কারনে_অকারনে_ভালোবাসি পর্ব:15,16

0
1522

কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
পর্ব:15,16
Suraiya_Aayat
পর্ব:15

ভোর 4 টে কি 4.30 টে মতো বাজে , সময়ের ঠিকঠাক হিসাবটা কারোর কাছে নেই, আরিশ কেবিনের ভিতরে আর 3 জন কেবিনের বাইরে বসে আছে ৷ আরিশের চোখে ঘুম নেই কেবল চোখটা বন্ধ করে আছে আর অপেক্ষা করছে কখন আরুর জ্ঞান ফিরবে ৷ আরুর হাতে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসে বেডে মাথা রেখেছে আরিশ , আরুর জ্ঞান ফেরার সময় হয়ে এসেছে ৷ একটু হাফ ছেড়ে চোখটা আলতো ভাবে বন্ধ করতে গেলেই আরুর হাতটা কিঞ্চিত নড়ে উঠতেই আরিশ ধড়ফড় করে উঠে গেল ৷ আরুর হাতটা নড়ছে কিন্তু চোখ খোলেনি এখনো, আরিশের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো ৷আরু এখনো চোখ খোলেনি ৷ আরিশ আরুর হাতটা আগের মতো করেই ধরে আছে, আরুর মুখের দিকে নিশ্পলক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে ও, অপেক্ষা করছে কখন আরুর জ্ঞান ফিরবে ৷ নাহ আরুর জ্ঞান ফিরলো না এখনো, রাতের নিস্তব্ধতাতে ঘড়ির কাটার টিকটিক আওয়াজটা বেশ ভালোভাবে শোনা যাচ্ছে ৷ আরিশ ঘড়ির দিকে তাকালো,4.25 বাজে ৷ আরিশ অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু ধৈর্য হারালো না, আরিশ বড্ড ধৈর্যশীল সবসময়ই ৷
একটু হাতটা নড়লো এখন তা ও নড়ছে না, আরিশ আরুর পালসটা চেক করলো, খানিকটা কম আছে পালস ৷ সময় চলেই যচ্ছে, ,দেখতে দেখতে 4.45 বেজে গেল তখনই হঠাৎ আরু একটু নড়ে উঠলো ৷ আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে দেখলো আরু হালকা চোখ পিটপিট করছে, তা দেখে আরিশ ওর মুখের হাসিটা আরও প্রশস্থ করে বলল
” আরুপাখি !”
আরু ভালোভাবে চোখ খুলে আরিশের দিকে খুব অল্প পরিমান ঘুরে তাকালো , সারা শরীরে ব্যাথা, ঘাড় ঘুরে তাকানোর শক্তিটাও নেই ৷ আরিশ আরুর কাছে আরও এগিয়ে গিয়ে আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ৷ আরু ঠোঁট নাড়াচ্ছে মূলত আরু হয়তো কিছু বলতে চাইছে আরিশ তা বুঝলো ৷আরিশ নরম সুরে ফিকে কন্ঠে বলল
” আরুপাখি জল খাবে ?”
আরু হালকা মাথা নাড়ালো ৷আরু বেশ জোরে জোরে শ্বাস নিতে গেলেই আরিশ মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে ফেলল ৷ আরু এখন একটু ভালোভাবে শ্বাস নিয়ে খুবই নিম্নস্বরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
” আমি কখনও মা হতে পারবো না তাইনা ? আমার বেবি হবে না !”

কথাটা আরিশের কানে যেতেই খানিকখনের জন্য আরিশের শরীর ঝটকা খেয়ে যেন কেঁপে উঠলো, সারা শরীর দিয়ে শিহরন বয়ে গেল ‌৷ বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে, গলা দিয়ে আওয়াজ বার হচ্ছে না ৷ যেটার ভয় পাচ্ছালো সেটাই হলো ৷ আরিশের ঠোঁট জোঁড়া কাঁপছে ৷ আরিশ কিছু বলছে না দেখে আরু আবার অনেক কষ্টে বলল
” বলুন !”

