কূপমণ্ডূক অথবা বিশ্বাসী ~আরিফুর রহমান মিনহাজ পর্ব ১

0
1637

#ছোটগল্প
কূপমণ্ডূক অথবা বিশ্বাসী
~আরিফুর রহমান মিনহাজ
পর্ব ১

সুদীর্ঘ সতেরো বছর পর নিজের মেয়ের সঙ্গে দেখা। শাহনাজ পারভীন কখনো ভাবেননি এটি সম্ভব হবে। যেই নাড়িছেঁড়া ধনকে চারবছর বয়সে বাবার কাছে গচ্ছিত রেখে বিদায় নিতে হয়েছিল চিরতরে, সেই কন্যা এখন পূর্ণযুবতী হয়ে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আপাদমস্তক বোরকায় আবৃত হওয়ায় প্রথমটা চিনতে অসুবিধে হয়েছিল। পরক্ষণেই যখন কালো নেকাবের পর্দা উঠে গিয়ে প্রভাতসূর্যের প্রথম রোশনাই-এর মতো উদ্ভাসিত হলো মুখটি তখন মা-মেয়ে গভীর আশ্লেষে মিলিত হলো। মেয়ে উমাইরা হাসনাত বুদ্ধি হবার পর এই প্রথম মা’কে কাছে পেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেও পরক্ষণেই সামলে নিল নিজেকে। পারভীন চোখ মুছে বললেন,
– এসো ভেতরে। একটা ফোন করলেও তো পারতে,আমি স্টেশনে লোক পাঠিয়ে দিতাম!
উমাইরা শান্ত-স্নিগ্ধ স্বরে বলল,
– আমার কাছে মোবাইল নেই।
পারভীনের অন্তস্তলে ক্ষোভের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত হয়ে উঠল৷ সেটুকু গোপন করে তিনি শান্ত বিদ্রুপের স্বরে বললেন,
– তোমার বাবা তোমাকে একটা মোবাইলও কিনে দেয়নি!
উমাইরা মৃদু হাসল,জবাব দিল না। পারভীন মেয়েকে দুহাতে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে অন্তরঙ্গ সুরে বললেন,
– সবকিছু ঠিকঠাক তো! পালিয়ে এসেছ, জানে বাড়ির সবাই?
– এতক্ষণে হয়তো জেনে গেছে। তাছাড়া কাকা-কাকী তো জানেই। ওরা ঠিক সামলে নেবে।
– আচ্ছা যাইহোক। অনেক কথা বাকি আছে। দুপুরে খেয়েদেয়ে, একটু শুয়ে তারপর। নাও এখন বোকরাটা খুলে ফেল। বলতে বলতে পারভীন নিজেই মেয়ের বোরকা খুলতে উদ্যত হলেন। উমাইরা এত খাতিরে অভ্যস্ত নয় বলে আড়ষ্ট হয়ে আপত্তি জানিয়ে বলল,
– না আমিই খুলছি।
– সবসময় এটা পরে বেরোও নাকি!
পারভীনের কণ্ঠে কেমন যেন শ্লেষের সুর। উমাইরা বোরকা খুলতে গিয়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো কানের দুপাশে গুঁজে দিয়ে বলল,
– হ্যাঁ, কেন?
– কিছু না এমনিই। ফ্রেশ হয়ে নাও।

দুপুরে খেয়েদেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে একঝলকে অতীতে ফিরে গেল উমাইরা৷ উমাইরার বাবার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর মা শাহনাজ পারভীনের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। লোকে বলতো, দেখতে পরীর মতো সুন্দরী ছিলেন পারভীন। যে পথে তিনি যেতেন সেপথের স্রষ্টার সমস্ত সৃষ্টি যেন স্তব্ধ হয়ে বিমুগ্ধ নয়নে তাকাতেন তার দিকে। কাজেই পুরনো দিনের গল্প-উপন্যাসের মতো তালাকপ্রাপ্তা বলে বাপের বাড়িতে অবহেলিত হতে হয়নি। অশ্রুজলে হৃদয় ভাসিয়ে গাঁটরি-বোঁচকা বেঁধে যেদিন বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠলেন সেদিনের পর থেকেই মাকে ‘বিবাহ করিতে ইচ্ছুক’ পাত্রদের ভিড় লেগে থাকত নানাজানের কাছে। উমাইরা রয়ে গেল বাবার কাছে। বাবার প্রভাবপ্রতিপত্তি ছিল সমাজে,টাকার জোরও নেহাত কম ছিল না। অন্যদিকে নানাজানের সেরকমটা ছিল না। কারণেই পাঁচ বছরের সাজানো-গোছানো সংসার ছেড়ে পারভীনকে একলাই ফিরে যেতে হলো। তাছাড়া,তাঁকে পুনরায় বিয়ে