কারনে_অকারনে_ভালোবাসি? পর্ব:7

0
2316

কারনে_অকারনে_ভালোবাসি?
পর্ব:7
Suraiya_Aayat?

“আরুপাখি দরজা খোলো ৷ অনেক রাত হয়েছে আমাকে বাসায় যেতে হবে ৷ তাড়াতাড়ি এসো ৷ আই এম গেটিং লেট ৷”
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দরজায় নক করে আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল আরিশ ৷ ভিতর থেকে আরুর কোন রেসপন্স নেই দেখে আরিশ আবার বলল
” কান্ট ইউ হেয়ার, আই সেইড দ্যাট আই এম গেটিং লেট, ওপেন দা ডোর ফাস্ট ‌৷”

আরু ভয়ে এবার পা দুটো গুটিয়ে নিয়ে বিছানায় উঠে বসলো, আরিশ ডাকছে ওকে কিন্তু ও দরজা খুলছে না এতে যে আরিশের রাগের পরিমান বাড়ছে তা আরু বেশ ভালোই বুঝতে পারছে কিন্তু এদিকে ওর মনের ভয়টাকেই আপাতত বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, আজকে রাতে আরিশের সাথে একটা ঘরে ও যদি একাকী থাকে তাহলে আজ নিশ্চয়ই ও হার্ট এটাক করবে ৷
কথাগুলো ভাবতে না যত সময় নেয় আরিশের দরজা নক করতে আর হুমকি দিতেও ততখন সময় লাগে না ৷
আরু বিছানা থেকে পা নামাতে যাবে তখনই আরিশের থেকে ভিডিও কল এলো ৷ ভিডিও কল পেয়ে আরু চমকে গেল , ফোনটা ধরবে কি ধরবে না তা নিয়ে হাজার বার ভাবছে আরু ৷ আরু ফোনটা ধরলো না কিছুখন পর কলটা কেটে গেল ৷ আরু ভয়ে ফোনটা হাত দিয়ে ভয়ে দূরে ঠেলে দিলো ৷ সাথে সাথে দরজার ওপাশ থেকে তীব্র হুংকার এলো
” এই মেয়ে দরজা খোলো ৷”
ধমক শুনে আরু কুঁকড়ে গেল ৷ ধমকের ডেসিবেলের মাত্রা এতোটাই বেশি ছিলো যে তা নীচের ঘর অবধি আওয়াজ পৌছে গেছে ৷ আরিশের ধমক শুনে নীচ থেকে আরুর মা বলে উঠলো
” আরিশ কি হলো কোন সমস্যা ?”

আরিশ উত্তর দিলো না, ভীষন পরিমান রেগে গেছে তা আরু বুঝতে পারছে এবার হাড়ে হাড়ে কিন্তু এবার আর কোন ভাবে আরিশ আরো বেশি রেগে গেলে তখন আর আরিশকে কোনভাবেই আরিশ সামলাতে পারবে না ভেবে দরজার দিকে দৌড়ে ছুটলো ৷ দরজার ছিটকানিটা খুলে দিয়ে দরজার পাশে ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে লুকিয়ে পড়লো আরু, আরিশ রুমে ঢুকে কোনভাবে বুঝতে পারলো যে দরজার পাশে আরু দঁড়িয়ে আছে তাই দরজার পাশে থেকে আরুর হাতটা টেনে নিজের সামনে টেনে আনতে গেলেই আরু আরিশের বুকে এসে ধাক্কা খেলো , চোখ মুখ এখনো খিঁচে বন্ধ করে আছে যেন ও চোখ খুললেই আরিশ ওর ওপর হামলে পড়বে আর চোখ বন্ধ করলে আরিশ ওকে ধরতে পারবে না ৷ দরজাটা পা দিয়ে ধাম করে বন্ধ করে দিতেই আরু কেঁপে উঠলো ,মাঝে মাঝে যে আরু নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারে তা আরু এখন বুঝতে পারছে বেশ ৷
আরিশ আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরু চোখ বন্ধ করে আছে তাতে আরিশের রাগের মাত্রাটা বাড়লো, দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” আমার চোখের দিকে তাকাও ৷”