আরিশ এবার মিথ্যা একটা হাসি হেসে হো হো করে উঠে বললো
” ধূর পাগলি এসব কি কথা হ্যাঁ ৷ তুমি সুস্থ হও তারপর বলবো তোমার কি হয়েছে ৷”

আরু একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলল
” বলুন ৷”

আরিশ এবার খানিকটা রুক্ষ কন্ঠে বলল
” নো মোর ওয়ার্ড আরুপাখি, তুমি অসুস্থ তোমার কথা বলা একেবারেই নিষেধ ৷”

আরু আরিশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো , আরুর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়াচ্ছে কিন্তু সহজে বোঝা যাবে না যে ও কাঁদছে তবে আরিশের চোখকে তা ফাঁকি দিলো না ৷ আরিশের মনের ভিতর একপ্রকার যুদ্ধ চলছে , মেয়েটা সত্যিই জেনে গেল !
আরুর চোখে জল দেখে আরিশের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, একহাত দিয়ে আরুর চোখটা মুছে দিয়ে বলল
” কাঁদছো কেন তুমি ? আমি কি বলেছি যে আরুপাখি আমার বেবি লাগবে নাহলে আমি তোমার সাথে থাকবো না ৷”
আরু কিছু বলল না, আরিশের দিকে চেয়ে আছে আর চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে আর আরিশ বারবার মুছে দিচ্ছে ৷
” কি বলিনি তো ? বলিনি আর বলবো ও না ৷ আর তুমি বেবি নেবে যে তোমার বেবি নেওয়ার বয়স হয়েছে বলো ? তুমি নিজেই তো বেবি , একটা বেবি কি আর একটা বেবিকে সামলাতে পারে তুমিই বলো ?”

আরু আরিশের দিকে তাকিয়েই আছে, কি বলবে বুঝছে না, মনের ভিতর তীব্র অনুশোচনা কাজ করছে যে মানুষটা ওর জন্য কখনও বেস্ট হ্যাপিনেসটা পাবে না ৷

আরিশ আবার বললো
” তোমাকে এখনো আমাকে সামলাতে হয়, কত দুষ্টুমি করো বলোতো ৷ তুমিই আমার লিটিল বেবি ৷ ”

আরিশের কথা শোনার পর আরুর আর বলার মতো কোন মুখ নেই ৷
আরু চোখ বন্ধ করে বললো
” পাগলেও নিজের ভালো টা বোঝে শুধু আপনি বোঝেন না ৷”

আরিশ মুচকি হেসে আরুর কপালে চুমু একে বলল
” নিজের ভালো টা বুঝতে গিয়ে যদি নিজের হ্যাপিনেসটাকেই হারিয়ে ফেলি তাহলে তেমন ভালো আমি চাইনা ৷”

আরু থেমে গেল , ওর ভাবা হয়ে গেছে যে ও কি করবে ৷ ওর জন্য ও আরিশের জীবন টা তো আর এভাবে নষ্ট হতে পারে না তাই ও ভেবে ফেলেছে সব ৷
আরু চোখ বন্ধ করতেই আরিশ সুর আওরিয়ে বললো

” আমি ছিলাম তোমার পাশে,
তোমার আকাশ ভালবেসে,
সে বিশালে খুঁজেছি একটুকু ঠাই,
তাও মেলেনি তা। ”

…..

8দিন পর আজ আরুর ছুটি হয়েছে, যদিও আরু এতোদিন থাকতে চাইনি কিন্তু আরিশের জন্য থাকতে হয়েছে প্রপার ট্রিটমেন্টের মধ্যে দিয়ে ৷ এই কদিনে আরিশের সাথে আরুর খুব একটা কথা হয়নি,,নাহলে এই দিনে একবার কি দুইবার ৷ আরিশ ও আর জোর করে কথা বলতে চাইনি কারন আরুর মন খারাপ ছিলো ৷হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো আরু , গাড়ি ড্রাইভ করছে আরিশ ৷ সবাই আরিশদের বাড়িতে অপেক্ষা করছে ৷ আরু আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ ৷ গাড়িতে উঠে সিটের সাথে মাথা এলিয়ে বসে আছে আরু , আরিশ ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে আরুর দিকে তাকাচ্ছে ৷ হঠাৎ গাড়িটা ব্যাক নিতেই আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল
” এদিকে যাচ্ছেন কেন? এদিকে তো আপনার বাসা, আমার বাসায় নিয়ে চলুন ৷”

আরিশ কোন কথা বললো না, চুপ করেই রইলো আরু বিরক্ত হয়ে পুনরায় বললো
” আপনি শুনতে পাননি কি বললাম ?”

