কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
পর্ব:17,18
Suraiya_Aayat
পর্ব:17
বাসায় ফিরে গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো আরূ ঘুমিয়ে আছে, হাতটা পেটের ওপর রাখা তা দেখে আরিশের ভ্রু কুঁচকে এলো তাহলে কি মেয়েটা পেটে যন্ত্রনা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে ! আরুর ওপর কিছুখন আগের রাগটা এতখন কার্যকর ছিলো বেশ কিন্তু এখন তা অনেকটাই ক্ষীন হয়ে এসেছে , ঘুম থেকে ডাকবে কি ভাবছে ৷
আর বেশি কিছু না ভেবে আরিশ ডাকলো
” আরুপাখি ! আরুপাখি ওঠো ৷”
আজ আর কোনরকম কোন দেরি হলো না এক ডাকেই হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লো আরু , ঘুমন্ত চোখে পিটপিট করে আরিশের দিকে তাকালো আর আরিশ ও একটু অবাক হলো বেশ কারন এক ডাকে আরুকে ওঠানো পসিবল না ৷ আরু খানিকখন ভ্যাবলার মতো আরিশের দিকে চেয়ে রইলো ,চোখমুখের অবস্থা করুন , কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়েছে তার ওপর কিছু খাইনি তাই মুখটা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে ৷ আরিশ মুখের দিকে চেয়ে আন্দাজ করতে পারলো বেশ তাই আরুর ঘুমের রেশটা কাটাতে আর না খাওয়ার জন্য হালকা সুরে ধমক দিয়ে বলল
” এই মেয়ে খাওনি কেন ?”
আরু একটু কেঁপে উঠলো, ঘুম থেকে না উঠলে বোধহয় ওউ আরিশকে একটু কড়া কন্ঠে বকে দিতো কিন্তু খালি পেটে আর ঘুমঘুম ভাব নিয়ে আর যাই হোক মাতঙ্গিনী হাজরার মতো যুদ্ধ তো করা যাইনা তাই আরু খানিকটা কেঁপে উঠলো ৷
আরিশ এবার একটু কড়া কন্ঠে বলল
” খাওনি কেন কিছু ?”
আরু খানিকটা ড্যাব ড্য৷ব করে আরিশের দিকে চেয়ে বলল
” ক্ষুদা নাই আমার ৷”
আরিশ আবার ধমকে বলল
” থাপ্পড় চেনো? ক্ষিদে নেই,তাহলে থাপ্পড় খেয়ে পেট ভরাও ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই আরু বলে উঠলো
” আমাকে ধমক দিচ্ছেন যে , আপনিও তো কিছু না খেয়ে বেরিয়ে গেছিলেন আমি কি আপনাকে ধমকেছি একবার ও ৷”
আরিশ আর পিছন ঘুরলো না, মুখের হাসিটা প্রশস্থ করে বেরিয়ে গেল যা আরুর চোখকে ফাঁকি দিলো ৷ আরু মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো , বিছানা থেকে নামলো ও আর আয়নার সামনে গেল কারন মনে পড়ে গেছে যে ও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো আর কাঁদলে ওর মুখটা আরও বেশি গোলুগোলু দেখায় , নিজের দুই গালে হাত রেখে ঠোঁট ফোলালো আরু , সত্তিই দেখতে গোলুগোলু লাগছে, কতো চেষ্টা করেছে ডায়েট করার তবুও রোগা হয়নি শুধু আরিশের জন্য কারন আরিশ বারবার ওর ডায়েট চার্ট টা ভেঙে দেয় কারন আরিশ নাকি এমন আরুকেই পছন্দ করে ৷
আরিশের পায়ের শব্দ শুনে ফোঁলানো ঠোঁটটা ছেড়ে দিলো ,আরিশ হাতে প্লেট নিয়ে ঢুকছে ,আরুকে আয়নার সামনে দেখে বলল
” যেমন আছো তেমনই থাকো,রোগা হওয়ার কথা ভেবে লাভ নেই ,ওয়েট 50 কেজি আছে তার থেকে যেন না বাড়ে আবার তার থেকে যেন না কমে ,তোমার হাইট অনুযায়ী পারফেক্ট ,এখন তাড়াতাড়ি বসো ৷”
আরু বসে গেল , আরিশ খাবার মাখছে দেখে মনে হচ্ছে একজনের খাবার তা দেখে আরু প্রশ্ন করলো
“নিজের খাবার টা নিয়ে এলেন আর আমার টা আনলেন না বাহ !”
