কার_হাতে_যে_ধরা_দেব_হায় #লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম। #পর্ব_৩ (শেষ পর্ব)

0
1288

#কার_হাতে_যে_ধরা_দেব_হায়
#লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
#পর্ব_৩ (শেষ পর্ব)

সকালে মিষ্টি রোদের আলোয় আমার ঘুম ভাঙে। শুয়ে থেকেই খোলা জানালা দিয়ে বাহিরের চমৎকার, প্রাণবন্ত সকালটা দেখছি আমি। শৌর্য ঘরে নেই, কোথায় সেটাও জানিনা। আমার তার উপর ভীষণ রা’গ হচ্ছে। গতরাতের কথা মনে পড়তেই আমি ল’জ্জায় লাল, নীল হয়ে যাচ্ছি। তার সামনে দাঁড়ানোর শক্তিও বোধ হয় রইল না আমার। অথচ কাল রাতে তার বুকে মাথা রেখেই আমি ঘুমিয়েছি।

ঘড়িতে আটটা বাজে দেখলাম। আমার নিজ বাড়ি হলে হয়তো ঘুমিয়ে থাকতাম। সংকোচ ছিল না কোনো কিন্তু এটা শ্বশুর বাড়ি। এখানে না চাইতেও অনেক কিছু করতে হয়। সবার মন জুগিয়ে চলতে হয়। নিজের ভালো থাকা ভুলতে হয়। আমার চোখ ফেটে কান্না আসছে। বাবা কেন এত তাড়াতাড়ি আমায় বিয়ে দিল? আর কয়দিন কি পারত না নিজের কাছে রাখতে! অন্য কেউ হলেও এক কথা ছিল। শৌর্য নামক মানুষটির সাথে আমার ভালো সম্পর্ক নেই। বরং একটা বা’জে অতীত আছে। যেখানে আমি অ’প’রা’ধ করেছিলাম। বিয়ে করে এখন সেই অ’প’রা’ধে’র শা’স্তি সে আমাকে দিচ্ছে। তার সাথে হয়তো আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। আর দশ, পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মতো কিছু আমাদের হবে না। হ্যাঁ, প্রাকৃতিক টানে হয়তো কাছে আসা হবে কিন্তু ভালোবাসা? সেটাই যদি না থাকে তবে একসাথে থেকেও কখনোই সুখের সন্ধ্যান মিলবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই কাবার্ড থেকে থ্রী পিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।

বের হয়ে দেখি শৌর্য বিন ব্যাগে বসে আছে। হাতে কফির মগ। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু ভাবছে। আমার উপস্থিতি টের পেতেই বলল,

-‘গুড মর্নিং টিয়াপাখি।’

আমি থ বনে গেলাম। এর আবার হলো কী! এত মিষ্টি করে কথা বলছে কেন? আমি বিছানায় তাকালাম। নতুন চাদর বিছানায়। কেন যেন ল’জ্জা করছে। খুব ল’জ্জা করছে! ভেজা চুলে তোয়ালে পেচিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। গতকাল ভাবী বলে দিয়েছেন গহনা বেশি কিছু না হলেও অন্তত যেন পাতলা চেইন, রিং, হাতের বালা, কানের দুল পরি। নাকের ফুটো করা হয়নি আমার। হয়তো আজকালের মধ্যে সেটাও করতে হবে। আমি যা একদমই করতে চাইনা। পরীর নাকে ফুটো করা হয়েছিল যখন তখন ওর সে কি কান্না! তারপর এক সপ্তাহ জ্বর ছিল, ব্য’থা ছিল। আমি সেই ভ’য়ে আর নিজের নাক ফুটো করিনি। আমাকেও কেউ জোরও করেনি।

হাতের বালাটা পরতেই শৌর্য আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। বললেন,

-‘তুমি আমাকে ইগনোর করছ?’

