কারনে অকারনে ভালোবাসি
পর্ব:9,10
Suraiya_Aayat
পর্ব:9
ঘুম থেকে উঠে বিছানার ওপর বসে আছে আরু, আরিশ ঘুমাচ্ছে নিজের মতো ৷ ক্ষনিক ক্ষনিক বাদ আরিশের দিকে তাকাচ্ছে আরু ৷ আরু আছে আরুর চিন্তা নিয়ে এদিকে আরিশ ঘুমাচ্ছে ৷ আরিশের দিকে আর একবার তাকিয়ে চিন্তায় বিরক্তির মাত্রাটা বেড়ে গেল আরুর ৷ হাটু ভেঙে মাথা নীচু করে বসে রইলো ৷হঠাৎ করে হাত ধরে টেনে আরিশ আরুকে বিছানায় ফেলে দিতেই আরুর হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা হলো ৷আরিশ বলতে গেলে আরুর ওপর ঝুকে গেছে একদম, দুজনের মাঝের দূরত্বটা ভীষন কম,বলতে গেলে কয়েক ইঞ্চির ৷ আরিশ ভ্রু নাচিয়ে বলল
” আমাকে,লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, হমমমম হমমম ৷”
আরু আরিশের মাথার চুলগুলো টেনে দিয়ে বলল
” ভাবলেন কি করে আমি আপনার দিকে তাকাবো, আমার কি কোন কাজটাজ নেই নাকি ?”
আরিশ আরুর আরও কাছে সরে গিয়ে আরুর গলায় নাক ঘষে বলল
” সব বুঝি আমি ৷ হমম,,,, তুমি কিছুখন পরপর ই আমাকে দেখছিলে আমি দেখেছি,আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ না ৷”
আরু আরিশের মুখটা চেপে ধরে বলল
” আপনার এই জহুরির নজর দিয়ে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা জিনিসটা বড্ড বিরক্তিকর ৷ ”
আরিশ হাসতে হাসতে আরুর ওপর সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে শুয়ে রইলো, আরুর দম যাই যাই অবস্থা,একটা 65 কেজি ওজনের মানুষ যদি 48 কেজি ওজনের একটা মানুষের ওপর সব ভার ছেড়ে দেয় তখন তার অবস্থা টা ঠিক কেমন হতে পারে, আরুর ও তাই ৷
আরু আরিশকে সরানোর চেষ্টা করে বলল
” সরুন আমার ওপর থেকে আমার কষ্ট হচ্ছে ৷”
আরিশ এবার খানিকটা ভর সরিয়ে মুখ উঁচু করে বলল
” কালকে রাতে না হয় কষ্ট পেয়েছো মানলাম বাট এখন তো কিছুই করলাম না, এতেই এই অবস্থা !”
আরু আরিশের মুখটা এবার দু হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল
” আপনি নিজেকে অভদ্র আর বেহায়া বলে আমাকেও কি তেমনটা ভাবেন নাকি ? মুখে লাগাম লাগাতে শিখুন , আমার সামনে এসব বলবেন না আমি যথেষ্ট ছোট মানুষ ৷”
আরিশ হো হো করে হেসে বলল
” তুমি ছোট? যদিও তুমি তো আমারই ছোট্ট বেবি ৷”
কথাটা বলে আরুকে জড়িয়ে ধরে বললো
আরু রেগে গিয়ে আরিশকে বলল
” আমি মোটেও আপনার বেবি না, আই এম 19+ ,হু আর আপনি আমাকে বেবি বলেন ৷ হাহ !”
