কুহকিনী,পর্ব: ৩

0
1827

কুহকিনী,পর্ব: ৩
Tuhina pakira

কুহকিনী বিছানা থেকে শাড়িটা নিয়ে যেতে গেলেই, অহন বলে উঠলো, ” এই শোনো।”

-” বলুন?”

-” আমার ফোনে একটা গান চালিয়ে দিয়ে যাও। তোমরা মেয়েরা খুব লেট করো রেডি হতে।”

-” বলেছে আপনাকে।”

কুহকিনী ভেংচি কেটে অহনের ফোনটা হাতে নিলো, কিন্তু ফোন বাবাজি পাসওয়ার্ড এন্টার করতে বলছে।

-” এই যে, আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড বলুন?”

-” বলা যাবে না, আমার ফোন দাও দেখি। আমি লক খুলে নিচ্ছি। ”

কুহকিনী মুখ ঘুরিয়ে দুষ্টু হেসে ফোনটা অহনের সামনের টেবিলে রেখে চলে যেতে গেলে অহন বললো, ” হাতটা তো খুলে দাও।”

-” দেওয়া যাবে না। আমি আসি, এসে আপনাকে ওই – পালঙ্কের মধ্য হইতে মুক্ত করিয়া দিয়া যাইবো, তদ্যাপি আপনি এই বন্ধনের মাঝেই উপবিষ্ট থাকুন স্বামী।”

-” এই দাঁড়াও, এখানে এসো।”

কুহকিনী অহনের কাছে এগিয়ে গেলো। অহন চোখের ইশারায় ওকে ফোনটা নিতে বললো। কুহকিনী ফোনটা নিয়ে অহনের দিকে তাকালো। আজ বাছাধনকে বাগে পেয়েছে, আজ ও জেনেই ছাড়বে এই ফোনের পাসওয়ার্ড কী? বিয়ের পর একদিন যদিবা দেখেছিল অহন ঘুমের ঘোরে ফোনের লক খুলছিল। কিন্তু পরে ওই প্যাটার্নে আর লক খুলতেই পারেনি। ছেলেটা বড্ড চালাক, ঘুমের ঘোরে বুঝেছিল যে, কুহকিনী হাঁ করে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। তাই পড়ে চেঞ্জ করে দিয়েছে। কিন্তু আজ তো বলতেই হবে।

-” কী হলো, বলুন?”

-” কুহু।”

কুহকিনী ভ্রু কুঁচকে অহনের দিকে তাকিয়ে রইল। অহন মুখটা বেঁকিয়ে বললো, ” ওই ভাবে দেখছো কেনো? ‘ কুহু ‘ আমার ফোনের পাসওয়ার্ড। বানান করলে হয় কে( k) , ইউ( u), এইচ( h), ইউ( u)।”

কুহকিনী মুখ বেঁকিয়ে বললো, ” জানেন না বিয়ের পর স্বামীর সব কিছুতে স্ত্রীর অধিকার, আর আপনি কিনা কোন না কোন মেয়ে; তার নাম ফোনের পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছেন। বলি আপনি কি কিছুই জানেন না! বিয়ের সময় মন্ত্র ঠিক মত উচ্চারণ করেছিলেন কিনা এখন তো আমার ডাউট হচ্ছে।”

অহন মুখ ভেঙিয়ে বললো, ” এই তুমি বেশি বকো।
তবে একটা কথা ঠিক বলেছো, বিয়ের সময় মন্ত্র ঠিক বলেছি কিনা বলতে পারছি না। বিয়ের পুরোহিত ঠিক মন্ত্র বলে থাকলে আমি ঠিক মন্ত্র পড়েছি, আর পুরোহিত যা তাড়াতাড়ি ওই মন্ত্র পড়ছিল, তার উপর সব ইয়া বড়ো বড়ো শব্দ। তবে আমি সবই পড়েছি, তাড়াতাড়ি করেই পড়েছি। তবেই না তোমার মতো এক পক্ষীকে বিয়ে করেছি।”

-” বেশি কথা না ঘুরিয়ে বলুন এই কুহু কে? নাহলে আমি আপনার মাথার সব চুল ছিঁড়ে ফেলবো বলে দিলাম। ”

অহন নিজের স্ত্রীর রাগী মুখখানা দেখে বোঝার চেষ্টা করলো, কুহকিনী কী জেলাস। তার পর মুখে শয়তানী হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বললো, ” বউ আমার।”

কিন্তু কুহকিনী কথাটা ঠিক মত শুনতে পেলো না,
-” কী হলো বলুন, কে এই ‘কুহু ‘?”

