কাননে ফুটিল ফুল — ১৩

0
16

কাননে ফুটিল ফুল — ১৩ (১৯৪০+ শব্দ)

নৈশীর কথা শুনতে শুনতে কোথাও একটা হারিয়ে যাচ্ছিল সারজিম। শেষের প্রশ্নটা শুনে আবার হুঁশ ফিরল ওর। কথার পিঠে কথা জমে ওর মধ্যেও তো পাহাড় তৈরি হয়েছে।

সারজিম বলল, “তোমার কথা শুনতে শুনতে অর্ধেক রাত পার হয়ে গেল। এরপর আমার কথা বলতে গেলে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যাবে। আজ কথা বলা ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমাদের।”

সারজিমের কথা শুনে নৈশী চোখ বড় করে তাকাল। সারজিম হেসে বলল, “আমার মনে হচ্ছে লম্বা সময় ধরে শাড়ি পরে তুমি খুবই আনকম্ফোর্টেবল ফিল করছ। তুমি বরং এটা চেঞ্জ করে সুতি আরামদায়ক কোনো কাপর পরে নাও। ওজুও করে এসো। আপাতত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে একসাথে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করা।”

এবার নৈশীও হাসল সারজিমের সাথে তাল মিলিয়ে। নামাজ আদায় করে নৈশী বলল,
“আপনার কাছে একটা আবদার ছিল।”
“বলো।”
“দেশে ফেরার পর বাবা মায়ের কবর দেখতে এখনও যাইনি আমি। বাবা মৃত্যুর আগে খুব দুশ্চিন্তায় ছিল আমার বিয়েটা দিয়ে যেতে পারেনি বলে। সে বলেছিল, সম্ভব হলে দেশে ফিরে দ্রুতই যেন বিয়ে করি, তারপর যেন তাদের কবর দেখতে যাই৷ কাল একবার আমাকে নিয়ে যাবেন সেখানে?”

“তোমাকে কখনও বলার সুযোগ হয়নি নৈশী, আমি মাঝেমধ্যেই যেতাম খালাম্মা আর খালুর কবর জিয়ারত করতে। ইনশাআল্লাহ কাল তোমাকে নিয়ে আবার যাব।”
সারজিমের কথা শুনে এত ভালো লাগল নৈশীর।

সারজিম এবার অন্য কথায় গেল,
“আজ বিকেলে যখন বের হয়েছিলাম তখন তোমার জন্য ছোট্ট একটা গিফট নিয়েছিলাম।” ছোট্ট একটা গোল্ড চেইন নৈশীর সামনে ধরল সারজিম। নৈশী বলল,
“খুব সুন্দর হয়েছে।”

“আরও সুন্দর লাগবে যদি এটা তোমার গলায় শোভা পায়।”
নৈশী সারজিমের উল্টোদিকে মুখ করে দাঁড়াল। পিঠ থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে পিঠের উপরে বিছিয়ে থাকা চুলগুলো কাধের পাশে দিয়ে সামনে নিয়ে এলো৷ সব কথা মুখে বলতে হয় না। কিছু কথা আচরণেই বুঝে নেওয়া যায়৷ সারজিমও বুঝে গেল স্ত্রীর মনের ইচ্ছে। নিজের হাতে চেইনটা নৈশীকে পরিয়ে পিঠের উপরে হাত রেখে হুক আটকে দিল ও। তারপর খুব আলতো করেই শুধু একবার ঠোঁট ছোঁয়ালো উন্মুক্ত পিঠে। নৈশী এলিয়ে পড়ল সারজিমের শরীরের উপর৷ সারজিম দুহাত দিয়ে আগলে নিল ওকে। ঠিক ঐ মুহূর্তে একটা প্রশ্নই মাথায় এলো নৈশীর, “জীবন এতো সুন্দর কেন?”

