কাননে ফুটিল ফুল — ১৮

0
13

কাননে ফুটিল ফুল — ১৮ (১৮৩০+ শব্দ)

সারজিম নিখোঁজ হয়েছে চারমাস হতে চলেছে প্রায়৷ এই চারমাসে অনেককিছুই বদলেছে।

নৈশীর মেদহীন উক্সর স্ফীত হতে শুরু করেছে। একজন জানান দিচ্ছে যে তার পৃথিবীর আলো দেখার সময় ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। আফরোজা বেগমের শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়েছে অনেকটা। একে তো বয়সের ভার, তারউপর আবার ছেলে হারানোর শোক। সবমিলিয়ে খুব একটা ভালো নেই সে।

এদিকে জ্যোতির ডেলিভারি ডেট ঘনিয়ে এসেছে। এখন জ্যোতি এই বাড়িতেই থাকে৷ সারাদিন কান্নাকাটি করে শুধু। তার সারজিম ভাই নাকি বলছিল, বাচ্চা হলে তার নাম সে রেখে দেবে।

সবচেয়ে বেশি চেঞ্জ এসেছে সাব্বিরের মধ্যে। বাউন্ডুলে, ছন্নছাড়া সেই ছেলেটা এখন পুরোদস্তুর দায়িত্ববান হয়ে গেছে। সারজিমের কাজগুলো সব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে সে।

বেঁচে থাকার তাগিদে সবাই এগিয়ে নিয়ে চলছে নিজেকে। কিন্তু আগের সেই হাসি আনন্দ এখন আর নেই। গত চারমাসে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে সারজিমকে খোঁজেনি ওরা। পুলিশ স্টেশনে অগনিতবার যাওয়া হয়েছে, সম্ভাব্য যত জায়গা আছে সবখানে গিয়েছে সাব্বির। হাসপাতের মর্গও বাদ রাখেনি, বেওয়ারিশ কোনো লাশের খবর এলেই ছুটে গেছে সাব্বির। তবু সারজিমের হদিস পাওয়া যায়নি।

মোবাইলের রিঙটোনের আওয়াজে ব্যালকনি থেকে রুমে এলো নৈশী। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। ফোন রিসিভ না করেও নৈশী বুঝে গেল, এটা আন্দালিব। সারজিম নিঁখোজ হওয়ার পর আন্দালিব খুব বিরক্ত করা শুরু করেছিল নৈশীকে। তার একটাই কথা, নৈশীকে সে চায়। বাধ্য হয়ে নৈশী মোবাইল এবং সব সোশ্যাল সাইটে ব্লক করে দিয়েছিল আন্দালিবকে। তাতেও আন্দালিব থেমে থাকেনি। একটা নাম্বার ব্লক করে নতুন একটা থেকে আবার ফোন করে আন্দালিব। নৈশী এবাবার ভাবল ফোন ধরবে না। তারপর মনে হলো এটা তো আন্দালিব নাও হতে পারে। হতে পারে, সারজিমের খোঁজ দিতে কেউ কল করেছে।

সবাই আশা ছেড়ে দিলেও নৈশীর মন মানে না। কেন জানি মনে হয়, খুব শীঘ্রই সারজিমের সাথে দেখা হবে ওর। ফোন রিসিভ করে সালাম দিল নৈশী। ওপাশ থেকে আন্দালিবের কন্ঠস্বর শোনা গেল,
“কেমন আছো নৈশী? প্লিজ ফোনটা কাটবে না।তোমার সাথে আমার কথা আছে।”

নৈশী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সিদ্ধান্ত নিল, আন্দালিবের সাথে কথা বলবে। রোজ রোজ এই ঝামেলার চেয়ে একবারে সব মিটমাট করে ফেলা ভালো। ও বলল,
“বলুন, আপনার কী কথা আছে।”

“আমার প্রস্তাবটা একবার বিবেচনা করে দেখলে হয় না? আমি জানি নৈশী, তোমার মনে এখন শুধুই সারজিম। কিন্তু ওর জন্য অপেক্ষা তো কম করলে না তুমি। সারজিমের জন্য আমারও খারাপ লাগে। শত হলেও ও আমার বন্ধু। কিন্তু তাই বলে নিজেদের জীবন তো থামিয়ে দিতে পারি না আমরা। শুধু একজনের স্মৃতি নিয়ে আজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় না নৈশী। আমি অতীতে অনেক ভুল করেছি। কিন্তু ট্রাস্ট মি, এখন আমি বদলে গেছি। তোমার হারিয়ে ফেলার পর আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি আমার জন্য ঠিক কী ছিলে…।”