আরু মাথা নাড়িয়ে না করলো যার অর্থ ও চোখ খুলবে না ৷ আরিশ রেগে গিয়ে বলল
” আমি যাস্ট এক থেকে তিন অবধি কাউন্ট করবো তার মধ্যে যদি চোখ না খুলেছো তো তুলে আছাড় মারবো ৷”
কথাটা শুনে আরু ঝটপট চোখ খুললো , আরিশকে আর কাউন্ট করার প্রয়োজন হলো না ৷ আরু চোখ খুলতেই আরিশ আরুর চোখের দিকে তাকালো,বেশ কিছুখন তাকিয়ে থেকেও কিছু বলছে না দেখে আরু এবার ফুঁপিয়ে উঠলো ৷ হঠাৎ আরুর ফুঁপিয়ে উঠতে দেখে আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
” উফফফ আবার !”

আরুর চোখ দিয়ে জল টপিয়ে পড়ছে, আরিশ আরুর গালে হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো, চোখ বন্ধ করে রাগটাকে ক্রমশ কমানোর চেষ্টা করছে আরিশ ৷আরু আরিশের বুকে ফুঁপিয়ে কাঁদছে , থামাথামির নাম নেই দেখে আরিশ বলল
” আই যাস্ট হেট ইউর টিয়ারস আরুপাখি ৷ তুমি সবসময় কান্না করে জিতে যাও কারন তুমি জানো যে তোমাকে কান্না আমার সহ্য হয় না ৷”

আরিশের বলা কথাটা শুনে আরু কাঁদতে কাঁদতে দাঁত বার করে একটা বিজয়ের হাসি দিলো ৷ আজ থেকে যখনই আরিশ ধমকাবে তখনই আরু কেঁদে ফেলবে আরিশের সামনে তাতে যে আরিশ আর ওকে কিছু বলবে না সেটা আরু আজ জেনে গেল ৷ প্রসস্থ হাসিটাকে ক্রমে ক্রমে কমিয়ে আনছে আরু কারন ওকে হাসতে দেখলে আরিশ আবার আগের মতো শুরু করে দেবে তাই ৷ আরিশ আরুর মাথায় হাত রেখে বলল
” নেক্সট টাইম যদি কাঁদতে দেখেছি তো খবর আছে ৷”
কথাটা শুনে আরু মনে মনে ভাবলো
” কিছুই করতে পারবেন না আমি জানি কারন আপনার মাইনাস পয়েন্ট টা আমি খুব ভালো করেই আয়ত্ত করে নিয়েছি মি অভদ্র ৷ হাহ ! আরু কি তা যদি আপনি বুঝতেন ৷ হাই মে মার যাওয়া, এত বুদ্ধি আমার ৷”
কথা গুলো মনে মনে ভাবছে আর ভীষন রকম খুশি লাগছে আরুর , আর যাই হোক নিরবে তো বাজিমাত করায় যায় তাইনা?
আরিশ ধীমে কন্ঠে বলল
” মনে মনে এত লাফালাফির দরকার নেই আরুপাখি ৷ তোমার মুখ দেখে আমি বুঝি যে তুমি কখন নিজে থেকে ভয়ে কেঁদে ফেলছো আর কখন ইচ্ছকৃত কাঁদছো তাই এটা ভেবো না যে আমি বুঝতে পারবো ৷”

কথাটা শুনে আরুর রাগ হলো অজান্তেই আরিশের বুকে একটা কিল মেরে বলল ” ধূর ৷”
আরিশ বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো তারপর আরুকে একটু ভয় দেখানোর জন্য বলল
” কি বললে এক্ষুনি, আর হিট করলে কেন ?”

আরু বুঝতে পারলো যে ও ঠিক কি করেছে, ভয় পেয়ে গেল তারপর আরিশের রাগটা কমানোর জন্য আরিশকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
” আমি যাবো না প্লিজ ৷ আগে ঠিক করে বিয়েটা হোক তারপর না হয় ৷ আর আমি সংসারের কিছু বুঝি নাকি যে আমি আপনার বাসায় গিয়ে সংসার করবো ৷”

আরিশ আরুকে সোজা করে বলল
” সংসার করতে বলিনি আমি, তোমাকে ভালোবাসবো বলে নিয়ে যাচ্ছি আর এটা বোঝানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছি যে আমি ছাড়া অন্য কারোর কথা ভাবলেও তুমি বড়ো ভুল করবে ৷ বুঝলে আরুপাখি ?”