আরিশ এক লোকমা ভাত আরুর মুখের সামনে ধরে বলল
” থাপ্পড় না খেতে চাইলে হা করো জলদি , I am hungry….”
আরু মুখ নাড়তে নাড়তে বলল
” আপনিও খান ৷”
আরিশ ভাত মাখতে মাখতে বলল
” আমি বেবিদের খাবার খাইনা ৷”
কথাটা ফলে ফিক করে হেসে ফেলল, আরু গাল ফুলিয়ে রইলো , আরিশ ওকে বেবিদের মতো করে ট্রিট করে যা আরুর ভালো লাগে না ৷
আরিশ আরুর গালে লেগে থাকা ভাতটা মুছে বলল
” জলদি মুখ নাড়ো, কারন তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে ৷”
আরু ও চালাকি করে বলল
” বেবিরা বড়োদেরকে খাইয়ে দিতে পারে না সেটা জানেন না ৷”
আরিশ আরুর দিকে একপলক তাকিয়ে বলল
” বাহ ! আমার জালে আমাকেই ফাসানো ! যাইহোক আমি তো তাহলে বেবিকে আদর করতেই পারি তাইনা !”
আরু রেগে চোখ মুখ কুচকে বলল
” নাহ !”
আরিশ আরুর দিকে ভাত এগিয়ে দিয়ে বলল
” হা করো আর no more words…”
আরু আরিশের দিকে বাকা চোখে তাকালো ৷
___
” আপনার আজ ডিউটি আছে ?’
বিছানায় পা ঝুলিয়ে পা নাড়াতে নাড়াতে আরু প্রশ্ন করে উঠলো ৷
আরিশ শার্টের বোতাম লাগাতে লগাতে বলল
” হমম ৷ নাইট ডিউটি ৷”
আরু খুশি হয়ে বলল
” ওহহ তারমানে সকালে ফিরবেন নিশ্চয়ই ?”
আরিশ শার্টটা ঠিক করে বলল
” নাহ, আর এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই , 3.30 টের দিকে চলে আসবো ৷”
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
” আপানার মতো ডাক্তারদের জন্য দেশের পেশেন্ট গুলোর ভবিষ্যত অন্ধকার ৷”
আরিশ হাত ঘড়িটা পরতে পরতে বলল
” ওহহ আচ্ছা, তাই নাকি মিসেস আরিশ খান !”
আরু উঠে বলল
” তা নয়তো কি , নাইট ডিউটি মানে পুরো রাত ডিউটি আর আপনি কাজে ফাঁকি দিয়ে চলে আসবেন মাঝ রাতে ?”
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল
” আজ আমার ডিউটি নেই তবুও যাচ্ছি কারন আজকে নাবিলা র ডিউটি ছিলো ও একটু সিক তাই আমি যাচ্ছি ৷”
আরু আরিশের মাথার চুলটা হূঠ করে টেনে দিয়ে বলল
” নাবিলা আপু কিন্তু দেখতে জোশ আপনার সাথে মানাবে আপনি ওনাকে বিয়ে করে নিলেই তো হয় ৷”
আরিশ রাগী কন্ঠে বলল
” থাপ্পড় খাবে? ইচ্ছে জাগছে ?”
