কালো মেঘ,পার্ট:3

0
964

#কালো মেঘ,পার্ট:3
#লেখক:আঃরব।

আমি যখন ই কবর থেকে উঠতে যাব ঠিক তখন ই আমার হাতটা কেউ চেপে ধরলো।আমি ভয়ে ভয়ে সোহানের দিকে তাকাতেই দেখলাম।সোহান বড় বড় চোখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।আর ও-ই আমার হাত ধরে আছে!

জোরে একটা চিৎকার ভেসে আসলো!আমার হাত পা সব কাপছে।অন্তর আত্না শুকিয়ে গিয়েছে! আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি। শরীরের সব লোম(পশম) দাঁড়িয়ে গিয়েছে।মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।

আমি কয়েকবার ঢোক গিলে সোহান কে বললাম, “সোহান তুই কি সত্যিই বেচে আছিস?

সোহান কোন কথা বলছে না।সুধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর সোহান বললো,” আমাকে তাড়াতাড়ি মেডিকেলে নিয়ে চল।তোকে অনেক কথা বলার আছে।

আমি বুকে একটু সাহস পেলাম।সোহান কে কোন রকম কবরের উপরে তুললাম।তারপর বাইকে করে আস্তে আস্তে রাস্তায় নিয়ে আসলাম।সোহান মনে হয় জ্ঞান হারিয়েছে। আমি সোহান কে রাস্তার এক সাইডে সুয়িয়ে দিলাম।

তারপর বাইকে করে বাড়িতে আসলাম।বাড়ির পাশের একটা চাচার ভ্যান আছে।আমি বাইকটা বাড়িতে রেখে ওই চাচাদের বাড়ি গেলাম।চাচাকে অনেক ডাকার পর চাচা বাইরে আসলো।

চাচা:কি হলো আঃরব এতো রাতে ডাকাডাকি করছো কেন?
আমি:চাচা আপনার ভ্যানটা নিয়ে আমার সাথে একটু চলুন।
চাচা:এই রাতে ভ্যান নিয়ে কোথায় যাব?
আমি:চাচা দেখ বাবা আমি এতো রাতে কোথাও যেতে পারবো না।আমি এমনিতেই খুব ক্লান্ত।
আমি:চাচা তাহলে আপনার ভ্যানটা দিন প্লিজ।ওকে এখনিই হসপিটালে নিতে হবে,নয়তো ও মারা যেতে পারে।
চাচা:আচ্ছা ঠিক আছে।ওই যে বাইরের ঘরে রাখা আছে।

আমি চাচার ভ্যানটা নিয়ে সোহানের ওখানে পৌঁছালাম।সোহান কে ভ্যানে তুলে ভ্যান টানতে লাগলাম।প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ভ্যান চালাতে।এতো ভারি সোহান!এই শীতের রাতে টপ টপ করে ঘাম পড়ছে আমার।গেঞ্জিটা একবারে ভিজে গিয়েছে।

রাস্তায় কোন মানুষ জন নেই।সুধু কয়েকটা কুকুর দেখা যাচ্ছে।কুকুর গুলো আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউঘেউও করছে।চার দিকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।রাস্তা ঘন অন্ধকার। সুধু আমার ফোনের লাইটে যতটা আলো হচ্ছে।

আমি অনেক কষ্টে সোহান কে একটা হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।হাসপাতালের গেটে আবার তালা মারা আছে।

আমি দারোয়ান কে অনেক ডাকলাম।কিন্তু দারোয়ান কোন সারা শব্দ করলো না।আমি হতাশ হয়ে ওখান থেকে সামনের দিকে যেতে লাগলাম।একটু যাওয়ার পর আরেকটা হসপিটাল দেখতে পেলাম। কিন্তু এটাও তালা মারা।আমি দারোয়ানকে ডাক দিলাম।অনেকক্ষণ ডাকার পর একটা দারোয়ান চোখ বুলাতে বুলাতে গেটের সামনে আসলো।