দেবেন এই আশাতেও পারভীনের পরিবার গর্ভজাত কন্যাকে আনার বিষয়ে বিশেষ জোরাজুরি করেনি। দুধে-ভাতে থাকব বলে বাপের কাছেই রেখে এসেছিল। উমাইরার বয়স তখন সবে চার বছর। বাড়ির অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে নূরানী কায়দার বই নিয়ে মক্তবে আসা-যাওয়ার অভ্যেস করছে। মক্তবের হুজুর তাকে বিশেষ গ্রাহ্য করত না,ছোট বলে। আসছে-যাচ্ছে এই তো বেশ! ফলতঃ বলা চলে,সেইসময়কার পারিবারিক হালহকিকত তার কিছুই জানা নেই। কথিত আছে,পারভীন ছিলেন বেশ উড়নচণ্ডী। মেট্রিকুলেশন পাস দিয়েছিলেন বলে তার অহংকারে সীমা ছিল না। রক্ষণশীল একটি সমাজে বসবাস করার পরও বেপর্দায় এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরঘুর করতেন। কাউকে না বলে নিজের খেয়াল-খুশিমতো মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করে ফিরতেন। পরপুরুষের সঙ্গে অবাধে হাসিঠাট্টা করতেন। বলা উচিত,উমাইরার বাবা ছিলেন সৌদি প্রবাসী। মেলা বড়লোক। বছরে একবার করে দেশে আসেন আর এনিয়ে বউয়ের সঙ্গে তুমুলঝগড়া লাগান। গৃহস্থ ঘরের বউ কেন এমন লাজহীন হয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরবে? তার কাছে কেন নালিশ আসবে। দুজনার সম্পর্কটা যখন ক্রমে ক্রমে বিষাদময় হয়ে উঠল ঠিক তখনি, উমাইরার বাবা প্রবাসেই এক বাঙালি কর্মচারীর প্রেমে মজে গেলেন। দৈবক্রমে পারভীন যখন জানতে পারলেন,তার স্বামী ঘরে বউ-বাচ্চা রেখে পরের মেয়ের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াচ্ছেন তখন তিনি আরো উগ্র হয়ে উঠলেন। তার আচার-আচরণে নতুন প্রকরণ যোগ করলেন। পরিচিত-অপরিচিত সমস্ত পুরুষের সামনে তিনি বেশ খানিকটা বেআবরু হয়ে গেলেন। কথায় কথায় আদিরসাত্মক মন্তব্য আর টিপ্পনী কাটায় ঘরের বউ থুড়থুড়ে বুড়িদেরও ছাড়িয়ে গেল। আশেপাশের কিশোর থেকে থেকে শুরু করে যৌবনের আবেদন শিথিল হয়ে আসা বুড়োরাও তাঁকে নিয়ে মজা লুটতে লাগল। চারিদিকে ঢি-ঢি পড়ে গেল। উমাইরার বাবার কানেও নালিশ আসতে শুরু করল। কিন্তু আহত বাঘিনী পারভীনকে দমানো গেল না। উমাইরা বাপও মওকা পেয়ে বসে পারভীনকে তিন তালাক দিয়ে দিল আর মাসদুয়েকের মাথায় সেই প্রবাসী কর্মচারীকে বিয়ে করে ঘরে তুলল। উমাইরার সেই তো সবে কলির সন্ধ্যা। পৃথিবীর সিংহভাগ সৎমায়ের আচরণ কেমন হয় তা কারোরই অজানা নয়। বিমাতার অসদাচরণের বিষবাষ্পের মধ্যে ছোট্ট উমাইরা বড় হতে লাগল৷ কাকা-কাকীর কল্যাণে ইশকুলের বদলে ভর্তি হলো মাদ্রাসায়। তিন ক্লাস নূরানী পড়ানোর পর নূরানীর হুজুর দেশে থাকা বর্তমান অভিভাবক আপন কাকাকে ডেকে বললেন,‘মিয়া,তোমার ভাইঝির মাথা পরিষ্কার। হাফেজি লাইনে দিয়ে দাও।আমি বলতেসি ও ভালো করবে।’
উমাইরার আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, কাকা কেমন যুদ্ধ করে বাবার সম্মতি আদায় করে তাকে মফস্বলের মহিলা আবাসিক মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছিল। আর মনে পড়ে বিমাতার বেজার মুখ। তিনি বলেছিলেন,
– মেয়ে মানুষ হবে হাফেজ! খায়দায় আর কাম নাই আরকি। শুধুশুধু টাকা নষ্ট।