আরু দাঁত বার করে হিহি করে হেসে আরিশের পিঠে গুড়ুম করে একটা কিল মেরে বলল
” আপাতত আপনাকে একটু পিটাতে ইচ্ছা করছে ৷”
আরিশকে একটা কিল মেরে আরু ছুটলো , আরিশ রেগে বলল
” আরুপাখি দৗড়াতে কে বলেছে তোমাকে , পানিশমেন্ট পাবে তুমি ডাবল বাসায় ফিরি ৷”
আরু আর শোনে কার কথা , ও ছুট ৷ রেডি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামলো ,নীচে সবার মাঝে আরু শান্তশিষ্ঠ বাচ্চা হয়ে বসে আছে দেখে একদমই মনে হবে না যে একটু আগে আরিশকে একটা সাংঘাতিক কিল মেরে এসেছে ৷ আরিশ আরুর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল
” আম্মু আসছি আর আরুপাখিকে একটু চোখে চোখে রেখো ,কোনরকম বাদরামি করলে আমাকে খবর দিও ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
” মিঃ অভদ্র ৷”
আরিশ বেরিয়ে গেল ৷ আরিশ বেরিয়ে যেতেই সানা একটু দরজার বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো যে আরিশ আছে কি না তারপর যখন দেখলো যে আরিশ চলে গেছে সানা কোনরকম দৌড়ে এলো আরুর কাছে
” জানু মেডিকেল এর এক্সাম এর ডেট দিয়েছে , আর এবার সিট সংখ্যা 100 টা কমে গেছে ৷”
আরু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” তো ?”
সানা রেগে বলল
” এতোটা ইজি না, এতোদিন ধরে প্রিপারেশান নিলাম আর এই কদিন তো কিছুই পড়া হয়নি যদি চান্স না হয় ৷”
আরু নিউজ পেপার নিয়ে গাট্টা মেরে বলল
” ইউ নিড এ জিনিয়াস টিচার জানু লাইক মিঃ অভদ্র, আমি 2 সপ্তাহ কি পড়েছি তা ভুলে গেছি আর এই কদিন তো পড়াই হয়নি তবে চান্স না পেলে খবর খারাপ এটুকু জানি ৷ তবে একটা কাজ করবি ?”
সানা কৌতুহল নিয়ে বলল
” চান্স পাবো ইনশাআল্লাহ তবে রেজাল্টটা একটু খারাপ করিস তাহলে দূরের কোন মেডিক্যাল এ পাবো তখন দুজনে হোস্টেল থাকবো তখন আর মিঃ অভদ্র কোন প্যারা থাকবে না ৷”
সানা মুখ ভাঙচি মেরে বলল
” হাহ এতোই সোজা ! তুই কি ভাবলি ভাইয়া তোকে দূরে কোথাও যেতে দেবে ? রেজাল্ট খারাপ হলে বেসরকারিতে ভর্তি করিয়ে দেবে তাও তোকে আর আমাকে কোথাও যেতে দেবে না ৷”
আরু রেগে বলল
” হু হু , টাকা বেশি হয়ে গেছে তো ওনার ৷ ধূর !”
কথাটা বলে বিরক্তি প্রকাশ করলো ৷ আরুর কাছে সরে বসে বলল
” দোস্ত যদি ঢাকার মধ্যে চান্স না পায় তাহলে তো ভাইয়া খেয়ে ফেলবে ৷”
আরু বাকা চোখে তাকিয়ে বলল
” পরেরটা পরে আপতত আয় একটা কাজ করি….”
সানা অবাক হয়ে বলল
” কি ?”
আরু এক্সাআটেড হয়ে বলল
” মিঃ অভদ্রর জন্য মেয়ে খুঁজি ৷ ওনার আবার বিয়ে দিবো আমি ৷”
সানা রেগে বলল
” আরুউউউউউ ৷”
আরু মুখ ভাঙচিয়ে বলল
” বিয়ে আমি দিয়েই ছাড়বো হু , আর আমি ডিভোর্সের জন্য অলরেডি আপিল করেছি কাল পরশুর মধ্যে চলে আসবে হু ৷”
কথাটা বলে সোফা ছেড়ে উঠতে গেলেই সানা রেগে বলল
” নিজের বিপদ কিন্তু নিজেই ডেকে আনছিস ,,বাসায় যদি ডিভোর্স পেপার ঢোকে ভাইয়া সব তছনছ করে দেবে ৷”আরু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল
” তা হোক , পরে তো উনি সন্তান সুখ পাবে এটাই এনাফ ৷”
কথাটা বলে চলে গেল আরু ৷
সানা মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো, মেয়েটার খবর আছে যদি আরিশ জানে ৷
_____
“তুমি কি বিজি আছো?”