আরিশ একটু রাগী কন্ঠে বলল
” এখন থেকে আমার বাসায় থাকবে তুমি ৷”

আরু রাগী চোখে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো ৷ কিছুখন পর আরিশদের বাড়িতে চলো এলো ওরা, বাসায় ঢুকে দেখলো সবাই সেখানে উপস্থিত আছে, আরুকে দেখে সবাই খুশি ৷ সানা সাবধানে আরুকে আরিশের ঘরে নিয়ে গেল ৷ আরু ভ্রু কুঁচকে বললো
” এখানে কেন? আমি তোর সাথে থাকবো ৷”

তখনই আরিশ রুমে ঢুকে বলল
” বিয়েটা কার সাথে করেছো? আমার সাথে নাকি সানার সাথে ?”
আরু চুপ করে গেল, কেন জানি না আরিশের সাথে কথা বলতে একদমই ইচ্ছা করছে না ওর , শুধু মনে হচ্ছে ওর জন্য আরিশের জীবনটা নষ্ট ৷হঠাৎ আরিশ বললো
” সানা একটু নীচে যা, গিয়ে দেখ গাড়িতে একটা বক্স আছে ওটা একটু আনবি ?”

সানা মাথা নাড়িয়ে বলল
” আচ্ছা আনছি ৷”

সানা বেরিয়ে যেতেই আরিশ হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল
” সমস্যা কি?”

আরু ভ্রু কুঁচকে বলল
” same question যদি আপনাকেও করি তাহলে আপনার Ans কি হবে?”

আরিশ ঘড়িটা রেখে বলল
” I have no problem……তোমার কি সমস্যা সেটা জানতে চেয়েছি not mine….”

আরু রেগে বলল
” বিয়ে করছেন না কেন আবার ?”

আরিশ আরুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল
” চলো তাহলে আবার বিয়ে করি ধুমধাম করে, সবাই জানবে যে আবরার আরিশ বিবাহিত ৷”

আরু রেগে বলল
” আমি আমার কথা বলিনি ৷”

আরিশ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল
” তো ?”

আরু এবার দৃঢ় কন্ঠে বলল
” আমি চাই আপনি আবার বিয়ে করুন, আপনার একটা নতুন সংসার হোক তখন আপনাদের ইনশাআল্লাহ বেবি হবে , একটা ভালো ফিউচার থাকবে ৷”
আরিশ শার্টটা বেডে ফেলে দিয়ে বলল
” আর তুমি ?”

আরু রেগেই বলল
” আমার আবার কি, আমি আমার মতো থাকবো আপনাদের জীবন থেকে সরে যাবো ৷ আমার সাথে থেকে আপনি কখনও সুখ পাবেন না ৷”

আরিশ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল
” I think i am too handsome তাইনা ? আমার পিছনে 8 কি 10 টা মেয়ে তো হামেশাই ঘুরবে তাইনা? চাইলেই 5 থেকে 10টা বিয়ে হবে তাইনা? চাইলেই 100টা বেবি পয়দা করা যাবে তাইনা…”

আরু বিরক্ত হয়ে বলল
” মজা করছেন?”