আরিশের কথার অর্থ আরুর কাছে স্পষ্ট , তবুও কিছু বলতে পারবে না বললেই হিতে বিপরীত হবে ৷ মাথা নীচু করে রইলো আরু ৷ আরিশ হাতটা ধরে বলল
” চলো ,লেট হচ্ছে ৷”
আরু আর কিছু বলতে পারলো না, আরিশ আরুর হাত ধরে নীচে নিয়ে গেল ৷নীচে সবাই বসে আছে, আরু আর আরিশ নামতেই আরমান সাহেব বলে উঠলেন
” তোমরা কি এখনই বেরিয়ে যাবে? রাত তো ভালোই হলো ৷”
আরিশ আরুর হাতটা আগের মতোই ধরে আছে, আফসানা বেগম ওদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললেন ৷ অনিকা খান বললেন
” আফসানা কাঁদছিস কেন? ও কি আমার বাড়ির বউ নাকি? ও তো আমার মেয়ে ,এবার কাঁদলে তোকে ঝাড়ি দিবো এবার ৷ ”
উনি চোখ মুছে হেসে বললেন
” আনন্দে কাঁদছি ৷ যাই হোক আরিশ কাল থেকে মনে হয় এই বাড়িতে যতখন তুমি থাকবে ততখন তোমাকে যুদ্ধ করে থাকতে হবে ৷”
আরিশ হো হো করে হেসে বলল
” মামী তোমার বাবা আসছে তাইতো ? তো কি হয়েছে উনি যদি বুনো ওল হয় তাহলে আমিও বাঘা তেঁতুল ৷”

কথাটা বলতেই সবাই হেসে ফেলল আরু বাদে ৷ আরু আরিশের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো , মানুষটা ওকে কতোটা ভালোবাসে, সব রকম বাধা পেরিয়ে ওকে নিজের করে পাওয়ার প্রেচেষ্টায় সবসময় এক সংগ্রাম করে চলেছে ৷মাঝে মাঝে আরুর নিজেকে অনেক লাকী মনে হয় যে আরিশের মতো একজন ওর জীবনে আছে যে তার জীবনের প্রতিটা সেকেন্ডে সেকেন্ডে চায় ৷আরু চোখ নামিয়ে নিলো, হাতের দিকে তাকালো, হাতটা কতোটা আকড়ে আর শক্ত করে ধরে রেখেছে যা দেখলেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করে , শুধু মানুষটার অতিরিক্ত রোমান্টিকতা জিনিসটা কে আরু ভয় পায় হয়তো তা সময়ের সাথে সাথে ঠিক হবে যাবে একদিন ৷

তাদের সাথে আরো কিছু কথা বলে ওরা রওনা দিলো ৷ আরিশ ড্রাইভ করছে আর আরু আরিশের পাশের সিটে বসে আছে ৷সানা আর অনিকা খান পিছনের সিটে বসে এই ওই নানা ধরনের গল্প করছেন, মাঝে মাঝে আরু ও বাধ্য হয়ে উত্তর দিচ্ছে, ভালোলাগার থেকে ভয় নামক জিনিসটা বেশি কাজ করছে ৷ আজ ও আর অবিবাহিত না, ও বিবাহিত ওর স্বামী আছে আর আজ ওদের বিয়ের প্রথম রাত , কথাগুলো মনে পড়তেই আরুর সার শরীর জুড়ে একপ্রকার শিহরন বয়ে যাচ্ছে ৷ওড়নাটা শক্ত করে চেপে ধরেছে আরু ৷ বাইরের দিকে তাকিয়ে লজ্জা সংবরনের ক্ষনিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ৷ আরিশ মাঝে মাঝে আরুর দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না ৷

বেশ কিছুখন পর ওরা বাসায় ঢুকলো ৷ আরু অনেক ভয়ে ভয়ে গাড়ি থেকে নামলো অদ্ভুত সব অনুভুতি কাজ করছে , এতদিন এই বাড়িটা ফুফির বাড়ি হিসাবে ভেবে এসেছে আর আজ ও এই বাড়ির বউ, অনিকা খান আর সানা গাড়ি থেকে নামলেন,অনিকা খান আগে আগে বাসায় ঢুকলেন আর আরিশ গাড়ি পার্ক করতে গেছে ৷ সানা নামতেই আরু সানার হাত ঝাপটে ধরে বলল
” সানা জানু প্লিজ আমি তোর সাথে ঘুমাবো আজকে , প্লিজ ৷”

সানা ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল
” কই আমি তো ভাইয়াকে দেখছি না ,হঠাৎ জানু বললি, ভাইয়া তো তোর জানু আমি আর কে?”