“আন্দালিব ভাই, আপাতত আপনার এই লম্বা রচনা শোনার মতো সময় আমার নেই। তবে আপনাকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই আমি, আমার দিক থেকে আপনি কোনো আশা রাখবেন না। শুধু সারজিমের স্মৃতি নিয়ে আমি আজীবন কাটিয়ে দিতে পারব৷ আর শুধু স্মৃতি নয়, সারজিম আমাকে খুব সুন্দর একটা উপহার দিয়ে গেছে। এটাকে আপনি সারজিমের আমানতও বলতে পারেন যেটা ও গচ্ছিত রেখে গেছে আমার কাছে। আপনাকে এতদিন বলা হয়নি, আজ বলছি। আমি মা হতে চলেছি। সারজিমের বাচ্চার মা।”

“হোয়াট! তুমি প্রেগন্যান্ট?”

ফোনের এপাশ থেকে আন্দালিবের হতভম্ব চেহারাটা না দেখতে পারলেও ওর কন্ঠস্বর শুনে সবটা অনুমান করতে পারল নৈশী। ও সাবলীল স্বরে বলল,
“হ্যাঁ। আশা করি এটা শোনার পর আর আমার থেকে কোনো এক্সপেক্টেশন রাখবেন না। আর আজকের পর থেকে আপনি আমাকে ফোন না করলেই আমি খুশি হবো। এখন আমি রাখছি।”

কথাগুলো আন্দালিবকে বলতে পেরে টেনশন ফ্রী হলো নৈশী।

মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে এসেছে প্রায়। নৈশী ওজু করে নামাজ আদায় করে নিল। জায়নামাজ ভাজ করে রাখতে রাখতেই টের পেল জ্যোতি ওকে ডাকছে।

জ্যোতির রুমে ঢুকে নৈশী দেখল বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে জ্যোতি। যন্ত্রনায় মুখ বেকে যাচ্ছে ওর। পরনের পেটিকোট, বিছানা ভিজে আছে।

জ্যোতি ওকে দেখে বলল, “জলদি কাউকে খবর দাও আপু। আমাকে এক্ষুনি হাসপাতালে নিতে হবে।”

নৈশী প্রথমেই ছুটল আফরোজা বেগমের রুমে। তিনি কিছুই টের পাননি এখনও। ডাক্তারের নির্দেশে কড়া কিছু সিডেটিভ নিতে হয় তাকে। বেশিরভাগ সময় তাই ঘুমিয়ে কাটে তার৷ নৈশী ডাকল আফরোজা বেগমকে, “খালামনি, জলদি ওঠো। জ্যোতিকে হাসপাতালে নিতে হবে। ওর ওয়াটার ব্রেক করেছে।”

খালাকে ডাকতে ডাকতেই সাব্বিরের ফোনে ডায়াল করল ও। আবার কেটেও দিল। সাব্বিরের অফিস অনেকটা দূরে। আসতে সময় লাগবে অনেক। অযথা টেনশনও করবে। তারচেয়ে জ্যোতির বাবাকে কল করা যাক। জ্যোতির ফোন থেকেই জামিল সাহেবকে কল করল নৈশী। তিনি আর সায়রা বানু এসে হাজির হলেন কিছুক্ষনের মধ্যেই। জ্যোতিকে নিয়ে হাসপাতালে রওয়ানা হয়ে গাড়িতে বসে সাব্বিরকে ফোন করল নৈশী। হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে সেখানেই ওকে আসতে বলল।

সাব্বির উদভ্রান্তের মতো হাসপাতালে পৌঁছাল৷ ততক্ষনে জ্যোতিকে ওটিতে ঢোকানো হয়েছে। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে জ্যোতি কন্যা সন্তানের জন্ম দিল। সময়টা আনন্দঘন হওয়ার কথা ছিল। অথচ সদ্যোজাত শিশুটিকে কোলে নিয়ে সবাই কাঁদল ওরা। সারজিমের অনুপুস্থিতি ওদের পোড়াচ্ছিল ভীষণ।