” জ্বি আঙ্কেল না বলুন কি বলবেন? ডিভোর্স পেপার রেডি হতে কতোদিন লাগবে?”
উকিল একটু ভাবুক সুরে বললেন
” একটা কথা তোমাকে জানানো প্রয়োজন আরিশ ৷”
” জ্বি বলুন ৷”
” ইসলিমিক শরীয়ত মতে কোন স্বামী স্ত্রী তারা ডিভোর্স নেওয়ার পর তারা পুনরায় আর বিয়ে করতে পারে না যতখন না তারা আর একবার অন্য কোথাও বিয়ে করছে ৷ আই মিন তুমি ডিভোর্স নিলে তোমাকে অন্য আর একজনকে বিয়ে করে আর বৌমাকেও আবার বিয়ে করে ডিভোর্স দিয়ে তারপর তোমাকে বিয়ে করতে পারবে ৷”
কথাটা শুনে আরিশ 2 মিনিট ও সময় নিলো না ভাবতে , বলে উঠলো
” ওকে আঙ্কেল ডিভোর্সটা ক্যান্সেল করেন আর একটা মে এগ্রিমেন্ট দিয়েছিলাম ওটা করেন ৷”
উনি হাসি মুখে বললেন
” আচ্ছা ৷ আর বলোনা এখন ডিভোর্স এর পরিমান এতো বাড়ছে যে কি বলবো , এই কিছুদিন আগে ,সম্ভবত 3 দিন আগে এটা মেয়ে ফোন করে বলল যে ডিভোর্স পেপার বানাতে, কারন জিজ্ঞাসা করলে বলল ” তার হাজবেন্ডের আবার বিয়ে দেবে তাই ৷”
আরিশ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো
” নাম কি তার?”
” নামটা মনে নেই আপতত ,পরে মনে পড়লে বলবো ৷”
আরিশ আর কথা বাড়ালো না, কলটা কেটে দিলো ৷ কল কাটতেই নার্স বলল
” sir মহিব sir আপনাকে 16 নং রুমে ডাকছেন ৷”
আরিশ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল
” আসছি ৷”
চলবে,,
#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি
#পর্ব:18
#Suraiya_Aayat
আইডির নামটা কি দেখি তো আর একবার , ছবিটা জোশ আছে ৷ নামটা হলো
” Papia Akter ” যাহ,,নামের সাথে মুখের মিল নেই,, দেখতে যতোটা কিউট নামটা ততোটাও না কিন্তু ট্যালেন্টেড তো , মি অভদ্রর জন্য পারফেক্ট ৷ কোন মেডিকেলে পড়ে দেখি তো ৷
” স্যার সালিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ৷” সমস্যা নাই বর বউয়ের কলেজের মাঝে একটু দূরত্ব না থাকলেও মানায় না ৷ মি ঃ অভদ্রর ঢাকা মেডিক্যাল আর তার বউ স্যার সালিমুল্লাহ মেডিক্যাল ,ওয়াও পারফেক্ট ৷ দেখে তো মনে হয়না তে রিলেশানশিপে আছে তাহলে তো বিয়ে ফাইনাল করা যাই, আমার মি অভদ্র কি কম হ্যান্ডসাম নাকি ? হি ইজ মিস্টার পারফেক্ট বাট আই এম আনপারফেক্ট ফর হিম ৷”
কথাটা বলতে বলতে গলাটা ধরে এলো আরুর , নিজের স্বামীর বিয়ের জন্য নিজেই মেয়ে খুঁজছে ফেসবুকে , আর আরিশ যদি এই কথাটা একবার জানতে পারে তাহলে ওর যে কি হবে তা ও জানে না ৷
আরু বিড়বিড় করতে লাগলো
” আপুটার বাসা গুলশান তারমানে আপুর সাথে একদিন দেখা করতে হবে তারপর কথা বাত্রা ফাইনাল করতে হবে ৷”
কথাটা বলতে না বলতেই ফোনের টুঁংটাং নোটিফিকেশনে চমকে উঠলো আরু ,আরিশ sms করেছে
” tumi ghumaoni Aru pakhi? Jage acho kano akhono?”