আরিশ হো হো করে হেসে উঠলো তারপর বলল
” তুমি তোমার নিজের কাছে কি আমি জানি না, তবে তুমিই আমার ছোট্ট বেবি, আমার আর কোন বেবি লাগবে না ৷ ”
আরু অবাক হয়ে বলল
” কেন? কেন? কেন? আপনার বেবি লাগবেনা কেন? আমার তো কতো শখ আমার এটা ছোট্ট মেয়ে বা ছেলে হবে আমি তাদেরকে নিয়ে খেলবো , সারাদিন তাদের সাথে কতো হই হুল্লোড় করবো ৷”
আরুর কথাটা শুনে আরিশের মুখটা থমথমে হয়ে গেল ৷ তারপর খানিকটা নরম সুরে বলল
” নাহ আমার কোন বেবি লাগবে না, আর বললাম না তুমি আমার বেবি ৷ তুমি আমার গোলুমোলু পুতুল বউ আমার আরুপাখি , আমার বেবি ,আমার সব,আর কারোর দরকার নেই আমাদের মাঝে ৷ নো মোর ওয়াডর্স ৷”
আরিশের কথাটা শুনে আরুর খুব রাগ হলো তাই খানিকটা রেগে বলল
” আপনি কেমন হ্যাঁ,সবাই বেবি বেবি করে পাগল হয় আর আপনি !”
আরিশ আরুর গালদুটো টেনে দিয়ে বলল
” তুমিই তো আমার সব ৷ আমিও তো তুমি বলতে পাগল, তাইনা আরুপাখি !”
কথাটা বলে আরুর গালে ভালোবাসার পরশ একে জড়িয়ে ধরলো ৷ আরু আরিশের কোলে চুপটি করে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে তবে কপালে ভাজ, আরিশের কথাটা ওর খারাপ লেগেছে ,রাগ ও হচ্ছে খানিকটা আরিশের ওপর ৷”
আরিশ হঠাৎ বলে উঠলো
” আরুপাখি তোমার পুরোনো মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে না ?”
আরূ মাথা নাড়িয়ে বললো
“হমম ৷”
“আমি তোমাকে আজকে কিছু মেডিসিন কিনে দিবো ওগুলো খাবে ৷”
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
” কেন? আর নতুন মেডিসিন কিসের?”
আরিশ বলে উঠলো
” তোমার না পেটে পেইন হয় ? ওই মেডিসিন গুলো খাবে তাহলে আর পেইন হবে না ৷”
আরু অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” কিন্তু ? আমার তো সবসময় পেইন হয় না ,মাঝে মাঝে হয় ৷”
” নো মোর ওয়ার্ডস, যা বলেছি তাই করবে ৷”
কথাটা বলে বিছানা থেকে নেমে ওয়াড্রব থেকে একটা লাল রঙের শাড়ি এনে আরুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
” নাও শাওয়ার নিয়ে এটা পরো, তোমাকে বাসায় দিয়ে এসে আমি কলেজ যাবো ৷”
আরু শাড়িটার দিকে তাকালো ৷আরিশের পছন্দ নিয়ে আসলেই কি কোন প্রশ্ন চলবে ?”
আরু শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে তখন আরিশ বলল
” কাল থেকে আর ভার্সিটি যাওয়ার দরকার নেই ৷”
আরু অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
” কেন? বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি পড়াশোনাও ছেড়ে দেবো? আর সবে 1 মাস ও হয়নি ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি ৷”
আরিশ ওর গা থেকে শার্টটা খুলতে খুলতে বলল
” মেডিকেলের প্রিপারেশন + ভার্সিটি সব একসাথে হয় না, যেকোনো এটাতে ফোকাস করতে হয়, আর তোমার মেডিকেল ইচ্ছা তখন ভার্সিটিতে কেন পড়তে যাবে ?আর মেডিকেলের এক্সামের ও তো বেশি দেরি নেই ৷ তাছাড়া স্যার আমাকে একদিন সেখানে প্র্যাকটিক্যাল করার জন্য ভার্সিটিতে যেতে বলে তাই আমি আর সাহেল যাই,বাট তোমার যাওয়ার দরকার নেই,তুমি আর সানা এখন থেকে তোমাদের প্রিপারেশানে মনোযোগ দেবে আর কাল থেকে সানা ও তোমাকে জয়েন করবে ৷”
কথাটা বলে আরিশ আর একটা শার্ট পরে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল ৷আরুর তো মনে মনে লাফাতে ইচ্ছা করছে ৷ একা পড়তে ওর সমস্যা কিন্তু সানা থাকলে ওর আর কোন সমস্যা নেই ৷ কথাগুলো ভেবে আরু গোসল করতে চলে গেল ৷