আমি বি’র’ক্ত হলাম। মুখ দিয়ে বি’র’ক্তিতে ‘চ’ শব্দ করলাম। সে আমাকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল,

-‘এই! একদম আমার উপর বি’র’ক্তি দেখাতে আসবে না! আমি কি তোমাকে বি’র’ক্ত করছি? ভালো একটা কথা বলছি তাতেও তুমি বি’র’ক্ত হচ্ছো! সমস্যা কি তোমার?’

-‘আপনি সমস্যা।’

-‘আমি? আমি কেন সমস্যা?’

-‘আপনি আমাকে বিয়ে কেন করলেন!’

-‘তুমিই তো বললে সিঙ্গেল থাকলে তোমাকে বিয়ে করতে।’

-‘আমি তো মজা করে বলেছি। সত্যি সত্যি তো আর বলিনি।’

-‘আমি তো মজা হিসেবে নেইনি। তুমি আমায় অপছন্দ করো কেন? আমি কি করেছি তোমার! বরং তুমি আমাকে থা’প্প’ড় মে’রে’ছিলে!’

-‘সেই থা’প্প’ড়ের পেছনের ঘটনাটা মনে নেই আপনার! আপনি বলেছিলেন না যে আমাকে মা’র’বেন!’

-‘আজব! আমি তো এমনিতেই বলেছিলাম। সত্যিই কি মা’রতাম নাকি? তুমিই তো ধুম করে আমাকে মে’রে দিলে।’

-‘ভালো করেছি।’

-‘আমিও ভালো করেছি।’

-‘কখন? কী ভালো করলেন!’

-‘গতরাতে। তোমাকে আদর করে।’

-‘ছিঃ আপনি আর একবার কালকের কথা বলবেন তো আপনার খবর করে ছাড়ব!’

শৌর্য হাসলেন। আমি তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম। এই শৌর্যকে আমি চিনিই না। এ যেন অন্য এক শৌর্য। হুট করেই পাজি লোকট আমার সারামুখে এলোমেলো চুমু খেয়ে বলল,

-‘তুমি এত সুন্দর কেন টিয়া?’

আমি কি করব, কি বলব বুঝতেই পারছিনা। এর কি হলো! বললাম,
-‘পা’গ’ল হয়েছেন! ছাড়েন আমাকে। আমার কাছে আসছেন কেন বারবার? আমার ভালো লাগছেনা।’

-‘না লাগলেও আসব। আমার ভালো লাগছে।’

-‘না আসবেন না।’

-‘জানো টিয়া! তুমি যেদিন আমাকে মা’রলে সেদিন থেকেই মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম ওই অ’প’মা’নের শো’ধ আমি তুলব। শুধু একবার তোমাকে হাতের কাছে পাই! অথচ সেদিন যখন দেখলাম আমার সব রা’গ, ক্ষো’ভ উধাও হয়ে গিয়েছিল।’

আমি চমকে উঠলাম। বললাম,
-‘কেন?’

-‘জানিনা।’

বলেই সে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে রুম ছেড়ে বের হয়ে গেল। আমি ঠাই দাঁড়িয়ে তার কথাগুলো ভাবতে থাকলাম।

