#কিশোরী_বউ (সিজন ০২)part _1
#Writer_ কাব্য_আহম্মেদ
– আজ তুমি আসবে না? ( তিথি)
– আসব তো। একটু অপেক্ষা করো না। অফিসে আছি তো। আর আমার কি ইচ্ছে করে না তোমার কাছে আসতে? (আমি)
– মিথ্যা কথা। তোমার একটুও ইচ্ছে করে না আমার কাছে আসতে। আমি পুরনো হয়ে গেছি তাই না?
– দূর! কি যে বলো? তুমি ঠিক আগের মতোই আছো আমার কাছে। শুধু একটু বড় হয়েছো।
– বড় না হলেই ভালো হতো। পিচ্ছি থাকতেইতো বেশী ভালোবাসতে। এখন আর বাসো না।
– ওকে, বাবা। আসছি আসছি।
– হুম।
ফোন কেটে দিলো তিথি।
এগুলো শুধু আমার ভাবনাই ছিল। মনে করছিলাম আগের দিনগুলো। এইতো কয়েকদিন আগেই সম্পর্কটা বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন? এখন সেটা অবহেলায় পরিণত হয়েছে।
এতক্ষণ কি সব বললাম? বুঝেন নি তো। চলুন বিস্তারিত বলা যাক –
হ্যা, সেদিনের পর তিথি আর আমার ভালোবাসা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল। তিথিও ভালোবাসতো অনেক। আর আমিতো নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করতাম। যেটা চেয়েছিলাম সেটা পেয়ে গেছি। আমি চেয়েছিলাম, আমার পিচ্ছি বউয়ের ভালোবাসা।
,
তিথি তখনো কেবল ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষে উঠেছিল। তিথি বারবারই আমার কাছে ওর অধিকার চাইছিল। পিচ্ছি মেয়ে একটুও বুঝে না যে, এতে ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে। ওর স্বপ্ন পূরণে বাধা হবে।
,
আমি তিথির পড়াশোনা আর স্বপ্নের ব্যাপারে ভেবে নিজেকে কন্ট্রোল করতাম। বারবার হারিয়ে যেতাম তিথির স্নিগ্ধতায়। ডুবে যেতাম তিথির মায়ার সাগরে। তখন কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে চাইলেও হারিয়ে ফেলিনি। নিজেকে শক্ত করে রেখেছি।
অনেক বছর কেটে গেলো তিথি তখন অনেক বড়। অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ত। তখনই কোনো একদিন হেরে গিয়েছিলাম নিজের কন্ট্রোল ক্ষমতার কাছে। ছুঁয়ে দিয়েছিলাম তিথিকে। তিথিকে অধিক খুশিতে সেদিন আমাকে জরিয়ে ধরে সেকি কান্না।
হ্যা, সেদিনই পেয়ে গিয়েছিলাম আমার অধিকার। আমার পূর্ণ অধিকার। দিয়েছিলাম তিথিকেও তার অধিকার।
তবে সাবধান ছিলাম তিথির কন্সিভের ব্যাপারে। এখনই যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কিছু ঘটে তাহলে তিথির পড়াশোনার ক্ষতি হবে। মেয়েটা যে অতিরিক্ত পড়াশোনা প্রিয়। সেটা ভুলিনি আমি।
প্রতিটা পরীক্ষার সময় তিথি আমাকে তার পাশে বসিয়ে রাখত। আমি বসে থেকে থেকে ওর পড়া দেখতাম। তিথি কখনো আমার কাধে মাথা রেখে পড়ত। কখনো হাত জরিয়ে ধরে। আবার কখনো ঘুমিয়ে পড়ত।
পড়া শেষ আমার বুকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। হ্যা, তিথি পেরেছে। প্রতিটি পরীক্ষায়ই সাফল্য অর্জন করেছিল।
তারপর তিথির পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে তিথিকে আমার থেকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করলাম। আমাদের একটা ফ্ল্যাট ছিল খালি। তিথির কলেজের পাশেই ছিল। সেটাতেই তিথিকে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। না, হয় যে ক্ষতি হবে যাবে তিথির পড়াশোনায়।
,
( সেদিন)
– তুমি খুব খারাপ, খুব পচা। আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো। বুঝেছি আরেকটা বিয়ে করেছো। সেই বউয়ের সাথেই থাকবে বলে আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো।
( তিথি)
কান্না করতে করতে বলল।
আমি খানিকটা হেসে দিলাম। যদিও মনটা খুব খারাপ। আমার পিচ্ছি বউটা আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। যদিও খানিকটা দূর।
আমি তিথির চোখের পানি মুছে দিলাম,
– পাগলী, এরকম কিছুই না।
– তাহলে।
– আমিতো একটা পুরুষ তাই না।
– তো।
আমাকে আঠকে দিয়ে বলল তিথি।
– আমার কথাটা সম্পূর্ণ করতে দিবে তো।
– হুম, বলো।
– আমিতো একটা পুরুষ। বউকে কাছে পেলে শুধু রোমান্স করতে ইচ্ছে করে। আর এমনিতেই তুমি যা কিউট। আমার তো সারাক্ষণ তোমার সাথে রোমান্স করতে ইচ্ছে করে। এরকম করলে তো তোমার পড়াশোনার ক্ষতি হবে তাই না?
