার শেষে বলা উচিৎ ছিল সেটা আমি সবার আগে বলে ফেলেছি। ব্যাপার না, পুরোটা আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি।”

নৈশীর কথা শুনতে শুনতে ক্রমশ চোয়াল শক্ত হয়ে আসছিল সারজিমের। নৈশীর থেকে পুরো ব্যাপারটা শোনার পরেও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না ও। নিজের কাছের মানুষগুলো সম্পর্কে এরকম কথা কেই বা বিশ্বাস করবে। নৈশী অবশ্য প্রমাণ হাতেই রেখেছে। নিজের মতো করে পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে মোবাইলের ভিডিও ফোল্ডার বের করে সারজিমের দিকে এগিয়ে দিল ও।

“এই ভিডিওটা আপনাকে দেখাতে আমি প্রচন্ড সংকোচ এবং লজ্জিত বোধ করছি। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমি জানি, শুধু আমার মুখের কথায় কেউ এই সত্যিটা বিশ্বাস করবে না। তাই বাধ্য হয়ে এই প্রমাণটা রাখতে হয়েছিল আমাকে। বিশ্বাস করুন।”

সারজিম হাত বাড়িয়ে যখন নৈশীর মোবাইলটা নিল তখনও ওর চোখে অবিশ্বাস। ভিডিও প্লে করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পাওয়ার বাটন চেপে মোবাইলের আলো নিভিয়ে দিল সারজিম।

দুজনেই বোবা হয়ে বসে থাকল অনেকটা সময়। এতগুলো বছরের নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির এরকম কুৎসিত চরিত্রের কথা জানতেই পারেনি ও কখনও। আর রুবিনা ভাবি, সে তো বয়সেও ওদের চেয়ে অনেকটা বড়। সারজিম নীরব থাকায় নৈশীকেই কথা বলতে হলো আবার,
“সারজিম ভাই, আপনি কি ভিডিওটা করায় আমাকে খারাপ ভাবছেন? বিশ্বাস করুন, শুধু নোংরা ওই মানুষদুটোর মুখোশ খুলতেই আমাকে এটা করতে হয়েছে।”

সারজিম বলল, “আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি নৈশী।”

“যেহেতু আন্দালিব ভাইয়ের প্রতি আমার কখনও কোনো অনুভূতিই জন্মায়নি তাই সে জাহান্নামে গেলেও আমার তাতে কিছু যায় আসে না৷ আমি শুধু রায়হান ভাইয়ের কথা ভাবছি। এতদিনে যতটা জেনেছি এবং দেখেছি, রুবিনা ভাবিকে তিনি পাগলের মতো ভালোবাসেন। যেই স্ত্রীর জন্য তিনি এতটা স্যাক্রিফাইস করেছেন, সে কিনা দিনের পর দিন ধোঁকা দিয়ে গিয়েছে তাকে। আমি চাই রুবিনা ভাবি তার এই বিশ্বাসঘাতকতার উচিৎ শাস্তি পাক।”

“সে তো পাবেই। তবে আন্দালিবকেও আমি ছাড়ব না। একটা চরিত্রহীন লম্পট। এত নোংরা স্বভাবের হয়ে তোমাকে ও প্রস্তাব দেওয়ার সাহস পায় কী করে? তোমার পুরো লাইফটা স্পয়েল হয়ে যেত ওর সাথে বিয়ে হলে।”

সারজিম আপনমনে বলে চলেছে। ওর প্রতি সারজিমের এই পজেসিভনেস খুব ভালো লাগল নৈশীর। ও বলল, “ওকে, দুজনকেই নাহয় শাস্তি দেওয়া যাবে। তার আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন। প্রশ্নটা অনেকক্ষন আগে করলেও উত্তর এখনও পাইনি।”

সারজিম হেসে ফেলল,
“এরমধ্যে হঠাৎ বিয়ের প্রসঙ্গ এলো কেন?”

“আন্দালিব ভাইকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার এরচেয়ে ভালো কোনো উপায় মাথায় আসছে না।”

“শুধু আন্দালিবকে শিক্ষা দিতে আমাকে বিয়ে করতে চাইছ?”
“এটাও একটা কারণ, তবে গৌন৷ মুখ্য আরও কারণ রয়েছে।”

“কী সেগুলো?”
“সেগুলো সব আমি বলব, তবে এখন নয়। যদি সত্যিই আপনার সাথে আমার বিয়েটা হয়,তাহলে বলব।”

“এইযে বারবার বিয়ের কথা বলছ, আনইজি লাগছে না? আমি যদি রিজেক্ট করে দেই?”

