কালো মেঘ,পার্ট:5

0
1045

#কালো মেঘ,পার্ট:5
#লেখক:আঃরব।

আমি ওই বাড়িটার ভিতরে প্রবেশ করলাম।বাড়ির ভিতরটা কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ।বুকের ভিতর প্রাণটা কাঁপা-কাঁপি করছে।আমি তবুও ভিতরে যাচ্ছি।

তখন ই বিদ্যুৎ চমকিয়ে একটা আলো ফুটে উঠলো!আর সেই আলোতে আমি দেখতে পেলাম সৌরভ বসে আছে।সৌরভের সারা গায়ে রক্ত,আর হাতে একটা মানুষের হাড়!চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ও আমাকে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।

সৌরভ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,”এসো ভাইয়া এসো।ও তোমার জন্যেই ওয়েট করছে।ও ফিরে এসেছে!

ঠিক তখন ই আমার দিকে আগুনের গুলা আসতে লাগলো।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।কিছুক্ষণ পর আমি ধীরে ধীরে চোখ খুললাম।চোখ খুলে দেখলাম আগুন গুলো আর নেই।আর সোহানও কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে।

আচ্ছা ওটা সত্যিই কি সোহান ছিল?নাকি কোন অসুভো শক্তি ছিল।কিন্তু ও যেই হোক না কেন ও কার ফিরে আসার কথা বলছিল?কে ফিরে এসেছে?
আর সে আমার জন্যেই কেন অপেক্ষা করছে?

আচ্ছা আগে আমি এই বাড়িটা ভালো করে তললাশি করে দেখি।দেখি কিছু খুঁজে পাই নাকি।আমি ঘরটা ভালো করে খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু অন্ধকারে ভালো করে কিছুই দেখা যায় না।আমি আস্তে আস্তে সামনে হাঁটতে লাগলাম।হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ই ফ্লোর ভেঙে নিচে পড়ে গেলাম।একবারে একটা রক্ত মাখা পচা লাশের উপর গিয়ে পড়লাম।

লাশটা দেখে আমার অন্তর আত্না ভয়ে ঠান্ডা হয়ে জমে যেতে লাগলো।আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালাম। লাশটা থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ করছে।আমার ভুমি চলে আসছে।

আমি ওখান থেকে তাড়াতাড়ি সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম।সামনে যেতে যেতে আরেকটা লাশ দেখলাম।

এই লাশটার চোখ দুটো কেউ তুলে নিয়েছে মনে হচ্ছে!চোখের জায়গায় দুটো গর্ত!সেখান দিয়ে রক্ত ঝরছে। আমি ভয়ে আরো সামনে অগ্রসর হতে লাগলাম।

একটু দূর যাওয়ার পর ই আর একটা লাশ দেখলাম।লাশটার মাথাটা কেউ দুই ভাগ করে দিয়েছে।মাথার সব ঘিলু গুলো বের করে নিয়েছে।আর তার জায়গায় তেলা পুকা আর কেল লুই কিল বিল করছে।লোকটার সারা শরীর দিয়ে রক্ত পড়ছে।

আমার ভয়ে হাত পা সব কাঁপছে।এতো গুলো লাশ এখানে কেন?

আমি ভয়ে ভয়ে আরো সামনে যেতে লাগলাম। সামনে গিয়ে আর একটা লাশ দেখতে পেলাম।লাশটা কি বিচ্ছি দেখতে।আর কি ভয়ানক।আমার জ্ঞান হারাবে হারাবে অবস্থা। লাশটার নিচের দিকের অর্ধেকটা কিছুতে খেয়ে নিয়েছে।আর মাথাটা মনে হচ্ছে কিছুতে চিবিয়ে চিবিয়ে রেখে দিয়েছে।লোকটার পেটটা ফেটে গিয়েছে।লোকটার পেটের নাড়ি-বুড়ি সব দেখা যাচ্ছে।আর ওখানে সব মশা মাছি ঘিন ঘিন করছে।আমি ভয়ে সামনের দিকে ছুটতে লাগলাম।

ছুটতে ছুটতে একটা বিশাল গাছ দেখতে পেলাম।কিন্তু এটা কি করে সম্ভব বাড়ির নিচে গাছ কি করে থাকতে পারে?!!

আর আরো অবাক করার বিষয় হলো গাছটার পাতা গুলো দিয়ে বিভিন্ন রকমের আলো জ্বলছে।গাছে কোন ফলের বদলে মানুষের কাটা মাথা ঝুলছে।আমার তো এমনিই ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তার উপর আবার এটা।

আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার দিলাম।একটু পর যখন চোখ খুললাম তখন আমার সামনে সব কিছু উধাও হয়ে গিয়েছে।মানে ওই গাছটা আর নেই!

আমি কি কোন স্বপ্ন দেখছি?নাকি সত্যি সত্যি এগুলো সব!

কিন্তু এগুলো সব আমার সাথে হচ্ছে কি?সোহানের মৃত্যুর পর থেকেই এইসব হচ্ছে। তাহলে সোহানের মৃত্যুর পিছনেই কি এই সব কিছু লুকিয়ে আছে?