দারোয়ান:এই এতো রাতে চিল্লাচ্ছো কেন?
আমি:ভাই গেটটা একটু খোলেন।আমার বন্ধু খুব অসুস্থ।ওকে এখনিই ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
দারোয়ান:এই এতো রাতে বকাস নিতো এখান থেকে যা এখন।
আমি:প্লিজ ভাইয়া গেটটা খুলে দেননা।
দারোয়ান:বললাম না এখান থেকে এখন যা।এখন এখানে কোন ডাক্তার নেই।

এটা বলে দারোয়ান টা চলে যেতে লাগলো।আমি পিছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করলাম।কিন্তু ওনি আমার কথার কোন পাত্তা না দিয়েই চলে গেল।

আমি হতাশ হয়ে ওখান থেকেও চলে আসলাম।বেশ কিছুক্ষণ ভ্যান টানার পর একটা হসপিটালের সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম। আমি সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।এই হসপিটালের গেটটা খোলা আছে।আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম।
হসপিটালটা দেখে খুব পুরানো মনে হচ্ছে।কেমন যেন রং চটে গিয়েছো পুরো হসপিটালের। হসপিটালের গায়ে লতাপাতা জড়িয়ে আছে।

আর সব চেয়ে অবাক করার বিষয় হলো,হসপিটালের ভিতরটা অন্ধকার।তারপরও আমি সোহানকে নিয়ে হসপিটালে ঢুকলাম।হসপিটালের রুম গুলোই বিদ্যুতের কোন আলো নেই।সুধু মোমবাতি জ্বালানো আছে।কেমন যেন অদ্ভুত একটা পরিবেশ।

পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, “অপারেশন টেবিল রেডি আছে।তোমার বন্ধুকে এখনিই অপারেশন করতে হবে।

আমি চমকে উঠলাম! পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ২জন ডাক্তার অপারেশন ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে।

কিন্তু আমি আরো অবাক হলাম এটা ভেবে যে,ওরা কি করে জানলো যে সোহান আমার বন্ধু?আর আমরা যে এই হসপিটালেই যে আসবো এটা ওরা কেমনে জানলো?!

ওদের ভিতর থেকে একজন ডাক্তার আবার বলে উঠলো, ” কি হলো এতো কি ভাবছো?এখন এতো চিন্তা করার সময় নেই।তাড়াতাড়ি সোহান কে অপারেশন রুমে নিয়ে চলো।

আমি আর কিছু না ভেবেই সোহান কে অপারেশন রুমে নিয়ে গেলাম।কারন,এখন সোহানের জীবনটা বাচানোয় বেশি প্রয়োজন।

আমি সোহান কে অপারেশন রুমে রেখে আসলাম।আমি বাইরে ওয়েট করছি।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার দুটো বের হলো।
আমি ডাক্তারের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম, “স্যার আমার বন্ধু এখন কেমন আছে?
ডাক্তার সাহেব:আপনার বন্ধু এখন ভালোই আছে।তবে ওর উপরে কালো মেঘ জমা হয়েছে।সাবধান হয়ে যান! আপনার বন্ধু কে চোখে চোখে রাখবেন। আপনিও সাবধানে থাকবেন।কারন,ও ফিরে এসেছে!

আমি জিগ্গাসা করতে যাব যে কে ফিরে এসেছে?তার আগেই ওনি বললেন,তোমার বন্ধুকে বেডে শিপট করা হয়েছে।
আমি:কিন্তু ওকে কখন বেডে শিপট করলেন?আমিতো এই দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।আমিতো ওকে নিয়ে যেতে দেখলাম না।
ডাক্তার:যেটা আমরা দেখি সেটা সব সময় সত্যি হয় না।আর যেটা আমরা দেখি না সেটাই মাঝে মাঝে সত্যি হয়ে যায়।
আমি:মানে?আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?
ডাক্তার:সব মানের উত্তর দিতে নেই।কিছু মানের উত্তর নিজে খুজে নিতে হয়।

আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই ডাক্তার বললো,” ১০নম্বর রুমে চলে যাও।ও একা আছে কিন্তু।আর একাকিত্ব সব সময় ভয়ের সৃষ্টি করে। যাও ওর কাছে যাও।