Sms টা দেখামাত্রই আরু নেটটা অফ করে ভয়ে হাত থেকে ফোনটা ফেলে দিলো যেন এক্ষুনি আরিশ ফোনের ভিতর থেকে হাত বাড়িয়ে ওর গালে একটা থাপ্পড় দেবে ৷
ঘড়ির দিকে তাকালো আরু, রাত 2.30 টা বাজে , আরিশের জন্য মেয়ে খুঁজতে গিয়ে প্রচুর মেয়ের আইডি ঘাটাঘাটি করেছে তাই এতো রাত হয়ে গেল ৷ ফোনটা রেখে দিয়ে আরু তাড়াতাড়ি ওড়নাটা হাতে নিয়ে ছুটলো আরিশের মায়ের রুমের দিকে , আরিশ একটু পরে বাসায় ফিরে যে কি করবে তার নেই ঠিক সেই ভয়ে ৷ আরেকটু হলে প্লাজোটা পায়ে আটকে ধাম করে পড়তো তবুও সামলে নিলো ৷ আরু অনিকা খানের রুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো
” ফুপি, ও ফুপি…..”
হঠাৎ এতো রাতে আরুর গলা পেয়ে উনি ধড়ফড়িয়ে উঠলেন , আফজাল খানের ও ঘুম ভেঙে গেল উনিও ঘুমের ঘোরে বললেন
” আরু মায়ের গলা না ? ডাকছে দেখো তো কি হলো ৷”
উনি তাড়াতাড়ি করে উঠে দরজা খুলতেই দেখলো আরু ভয়ে ভয়ে পিছনের দিকে তাকাচ্ছে তা দেখে উনি বললেন
” কি হয়েছে রে আরু মা এতো রাতে ছুটে এলি যে ৷”
আরু ওনাকে জড়িয়ে ধরে মিথ্যে মিথ্যে বলল
” আমি ঘুমাচ্ছিলাম আর একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছি আর মি অভদ্র ও তো বাসাতে নেই ভয় লাগছে , আমি তোমার কাছে ঘুমাবো ফুপি ৷”
তখন আফজাল খান বললেন
” ও ভয় পাচ্ছে অনিকা তুমি বরং ওর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো আর একটু পর তো আরিশ ফিরবে আর তখন খুঁজে না পেলে আবার চিন্তা করবে ৷”
আরু ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলল
” না আমি এখানেই ঘুমাবো তোমাদের সাথে ,আমি কোথাও যাবো না ৷”
কথাটা বলে আরু রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লো, অনিকা খান ও দরজা দিয়ে আরুর পাশে শুতেই আরু ওনাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো ৷ আরু ওনাকে জড়িয়ে বলল
” ফুপি আমাকে গল্প শোনাও তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে ৷”
উনি আরুর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন
” গল্প না সত্যি কথায় বলি , আরিশ তোকে অনেক ভালোবাসে, তোকে ও বিয়ে করবে আমরা তো কখনও ভাবিই নি কিন্তু আরিশ যে নিজের মনে মনে তোকে বিয়ে করবে বলে ঠিক করে রেখেছে কবে থেকে জানতাম ই না ৷ ”
আরু ওনার কথার মাঝে বলে উঠলো
” এই জন্যই তো ওনাকে মি অভদ্র বলি , যেচে মহান হওয়া যেন ওনার স্বাভাব হয়ে গেছে নাহলে কি আর আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করে ৷”
উনি ধমকে বললেন
” আরু আবার!”
আরু ওনাকে আরও খানিকটা জড়িয়ে ধরে বলল
” থাক থাক হয়েছে হয়েছে , বললাম কি আর করলে কি ! বললাম যে গল্প শোনাতে আর তুমি এখানে নিজের ছেলের গুনগান করছে বসলে , থাক তোমাকে আর গল্প বলতে হবে না আমার এমনিই ঘুম চলে আসবে ৷”
অনিকা খান হেসে উঠলেন আর মৃদু কন্ঠে বললেন
” কিছু কিছু জিনিস কঠিন হয় চাইলেও অস্বীকার করা যায় না তেমনি আরিশ ও ৷”
আরু চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করছে কিন্তু কানে যাচ্ছে সব কথায়, মানুষটা এতো ভালোবাসে কেন ওকে?