আরু গোসল করছে , কিছুখন পর আরিশ রুমে এলো,ওয়াশরুমের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর নিজের আলমারি থেকে ফাইলটা বার করলো ৷ তারপর একে একে আরুর কাগজপত্র গুলো বার করে দেখছে আরিশ, মেডিসিনের চেন্জের দরকার তা কালকে রাতেই আরিশের বোঝা হয়ে গেছে ৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফাইলগুলো অফ করতে গেলেই চোখে পড়লো আরুর সেই রিপর্টটা , 6 বছর আগের রিপোর্ট সেটা ৷ রিপোর্টটা আর একবার দেখে আরিশ রেখে দিলো ৷ আজ যেন মনের ভিতর টা বড্ড আনচান আনচান করছে, মেয়েটা যেদিন জানবে সেদিন কি করে সামলাবে আরিশ ওকে ৷ কথাটা মনে মনে ভাবতেই আরিশ বিড়বিড় রে আরিশ বলে উঠলো
” নাহ আমি কখনো আমার আরুপাখিকে জানতেই দেবো না ৷”
কালকে রাতে নিজেকে কন্ট্রোল করার অনেক চেষ্টা করেছে তবুও সফল হয়ে উঠতে পারেনি, মেয়েটাকে ও বড্ড ভলোবাসে, ছোটবেলায় আরুকে এতদম পুতুলের মতো দেখতে ছিলো, একদম গোলুমোলু আর এখনো তাই, আরিশ ছোট থেকেই ওকে পুতুল বউ বলে ডাকতো আর আরু এই ডাক শুনে খুব রেগে যেত ৷ তারপর থেকে যখন বুঝতে শিখলো তখন থেকেই আরু ওর নিজের অংশ সেটাই ভাবতো আরিশ ৷
কথাটা বলে ফাইলগুলো আবার যথা স্থানে রেখে দিলো ৷আরিশ ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো , এবার ওর এমবিবিএস এর ফাইনাল ইয়ার ৷ ল্যাপটপটা চালাচ্ছে আর মাঝে মাঝে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছে আরিশ ৷ অনেকখন হয়ে গেল আরু এখনো আসছে না দেখে আরিশ বলে উঠলো
” আরুপাখি , আর কতখন ? সারবছর কি এভাবেই পার করবে নাকি ?”
ভিতর থেকে আরুর গলার আওয়াজ ভেসে এলো
” কি এনেছেন এটা আপনি ? আপনি কি জানেননা যে আমি ঠিকঠাক করে শাড়ি পরতে পারিনা ৷”
খানিকটা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে উঠলো আরু ৷ আরিশ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল
” যতটুকু পরেছো ওভাবেই বেরিয়ে আসো, আমি ঠিক করে দিচ্ছি ৷”
অপর দিক থেকে আরু বলে উঠলো
” আপনার কাছে শাড়ি পরে নিজের মান সম্মান একেবারে খুইয়ে ফেলি আরকি তাইনা ?”
আরিশ মুচকি হেসে বলে উঠলো
” স্টুপিডের মতো কথা বলো না আরুপাখি, যা দেখার আমার অলরেডি দেখা হয়ে গেছে , আর কিছু বাকি নেই তাই অতো লজ্জা পাওয়ার ও দরকার নেই , কাম ফাস্ট ৷”
কথাটা বলার সাথে সাথে দরজা খোলার আওয়াজ হলো, আরিশ ফিক করে হেসে ফেলল, ল্যাপটপটা অফ করে আরুর দিকে তাকাতেই দেখলো আরু শাড়ির কুচি ধরে ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ৷ আরিশের মুচকি হাসি আরুর বিরক্তির পরিমান বাড়ালো ৷ আরু রেগে বলল
” আপনার মতো নিলজ্জ মানুষ আমি দুটো দেখিনি ৷ আমি কি ইচ্ছা করে,,,,,”
লাজ লজ্জার খাতিরে আরু আর কিছু বলতে পারলো না, সোফা থেকে কুশনটা নিয়ে আরিশের দিকে ছুঁড়ে দিলো ৷ আরিশ সুযোগ বুঝে সরে যেতেই কুশনটা গিয়ে বিছানা ছাড়িয়ে ওপাশে গিয়ে পড়লো ৷ আরিশ আরুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল
” তুমি আমার, আমি আমার জিনিসের ওপরই অধিকার খাটিয়েছি, অন্য কোন মেয়ের কাছে গিয়ে তো আর কিছু করিনি , যা করেছি বউ এর সাথে করেছি , আর শরিয়ত মোতাবেক এটা জায়েজ ৷”
অন্য মেয়ে” কথাটা শুনতেই আরুর সেই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল, কথাটা যেন ওর শরীরটাকে রিনরিনিয়ে দিলো ৷ রেগে গিয়ে বলল
” অন্য কারোর কথা শুনতে চেয়েছি আমি ? যা করেছেন ভালো করেছেন বেশি কথা না বলে শাড়িটা পরিয়ে দিন ৷”
আরিশ আর কিছু বলল না, খানিকটা ঝুকে আরুর শাড়ির কুচিটা ধরে দিয়ে তা কোমরে গুজে দিতে গেলেই আরু বলল
“হয়েছে বাকিটুকু আমি করে নিতে পারবো ৷”
কথাটা বলে আরিশের হাত থেকে কুঁচিটা নিতে গেলেই আরিশ বলল
” ইন ইউর ড্রিম !”