এটা বলেই ডাক্তার দুটো চলে গেল।আমি আর কোন কথা বলার সুযোগ ই পেলাম না।

কিন্তু এখন এই ১০নম্বর রুমটা কোথায় খুজে পাব?আমি অপারেশন রুমের ডান দিকে যেতে লাগলাম।আমি ভালো করে সব রুম গুলো দেখতে লাগলাম।তবে ১০নাম্বার রুমটা খুজে পেলাম না।

আমি আবার অপারেশন রুমের সামনে আসলাম।ওখান থেকে রুমের বাম দিকে যেতে লাগলাম।অনেকক্ষণ হাঁটার পর ১০নম্বর রুমটা অবশেষে পেয়েই গেলাম।

আমি রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল।আর আমি সাথে সাথে সজোরে একটা চিৎকার দিলাম। আমার চিৎকারের শব্দে আশে-পাশের রুমের রুগি গুলো আমার দিকে আসতে লাগলো।রুগি গুলো কি ভয়ানক দেখতে।কারো চোখ নেই।কারো আবার গাল পচে গিয়েছে।কারো আবার দাঁত নেই,মাথার অর্ধেক চুল আছে আর বাকি অর্ধেক নেই।

একজন অন্ধ রুগি আমাকে বললো,”এই তুমি এতো জোরে চিল্লিয়ে আমাদের ঘুম ভাঙালে কেন?
আমি:সরি সরি।ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।কিন্তু আমি ওই রুমে যেটা দেখলাম সেটা দেখেই ভয়ে চিৎকার করে ফেলেছি।

আমার কথা শুনে একজন গান পচা রুগি বলে উঠলো, “তুমি কি দেখেছো ওই রুমে?
আমি:আমি ওই রুমে একটা মাথা কাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। একটা কুকুরে ওই লাশটা খাচ্ছে।আর একটা গলায় দড়ি দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।আমি যখন ই দরজা খুললাম তখন ই ওই ঝুলে থাকা লোকটা বড় বড় চোখ বের করে আমার দিকে তাকালো।আমি ওটা দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম।

আমার কথা শুনে অন্ধ লোকটা আমাকে বললো,” চলো দেখি ভিতরে কি আছে।

তারপর ওনি দরজাটা খুললো।কিন্তু এখনতো কিছুই দেখছি না।সুধু সোহান সুয়ে আছে।আর ওর পাশে কয়েক টা মোমবাতি রাখা আছে।

অন্ধ লোক:কই এখানেতো কিছুই নেই।সুধু তোমার বন্ধুই সুয়ে আছে।
আমি:কিন্তু আপনি তো অন্ধ।আপনি কি করে বলতে পারলেন,যে ওখানে আমার বন্ধুই সুয়ে আছে।
অন্ধ লোক:সব কিছু দেখার জন্য চোখের প্রয়োজন হয়না।কিছু মানুষ চোখ থাকতেও অন্ধ।আর কিছু মানুষ অন্ধ হয়েও সব কিছু দেখতে পাই।

আমাকে আর কোন কথা না বলতে দিয়ে ওরা চলে যেতে লাগলো।আর যাওয়ার সময় বলে গেল,”আর আমাদের বিরক্ত করবে না।

আমি সোহানের পাশে গিয়ে বসলাম।

তারপর ভাবলাম আন্টি কে সোহানের খবরটা দেওয়া দরকার।আমি ফোন করলাম।কিন্তু ফোন বলে। কয়েকবার ট্রায় করার পরও একিই সমস্যা।

থাক আন্টিকে আমি কালকে জানাবো।এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে।আমি সোহানের পাশে বসে বেডের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

চোখে সূর্যের আলো লাগার কারণে আমার ঘুম ভেঙে গেল!

চোখ খোলার পর যেটা আমি দেখলাম,সেটার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না।

আমার গায়ের পশম গুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছে!চোখ জুড়া স্থির হয়ে গিয়েছে!বুকের ভিতর টা ধুক বুক করছে!মনে হচ্ছে জানটা এবার বের হয়ে যাবে!কলিজা শুকিয়ে কাট হয়ে গেল!বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে পানি পিপাসার কারণে!

কারন,যেটা আমি দেখলাম……..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here