১৫.
সারাদিনের অফিসে কাজের চাপের পর বাসায় ফেরার জন্য মন আকুপাকু করে ওঠে রায়হানের। তবুও সারজিমের জরুরি তলব পেয়ে এই শেষ বিকেলে পার্কের দিকে ছুটল ও। রায়হান এগিয়ে গিয়ে দেখল, সারজিম অপেক্ষা করছে ওর জন্য। রায়হান স্মিত হেসে বলল, “কী ব্যাপার বলো তো? গত পরশুই তো তোমার বিয়ের দাওয়াত খেয়ে এলাম। এরমধ্যেই এত জরুরি তলব কেন? তারপর আবার আমাদের কারও বাসায় দেখা না করে এই নির্জন পার্কে নিয়ে এলে। কী বলতে চাও বলে ফেল।”

সারজিম মনে মনে গুছিয়ে নিল কথাগুলো, “রায়হান ভাই, এখন আমি যে কথাগুলো বলব সেগুলো শোনার পরে আপনার হয়তো রাগ হবে। আমাকে মারতেও ইচ্ছে হতে পারে। কিন্তু তবুও একটা রিকোয়েস্ট। আমার কথাগুলো শেষপর্যন্ত শুনবেন প্লিজ।”

রায়হান বলল, “এত ফর্মালিটির কিছু নেই। যা বলার নিঃসঙ্কোচে বলো।

সারজিম বলতে থাকল, “ব্যাপারটা প্রথমে নজরে এসেছিল নৈশীর…।”

পুরোটা সময় চুপচাপ শুনে গেল রায়হান। শুনতে শুনতে ওর চেহারার রঙ বদলে গেল। শেষ সময়টা রাগে জেদে সারজিমকে ওখানেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে হলো। তবুও চুপ থাকল রায়হান। সারজিম বলা শেষ করে থামল। রায়হান বলল,
“সারজিম তুমি বলেছ কোনো কথা বলে যেন তোমার পুরো কথা শুনে যাই। আমি শুনেছি। এবার তুমি আসতে পারো। আর হ্যাঁ, একটা কথা পরিষ্কার শুনে রাখো, আজকের পর থেকে তোমার কিংবা তোমার পরিবারের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”

“রায়হান ভাই, আজকের এই কথাগুলো বলতে আমার কতটা যে সাহস সঞ্চয় করতে হয়েছে সেটা আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। আপনি বড় ভাইয়ের মতো আজীবন আমাদের পাশে ছিলেন। তাই চেয়েও চুপ থাকতে পারলাম না। আমি জানি এভাবে আমার কথা আপনি বিশ্বাস করবেন না। নৈশীও বুঝেছিল এই ব্যপারটা। তাই ও একটা প্রুফ রেখেছে। আমার কাছে নৈশীর করা একটা ছোট্ট ভিডিও আছে। আমার প্রচন্ড সংকোচ হচ্ছে সেটা আপনাকে দেখাতে। তবুও আপনার ভালোর জন্য এটা আমাকে করতে হবে।”

“কিসের ভিডিও? কই দেখাও। আজ একটা বোঝাপড়া করেই যাই তোমার সাথে। একদিকে ভাইয়ের মতো বল, আবার আমাকে এভাবে অপমান করছ। দেখি আজ কি আছে তোমার এই ভিডিওতে।”

ভিডিও প্লে করে রায়হানের পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে লাগল। তবুও ও দেখা বন্ধ করল না। এক পলকের জন্যেও স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়ে পুরোটা দেখে গেল ও। শেষদিকে চোখের পানি টপটপ করে পড়ছিল মোবাইল স্ক্রিনের উপর। তবুও সবটা দেখল রায়হান। তারপর মোবাইলটা সারজিমকে ফেরত দিয়ে উঠে দাঁড়াল রায়হান। এত লজ্জা! আশ্চর্য! নোংরা কাজগুলো করেছে রুবিনা অথচ রায়হানের কেন এতো লজ্জা লাগছে সারজিমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। রায়হান বলল
“সারজিম, বড় ভাই হিসেবে তোমার কাছে একটা অনুরোধ, এই ভিডিওটা যেন অন্য কারও হাতে…।”

“নৈশী আমাকে যখন কথাগুলো বলেছিল আমি বিশ্বাস করিনি। শুধু সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এটা আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্লে করেছিলাম। যদি জানতাম এটা সত্যি তাহলে ওই কাজটা আমি জীবনেও করতাম না বিশ্বাস করেন। আমি নিজে এটা আপনার সামনেই ডিলিট করে দিচ্ছি। কিন্তু আমার মনেহয় এটা আপনার কাছে থাকা উচিৎ। আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন রায়হান ভাই, আমি কী বলতে চাইছি।”

