#কালো_আর্তনাদ?,পর্বঃ২
#written_by_Liza
আমার জীবনে খুব বেশি কাঁদিনি খুব সুখেই ছিলাম, এই সুখের কাল হয়ে দাড়িয়েছে আমার মা না হওয়াটা। ভাবতে ভাবতে চোখ মুছে নিয়ে জানালার রুমের দিকে উঁকি দিতেই দেখি সিয়াম রুমে নেই। রুমে ডুকে এগোলাম খাটের দিকে,গিয়ে দেখি সিয়াম কোথাও নেই।এই রাতে সিয়াম কোথায় গেলো সিয়ামকে খুজতে ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালাম।গিয়ে দেখি সিয়াম ফোনে কার সাথে কথা বলছে এদিক ওদিক হেটে পায়চারি করছে।সামনে গিয়ে দাড়ালাম চোখ মুছে,সিয়াম আমাকে দেখে তথমত খেয়ে দাড়িয়ে পরে মনে হয় এমনটা যেনো সিয়াম আশা করেনি। আমি সিয়ামকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই সিয়াম পাশ কাটিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়ে। আমি দাড়িয়ে তার যাওয়ার দিকটা দেখছি,কিছু বলার নেই আমার। একটা মানুষ রাতারাতি এতটা পরিবর্তন হতে পারে সিয়ামকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। নির্ঘুম একটা রাত কাটিয়ে দেয় বসে। সকাল বেলা গোসল সেরে রান্নাঘরে গিয়ে নাস্তা তৈরি করি সকলের জন্য,এটা আমার রোজকার রুটিন। সকালে খাবার টেবিলে সবাই এসে উপস্থিত শশুড় শাশুড়ী রিমি বড় ভাবি আর ভাসুর। সিয়াম এখনো খেতে আসে নি। পাউরুটিতে জ্যাম লাগিয়ে দিয়ে রিমিকে ব্রেড করে দিতে লাগলাম। ততক্ষনে সিয়াম এসে চেয়ার টেনে বসে।সিয়ামের দিকে তাকাতেই সিয়াম চোখ সরিয়ে আপনমনে খাবার খেতে শুরু করে। সিয়ামের এমন ব্যাবহার আমি নিতে পারছিলাম না,চোখ গুলো টলমল করছে পানিতে, কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলাম,মাথাটা বেশ ঘুরছে চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। কাল রাতে ঘুম হয়নি তার কারণে বোধহয় এমন হচ্ছে, রিমি আমার অবস্তা বুঝতে পেরে চেয়ার টেনে বসিয়ে দেয় আমাকে। সিয়াম আমার দিকে তাকিয়ে ব্রেড গুলো প্লেটে ছুড়ে মেরে চলে আসে রুমে। শাশুড়ি মা তা দেখে খাবার মুখে তুলে দেয় আমার।কিন্তু আমি খাবার গুলো খেতে পারছিনা বমি আসছে গন্ধে। দৌড়ে গিয়ে বেসিনে বমি করতে লাগলাম। রিমি এসে নুন হাতে দিয়ে বলতে লাগলো।ভাবি এসময় তোমায় এত কাজ কে করতে বলেছে শুনি? আমি তো ছিলাম আমায় ডাকতে পারতে। রিমির কথায় সিয়াম ধমক দিয়ে উটে আর বলতে থাকে, তোর কাজে যা,সবদিকে এত ওকালতি করতে হবেনা। এই বমিতে কেউ মারা যায় না।রিমিকে হাত দিয়ে সরে যেতে বললাম। রিমি সিয়ামের উপর রাগে গজগজ করে টেবিলে এসে খাবার খেতে বসে। শাশুড়ী মা ব্যাপারটা খেয়াল করলেন তবুও কিছু বললেন না। সিয়াম যাওয়ার সময় একগাদা কাপড় এগিয়ে দিয়ে বলে এগুলো ধুয়ে রাখিস, আমার বাহিরে যেতে হবে ব্যাবসার কাজে, সঙ্গে করে এগুলো নিয়ে যাবো থাকার জন্য। মুখ বুজে সব সহ্য করছিলাম কারণ সিয়ামকে তো আমি ভালোবাসি, তাই তার প্রতি কোনো অভিযোগ রাখতে দেয় নি নিজের। বড় ভাবি এসে কাপড় দেখাতে তিনি হাত থেকে নিয়ে নিজেই ধুয়ে দিলেন, তিনি ভেবেছেন আমি সন্তানসম্ভবা। দুপুরে খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়। আমি এসে রুমে গা এলিয়ে দিলাম ঠিক কিছুক্ষন পর শাশুড়ী মা এসে বলতে লাগলো,তোমার এখানে থেকে কাজ নেই বাপু, ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে ক’দিন থেকে এসো। মায়ের কথায় শোয়া থেকে উটে বসি।