আরুর রাগ হলো তবুও নরম সুরে বলল
“মি অভদ্র আমার জানু হতে যাবে কেন? আমার জানু তো তুই ৷”
সানা মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
” একটু আগে কে না আমাকে কতো কথা শোনালো ৷”

আরু এবার ইচ্ছা করে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল
” আমার এই দুঃসময়ে তুই আমার পাশে থাকবি না?”

সানা চোখ মুখ খিচে বলল
” দোস্ত থাম প্লিজ?,,ইমোশোনাল ড্রামা করিস না, আমার চাওয়া পাওয়া বা তোর চাওয়া পাওয়ার ওপর কিছু ডিপেন্ড করে না, ভাইয়া কারোর কথা শুনবে না আমি জানি ৷”
আরু সানার হাতটা শক্ত করছ ধরলো, ওরা বসার ভিতরে ঢুকতেই আরু সানার রুমের দিকে দৌড়ে ছুটে যেতে গেলেই বলল
” এই মেয়ে ওদিকে কোথায় যাচ্ছো? তোমার ঘর অন্য দিকে ভুলে গেছো ৷”

আরু কাচুমাচু মুখ করে বলল
” আমি সানার সাথে ঘুমাবো ৷”

আরিশ পকেট থেকে ফোনটা বার করে একটা কল করতে করতে বলল
” বিয়েটা তোমার আমার সাথে হয়েছে নাকি সানার সাথে ? কোনটা?”

আরু ভিতরে ভিতরে লাগে ফুসছে, অনিকা খান কিচেনে প্লেটে কাচ্চি বাড়তে বাড়তে সবটা দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ৷ আরিশ আরুর হাত ধরে এনে উপরে যেতে যেতে সানাকে বলল
” এই যে ঢেবি আমার ঘরে খাবারটা পাঠিয়ে দিস,,খিদে পেয়েছে ৷”

সানা মুখ ভাঙচি দিলো, কিচেনে গিয়ে দুজনে মিলে হাসতে লাগলো ৷

___

প্লেটে রয়েছে আরুর প্রানপ্রিয় কাচ্চি কিন্তু আরু তবুও খাচ্ছে না,রাগ হচ্ছে আবার ভয় ও লাগছে কারন ঘড়ির কাটাটা থেমে নেই রাত বাড়ছে ৷ আরিশ ওয়াশরুম থেকে এসে আরুর সামনে বসলো, গায়ে একটা সাদা টি শার্ট শরীর থেকে সুন্দর একটা স্মেল আসছে ৷ আরু খাচ্ছে না দেখে আরিশ প্লেট থেকে বিরিয়ানি নিয়ে আরুর মুকের সামনে ধরলো
” নাও হা করো ৷”

আরু কিছু বললো না কারন এভাবে থাকলে ও নিজে কখনো ভাবে না বরং আরিশ খাইয়ে দিলে তাও খাবারটা ওর পাকস্থলিতে গিয়ে পৌছাবে ৷

আরু খেয়ে নিলো, সেকেন্ড টাইম আরিশ খাবার দিতে যাবে তখন দেখলো আরু চুপ করে রয়েছে ,,আরুর ঠোঁটের কোনে একটু ভাত লেগে রয়েছে ৷ আরিশ আরুকে বলল
” আরুপাখি এটু কাছে আসো তো ৷”

আরু অবাক হয়ে বলল
” কেন?”

আরিশ বলল
” তোমার ঠোঁটের কোনে খাবার লেগে আছে ,,আই ওয়ান্ট টু টেস্ট ইট ৷”

কথাটা শুনতেই আরু হাত দিয়ে ওর নিজের মুখ চেপে ধরলো ৷ আরিশ আরুর দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই আরুর জান যায় যায় অবস্থা ৷

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here