কথাটা বলে আরিশ আরুর কুচিটা গুঁজে দিলো,ততখন সময়ের জন্য আরুর শরীরটা যেন কাঁপছিলো ৷ কুঁচিটা গুজে দিয়ে শাড়ির আঁচলটা টেনে দিলো ৷ আরু চুপ করে আছে ৷ একটা পুরুষ মানুষ হয়ে আরিশ যতোটা জানে আরু ও ততটা জানে না ৷ আরিশের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে আরু ৷ আরিশ শাড়ির পিনটা ঠিক করে আরুর দিকে তাকাতে গেলেই আরুর সাথে চোখাচোখি হলো ,
ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো
” কি দেখছো আরুপাখি ?”
আরু আর কিছু বলল না চোখ নামিয়ে নিলো, মানুষটাকে যতোটা না ভালোবাসে তার থেকে বেশি শ্রদ্ধা করে আর বিশ্বাস করে, বয়সে বড়ো হলেও বন্ধুর মতো মনে হয় ৷ ও জানে যে উনি থাকতে আরুকে কখনো কোন আঘাত হানতে পারবে না ৷ আরু মাথা নীচু করে আছে ,তারপর আরিশ মুচকি হেসে আরুকে আলতো করে বুকে জড়িয়ে নিলো ৷ আবেগে আরুর চোখে জল চলে আসছে কিন্তু ও কাঁদবে না ৷ আরিশ আরুকে জড়িয়ে রেখেছে ,আরু ও জড়িয়ে ধরেছে আরিশকে ৷ হঠাৎ আরিশ আনমনা হয়ে বলল
” তুমি হয়তো আমার লাইফের বেস্ট হ্যাপিনেসটা দিতে পারবো না তবুও কখনো তোমাকে ছাড়বো না আমি , কারন ছাড়ার জন্য আমি কাছে টেনে নিইনি ৷”
আরিশের এমন কথা শুনে আরুর ভ্রু কাঁচকে এলো, অবাক হয়ে বলল
” কি বলছেন আপনি ? আর আপনার লাইফের কি এমন বেস্ট হ্যাপিনেস যেটা আমি দিতে পারবো না?”
আরুর কথাটা শুনতেই আরিশের ঘোর ভাঙলো , তারপর খানিকটা থতমত খেয়ে বলল
” কিছু না, এমনিই বলছিলাম ৷”
আরু আরিশের থেকে সরে এসে বলল
” অতিরিক্ত পড়াশোনায় আপনার মাথাটা কি গেছে ?”
আরিশ এবার হো হো রকে হেসে বলল
” কাল রাতের কথা ভুলতে পারছি না আরুপাখি, কি নেশা ধরিয়ে দিলে ৷ তোমাকে রেখে আসতে হবে ,ভাবলেই !”