কাঁটায় কাঁটায় দুই বছর পর যখন উমাইরা হাফেজা হয়ে গেল তখন তাঁর থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেল একেবারে। মুখের ওপর হাসি বজায় রাখলেও আড়ালে তিনি উমাইরার বাবার কানে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করলেন। ‘তাঁর শরীরটা ভালো না,মেয়েটা ঘরে থাকলে কাজকাম একটু দেখত। তাছাড়া মেয়ে মানুষ এসব পড়ে কী করবে? দুইদিন পরে তো ঠিকি বিয়ে দিতে হবে।’
তাও ফল হলো না। উমাইরা হাসনাত তার লক্ষ্যের পানে দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেল। বাবাকে সে সাফ সাফ জানিয়ে দিল, সে আরো পড়াশোনা করবে। অন্তত দাওরা পরীক্ষা দেবে।
এগারো বছর বয়সে হাফেজা হয়েছিল সে। এর পরের দশ বছর কখনো বা আবাসিকভাবে থেকে পড়ল আবার কখনো রিজার্ভ গাড়িতে করে আসা-যাওয়া করে পড়ে দাওরা সম্পন্ন করল। পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফলাফল করার পর যখন তার লক্ষ্যসীমাটা আরো দূরে কেন্দ্রীভূত হলো, ঠিক সেই সময় আচমকা বদরুল মিয়া একটা পাত্র দেখে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেললেন৷ এখানে বলা আবশ্যক,উমাইরার বাবা বদরুল আরো বছর তিনেক আগে প্রবাস জীবনের ইতি টেনেছিলেন। পুঁজিপাটা যা ছিল তা নানা জায়গায় খাটিয়ে দেশে এসে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারলেন না। শেষে একটা বড় মুদি দোকান দিয়ে থিতু হলেন গতবছর। যতযাই হোক,সারাজীবন বৈদেশিক কড়কড়ে টাকা উদরসাৎ করে আসা কোনো মানুষ দেশের কামাইয়ে সন্তুষ্ট হতে পারে না৷ বদরুলের বেলায়ও তাই হলো। এমন একটা উত্থানপতনের সময়ে পাড়ার মোজাম্মেলদের এক আত্মীয় এসে উমাইরার জন্য বিয়ের প্রস্তাব করল। পাত্র অষ্ট্রেলিয়া থাকে। বাবা বিরাট ধনকুবের। দেশে,দেশের বাইরে তাদের নাকি স্বনামধন্য কোম্পানি আছে। উমাইরাকে তারা কোনো দায় ছাড়া তুলে নিয়ে রাজি। যৌতুক হিসেবে একটা কানাকড়িও লাগবে না। বদরুল যেন আসমানের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলেন। এমনিতেই মেয়ের বিয়ের অবশ্যম্ভাবি খরচ নিয়ে তিনি যারপরনাই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। বউয়ের লোভনীয় ফুসলানি বিবেচনা করে বিনাবাক্যব্যয়ে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। একদিন জাঁক করে উমাইরাকে দেখতে এলো পাত্রপক্ষ। সবকিছু ঠিকঠাক। বর-কনেকে আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হলো৷ সেখানেই ঘটল বিপত্তি। কথার ছলে বর বলল,
– বিয়ের পর কিন্তু আমি আপনাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাব৷ সেখানে…সেখানে এসব বোরকা-টোরকা এলাউ হবে না। আমি নিজেও এসব পছন্দ করি না।
এই কথার সূত্র চতুর উমাইরা হবু বরের জীবনবৃত্তান্তের আদ্যোপান্ত সড়োগড়ো করে নিল।
পাত্রপক্ষ চলে গেলে সে সিদ্ধান্ত নিল,এমন নামেমাত্র মুসলমান ছেলেকে সে কোনোভাবেই বিয়ে করবে না। যে ছেলের রক্তের কণায় কণায় পশ্চিমা সভ্যতা আর সংস্কৃতির তীব্র গরল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে,যে ছেলে বয়ঃসন্ধির পর থেকে অবাধে নারীসঙ্গ আর শরাবে অভ্যস্ত তাকে জীবনসঙ্গী করা এত সহজ নয়। কিন্তু বাবা বদরুল কন্যার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করলেন না। বললেন, ও সব বয়স হলে ঠিক হয়ে যাবে।