“মনে হয় সেটা আপনি করবেন না। পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে না করতে চাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।”

“তোমার হঠাৎ এমন কেন মনে হলো যে আমি তোমাকে পছন্দ করি। তাছাড়া আন্দালিব তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, তুমিও নিমরাজি ছিলে। তারপর ওর সম্পর্কে এত নোংরা একটা সত্যি সামনে এলো তোমার। এরপরে এত জলদি আরেকজন পুরুষকে বিশ্বাস করছ কীভাবে? যদিও আমিও ওর মতো খারাপ হই?”

“আপনি আমাকে পছন্দ করেন, এটা আমার ধারনা নয়, আমি আপনার নিজের মুখ থেকেই স্বীকারোক্তি পেয়েছি। আগেই বলে রাখি, আড়ি পাতার অভ্যাস আমার কোনোকালেই ছিল না। কিন্তু কিছুদিন আগে একদিন রাতে হঠাৎ খালামনির প্রেসার ফল করল। তার ঠিক পরেরদিন দুপুরে ঘুমাচ্ছিল বাসার সবাই। হঠাৎ করে কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুলতে বের হয়েছিলাম রুম থেকে। বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, আপনি আন্দালিব ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন। সেদিন আন্দালিব ভাইয়ের সাথে আপনার কথোপকথন সবই শুনেছিলাম আমি। নিজে আমাকে পছন্দ করা সত্বেও পথ ছেড়ে দিয়েছিলেন। এবং সেটা শুধুই আমার জন্য। আমি যাতে সংকোচ কিংবা হীনমন্যতায় না ভুগি। যেন আন্দালিব ভাইকে পছন্দ হয়ে গেলেও আপনার কথা ভেবে আবার বিব্রত না হতে হয়। যেন আপনার পরিবারের সাথে দুরত্ব বাড়িয়ে আমি একা না হয়ে যাই। সেদিন আরও একটা ব্যাপার আমি দেখেছিলাম, শান্ত স্বরে আন্দালিব ভাইকে একপ্রকার থ্রেড করছিলেন আপনি। আমার সাথে যেন কখনও কোনো বিশ্বাসঘাতকতা না করে কিংবা আমাকে যেন কখনও হার্ট না করে। একটা মানুষ আমার কথা এত ভাবে, আড়ালে থেকেও আমার এতটা কেয়ার করে, আমার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়, এরকম একটা মানুষকে হাতছাড়া করার মতো বোকামি আমি কীভাবে করি বলুন তো?

আর রইল আন্দালিব ভাইয়ের কথা। একজন চরিত্রহীন পুরুষ দিয়ে তো আমি পৃথিবীর সব পুরুষকে বিচার করতে পারি না, তাই না? আন্দালিব ভাইয়ের মতো চরিত্রহীন যেমন আমি দেখেছি তেমনি আমার বাবার মতো মহিৎ চরিত্রের একজন পুরুষকেও আমি দেখেছি ছোটবেলা থেকে। কী গভীর ভালোবাসা আর যত্নে সে আগলে রাখত মাকে। তাই শুধু একজনকে দিয়ে আমি সবাইকে বিচার করতে পারি না।

বাই দ্যা ওয়ে, আন্দালিব ভাইকে বিয়ের ব্যাপারে আমি যে নিমরাজি ছিলাম এটা আপনি কীভাবে জানলেন?”

এবার বলতে শুরু করল সারজিম,
“একদিন সন্ধ্যায় মায়ের রুমে যাচ্ছিলাম তার সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু ঢুকতে যাওয়ার আগেই রুমের মধ্যে তোমার গলার আওয়াজ পেলাম। আগেই বলে রাখি, আড়ি পাতার অভ্যাস আমার কোনোকালেই ছিল না।”

এতটুকু শুনেই হেসে ফেলল নৈশী। ওর কথাই আবার ওকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তবে।

সারজিম বলে যেতে থাকল, “সেদিন মায়ের সাথে তোমার আলাপ শুনেছিলাম কিছুটা। আন্দালিবের প্রস্তাবটা নিয়ে তুমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলে। সম্ভবত ওর প্রতি আগে থেকেই একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছিল তোমার মনে। ওখান থেকেই জানলাম আরকি ব্যাপারটা।”

সারজিমের কথাটুকু শুনে নৈশী উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“অনেক কথা হলো আজ। অনেক অজানা জানলাম। শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হলো না। এই প্রশ্নটা আবার করতে আমার আত্মসম্মানে লাগছে। যাই হোক, আন্দালিবের চ্যাপ্টার যেহেতু ক্লোজ, এদিকে বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তাই দেরি করে আর লাভ নাই। কালই পত্রিকায় পাত্র চেয়ে একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দিই, কী বলেন?”