জ্যোতিকে বাসায় নিয়ে আসা হলো দুদিন পরে। সবাই বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেদের দুঃখগুলো ভোলার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্ত মনের উপরে তো কারও নিয়ন্ত্রন থাকে না। সারজিম অদৃশ্যভাবে রয়ে গেল সবার মনে।

জ্যোতিকে যেদিন বাসায় আনা হলো সেদিন রাতেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল নৈশী। সাব্বির অফিস থেকে ফিরেছিল সবে। সেই রাতেই নৈশীকে নিয়ে আবার হসপিটালে ছুটল ও। সারারাস্তা নৈশী গেল কাঁদতে কাঁদতে। মনে মনে প্রার্থনা করে যাচ্ছিল ও, “আল্লাহ, তুমি সারজিমকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছ, ওর শেষ স্মৃতিটুকু অন্তত কেড়ে নিও না।”

সাব্বির অনুভব করছিল, নৈশীকে সান্ত্বনা দেওয়া উচিৎ, কিন্তু ওর মুখ থেকে একটা শব্দও বের হলো না। ও নিজেই তো কান্না আটকানোর প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

ডাক্তার অভয় দিল, চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু বেডরেস্টে থাকতে হবে। নৈশীর মাথার উপর থেকে বিশাল এক পাথরের বোঝা নেমে গেল যেন।

এতদিন নিস্তব্ধতায় ঘুমিয়ে থাকা বাড়িটা এখন প্রায়সময় নবজাতকের কান্নায় জেগে ওঠে। নৈশী গিয়ে বসে থাকে বাচ্চাটির পাশে। ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নেড়ে পিটপিট করে তাকায় সে। কী যে আদুরে লাগে তখন তাকে। বাচ্চা মেয়েটির নাম রাখা হয়নি এখনও। তবে নৈশী মাঝেমধ্যে আদর করে টুশি বলে ডাকে ওকে। আজকাল ওর দেখাদেখি অন্যসবাইও এই নামেই ডাকা শুরু করেছে।

সপ্তাহ দুয়েক রেস্ট করার পর রানাঘরের দায়িত্ব জ্যোতিই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। আফরোজা বেগম অসুস্থতার জন্য রান্নাঘরে যেতে পারেন না, নৈশীর শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। তাই ওর বারণ স্বত্বেও জ্যোতি ঘরের সব কাজের দায়িত্ব নিজেই নিয়ে নিয়েছে।

নৈশী শুধু অপেক্ষা করে এখন। সারজিমের বাড়ি ফেরার। আজকাল প্রায়ই স্বপ্নে আসে সারজিম৷ ঘুম ভাঙলেই দৌড়ে ব্যালকনিতে যায় নৈশী। এই বুঝি দেখবে সারজিম এসে সামনে দাঁড়িয়েছে হাসিমুখে। প্রত্যকবারই নৈশীর ধারনা ভুল হয়, তবুও আশায় বুক বাঁধে নৈশী। মনে মনে বলে, “তুমি কোথায় সারজিম৷ এই সময়ে আমার পাশে সবচেয়ে বেশি যে তোমাকেই দরকার।”