( আমি)
– না, হবে না। এতোদিনই তো আমি তোমার কাছেই ছিলাম। কেনো আমার ফলাফল ভালো হয়নি? আমার পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে কি?
( তিথি)
– তিথি, সেটা না। তুমি বুঝার চেষ্টা করো।
– নাহ, আমার আর বুঝতে হবে না। আমি জানি তুমি আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাও। আমি পুরনো হয়ে গেছি তাই না?
কাঁদতে কাঁদতে বলল তিথি।
আমি তিথিকে ঠান মেরে বুকের সাথে চেপে ধরলাম। কোমড়ে হাত রাখলাম,
– কান্না করো না প্লিজ। আমি কি তোমার কাছে আর যাবো না? কয়েকদিন পরপরই তোমার কাছে যাবো। আর তোমার পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলে তো এমনিতেই তুমি পার্মানেন্টলি এখানে চলে আসবে।
তিথি কোনো কথা বলল না।
– তিথি, মন খারাপ করো না প্লিজ। তুমি না খুব লক্ষী মেয়ে। আমার লক্ষী বউ।
– হইছে আর পাম দিতে হবে না।
– আচ্ছা, তোমার ঐ বান্ধবীকে বলেছোতো তোমার সাথে থাকতে।
– হুম।
– রাজি?
– হবে না। এমনিতেই তো ওও এমন একটা হোস্টেলে থাকে যেখানকার পরিবেশ খুব খারাপ ধরনের। আর এখানেতো ভালো ফ্লাটে থাকবে আর সবচেয়ে বড় কথা ফ্রিতে।
– হুম। তোমার বেষ্টি বলে কথা। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
মানা না করে যায় কোথায়?
– ঘোড়ার ডিম।
ফিক করে হেসে দিলো তিথি। আমারও মন ভালো হয়ে গেলো।
তারপর থেকে তিথি ওর বান্ধবীকে নিয়ে ঐ ফ্লাটেই উঠল। আর এখন তিথি আমাকে তুমি করেই সম্বোধন করে।
প্রতিদিনই ফোনে কথা হতো। দু-দিন পরপরই দেখা করতে যেতাম তিথির সাথে। তিথিও আমার জন্য অপেক্ষা করতো। শাড়ি পড়ে সাজুগুজো করে বসে থাকত। কলিং টিপার সাথেই সাথেই দরজা খুলে দিতো। মনে হয় দরজার পাশেই থাকে।
তিথির পড়াশোনাও বেশ ভালোভাবেই চলছিল। তিথি এখন ডাক্তারি পজিশনে পড়াশোনা করছে। তিথির স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়া। আর সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল তিথি।
,
কিন্তু, ভাবিনি তিথির এগিয়ে যাওয়াই হবে আমার জন্য অবহেলা। তিথি যোগাযোগ প্রায় কমিয়ে দিচ্ছিল। খুব কমই কথা হতো। ফোন করলে পড়াশোনার অজুহাত দেখাত। আর সপ্তাহে একদিন দেখা করা ফিক্সড করেছিল। কিন্তু, আমি সপ্তাহে দু-তিনদিনই যেতাম।
পিচ্ছি বউটাকে না দেখে থাকাটা যে ভিষণ দায়। তিথি অতিরিক্ত ব্যাস্ত হয়ে থাকত পড়াশোনায়। খুবই কম সময় দিতো আমাকে। বাসায় গেলেও দেখতাম আগের মতো আর শাড়ি পড়ে না। সাজুগুজো করে না। কলিংবেল টিপার সাথে সাথেই দরজা খুলে দেয় না। রান্না করে নিজের হাতে খাওয়ায় না। আমার হাত খাওয়ার জন্যও আগের মতো আবদার করে না।
( বর্তমানে)
তিথিকে বারবার করে কল দিচ্ছি তিথি বারবার কেটে দিচ্ছে। রিসিভই করছে না। শেষে একবার রিসিভ করল। আমি কিছু বলার আগেই বলতে শুরু করল,
– কি সমস্যা তোমার? সেই কখন থেকে কল করে যাচ্ছো। তোমাকে না বলেছি এই সময় আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসে থাকি। তবুও ডিস্টার্ব করছো কেনো?