বিয়ের বাদ্য বেজে উঠল। উমাইরা দেখল,এই বিয়ে আটকানোর সাধ্য তার নেই। বাবা ইউরোপে এস্টাবলিশড পাত্রের লোভে সবকিছু করতে পারে। অগত্যা কাকা-কাকীর সহায়তায় মায়ের কাছে পালিয়ে এলো সে। ট্রেনে উঠে একজন ভদ্রমহিলার কাছ থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে সে বাবার কাছে ফোন করল। বলল,
‘ বাবা চিন্তা করো না,আমি কারো সঙ্গে পালাচ্ছি না। মায়ের কাছে যাচ্ছি।’
পরমুহূ্র্তেই মুঠোফোনের ওপাশ থেকে বিশ্রী ভাষার গালাগালিসমেত উষ্ণ বাক্যবাণ ভেসে এসেছিল অনবরত। উমাইরা দুচোখ বন্ধ করে সেসব বিষাক্ত কথা নিভৃতে পরিপাক করে ধীরে ধীরে ফোনটা নামিয়ে রেখেছিল; আর নিশ্চিত হয়েছিল, ওবাড়ির দরজা তার জন্য চিরতরে রুদ্ধ হয়ে গেছে।হবেই-বা না কেন? একটা অবশ্যম্ভাবী বিয়েকে ভেস্তে দেওয়া কি সাধারণ কিছু? আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি,তামাম সমাজের কাছে বাবার মর্যাদাটা খর্ব করেছে সে। কিন্তু কী করার ছিল? যা হয়েছে, বেশ হয়েছে। মায়ের কাছেও হয়তোবা খুব বেশিদিন টিকবে না সে। মা নিজেও তো পরের ঘরের বউ! প্রথম বিবাহের একমাত্র অবশিষ্ট তিক্ত স্মৃতি উমাইরাকে সে বয়ে বেড়াবে কোন যুক্তিতে? এসব ভাবতে ভাবতে অবসন্ন মনে ঘুমিয়ে পড়ে উমাইরা হাসনাত। ওর অনিন্দ্য সুন্দর মুখাবয়ব-জুড়ে কেলাসিত হতে থাকে হাহাকার জাগানো আষাঢ়ে বিষণ্ণতা৷


উমাইরার ঘুম ভাঙে আশেপাশের কোনো মসজিদে আসরের আজানের শব্দে। বিছানায় এলিয়ে পড়ে থেকে আজানের জওয়াব দিল সে। আজান শেষ হতেই বিছানা ছেড়ে ওযু করে নামাজ আদায় করে নিল। কিছুক্ষণ পর পারভীন এসে হাসিমুখে বললেন,
– ঘুম ভাঙল তোমার! বাহ্। শুনো। ওরা ফিরেছে। এসো একসাথে চা খাবে।
উমাইরা ভ্রুকুটি করে বলল,
– কারা?
পারভীন একটু ইতস্তত করে বললেন,
– ও তুমি তো জানো না। আসলে…মানে আমার হাসবেন্ড। উনার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বউটা অসুখে মারা যায়। তাদের একটা ছেলে ছিল। সে আমাদের সঙ্গে থাকে। বড় হয়েছে অবশ্য। স্বনির্ভর। পড়াশোনা শেষ করে এখন জব করে। আর আমার ছেলে রেজা। ও তো তোমাকে দেখবে বলে অনেক এক্সাইটেড। এবার এসো। চা ঠান্ডা হয়ে গেল তো।

বলতে বলতে পারভীন দ্রুত পা বাড়িয়ে নিজের অপ্রস্তুত অভিব্যক্তি লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। উমাইরা একটুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে মায়ের পিছুপিছু হেঁটে বসার ঘরে চলে এলো। সেখানে ভারী কাঁচের টেবিলের ওপর কয়েকপদের নাশতা আর চায়ের সরঞ্জাম সাজানো। গদিআঁটা সোফাগুলো দখল করে বসে আছেন একজন স্থুল গড়নের পৌঢ় ভদ্রলোক,একজন ধারালো চেহারার,দোহারা গড়নের যুবক আর একজন কিশোর। উমাইরা সসংকোচে একে একে সবার সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিল। সকলে বেশ প্রসন্নভাবেই তার সঙ্গে কথা বলল,বৃত্তান্ত জানতে চাইল। পৌঢ় ভদ্রলোক অর্থাৎ উমাইরার সৎ বাবা ইদ্রিস সাহেব কথাপ্রসঙ্গে বললেন,
– এসেছ ভালো হয়েছে। তোমার মায়ের অন্তর জুড়িয়েছে। আমি তো মনে মনে ভেবেছিলাম, একদিন সাহস করে গিয়ে তোমাকে দেখে আসব। কপালে মার জুটে নাকি আতিথেয়তা সেটা পরের কথা। হা হা হা।
ভদ্রলোক নিজের রসিকতায় নিজেই দেহ কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। পারভীন মুখে বিরক্তিসূচক শব্দ করে খোঁচা দিয়ে বললেন, আহ্ কী হচ্ছে!