“বুঝতে পারছি। থ্যাঙ্কিউ সারজিম। আমি এখন বাসায় যাব।”
“আপনাকে খুব ক্লান্ত লাগছে। আমি আপনার সাথে গিয়ে পৌঁছে দেই বাসায়।”

“অযথা আমাকে নিয়ে ভয় পেওনা সারজিম। আমি ভুল কিছু করব না, নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।”

বাসায় ফিরে বেল না বাজিয়ে দরজার সামনে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকল রায়হান। কাল পর্যন্ত এই ঘরটা ওর কাছে ছিল এক টুকরো স্বর্গ। অথচ আজ সেটাকে জাহান্নাম মনে হচ্ছে। প্রত্যেকদিন অফিস শেষ হলেই বাসায় ফেরার জন্য মনটা আনচান করে উঠত। অথচ আজ ঘরের ভেতরে ঢুকতেই ইচ্ছে হলো না ওর।

রায়হান বেল দিল। রুবিনা দরজা খুলল হাসিমুখে।
“তোমাকে আজ এত ক্লান্ত দেখাছে কেন রায়হান? কাজের চাপ খুব বেশি ছিল?”

“হ্যাঁ, আমি এখন একটু ঘুমাব। তোমার বাবা মাকে খবর দিয়েছি। তার আসলে আমাকে ডেকে দিও, দরকারি কথা আছে।”

রুবিনার বাবা মা পৌঁছাল রাতে। রুবিনা ডাকতে গেল রায়হানকে,
“বাবা-মা এসে গেছেন। তুমি নাকি খুব জরুরি দরকার আছে বলে খবর দিয়েছ তাদের? ব্যাপারটা কী? বাসায় ফিরে তো কিছু খেলেও না? হয়েছে কী বলোতো?” রায়হান কথার উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল।

তারা এসেছে পাঁচজন। রুবিনার বাবা, মা, বড় ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী আর ছোট বোন। রায়হান এত সিরিয়াস হয়ে ওদের আসতে বলেছিল যে চিন্তিত হয়ে সবাই মিলেই চলে এসেছে।

রায়হান ওদের মুখোমুখি বসে বলল, “আমাকে মাফ করবেন। আজকে যে কথাগুলো আমি বলব এতগুলো বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সামনে সেগুলো বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে। কিন্তু আমি নিরুপায়। প্রথমেই আপনাদের কিছু দেখাতে চাই আমি। তারপরে নাহয় পুরো কথা শুনবেন। প্রথমেই মোবাইল গেল রুবিনার মায়ের হাতে। কিছুক্ষন পরেই মোবাইল রেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। এগিয়ে গিয়ে সপাটে চড় বসালেন রুবিনার গালে। ততক্ষনে মোবাইল হাতবদল হয়ে বড় ভাইয়ের স্ত্রীর হাতে চলে গেছে।

রায়হান ভিডিওর পুরো ব্যাপারটা ব্যখ্যা করে বলল, “আমার বাবা-মা আসছেন। সারজিমও আসছে খালাম্মাকে নিয়ে। আজ আপনাদের সবার উপস্থিতিতে আমি ওকে তালাক দেব। এমনিতে হয়তো আপনারা ভাবতেন, ও বন্ধা বলে আমি ওকে ছেড়ে দিতে চাইছি। তাই পুরো বিষয়টা আগে আপনাদের সামনে ক্লিয়ার করলাম।”

রুবিনা চিৎকার করে উঠল,
“তুমি আমাকে মারছ কেন মা? রায়হান এসব কী বলছে? আমার অপরাধটা কি? সেটাতো বলো কেউ।”

ফোন এখন রুবিনার ছোট বোনের হাতে। সেই বড় বোনের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিল। রুবিনা অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে থাকল ফোনের দিকে। এটা কীভাবে সম্ভব?