( তিথি)
বিরক্তি আর রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল তিথি।
আমার না চাইতে চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। আমি সচরাচর তিথির এই ব্যবহারে অভ্যস্ত নই। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। মানলাম তোমার ক্লাস আছে। একটা মেসেজ করে সেটা বলে দিতে পারতে। ফোনে ধরে নরম করে কথা বলতে পারতে।
– কি হলো কথা বলছো না কেনো?
( তিথি)
– হ্যা, বলছি তো। কেমন আছো?
– উফ, এটার জন্য কল করেছে? সকালেইতো এটা জিজ্ঞেস করলে।
– তবুও জিজ্ঞেস করতে মন চাইল।
– ভালো আছি।
বিরক্তি নিয়ে বলল।
– ওহ।
– ওকে, এখন রাখছি। ( তিথি)
– হুম।
বলার আগেই তিথি ফোনটা কেটে দিলো। সত্যি আমার পিচ্ছি বউটা অনেক বড় হয়ে গেছে। সেই সাথে পালটে গেছে ওর কথা-বার্তা, চাল -চলন।
( তিথি)
ইশ! এখনো ফোন করছে না কেনো গাধাটা? মনে হয় কষ্ট পেয়েছে। খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। কাব্য বেশ পালটে গেছে। আগে কিছু বললে সেটাতে কষ্ট পেতো না। বরং অভিমান করতো। কিন্তু, এখন! কিছু বললেই কষ্ট পায়। ভাবতে ভাবতে মোবাইল হাতে নিয়ে কল করল তিথি।
তিথি ফোন করেছে। বেশ! অবাক হলাম। একটু আগেইতো বিরক্তি নিয়ে ফোন রেখে দিলো। ফোন রিসিভ করলাম,
– হ্যালো। (তিথি)
– হ্যা, বলো।
– কি বলব?
– ফোন করলে যে, তোমার না গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে। (আমি)
– এসব বাদ দাও। আগে বলো কল করেছিলে কেনো?
– মানে!
– মানে, একটু আগে কল করেছিলে কেনো? কোন দরকার?
– নাহ, এমনি।
– এমনি কল করার কোনো প্রয়োজন নেই। দরকার হলো কল করো। না হয় ডিস্টার্ব করার কোনো প্রয়োজন নেই।
রেগে বলল তিথি। টুত টুত করে ফোন কেটে দিলো।
সব মাথার উপর দিয়ে গেলো আমার।
( তিথি)
খুব রাগ হচ্ছে। আগে তো কল করলে বলতো ” তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। তাই কল করেছি “।
কিন্তু, এখন দেখুন। বুঝি তো সব বুঝি আমাকে আগের মতো আর ভালোবাসা হয় না। মানছি কয়েকদিন ধরে অবহেলা করছি ওকে। তাই বলে এই অবহেলা এভাবে নিবে সে। আমাকে জরিয়ে ধরে বলতেইতো পারে যে,” তুমি কিন্তু অবহেলা করছো আমাকে। আমি অবহেলা নয় ভালোবাসা চাই তোমার ”
কিন্তু, কাব্য এখন বলে না এগুলো। কি মনে হয় ওর? বড় হয়ে গেছি আমি। তাই বলে আগের মতো ভালোবাসবে না। কিন্তু, আমি তো আগের মতোই ভালোবাসা চাই। নতুন করে কোনো ভালোবাসা চাই না।
সামিরা ঠিকই বলেছে, ” অবহেলা করলে তোর কাব্যর ভালোবাসা পিছন দিকের দরজা দিয়ে পালাবে ”
এখন তো দেখছি ঠিক তাই হচ্ছে।
,
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছি। তিথি, তিথি, তিথি। সারাক্ষণ শুধু তিথি নিয়েই চলছে মনে হরতাল। ভাবলাম কি আর হলো কি?