কথাটা শুনে আরু মুখ ভঙচি দিয়ে বলল
” হাহ ! বেশ হয়েছে ৷ আমি তো আসতেই চাইনি আপনি জোর করে এনেছেন এবার বুঝুন ঠেলা ৷ ”
আরিশ আরুর নাকটা টেনে দিয়ে বলল
” হাহ ! তুমি কি ভাবলে আমিও এতো সহজে হেরে যাওয়ার বান্দা ? কি করে কি ব্যাবস্থা করতে হবে তা আমার ভাবা হয়ে গেছে ৷”
আরু আরিশের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল
” বয়েই গেছে আমার আপনার সাথে থাকতে ৷ বাই দা ওয়ে আপনি আবার আমাকে ভলোটালো বেসে ফেলছেন না তো ?বাসলেই বা কি, আবার যেন হাতে ফুল নিয়ে বলতে আসবেন না আরু পাখি আই লাভ ইউ ৷”
আরিশ ও আরুর চুল টেনে বলল
” হাহ ! ভালোবাসি বলার কোন ফিচার্স ই এখনো আমার মধ্যে তৌরি হয়নি সো ভুলে যাও এটা ৷”
আরু ও মুখ ভাঙচি দিয়ে আরিশের পিঠে একটা ধম করে কিল বসিয়ে দিয়ে বলল
” আমারো না !”
কথাটা বলে আরু দে ছুট,,,,,,
আরিশ মুচকি হসতে হাসতে শাওয়ার নিতে চলে গেল ৷
চলবে,,,,
#কারনে অকারনে ভালোবাসি?
#পর্ব:10
#Suraiya_Aayat?
” আরুপাখি ! আরুপাখি ! এখানে আসো ফাস্ট ৷”
খানিকটা উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললো আরিশ ৷ আরু তো ডাইনিং এ বসে টোস্ট খাচ্ছিলো তখনই আরিশের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো ও ৷ আরিশের গলার আওয়াজ শুনে অনিকা খান বলে উঠলেন
” কি হয়েছে ডাকছিস কেন? আরু খাচ্ছে এখন ৷”
আরিশ আরো জোরে চেঁচিয়ে বলল
” নো মোর ওয়ার্ডস , কাম ফাস্ট ৷”
আরু নিষ্পাপের মতো চেয়ে বলল
” দেখেছো তো ফুপি তোমার ছেলে আমাকে কেমন করে ডাকে, কন্ঠে রস কষ নেই, জন্মের সময় মুখে মধু দাওনি?”
আরুর কথা শুনে অনিকা খান হেসে উঠলেন আর সানা বলে উঠলো
” ভাইয়া আগে তো সারাদিন আরুপাখি আরূপাখি করতোই এখন আরো ডেকে তোর মাথা খাবে ৷”
আরু টোস্টটা অর্ধেক খেয়ে বলল
” শুধু কি মাথা? আমার কানের মাথাটাও খায় উনি ৷ সারাদিন খালি আরুপাখি? আর আরুপাখি?৷”
অনিকা খান ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে বললেন
” তাড়াতাড়ি যা দেখ আবার কিসের জন্য ডাকছে, না গেলে রেগে যাবে ৷”
আরুর আর কি, আরু নাচতে নাচতে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে, ওর হয়তো জানাও নেই যে আরিশ কি কারনে ডাকছে ৷
রুমে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
” কিহ সারাদিন আরুপাখি আরুপাখি করেন, কি হয়েছে বলুন ৷”
আরিশ খানিকটা রেগে বলল
” আমার হোয়াইট শার্ট গুলো কি করেছো?”
কথাটা শুনতেই আরু দু কদম পিছিয়ে গেল,ওর মনেই ছিলো না শার্ট গুলোর কথা ৷ আরিশের মুখে রাগের প্রকাশ ঘটছে, আরু ভয় পেয়ে পালাতে গেলেই আরিশ খপ করে হাত ধরে টেনে কাছে আনলো
” পালাচ্ছো কোথায়? আমার সাদা শার্ট গুলো বেডের নীচে গেল কি করে ?”
আরু থতমত খেয়ে বলল
” আমি কি করে জানবো হু , আমি কি আপনার শার্টে হাত দিয়েছি নাকি?”