২২.
অফিস থেকে বাসার দুরত্ব অনেক, তাই সকালে অফিসে আসার সময় একবারে দুপুরের খাবার নিয়ে আসে সাব্বির। লাঞ্চ টাইমে টিফিন ক্যারিয়ার সবে খুলে বসেছিল ও, এমন সময়েই ফোনটা বাজল। আননোন নাম্বার দেখে সাব্বির একবার ভাবল ধরবে না ফোনটা। তারপর আবার কী মনে করে ফোন ধরে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
“কে বলছেন?”
“তুই সাব্বির তো?”
অপরিচিত কন্ঠে তুই সম্বোধনে সাব্বির বিভ্রান্ত হলো কিছুটা। প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আবার পালটা প্রশ্ন করল তাই ও, “হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কে?”
“আমি অমিত, অমিত রায়। চিনতে পেরেছিস? তুই আর আমি একই কলেজে পড়তাম। এইচএসসির পরে মেডিকেলে চান্স হলো যে। তারপর তো আস্তে আস্তে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল।”
“এবার চিনতে পেরেছি। ভালো আছিস তো তুই?”
“হ্যাঁ, আছি ভালোই। গত চারদিন থেকে আমি তোর ফোন নাম্বার কালেক্ট করার অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। অবশেষে পাওয়া গেল তোকে। আসলে খুব জরুরি একটা কথা বলার ছিল তোর সাথে।”
“হ্যাঁ, বল প্লিজ।”
“আচ্ছা, সারজিম ভাই এখন কোথায় আছে?”
নামটা শুনেই সাব্বিরের পিলে চমকে উঠল। ও ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল, “অমিত, সারজিম ভাই গত প্রায় চারমাস ধরে নিখোঁজ৷ কিন্তু তুই এই প্রশ্ন কেন করলি? তুই কি তার কোনো খোঁজ পেয়েছিস?”

“সাব্বির, আমি এমবিবিএস শেষ করে কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের একটা হাসপাতালে জয়েন করেছি। এখানে এসে অন্যান্য স্টাফদের থেকে একদিন কথায় কথায় জানতে পারলাম, গত চারমাস ধরে নাম-পরিচয়হীন একজন পেশেন্ট আইসিইউতে এডমিট যে বর্তমানে কোমায় আছে। কৌতূহলবশত আমি দেখতে গেলাম সেই পেশেন্টকে। দেখেই চিনতে পারলাম যে এটা সারজিম ভাই। এত ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন তিনি। রাস্তাঘাটে দেখা হলেও খুব আন্তরিকভাবে কথা বলতেন। তাকে দেখে চেনামাত্রই তোর খোঁজ করতে শুরু করলাম। তোদের বাসা আমি চিনি না। নইলে নিজেই যেতাম। অনেক চেষ্টার পর আমাদেরই এক ক্লাসমেটের থেকে নাম্বার পেলাম তোর। আমি জানি এটা সারজিম ভাই, তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য কয়েকটা পিক দিচ্ছি তার। তুই সিওর হয়ে যত দ্রুত সম্ভব রওয়ানা দে।”

সাব্বিরের গলা দিয়ে আর খাবার নামল না। নিজের খাবার এক কলিগকে দিয়ে ও বসের রুমের দিকে ছুটল। কোনোরকমে তাকে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে ছুটি নিল। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখল অমিত ছবি পাঠিয়েছে। অসুস্থতায় সারজিমের চেহারা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, চোখ কোটরে ঢুকে গেছে, গাল ভেঙে ডেবে গেছে, সারামুখে অসংখ্য কাটাছেড়া। তবু নিজের প্রাণপ্রিয় ভাইকে চিনতে অসুবিধা হলো না সাব্বিরের। বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হতেই ও কল করল রায়হানকে,
“রায়হান ভাই। আপনি কি বরিশালে আছেন? আমার সাথে একটু চট্টগ্রাম যেতে হবে। সারজিম ভাইয়ের খোঁজ পেয়েছি। আপনাকে পরে সব বিস্তারিত বলব, আপনি একটু প্লিজ চলেন আমার সাথে।” কথাগুলো বলার সময় সাব্বির কন্ঠস্বর কাঁপছিল ভীষণ।

রায়হান বলল, “শান্ত হ, সাব্বির। আমি যাব তোর সাথে। তুই বাসায় আয়, আমিও গাড়ি নিয়ে আসছি। দুজনে একসাথেই রওয়ানা দেব।”

বাসায় ফিরে সব জানাতেই আফরোজা বেগম হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। নৈশী জেদ ধরে বসল, সেও যাবে সাব্বিরের সাথে। সাব্বির বোঝাল ওকে, “লক্ষী আপু, এরকম জেদ কোরো না প্লিজ। আমরা যেভাবে হোক ভাইয়াকে এখানেই শিফট করাবো। তোমাকে ডাক্তার এখন একেবারে রেস্টে থাকতে বলেছে। অনাগত সন্তানের কথাটাও ভাবো একবার। এখন তোমার যেতে হবে না।”