দোহারা গড়নের যুবক ছেলেটি উমাইরাকে কিছুক্ষণ আড়ে আড়ে দর্শন করে অবশেষে কথা বলে উঠল,
– তাহলে তুমি আমার বোন!
কথাটা কেমনযেন লাগল উমাইরার কানে। একটু ছন্নছাড়া বিরক্তি রেশ ছিল কি তার কণ্ঠে? পরমুহূর্তেই ছেলেটা বলল,
– ইউ লুক সো প্রিটি। একদম আম্মার মতো।—আম্মা তোমার একটা পুরনো ছবি ছিল না? ওটা সামনে এনে রাখলে বুঝবে, তোমাদের দু’জনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷
পারভীন সেটা জানেন। কাজেই একটা আনন্দমাখা দীর্ঘশ্বাস তিনি গোপন করলেন। আরো টুকটাক কথাবার্তা হলো চা খেতে খেতে৷ উমাইরার ভীষণ অস্বস্তি লাগছিল। যদিও এরা সবাই তার নিজের মানুষ, তবু নবপরিচিত বলে বুকের ভেতরটা কেমন খচখচ করছিল। একটু পর পারভীন যুবক ছেলেটির উদ্দেশ্যে বললেন,
– সালমান,তুমি ফ্রি থাকলে ওকে নিয়ে একটু ঘুরে এসো তো। ঢাকা শহরে তো আগে কখনো আসেনি!
সালমান একটু চিন্তা করে মাথা ঝাঁকাল। কিন্তু উমাইরা বেকায়দায় পড়ে গেল। কোনোভাবেই এই ছেলের সঙ্গে বেরুবে না সে। দোলাচালচিত্তে সে ভাবল, এই কথাটা কি সরাসরি বলাটা উচিত হবে?
এই অবস্থা থেকে উমাইরাকে উদ্ধার করল কিশোর ছেলেটা। রেজা। সে উমাইরার দিকে তাকিয়ে মনোবিশারদের মতো বলে উঠল,
– আপু ভাইয়ের সঙ্গে বেরুতে শরম পাচ্ছ, তাই না?
উমাইরা নতমুখে চুপ করে রইল। ছেলেটা খুশি হয়ে নিজের উরুতে আস্তে করে চাপড় মেরে বলল,
– দেখলে, আমার অনুমান কখনো ভুল হয় না। আচ্ছা সমস্যা নেই, আমিই তোমাকে ঘুরিয়ে আনব।
সালমান বলল,
– আচ্ছা, তুইই ঘুরিয়ে আনিস। আমার এতো টাইম কই?
কিশোর ছেলেটার নাম রেজা চৌধুরী। এইবার ক্লাস টেনে উঠেছে। একটু স্বাস্থবান আর দীর্ঘ দেহ। জুলফির নিচে আর ঠোঁটের ওপরে এখনো লোমের রোঁয়াটে ভাব।
দিনকয়েকের মধ্যে উমাইরার সঙ্গে তার বেশ ভাব হয়ে গেল। রেজার সঙ্গে সে ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘুরল। প্রকাশ না করলেও দিব্যি বুঝা গেল,বোনকে পেয়ে সে বেজায় উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। এইতো বছরখানেক আগে সে জানতে পেরেছিল তার আরেকটি বোন আছে,এবং মায়ের আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। এরপর থেকে মা প্রায়ই বলতো বোনের কথা। রেজা নীরবে শুনতো আর মনে মনে বোনের একটি কল্পিত আকৃতি তৈরি করে অহেতুক,এলেবেলে চিন্তায় নিমগ্ন থাকত। পলে পলে সমস্ত কথা বেরিয়ে এলো রেজার মুখ থেকে। সব শুনে তার মনে এই সুখানুভব হলো যে,যাক, মা তাকে ভুলে যায়নি এ-ই তো বেশ!
কিন্তু দিনদশেকের মধ্যে সবকিছু কেমন তেতো লাগতে শুরু করল। উমাইরা তার মনশ্চক্ষু দিয়ে দেখতে পায়, এই পরিবারের সকলেই তার রক্ষণশীল মনোভাব আর ধর্মীয় নীতিকর্মকে বাঁকা চোখে দেখছে,সহজভাবে নিচ্ছে না। হররোজ তার আড়ালে কানাঘুষা হচ্ছে এই নিয়ে। এমনকি একদিন রেজাও সরাসরি বলে দিল,
– কী আপু! একদিন তো একটু সেজেগুজে বেরুতে পার। তুমি কি কম সুন্দর নাকি! প্রতিদিন এই বোরকা,হাতমোজা-পা-মোজা,পরে বেরুও কেন? যেন মৌচাক কাটতে যাচ্ছ এমন অবস্থা!