আরিশ আবার আরুকে কোলে তুলে বিছানায় ফেলে ওর ওপর উঠে গেল প্রায় ৷ আরুর দিকে ঝুকে রাগী মুখ করে বলল
” মিথ্যা আমার পছন্দ না ইউ নো, আমি জানি তুমিই করেছো নাহলে কারোর এতো সাহস নেই যে আমার রুমে এসে আমার জিনিস ঘেটে ঘ করবে তাও আমার ফেভারিট শার্ট গুলো ৷ আর কাল রাতে পারফিউম গুলো মাটিতে ছড়ানো ছিলো আমি এসে দেখেছি ৷ এখন বলো কেন করেছো এমন?”
আরু উঠতে গেলেই আরিশ আবার বিছানার সাথে চেপে ধরলো
” ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু ডু দিস, আগে আমার কথার উত্তর দাও ৷ কেন করেছো এমন?”
আরু ভাবলো যে এবার একটু ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করবে কারন আরিশ রেগে আছে ৷ আরু এবার কাঁদো কাঁদো সুরে বলল
” ভুল হয়ে গেছে ৷”
আরিশ ধমক দিয়ে বলল
” কাঁদবে না একদম , একটা থাপ্পড় দিবো ৷ এটা কোন রিজন হলো ৷”
আরু চুপ হয়ে গেল ধমক শুনে তারপর বললো
” বললাম তো ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না ৷”
” ইউ নিড টু বি সরি, সে সরি ৷”
আরু মুখ ভঙচি দিয়ে বলল
” নেভার এভার ৷”
আরিশ আরুর থেকে সরে এসে বলল
” ওকে ফাইন, পানিশমেন্ট পাবে, আর পানিশমেন্ট হিসাবে তুমি আর কখনো তোমার বাসায় যেতে পারবা না আমার সাথে থাকবে এ বসায় ৷”
আরু আরিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল
” আইসে রে মুরব্বি ! উনি বললেই বুঝি থকতে হবে ৷”
আরিশ চুপ করে বসে রইলো , আরুর মুখভঙ্গি দেখছে ৷
” তাহলে সরি বলবেনা?”
আরু বলল
” আপনি তো জানেন সরি আমি কখনোই আপনাকে বলবো না ৷”
কথাটা বলে আরিশের ওয়াড্রব থেকে একটা নেভি ব্লু কালারের শার্ট বার করে বলল
” এটা পরুন, আর বসায় ফেরার সময় শার্ট কিনে নেবেন ৷ যদি আপনি একান্তই ব্যাক্তিগত ফকিন্নি হন তাহলে বলিয়েন আমি আমার শ্বশুর বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে আপনাকে দিয়ে দিবো ৷”
আরিশ মুচকি হসছে, কিছু বলছে না ৷ আরু চলে যেতে নিলেই আরুর হাত ধরে বলল
” পানিশমেন্ট হিসাবে কিছু তো পেতেই হবে ৷”
আরু একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল
” নেভার ৷”
আরিশ আরুর কোমর ধরে কাছে টেনে এনে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে পেটে হাত রেখে হাতটা আলতো স্লাইড করে বলল
” শার্ট নষ্ট করেছো ইটস ওকে বাট নেশা ধরিয়ে দিয়েছো হুইচ ইজ নট ওকে ৷”
কথাটা বলে আরুর ঠোঁটের দিকে এগোলো আরিশ তখনই সানা আসতে আসতে বলল
” কি রে তোরা কি আর খেতে খেতে আসবি না নাকি?”