কথাটা ভাবতে ভাবছে ঘুমিয়ে গেল আরু ৷
3.45বাজে, 15 মিনিট লেট হয়ে গেছে ফিরতে, 15 মিনিটে একটা পেশেন্ট দেখছিলো আরিশ নাহলে সবসময় টাইম মেইনটেইন করে চলে ৷ সিঁড়ি বেয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো রুমের দরজা ফাঁকা ৷ ঘরের লাইট দিতেই দেখলো ঘর ফাঁকা আরু নেই , ফোনটা বেডের ওপর ই রয়েছে ৷ আরিশের বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে , আরুর ফোন থেকেই সানার ফোনে কল দিলো আরিশ , এতো রাতে কল আসায় সানা বিরক্ত হয়ে বলল
” কি হয়েছে আরু এতো রাতে কল দিলি !”
সানার এমন কথা শুনে বুঝলো যে সানার সাথে আরু নেই, আরিশ কল কেটে দিলো আর শার্টটা খুলে রেখে দিলো , প্রথমে ভাবলো যে ওর আম্মুর রুমে গিয়ে ডাকবে কিন্তু এতো রাতে ওর মায়ের ঘরে গিয়ে ডাকাটাও বেমানান তাই আরিশ আর গেল না, চুপচাপ শুয়ে পড়লো ৷ রাগ লাগছে আরুর ওপর ৷ আরুর ফোনটা অন করলো আরিশ , লক দিয়ে রেখেছে আবার পাসওয়ার্ড ও চেষ্জ করেছে , ফোনটা রেখে শুয়ে পড়লো , রাতের হিসাবটা দিনে মেটাবে ৷
………..
সকাল সকাল ঘুমের ঘোরে টলতে টলতে আরু নিজের রুমে এলো এসে দেখলো আরিশ শুয়ে আছে , আরুর এখনও ঘুমের ঘোর কাটেনি তাই ওউ আর কোন কথা না বাড়িয়ে আরিশের পাশে শুয়ে পড়লো ৷ আরিশ জেগে আছে কিন্তু আরু বুঝতে পারেনি ৷ আরু ও গিয়ে আরিশের পাশে চিটপটাং হয়ে শুয়ে পড়তেই আরিশ আরুর হাত ধরে হিচড়ে কাছে টেনে আনতেই আরু ঘুমের ঘোরে বলল
” কি হলো আপনার আবার ?”
আরিশ আরুকে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল
” কালকে রাতে আম্মুর ঘরে গেলে কেন তুমি ? আর অতো রাত অবধি জেগে কি করছিলে বলো ?”