এভাবে বেশ কয়েক দিন কেটে যায়। সংসার জীবনে আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম। পনেরো দিনের মাথায় তিনিও চলে গেলেন। ছয় মাস আগে আর ফিরতে পারবে না নাকি! আমার কেন যেন মন খা’রা’প হলো। পনেরো দিনে সে আমার অভ্যেসে পরিণত হয়েছিল। যেভাবেই হোক না কেন কাছে আসা হয়েছে বহুবার। আমাকে সে যথেষ্ট সময় দিয়েছিল। রাতে মাঝে মধ্যে চা নিয়ে ছাদে তার সাথে বসে গল্প করাও হতো। প্রথম দুই একদিন সে নিজেই করত। তার দৈনন্দিন জীবন নিয়ে, তাদের ডিউটি, ট্রেনিং সেইসব নিয়ে বলত। আমার বিশ্বাস করতে ক’ষ্ট হতো তাদের এত টাফ কাজ করতে হয় জেনে! সে হাসে। আমি দেখে অবাক হই। যে শৌর্যকে আমি চিনতাম সে ছিল গম্ভীর, ভাব নিয়ে ঘোরা ছেলে। আমি তাকে অ’হং’কারী ভাবতাম। অথচ আজ তাকে যখন এতটা কাছ থেকে দেখছি, জানতে পারছি, তখন নিজেই দ্বি’ধায় পড়ে গেলাম যে তাকে কি বলব! অমায়িক নাকি অ’হং’কারী!

আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া হয়। ইংরেজী সাহিত্য নিয়েই পড়ি আমি। সে আসেনি এর মধ্যে একবারও। আসতে চেয়েছিল তবে ছুটি পায়নি। আমারও একটু ক’ষ্ট হয়েছিল কিন্তু রা’গ হয়নি। কারণ তার কাজ সম্পর্কে আমার ততদিনে অনেক ধারণা হয়ে গিয়েছে।

একদিন ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে দেখি আমার জা আর বাকি সবাই আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। আমি বুঝতে পারলাম না তাদের হাসির কারণ। শাশুড়ি মা বললেন,

-‘ছোট বউমা রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আসো।’

-‘জ্বি মা।’

ক্লান্ত পা ফেলে যখন রুমে আসলাম দেখলাম শৌর্যকে। তাকে চমকে গেলাম আমি। দরজার সামনেই অবাক নয়নে তার পানে তাকিয়ে রইলাম।

সে স্বভাবসুলভ ভাবে হেসে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি অনুভব করলাম আমার এই মানুষটার অভাব ছিল এতদিন। এই মানুষটা আমার জীবনের সতেজতা। একটু আগেও ক্লান্ত আমিও এখন শান্তিতে চোখ বুজে আছি। তার বুকে মাথা রাখার মতো শান্তি আর কোথাও হয়তো নেই। আমি বললাম,

-‘কখন এলেন?’

-‘এগারোটার দিকে।’

-‘জানানো হয়নি কেন আমাকে?’

-‘সারপ্রাইজ দিব ভেবেছিলাম। তাই।’

-‘ওহ। পছন্দ হয়েছে।’

-‘কি!’

-‘সারপ্রাইজটা।’

সে আমার চোখে চোখ রাখে কথাটা শুনে। বলে,

-‘সত্যি?’

-‘হু।’

-‘কতটা পছন্দ হয়েছে!’

আমি মুখটা উঁচু করে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। মৃদু চম্বনে তাকে জানান দিলাম ঠিক কতটা ভালো লাগছে আমার! সে এত অবাক হয়েছে! বলল,

-‘টিয়া? তুমি কি!’

-‘আমি কি?’

-‘তুমি কি তবে ধরা দিলে আমার হাতে?’

-‘সে তো বহু আগেই দিয়েছিলাম। আপনি বোঝেননি সেটা আপনার ব্যর্থতা!’

শৌর্য আমাকে পুনরায় জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,

-‘টিয়া আমি বোধহয় তোমায় ভালোবাসি।’

-‘আমিও।’

-‘কি তুমিও?’

-‘আপনাকে বোধ হয় ভালোবাসি।’

-‘বোধ হয়?’

-‘একই প্রশ্ন তো আমারও।’

-‘না। আমি সত্যিই ভালোবাসি। এটাই সত্য। এর উপর আর কোনো সত্য নেই।’

-‘আমিও সত্যি সত্যি ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি।’

সমাপ্ত

(ছোট গল্প গুলো এমন ভাবেই শেষ হয়। কেউ এটা বলবেন না যে আরেক পর্ব হলে ভালো হতো! 😐)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here