কথাটা শুনতেই আরু ছিটকে দুরে সরে গেল , আরিশ আরুর দিকে দাঁতে দাঁত চেপে চেয়ে রইলো ৷ রাগ হচ্ছে ওর ৷
রেগে গিয়ে বলল
” সানা তোর টাইমিংটা ঠিক কর ৷”
কথাটা বলে শার্টটা পরতে লাগলো ৷ আরু মুচকি হাসলো , সানার দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো যা আরিশের চোখকে ফাঁকি দেইনি ৷ আরিশ কিছু বলল না, আরু নীচে চলে গেল ৷
আরিশ শার্টটা পরে নিয়ে একটা কাগজে করে কিছু ওষুধ পেসক্রাইব করে পকেটে নিয়ে নীচে নামলো ৷ আরু খাচ্ছে আর ওদের সাথে গল্প করছে ৷ কথায় কথায় অনিকা খান বললেন
” আরিশ আরুকে দিয়ে তুই বাসায় ফিরবি তো ? আজকে তো 15 ই আগষ্ট , হলিডে ৷”
আরু আরিশের দিকে তাকালো ৷ আরিশ ডিম খেতে খেতে বলল
“হমম চলে আসবো ৷ তাছাড়া আমার কাজ আছে সেটাও কমপ্লিট করতে হবে ৷”
আরু মুখ ভাঙচি দিলো আর বলল
” আসল কথা সেটা না ফুপি ৷ আসলে তো আমার নানাভাই আসবে তাই উনি ভয় পাচ্ছেন ৷”
আরিশ এবার খানিকটা রুক্ষ গলায় বলল
” সামহাও তুমি কি এটা মিন করতে চাইছো যে আমি তোমাদের বাসায় আজকে থেকে যাই ৷”
আরু অবাক হয়ে বলল
” আমি সেটা কখন বললাম, আর আমি কেনো চাইবো আপনি আমার বাসায় থাকেন ৷”
আরিশ হঠাৎ রেগে গিয়ে বলল
” তাহলে মুখ বন্ধ করে চুপচাপ খাও ৷”
আরু চুপ হয়ে গেল সাথে অবাক ও হলো ৷ অনিকা খান ধমক দিয়ে বলল
” আহ আরিশ , এটা কেমন করে কথা বলার ধরন ৷”
আরিশ জুসটা ঢকঢক করে খেয়ে বলল
” আই এম গেটিং লেট , তাড়াতাড়ি আসো, গাড়িতে ওয়েট করছি ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷ আরু অবাক হয়ে তাকালো ৷
অনিকা খান একটু সন্দিহান কন্ঠে বললেন
” আরিশ কি রেগে আছে, ঝামেলা হলো নাকি আবার?”
আরু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” ওনার কথা ছড়ো ফুপি, উনি এমনই চিরকাল নিরামিষ ৷”
কথাটা শুনে সবাই একসাথে হেসে ফেলল ৷
_____
” এই ওষুধ গুলো প্রতিদিন 3 বেলা খাবে, তাছাড়া ওষুধের খামে লেখা আছে যে কোনটা কখন খেতে হবে ৷ ডোন্ট মিস ইট ৷” একটা সিরপের দেখিয়ে বলল ৷
আরু ওষুধ গুলো নিয়ে বলল
” আমার এতো ওষুধ খেতে ভালো লাগে না সেটা কেউ বোঝে না , লাইক নো বডি ৷”
আরিশ কিছু বললো না কারন কথাটা নতুন না ৷ চুপ করে সোফাতে বসে রইলো , মাঝে মাঝে একটু মাথায় হাত দিচ্ছে, হয়তো হালকা মাথা ব্যাথা করছে অথবা কিছু নিয়ে চিন্তা করছে ৷ আরু ওষুধ গুলো রেখে চেন্জ করতে গেল ৷ তখনই আরিশ একটা কল করলো
” হ্যালো স্যার হাউ আর ইউ? ক্যান আই টক উইথ ইউ ফর ফিউ মিনিটস?”
ওপর পাশ থেকে ডক্টর শর্মা বলে উঠলেন
” ইয়াহ শিউর ৷”
” আরুশির প্রবলেমটা তো আপনি জানেন যে ওর দুটো টিউব ড্য৷মেজ আই মিন এক্সিডেন্ট এ এফেক্টেড হয় আর সেটার এখনও সার্জারি করা হয়নি, পেটে পেইন হয় ৷”
” হ্যাঁ সেটা তো জানি, বাট ওষুধ তো ডেইলি নেই তাইনা?”
আরিশ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল
” ইয়াহ ডেইলি নেই , বাট কালকে ওর সাথে ইন্টিমেট হওয়ার পর বুঝলাম যে ওর পেইনি এখনো কমেনি ৷ আমার মনে হয় , সমস্যাটা এখনো আগের মতোই আছে ওষুধ খেয়ে কমেনি ৷”
উনি একটু থেমে বললেন
” ইজ সি নাও ইউর ওয়াইফ?”