আরিশ আরুর দিকে ফিরে বলল
” নো নো নো আরুপাখি মজা করবো কেন আমি সিরিয়াস ৷”

কথাটা বলে আরুর হাত ধরে বলল
” চলো তুমি আমাকে শেখাবে যে কিভাবে সুখ পাওয়া যায়, আসো বেডে আসো , আজকে আমিও শিখবো ৷”

আরু ঝটকা মেরে আরিশের হাত ঝাড়া মেরে বলল
” ছাড়ুন , সুখ খুঁজতে গেলে বিয়ে করুন বললাম না আমার মাঝে কিছু নেই ৷”

আরিশ আরুর মুখ চেপে বলল
” তোমার মাঝে কি আছে কি নেই আমি জানতে চাইনা আর চাইনি ও কখনও , যেমন আছো তেমন থাকো, যেমন অছি ভালো আছি , আর সুখের দরকার
হলে তোমার মাঝেই খুঁজে নেবো তার জন্য আমার বিয়ে করার দরকার নেই ৷ তুমি ছিলে তুমি আছো আর থাকবে ৷ নো মোর ওয়ার্ডস ৷ আর কোন রকম এদিক বেদিক করলে আমি ভুলে যাবো যে তুমি অসুস্থ বুঝলে !”

কথাটা বলে আরুকে ছেড়ে দিলো ‌ ৷ আরু রাগে ফুসছে ৷হঠাৎ সানা রুমে ঢুকে বলল
” ভাইয়া এই নে ৷”

কথাটা বলে একটা বক্স আরাশের হাতে ধরিয়ে দিলো ৷ সানা বেরিয়ে গেল ৷ আরিশ আরুকে ইশারা করে বেডে বসতে বললো , আরু বসলো না ৷ আরিশ একটা ধমক দিতেই আরু ভয়ে বসে পড়লো ৷
হঠাৎ আরিশ হাটু গেড়ে মাটিতে বসে বক্সটা খুলে সেখান থেকে দুটো জুতো বার করে আরুর পায়ে পরিয়ে দিলো ৷ জুতো দুটোতেই টেডিবিয়ার বসানো ,আরু এগুলো অনেকদিন আগে অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার জন্য দেখেছিলো আরিশ তা লক্ষ করেছে , জুতোগুলো দেখে আরু খুশি হলো কিন্তু আরিশের ওপর রাগ ও লাগছে৷
আরিশ জুতো দুটো পরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো আর বললো
” শান্ত হয়ে বসবে আর বেডরুম অগোছালো দেখলে খবর আছে ৷”
কথাটা শুনে আরুর রাগ বাড়লো , রেগে হাতের পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাসটা ফেলে দিতেই ঝটঝট করে ভেঙে গেল ‌ ৷ ভিতর থেকে আরিশ বলে উঠলো
” পানিশমেন্ট ৷”

চলবে,,,,

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
#পর্ব:16
#Suraiya_Aayat

আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
” পানিশমেন্ট বললেই কি পানিশমেন্ট হয় নাকি অভদ্রটা, ওপস মিঃ অভদ্র ৷ হোয়াটএভার ৷ আপনার পানিশমেন্ট আপনার পকেটে রাখুন আমি চললাম ৷”

কথাটা বলে আরু বেরিয়ে যেতে গেলেই আরিশ বলল
” যেখানে যাবে যাও তবে বাসার বাইরে এক পা ও রাখলে বুঝে নাও কি হবে ৷”

আরু চোখ মুখ কুঁচকে আরিশকে কথা শোনাতে শোনাতে বেরিয়ে গেল ৷ শাওয়ার নিচ্ছে আরিশ,রাগ লাগছে খুব ,মেয়েটা এখন জেনে গেছে এবার তো কথায় কথায় আরিশকে মুক্তির কথা বলবে আর এর একটা পরমানেন্ট শলিউশন আরিশের বার করতে হবে তাই ভাবছে আরিশ ৷

আরু সিঁড়ি দিয়ে নামছে,নীচে দেখলো ওর মা আর অনিকা খান খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে ৷ অনিকা খানকে দেখে বললেন
” ফুপি তোমার ছেলেকে আবার বিয়ে দিচ্ছো না কেন বলোতো ৷ ”

আরুর কথা শুনে অনিকা খান আর আফসানা বেগম একে অপরের দিকে তাকালেন, অনিকা খান মুচকি হেসে বললেন
” আচ্ছা আরিশের আর কদিন পরেই তো ফাইনাল এক্সাম হবে তারপর ই তোর আর আরিশের আবার ধুমধাম করে বিয়ে দেবো ৷ সত্যিই তো তুই ঠিক বলেছিস তোদের বিয়ে হয়েছে তা তো কেউ জানেই না,এবার ধুমধাম করে বিয়েদিলে সবাই জেনে যাবে ৷”