মনে মনে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলেও হাল ছাড়ল না ও। রায়হানকে বলল,
“রায়হান। আমরা একটু আলাদা করে কথা বলি প্লিজ। আমি বিষয়টা তোমাকে বুঝিয়ে বলছি।”

রায়হান নিশব্দে উঠে পাশের রুমে চলে গেল৷ রুবিনাও গেল ওর পিছু পিছু। ততক্ষনে সারজিম, আফরোজা বেগম, নৈশী আর রায়হানের বাবা-মাও এসে পৌঁছেছে ওর ফ্লাটে।

শুধু নামেই আলাদা কথা হলো। রুমের মধ্যের প্রত্যেকটা শব্দ বের হয়ে গেল বাইরে৷ রায়হান বোধহয় নিজের মধ্যে ছিল না তখন।

রুবিনা প্রথমেই নিজেকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করল, “এটা কোনো এডিটেড ভিডিও রায়হান। কেউ ইচ্ছে করে আমাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে এটা করেছে। হতে পারে তোমার বাবা মা। তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলে না বলে তারাই এটা…।”

কথা শেষ হওয়ার আগেই সশব্দে চড় পড়ল রুবিনার গালে। বারো বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথমবার রায়হান প্রহার করল স্ত্রীকে।
“আমার বাবা মায়ের নামে কোনো উল্টোপাল্টা কথা বললে খুন করে ফেলব তোমাকে। এটা মিথ্যে ভিডিও, সেটাই বলতে চাও তো তুমি? তোমার কি আমাকে বোকা বলে মনে হয়? নাকি অন্ধ ভাবো আমাকে? একটা সত্যি আর বানানো ভিডিওর মধ্যে পার্থক্য বুঝব না আমি? এডিট করে মুখটা হয়তো পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু শরীরের চিহ্নগুলো? গলার নিচে বড় লাল রঙের তিল, সেটাও এডিট করে? আর তলপেটের পাশে যে কাটা দাগ? সব ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেটাও মিথ্যে। আচ্ছা, তারপরেও আমি ধরে নিলাম ওটা এডিটেড ভিডিও। আমার বাবা আর মা এটা করেছে। কিন্তু তোমার শরীর গোপন স্থানগুলোর কোথায় কী আছে সেটা তারা কীভাবে জানবেন? আরে, ভিডিওর মধ্যে তোমার হাতের অনামিকায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড থেকে নেওয়া হীরার আঙটিটা ঝকমক করছে যেটা আমি লাস্ট অ্যানিভার্সারিতে তোমাকে কিনে দিয়েছিলাম। আর বাকী সব কথা বাদ দাও, বিশেষ মুহুর্তগুলোতে তোমার মুভমেন্ট ঠিক কেমন কেমন হয় সেটা আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে? গত বারো বছরে আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছে সবটা। সেই একইরকমের কাজ ভিডিওতেও হচ্ছিল। সেগুলোও সব মিথ্যে?”

রুবিনা বুঝল, এক্সকিউজ দেওয়ার সব রাস্তা বন্ধ। এবার সরাসরি রায়হানের পায়ে পড়ে গেল ও।
“আমাকে মাফ করে দাও রায়হান। কীভাবে যে সব হয়ে গেল। আন্দালিব মাঝে মাঝে আসত তোমার খোঁজে। ও নিজেই আমাকে প্ররোচিত করেছিল এই কাজটা করতে। আমার কোনো দোষ…।”

রায়হান জোর করে পা ছাড়িয়ে নিল নিজের৷ রুবিনা ছিটকে গিয়ে পড়ল কিছুটা দূরে
“আমাকে তুমি আর স্পর্শ করবে না। তোমার ওই দুর্গন্ধযুক্ত হাত আমাকে স্পর্শ করলে সেখানে পচন ধরবে আমার। আর তোমার দোষ গুনের ফিরিস্তি আমি শুনতে চাই না। এক্ষুনি বাইরে চলো। ফয়সালা যা হওয়ার এখনি হবে।”

বাইরের সবাই রুমের মধ্যের কথোপকথন সবটাই শুনছিল।

রুবিনা মেঝেতে বসেই শব্দ করে কাঁদতে লাগল। রায়হান মাথার চুল খামচে ধরে বিছানার পাশে বসে পড়ল। নষ্টা একটা মেয়ে যে দিনের পর দিন শুধু ঠকিয়ে গিয়েছে। তার কান্নায় এখনও হৃদয় কেন পুড়ছে? রায়হান কান্নাভেজা স্বরে বলে উঠল,
“কেন এমন করলে রুবিনা? তোমার শারিরীক, মানসিক কোনোরকমের চাহিদাই আমি কখনও অপূর্ণ রাখিনি।”

রুবিনা আর্তনাদ করে বলল, “প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিও না রায়হান। তোমার পায়ের কাছে পরে থাকব দরকারে।”