মা এসব কি বলছে,যে মা কখনো ভাইয়ের বাড়িতে আমায় পা রাখতে দেয় নি ভাবি আমায় দেখতে পারে না বলে, সেই মা আজ আমায় ভাইয়ের বাড়িতে যেতে বললো কিন্তু কেন। কিছুক্ষণ ভেবে শাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, মা আমি কেন যাবো ওখানে? আমার বাড়ি তো এটাই। আমার কথা শুনে শাশুড়ি মা ভ্রু কুচকে বলতে লাগলো। গেলে কি হয় বাপু? এখানেই কি পরে থাকবা নাকি? শাশুড়ির মায়ের এমন কথায় চোখের পানি টুপটুপ করে অনবরত ঝড়ছিলো। শাশুড়ী মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে পান চিবোতে চিবোতে চলে গেলো। আমি বসে আছি ওখানটায় পাথর হয়ে। শাশুড়ি মা কিসের জন্য আমায় এইভাবে চলে যেতে বললো ভাবছি,মনে মনে ভাবতে লাগলাম সিয়াম তাহলে সব বলে দেয় নি তো? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলমারি থেকে নিজের কয়েক খানা কাপড় বের করে ব্যাগে ভাজ করে নিলাম। রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে গেলাম, গিয়ে দেখি বড় ভাবি শাশুড়ী মায়ের পা টিপছে শশুড় পত্রিকা পড়ছে, শশুড় আমাকে দেখে চোখ নামিয়ে আবার পত্রিকায় মন দেয়। শাশুড়ি মা যেনো দেখেও আমায় দেখে নি। বড় ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে পাশে বসতে বলে। আর সামনে যাওয়ার সাহস পেলাম না টেবিলের উপর জগ থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে বিদায় নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতে রওনা দেয়। ভাইকে ফোন দিয়ে আসছি জানানোতে ভাই খুশিতে আত্নহারা,কিন্তু ভয় হচ্ছে ভাবি যদি কিছু বলে আমায়,থাকতে না দেয় তাহলে আমি নিরুপায় আর কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই। আল্লাহর নাম স্মরণ করে গাড়িতে উটলাম। স্টেশনে এসে গাড়ি থামলো, গাড়ি থেকে নেমে স্টেশনে বেঞ্চিতে বসে আছি কবে ভাই আসবে তার অপেক্ষা। সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনো ভাই আসলো না। এদিকে একা খুব ভয় করছে আশেপাশে অচেনা লোকজন, শরীরটা শিউড়ে উটছে। বারবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি সিয়াম ফোন দিয়েছে কিনা। সিয়ামের কোনো ফোন আসে নি, হয়তোবা রাতে অফিস থেকে ফিরে আমায় ঘরে না পেলে ফোন দিবে এই আশায় ফোনটা একবার চোখ বুলিয়ে ভাইকে ফোন দিলাম। ভাইয়ার মোবাইল বন্ধ। প্রায় অনেকবার ফোন দিয়েছি ভাইয়ার ফোন সুইচঅফ, হতাশ হয়ে পথের দিকে তাকিয়ে আছি। কত যাত্রী আসছে আর যাচ্ছে, এখনো আমি ভাইয়ার জন্য সেই একজায়গায় বসে আছি,ভাইয়া আমাই কবে নিতে আসবে অপেক্ষা করছি। সন্ধ্যায় গড়িয়ে রাত হতে লাগলো ৭টা বাজে। উটে দাড়ালাম বসা থাকে দুর থেকে হাতে টর্চলাইট গলায় মাফলার বাধানো একজন লোক এগিয়ে আসছে,ভালো করে মুখ দেখা যাচ্ছে না তার দুর থেকে । সামনে এসে দাড়িয়ে হাফাচ্ছে ভালো করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি আমার ভাই। ভাইকে দেখে মনে স্বস্ত্বীর নিঃশ্বাস। মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছিলাম ভাইকে পাঠানোর জন্য।ভাই আমাকে নিয়ে বাসায় যেতে লাগলো, গিয়ে দেখি ভাবি কপালে এক হাত দিয়ে বসে আছে, পাশে বাচ্ছা কাদঁছে। মনে হচ্ছে ভাই ভাবির ঝগড়া হয়েছে একটু আগে।ঝগড়ার কথা মাথায় আসতেই ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম আমাকে নিয়ে নয়তো তাদের সংসারে অশান্তি!
.
.
.
চলবে….