কথাটা শুনে আরু গ্লাসে জল খেতে খেতে বলল
” আরে ধূর, ওনাকে আমি আবার বিয়ে করতে যাবো কেন! আমি তো তোমার অন্য নতুন বউমার কথা বলছি যে তোমার বাসায় ঘর আলো করে আসবে , তার একটা ছোট বেবি হবে তাছাড়া বড়ো কথা হলো তোমার অভদ্র ছেলেটাকে বাধ্য করার মতো কেউ আসবে ৷”

কথা শোনা মাত্রই আফসানা বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন , অনিকা খান রাগী কন্ঠে বললেন
” এরকম আজকে বলেছিস ঠিক আছে , আর কখনও বলবি না, আরিশের সামনে তো না ই না ৷ আর দেখ তোর মা ও কষ্ট পেলো, চলে গেল তোর কথা শুনে ৷ আর আরিশ তোকে অনেক ভালোবাসে তাই এসব কথা মুখেও আনবি না ৷”

আরু চোখ গরম করে উঠে চলে যেতে যেতে বলল
” ভালোবাসা না তো ছাই ৷”

কথাটা বলে পাশের ঘরে চলে গেল, গিয়ে দেখলো ওর আম্মু ফুঁপিয়ে কাঁদছে , আরুর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ওর মা কে কাঁদতে দেখে, তবুও নিজেকে সামলে বেশ হাসিমুখে ওনার সামনে গিয়ে বসলো ৷
বেশ মজা করেই বলল
” কি হলো আম্মু তুমি চলে এলে যে , জামাইয়ের আর একবার বিয়ে দেওয়ার কথা শুনে বুঝি লজ্জা পাচ্ছো ?”

আরুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলল
” কেন এরকম বলিস আরু, তুই তো জানিস যে আরিশ এসব বলা পছন্দ করে না তার পর ও তুই ৷”

ওনার কথাটা শুনে আরুর মুখের হাসির রেখাটা ছোট হয়ে এল ৷ বেশ কিছুখন নিরব থেকে বলে উঠলো
” আম্মু চোখ মোছ ৷”

উনি আগের মতোই কাঁদছেন , কান্না থামাচ্ছেন না দেখে আরু ওনার চোখ টা মুছে দিয়ে নরম সুরে বলল
” না বলে কি করবো আম্মু তুমি বলতে পারো ? আমার সাথে সংসার করে ওনার কোন লাভ আছে বলো?লাভ নেই, উনি অনেক ভালো একজন মানুষ , অনেক ট্যালেন্টেড আর অমি ওনার ধারে কাছেও না, তা জেনেও একেই ওনার গলায় ঝুলিয়েছেন আমাকে তার ওপর আমার বেবি হবে না, উনি কখনও সন্তান সুখ পাবেন না ৷ ওনার কোন ভবিষ্যৎ নেই ৷ আর আমার মনে হয় না উনি আমার সাথে ভালো থাকবেন ৷ তার থেকে ভালো নই কি যে উনি নতুন করে আবার বিয়ে করুক, ওনার নতুন সংসার হোক,ওনার ফুটফুটে একটা বেবি হবে আমি তাকে কোলে নিয়ে ঘুরবো সে আমার গালে তার ছোট ছোট হাত বোলাবে আর বলবে ” ফুপি “৷

কথাটা বলতেই আরু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, ওর চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে , আফসানা বেগম ও কেঁদে ফেললেন,একমাত্র আরুই জানে ওর নিজের কষ্টটা , কাওকে বলেও বোঝাতে পারবে না ৷
আফসানা বেগম আরুর চোখ মুছিয়ে বললেন
” আরিশ যখন সবটা মেনে নিয়েছে তখন তুই কেন মেনে নিতে পারবি না বলতো ! যা হওয়ার তা হয়ে ই গেছে, আর আরিশ তোকে অনেক ভালোবাসে ৷”