উমাইরা হাসার চেষ্টা করে বলল,
– মানুষ কি মৌমাছির চেয়ে বেশি সভ্য নাকি?
– বুঝলাম না!
– বড় হও,বড় হলে বুঝবে। তবে মানতে চাইবে কি-না সেটা আলাদা বিষয়।

অন্য একদিন ছুটির দিনে মধ্যাহ্নভোজের সময় উমাইরা অনুপস্থিত ছিল৷ প্রতিবছরের মতোই শাওয়াল মাসের ছয় রোজাগুলো সম্পন্ন করছিল সে। দুপুরে নামাজ পড়ে ক্লান্তিবশত একটু বিছানায় গা এলিয়েছিল,এমনসময় ডাইনিং রুম থেকে সালমানের কণ্ঠ কানে এলো। বারকয়েক নিজের নামটা উচ্চারিত হতেই উমাইরা উৎকর্ণ হলো। সালমানকে বলতে শোনা গেল,
-আম্মা, আমার তো এখন সন্দেহ হচ্ছে উমাইরা তোমার পেটের মেয়ে কি-না।
পারভীন কপট রাগতস্বরে বললেন,
– কী যা তা কথা!
– হ্যাঁ,দেখছ না,তোমার আর তার মধ্যে কত ফারাক।
পারভীন একটু চুপ করে থেকে বিষয়টার মর্মোদ্ধারের চেষ্টা করে ঠান্ডা স্বরে বললেন,
— ছোট থেকেই মাদ্রাসায় পড়েছে। হাফেজা হয়েছে। এমনটাই তো স্বাভাবিক। ও থাকুক না ওর মতো!
এবার সালমানের কণ্ঠে একটু উত্তেজনার পরশ লাগল,
– আরে বাবা থাকতে কে না করেছে! কিন্তু আমাদের পরিবেশ আর ফ্যামিলির সঙ্গে তো এটা যায় না। বাইরে বেরুলে বন্ধুবান্ধব, পাড়ার লোকেরা আমাকে ধরে,আমাদের মুক্তমনা পরিবারে এমন জীবন্ত টেন্ট কোত্থেকে ঢুকল এটা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সবাই৷
মাথাটাই গরম হয়ে যায়।
বাবা গম্ভীর স্বরে বললেন,
– যেখানে সারা দেশের মেয়েরা নবজাগরণে মেতে উঠছে সেই সময় এইসব সংকীর্ণমনা মেয়েরা নিজেরা গুটিয়ে থেকে অন্যদেরও পেছন থেকে টেনে ধরছে। খুবই দুঃখজনক।
পারভীন ঝেঁজে বলে উঠলেন,
– বাস,অনেক হয়েছে। কী শুরু করেছ,ও শুনতে পাবে তো!
সেকেন্ড কয়েক সকলেই চুপ। চামচের সঙ্গে কাচের প্লেটের টুংটাং ঝংকার আর ফ্যানের ভোঁতা শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না। অনেকক্ষণ পর রেজা বলে উঠল,
– আমি কালকে থেকে আপুর কাছে কোরআন শরীফ শিখব।
সকলের খাওয়া থেমে গেল একযোগে। সবাই একে অপরের দিকে চোখ ঠারাঠারি করতে লাগল। পারভীন মুখের ভাতটুকু গলাধঃকরণ করে বললেন,
– পারিস না? তোকে তো হুজুরের কাছে পড়িয়েছি ছোটবেলায়।
– না পড়তে পড়তে ভুলে গেছি। তুমিও তো ছোটবেলায় পড়েছিলে। এখন পড়তে পারো? আমি শিউর তোমরা কেউই পারো না।
রেজার কথায় সবারই মোটামুটি গা জ্বলে গেল। কিন্তু তেতো হলেও কথা সত্য হওয়ায় কেউই টুঁশব্দ করল না। এমনভাবে খেয়ে যেতে লাগল,যেন ওর কথায় কেউ তেমন একটা আমলে নেয়নি৷ কিন্তু ও খেয়ে উঠে যাবার পর সালমান ফিসফিসিয়ে বলল,
– আম্মা তোমার ছেলের রাশ টেনে ধরো। ওই মৌলবাদী মেয়ের সঙ্গে মিশতে দিও না। সর্বনাশ হয়ে যাবে।

সমস্ত আলাপচারিতাটা উৎকর্ণ হয়ে শ্রবণ করার পর উমাইরা হাসনাত ভেতরে ভেতরে ভীষণ অস্থিরতা অনুভব করতে লাগল। সারা অন্তরীক্ষ যেন শরতের অতর্কিত মিশকালো মেঘের আনাগোনায় সয়লাব হয়ে গেল। সেই মেঘে নিঃসীম অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ ভেঙে মুষলধারে বৃষ্টি নামতে চাইল। কিন্তু নামবে নামবে করেও নামতে দিল না। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের দৌর্বল্যকে পায়ে ঠেলে লম্বা নিশ্বাস নিতে লাগল … নিজের বাবা আর সৎমায়ের জাহান্নাম থেকে পালিয়ে এসে এ কোন্ জাহান্নামে স্বেচ্ছায় পা রাখল সে! যেখানে, আপাতদৃষ্টিতে এরা সকলেই শহুরে কেতাদুরস্ত ভালোমানুষটি হলেও আড়ালে তার যাবতীয় বিষয় নিয়ে কানাঘুষা করছে! নাহ্। এখানে আর একদণ্ডও নয়। যত তাড়াতাড়ি পারা যায়,ভালো কিংবা মন্দ,একটা ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে৷ মনে মনে এমনটা ইরাদা করে অশান্ত মনকে শান্ত করল উমাইরা। কিন্তু মন জিনিসটা বড় বেয়াড়া। সহজেই শান্ত হতে চায় না। দুঃখ, অপমান, রাগ,ক্ষোভ এসমস্ত অনুভূতি ছাপিয়ে উমাইরার মনের গহন কোণে ফোঁটায় ফোঁটায় জমা হতে থাকল দুর্দম্য অভিমান। দিনকয়েক সে অভিমানের বাষ্প নিজের মধ্যে চেপে রেখে এক রাতে সুযোগে পেয়ে মা’কে সে বলে বসল,
– আমার জন্য তোমাদের খুব অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে না?
পারভীন দুধ নিয়ে এসেছিলেন মেয়ের জন্য। খেতে বলে ফিরে যাচ্ছিলেন। তখনি আচমকা কথাটা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন,
– ছিঃ কে বলল?
উমাইরা মায়ের দিকে সেকেন্ড কয়েক নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে বলল,
– বলতে হয় না।—আমি চেষ্টা করছি অন্য কোনো ব্যবস্থা করার৷
– কী ব্যবস্থা করবে তুমি!
পারভীনের কণ্ঠে যেন আতঙ্ক।
– দেখি কী করতে পারি৷ একটা— একটা চাকরিবাকরি জুটিয়ে নেব ইনশাআল্লাহ৷
প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল উমাইরা। পারভীন গভীর সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বললেন,
– তুমি আর বাড়িতে যাবে না?
– বাবার ভাষা শুনলে বুঝতে পারতে ওই বাড়ি আমার জন্য হারাম হয়ে গেছে৷ আমার শুধু এটা ভেবে অপরাধবোধ হচ্ছে যে, এতদিন যাদের অন্ন খেলাম তাদেরকে সমাজের কাছে অপমানিত করলাম নিজের খুশির জন্য।
পারভীন এই ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানেন না। তিনি কেবল উমাইরার কাকা-কাকীর কাছে এটুকু শুনেছেন যে,একটা বদ ছেলের সঙ্গে উমাইরার বিয়ে ঠিক হয়েছে। উমাইরার এই বিয়ে করতে রাজি না,তাই কয়টাদিন তোমার ওখানে থাকুক। মেয়েকে কাছে পাবার জন্য ব্যকুল ছিলেন পারভীন। কাজেই,আর বেশিকিছু খতিয়ে দেখবার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি উমাইরার কাঁধে ভরসার হাত রেখে আলতো চাপ দিয়ে বললেন,
– তুমি এখানেই থাকো৷ সবাই অভ্যস্ত হয়ে যাবে আস্তে আস্তে৷
উমাইরা মায়ের হাত চেপে ধরে বলল,
– না মা, আমাকে কিছুদিন সময় দাও শুধু। আমি চলে যাব। তোমাদের আর বিরক্ত করব না৷
পারভীন আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। কিন্তু মেয়ের কাছে তা ঘূনাক্ষরেও প্রকাশ না করে আশু পালিয়ে এলেন সেখান থেকে। নিজের ঘরে ফিরে বেমক্কা বাথরুমে ঢুকে টেপ ছেড়ে দিয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললেন তিনি।


ক্লাস টেনে পড়লেও রেজা বহির্জগত নিয়ে বেশ খবরাখবর রাখে৷ উমরাইরা নিজের পড়াশোনার দৌড় এবং সক্ষমতাগুলো সীমাবদ্ধ করে দিলে রেজা সে অনুযায়ী চাকরি-বাকরির সন্ধান করে এনে দেয় কদাচিত। কিন্তু, কোনটিই তেমন পছন্দসই হয় না। ঢাকা শহরের পরিবেশ অবাধ এবং প্রত্যেক সেক্টরেই পুরুষালি ফেতনায় ভরপুর। নিজের রূপ নিয়ে অহমিকা নেই উমাইরার,যা আছে তা হলো ভয়। মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথে কত ছেলে শুধুমাত্র নেকাবের ফাঁকে