নৈশী শুনল এবার সাব্বিরের কথা। রায়হান আর সাব্বির রওয়ানা হলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। ওখানকার ফর্মালিটি সেরে সারজিমকে দুদিন পর নিয়ে এসে অন্য হসপিটালে শিফট করা হলো।

এবার আর নৈশীকে আটকে রাখা গেল না। খবর পেয়েই সে ছুটল হাসপাতালে। আইসিইউর ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাওয়া গেল না। স্বচ্ছ কাচের অপরপাশ থেকে কেবিনের ভেতরে তাকিয়ে থাকল নৈশী৷ ঘুমন্ত নিস্পাপ একটা মুখ৷ দেখলে মনেই হয় না যে অচেতন হয়ে আছে মানুষটা। মনেহয় নিশ্চিন্তে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। নিজের হাজার বছরের তৃষ্ণা মেটাতে নৈশী ওই মুখটার দিকে তাকিয়েই থাকল।

অমিতও এসেছিল সারজিমকে পৌঁছে দিতে। এবার ওর থেকে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলো। অমিত বিস্তারিত জানাল ওদের।

সারজিমকে প্রথম দেখতে পেয়েছিল টিনেজার্স কয়েকটা ছেলে। ওরা বিকেলে মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। পাশের একটা ঝোপের মধ্যে বল খুঁজতে গিয়ে রক্তাক্ত অচেতন সারজিমকে দেখেছিল ওরা। প্রথমে ওরা ভেবেছিল কোনো ডেডবডি। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেওয়া হলো। তারা এসে নিশ্চিত করল, ও বেঁচে আছে। হাসপাতালে ভর্তি করা হলো সারজিমকে। ওর পরিচয় জানার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কোনোভাবেই কিছু জানা গেল না। সারজিমের সাথে আইডি কার্ড, মোবাইল, ব্যাগ কিছুই ছিল না। সম্ভবত সেগুলো সব আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। ওরা কেউ সারজিমের নামটা অব্দি জানত না। ওই ছেলেগুলোই শেষপর্যন্ত ফেরেশতা হয়ে এগিয়ে এলো। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা তুলে, নানারকম সংস্থা থেকে সাহায্য চেয়ে, আর নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করে এতদিন যাবত ওরা সারজিমের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিল। এরমধ্যেই অমিত ওই হসপিটালে জয়েন করে জানতে পেরেছিল সারজিমের কথা। তারপর সাব্বিরের সাথে যোগাযোগ করে অবশেষে খবরটা দিয়েছিল ও।

অমিতের কথা শুনতে শুনতে ওই কলেজপড়ুয়া ছেলেগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞবোধ করছিল ওরা।
সাব্বির বলল, “ওদের একেকজনের বয়স ষোল সতের হবে বোধহয়। অথচ এখনই কী বিশাল মন একেজনের। আমার কাছ থেকে কন্টাক্ট নাম্বার রেখে দিয়েছে ভাইয়ার আপডেট জানবে বলে।”

ফেরার সময় হলো অবশেষে। রায়হান সাব্বিরকে বলল,
“সাব্বির, এতজন তো এখানে এলাউ করবে না। তুই বরং খালাম্মা আর নৈশীকে নিয়ে বাসায় চলে যা। আজ রাতে আমিই এখানে থাকব।”

সাব্বির বলল, “সে কী করে হয়। আমি থাকি এখানে। তারচেয়ে তুমি মা আর নৈশী আপুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে যাও।”

“জেদ করিস না সাব্বির। এতটা পথ জার্নি করে এসেছিস। কাল তো তোর অফিসও আছে। তাছাড়া নৈশী অসুস্থ, একজন পুরুষমানুষ বাসায় থাকার প্রয়োজন আছে। আপতত কয়েকদিন আমি বরিশালেই আছি। সেই কয়দিন আমিই এখানে থাকি। মাঝেমধ্যে তুই এসে পরিস ফ্রি টাইম বুঝে।”

সাব্বির দেখল, রায়হানের কথায় যুক্তি আছে। ও রওয়ানা হতে চাইল। কিন্তু এবার গো ধরে বসে থাকল নৈশী। হাসপাতাল থেকে সে কিছুতেই বাসায় যাবে না।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here