আরু রুক্ষ কন্ঠে বলল
” ওসব ভালোবাসা টালোবাসা কিছ্ছু না আম্মু এসব হলো ক্ষনিকের মোহ , কিছুদিন পর যখন আমার আর বেবি হবে না তখন আমাকে আর ওনার ভালো লাগবে না,আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে ৷ তখন আমার কি হবে বলতে পারো ? তার থেকে বরং আমি নিজেই আগে থেকে সরে আসলেই ভালো হবে ৷”

উনি ধমকে বললেন
” আরু , কি যা তা বলছিস ! আরিশ এমনটা তোর ধারনাতেও আসলো কিভাবে ৷ ছেলেটার ভালোবাসা বুঝিস না ?”

আরু উঠে দাঁড়ালো, রুক্ষ কন্ঠে বলল
” ভালোবেসে আর কি হবে আম্মু , সেই তো আমার কখনও বেবি হবে না ৷”

আরুর চোখ দিয়ে নোনাজল টুপিয়ে টুপিয়ে পড়লো, আরু দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, আফসানা বেগম কাঁদছেন ,মেয়ের এমন ছেলেমানুষি উনি কিছুতেই মানতে পারছেন না ৷
ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে যেতেই অনিকা খানকে বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করলো
“ফুপি আমাকে খেতে দাও ,ক্ষুদা লেগেছে অনেক, কতোদিন বাসার খাবার খাইনা, কি রান্না করেছো ?স্পেশাল কি ?”

আরুর এই দীর্ঘ প্রশ্নের উত্তর অতি দ্রুত উপেক্ষা করে অনিকা খান বললেন
” হ্যাঁ রে আরিশ এতো রেগে আছে কেন রে? এভাবে কিছু না বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো যে ৷ তোর কাছেই তো যাচ্ছিল , তুই কি কিছু বলেছিস যে রেগে গেছে ?”

আরুর এক মিনিট ও সময় লাগলো না ব্যাপারটা বুঝতে যে আরিশের রেগে যাওয়ার কারন কি, ঠিক আরিশ আরুর কথা শুনতে পেয়েছে তাই রেগে বেরিয়ে গেছে ৷ আর এই রাগ যে এতো সহজে কমবে না তা আরু ভালোই জানে ৷ আরু বুঝতে পেরে বললো
” না ফুপি কোন কথা হয়নি তো ৷”

অনিকা খান আরুর খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন
” তাহলে কি হলো আল্লাহ মালুম , ওর যা রাগ ‌৷”

আরু হঠাৎ করে উঠে গেল টেবিল থেকে, উঠে গিয়ে বলল
” ফুপি আমি ঘরে যাচ্ছি,তুমি আমার খাবার বেড়ো না,” কথাটাবলে আরু চলে গেল আর কোন কথা না বলে ৷ দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠলো , পা পিছলে পড়লেই বিপদ তা বোঝে না আরু ৷ রুমে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলো ও ৷ কান্না পাচ্ছে ভীষন,আরিশকে ভীষন রকম বকতে ইচ্ছা করছে ৷মানুষটা এমন কেন? এমন একটা মেয়ের সাথে কেন সারজীবন কাটাতে চাচ্ছে , কেন এত মহান হতে যাচ্ছে?
কথাগুলো জোর গলায় বলে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো আরু ৷ নিজের থেকেও আরিশের জন্য বেশি কষ্ট লাগছে ৷

একটা সময় শক্ত থাকার পর আরুও কেঁদে ফেললো ৷

____

” একটা ডিভোর্স পেপার বানাতে পারবেন আজকের মধ্যে ?”
আরিশের এমন কথা শুনে উকিল চমকে গিয়ে বলল
” এটা কি বলছো তুমি, একদিনের মধ্যে কিভাবে ডিভোর্স পেপার বানাবো ? তাছাড়া ডিভোর্স কি অতোই সহজ বিষয় নাকি যে একদিনের মধ্যে বানানো যাবে ৷”

আরিশ কাচের টেবিলের ওপর আঘাত করে বলল
“যে করেই হোক আমার চাই , চাই মানে চাই, যতো টাকা লাগে আমি দেবো ৷”

উনি একটু হতবাক হয়ে গেলেন ‌,বেশ ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে উঠলেন
” আচ্ছা আরিশ তুমি কি বিয়ে করেছো?”