” ইয়াহ ৷ সে আজ আমার বউ ৷”
উনি একটু উদাসীন কন্ঠে বললেন
” ওর বেবি হবে না জানার পর ও বিয়ে করলে? বিগ স্যাক্রিফাইস ইয়াং ম্যান ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
” আমাদের সকলের মাঝেই কিছু অপরিপূর্নতা থাকে আর সেটা জেনেও আমদের তাদেরকে মেনে নিতে হয় বিকজ উই লাভ দেম ৷ আপনার স্ত্রী ও তো হাটতে পারেন না বিগত 20 বছর তাই বলে কি আপনি তাকে ছেড়ে দিয়েছেন? না তো, বিকজ ইউ লাভ হার ৷ আর তাছাড়া আমি ওর পরিপূর্ধতা আর অপূর্নতা সবকিছু মিলেই ভালোবাসি , শুধু সে থাকলেই হবে ৷”
উনি মুচকি হেসে বলল
” প্রাউড অফ ইউ মাই সন ৷ যাই হোক তুমি একদিন আমার চেম্বারে নিয়ে এসো নাহলে একেবারে কিছু টেস্ট আমি বলছি সেগুলো করিয়ে আনো ৷”
” ওকে স্যার , থ্য৷ংক ইউ ৷”
কথাটা বলে আরিশ রেখে দিলো ৷ আরু বেরিয়ে এসে বলল
” কার আর কিসের টেস্ট ৷”
আরিশ চমকে গেল একটু , আরুর কথায় বুঝলো যে আরু ওর সব কথা শোনেনি তাই নরমাল হয়ে বলল
” তোমার পেটে পেইন হয় তাই চেক আপ করা দরকার ৷”
আরু মুখ কুঁচকে বলল
” মেডিসিন – চেক আপ, মেডিসিন- চেক আপ ৷ আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আসলে আমার কি হয়েছে ৷”
আরিশ আরুর কাছে গিয়ে আরুকে জড়িয়ে দরে বলল
” আচ্ছা আরুপাখি একটা কথা বলবো?”
“আগে আমাকে ছাড়ুন তারপর যা বলার বলুন ৷”
আরিশ আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
” তুমি অনেক ছোট আরুপাখি তাই আমি চাইনা আমার জন্য ফিজিকালি তোমার কোন এফেক্ট বা সমস্যা হোক ৷ তাই…”
আরু অবাক হয়ে বলল
” তাই…তাই কি ?”
আরিশ চোখ বন্ধ করে বলল
” তাই আর কি ,তাই আমাকে তোমার থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে ৷ সো স্যাড ৷”
আরু কথাকে কাটানোর জন্য আরিশ কথাগুলো বলল ৷
” হোয়াটএভার ৷”
আরিশ আরও কিছুখন জড়িয়ে ধরে রাখতেই বাইরে থেকে আওয়াজ এলো
” সেই ব্যাটা আইসে নাকি? আমার নাতনিডারে তো এক্কেরে কব্জা করে লইসে , সে আবার এই বাসায় আইসে কিল্লাই ৷”
আরিশ কথাটা শুনে বলল
” এসেছে চিটাগং এর বুড়ো, উফফফ ৷”
আরু মুখ চেপে হেসে বলল
” আসছি নানাভাই ৷”
আরিশ বিরক্ত হয়ে বিছানায় বসলো ৷ উনি আরুর ঘরে এসে বলল
” দিদিভাই এই ছ্য৷ডা তোর ঘরে বইসা আসে কিল্লাই ৷”
আরিশ কিছু বলছে না দেখে উনি চোখের চশমাটা ঠিক করে বলল
” হেতি তো কালা, নাকি বোবা হইয়া গেসে কোনটা? আর হেতির কি কাম ধাম কিছু নাই যে সারাদিন এইহানে আইয়া পইড়া থাকে ব তর লগে ঘোরে ৷”
এই মুহূর্তে আরিশের এমন কোন কথায় শুনতে ইচ্ছা করছে না দেখে আরিশ আরু সাথেও আর কিছু না বলে গাড়ির চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ আরু অবাক হলো একটু ৷ কালকে রাত থেকে দেখছে আরিশের মন খারাপ হয়তো কোন কিছু নিয়ে ওভার থিংক করছে ৷ আরু আবার ভাবলো আরিশ কি কোনভাবেই সকালের ওর বিহেভিয়ারে কষ্ট পেয়েছে?
চলবে,,,,