আরুর ঘুমের ঘোর টা কেটে গেল,
আরু এবার ঘাবড়ে গিয়ে বলল
” আমার ভয় লাগছিলো তাই গিয়েছিলাম ৷ আর আমি নেট অন করেই ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই আপনি অনলাইনে পেয়েছেন আমাকে ৷”
আরিশ আরুর দিকে ঝুকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে যা আরিশের চোখ মুখ দেখেই সহজে বোঝা যাচ্ছে ৷ আরু শুকনো ঢোক গিলে বলল
” এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? আমি সত্যিই বলছি ৷”
আরিশ আরুর গলা থেকে ওড়নাটা ফেলে দিলো, আরু অবাক হলো আর চমকেও গেলো ৷আরিশ আরুর কাধ থেকে টপটা খানিকটা সরিয়ে দিয়ে কামড়ে দিলো জোরে ৷ আরু আহহ করে চেঁচিয়ে উঠলেও আরিশ ছাড়লো না , আরিশ সরে আসতেই দেখলো আরুর চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে তা দেখে আরিশ বিছানা থেকে নেমে গেল আবার কিছু একটা ভেবে আরুর শরীরের ওপর হালকা ভর রেখে আরুর কাধে কামড়ে দেওয়া অংশটাতে ঠোঁট বোলাতেই আরু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল
” থাক থাক , সারাদিন খালি কামড়া কামড়ি করেন, আমি ব্যাথা পাই না বুঝি ! ”
” পানিশমেন্ট ৷”
আরিশ মুচকি হেসে আরুর গলায় হালকা কাঁপা কাঁপা ঠোঁট ছোয়াতেই আরু আরিশের শার্টটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আরিশের ঠোঁটের স্পর্শ বাড়ছে আর ততই বাড়ছে আরুর উন্মাদনা ৷ আরিশ আগের অবস্থান থেকেই বলল
” আগে পুরোপুরি সুস্থ হও তারপর না হয় সব ব্যাথা একসাথে দেবো তখন অভিযোগ জানিও ৷”
আরু কিছু বলল না, আরিশের কথার মানে ওর কাছে একদম স্পষ্ট , মানুষটার মুখের এমন লাগামছাড়া কথাগুলোর কারনেই আরুর মনে হয় যে সে একজন অভদ্র প্রেমিক যে কোনকিছুর ই পরোয়া করে না ৷ আরিশ আরুর ওপর থেকে সরলো না আর আরু ও আরিশকে সরিয়ে দিচ্ছে না যদি রাগ করে !আরিশ একেই কালকে রাতে অনেক রাগিয়ে দিয়েছে তার ফলাফল হিসাবে ফ্রি তে একটা কামড় ও জুটেছে কপালে ৷ কথাটা ভেবে আরু ও আরিশকে খানিকটা কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো , বেশ কিছু খন পর আরিশ বলল
” এতো কাছে টেনে নিচ্ছো কেন আরুপাখি ? দূরে সরিয়ে দাও নাহলে যা হবে এই মুহূর্তে সহ্য করতে পারবে না ৷”
কথাটা শোনামাত্রই আরুর হাতের বাধন আলগা হয়ে এল, ও উ সবকিছুর জন্য প্রস্তুত না তাই বেশি কাছে না টানায় শ্রেয় ৷
আরিশ সরে আসতেই আরু পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো , আরিশ কিছু বলল না , আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকখন , মেয়েটা তার কাছে একটা তীব্র আসক্তি যার নেশাতে আরিশ আসক্ত ৷
_____
” আরু একটু নীচে আয়তো আম্মু,,তোর মা ফোন করেছে তাড়াতাড়ি আয় ৷”
আরু বসে বসে পপকর্ণ খাচ্ছিলো আর ফোন দেখছিলো তখনই নীচে থেকে অনিকা খান ডেকে উঠলেন ৷ আরিশ ল্যাপটপ এর দিকে তাকিয়ে বলল
” তাড়াতাড়ি যাও আর তাড়াতাড়ি আসবে , 5 মিনিটের মধ্যে ব্যাক করবে ৷ আমি কাজটা কমপ্লিট করে পড়াবো তোমাকে আর আসার সময় সানাকেও ডেকে আনবে ৷”
আরু পপকর্নটা আরিশের ল্যাপটপের ওপর রেখে চলে গেল, আরিশ রাগী চোখে তাকালে আরু জিভ ভাঙচি দিলো ৷ আরু দৌড়াতে দৌড়াতে নিচে গেল আর এদিক থেকে আরিশের হুংকারের সহিত ধমক এলো
” ঠিক করে হাটো নাহলে থাপ্পড় দিবো ৷”
আরু লাফাতে লাফাতে নীচে গেল , খপ করে অনিকা খানের হাত থেকে ফোন নিয়ে বলল
” হ্যাঁ আম্মু বলো ৷”
আফসানা বেগম বললেন
” বলছিলাম কি তোকে তো বলায় হয়নি যে তোর নানাভাই আর মধু বাসায় চলে গেছে আর যাওয়ার আগে তোর সাথে দেখা করতে পারেনি , একপ্রকার অভিমান নিয়েই তোর নানাভাই চলে গেছে ৷ মধু যেতে চাইনি তবুও যেতে হয়েছে ৷”
আরু হাতের মুঠোতে থাকা পপকর্ন গালে দিয়ে বলল
” ওহহ , তা এখন কি অবস্থা আর এতো রাগ অভিমান কিসের আর কার প্রতি ?”