ভাবলাম তিথি যেহেতু ফোন করেছে। সেহেতু নিশ্চয়ই বলবে, “সরি, আগে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। ”
কিন্তু, হলো ঠিক তার উলটো। তিথি রেগে মেগে কল কেটে দিলো। এতো রাগে তো তিথি আমার উপর দেখাতো না। তাহলে কেনো করছে এসব তিথি।
( তিথি )
হ্যা, রাগ করেছি ওর উপর। আমার অধিকার আছে রাগ করার। আমি কি সাধে রাগ করি? বোকারাম একটা। বুঝে না যে, কি চাই আমি?
হ্যা, ওকে বলেছিলাম সপ্তাহে একবার আমার সাথে দেখা করতে আসতে। কিন্তু, সেটা রেগে বলেছিলাম। আমি রেগে ছিলাম ওর উপর।
আমার প্রতি এই ভালোবাসা ওর। এতো যদি ভালোবাসত তাহলে এতো কান্নাকাটির পরও আমাকে আলাদা ফ্লাটে থাকতে দিতে পারত। আবার আমার পড়াশোনার বাহানা করে। আমি কি কখনো খারাপ রেজাল্ট করেছি নাকি? কতো করে চাইলাম ওর সাথে থাকতে আর ও কি না আমাকে ওর থেকে দূরে থাকার জন্য পাঠিয়ে দিলো। নিশ্চয়ই আরেকটা বিয়ে করেছে।
বেশ করেছি। সপ্তাহে একদিন আমার সাথে দেখা করতে বলছি। এখন তো মনে হচ্ছে বললাম না কেনো যে, ” আর জীবনেও দেখা করবি না আমার সাথে “।
তিথি রেগে হাত মোচড়াচ্ছে।
আগেতো রাগ করার পরও সপ্তাহে দু-তিন দিন দেখা করার জন্য আসত। কিন্তু, এখন! এখন ঠিক সপ্তাহে একদিন আসে। এতোটা গুরুত্ব দিতে হবে আমার রাগের। না, হয় বলেই ফেলেছিলাম ভুল করে।
আর ও কি না সেটাই পালন করছে। নিকুচি করি তোর ভালোবাসার।
ঠোঁট ভেঙে কান্না করে দিলো তিথি। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
– কিরে তিথি? কাঁদছিস কেনো? ( সামিরা)
– আমার যা মন চায় করব। তাতে তোর কি?
রেগে গিয়ে বলল তিথি।
– আরে বাবা। আমি আবার কি করলাম? এতো রেগে কথা বলছিস কেনো?
– বেশ করেছি! যা আমার সামনে থেকে।
– আচ্ছা, যাচ্ছিরে বাবা। কখন আবার ফেটেফুটে যাবি।
– আবার দাঁড়িয়ে আছিস।
ধমক দিলো তিথি।
– আরে যাচ্ছিতো।
সামিরা চলে গেলো। ” এই মেয়েটার মাঝে মাঝে যে কি হয়? আল্লাহই জানেন। ”
মনে মনে বলল সামিরা।
,
আচ্ছা, তিথির এই অবহেলার পিছনে কারন কি? কি এমন দোষ করেছি আমি? যার জন্য তিথি আমাকে এতো অবহেলা করছে।
– স্যার, আসতে পারি?
– ওও, হ্যা আসুন।
ম্যানেজার সাহেব রুমে ডুকলেন,
– বাসা যাবেন না? রাত হয়ে গেছে তো।
– হুম।
আনমনা হয়ে বললাম।
– আচ্ছা, আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে আছেন? কিছুদিন ধরে আপনাকে টেন্স দেখাচ্ছে।
– নাহ।
– ওও। আচ্ছা, আমি এখন যাই স্যার?
– হুম।
ম্যানেজার সাহেব চলে গেলেন। আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম। শশুড় সাহেবের সাথে দেখা। উনাকে এতো করে বলার পরও উনি এই চাকরীটা ছাড়েন নি।
উনি এই কেয়ারটেকার এর চাকরীটাই করবেন।
– কেমন আছো বাবা?
– ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– ভালো বাবা, আচ্ছা আমার তিথিমনিটা কেমন আছে?