রায়হান নিজেকে বোঝাল। এখন নরম হলে একদম চলবে না, “অসম্ভব। আমার পায়ের কাছে তো দূর। তোমাকে আমি আমার ত্রিসীমানার মধ্যেই দেখতে চাই না। তুমি যেটা করেছ, সেটা ভুল নয়, চরম অন্যায়। তোমার সব প্রতিবন্ধকতা আমি মেনে নিয়েছিলাম। তুমি সন্তান জন্মদানে অক্ষম জেনেও তোমাকে ছাড়ার কথা কল্পনাও করতে পারিনি কখনও। আজ যদি এক্সিডেন্টে তুমি পঙ্গু হয়ে যেতে তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়তাম না, যদি প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে তাহলেও জীবনের শেষ দিন অব্দি আমি তোমার পাশে থাকতাম। এমনকি তুমি মরে গেলেও তোমার স্মৃতি আগলে ধরে কাটিয়ে দিতাম আজীবন।

কিন্তু তুমি যা করেছ তারপর তোমার সাথে একদিন থাকাও সম্ভব না আমার পক্ষে। দিনের পর দিন তুমি অন্য একজন পুরুষকে শরীর বিলিয়েছ৷ আন্দালিবের ব্যাপারটা নাহয় সামনে এলো, এরকম আরও কতজনের সাথে করেছ কে জানে। তোমার দিকে তাকালেই ঘেন্নায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। তোমার শরীর থেকে ডাস্টবিনের নোংরা দুর্গন্ধ পাচ্ছি আমি। তোমাকে দেখতেও নরকের নোংরা কীটের মতো লাগছে৷ উফ! আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি বাইরে সবার সামনে চলো দয়া করে৷ ”

রায়হান বাইরে বের হয়ে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় রুবিনার পরিবারকে বলল, “আপনারা আজই ওকে নিয়ে যাবেন এখান থেকে। আমি সম্পর্ক চুকিয়ে দেব এখন। ভয় পাবেন না, তালাকের সত্যি কারণটা কেউ কখনও জানবে না৷ সবটা জানলে রুবিনার সমাজে টিকে থাকাটা দুস্কর হয়ে যাবে৷ বারোটা বছর একই ছাদের নিচে ছিলাম আমরা, এতটুকু ছাড় আমি ওকে দেব৷ ওর এই নোংরা কাজের বিষয়টা শুধু আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ বাইরের লোকেরা হয়তো ভাববে মা না হতে পারার কারণেই ওকে তালাক দিয়েছি আমি৷ সে ভাবলে ভাবুক।”

রায়হান সবার সামনে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে তিনবার উচ্চারণ করল ‘তালাক’ শব্দটা। ব্যাস স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ওখানেই শেষ। আজ এই মুহুর্ত থেকে ওদের স্বামী-স্ত্রী শব্দের আগে প্রাক্তন কথাটা জুড়ে গেল৷ অবশেষে ভাঙল তাসের ঘর৷

১৬.
মাগরিবের নামাজ আদায় করে জায়নামাজ গুটিয়ে উঠে দাঁড়াতেই ফোনের রিংটোন কানে এলো নৈশীর। যদিও কন্টাক্ট থেকে নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েছিলে ও অনেক আগে। তবুও ইনকামিং কলে স্ক্রিনে ভেসে ওঠা মোবাইল নাম্বারটা চিনতে ভুল হলো না নৈশীর।

নৈশী হেসে ফোনটা রিসিভ করল, “কী খবর আন্দালিব ভাই? আমি নিজেই দুই একদিনের মধ্যে আপনাকে কল করব ভাবছিলাম। এরমধ্যে আপনিই কল দিলেন।”

“আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই নৈশী। তোমার বিয়ের পর গত এক সপ্তাহ ধরে তোমাকে ভোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি খুব করে। কিন্তু কিছুতেই পারছি না। কেন তুমি আমার সাথে এমন করলে এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানতেই হবে।”

“আমিও তো জানাতে চাইছি। ইচ এন্ড এভরি ডিটেইল আপনাকে না বলা পর্যন্ত আমিও শান্তি পাচ্ছি না। তো কোথায় দেখা করব আমরা?”

আন্দালিব হকচকাল নৈশীর কথা শুনে। এত সহজে নৈশী ওর সাথে কথা বলতে রাজি হয়ে যাবে, সেটা বুঝতে পারেনি ও।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here