হাতের স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল নৈশী। সারজিম ডাকল ওকে,
“নৈশী।”

নৈশী চোখ তুলে তাকাল। হাসছে সারজিম। নৈশীর হঠাৎ কী জানি একটা হলো। কয়েকদিন আগে আফরোজা বেগমের সাথে সারজিমের ভিডিও কলের কথোপকথন মনে পড়ে গেল। সারজিম হাসলে আফরোজা অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেন নজর লাগার ভয়ে। নৈশীর মনে হলো তিনি আসলে ভুল কিছু বলেননি। এই শব্দহীন হাসিই শত রমনীর হৃদয়ে ঝড় তুলতে যথেষ্ট। সারজিমের গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা নয় আন্দালিবের মতো। কেমন একটা তামাটে বর্নের ওর ত্বক। তাতেও কী সুদর্শন লাগছে মানুষটাকে। তুখোড় ব্যাক্তিত্বের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে চেহারায়। আপাতদৃষ্টিতে তাই আন্দালিবকে চোখ ধাঁধানো সুন্দর মনে হলেও সারজিমের হাসির কাছে আন্দালিবের ডাহা ফেল করে যাবে। সামনে হীরা ছিল, অথচ এতদিন কিনা কাঁচের টুকরোকে নিয়ে ভেবেছে নৈশী।

সারজিম মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল, “এখন রাত বারোটা একুশ। মঙ্গলবার শেষ হয়ে বুধবারে পড়েছে কিছুক্ষন আগে। মাঝে শুধু আর একটা দিন সময় দাও আমাকে। যতদূর সম্ভব গুছিয়ে নেই সব। আগামী শুক্রবার এমন সময়ে আমাদের সম্পর্কটা নতুন একটা নাম পাবে ইনশাআল্লাহ। সেদিন নাহয় সবাইকে নিয়ে আমরা সেলিব্রেট করব আবার। বিশেষ করে আন্দালিবকে তো দাওয়াত না করলেই নয়।”

নৈশী অনুভব করল, হঠাৎ করে ওর লজ্জা লজ্জা লাগছে। আশ্চর্য! এইমাত্র সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সময়ও তো এমন লাগেনি। অথচ সারজিম যখন সহজ স্বীকারোক্তি দিল, তখন এত লজ্জা কোথা থেকে আসছে?

নৈশী আর তাকিয়ে থাকতে পারল না সারজিমের মুখের দিকে। মাথা নিচু করে হ্যাঁ-বোধক মাথা নেড়ে নিজের রুমের দিকে রওয়ানা হলো।

১৪.
খুব ছোট্ট ঘরোয়া আয়োজনে বিয়েটা হবে। তবুও পুরো বাড়ি জুড়ে উৎসবের আমেজ। উপস্থিত সব সদস্যরাই ব্যস্ত কমবেশি।

লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা সারজিমের কখনোই পছন্দ ছিল না খুব একটা। তাই স্বল্প পরিসরে নিজেদের একেবারে নিকটাত্মীয়দের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে। যেই টাকাটা দিয়ে অযথা জাঁকজমক করা হবে, সেই টাকাটা বরং কোনো এতিমখানায় দিয়ে দিলে কাজে লাগবে, এমনটাই সারজিমের ইচ্ছে।

আফরোজা বেগম প্রথমে অমত করেছিলেন ছেলের কথায়। যতই হোক, বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে৷ তাছাড়া নৈশীরও তো একটা শখ আহ্লাদ আছে।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

নোট- আজকের পর্বের প্রথম কবিতাটি নির্মলেন্দু গুনের কবিতা। আর দ্বিতীয় কবিতাটি আবুল হাসান’র। কবিতার নাম “নিঃসঙ্গতা”।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here