কিন্তু সোহানতো মরেনি।ওতো বেছেছিল।আমি ওকে হসপিটালেও নিয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু হঠাৎ সোহান আর ওই হসপিটালটা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল!

আমি এইসব ভাবছিলাম ঠিক তখন ই অনেক গুলো বাদুর আমাকে আক্রমণ করলো। আচমকা এমন আক্রমন! আমি দৌঁড়িয়ে ওদের থেকে পালাতে লাগলাম।

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমি একবার পিছন ফিরে তাখিয়ে দেখলাম বাদুর গুলো আর নেই।

আমি একটু দম ফেললাম।একটু ভালো করে শান্তির নিশ্বাস নিতে লাগলাম।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এমন জায়গায় চলে এসেছি,এটা অনেক নিরাপদ মনে হচ্ছে।এই জায়গাটা বেশ শান্ত।আগের জায়গার মতো সব ভয়ানক নয়।

আমি মাটির উপর ই চুপ করে বসে পড়লাম।মনের ভিতর অনেক চিন্তা ভাবনা আসছে।এগুলো সব কি হচ্ছে?

কিন্তু এখানেতো সৌরভ কে তো দেখতে পাচ্ছি না। আর যেটাকে দেখেছিলাম প্রথমে আমারতো ওটাকে সৌরভ মনে হচ্ছে না।তাহলে সৌরভ কোথায় গেল?

আর আন্টি আবার কোথায় গেল?আন্টিকেও দেখতে পেলাম না।বাসায় তালা মারা।আবার ফোনটাও বন্ধ।আচ্ছা আন্টির আবার কোন বিপদ হলো না তো!

আন্টি কি কোন ভাবে সৌরভের খোঁজ পেল নাকি?হতে পারে সৌরভ কে বাচাতে গিয়ে তিনি নিজেই বিপদে পড়ে গিয়েছে।

কিন্তু কোথায় সবাই হারিয়ে গেল?

আমি নিস্তব্ধ জায়গাটায় বসে এগুলোই ভাবছি।
কথায় আছে না,নিস্তব্ধতাই বিপদ লুকিয়ে থাকে।আমার সাথেও ভিন্ন কিছু হলো না।

একটা কাটা হাত আমার গলা টিপে ধরলো।আমার পুরো শক্তি দিয়ে হাতটা কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমি অসফল হলাম।হাতটার শক্তির কাছে আমি বাচ্চা মাত্র।

আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।চোখের পাতা গুলো বুজে আসছে।
ঠিক তখন ই আমার হাতের সাথে কিছু একটা বাড়ি খেল।আমি ভালো করে হাত দিয়ে দেখলাম ওটা ছুরি।আমি ছুরিটা হাতে তুলে ওই কাটা হাতটাকে বার বার আঘাত করতে লাগলাম।

কয়েকবার আঘাত করার পর হাতটা অদৃশ্য হয়ে গেল।আমার জোরে একটা নিশ্বাস ফেললাম।আমি আর বসে থাকতে পারলাম না,মাটির উপর ই সুয়ে পড়লাম।

চোখ গুলো কেমন যেন বন্ধ হয়ে আসছে।আমার চোখ গুলো আপনা আপনিই বুজে গেল।

একটু মনে হতে লাগলো আমি আস্তে আস্তে মাটির নিচে চলে যাচ্ছি। আমি সাথে সাথে চোখ খুললাম।চোখ খুলে যা দেখলাম তাতে আমার আর সয্য করার ক্ষমতা পেলাম না।

মনে হচ্ছে আমি হয়তো জাহান্নামে চলে এসেছি।চার দিকে কি বিভদস্য দেখতে মানুষ।আর তাদের ভয়ানক আর্তনাদ।

আমি সুয়া থেকে উঠার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন ভাবেই উঠতে সক্ষম হলাম না।আমার হাত পা গুলো সব বাধা।গাছের শিকড় আর লতা দিয়ে বাধা আছে।

আমি একটা জায়গায় গিয়ে থেমে গেলাম।একটা কালো পোষাক পরা লোককে দেখতে পেলাম।লোকটার মুখ পুড়ে গিয়েছে।লোকটা দেখতেও প্রচন্ড ভয়ানক। লোকটার চার দিকে মমবাতি জ্বলছে। নকশা করে একটা বৃত্ত আঁকা আছে।যার ভিতরে বসে লোকটা কি সব মন্ত্র পড়ছে।

এটা দেখে আমি অনেক অবাক হলাম!

অন্য একটা দিকে চোখ পড়তেই আমার কলিজা শুকিয়ে গেল।

একটা বলির কাটে আমার মাথা ঢুকানো আছে।আর পিছনে আমার হাত বাধা আছে।পাশে একটা বড় খাড়া রাখা আছে।

কিন্তু আমিতো এখানে।তাহলে বলির কাটে কে?আর বলির কাটে যদি আমি হয় তাহলে আমি কে?

লোকটা মন্ত্র পড়া বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো।তারপর আস্তে আস্তে ওই বলির কাটের কাছে গেল।তারপর খাড়াটা হাতে তুলে নিল।তারপর জোরে আমার মাথা বরারবার আঘাত,,,,,

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here