কথাটা শোনার সাথে সাথে আরিশ ওনার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো, আরিশের চাহনি দেখে উনি আমতা আমতা করে বললেন
” নাহ মানে তুমি বিয়ে করলে তোমার বাবা নিশ্চয়ই আমাকে বলতো তাই আর কি , তেমন তো কিছুই বলেনি তাই ভাবলাম আরকি ৷”

আরিশ আগের মতো করেই বলল
” হমম করেছি, প্রায় 10 দিন হলো ৷”

উনি আরও খানিকটা ভয় নিয়ে বললেন
” 10 দিন বিয়ে হতে না হতেই ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছো বাবা ?”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
“ডিভোর্স কেন দেয় আঙ্কেল আপনি জানেন ?”

উনি খানিকটা থতমত খেয়ে বললেন
” কেন!”

আরিশ হৈ হৈ করে হেসে বলল
” আবার বিয়ে করার জন্য , সিম্পল ‌৷”

উনি বেশ ঘাবড়ে গেলেন এমন উত্তর শুনে ৷ মনে সংকোচ রেখে বললেন
” তুমি কি আবার বিয়ে করবে?”

” জ্বি, আর কদিন পর আমার ফাইনাল এক্সাম তারপর আমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে আবার তাকেই বিয়ে করবো , বউটা বড্ড ঘাড় ত্যাড়া,সহজে বোঝে না সবকিছু ৷”

উনি আরিশের কথার আগা মাথা না বুঝে বললেন
” আচ্ছা বাবা ৷”

” আপনাকেও দাওয়াত দিবো আঙ্কেল , আসবেন ৷”

উনি মুচকি হেসে বললেন
” আচ্ছা ৷”

আরিশ উঠে যেতে যেতে বলল
” 7 দিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপারটা রেডি করবেন আর একটা চুক্তিপত্র তৈরি করবেন যেখানে লেখা থাকবে বিনতে আরুশি রহমান আবরার আরিশ খান ছাড়া আর কারোর সাথে কোন রকম বৈবাহিক সম্পর্ক রাখতে পারবে না বেঁচে থাকা অবস্থায় কখনো বিচ্ছিন্ন ও হতে পারবেনা ৷ বুঝেছেন? বিয়ের কিছুখন আগে ডিভোর্স দিয়ে তারপর আবার বিয়ে করবো ৷ যা বললাম রেডি রাখবেন আঙ্কেল ৷ যত টাকা লাগে আমি দেবো ৷”
কথাটা বলে আরিশ বেরিয়ে গেল ,উনি যেন বোকা বনে গেলেন , আবুলের মতো করে বললেন
” আজকাল কার পোলাপাইন দের ও মতিগতি বুঝিনা , বিয়েটাকে ছেলেখেলা মনে করে এরা ৷ উফফ ৷”

সানগ্লাসটা বার করে চোখে পরে নিলো আরিশ , গাড়ি স্টার্ট দিতেই ফোনের ওয়ালপেপারে তাকালো, আরুর একটা ছবি দেওয়া আছে যা আরু জানেন না, আসলে আরু কখনও আরিশের ফোনের লক খুলতে পারেনি তো ফোনে কি আছে তা দেখা দূরকি বাত যদিও আরু অনেকবার চেষ্টা করেছে লক খেলার কিন্তু পারেনি ৷ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
” আমি তোমার ইচ্ছা পূরন না করলে কে করবে বলোতো আরুপাখি, আল্লাহ আমাকে এই অধিকার টুকু আমকে দিয়েছেন ৷ জীবনে একবার হলেও তোমার ডিভোর্স পাওয়ার ইচ্ছাটা আমি পূরন করেই ছড়বো আর তোমাকে নিজের করে রাখার পারমানেন্ট বন্দোবস্ত ও করবো ৷ মাইন্ড ইট আরুপাখি ৷”

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here