তার চোখ দেখেই দিওয়ানা হয়ে পিছে-পিছে ঘুরেছে তার হিসেব-অন্ত নেই। কাউকেই সে তিলমাত্র আশকারা দেয়নি। যাহোক,চাকরির প্রচেষ্টা অব্যাহত রইল। কিন্তু, পথে পথে ঘুরে উপোস মরতে বসলেও এমন চাকরিও সে করবে না যেখানে নিজের স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে হয়। এমনভাবে মাস দুই অতিবাহিত হয়ে গেল। একদিন সন্ধ্যায় একটা অপ্রত্যাশিত কাণ্ড ঘটে গেল। দুপুরে বেশকিছু কাপড় কেচে ছাদের দড়িতে বিলিয়ে দিয়েছিল উমাইরা। শেষ বিকেলে সেগুলো তুলতে গিয়ে দিগন্তব্যাপৃত ইমারতের মিছিলের শেষে এক টুকরো সবুজ বনরেখার গায়ে সূর্যের ঢলে পড়া দেখে থমকে দাঁড়াল সে। বুকভরে সতেজ নিশ্বাস নিয়ে মনে মনে সে প্রার্থনা করল ওই বিশালকায় সূর্য এবং সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা আল্লাহর কাছে। উতল হাওয়া উমাইরার কানের পাশ দিয়ে চলে যায় শোঁশোঁ করে।দুচোখ বুজে অপার্থিব এক অনুভূতি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সে। আচানক কোথাও একটু খুট করে শব্দ হলে ধ্যানভঙ্গ হয়ে সচেতন দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকায়। তাকিয়েই তার বুকটা ধক করে উঠে। একটা ছেলে ছাদের কোণা থেকে তার দিকে নেশা-লাগা চোখে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। মাথার পতনোন্মুখ ওড়নাটা আরো দেড়হাত সুমুখে টেনে দিয়ে দ্রুত সে ঘুরে দাঁড়াল। মরি মরি। এ কী অদ্ভুত কাণ্ড! বেশরম কোথাকার! হাতের কাপড়গুলো সামলে নিয়ে প্রস্থানোদ্যত হতেই দেখা গেল সালমান উঠছে ছাদে। উমাইরাকে দেখেই কৌতুক গোপন করে বলল,
– উমাইরা! পরিচয় হয়েছে ওর সঙ্গে? আমার ফ্রেন্ড তানভীর।
বলেই সে ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির দিকে তাকাল৷ ছেলেটি তখনো ওর দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে আছে। উমাইরা কিন্তু আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না৷ সালমানকে একপ্রকার ঠেলে সে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে গেল।
– মেয়েটা কে রে!
ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা তানভীর কথা বলে উঠল সালমানকে উদ্দেশ্য করে। সালমান ঠোঁট উলটে বলল,
– বোন।
– কেমন বোন? চাচাতো, মামাতো,না খালাতো?
– সৎবোন৷
নিস্পৃহভাবে কথাটা বলে ঠোঁটে সিগারেট পুরল সালমান৷ অগ্নিসংযোগ করল। ছেলেটিও একটা সিগারেট এগিয়ে নিয়ে বলল,
-ও-ও তাই বল্।আন্টির মেয়ে! তাই তো বলি,চেহারাটা যেন কার সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল।
সালমান ঠাট্টার সুরে বলল,
– তোর হাবভাবে এমন ঠেকতেছে ক্যান? নাকি এক দেখাতেই…।
– সত্যি মামা। ক্রাশ খেয়ে গেছি। এই দেখ, আমার বুক এখনো কাঁপতেছে।
– ফাজলামি রাখ৷ ওর পেছনে ছুটে লাভ হবে না৷ ও ভিন্ন ছাঁচে গড়া। এক্কেবারে গোঁড়া ধার্মিক। স্যুট করতে পারবি না জীবনেও। তাছাড়া, মনে হয় না তোকে একফোঁটা পাত্তা দেবে।
– হাহ্! দেখা যাবে।
বলতে বলতে সিগারেটে সুখটান দিয়ে নাকেমুখে একরাশ ধোঁয়া ছাড়ে তানভীর। ওর ঢিপঢিপ করতে থাকা হৃৎপিণ্ডটা যেন মস্তিষ্কে বারংবার বার্তা পাঠাচ্ছে, ‘এই অসূর্যম্পশ্যা কন্যাকে তার চাই-ই চাই।’

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here