#কালো_আর্তনাদ?,পর্বঃ১
#written_by_Liza
একটু আগে জানতে পারি আমি কখনো মা হতে পারবো না,আমার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে যাচ্ছে।এক হাতে রিপোর্ট অন্যহাতে পেট ধরে কোনোভাবে রিক্সাই উটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।শরীরটা আর টানছে না আমার।বড্ড ক্লান্ত আমি, কপাল বেয়ে আমার অঝোরে ঘাম ঝড়ছে বুকটা ধুকপুক করে কাপঁছে, রুহ যেনো আমার বেরিয়ে যাবে। রিকশা এসে গন্তব্যে পৌছালো, কোনোভাবে ভাড়া মিঠিয়ে দিয়ে সিড়িতে পা রাখলাম,ঘরে যাওয়ার কথা ভাবতেই বুকটা মুচড়ে যাচ্ছে।কাপা কাপা পায়ে সিড়ি পার করে ঘরে কলিং বেল বাজাতে লাগলাম। শাশুড়ি মা এসে দরজা খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, মিলি কি হয়েছে তোমার? তুমি ঠিক আছো? নিজেকে স্থীর করতে পারছিলাম না আমি,কি জবাব দেবো তাদের,তারা যে কখনো নাতি নাতনির মুখ দেখতে পারবে না। শাশুড়ি মাকে এড়িয়ে রুমে এসে বিছানায় গিয়ে বসে পড়লাম।বুকটা আমার ফেটে যাচ্ছে আমি কখনো মা ডাক শুনতে পারবো না, সিয়ামকে আমি কি কি বলবো,সে কখনো বাবা ডাক শুনতে পারবে না। রিপোর্ট টা পাশে রেখে চুপচাপ পাখার নিচে বসে আছি,অঝোরে ঘাম বেয়ে ঝড়ছে ভয়ে। রুম থেকে আর বের হলাম না। রিমি আমার ছোট ননদ সে রুমে এসে আমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, ভাবি ডক্টর কি বললো? কি বলবো বুঝতে পারছিনা, সত্যিটা কি বলে দেবো নাকি প্রথমে সিয়ামকে জানাবো দোটানায় পড়ে গেলাম।
রিমি আবারো ডাকতে লাগলো, ভাবি ও ভাবি বলো না কি সুখবর নিয়ে এসেছো বলো না,রিমিকে থামিয়ে বলতে লাগলাম, শুন না রিমি আমার না খুব তেষ্টা পেয়েছে এক গ্লাস পানি এনে দে না। রিমি পানি আনতে চলে গেলো,এর ফাকেই রিপোর্ট আলমারিতে রেখে দিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম। রিমি এসে আবার জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক তখন শাশুড়ি মা এসে রিমিকে রান্নাঘরে নিয়ে যায়। হাফ ছেড়ে বাচলাম। রাতে সিয়াম আসার পর সবাই একসাথে খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম। সিয়াম ফ্রেস হয়ে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো,মিলি আজ না তুমি ডক্টরের কাছে গিয়েছিলে? ডক্টর কি বললো? সিয়ামের কথার জবাব দিতে পারছিলাম না ভয়ে বুকটা ধুকপুক করছে,সিয়াম আবারো জিজ্ঞেস করে বসলো কি হলো মিলি? বললে না যে! আমি আলমারি খুলে রিপোর্ট টা কাপা কাপা হাতে এগিয়ে দিলাম, সিয়াম উদ্ধীগ্ন হয়ে রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো,আমি ভয়ে একপাশে কোণাই দাড়িয়ে আছি মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছি। সিয়াম রিপোর্ট দেখে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রিপোর্ট টা আমার দিকে শান্ত ভাবে এগিয়ে দিলো আর বললো চলো ঘুমাবে রাত হয়েছে,এই বলে সিয়াম শুয়ে পড়লো। আমি রিপোর্ট টা আলমারিতে রেখে শুয়ে পড়লাম খাটে। অন্যদিন সিয়াম আমাকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমাই না। আর আজ সিয়াম আমার দিকে না ফিরে ওপাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে। ভাগ্যের কি পরিহাস একটা মেয়ে বাচ্ছা জন্ম না দিতে পারলেই তার অবহেলা শুরু,সে হয়ে যায় হাতের পুতুল। ভাবতে ভাবতে চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে আমার। চোখ মুছে সিয়ামকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরি,সিয়াম আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো, গরম লাগছে ছাড়ো মিলি, এমনিই কি ঘুমানো যায় না? জড়িয়ে ধরার কি আছে? ঘুমাও আমার ঘুম পাচ্ছে সকালে অফিস আছে আমার,এই বলে ঝাড়ি দিতে লাগলো। আজ সিয়াম কে আমার বড্ড অচেনা লাগছে। যে আমায় জড়িয়ে ধরা ছাড়া ঘুমায় নি কখনো,একটিবার হলে ও বুকে নিয়ে ঘুমাতো আমাকে হাজার ঝগড়া রাগারাগির মধ্যে। আর আজ সে আমায় দুরে টেলে দিচ্ছে একটা কারণেই।সেটা হলো আমি কখনো মা হতে পারবো না। একটা কারণে তার এতবছরের ভালোবাসা ফিকে পড়ে গেলো। কথা গুলো ভাবছি অঝোরে কাদঁছি তখন। ওপাশ থেকে বিরক্তির স্বরে আওয়াজ আসে, কি হয়েছে এভাবে মরা কান্না কাদঁছো কেন? কেউ মরেছে নাকি? ঘুমাতে দাও প্লিজ।এই ন্যাকামো আর ভালো লাগছেনা।
তার কথা শুনে মুখে কাপড় গুজে দিয়ে কোনোভাবে কান্নার আওয়াজ কমানোর চেষ্টা করলাম,কোনোভাবেই পারছিনা বুক ফেটে কান্না আসছে আজ,না পারতে শোয়া থেকে উটে বারান্দায় চলে আসি,বারান্দায় এসে ইচ্ছামতো কাঁদলাম। বারান্দার মাটিতে বসে আছি বাহিরে রাতের আকাশটা বড়ই অদ্ভুত, এত বড় আকাশে একটা শুকতারার দেখা মিলেছে।তারার দিকে তাকিয়ে আছি আর মায়ের কথা ভাবছি,মা মারা যাওয়ার পর এই বাড়িতেই আমি আমার মায়ের আদর পায় শাশুড়ীর কাছ থেকে। আমার জীবনে খুব বেশি কাঁদিনি খুব সুখেই ছিলাম, এই সুখের কাল হয়ে দাড়িয়েছে আমার মা না হওয়াটা। ভাবতে ভাবতে চোখ মুছে নিয়ে জানালার রুমের দিকে উঁকি দিতেই দেখি সিয়াম রুমে নেই।
.
.
.
চলবে…