– খুব ভালো।
– হুম, তুমি আমাকে শান্তি দিলে বাবা। তিথিকে তোমার হাতে তুলে দিতে পেরে আমি নিজেকে একজন শ্রেষ্ট বাবা মনে করছি। এখন মরেও শান্তি পাবো। তোমার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ বাবা।
– আরে একি বলছেন আপনি? আপনি একটুও চিন্তা করবেন না প্লিজ।
– হুম, আমার আর চিন্তা করার কি আছে? তুমি তো আছোই।
আমি একটা হাসি দিলাম। গাড়িতে এসে বসলাম। তিথির অবহেলা আমাকে প্রচুর ডিপ্রেশনের মধ্যে ফেলে দিছে।
কেনো করছে এমনটা তিথি? কয়েকটা দিনের মধ্যেই এতো পরিবর্তিন। আগের মতো আর পাগলামি করে না তিথি। মিস করি তিথির পাগলামি গুলো।
বাসায় এসে পড়লাম। আম্মু কফি করে দিলেন। বারান্ধায় বসে খেতে লাগলাম। এতোটা একা নিজেকে আর কখনো মনে হয়নি।
মোবাইল হাত নিয়ে বসে আছি। তিথি কখনো কল করবে কি? আমার আশা করাটাই বৃথা।
( তিথি)
উফফ! একটুও পড়তে পারছি না। বারবার মোবাইলের দিকে চোখ যাচ্ছে। কাব্য কখন কল করবে। আজ বাসায়ও এলো না। অবশ্য না আসারই কথা। আরো একদিন আছে। আজ ৫দিন হলো ওর আসার। ৫দিন আগে একবার এসেছিল কাব্য। আরো দুইদিন পর আসবে। একদিন আগে এলে কি সমস্যা? আমার এই একটা কথার এতো গুরুত্ব। কিন্তু, সেদিন তো আমি খুব কান্নাকাটি করে বলেছিলাম যেন, আমাকে ওর থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়। সেদিনের কথার কোনো গুরুত্ব ছিল না ওর কাছে।
এতো ভেবে লাভ নেই। এমনিতেই অনেক পড়া। কিন্তু, পড়তেই তো পারছি না। গাধাটা ফোন দিচ্ছে না কেনো?
একটুও ভালোবাসে না আমাকে। আগের মতো কাছে টেনে নেয় না। আর আমি কি করে বলি যে ভালোবাসো আমাকে। আর আমি মেয়ে হয় কি করে ওকে কাছে টেনে নেই।
,
নাহ, আর পারছি না থাকতে কল করলাম তিথিকে। তিথি ফোন রিসিভ করল। কিছুক্ষণ নিরবতা। তারপর,
– কি হলো কথা বলছো না কেনো? ( তিথি )
– সরি, তোমার গলার স্বরটা শোনার ইচ্ছে করছিল। তাই ফোন করলাম।
তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা।
– তো, সরি বলার কি আছে?
– জানি, ডিস্টার্ব হচ্ছো তুমি। তোমার পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে। তাই সরি বললাম।
– হ্যা, ডিস্টার্ব হচ্ছি আমি। কল রাখো এখন।
রাগ করে ফোন কেটে দিলো তিথি।
( তিথি )
খুব কান্না পাচ্ছে। এতোটা চিনল ও আমাকে। আমি ওর সাথে কথা বলতে ডিস্টার্ব হই। ওর কথা শুনে বিরক্ত হই।
কাব্য তুমি কেনো বুঝনা? তোমার একটা কথা শোনার জন্য আমি প্রতিটা সেকেন্ড অপেক্ষা করি। আমার কি ইচ্ছে করে না তোমার সাথে কথা বলতে?
হো হো করে কেঁদে দিলো তিথি। ওয়াসরুমে ডুকে শাওয়ার ছাড়ল। এই রাতের মধ্যেও গোসল করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। শাওয়ারের নিচে হো হো করে কাঁদতে লাগল। নিজেকে হালকা করার পদ্ধতি অবলম্বন করছে তিথি।
,
জানতাম এমনটাই করবে তুমি। তবুও কল করলাম বেহায়ার মতো। তোমার কথা শুনতে ইচ্ছে করে খুব। তাইতো কল করি। আর তুমি বরাবরের মতোই খারাপ ব্যবহার করো আমার সাথে।
( দু-দিকে দুজন। দুজনেরই মনে অভিমান পাহাড়সম। একজনের উপর আরেকজনের পাহাড়সম অভিযোগ। কবে মিটবে তাদের অভিযোগ।)
চলবে………