” তোর অপারেশনের দিন তোর নানাভাই আরিশকে যা নয় তাই বলছিলো তাই তোর বাবা রেগে গিয়ে দু চার কথা বলেছিলো সেই কারনেই অভিমান ৷”
আরু পপকর্ণ চিবোতে চিবোতে বলল
” এতো কারনে অকারনে অভিমান করলে চলে? তা এখন কি করার ?”
” তুই আর আরিশ গিয়ে একটু ঘুরে আয় তাহলে যদি ওনার রাগটা কমে ৷”
” উনি তো আরিশ ভাইয়াকে পছন্দ করেননা তাহলে যদি আরও রেগে যায় ৷”
পাশ থেকে অনিকা খান ধমক দিয়ে বলল
” আরিশ ভাইয়া কি রে ? ও কি এখনো তোর ভাইয়া ?”
আরু কথাটা শুনে জিভ কেটে এক আলিফ টেনে বলল
” আআআআ রিশ ৷”
ফোনের ওপাশ থেকে আফসানা বেগম মুচকি হেসে ফেললেন ৷ অনিকা খান হাসতে হাসতে কিচেনে গেলেন ৷
আফসানা বেগম হাসি থামিয়ে বললেন
” শোন আজকে বলেছিস বলেছিস কিন্তু আর বলবি না ৷”
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল
” কি বলবো না?”
” আরিশের নাম ধরে আর ডাকবি না, স্বামীর নাম ধরে না ডাকাটাই ভালো ৷”
আরু খুশি হয়ে বলল
” হ্যাঁ সেই জন্যই তো মি ঃ অভদ্র বলি ৷”
উনি আবার কঠিন সুরে টেনে বললেন
” আরুউউউউ ৷”
” তোমরা যা বলাবা বলো আমি মি অভদ্র বলেই ডাকবো ৷ ”
” কি করে বোঝাই ! যাই হোক কবে যাবি একটু আরিশের কাছ থেকে জেনে আমাকে বলিস ৷”
” ওনার তো আর একমাস পরই ফাইনাল এক্সাম আর আমার মেডিক্যাল এর ডেট পড়ে গেছে তুমি তো জানোই , আর 21 দিন পর ৷ এর মধ্যে কি করে যাবো?”
” তার আগে একটু সময় পেলে যাস ৷”
” আচ্ছা আম্মু আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করে বলি ৷”
” আচ্ছা ৷”
আরু ফোনটা নিয়ে অনিকা খানের কাছে ছুটে গেল গিয়ে বলল
” ফুপি তুমি কথা বলো আমি আসছি নাহলে আআআরিশ থুড়ি মি অভদ্র আমার ক্লাস নেবে ৷”
কথাটা বলে আরু ছুটলো , যাওয়ার আগে সানাকে ডাকলো ৷ রুমে ঢুকে দেখলো আরিশ এক গাদা বই পত্র নিয়ে বিছানার ওপর জমা করেছে যেগুলো কয়েক কয়েক মাস আগে আরুর সব কমপ্লিট হয়ে গেছে মে বি সেগুলোই আবার রিভাইজ করাবে ৷”
আরু গিয়ে ভদ্র বাচ্চার মতো বসে বলল
” আই এম প্রেজেন্ট মি অভদ্র স্যার ৷”
আরিশ আরুর দিকে একবার তাকিয়ে বলল
” আজকে পড়া না পারলে খবর আছে ৷”
আরু একটু হেসে বলল
” আগেই আপনি আমাকে মেরে খবর বানাবেন তাই তার আগে কি আমি একটু আমার ফোনটা দেখতে পারি ?”
আরিশ ধমক দিলো
” নো মোর ওয়ার্ডস ৷”
আরুও বিরক্ত হয়ে এক একটা বই ঘেটে দেখলো,পুরোনো পড়াগুলো মনে করার চেষ্টা করছে , আরিশ আড় চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ৷
চলবে,,