-” আমার ঠাকুরদাদার নাতবউয়ের এক মাত্র কিউট, হ্যান্ডসাম বরের একমাত্র ঝগড়ুতে বউ।”

কুহকিনী হাঁ করে একবার অহনকে দেখে বললো, ” আরেকবার বলুন। ”

-” খাশ খবর একবার।”

-” খবর দেখেননা! ওখানে খাশ খবর চোদ্দো বার দেখায়।”

-” তাতে আমার কি? আমি এক কথা বারবার বলি না।”

কুহকিনী মুখ বেঁকিয়ে অহনের ফোনের লক ওপেন করে গান চালিয়ে ওয়াশরুমে দিকে পা বাড়ালো। যাবার আগে কেবল বলে গেলো, ” আমারও সময় আসবে মিস্টার।”

অহন ওর যাবার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। তারপর নিজের হাতের দিকে তাকালো। কিন্তু এ কী, এই মেয়ে তো ভালো করে হাত বাঁধেই নি। কেবল শাড়ি দিয়ে জড়িয়ে দুটো ফাঁস দিয়েছে। কিন্তু মোটা শাড়ি হওয়ায় ঠিক মতো ফাঁস পড়েনি হাতে। অহন হাতটা কয়েকবার ঘুরিয়ে শাড়ি থেকে হাত আলাদা করে ফেললো।

-” বউ তুমি বড্ড ভীতু, হা হা।”

•♣

মিনিট দশেক পর কুহকিনী ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে বলল,

-” এই বার যান আপনি।”

কথাটা বলার পরমুহুর্তে মনে হলো ও অহনের হাত বেঁধে দিয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎই ও পাশ দিয়ে কাউকে যেতে দেখে চমকে উঠলো।

-” কে, কে?”

কুহকিনীকে অবাক করে অহন বললো, ” আরে আমি। ”

কুহকিনী যেনো জান ফিরে পেলো। কিন্তু অহনকে তো ও বেঁধে দিয়ে গেলো।

-” আপনি হাত খুললেন কী করে? ”

-” এতো সুন্দর হাত বাঁধলে চোর তো চুরি করে চলে যাবে। সে কি তুমি জানো, স্টুপিড।”

অহন ওয়াশরুমে চলে গেলো। কুহকিনী ওকে একটা ভেংচি কেটে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিলো। নিজেকে একবার আয়নায় দেখে বিছানায় গিয়ে বসলো।

কিন্তু মাথায় ঘুরছে সব অন্য কথা। এখানে আসার আগে ওর এক ফ্রেন্ড বলেছে, পুরোনো বাড়ি গুলো সব ভূতের আড্ডা। তখন ভয় না লাগলেও এখন লাগছে। একা এই অচেনা বাড়িতে বসে রয়েছে, ভয় তো হবেই।

কিছুক্ষণ পর অহন বেরিয়ে এলো। অহন একবার ওর ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

-” আপনাদের বাড়িতে কী ভূত আছে?”

কুহকিনীর কথায় অহন হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে মুখে শয়তানী হাসি ফুটিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।

-” কী হলো, বললেন না যে?”

-” যদি বলি নেই, কী করবে?”

কুহকিনী লাফিয়ে উঠলো, ” নেই, বাহ্ খুব ভালো।”

অহন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, যাওয়ার সময় বললো, ” তাহলে নেই, তাই ভেবে নাও।”

অহনের কথায় মুখ চুপসে গেল কুহকিনীর। ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়ে অহনের হাত চেপে ধরলো,

-” তার মানে আছে! ”

অহন মুখ টিপে হেসে বলল, ” এই হাত ছাড়ো।”

কুহকিনী অহনের হাতের দিকে তাকিয়ে আরও শক্ত করে চেপে ধরলো,

-” না ছাড়বোনা। আমার বরের হাত, আপনার কি?”

-” আমার আবার কী? কিছু না। ”

কুহকিনী মুখ বেঁকিয়ে অন্যদিকে তাকালো। অহন ওকে ওর আরেকটু কাছে এনে বললো, ” চলো বউ, নাহলে ভূত এসে যাবে।”

কুহকিনী কে বারবার খেয়ে নিতে বললেও ও খেতে বসেনি। ওর কথা ও শেষে অহনের বড়ো জেঠিদের
সঙ্গে একসঙ্গে খাবে। অহনের বড়ো জেঠিমা ওকে বারণ করলেও দুই জেঠিমার বাড়ির ছোটো বউয়ের ব্যবহার খুব ভালোই লেগেছে। দুই জা তাই মনোযোগ দিয়ে দুই বৌমার কাজ দেখছে।

বর্তমানে দিয়া আর কুহকিনী দুজনে মিলে সবাইকে খাবার পরিবেশন করছে। কুহকিনী অহনকে তরকারি দিয়ে চলে আসতে গেলেই মনে পড়ে গেল অহনের কথা গুলো। ভয়ে একবার চারিদিক দেখে ঢোক গিলল কুহকিনী। আবারও অহনকে তরকারি দিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

-” এই শুনুন, খাওয়া হয়ে গেলে ঠাকুর দালানের কাছে গিয়ে বসবেন। খবরদার উপরে যাবেন না।”

অহন কেবল ওর দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে হাসলো। ভালোই ভয় পেয়েছে মেয়ে।

(চলবে)
{ বিঃ : ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here